পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-০৬

0
1

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৬

“”রুপশার হলুদ সন্ধ‍্যা “”
গাদা ফুলের সাথে গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল সংমিশ্রণে সাজানো স্টেজটা বিভিন্ন কালারের মরিচ বাতিতে জলজল করছে। বিকাল হতেই রুপশার বান্ধবীরা এসে হইচই লাগিয়ে দেয় সকাল হতে সবাই একটু টেনশ‍্যনে থাকলেও বিকালের দিকে বিয়ের আমেজে হাসি আনন্দে তা মিলিয়ে যায়।

রিয়াজ সাহেবের ঘনঘন বাথরুমে যাওয়া কমেছে তবে। রোজিনা বেগমের হাত যেই সেই তাই ওনার দুই জা তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে নিজেদের হাতে কাজ নিয়েছে। রোজিনা বেগম বোন ও ভাইয়ের বউকে কোনো কাজের কথাই বলছে না দেখে পারভেজ সাহেবের ছোট ভাই মিরাজ সাহেব বললেন — ভাবী আমাদের সুন্দরী বিয়ানেরা যদি বাবুর্চীদের জন‍্য একটু চা নাশতার ব‍্যবস্থা করত আমরাও সাথে একটু চেখে দেখতাম কেমন আমাদের বিয়ানদের হাতের চা নাশতা।

লজ্জায় রুবি ও রিয়াজ সাহেবের বউ লিপি কাজে হাত লাগায়। রোজিনা মুখ লুকায়।

______________________

রুপশাকে স্টেজে নেওয়া হয় হলুদের দামী লেহেঙ্গা। ও কাচা ফুলের গয়নায় সাজানো সুন্দরী রুপশার যেনো তরতরিয়ে রুপ বেড়ে চলেছে।
রুপশা স্টেজে বসতেই কল আসে তার হবু স্বামীর।
স্টেজে হাসির ফোয়ারা বয়ে যায় লজ্জা পায় রুপশা। বিয়ে বাড়িটা একপ্রকার ঈদগাহ ময়দান। ঈদগাহ ময়দানে যেমন ভেদাভেদ ভুলে এককাতারে দাড়িয়ে নামাজ পরা হয় তেমনি বিয়ে বাড়িতে সকল ছোটরা মিলে একসাথেই আনন্দ করে। এইযে পুনমের সাথে রুপশার বান্ধবীদের সখ‍্যতা না থাকলেও এখন হাসি মুখে কথা বলছে পুনমের খালার ছেলে মামার ছেলের মেয়েরা সবাই হইচই আনন্দ করছে।

তবে গ‍্যাড়াকল বাধে বড়দের মাঝে। যেমন পুনমের খালু আর ফুপা লেগে গিয়েছে ।। পুনমের ফুপু এসেছে বিকালের দিকে তার দুই ছেলে চন্দ্রের সাথে কাজে লেগে পড়েছে। স্টেজটা মূলত ওরাই সাজিয়েছে।

— দেখেন ভাই বিরিয়ানির সাথে রোস্টের কোনো প্রয়োজন নেই বিরিয়ানির সাথে কাবাব হলেই চলবে,,,

পুনমের ফুপার কথায় পুনমের খালু বলল — বিয়ের মেইন মেনু হচ্ছে রোস্ট সেটা ছাড়া হলুদ সন্ধ্যা বলেন আর বিয়ে বলেন কোনোটাই জমে না,,,

এককথায় দুইকথায় এদের ভিতর তর্ক লেগে যায় তখনই কোথা থেকে এসে পুনমের ফুপু ছো মেরে পুনমের ফুপাকে নিয়ে যায়।
— দেখ এখানে কোনো ঝামেলা চাই না ভাইঝির বিয়ে খেতে এসেছি ঝগড়া করতে না চুপচাপ থাকো,,,,

স্ত্রীর ঝাড়ি খেয়ে চুপ বনে গেলো পুনমের ফুপা রমিজ রহমান,,
অন‍্যদিকে পুনমের খালাও তার স্বামীকে নিয়ে গেছে এখন রান্নার কাজে কেউ নেই বাবুর্চীদের কদারকি করার কেউ নেই।

কামরুল সাহেব পাগল হলেন পারভেজ সাহেব ও মিরাজ সাহেব ভাইয়ের হাতে দায়িত্ব দিয়ে উধাও। কামরুল সাহেবের এখন কেওড়া জল আনতে বাজারে যাওয়া লাগবে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে পুনম কেটে রাখা পেয়াজ নিয়ে এদিকেই আসছে,,,

— আম্মাজান চন্দ্রকে একটু ডেকে দে তো,,,,
পুনমের হাতে পেয়াজের থালা নিয়ে বলল কামরুল সাহেব।
বড় চাচাকে চিন্তায় দেখে অবাক হয় পুনম জিজ্ঞাসা করে — কেনো বড় চাচা,?? আর আব্বা কোথায় ওনারে দেখি নাতো অনেক্ষণ,,

— মারে তোর বাপ সব দায়ভার আমার উপর দিয়ে তোর ছোট চাচা সহ পালিয়েছে,,,

বাবার পালানোর কথা শুনে খিলখিল করে হাসল পুনম বড় চাচাকে শান্তনা দিয়ে বলল — আমি চন্দ্র ভাইকে খুজেঁ দিচ্ছি,,,,

যাক এখন চন্দ্রকে অবশ্যই পাওয়া যাবে। চন্দ্র স্টেজের পিছনে তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আড্ডায় বসেছে। চন্দ্রের ফুপুর দুই ছেলে প্রায় চন্দ্রের বয়সী চন্দ্র এদের থেকে সাড়ে তিন মাসের বড়।। তবে বড় হলেও এদের সাথে তার ভালোই জমে।

তুমুল বেগে আড্ডা চলছে সাথে সুখটান। তখনই শিহাবের কানে যায় পুনম কাউকে চন্দ্রের কথা জিজ্ঞাসা করছে।
— চন্দ্র স্পেশাল মানুষ ইজ কলিং ইয়‍্যু,,,

শিহাবের কথায় ভ্রু কুচকায় চন্দ্র। শিহাব চোখে দিয়ে সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করে। চন্দ্র শিহাবের অনুসরণ করে দেখে পুনম এদিকেই আসছে
চন্দ্র সিগারেট ফেলে পা দিয়ে পিষে নেয়। চারিদিকে তবুও গন্ধের ছড়াছড়ি শিহাব ও রিশান কুটিল হাসে।
পুনম সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না তাই চন্দ্র সিগারেট বন্ধ করেছে সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই,,,;

পুনম এদিকটায় দাড়াতেই কেমন ভোটকা একটা গন্ধ পেলো,,, রিশানের হাতে সিগারেট দেখে বলল — ভেরী ব‍্যাড রিশু ভাইয়া তুমি সিগারেট খাও আমি ফুপুরে বলে দিব,,,,

আৎকে ওঠে রিশান ছুড়ে মারে আঙ্গুলের চিপায় থাকা সিগারেট। হাসার চেষ্টা করে বলল — বইনা আমার ভালো দেখ আমার সিগারেট না এটা আমি খাইনি এটা চন্দ্রের তোরে আসতে দেখে আমার হাতে দিলো,,,,

— চন্দ্র ভাই সিগারেট খায়,,, বলেই অবাক চোখে চন্দ্রের দিকে তাকায় চন্দ্র পুনমের দিকেই তাকিয়ে আছে হালকা লেমন কালারের থ্রি পিছ মাথায় ওড়না চাপানো। সিথির মাঝখানে লাল লিলির টিকলি হাতে দুইটা সাদা লাল লিলির চুরি। সব মিলি চন্দ্রর বুক ধরফর করছে মনে হচ্ছে ঐ টিকলি দেয়া সিথির মাঝ বরাবর একটা লম্বা চুমু খেতে। কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয় এখনকার যুগে বারো বছরের মেয়েরাও প্রেম ভালোবাসা বুঝে
আর এই বেয়াক্কল সিদা কিচ্ছু বুঝে না।

— চন্দ্র ভাই তোমাকে বড় চাচা ডাকে,,,

পুনমের কথায় চন্দ্রের ভাবনার ব্রেক লাগে। সে বিরক্ত মুখ করে বলল — তুই যা আমি আসছি,,, আর হ‍্যা ভুলেও আমি যেদিকে থাকি সেদিকে আসবি না।
চন্দ্র আশে পাশে তাকিয়ে দেখে তাদের সাথে বসা কিছু ছেলেরাও পুনমের দিকে তাকিয়ে আছে।।

পুনম বেশ অপমান বোধ করে এই লোককে সে ইচ্ছে করে ডাকতে এসেছে নাকি। বিড়বিড় করে
— শয়তান
বলে চলে গেলো সেখান থেকে। পুনম যেতেই চন্দ্র সবার উদ্দেশ্যে বলল — ভাবী হয় তোমাদের বাদ্রার,,,

পরেই এতোক্ষণ পুনমকে মুগ্ধ নজরে দেখা ছেলেটার সামনে দাড়িয়ে তার ঘাড়ে হাত রেখে বলল — এভাবে দেখে না ভাই ঐ মেয়েটা এই চন্দ্রের হার্টে রাজত‍্য করে তাকে মুগ্ধ চোখে দেখাও এই চন্দ্র অধিকার ভাই। তো ভবিষ্যতে চোখ নিচে ওকে,,,

শান্ত স্বরের শক্ত বানিতে ছেলেটা ভয় পেলো মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা সম্মতি দিতেই চন্দ্র হাসি বিনিময় করে চলে গেলো বাবার কাছে।
— ভাই মেয়েটাকে মনে হয় চন্দ্র ভাই অনেক পছন্দ করে,,

— পছন্দ করে কি বেটা রীতিমতো পাগল ওর জন‍্য,,,

চন্দ্র শিহাবকে নিয়ে বাজারে যাবে কিছু সদাই আনতে। যেগুলো এখনই প্রয়োজন। পারভেজ সাহেবের মোটরবাইকে বসতেই নিশা কোথা থেকে হাজির

— চন্দ্র ভাই আমিও যাব,,

— এই রাতে তুই কই যাবি পিচ্চি,, আর আমরা যাব আর আসব,,, তুই হলুদের অনুষ্ঠানে যা দেখ সবাই রুপশাকে হলুদ দিচ্ছে।

নিশা তাকিয়ে দেখে সবাই জোড়ায় জোড়ায় রুপশাকে হলুদ দিচ্ছে।
— আমি তোমার সাথেই যাব আর যদি না নিতে চাও তো আমার সাথে এসে রুপশাপু কে হলুদ দিয়ে যাও।

চন্দ্র তাকিয়ে দেখল এখন পুনম মুক্তি স্টেজে উঠছে সে মুচকি হেসে বলল — চল

হাতে চাদঁ পাওয়ার মতো খুশী হয় নিশা। চন্দ্রের হাত ধরে স্টেজের সামনে যায়। চন্দ্র সাইড পরিবর্তন করে যেই সাইডে পুনম তার অপর সাইডে চন্দ্র রুপশাকে হলুদ দেয়ার সময় চন্দ্র পুনম একসাথেই তার গালে হলুদ ছোয়ায়। সেদিকে রূপশার ধ‍্যান নেই সে তাকিয়ে আছে নিশা ও চন্দ্রের হাতের দিকে যেটা নিশা ধরে আছে।

রুপশার গালে হলুদ ছুয়িয়ে দিয়ে নেমে যায় স্টেজ থেকে। নিশার মুখে জয়ী হাসি রূপশার চোখে হিংসা পুনম অবুঝ চোখে তাকিয়ে আছে। তিন বোন তিন রকম মনোভাব নিয়ে চন্দ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,;

#চলবে
ইডিট করতে পারিনি বানানে ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থী।