#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫
— তোর ঘরতো ঘর না পুরো একটা সৌরজগত পূর্ণ
ঝিনুকের কথা শুনে হাসল পুনম। তখনই মুক্তি বলল — হাসিস না পূর্ণ তুই এতো সুন্দর আকিস একটা ইউটিউব চ্যানেল খুললেই তো পারিস।
— আপু ফোন নাই আমার কাছে আর এই আর্ট করে ভিডিও করা খুব ভেজাল লাগে আমি এতো ভেজাল করতে পারব না,,
ঝিনুক মুক্তি রিমি পুনমের দিকে তাকিয়ে আছে। মুক্তি সবার বড় হলেও ও বোনদের সাথে বন্ধুর মতো মেশে। তারা সবাই একসাথেই শুয়েছে মশারির নিচে চারটা বালিশ সাড়িতে বেধে শুয়েছে চার রমনী। ঘরে ঢুকেই তাদের চোখ গিয়েছিল দেয়ালের দিকে তবে তখন কিছু বলেনি ঐ যে রাতে ঘুমানোর সময় সারাদিনের জমানো কথা উগ্রায় তারা।
আর্টের কথা থেকে কথা চলে যায় চন্দ্রের দিকে রিমি বলল — এই মুক্কু আপু আমাদের নিশা নাকি চন্দ্র ভাইকে পছন্দ করে
— নিশার বাচ্চা মানুষ রিমি এগুলো কি বলিস
— তুই চুপ কর পূর্ণ তোর বোন বয়সের আগেই পেকে গেছে প্রেম পিড়িতি ও বুঝে।
তখনই বাইরে থেকে শোনা গেলো — এখনো ফিসফিসিয়ে কথা কিসের ঘুমা সব কয়টা। চারজন একে অপরের দিকে তাকায় চন্দ্র ভাই এখানে কি করছে।
ঝিনুক চিল্লিয়ে বলল — ঘুমাচ্ছি ভাইয়া,,,
চন্দ্র চলে যেতে হাফ ছাড়ে চারজন আর বেশী কথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়।।
______________________
— জানো আপু চন্দ্র ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে,,,
নিশা লাজুক স্বরে বলল। হবু স্বামী লিমনের সাথে কথা বলছিল রুপশা নিশার কথা শুনে তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়
— পাগল হলি নাকি চন্দ্র ভাইয়ার,,,,
কথাটা শেষ করার আগে কলটা মীউট করে নিয়ে বলল — আমি তোর থেকে একসেড বেশীই সুন্দরী তাও চন্দ্র ভাইয়ার মন গলাতে পারলাম না।।
ভেংচি কাটে নিশা — হু তার সাথে হিংসামী করছে,, আমি বেশী সুন্দর,,
বিড়বিড় করে বলে মুখ বাকায়।
রুপশা আবার কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পরে খেয়াল করে না এই ঝাল মরিচ বোম্বাই মরিচের আকার ধারন করেছে।
চাদের আলোটা আজ বেশ উজ্জল। মনে হচ্ছে পূর্নিমা। দখিনা জানালার দেয়াল ঘেষে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে পুনমের দিকে তাকিয়ে তাকে চন্দ্র। পুনমের ঘরের জানালা থেকে তিন হাত দূরত্বে বেশ উচ্চ দেয়াল। এই দেয়ালটা অবশ্য চন্দ্রই দিতে বলেছে পারভেজ সাহেবকে। দেয়াল ভেদ করে চাদের আলোয় চন্দ্র দেখছে পুনমকে। বেশ গোছালো ঘুম পুনমের এইযে ঘুমিয়ে আছে তাও জামা কাপড় তার স্থান হতে একটুও নড়েনি।
ঘুমের ঘোরেই রিমি পুনমকে জড়িয়ে ধরলে চন্দ্র ভ্রু কুচকে তাকাত। বিড়বিড় করে বলে — সর বজ্জাত রিমি আমার পুনমের এতো কাছে গেলি ক্যান ওরে এখনো আমিই স্পর্শ করতে পারিনি সেখানে তুই জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছিস দীর্ঘ চার বছর ধরে সেই স্বপ্ন আমি লালিত করেছি তা এভাবে হন্য করতে পালিস না।
রিমি ঘুমের ঘোরে আবার সরে যেতেই শ্বাস ফেলল চন্দ্র।।
আবার পুনমের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে যেতে গুনগুন করতে থাকল
” শোনো গো দখিনো হাওয়া
_” প্রেম করেছি আমি,,
“” লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি,,,,
___________________
রাত তিনটা এর মধ্যে নিঃশব্দে পারভেজ সাহেবের ঘরে প্রবেশ করে কেউ। পারভেজ সাহেবের ঘরে রোজিনা রুবি ও তার খালাতো বোনেরা ঘুমিয়ে আছে উপরে কেউ নিচে কেউ বিয়ে বাড়িতে যা হয় আরকি যে যেই স্থান পায় সেই স্থানেই ঘুমিয়ে পরেছে।
ঘোর অন্ধকার হলেও লোকটি ঠিক রোজিনা ও রুবির মাঝখানে দাড়ায় হাটু গেড়ে বসে নিজের পকেট থেকে একটা ছোট্ট শিষি বের করে ড্রপের সাহায্যে রোজিনার বাম হাতে পরপর তিন ফোটা তরল জাতীয় কিছু দেয়।
রোজিনা ঘুমের তালে হালকা গুঙ্গিয়ে উঠলেও উঠেনা।
লোকটি বাকা হেসে বেড়িয়ে যায়। শিষিটা পকেটে পুরতে পুরতে মনে মনে ভাবে — যেই হাত আমার পুনমের হাতে অকারণে উঠেছে সেই হাতকে হালকা শাস্তি দেয়া চন্দ্রের জন্য নিডফ্যুল
চন্দ্র বাইরে এসে নিজের ঘরের দিকে যায় ঘরে ঢোকার আগেই তাকে কেউ টেনে নিয়ে যায় কলার টেনে।
চন্দ্রকে টেনে এনে বাড়ির উঠোনে ছাড়তেই চন্দ্র বলল — কলার টেনে আনলে ক্যান আব্বু,,, ইট”স ব্যাড ম্যানার্স,,
— এখন তোমার কাছ থেকে আমার ম্যানার্স শিখতে হবে??
— অবশ্যই সেটা যদি না জানো
— চন্দ্র
কামরুল সাহেবের গম্ভীর স্বর কানে যেতেই চন্দ্র বুঝতে পারে কিছু একাটা হয়েছে সে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল — কি হয়েছে আব্বু ???
— রোজিনার ঘরে তুমি কি করছিলে??
এদিক ওদিক তাকায় চন্দ্র তবে কিছু বলে না কামরুল সাহেব আবার জিজ্ঞাসা করতেই গম্ভীর স্বরে বলল — বীনা দোষে যেই হাত আমার পুনমের উপর ওঠে সেই হাতকে ছোট্ট একটা শাস্তি দিয়েছি। যাষ্ট লিটিল পানিশমেন্ট।
বলেই চন্দ্র হনহন করে চলে যায় কামরুল সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে তার ভাই যদি পুনমের প্রতি চন্দ্রের এতো অবসেশন জানতে পারে জীবনেও তার কাছে পুনমকে বিয়ে দিবে না। তাদের বাড়িতে রোজিনা,, পুনম,, নিশা,, রুপশা বাদে সবাই জানে চন্দ্র পুনমকে ভালোবাসে ভাতিজার এই ভালোবাসা প্রথমে উপেক্ষা করলেও পরবর্তীকালে পারভেজ সাহেব মেনে নেয়।
তাদের বড় আদরের ছেলেটা হয়েছেও তাদের বাবার মতো তাই একটু বেশীই আদর করে সবাই।।
___________________
সকাল সকাল বিয়ে বাড়িতে হুলুস্থুল অবস্থা রিয়াজ সাহেবকে আর রোজিনা বেগমকে নিয়ে সবাই চিন্তিত।
রোজিনা বেগম কাল রাতে টের না পেলেও সকাল হতে হাতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বড় বড় চারটা ঢোসা পড়েছে এমন লাগছে মনে হচ্ছে পুড়েছে। অথচ কাল রাতেও তার হাত ভালো ছিলো।
অন্য দিকে রিয়াজ সাহেবের হয়েছে পেট খারাপ এই পযর্ন্ত ঊনপঞ্চাশ বার সে বাথরুমের সফর করে এসেছে যার এবারো পেটের গুড়গুড় শব্দে উঠতেই রাইয়্যান কাউন্ট করে বলল -” ঝুনি আপা রিয়াজ মামার হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। এই পযর্ন্ত।
ঝিনুক ভাইকে ধমক দিয়ে নিজেও মিটমিট করে হাসল এখন কেউ শুনতে পেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
রিয়াজ সাহেবের হাফ সেঞ্চুরি। হতেই তাকে আর রোজিনা বেগমকে নিয়ে পারভেজ সাহেব বাজারে ডাক্তারের কাছে ছুটে। বিয়ে বাড়িতে অজস্র কাজ তার মধ্যে এই অসুস্থতা।
রোজিনা বেগম অটোতে বসেও হায়হুতাশ করছে। — আহারে আমার মেয়েটার বিয়ের কোনো কাজই আমি করতে পারছিনা কেমন মা আমি
বলেই বিলাপ করে কাদছে। পারভেজ সাহেবের এবার বিরক্ত লাগে অনেক্ষণ ধরে বুঝিয়েও এই মহিলাকে সে থামাতে পারনি এই এখন বিরক্ত মুখে চুপচাপ বসে আছে।
এরমধ্যেই রিয়াজ সাহেবের পেটের মধ্যে আবার গুড়গুড় শব্দ হতেই সে বলল -” পারভেজ গাড়ি থামাতে বল আমি নামব নামব
অটোরিকশা তৎখনাত থেমে যায়। পারভেজ সাহেব বলে — কোনো ঝোপের কাছে নিয়ে থামাও,,
অটোরিকশা দুই মিনিটের মধ্যে সেখানেই থামে। অটোরিকশা থামতেই রিয়াজ সাহেব দৌড়ে ঝোপের আড়ালে বসে পড়ে।
পারভেজ সাহেব দৌড়ে আশে পাশে দোকান খোঁজ করে পেয়েও যায়। সেখান থেকেই একটা ওয়েট টিস্যুর প্যাকেট নিয়ে নেয়।
পারভেজ সাহেব দূর থেকে রিয়াজ সাহেবের দিকে বাড়িয়ে বলল — এটা দিয়ে পরিস্কার করে আসুন ভাই।
রিয়াজ সাহেব প্যাকেট নিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল — বুড়া বয়সে বাচ্চা গো হাগু মুতু পরিস্কার করার টিস্যু দিয়ে নিজেকে পরিস্কার করমু,,
আস্তে আস্তে বললেও পুরো কথাই কানে যায় পারভেজ সাহেবের।
রিয়াজ সাহেবের কথা শুনে পারভেজ সাহেবের ব্যাপক হাসি আসছে। সে কোনো রকম ঠোট চেপে দাড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পর রিয়াজ সাহেব লুঙ্গির গিট দিতে দিতে উঠে আসলে পারভেজ সাহেব হাসি না থামাতে পেরে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।
অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে রিয়াজ সাহেবকে নিয়ে আবার বসে অটোরিকশায়।
#চলবে