প্রণয়ডোর পর্ব-৩৯+৪০

0
44

#প্রণয়ডোর
|৩৯|
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

শেষের চড়ে একটা দাঁত খুলে গিয়েছিলো ছেলেটার। আসলাম মির্জা কেবল অফিসে এসে এই দৃশ্য নজরে নিলেন। ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যানেজার আর নিজ ছেলেকে অনবরত প্রহার করছেন ভাই ফাইয়াজ মির্জা।

ব্যাপারটা মনে দাগ কাটলো খুব। সত্যিই সে ফাইয়াজের ভাই হয়ে উঠতে পারেনি, নাহলে ভাইয়ের ছেলেকে এইভাবে কেউ…? না, কখনোই না । ফাইয়াজ মির্জার চার বছরের ফুটফুটে মেয়েটা ‘বাবা’ বলে দৌড়ে আসছিলো। বাবা এতোটাই দিকশূণ্য ছিলো যে মেয়েকে অব্ধি ধাক্কা দিলেন! ফলস্বরূপ মেয়েটা একটা কাচের নিকট পড়ে যায়। মেয়েটার হাতটা কেটে যায়। আসলাম মির্জা কেবল ভাইয়ের কর্মকাণ্ড দেখলেন কিছু সময়। তারপর এক পলক ফ্লোরে পড়ে কান্না করা মেয়েটার দিকে তাকালেন। এগিয়ে গিয়েও গেলেন না। শক্ত থেকে ছেলেকে ছুটিয়ে নিয়েছিলেন। শব্দহীন পায়ে বিনাবাক্যে কক্ষ ত্যাগ করেছিলেন।

এরুপ জঘন্য ঘটনায় ফাইয়াজ মির্জা অনুতপ্ত ছিলেন খুব। ক্ষমা চাইতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু আসলাম মির্জার কি যেনো হলো তিনি প্রপার্টির ভাগ চাইলেন। ফাইয়াজ মির্জা ও শত্রুর আটা ফাঁদে পা দিয়ে প্রোপার্টি ভাগ করে দেন। অবিশ্বাস্য ব্যাপার যে শত্রু টা ছিলো তাদের অফিসের আট বছরের পুরোনো ম্যানেজার। কথায় বলে না? দুধ কলা দিয়ে কাল-সাপ পুষা? আমার বাবা-খালু তো টাকা ভালোবাসা দিয়ে একটা বিষ পুষছিলো। ম্যানেজারের দীর্ঘদিনের নজর ছিলো বাবা-খালুর প্রোপার্টি তে। তবে চোরের উপর বাটপারি করে বসে আরো একজন। আমার মা-খালার তৃতীয় বোন। কোনো একটা কারণবশত মহিলা আর ম্যানেজার যুক্ত হয়ে যান। প্রতিনিয়ত তাদের কুকর্ম চালাচ্ছিলেন।

প্রথমে ধ্বংস করলেন বাবা-খালুর সম্পর্ক। তারপর করলেন আমার মা-বাবার সম্পর্ক। বাবাকে ব্লেকমেইল করে বাবার বিদেষীনি ফুপাতো বোনের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক সাজান। মিস্টার ফাইয়াজ মির্জাও সেটায় সায় জানান। নয়তো কথা ছিলো তারা মাকে আর আমাকে মেরে ফেলবে। বাবা কেবল চুপ ছিলো। বাবা চেয়েছিলো আমরা সুরক্ষিত থাকি। অতঃপর শত্রুপক্ষ আরো ভয়ানক ভাবে একটা মিথ্যে বানায়। পরকীয়ার মাধ্যমে বাবাকে মায়ের কাছে খারাপ বানায়। আর আমাকে পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দিয়ে বাবার কাছে মাকে খারাপ বানায়। ওরা মিথ্যে গল্প বানায়। মা বাবার পরকীয়ার সম্পর্ক জেনে আমায় রেগে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছে। অথচ পুরোটাই ছিলো বানোয়াট।

আর আফসোস! অবশেষে বিচ্ছেদ হয়ে যায় বাবা-মায়ের। মা তো জানতে পারলো না বাবার পরকীয়া করার পেছনের গোপন রহস্য টা। আর বাবাও জানতে পারলো না খেলাটা মূলত কাদের হাতে।

আমাকে যে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে আমার নতুন বাবা মা। কাকতালীয়ভাবে তাদের মেয়েও পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েছিলো। আমাকে পেয়ে তারা সেই শূণ্যতা কাটানোর প্রয়াস করছিলো। তখন আমার স্মৃতিশক্তি ছিলো না। ডাক্তার বলেছিলো স্মৃতি কয়েক বছরে ফিরে আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে। তবুও আমার নতুন বাবা মা আমাকে ফেলে দেয়নি। বুঝতে দেয়নি আমার বাবা-মায়ের শূণ্যতা। এমনকি আমার খালামণিরা বিদেশে থাকায় অনেক দেরিতে খবর পায়। ম্যানেজার তাদের বানানো গল্প খালামনি কে শোনায়। তারাও সেটা বিশ্বাস করে বসেন। এখনোও সেটাই বিশ্বাস করেন। তাইতো সেদিন গাড়িতে অর্ধেক ভুল কথা বলেছিলেন। এরপর থেকে বুঝতে পারলাম যে খালামণিদের ও তখন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারনে আর কোনো পুলিশ ইনভেস্টিগেশন হয়নি। বেঁচে যায় অপরাধীরা।

তারপর নতুন বাবা-মায়ের দায়িত্বে স্কুলে ভর্তি হই। তারপর হাই-স্কুল লেভেল। আর যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন কিডন্যাপ হই প্রথমবারের মতো। কারন টা ছিলো আমার হাতের ভি দাগের জন্য। যেই দাগটা বেশ ভালো ভাবে নজরে নিয়েছিলো ম্যানেজার। গত তিনবছরেও আমার ডেথবডি তারা অনেক খুঁজে পায়নি যখন, তখন নিশ্চিত হতে পারছিলো না যে আমি মরে গিয়েছি। তারপর অনেক কিছু করে নতুন বাবা আমায় কৌশলে বাহির করে আনে।

দ্বিতীয় বারের মতো কিডন্যাপ হতে হতে বেঁচে যাই। পড়ি তখন ক্লাস এইটে। তখনো স্মৃতি ছিলো না। কিন্তু তখন পুলিশ আমায় বাঁচিয়ে নেয়। কিন্তু কৌশলে তারা আমাকে মাথায় আঘাত করে ফেলেছিলো। ফলস্বরূপ অজ্ঞান হয়ে সেখানটিতেই পড়ে যায়।

আল্লহর রহমতে আমার স্মৃতি ফিরে আসে। নতুন বাবাকে সবটা খুলে বলি। তারপরই শুরু হয় আমার নতুন যুদ্ধ। বাবার পরিচিত ছিলেন একজন সিআইডি অফিসার আংকেল। তিনি আমাদের অনুরোধে এইসব সত্য উদঘাটন করেন। তিনি অপরাধী কে ধরতে চেয়েছিলেন কিন্তু কিছু কিছু বিষয় পরিষ্কার ছিলো না। যেমন যেদিনের পর বাবা-মা কাউকেই পাওয়া যায়নি। তারা মৃত কিনা সেটাও নিশ্চিত ছিলো না। এমনকি সেসব সত্যের জোরদার কোনো প্রমাণ ই ছিলো না। এরপর ই শপথ নিই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।

স্বপ্ন ছিলো মেডিকেল। কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বেছে নেই ক্রাইম ব্রাঞ্জ। এইচএসসি পাশ করেই আংকেলের রেফারেন্সে জয়েন করি গোয়েন্দা টিমে। দু’বছরে অর্জন করি সাফল্য। তারপর বয়সের দিক বিবেচনা না করেই একদম গ্রুপ হেড হয়ে যাই। দায়িত্ব পড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডের বড় ক্রিমিনাল নেওয়াজ মির্জা কে ধরার।

নামটা শুনে বেশ কৌতূহলী হয়েছিলাম। নিয়ম মতোই মেডিকেল এক্সামে টিকে গিয়েছিলাম। তাই ভর্তি হয়ে রইলাম। আর সেখান থেকেই ইনভেস্টিগেট করতে করতে পেয়ে যাই আমার অতীত। আমার বাবাকেই সামনে রেখে কালোবাজাররী করছে জানোয়ার গুলো। বুঝে যাই যে, আমার বাবা বেঁচে আছেন। তবে মায়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না।

মেডিকেলের চতুর্থ দিনে আমার একটা কেসের ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার ডেট ছিলো। আধা ঘন্টার মধ্যেই যেতে হবে এমন ব্যাপার। তাই সেদিন খুব দ্রুত স্কুটি করে শটকার্ট রাস্তায় গিয়েছিলাম। কিন্তু সেটাই ছিলো এক অন্যরকম ভুল।

প্রথমে বুঝিনি জানোয়ার গুলো বুঝতে পেরেছিলো যে কেউ তাদের সত্য জানতে শুরু করেছে। তারা বুঝাতে চেয়েছিলো আমি সুন্দর তাই আমাকে এট্যাক করা হয়েছে। আমাকে বাঁচানো লোক অর্থাৎ তাসবি কে এটা বোঝালেও আমায় বোঝাতে পারেনি।তাদের ওমন আচমকা এট্যাক করাতে আন্দাজ করে ফেলি সত্যটা। সিদ্ধান্ত নিলাম স্ব-ইচ্ছায় ধরা দিবো তাদের কাছে। তবে অন্য এক উপায়ে। অন্য এক পরিচয়ে। এতে আমার স্বত্তা টাও সেইফে থাকবে। নতুন সত্ত্বা রিস্কে থাকলেও কোনো হদিস থাকবে না।

তখন তাসবি ছিলো আমাদের মেডিকেলের ই ইন্টার্নশিলে থাকা স্টুডেন্ট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো আকসার। তাসবি কে পুরো মেডিকেলে বাজে প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে আমার আর তাসবির সম্পর্ক টা নিয়ে। এর মাঝে ডাক্তার জানায় এই সামান্য এক্সিডেন্টে আমি মা হবার ক্ষমতা হারিয়েছি। কোনো হেলদোল ছিলো না এটা নিয়ে। বিয়ে নিয়ে ওতোটা ভাবুক মেয়ে কখনোই ছিলাম না। মাথায় কেবল প্রতিশোধের স্পৃহা জুগেছিলো। তখন বিপত্তি ঘটায় তাসবি। আমায় নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে। এতে খানিকটা ভাবুক হয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষণেই নিজের নতুন একটা পরিচয় পাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় আমি আর বারাবারি করিনি। সবার সামনেই বিয়ে করে নিই তাসবি কে।

তারপর…..

#চলবে?

#প্রণয়ডোর
|৪০|
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

– প্রথমে বুঝিনি জানোয়ার গুলো বুঝতে পেরেছিলো যে কেউ তাদের সত্য জানতে শুরু করেছে। তারা বুঝাতে চেয়েছিলো আমি সুন্দর তাই আমাকে এট্যাক করা হয়েছে। আমাকে বাঁচানো লোক অর্থাৎ তাসবি কে এটা বোঝালেও আমায় বোঝাতে পারেনি।তাদের ওমন আচমকা এট্যাক করাতে আন্দাজ করে ফেলি সত্যটা। সিদ্ধান্ত নিলাম স্ব-ইচ্ছায় ধরা দিবো তাদের কাছে। তবে অন্য এক উপায়ে। অন্য এক পরিচয়ে। এতে আমার স্বত্তা টাও সেইফে থাকবে। নতুন সত্ত্বা রিস্কে থাকলেও কোনো হদিস থাকবে না।

তখন তাসবি ছিলো আমাদের মেডিকেলের ই ইন্টার্নশিলে থাকা স্টুডেন্ট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো আকসার। তাসবি কে পুরো মেডিকেলে বাজে প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে আমার আর তাসবির সম্পর্ক টা নিয়ে। এর মাঝে ডাক্তার জানায় এই সামান্য এক্সিডেন্টে আমি মা হবার ক্ষমতা হারিয়েছি। কোনো হেলদোল ছিলো না এটা নিয়ে। বিয়ে নিয়ে ওতোটা ভাবুক মেয়ে কখনোই ছিলাম না। মাথায় কেবল প্রতিশোধের স্পৃহা মনে জুগেছিলো। তখন বিপত্তি ঘটায় তাসবি। আমায় নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে। এতে খানিকটা ভাবুক হয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষণেই নিজের নতুন একটা পরিচয় পাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় আমি আর বারাবারি করিনি। সবার সামনেই বিয়ে করে নিই তাসবি কে।

আমি ওতোটা না ভাবলেও তাসবি লোকটা খুব ভাবুক হয়ে গিয়েছিলো প্রথম প্রথম। কিন্তু পরে যখন নিজ থেকেই এই বিয়ের সম্পর্কে কথা বলতে চাইলাম তাসবি কেবল বলেছিলো, “বিয়ে যখন হয়েছে অন্য পাঁচটা বিয়ের মতো আমার কাছে ডিভোর্স জিনিসটা প্লিজ চাইতে এসো না। বিয়ে যখন একবার করেই ফেলেছি, সারাজীবন আমি এইটাকে নিয়েই বাঁচতে চাই”। ওর এমন কথায় আমি কিছুটা ভাবি। লোক টা একজন ডাক্তার। এই মুহূর্তে শত্রু পক্ষের নিকট লড়াই করার জন্য খুব শক্তপোক্ত একটা লাঠি দরকার। সেই লাঠি টা যদি তাসবি হয় তাহলে কি এমন হয়..? তাই সেদিন তাসবির ওমন কথায় একটা কথা বলে ফেলি। যে…“ঠিক আছে! আমি ডিভোর্স চাইবো না। এক বিয়ে নিয়েই কাটিয়ে দেবো। স্বাভাবিক হবো বাকী পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতো। তবে একটা শর্তে। তাসবি বলেছিলো, “আগে শুনি তারপর!”। আমার কেবল এটা শোনার ই অপেক্ষা ছিলো। তাই বলেই দিই,“আমার একটা অতীত আছে। সবটা আপনাকে বলছি। শুনে তারপর বলুন আপনি আমার যুদ্ধসঙ্গী হবেন কীনা। যদি হতে পারেন তবে বিনিময় যুদ্ধশেষে আমি আপনার জীবনসঙ্গী হবো। প্রমিস!

এরপর থেকেই শুরু হয় একসাথে লড়াই। আমাদের বিয়ে হলেও আমরা আলাদা ভাবে থাকতাম। নতুন বাবাই কে বলে তাসবির বোন ফারিহা আপুর সাথে থাকতে শুরু করি। তারপর তথ্য পাই মা মারা যায়নি। বেঁচে আছে। যুদ্ধ শেষ করার জন্য আরো উত্তেজি হলাম। দিনরাত ইনফরমেশন জোগার করতাম।

এছাড়াও ইনভেস্টিগেশনের জন্য ম্যাক্সিমাম টাইমেই আমি নেওয়াজের ডেরার আশে-পাশে থাকতাম। মায়ের খোঁজে সেখানটায় চলে যাই। কিন্তু ভুলবশত হাতের ভি চিহ্নটা ঢাকতে পারিনি। ধরা পড়ে যাই। নেওয়াজের লোকেরা আমায় এট্যাক করে। ধরে নিয়ে সেই ডেরাতেই রেখে দেয়। তাসবি লোকটা আমায় খুঁজেছিলো খুব। কিন্তু পায়নি। নতুন বাবাও খুঁজছিলো।

টানা সাতদিন আমায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো। নেওয়াজ ভেবেছিলো আমি ওর শত্রুপক্ষ। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নয় সেটা। আমিই সত্যিটা ইচ্ছে করে প্রকাশ করি যেনো আমায় ও ধরতে না পারে। বলে দিই আমি ওর মেয়ে। এর পর ই কৌশলে বের হয়ে আসি। আল্লাহর রহমতে নতুন বাবার গাড়ির সামনে পড়ে যাই। বাবাকে কেবল বলেছিলাম নেওয়াজের লোকেরা চলে গেলেও কেউ একজন আমাদের পদক্ষেপে খেয়াল রাখছে। ব্যাস! বাবা সেদিন সবটা সামলে নেয়। পরিচয় দেয় আমায় তিনি চেনেন না। খবর দেওয়া হয় তাসবি কে। অতঃপর তাসবি আর নতুন বাবা এমন একটা ভান করে যেনো তারা আমাকে নতুন ই দেখছেন।

এইভাবেই কেটে যায় কিছু দিন। মাঝে আমার খালামণিকে কিছু সত্যি বলা হয়। তবে আজ তিনিও এইখানে উপস্থিত রয়েছেন। সবটা শোনার পর তার মাঝের কয়েকটা দিন অনুপস্থিত থাকার কারণ টাও তিনি বুঝে যাবেন।”

লম্বা একটা কাহিনী বলার পর থেমে যায় শুভ্রা। গলা শুকিয়ে এসেছে তার। জীবনে ঘটে যাওয়া এতো এতো কাহিনী যেভাবে এক নিশ্বাসে বলে ফেললো আদতেও তো তার একভাগ অনুভব কেউ করতে পারছে না। কেবল সে জানে কত রাত সে কাতরিয়েছে। কত রাত সে ফুঁপিয়েছে।

এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো কেউ! হাতটা পুরুষালি হাত ঠেকলো। দৃশ্যমান হলো হাতে পড়ে থাকা রিংটা। লোকটা তাসবি। চোখ তুলে তাকালো সে। মানুষটার পড়নে আজ হুডি, মোটা ফ্রেমের চশমা নেই। পড়নে অফ হোয়াইট শার্ট , আর কালো প্যান্ট। চুলগুলো খানিকটা পিছিয়ে রাখা। মুখে লেপ্টে আছে নজরকাড়া হাসি। যে হাসিতে রয়েছে প্রাপ্তির হাসি। হয়তো বা তাসবি কিছু একটা পেয়ে যাবে!

তাসবি ইশারায় পানিটা পান করতে বললো। শুভ্রা গ্লাস টা নিয়ে নিলো। অতঃপর নিজ দায়িত্বে স্ত্রীর থেকে মাইক টা নিজে নিয়ে নিলো। শুভ্রাকে ইশারায় বসতে বলে নিযে বলতে শুরু করলো,

– হ্যালো! আমি ইয়ানাত তাসবি। হাসবেন্ড অফ নিথিয়া মির্জা ওরফে ফারিহাতুল শুভ্রা। আমার স্ত্রী একটু জিরিয়ে নিক। বাকীটুকু আমি বলছি।

আমাদের মা-খালা বাদেও আরোও একজন ছিলো। যা সম্পর্কে অজানা আমার মা-খালা দুজনেই। মায়ের জন্মের সময় তিনজন জন্মিয়েছিলো। কিন্তু একটা নার্স টাকার লোভে একজন কে সরিয়ে দেয়। পরে মেয়েটা বড় হয় পতিতালয়ে। এর থেকেই মেয়েটার খুব রাগ হিংসা জন্মে। মা-বাবার পরিচয় জানতে পেরে যখন নিজের দু’বোনকে সুখী দেখলো তখন তার রাগ বাড়লো। তার দুবোন কত্ত সুখী আর সে..? পতিতালয়ের এক কর্মী! হাত মেলায় বাবার ম্যানেজারের সাথে। মূলত কল-কাঠি তিনিই নাড়িয়েছিলেন।

নেওয়ার হঠাৎই আমার কথা জেনে যায়। সেদিন আমিও ছিলাম মেন্টাললিভাবে ডিপ্রেসড। তাই এক্সিডেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেই। এক্সিডেন্ট তো হয়েছিলো কিন্তু স্বইচ্ছায় নয় , মায়ের তৃতীয় বোনের ইচ্ছায়। ওনি আমায় এক্সিডেন্ট করিয়ে নিজে মাকে কিডন্যাপ করে মায়ের জায়গায় তিনি থাকেন। শুভ্রা ও বুঝে যায় চালাকি। তাই সেদিন আমার মৃত্যুর খবরে ওইরকম ব্যবহার করেছিলো। আর এদিকে বুদ্ধি করে বাঁচিয়েও নেয় আমাকে আমার স্ত্রী। খবর ছড়িয়ে দেয় আমার মৃত্যুর। অতঃপর যেদিন আমার বের হবার পালা সেদিন মায়ের তৃতীয় বোন আবার এট্যাক করে। ধরা পরেও সেখান থেকে গতকাল ফিরে এলাম। এদিকে এসেই বউকে দেখে গেলাম। তার মাঝে আমার বউ আবার আমাগ দায়িত্ব দিলো। দ্বিতীয় শুভ্রার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সেই গুরু দায়িত্ব গতকাল ই করলাম। আর আজ এখানে আসলাম!

এখন সকলের মনে একটাই প্রশ্ন যে..! দ্বিতীয় শুভ্রা আসলে কে? তাহলে বলছি শুনুন! শুভ্রা নিজের সেইফটির জন্য দুটো মাস্ক অলয়েজ ইউজ করতো। একটা মাস্ক কেবল নেওয়াজের বেলায় মেয়ের চরিত্র প্লে করতো আরেকটা মাস্ক যেটা সে সবার সামনে পড়ে। প্রকৃত অর্থে এই মেয়েটার সত্যিকারের রুপ কোনটা সেটা কেউ দেখেনি।

তারপর আসি পরের কথায়! প্রশ্ন এবার একটাই নেওয়াজ মির্জা, ম্যানেজার আর তৃতীয় বোন তারা আসলে কোথায়..? আর নেওয়াজ মির্জা যদি পরিস্থিতির শিকার হয় তবে সত্যিকার ক্রিমিনাল টা কে..? তাইতো ?

তাহলে বলছি এই সত্যটাও! আসলে ক্রিমিনাল হচ্ছে….”

তাসবির কথা শেষ হওয়ার আগেই গুলির বিকট আওয়াজ আসলো। সকলেই ভয় পেয়ে গেলো। শুভ্রা উঠে কোথাও চলে গেলো। বাকীরা গুলির অস্তিত্ব খুঁজতে এদিক ওদিক তাকিয়ে কেবল খুজতে লাগলো । তবে তাসবির চোখ আটকে গেলো একটা ব্যক্তির উপর । লোকটার হাতে থাকা গুলি থেকে ধোঁয়া উঠছে। রহস্যের হাসি টানলো সে। বিগ সাপোর্টার আগায়া…!

#চলবে