পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-০৯

0
2

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৯

নারীরা কোমলমতী। কুমাররা যেমন কাদা মাটিকে নিজের হাতের শিল্পে যেমন খুশী তেমন রুপ দেয় তেমনি নারীরা। যেখানে যেরুপ প্রয়োজন তেমনি ধারন করে আবার একটু আদর যত্নে তৈরী হয় সুন্দর ভাস্কর্য।

রুপশা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সদ‍্য স্বামী লিমনের দিকে এই লোকটা এখন কিভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে তার যত্ন নিচ্ছে তাকে দেখে মনেই হচ্ছে এই লোকটা কাল রাতে হিংস্র ছিলো তার হিংস্রতার রেশ রুপশার দেহে ব‍্যাথার সৃষ্টি করে। সেই লিমন এখন তার যত্ন নিচ্ছে নিজের হাতে একটু আগে তাকে গোসল করিয়ে এখন যত্ন করে তাকে খায়িয়ে দিচ্ছে।
রুপশাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে লিমন আড়ালে হাসে এইযে একটু যত্ন নিচ্ছে এতেই কাজ হয়ে যাবে।

— কাল আমাদের বউ ভাত তুমি তো অসুস্থ তাই বউভাতটা পিছিয়ে দিয়েছি,,,,

— আমি ঠিক আছি

— না ঠিক নেই আমার আদুরে বউটা ঠিক নেই,, আম সরি বউ দীর্ঘ দিনের জমানো ভালোবাসা একসাথে ঢেলে দিয়েছি,, ভবিষ্যতে খেয়াল রাখব আম সরি,,,

লিমনের করুন স্বরে গলে যায়। ভাবে লোকটা তাকে ভালোবাসে স্বামীর ভালোবাসাটাই এমন মনে হয়।।

_______

পুনম কাদতে কাদতে বের হয়ে দেখে ততক্ষণে পারভেজ সাহেবরা নিশাকে নিয়ে চলে এসেছে পারভেজ রোজিনা পুনমকে কাদতে দেখে বিচলিত হয়।
— তুমি নিশাকে নিয়ে ঘরে যাও আমি দেখছি পুনমের কি হইছে??

রোজিনা একবার পুনমের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। পারভেজ দ্রুত মেয়ের দিকে যায় পুনমে কাদতে কাদতে সামনে কাউকে দেখে উপরে তাকায় পারভেজ সাহেবকে দেখে তার বুকে ঝাপটে পরে।

— কি হইছে আম্মা,, আমার মা এমন কাদে ক‍্যান??

— চচচন্দ্র ভাই বকেছে,,,

চন্দ্র বকেছে শুনে ভ্রু কুচকে ন‍েয় পুনমকে এটা সেটা বলে শান্তনা দিয়ে ঘরে পাঠায়। পুনম ঘরে ঢুকে দেখে তার বোনেরা কেউ ঘরে নেই ভাবে সবাই বাইরে গেছে হয়তো।

উঠানে সবাই একত্রে বসে আছে। উঠানের পাশেই বসে চাদনী বেগম ও নিপা বেগম রান্না করছে সকাল সকাল সবাই গরম গরম পরটা দিয়ে আলু ভাজি খাচ্ছে পারভেজ সাহেব ও চন্দ্র একসাথেই বাইরে আসে,,,

সবাই হাসি ঠাট্টা করলেও চন্দ্রের চেহারা গম্ভীর। আর কামরুল সাহেবের চেহারা চিন্তিত। পারভেজ সাহেব ভাইয়ের পাশে বসে রোজিনা বেগম এসে তাকেও একটা থালায় আলু ভাজি পরটা দিয়ে যায়।

— কি হয়েছে ভাইজান এমন চিন্তিত লাগছে আপনাকে???

কামরুল সাহেব তাকায় পারভেজ সাহেবের দিকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল — কিছুনা এমনি,,,, তা রুপশার বউভাত কাল হবে কি কি বাজার নিয়ে যাবি লিষ্ট করেছিস,,,

— লিষ্ট ভাবী রোজি নিপা মিলে করে নিবে আপনি আমি গিয়ে বাজার করে আনব শুধু ।।

— ভাইজান পূর্ণ কই??

মিরাজ সাহেবের কথায় চন্দ্র ও এদিক ওদিক তাকায় নিজের ভাবনায় ব‍্যস্ত থাকায় এতোক্ষণ সে খেয়াল করেনি।।

— পুনম ঘরে মিরাজ আসছে,,,
পারভেজ সাহেবের বলার সাথে সাথে পুনম নিশা একসাথে আসে পুনম বাবার পাশে বসলেও নিশা চন্দ্রের পাশে বসে। তা দেখে শিহাব মিটমিট করে হাসে। রিশানকে কনুই দিয়ে ধাক্কা দেয়। রিশান এতোক্ষণ ঝিনুকের সাথে চোখাচোখিতে ব‍্যস্ত ছিলো।

— রিশাইননা একটু সংযত কর এখানে মুরুব্বিরা আছে
শিহাব কথাটা ধীরে বললেও পুরো কথাটাই কানে যায় ঝিনুকের সে লজ্জায় সেখান থেকে উঠে পুনমের পাশে মোড়া নিয়ে বসে। রিশান বিরক্তি নিয়ে শিহাবের দিকে তাকাতেই দেখে নিশা চন্দ্রের পাশে বসে আছে,,,,
— চন্দ্র ভাই দেখেন আমার হাতে কি জানি হয়েছে??

চন্দ্র সেদিকে একপলক তাকায় আবার পুনমের দিকে তাকায় যে আপাতত বাপ চাচার সাথে কথা বলে খেতে ব‍্যস্ত।
— চন্দ্র ভাই আমার হাতে ব‍্যাথা আমাকে খাইয়ে দিবেন??

নিশার কথা শুনে চন্দ্র চিল্লিয়ে রোজিনা বেগমকে ডাকে পাশে বসা শিহাব রিশান রাইয়‍্যান নিশাও ভয় পায়। রাইয়‍্যান ভ্রু কুচকে নিশার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের খাওয়াতে মনোযোগ দেয়।
চন্দ্রের ডাক শুনে তিন জা ভরকে ওঠে। রোজিনা বেগম দৌড়ে আসে।
— কি হয়েছে বাবা??

— নিশার হাতে ব‍্যাথা করছে ওকে খাইয়ে দেন।

রোজিনা বেগম তাড়াতাড়ি নিশা কাছে যায়
— বেশী ব‍্যাথা করে মা,,,??

নিশা চন্দ্রের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বলে। রোজিনা বেগম তাকে খাওয়াতে শুধু করে।

__________________

পরদিন সবাই যাবে ঢাকায় রুপশার শশুর বাড়ি। পারভেজ সাহেব একটা হাইছ ভাড়া করেছে সেটা দিয়েই সবাই যাবে। পুনমের ফুপুরা ঢাকা থেকেই যাবে।
নিশা লেহেঙ্গা পরে রেডি হয়ে আগে ভাগে চন্দ্রের পাশে দাড়িয়ে থাকে। মুক্তি পুনম ঝিনুক রিমি পরে আসে এরা চারজনই থ্রি পিছ পরেছে বরাবরের মতো পুনমের মাথায় ওড়না।

চন্দ্র সেদিকে অপলক তাকিয়ে আছে। পুনম মাথার ঘোমটা আরেকটু টানার জন‍্য হাত উচু করতে হাতের চুরির নৃত‍্য চন্দ্রের হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে
দ্রুত সবাই বের হোও সময় যাচ্ছে ঢাকায় গেলে জ‍্যামে পরতে হবে।

কামরুল সাহেবের কথায় ঘোর ভাঙ্গে চন্দ্রের। সে আর কিছু না বলে নিজের সীটে বসে রোজিনা বেগম বাদে সবাই যাচ্ছে।
চন্দ্র বসে তার পাশে রিশান বসতে নিলে কোথা থেকে নিশা এসে বসে পড়ল।

— রিশান ভাই তুমি পিছনে পুনম আপার পাশে বসো আমি এখানে বসি প্লিজ,,

রিশান রাজী হয়ে যেতে নিলে শিহাব রিশানকে আটকায় চোখ দিয়ে ইশারায় বলে চন্দ্রের দিকে তাকাতে রিশান চন্দ্রের দিকে তাকাতে দেখে চন্দ্র রক্ত চক্ষু দিয়ে তাকিয়ে আছে রিশানের দিকে।

— হে হে যামু না আমি,,,, আবার নিশার দিকে তাকিয়ে বলল — হিসু আই মিন নিশু তুই নেমে যা বইন আমি এখানেই বসব

— না না আমি এখানেই বসব
বলেই সেখানেই বসে পড়ে। — নিশু পিছনে গিয়ে বস

চন্দ্রের গম্ভীর স্বরে নিশা ভয় পায়। চুপচাপ নেমে মায়ের পাশে বসে পড়ে। রাইয়‍্যান বলল — চন্দ্র ভাইয়া এই ঢংগিরে নেয়ার কি দরকার এরে দেখলেই রাগ উঠে,,,

— রাইয়‍্যান ঐ হিশু হইল তোর চন্দ্র ভাইয়ের সিসিটিভি ক‍্যামেরা এরজন‍্য ওরে কিছু বলে না এরজন‍্য ওর গাল জোড়া এখনো আস্ত আছে নাহলে কবেই ঐ গাল সরকারি খাল হয়ে যাইতো;,,

শিহাবের কথায় রিশান ও রাইয়‍্যান উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। চন্দ্র চুপচাপ গম্ভীর স্বরে বসে রইল।

তেরো জনের গাড়িতে চৌদ্দ জন বসেছে নিশাকে পারভেজ সাহেব কোলে নিয়ে বসেছে। তখনই রাইয়‍্যান বলল — কি রে নিশা তুই নাকি বড় হয়ে এখন দেখি হিসু বেবী চাচ্চুর কোলে উঠে বসে পড়েছে,,,

রাইয়‍্যানের কথায় নিশা রাগি চোখে তাকিয়ে আবার চুপ করে বসে আছে তার মন এমনিতে খারাপ তাই সে এখন কোনো উত্তর দিলো না।

কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গাড়ি থামতেই দৌড়ে নামে নিশা। পারভেজ সাহেব,, কামরুল সাহেব,, মিরাজ সাহেব,, বিয়াই বিয়ানদের সাথে কথা বলে। ভিতরে যায় যাওয়ার আগে ডিক্কিতে বাজার সদাই আছে তা নামাতে বলে।

ছেলের বাড়ির লোকজন বাজার দেখে হতবাক। সবাই বলাবলি করছে যাক লিমন গ্রামে বিয়ে করলেও জিতে গেছে।

লিম রুপশা বর বউয়ের আসনে বসে ছিলো। রূপশা বাবা চাচাদের দেখে এগিয়ে আসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। লিমন শশুর বাড়ির লোকের আপ‍্যায়নে লেগে পরে।।।

— বড় আপারে তোরে কত্ত সুন্দর লাগছে এতো সুন্দর করে কে সাজিয়ে দিলো,,

— তোর দুলাভাই পার্লার থেকে লোক আনিয়েছে।

— আপা তোর কি ভাগ্য রে,,,

পিছন থেকে মুক্তি ঝিনুক রিমি পুনম আসে সবাই অনেক কথা বলে। পুনম রুপশার দিকে তাকায় আজকে রুপশার চোখ হাসছে না।

— আপা তুমি ভালো আছো,,,??

এই কথাটা এতোক্ষণ কেউ জিজ্ঞাসা করে নাই সবাই জামাই কেমন শশুর বাড়ির লোকেরা কেমন ভালো ভাবে চলবি আরো কত কথা বলল অথচ কেউ জিজ্ঞাসা করল না যে কেমন আছো??

আচ্ছা এই কথাটা রুপশার কাছে এতো মধুর কেনো লাগছে??
বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে নিয়ম অনুযায়ী নাইয়র যাওয়ার কথা রুপশার লিমনকে নিয়ে।
তবে লিমন এখন যাবে না সে কাল কক্সবাজার যাবে রুপশাকে নিয়ে।

মন খারাপ হয় সবার রুপশার মাথায় হাত বুলিয়ে সবাই চুপচাপ বের হয়ে যায়। পুনম যাওয়ার আগে রুপশাকে আরেবার জড়িয়ে ধরে
নিশা বলে — আপা কতভালো বর পেয়েছিস তোকে কক্সবাজার ঘুড়তে নিয়ে যাবে,,,

রুপশার মধ‍্যে কোনো উৎফুল্লতা দেখা দিলো না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে কক্সবাজারের থেকে বাবার বাড়ি যেতে পারলে বেশী খুশী হতো।

— মেয়েদের কি কপাল হ‍‍্যা কাল পযর্ন্ত রুপশা যেই বাড়ির রাজকন‍্যা ছিলো আজ তাকে সেই বাড়িতে যাওয়ার জন‍্য অন‍্যের অনুমতি নিতে হয়।

#চলবে
রিচেক দেয়া হয়নি। ভুল ক্ষমাপ্রার্থী