প্রণয়ডোর পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
800

#প্রণয়ডোর
#পর্ব_তেরো
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম

— আমি তো তোর বাবার কাছে যাইনি । আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর সেটা করেছে তোর খালাতো বোন ! যাকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করিস।

ব্যাস ! এতটুকুতেই কয়েক পা পিছিয়ে যায় শুভ্রা। প্রিয় মানুষেরাই শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাস করে এরকম টাই যেনো সিয়াম কে বোঝাতে যাচ্ছে। এতে সিয়ামের মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে। আর তখন সে আবারো বলতে শুরু করে,

— আমায় বলেছিলো তোর ক্ষতি করতে হবে। তখন ফারিহা মানে তোর খালাতো বোন আমার ই গার্লফ্রেন্ড ছিলো। গার্লফ্রেন্ড কে নিজের ক্ষমতা আর তোকে নিচে নামানোর জন্যই আমি এই কাজ টা করেছি। তোকে তো অনেক খুঁজেছি। পাইনি, অবশেষে পেয়ে যখন গেলাম তখন তো তোকে সেদিন ট্রাকচাপায় মারতে চেয়েছিলাম। কীভাবে কীভাবে আমার গার্লফ্রেন্ড ই চলে আসে মাঝে। মায়া হলো ওর প্রতি, তাই আর ঝামেলা করিনি। কিন্তু এখন তোর বুড়ো বাপের মাথায় ভিমরতি ধরেছে। আমায় বলছে যে, তুই নাকি ওনার মেয়ে না। আরেকজন নাকি ওনার মেয়ে।

এটুকু শুনেই শুভ্রা ফিঁক করে হেঁসে দেয়। চেয়ারে আবারো বসে পড়ে। আর বলে ,

— আমিও ওনার মেয়ে, সেটাও ওনার মেয়ে। জাস্ট ডিফরেন্ট শুধু ফেইসে। সময়ের সাথে সাথে ওনার ভীমরতি আশা করি চলে যাবে। কিন্তু কি করবো বল ! তোকে তো আমি আজ শাস্তি দিয়েই যাবো। কি বলতো , আমায় যেদিন কিডন্যাপ করে টানা ১ সপ্তাহ আটকে রাখা হয়েছিলো তখন তো আমি তোকেই প্রথম দেখেছিলাম।
এইটুকু শুনেই সিয়ামের চোখে মুখে অবিশ্বাস্যতা বিরাজ করে। আর বলে ,

— সেদিনের মেয়েটা তুই কীভাবে হতে পারিস ? ওটা তো অন্য মেয়ে ছিলো !

— আরে বললাম না ? ফেইস মিস্ট্রি ! সেদিন যে ফেইসে আমাকে দেখেছিলি সেটা ছিলো আমার দ্বিতীয় ফেইস। যেটা বাবা নামক হিংস্র পুরুষ আর তুই চিনিস। আমি ইচ্ছে করেই তোর সাথে সম্পর্কে যাই আর ইচ্ছে করেই ফারিহা আপুকে তোর পেছনে পাঠাই, এতে আমার প্লাস পয়েন্ট কি জানিস ? আমি তোর আর বাবার অল্প অল্প পদক্ষেপ আর তোদের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা নিয়েছিলাম। আমি তোর সাথে সম্পর্কে থেকেও এইসব জানতে পারতাম তবে করিনি কারন এটা করলে বাবা কে আমার পরিচয় দেওয়া টা কঠিন যেমন হবে তেমন আমার বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হওয়া টাও কঠিন ছিলো। আর একটু আগে পেছনে সরে গিয়ে বোঝালাম যে আমি দূর্বল আর তুই নিজেকে জয়ী ভেবে যেনো সবটা বলে দিস।

এটুকু বলেই হাতের ইশারায় কাউকে এক গ্লাস পানি দিতে বলে সে। পানি দেওয়ার পর সেটা পান করে সিয়ামের দিকে দীর্ঘ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। আর বলে ,

— আমায় তুই ঠকিয়েছিস ইচ্ছে করে আর আমি ইচ্ছে করেই সরে এসেছি। সুতারাং আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসা বলতে তুই ছিলিস না। ছিলো ড…। বাদ দে সেসব। অনেক কু’কাম করেছিস। ইভেন আজকে নিয়ে ৭ টা মেয়ে কে ধর্ষণ তুই করেছিস। অলরেডি সেসব প্রমাণ কোর্টে চালান করে দিয়েছি। আগামীকাল তোর শুনানি, অতঃপর ফাঁসি। ভালো থাকিস ধর্ষক।

কথা শেষ করে দ্রুত প্রস্থান ঘটায় শুভ্রা। সিয়াম কে যেনো কড়া নজরে রাখা হয় সেই ব্যবস্থা ই সে ফোনে করতে বললো। চৈত্র মাসের কাঠফাটা রোদ্দুর। তবুও ওর পড়নে হুডি আর জিন্স। সাথে গাড়ি আনা সত্ত্বেও ড্রাইভার কে কল করে গাড়ি নিয়ে যেতে বলে পা চালায় শান বাঁধানো রাস্তায়। একটা ব্যাপার তার পুরোপুরি ক্লিয়ার যে তার বাবা নামে যে ব্যক্তি আছে তার মাঝে ঘাপলা অবশ্যই আছে। সিয়াম কে নিয়ে এখন আর সন্দেহ নেই। ফারিহা তো আগে থেকেই অল ক্লিয়ার। খালামণি আর তাসবি তো অন্য ধাঁচের। আর আংকেল আন্টিও তেমন। সুতারাং পরিবারের কেউ না হওয়ার চান্স অধিক। কেনো যেনো তার বারবার মনে হচ্ছে ‘নীল নীলাঞ্জনা’ বাড়িটা তে একবার তার বাবা আরেকবার অন্য একটা লোক বসবাস করছে। কিন্তু বউ তো একটাই। সন্তান ও একটাই। গভীর একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে সে। দ্রুত কল করে গোয়েন্দা ব্রাঞ্চে। তার টিম কে এই নেওয়াজ মির্জার ফুল ডিটেইলস বের করতে বলে আর বাড়ির আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করার নির্দেশ দেয়। সেই সাথে এটাও বলে দেয় যে গত ১৫ বছর আগের তার মায়ের এক্সিডেন্টের সবকিছু যেনো তাকে পাঠিয়ে দেয়। এই প্রথমবার তার মনে হচ্ছে যে সে তার ২২ বছরের জীবনে ৬ নম্বর কেসের বেলাতেই ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। তবে তার জন্য আগে শুরু থেকে শুরু করা উচিত। আর সুযোগ বুঝে ‘নীল নীলাঞ্জনা’ বাড়িটায় থেকে গোপন একটা কাজ করতে হবে। সুতারাং এই সপ্তাহেই তাকে সব বন্দোবস্ত করে উঠতে হবে বাবার বাড়ি।

এসব ভাবতে ভাবতেই একটা প্রাইভেট কার এসে থামে তার সামনে। হঠাৎ কোনো গাড়ি আসায় থমকে যায় শুভ্রা। দ্রুততার সাথে গাড়ির দিকে তাকায়। সাথে সাথে চমকে যায়। আশ-পাশ ভালো করে দেখে। মনে হচ্ছে রাস্তা টা তার জন্য খানিকটা নিরাপদ। তাই আর না ভেবে দ্রুততার সাথে ক্যাপ সরিয়ে হাতে নেয়। কিছু করে উঠার আগেই কারের দরজা খুলে যায়। একটা হাত তাকে হ্যাঁচকা টানে গাড়ির ভেতর নিয়ে নেয়।

~চলবে?

#প্রণয়ডোর
#পর্ব_চৌদ্দ
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম

— সমস্যা কি আপনার মিস্টার তাসবি ?

কপট রাগ দেখিয়ে উক্ত কথাটি বলে উঠে শুভ্রা। তাসবি মুখ টিপে হাঁসে। আর সেভাবেই বলে,

— আমার সমস্যা তো আমার সামনেই বসে আছে। এই যে !

এটুকু ভ্রু কপালে উঠিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে তাসবি। কপাল কুঁচকে ফেলে সে। কথা না বাড়িয়ে দ্রুত নিজের হুডি খুলতে শুরু করে সেভাবে বসে থাকা অবস্থাতেই। ভেতরে তার লেডিস শার্ট আর প্যান্ট থাকায় কোনো সংকোচ করলো না সে। এসির রিমোট টা হাতে নিয়ে খানিকটা কমিয়ে হেলান দেয় সিটে। চোখ বুঁজে বার কয়েক লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করেই তাসবিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করে,

— এখানে এসেছিলেন কেন ?

— হঠাৎ মনে হলো বউকে ফলো করি। আর সেটা করতে করতেই এখান অব্দি পৌঁছে গেলাম।

তার ভাবলেশহীন উত্তর। শুভ্রা এহেন উত্তর শুনে চোখ খুলে এক হাত সামনে ঠেকিয়ে ঝুঁকে তাসবির কাছে যায়। তা দেখে তাসবি ভ্রু কুচঁকায় আর বলে ,

— সমস্যা কি আপনার ? দিন দিন মনে হচ্ছে বউ পাগল হয়ে যাচ্ছেন ? কাহিনী কি বলবেন ?

— বউ পাগল হলাম কোথায় ?

— নাহ ! দিনদিন ভীষণ পরিবর্তন হচ্ছেন আপনি। এটা কিন্তু ঠিক না !

তাচ্ছিল্যের হাঁসি হাঁসে তাসবি। এতে শুভ্রা কনফিউজড হয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। সেকেন্ড কয়েক পরখ করে সোজা হয়ে বসে সিট বেল্ট বেঁধে বলে ,

— গাড়ি স্টার্ট করুন। আন্টির বাসায় যাবো আজ। খালামনি কে বলে দিবেন। আর থ্যাংকস ! এই টাইমে আপনাকে পেয়ে বেশ ভালোই হয়েছে।

কথার প্রেক্ষিতে কোনো উত্তর দেয়না তাসবি। শুধু ফেললো দীর্ঘশ্বাস। তাদের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর। অথচ সেই সম্পর্কের স টাও নেই। এটা নিয়ে বারবার কয়েকবার প্রশ্ন তুললেও শুভ্রা বেশ ভালোভাবেই বুদ্ধি খাঁটিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে। এবারও তো সেটাই করলো। তাসবির এই সম্পর্কের জন্য বড্ড হাঁসি পায়। যেখানে তার বন্ধুরা বউ নিয়ে বিন্দাস জীবন উদযাপন করছে সেখানে সে ? বউয়ের সান্নিধ্যে আসতেই ভাবতে হচ্ছে। শুভ্রা কে আগে ভালো না বাসলেও বিয়ের পরে তার প্রতি অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করেছে। হয়তো এটাই হালাল সম্পর্কের জোড়। তাসবি যেখানে ছেলে হয়ে দূরে থাকা স্ত্রী কে অনায়াসেই ভালোবেসে ফেলেছে সেখানে শুভ্রার কোনো অনুভূতি বলতে কিছুই নেই। সব যেনো কল্পনা। তাসবির তো মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো এই ঝামেলা সব চুঁকে গেলে শুভ্রা তাকে ছেড়ে চলে যাবে। কারন তাদের সম্পর্ক তো পরিস্থিতির শিকার হয়ে তবেই তৈরি হয়েছে। এবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাসবি। উপরওয়ালার উপর সবটা ছেড়ে দিয়েছে সে। ছেলে হয়ে নিজের স্ত্রীর অবহেলা মেনে নেওয়া কখনোই সম্ভব না সেখানে সে সেটা যেনো সহ্য করতে পারে সে জন্য আল্লাহর কাছে বারবার দোঁয়া করে। তবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তাকে যা যা করতে হবে সব সে করবে। বাকীটা আল্লাহর উপর। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী।

এইসব ভাবতে ভাবতেই গাড়ি চালাতে থাকে সে। চোখ-মুখে আগের উজ্জ্বলতা টা চুপসে গিয়ে কালো আঁধার নেমে এসেছে। তখনই আওয়াজ আসে শুভ্রার।

— শুনুন ! এই সম্পর্ক টা আমি আগেও মানি নি। এখনোও না। আপনি যত আগে পারবেন এই সব অনুভূতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চালাবেন আশা করি। আমি আমার পরিবারের সমস্যা মিটমাটের পরই আমাদের বিচ্ছেদ আই মিন ডিভোর্স হবে। আমি কোনো পুরুষ কে নিজের সাথে জুড়তে চাইনা। কেবল মা কে নিয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দেবো। আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমি মা হতে পারবো না কোনোদিন , তাহলে ?

এটুকু বলে চুপ থেকে যায় শুভ্রা। তাসবির দিকে তাকায়। সে সেভাবেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। তার রিয়াকশন বোঝার জো নেই। এবার শুভ্রাও মুচকি হেঁসে বললো,

— প্রত্যেকটা ছেলেই তার পিতৃত্বের সুখ চায়। যেখানে যেটা আমি দিতে পারবোনা আপনাকে। আজকের পর আর কোনোদিন এমন কোনো কথা তুলবেন না আমার কাছে। আশা করি ব্যাপার টা ক্লিয়ার হয়ে গেছে আপনার কাছে।

তাসবি এবারও কিছু বললো না। ব্যাপার টা গাঁয়ে মাখলো না শুভ্রা। কি’ই বা বলবে শুভ্রা। কি এক ঘন কালো অতীত ছিলো তার। সেখান থেকে যদিও তাসবি তাকে বের করেছে অবশ্যই তবে সে তো যোগ্য নয় তাসবির। এটুকু ভেবেই অতীতে যায় শুভ্রা।

মেডিক্যালের ৪ র্থ দিন ছিলো তার। যথেষ্ট সুন্দরী হওয়ায় কিছুদিন আগ থেকেই কয়েকটা ছেলে তাকে বিরক্ত করছিলো। তখন তার গোয়েন্দা তে একটা কেস ছিলো যেটা তাকেই দেওয়া হয়েছিলো। আর সেদিন’ই সব ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার কথা ছিলো। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে মেডিকেলের ক্লাস শেষ করেই চলে যাবে ডিরেক্ট অফিসে। যেই ভাবা সেই কাজ ! তার বেরিয়ে আসার দশ মিনিট পর কল আসলো তার ফোনে আর তার এসিস্ট্যান্ট জানালো যে তাকে আধা ঘন্টার মধ্যেই আসতে হবে, না হলে খুনির পালানোএ চান্স রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা শুভ্রার খবর জেনে গিয়েছে তাই তারা তাকে ধাওয়া করতে আসছে। এটুকু শুনেই মাথায় হাত দিয়ে দেয় সে। বুদ্ধি করে শর্টকাট রাস্তায় যাওয়ার বুদ্ধি আটে আর স্কুটি নিয়ে চলে যায়। তবে মাঝপথেই বিপত্তি ঘটে। সেই ছেলে গুলো তার পথ আটকায়। তাকে ধরতে আসলে যখন সে এটা সেটা দিয়ে ওদের প্রতিহত করতে শুরু করে তখনই কেউ একজন এসে তার পেটের নিচ বরাবর একটা তক্তা বিশেষ দিয়ে জোড়েসোড়ে আঘাত করে। এতেই লুটিয়ে পড়ে যায় শুভ্রা। জ্ঞান হারায় সে সেখানে। আর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলো হোটেলে। বেলকনিতে ছিলো তাসবি। তাসবি কে দেখেই সন্দেহের দৃষ্টিতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এগিয়ে যেতে চায় সে। কিন্তু প্রচন্ড ব্যথায় নড়তেও পারেনি। সেভাবেই শুয়ে থেকে যায় সে। এনাকে সে চেনে। তারই মেডিক্যালে ইন্টার্ন করছে। বারকয়েক দেখেছিলো সে। আর তার মস্তিষ্ক একবার যা দেখে তা খুব সহজে ক্যাচ করে ফেলতে পারে। যার ফলে আর ভাবতে হলো না তাকে। তাসবি কে ‘শুনুন’ বলে ডাক দিতেই লোকটি এগিয়ে আসে। একপর্যায়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলো যে , সেইম রাস্তা দিয়েই নিজের গাড়ি করে আসছিলো সে। রাস্তায় এসব দেখে গাড়ি থামাথেই ওরা দ্রুত পালায়। গাড়ির প্লেটের নাম্বার পুলিশকে জানিয়েছে সে কিন্তু তারা বলেছে এটা ভুল প্লেট নম্বর। সেটা নিয়েই ভাবছিলো সে। নিজের বাসায় তাসবির পক্ষে শুভ্রা কে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলো না। তাই তো হোটেলে উঠেছিলো। আর শুভ্রাকে একবার দেখে আর পড়নে এপ্রোন দেখতে পেয়েই নিজের গাড়িতে নিয়ে এসে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করে খানিকটা জ্ঞান ফেরাতে সক্ষম হলো। সব শুনে শুভ্রা কিছুই বলেনি সেদিন। অনেকক্ষণ চুপচাপ থেকে বলেছিলো শুধু, ডক্টরের কাছে যাবো আমি, আমার কিছুই ঠিক লাগছে না। প্লিজ নিয়ে চলুন। আমার আর কোনো কথা নেই। একটিবার নিয়ে চলুন। তখনই শুভ্রার কথায় সায় জানিয়ে কাউকে কল করে বলে আর নিজে ঠিকঠাক হয়ে শুভ্রাকে কোলে করে নিয়ে যায় গাড়িতে। সেভাবে ছাড়া উপান্তর ছিলো না শুভ্রার। তলপেটে বেশ জোড়েসোড়েই আঘাত পেয়েছে সে । আর ভুলক্রমে হাসতাপালেও সেইভাবে কোলে করে নিয়ে প্রবেশ করে তাসবি। সকলে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। ব্যাপার টা নরমাল ই ছিলো কিন্তু যখন শুভ্রার খানিকটা ট্রিটমেন্টের জন্য বন্ডে সই করতে হয়েছিলো সেখানে সে স্বামীর জায়ইগায় সাইন করে ফেলেছিলো। বন্ডে সই এই জন্যই লেগেছিলো কারন শুভ্রার প্রবলেম সলভ করা অবস্থা তেই তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো। সেজন্যই…! তাসবির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো আকসার। সে একসময় তাসবির বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। সবই জানতো তাসবির ব্যাপারে। তারপর তাদের মধ্যে ঝগড়া হওয়ায় পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব দিক থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। আর তাসবি কে পুরো কলেজে চরিত্রহীন বানানোর জন্য তাদের হোটেলে থাকার একটা ডিটেইলস কপি আর শুভ্রার ইন্টার্নাল প্রবলেম তুলে ধরে আকসার। সবাই তার দিকে আঙুল তুলেছিলো। তখন কি করবে না করবে এই ভেবে বলে দেয় শুভ্রা তার স্ত্রী। সেখানেই বাঁধে বিপত্তি। প্রমাণ চেয়ে বসে সবাই। ব্যাপার টা এমন একটা অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায় যে প্রমাণ ছাড়া রেহাই নেই। তাই সে হসপিটালের বন্ড পেপারে তার সাইন টা দেখিয়ে দেয়। এতেও আকসার থেমে যায়নি। সত্যতা প্রমাণ করতে আবারো তাদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আকসার। অফিসের কতৃপক্ষ ও তাদের কলেজের দূর্নামের ভয়ে চাপ দেয় তাসবি কে বিয়ে করার জন্য। এখানে আপত্তি করলেই কলঙ্কিত হবে দু’জনে। সত্যিটাও বলার স্কোপ নেই কেননা সবটা ঘেঁটে দিয়েছে আকসার। শুভ্রা সব শুনে কিছু বলেনি। সেও নিজের চরিত্রে কলঙ্ক লেপতে চায় না। আর তার সুরক্ষার জন্যও কাউকে তার ঢাল হিসেবে দরকার। আবার যে মানুষ টা তাকে বাঁচিয়েছে তার মান-সম্মানের ব্যালার জড়িয়ে আছে। সত্যি বলতে গেলেও সত্যের প্রমাণ চাইবে যেটা এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব ই না একদম। সেজন্য সেও কলেজের এক ঝাঁক লোকের মাঝে কবুল বলে নিজের স্বামী রূপে গ্রহন করে নেয়। তারপর থেকেই তো তারা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু সেদিনের পর খুব একটা দরকার ছাড়া সামনে আসেনি শুভ্রা। আর তারপর শুভ্রার পক্ষ থেকে কোনো উন্নতি হয়নি এই সম্পর্কের। আর ডক্টর রিপোর্টে বলা হয় যে, শুভ্রা মা হাবার ক্ষমতা হারিয়েছেন বললেই চলে। চান্স মাত্র এক পার্সেন্ট।
(আমি ব্যাপার টা বেশি ব্যাখ্যা করতে চাইছিনা, তাই সংক্ষেপেই বললাম)

এরপর আর এই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক টা নিয়ে ভাববার প্রয়োজন মনে করেনি সে । তবে এর মাঝে হয়তোবা অনুভূতির সাথে পরিচয় হয়েছে তার, শুধু পরিস্থিতির জন্য নিজেকে দমিয়ে রাখছে। সেটা তো কেবল সেই জানে।

গাড়ি ব্রেক করায় পদার্থবিজ্ঞানের জড়তা অনুযায়ী সামনে ঝুঁকে যায় সে। ফিরে আসে বাস্তবে। পাশ ফিরে তাসবিকে গাড়ির বাহিরে দেখলো। সে এপাশে এসে শুভ্রার ডোর খুলে দাড়ালো। যার অর্থ শুভ্রা নামুক। এটা প্রায়ই সে করে। তাই আর অবাক হয়নি শুভ্রা। মুচকি হাঁসি উপহার দিয়ে নেমে আসে। বাড়ির ভেতর যাবার জন্য পা বাড়াবে আর এর মধ্যেই হাত ধরে ফেলে তাসবি। ভ্রু উঠিয়ে পেছন ফেরে তাসবির দিকে তাকায়। বুঝতে চেষ্টা করে যে কিসের জন্য হাত ধরলো। আর এতেই তাসবি তাকে বলে ,

— বাচ্চার বাবা হওয়ার নিশ্চয়তা আছেই তো। এক পার্সেন্ট কি পয়েন্ট ফাইভ ফাইভ থাকলেও প্রবলেম নেই। নিশ্চয়তা নেই এমন তো না ! দেবার মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে খুশি তাকে বাবা হওয়ার স্বাদ দিতে পারেন। মানুষ তো কেবল উছিলা। তাই বলে বিচ্ছেদ ?

#চলবে

#প্রণয়ডোর
#পর্ব_পনেরো
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম

— বাচ্চার বাবা হওয়ার নিশ্চয়তা আছেই তো। এক পার্সেন্ট কি পয়েন্ট ফাইভ ফাইভ থাকলেও প্রবলেম নেই। নিশ্চয়তা নেই এমন তো না ! দেবার মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে খুশি তাকে বাবা হওয়ার স্বাদ দিতে পারেন। মানুষ তো কেবল উছিলা। তাই বলে বিচ্ছেদ ?

তাসবির কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকায় শুভ্রা। হাতের বাঁধন আলগা করে নেয়। এক হাতে হুডি টা রেখে তাসবির চোখে চোখ রেখে বলে ,

— যুক্তি সবসময় পূর্ণতা দেয়না , বিচ্ছেদ ও ঘটায়। আর যদি ইচ্ছের কথা বলি তো, বিচ্ছেদ ই আমার জয়লাভের পরের পদক্ষেপ।

এটুকু বলেই ধীরগতিতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে সে। তাসবি অপলক তাকিয়ে রয় শুধু। বুলি আওড়ালো না। অপেক্ষা করলো যেনো নিজের অর্ধাঙ্গিনী তার পানে একটিবার ফিরে তাকায়। কিন্তু ভুল প্রমাণিত হয় সে। একটিবারের জন্যও ফিরে তাকায় নি তার মনের মানুষ টি। দু কদম পিছিয়ে গিয়ে গাড়িতে সম্পূর্ন হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। আকাশের পানে তাকায়। দু চোখ তার ছলছল করছে। ছেলেরা নাকি কাঁদে না। অথচ তাসবি ? অনুভূতিহীন এক মানবীর জন্য তার হুটহাট মন খারাপ হয় , খুব কষ্ট পেলে চোখে জল আসে। তবে আজ তাসবির দু গোঁটা নোনা জল ভূমি স্পর্শ করে ফেললো। তাকিয়ে দেখলো না সেই নিষ্ঠুর মানবী। অনুভূতি ছাড়া মানুষ নেই। তবে শুভ্রার ক্ষেত্রে কেন এমন টা হয়না ? মেয়েটা তাকে স্বামী হিসেবে কোনোদিন কোনো ব্যবহার অবধি ও করেনি। যবে থেকে তাকে খালাতো ভাই হিসেবে জেনেছে তবে থেকেই কেবল আগের তুলনায় সম্পর্ক না এগোলেও মুখের কথাটা বেড়েছে। আজকের প্রত্যাখ্যান টা তাসবির উপর ইফেক্ট পড়লো খুব। তাই সে গাড়ি থেকে খানিকব টা দূরে গিয়ে আবার দ্রুততার সাথে সামনে এসে জোড়ে লাথি মারে গাড়ির ফ্রন্ট দরজার সম্মুখে। পায়ে আঘাত পেলো কিনা বোঝা গেলো না। সেভাবেই গাড়িতে উঠে বসলো সে । গাড়ির এসি বন্ধ করে সব গ্লাস বন্ধ করে দিলো আর গাড়ি চালাতে লাগলো। নরমাললি চালিয়ে যখন হাইওয়ে তো উঠলো তখন গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে এলোমেলো ভাবে ড্রাইভ করতে লাগলো। আর অস্বাভাবিক ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করলে মৃত্যু তো দুয়ারে একদম। হাইওয়ে বলে কথা ! তাসবির ক্ষেত্রে কেনো এমন টার ব্যতিক্রম হবে ? একজন ডাক্তার যেখানে সবসময় নিজেকে প্রোটেক্ট করে রাখে সেখানে সে নিজের মৃত্যু কে নিজে টানছে। সেও তো প্রোটেক্টিভ ছিলো কিন্তু এক নিষ্ঠুর মানবীর কারনে সব লন্ড-ভন্ড হয়ে গেলো। মার কথা মনে পড়ছে তার। কিন্তু এই গোলকধাঁধায় সে আর থাকবে না। শুভ্রার বলা একটা কথাই বারবার তার মনে পড়ছে , জয়লাভের পর তো আমার বিচ্ছেদ ই আমার পরবর্তী পদক্ষেপ। তার কলিজা কেঁপে উঠছে বারবার। জয়লাভের পর তো তাকে ছেড়ে দেবেই। তখন কেউ আর আটকাতে পারবে না এই বিচ্ছেদ। আর এই বিচ্ছেদের যন্ত্রনা সহ্য করা সম্ভব নয় তার কাছে। আর তার যন্ত্রনায় মা হাজার গুণ কষ্ট পাবে। তার থেকে এটা রটুক ছেলেটা কার এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। অন্তত মাকে কষ্ট দেবে না ওই হাজারগুণে। শুভ্রার গাঁয়েও থেকে যাবে ‘তাসবির বউ’ ট্যাগ। যুগের পর যুগ পেরোলেও এই সত্যি থেকে যাবে যে শুভ্রা তাসবির বউ। যদিও সে মৃত কিন্তু লোকমুখে শোনা তো যাবে। নাই বা পেলো তাকে , নিজের এক ফালি অস্তিত্ব তো রেখে যাবে। নয়তো বেঁচে থাকলে শুভ্রাকে ডিভোর্স দিতেই হবে। তার থেকে মৃত্যুই যথেষ্ট।

এটুকু ভেবেই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে গাড়িটি কিনারা ঘেঁষে নিয়ে যেতে থাকে। অতঃপর সংঘর্ষ !

~~

ব্যাগ পত্র গুছিয়ে আন্টি আর আংকেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রা। হাতের ট্রলি টা সাইডে সরিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। ভদ্র মহিলার হাত দু’খানা ধরে। সাথে সাতে ভদ্র মহিলার গাল পেয়ে গরম পানি টুপ করে শুভ্রার হাত স্পর্শ করলো। তবুও সে নিঃসংকোচে চুমু খায়। ততক্ষণে চোখে জল এসে পড়েছে তার। ধরা গলায় আন্টিকে শোধায় ,

— আন্টি ! আমি তোমায় খুব ভালোবাসি । কিন্তু কি বলোতো ? কিছু পুরনো হিসেব চুকাতে হবে তো তাই আমাকে সে বাড়িতে যেতে হবে। চিন্তা করো না, আমি পুরোপুরি নিরাপদ। আমায় সবভাবেই নিরাপদ রাখা হবে। ব্যস আর সাতটাদিন এরপরেই আবারো ফিরে আসবো তোমাদের কাছে। আমার যে তোমরা ছাড়া আর কেউ নেই। খালামনি থাকলেও আমার দুঃখের সাথী তোমরা। খুব দরকার হলে সবাই মিলেই জয়েন হয়ে থাকবো। তাও মন খারাপ করো না, চোখের জল ফেলো না আর। ভালো একটা কাজে যাচ্ছি মন খারাপ থাকলে হয় ?

ভদ্র মহিলার খানিকটা উন্নতি হয়েছে আগের তুলনায়। শুভ্রার কথার প্রেক্ষিতে শুধু মুচকি হাঁসলো। যেনো তিনি শান্ত হয়েছেন সেটাই বুঝিয়েছেন শুভ্রা কে। শুভ্রাও তা দেখে মুচকি হাঁসলো। শান্তির হাঁসি এটি। এবার উঠে দাঁড়ায়। সাইড ব্যাগ টা ঠিক করে ভদ্র লোকের বরাবর দাঁড়ায়। মাথা উঁচু রেখেই পা য়ে হাত দিয়ে সালাম করে নিলো। সাথে সাথে লোকটি ধরে ফেললেন তাকে। তার চোখ ও আজ ছলছল করছে। মেয়েটা গতকাল ই বাড়িতে এসে এমন সিদ্ধান্ত জানালো। আর আজ ই চলে যাচ্ছে। অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায় শুভ্রার দিকে। মাথায় হাত রেখে আশ্বাসের সাথে বলে ,

— জানি তুই আমার মেয়ে না। কিন্তু তুই সবসময় আমার মেয়ে হয়েই থাকবি । যে কাজে যাচ্ছিস সফল হয়ে দ্রুত বাবার কোলে ফিরে আয়। আল্লাহ তোর সহায় হোক। আমি অপেক্ষায় থাকবো তোর ! এত্তগুলা ভালোবাসে তোকে বাবা।

এটুকুতেই আলতো হেঁসে জড়িয়ে ধরে সে। মানুষ টা তার জন্মদাতা পিতা না হলেও পিতার চেয়ে কম ভুমিকা তিঞ্জ রাখেননি। তার সাথে শুভ্রার যাত্রা টা স্বল্প সময়ের হলেও পিতার অবদান টা বড্ড বেশিই রেখেছি এই ব্যক্তি। শুভ্রা বুঝে পায়না একটা মেয়ে পাগল বাবা শুধু তার মেয়ের নামের সাথে সামঞ্জস্য হওয়ায় কতটা মাথায় তুলে রাখে তাকে। তার সত্যিকারের মেয়ে হলে না জানি কি করতো ..! সেইজ শুভ্রা মেয়েটা বড্ড অভাগী। বাবার ভালোবাসা না পেয়েই হারিয়ে গেলো। সেই সুযোগে নিজের বাবার অভাব টাও খানিক পূরণ হলো। নিজের বাবা কথাটা মনে করতেই ঘৃণায় চোখ জ্বলে যায় তার। বাবার সঙ্গা তার কাছে এমন ঠেঁকেছে যে , জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায়না । বাবার কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আর ভালোবাসা দেওয়ার থাকে। এগুলো যিনি দিতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে একজন বাবা। অন্যথায় সে পশু। এবার শব্দ করে ভদ্র লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

— দোঁয়া করো আমার জন্য আঙ্কেল। তোমাদের দোঁয়া ছাড়া যে আমি বড্ড অসহায়। তোমরাই আমার শক্তি। তুমি না থাকলে এটুকু পথ আগানো যেতো না। আর সবসময় ভরসা রাখবে আল্লাহর উপর। আর ইচ্ছে হলেই কিন্তু কল করবো।

— ঠিক আছে মা !

— ঠিক আছে। আসছি তাহলে।

এটুকু বলেই ট্রলি হাতে লতুর দিকে এগিয়ে যায়। মেয়টাও এ কদিনে কম ভালবাসা দেয়নি। তার হাত ধরেই শুভ্রা বলে ,

— বাড়ির খেয়াল রাখিস বোন। আমার অনুপস্থিতিতে যেনো কারোর কোনো ক্ষতি না হয়।

শুভ্রার কথা শুনে মুখ তুলে তাকায় লতু। স্বর খানিকটা নামানো। সেভাবেই বলে উঠলো ,

— আপা!

— শুধু দোঁয়া চাই। আসি !

এটুকু বলেই ছলছল চোখে অতিক্রম করে সে বাড়ির সদর দরজা। পেছনের কেউই গেলো না। কারন তারা শুভ্রার সাথে গেলে আর সদর দরজায় আর ফিরে আসতে পারবে না। মেয়েটা তাদের কে যথেষ্ট মায়ায় বেঁধে ফেলেছে এই শুভ্রা।

~~

গাড়িতে বসেই এসির পাওয়ার পছন্দ অনুযায়ী দিলো। সিট বেল্ট বেঁধে নিজের ফোন্টা বের করে ওয়াটসঅ্যাপ এ গিয়ে একটা ভিডিও প্লে করে। ভিডিও টা ড্রোন দিয়ে করানো হয়েছে। তাসবির গাড়ি দেখা যাচ্ছে। প্লেটের নাম্বার টা তাসবির গাড়ি কে প্রমাণ করলো। ভিডদিও তে গাড়িটি এলোমেলো ভাবে চললো খানিকক্ষণ। তারপর একদম কিনারে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলো গাড়িটা। ব্যাস এইটুকুই। ভিডিও টা দেখে মুচকি হাঁসে শুভ্রা। নিচে ‘ডান’ লেখাটা শুভ্রার চোখ আটকালো। নিজেও টাইপ করে দিলো মেসেজ টা ,

— মৃত্যু নিশ্চিত করে আমাকে প্রুভড পাঠাও। দেন পে করে দিচ্ছি।

এটুকু বলে ফোনটা রাখার সাথে সাথে কল আসলো তার ফোনে। নাম্বার টায় চোখ বুলালো। খালামনির নাম্বার টা স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে। কলটা রিসিভ করতেই কান্নামাখা স্বর আসে অপর পক্ষ থেকে ,

— মা রে , তাসবি…!

কথা শেষ করার আগেই শুভ্রা বলে ,

— তোমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে পেরেছি গতকাল ই। কিন্তু আমার তো ইম্পোর্টেন্ট মিটিং আছে আর আমার মিশন শেষ হতে চললো বলে তাই আমি এই মুহূর্তে, এসব খবরে জড়াতে পারবো না। দুঃখিত আমি।

এটুকু বলেই রহস্যময় হাঁসি হেঁসে খট করে কল কাটলো সে । এদিকে ছেলে বউয়ের মুখে এহেন কথা শুনে কলিজা ধ্বক করে উঠলো ভদ্র মহিলার।

#চলবে