#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪
রুপশার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। পারভেজ সাহেব কোনো কিছুতেই কৃপনতা করছে না দুই হাত খুলে খরচ করছে। বড় মেয়ের জন্য গচ্ছিত স্বর্ণ বের করেছে। রোজিনা বেগমের কিছু স্বর্ণও রুপশাকে তিনি দিবেন সব মিলিয়ে মোট সাত ভরি স্বর্ণ পেয়েছে রুপশা যা বর্তমান বাজারে বিশাল মূল্য তবে আগের বানানো দেখে খুব অল্প দামেই বানানো গিয়েছে।
রুপশার বিয়েতে দুইটা দল হয়েছে একটা পুনমের দল যেটাতে দুই ফুপি তার চাচা চাচী ও চাচাতো ভাই বোনেরা রয়েছে
আরেকটা দল হলো রুপশা নিশা ও তার নানার বাড়ির আত্মীয়রা।
রোজিনা বেগম অবশ্য সবারই ঠিকঠাক খেয়াল রাখছেন কারন পারভেজ সাহেব তিনজন মহিলা বাড়ির কাছের জন্য বলে রেখেছে। তারাই বাসন ধোয়া মাজা কাটাকুটি করে দিচ্ছে রোজিনা বেগম শুধু রান্না চাপায় আর কোন সবজি কিভাবে কাটতে হবে তা বুঝিয়ে বলে।
আজকে রোজিনা একটু বেশীই ব্যস্ত ছেলে পক্ষের বাড়ি হতে হলুদের তত্ব নিয়ে আসবে। দূরের রাস্তা তাড়া কাল আসতে পারবে না তাই আজকেই আসবে।
— পুনম মা এককাপ চা বানাতো
বাজার থেকে এসে পারভেজ সাহেবের বড় ভাই কামরুল সাহেব বলল,,,
তখনই রুবি ফোরণ কেটে বলল — ওয় আবার চা বানাতে পারে নাকি পারে শুধু চা পান করতে,,,
পুনম বড় খালার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চাচার দিকে তাকিয়ে বলল — আমি তো চা কোনোদিন বানাই নি চাচাজান,,,
পুনমের কথা শুনে কামরুল সাহেব হাসল।
— আম্মা কোনো কিছু না পারা কোনো দোষের কিছু না চেষ্টাটাই আসল,,, এখন দেখি তোমার চেহারাই শুধু আমার আম্মার মতো নাকি কাজেও আমার আম্মার মতো,,,,
পুনম বড় চাচার কথা শুনে দৌড়ে রান্নাঘরে যায়। রান্নাঘরে তার মা চাচীরা পিঠা বানাচ্ছে,,, পুনমের দুইটা চাচীই বেশ ভালো মাটির মানুষ।
— বড় চাচীমা আমাকে চা বানানো শিখাবে বড় চাচাজানকে চা বানিয়ে খাওয়াব,,,
— এই পুনম তোর চাচাজান কি এখানে শান্তি দিবে না এইটুকু মেয়েরে বলে চা বানিয়ে দিতে,,;
চাচীর কথা শুনে পুনম খিলখিল করে হাসে
— আমিই বানিয়ে খাওয়াব তুমি বলো কিভাবে বানাতে হয়।
পুনমের চাচী বলতেই পুনম সেভাবে চা বানাতে থাকে হাসি মুখে এটা সেটা বলতে থাকে। রোজিনা বেগম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুনমের দিকে। মেয়েটা তার জায়েদের সাথে যতটা সহজ তার সাথে না। আচ্ছা মেয়েটা কি তার থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে,,,
পরোক্ষনেই মস্তিষ্কের ভাবনা ছুড়ে ফেলে নিজের মতো ভাবনা তৈরী করে সে মা হিসেবে একটু শাষন করে এই যা।
চা বানানো শেষ হলে কাপে ঢেলে বড় চাচার জন্য চা নিয়ে যায় পুনম।
কামরুল সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বলে — আহা মারে তোর হাতের চায়ের স্বাদ একদম আমার মায়ের মতো,,,
আবার রুবির দিকে তাকিয়ে বলে — কি বিয়ান সাহেবা একচুমুক খেয়ে দেখবেন নাকি,,,
রুবি মুখ বাকায়। কামরুল সাহেব কাপের থেকে একটু চা পিরিচে ঢেলে রুবির সামনে দিয়ে বলে
— আরে একটু খেয়েই দেখেন ভালোই হয়েছে এবং বেশ ভালো হয়েছে।
রুবি না পেরে চায়ের কাপ হাতে নেয়। মুখে নিয়ে দেখে নাহ বেশ ভালোই হয়েছে। ফু দিয়ে একচুমুকে পুরোটা চা শেষ করে।। কোনো কথা বলে না রুবি আর
— আম্মাজান এর জন্য আপনার একটা পুরস্কার পাওয়া রইল সময় করে দিয়ে দিব,,,
কামরুল সাহেবের কথা শুনে পুনমে হেসে তার চাচাতো বোন ঝিনুকের কাছে চলে যায়।
পুনমের বড় চাচার এক ছেলে দুই মেয়ে তার ছেলে আসেনি কাল আসবে তার ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা তাই আর ছোট চাচার জমজ বড় দুই মেয়ে আর ছোট একজন ছেলে। বড় ফুপু দুই ছেলে। আর ছোট ফুপুটা এখনো বিয়েই করে নি। তবে এখানে সবার মধ্যে পুনমের সাথে ছোট ফুপুর ভাব বেশী। তাদের কাজীন দলের মধ্যে মেয়ের সংখ্যাই বেশী তারা আজ সবাই পুনমের সাথে পুনমের ঘরে ঘুমাবে তাই পারভেজ সাহেব খাট খুলে পুরো ফ্লোরে তোষক বিছিয়ে দিয়েছে,,,,,
_______________________
ছেলের বাড়ির লোক এসেছে এদের সাথে পুনমের বড় চাচার ছেলে চন্দ্র আসে। আর এসেই ছেলে পক্ষের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
তাদের একা হাতে সামলাতে দেখে পারভেজ সাহেব ও কামরুল সাহেব ও তাদের ছোট ভাই মিরাজ সাহেব হাফ ছেড়ে বাচ যাক তারা এখন ছেলেটাকে সাহায্য করলেই হবে।
চন্দ্র সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে তার হাত ধরে আছে বারো বছর বয়সী রাইয়্যান। মিরাজ সাহেবের ছেলে।
নিশা গুটি গুটি পায়ে কনকের পিছনে দাড়ায়।
— ভালো আছেন চন্দ্র ভাই
— কিরে পিচ্চি বড় হয়ে গেছিস দেখছি,,, চন্দ্র হাসি মুখে বলল।
চন্দ্রের কথা শুনে নিশা লজ্জা পায় বারো বছর বয়সী ইচরে পাকা নিশা কনককে পছন্দ করে তা কনকের বোন মুক্তি জানিয়েছে তাকে। ফোনে বলতে বলতে সেই কি হাসা।
— বললেন না তো আমাকে কেমন লাগছে,,,
চন্দ্রের নিশার দিকে ধ্যান নেই তার ধ্যান ধারনা বিচরণ করে সামনের রমণীর দিকে।
ধীর পায়ে বেবী পিংক কালারের থ্রি পিছ পড়ে হাটছে লঙ স্লিভের বেবি পিংক থ্রি পিছের জন্য যেনো রূপ খুলেছে পুনমের। মাথায় ঘোমটা দেয়া। তাতেই যেনো আরো সুন্দর লাগছে ঘোমটার আড়ালে কিছু অবাধ্য চুলের আনাগোনা দেয়া যায়।
— আব্বা অন্য দিকে তাকা আমার আম্মার নজর লেগে যাবে।
পিছন থেকে মিরাজ সাহেব বলতেই কনক বলল
— লাগবেনা ছোট চাচা নজর টিকা লাগিয়ে দিয়েছি,,,,আসো কানে কানে বলি কিভাবে লাগিয়েছি।।।
পিছন থেকে বাকি দুই ভাই গলা খাকারি দিল। পারভেজ সাহেব গম্ভীর স্বরে বলল — এমন বেকার জামাইয়ের কাছে মেয়ে দিব না আমার।
— আমিও বিয়েটা করে নেই এমন শশুর বাড়িতে বউকে পাঠাব না যেখানে আমার বউকে মারা হয় আর এমন মার মেরেছে যে জ্বর এসে পড়েছে। গম্ভীর স্বরে বলেই চলে গেলো এতক্ষণে নিশা দাড়িয়ে সব শুনছিল আর মুচকি হাসছিল।
সে ভেবেছে চন্দ্র তাকে নিয়েই কথাটা বলছে। তবে শেষের কথাটা মিলাতে পারছেনা। পরেই মনে পরল পরসু তার বাবা তাকে একটা থাপ্পড় দিয়েছিল সেটার কথাই হয়তো বলছে।
পারভেজ সাহেব ঢোক গিলল। কামরুল মাথা নাড়ায়। এই ঘাড় ত্যাড়া ছেলেটার কানে সব চলে যায়। কিভাবে গেলো সেটাই ভেবে পায়না।
পুনম বোনদের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছিল।
— এই পুনম বাসাতেই তো আছিস মাথার কাপড় সরিয়ে দে এতো সুন্দর করে চুল বেধে দিলাম কেনো যদি নাই দেখাস
মুক্তির কথা শেষ হতে না হতেই পিছন থেকে কেউ বলল — মাথা থেকে কাপড় সরলে একটা চুলও আস্তো থাকবে না গোছা ধরে কেটে দিব সবার সামনে,,,
চন্দ্রের কথা শুনে মুক্তি ও পুনম ঢোক গিলল। মুক্তি কোনো রকম হেসে বলল — তুমি কখন এসেছো ভাইয়া আজই এসেছো বলোনি তো,,,
চন্দ্র মুক্তির কথা জবার না দিয়ে পুনমের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল — ঘরে যা চাচীমা ডাকে,,,
পুনম মাথা নাড়িয়ে চলে যায় এই লোককে এখন কিছু বললেও ঝাড়ি খেতে হবে। বাড়ির একমাত্র ছেলে হওয়াতে সবাই বেশ আদর করে তাকে। রাইয়্যান হওয়াতেও সেই আদর কমে নাই।
পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুক্তিকে বলল
— এরপর থেকে যেনো পুনমের ঠোটে জোড় করে লিপস্টিক দিতে না দেখি,,,
মুক্তি নাক মুখ কুচকে সেখান থেকে চলে যায়। তার এই ভাইটার জন্য মেয়েটা একটু শান্তি পায়না তাদের বাসায় গেলেও সেবার এইটে পরীক্ষা দিয়ে গেলো সারাদিন ঘরে বন্দি করে রেখেছে থাকে চন্দ্র।।
মেয়েটা বোনদের সাথে কতটা চঞ্চল। সেই চঞ্চলতা হারিয়ে যায় বাড়িতে আসলে আর তার ভাইয়ের সামনে পড়লে। তবে মুক্তি এটাও মানে চন্দ্রকে মোটামুটি সবাই ভয় পায় ইভেন পুনমের খালা মামারাও।।।
#চলবে