প্রণয়ী পর্ব-৩৮+৩৯

0
17

#প্রণয়ী
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
|৩৮.|
(কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
……….

সিএনজিতে বসে প্রিয়তার নাম্বারে একের পর এক কল দিয়ে চলেছে জাইন। চিন্তায় তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আজ যেনো পথ শেষ হচ্ছে না। ধৈর্য্য হারা হয়েও অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন বাসায় যাবে। ইতিমধ্যে সকলকে কল দিয়ে খোঁজ নিতে বলেছে।
অবশেষে জাইন যখন বাসার বিকেলের শেষ ভাগ। ভাড়া মিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বাইতে শুরু করে। ছাদে উঠতেই দেখে দরজা চাপানো। আলতো ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়৷ ভেতরে প্রবেশ করে কক্ষের সামনে গিয়ে হাঁপাতে থাকে। ভেতর থেকে কক্ষের দরজা বন্ধ। শুরু করে দরজায় নক করা। খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়। দরজা খুলে প্রিয়তা অবুঝের মতো জাইনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাথে সাথে জাইন তাকে জড়িয়ে ধরে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। জাইনের পিঠে হাত রেখে আলতো চাপড় দেয় সে। সবেই গোসল করে বেরিয়েছে সে। ক্লান্তিতে সারা শরীর ছেড়ে দিয়েছে। জাইনকে এ অবস্থায় দেখে নিজের ক্লান্তির ভুলে যায় সে।

চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে প্রিয়তা,’কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?’

জাইন ক্লান্ত গলায় জবাব দেয়,’তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছিলো। তার উপর তোমার ফোন বন্ধ।’

‘হাত থেকে পড়ে ফোনটা ভেঙে গেছে। ভেবেছিলাম বাসায় ফিরে অনুর ফোন থেকে কল দিবো কিন্তু অনুর কাছে গেলে দেখি ও বাসায় নেই ডিউটিতে গেছে। এনজিওতে চাকরি করে তাই এখন আর আগের মতো বাসায় থাকে না।’

জাইন প্রিয়তাকে ছেড়ে তার গালে হাত রাখে।
‘সত্যি বলো তুমি ঠিক আছো?’

গালে রাখা হাতের উপর প্রিয়তা নিজের হাত রাখে।
‘একদম ঠিক আছি। আপনি শুধু শান্ত হন।’

‘কিন্তু আমার মন মানছিলো না। জানিনা কেনো অমন লাগছিলো।’

‘ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন তাই স্টেসে অমন লেগেছে। ঘরে চলেন পানি খেয়ে আগে বিশ্রাম নিবেন।’

‘তার আগে তোমাকে একটা খবর দেওয়া বাকি।’

‘কী?’

জাইন গলার স্বর নামিয়ে বলে,
‘এখন থেকে সারাদিন তোমার একা বাসায় থাকতে হবে। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আমি ডিউটিতে থাকবো। থাকতে পারবা তো?’

জাইনের কথা শুনে প্রিয়তার ওষ্ঠের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
‘চাকরিটা হয়ে গেছে?’

জাইন মাথা নাড়ায়। প্রিয়তা খুশিতে জাইনকে জড়িয়ে ধরে।
‘আমি জানতাম আপনি পারবেন। আমি সঠিক মানুষের হাত ধরেছি এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

‘তুমি খুশি?’

‘অনেক বেশি।’

‘আমাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে না?’

‘লাগবে তো। কিন্তু সারাদিন পর আপনি ক্লান্ত শরীরে এসে যখন আমার জড়িয়ে ধরবেন আর আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে আপনাকে সকল ক্লান্তি দূর করে দিবো তখন সারাদিনের খারাপ লাগা চলে যাবে।’

প্রিয়তার খুশি দেখে জাইন নিশ্চিন্ত হয়। অবশেষে মেয়েটাকে খুশি করতে পারলো সে। সারাদিনের চিন্তা,ক্লান্তি নিমিষেই পালালো জাইনকে ছেড়ে। একে অপরকে শক্ত করে আলিঙ্গন করে। মূহুর্তটা দু’জনের একান্ত।

প্রিয়তা জাইনকে ছেড়ে তাড়া দেয়।
‘এখন দ্রুত গোসল করতে যান। আমি আপনার জন্য কিছু একটা খাবার বানিয়ে দিচ্ছি। আজকে দুপুরে রান্না করার সময় পাইনি তাই ভাত এখন দেওয়া সম্ভব না।’

‘সমস্যা নেই তুমি যা দিবা খেয়ে নিবো।’

জাইনের কথা শুনে প্রিয়তা হেসে তাকে গোসলে পাঠায়। জাইন যেতেই সে শ্বাস ফেলে। জাইন ফেরার কিছুক্ষণ পূর্বেই বাসায় ফিরেছে সে। এর পূর্বে রাস্তার ধারে বাসস্টপে বসে ছিলো। মস্তিষ্কের ভেতর অনেক এলোমেলো চিন্তা কাজ করছিলো। বেল্লাল হোসেনের কথাবার্তায় কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। জাইন জানলে নিশ্চয়ই রাগ করবে তাই সে চায় না বেল্লাল হোসেনের বলা কথা গুলো জাইনের কানে যাক। একজন ছোট বেলা থেকে তার খেয়াল রেখেছে আরেকজন এখন তার খেয়াল রাখছে। দু’জনই তার কাছের মানুষ। প্রিয়তার ইচ্ছে ছিলো বেল্লাল হোসেন নিজে তাদের জন্য দোয়া করবে। কিন্তু আজকের পর মনে হচ্ছে তা অসম্ভব। প্রিয়তা আশা ছাড়ছে না৷ তার মন বলছে বেল্লাল হোসেন একদিন ঠিকই তাদের মেনে নিবে। সেদিন সে নিজে আসবে প্রিয়তাকে দেখতে,তার জন্য দোয়া করতে।

…….

‘আমরা কি ভেতরে আসতে পারি?’
মারুফের গলা পেয়ে প্রিয়তা জাইন উভয়ই দরজার দিকে তাকায়। প্রিয়তা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। জাইনকে খাইয়ে দিচ্ছিলো এ সময় মারুফ সহ বাকিদের দেখে লজ্জা পায়। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে রান্নাঘরে চলে যায়।

মারুফ না বুঝেই প্রশ্ন করে,’প্রিয়তা চলে গেলো কেনো? আমাদের দেখে রাগ করেছে?’

রিমি কনুই দিয়ে মারুফকে গুঁতা দিয়ে বলে,’খাবারের সময় বিরক্ত করলেন তাই লজ্জা পেয়েছে। বলেছিলাম আগে দেখি ওরা কি করে তারপর যাই কিন্তু আপনি তো কথা শুনেন না। এখন সরুন।’
রিমি মারুফকে সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে রান্নাঘরে যায়। জাইন উন্মুক্ত শরীরে বসে ছিলো। পাশ থেকে গেঞ্জিটা নিয়ে গায়ে দেয়।

মারুফ এসে জাইনের পাশে বসে। জাইনের কল পেয়ে সে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। এরপর রিমিকে কল দিয়ে প্রিয়তার কথা জিজ্ঞেস করতেই সে জানায় সে-ও জানে না। প্রিয়তাকে খুঁজতে রিমিও মারুফের সাথে বের হয়। জাইনের নাম্বারে কল দিলে সে রিসিভ করে না। দু’জনে এরপর এসে উপস্থিত হয়েছে চিলেকোঠায়।

‘আমি টেনশনে ছিলাম আর তুই এখানে নিশ্চিন্তে খাচ্ছিস?’

‘খেতে দিলি কই? এসে তো বিরক্ত করলি।’

‘শালা আর কত খাবি?’

‘শাকিল কই?’

‘ক্লাবে আছে। ঐ মাঠের ঝামেলায় যাদের পাকরাও করেছে ওদেরকে আদর যত্ন করছে।’

‘ছেলেটার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়ে কয়টাকে ধরলি?’

‘পাঁচটাকে ধরেছি৷ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোর এখন শত্রু বেড়ে গেছে। শোন সাবধানে থাকবি। তুই দল ছাড়ার পর যারা তোর উপর ক্ষ্যাপা সকলেই এখন তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।’

‘বাঘ সব সময় একা শিকার করে তার দলবল প্রয়োজন হয় না। এসব খেঁকশিয়াল আমার চুলও ছিঁড়তে পারবে না।’

জাইনের কথা শুনে মারুফ বালিশ টেনে আরাম করে বিছানায় বসে। সে-ও জানে জাইন একাই যথেষ্ট তবুও মাঝে মাঝে বন্ধুকে নিয়ে ভয় কাজ করে। ভয় থেকেই কথাগুলো বলা।

মারুফ বলে,’তোকে একটা খবর দেওয়ার আছে। আমি জানিনা প্রিয়তা বলেছে কিনা।’

মারুফের কথা শুনে জাইন তার দিকে তাকায়।

হাত ধুয়ে প্রিয়তা ঘুরতেই দেখে রিমি দাঁড়িয়ে। রিমির চোখমুখ দেখে আন্দাজ করে সে রাগ করেছে।

রিমি বলে,’তুই গেলি এরপর একটা কলও দিলি না। তোর ফোন কই?’

‘ফোনটা ভেঙে গেছে।’

রিমি এগিয়ে এসে প্রিয়তার হাত ধরে।
গলার স্বর নামিয়ে প্রশ্ন করে,’আঙ্কেল কেমন আছে?’

‘আছে মোটামুটি।’

‘তোকে দেখে কিছু বলেছে?’

প্রিয়তা রিমির কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে ঘুরে এটা ওটা ঠিক করতে শুরু করে। সে সবটা আড়াল করতে চাইছে।

রিমি আবারো বলে,’কিরে কি জিজ্ঞেস করলাম?’

‘কি বলবে? কিছু বলেনি।’

‘কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে আঙ্কেল তোকে নিশ্চয়ই কিছু বলেছে। না হলে তুই আমার কাছ থেকে মুখ ঘুরালি কেনো? আমার দিকে তাকা।’

রিমি টেনে প্রিয়তাকে নিজের দিকে ফেরায়।
রিমি আবার বলে,’নিশ্চয়ই আঙ্কেল তোকে অনেক কথা শুনিয়েছে? আর তুই কষ্ট পেয়েও সেগুলো আড়াল করতে চাইছিস।’

প্রিয়তা রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,’তারা যা-ই বলুক আমার ভেতরে তাদের জন্য চিরকাল সম্মান থাকবে। ঐ পরিবারের প্রতিটি মানুষকে আমি ভালোবাসি।’

‘দেখিস একদিন আঙ্কেল ঠিক তোদের মেনে নিবে। আর তুই ভাইয়ার হাত ধরে কোনো ভুল করিসনি। সারাজীবন সুখী হবি। ভাইয়ার মতো বর তোর পরিবার কখনোই খুঁজে পেতো না।’

‘আমিও চাই একটিবার তারা আমার আর জাইনের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিক।’

‘তোর মনের ইচ্ছে শীঘ্রই পূর্ণ হবে।’

‘আমিন।’

রিমি প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে। ভালো সময়ের মতো খারাপ সময়টাতে বন্ধুদের খুব বেশি প্রয়োজন। প্রকৃত বন্ধুরা সর্বদা খারাপ সময়ে পাশে থাকে,ভরসা দেয়। বিশ্বস্ততার আরেক নাম বন্ধু।

……….

ছাদে জাইনের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে আছে প্রিয়তা। জাইন তার কেশে আঙুল চালাচ্ছে। মেঘে ঢেকে আছে পুরো গগণ। দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো মূহুর্তে ঝুম বর্ষণ নামবে। রাত্রিও কম হয়নি। ঘড়িতে সময় রাত্রি সাড়ে এগারোটা। রিমি আর মারুফ এসে আধা ঘন্টার মতো ছিলো এরপর চলে যায়। রিমির বাসা থেকে বারবার কল আসছিলো তাই মারুফ তাকে পৌঁছে দিতে যায়।

মৃদু গলায় জাইন ডাক দেয়,’প্রিয়..’

তন্দ্রা মিশ্রিত স্বরে প্রিয়তা জবাব দেয়,’হুম।’

‘ঘুম পেয়েছে?’

‘হুম।’

‘ঘরে চলো তাহলে।’

‘নাহ।’

‘বৃষ্টি নামবে। ঘরে গিয়ে আরাম করে ঘুমাবা। আজকে আবহাওয়াও ঠান্ডা।’

প্রিয়তা চক্ষু না মেলেই জাইনের বক্ষে কিল দিয়ে মুখ গুঁজে। অর্থাৎ সে কিছুতেই যাবে না। জাইন প্রিয়তার এলোমেলো কেশগুলো সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

‘প্রিয়..’

‘হুম।’

‘একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’

‘হুম।’

‘আজকে ভার্সিটি থেকে কোথায় গিয়েছিলে?’

জাইনের প্রশ্ন শুনে প্রিয়তা চুপ হয়ে যায়।

‘আমাকে বলতে আমি তোমায় নিয়ে যেতাম। একা কেনো বাবার বাড়ি গেলে?’

এবার প্রিয়তার তন্দ্রা উড়ে যায়। চক্ষু মেলে তাকায় তবে জাইনের বক্ষ হতে মাথা তুলে না।

‘ঐ বাড়িতে তোমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে তাই না? আর ফোনটাও ঐ বাড়িতে যাওয়ার কারণে কোনো ভাবে ভেঙেছে।’

প্রিয়তা কোনো কথার উত্তর দেয় না। জাইন প্রিয়তার মুখ তুলে ধরে।

‘তোমার পরিবার তারা৷ তুমি যাবা,দেখা করবা,কথা বলবা এতে আমি নাক গলাবো না। তখনই নাক গলাবো যখন তারা তোমার সাথে সঠিক আচরণ করবে না। আমিও চাই তুমি তোমার পরিবারের সাথে মিলে যাও। পৃথিবীতে বাবা-মা সবচেয়ে আপন।’

প্রিয়তার নয়নে অশ্রুরা এসে ভীড় করে। সে ভেবেছিলো জাইন রাগ করবে কিন্তু হলো উল্টো।

‘তুমি কিছু লুকাচ্ছো প্রিয়। কি লুকাচ্ছো আমায় বলবে না?’

এতোক্ষণে প্রিয়তা মুখ খুলে।
‘বুঝলেন কি করে?’

‘তোমার এই নেত্র যুগল দেখে। এগুলো প্রথম দেখেই তো তোমাতে মরেছিলাম। এগুলোর ভাষা আমি বুঝতে ভুল করি না।’

‘আমি তো আপনার থেকে বিশাল এক সত্যি লুকিয়েছি। সেটা জানলে আপনি আমায় এভাবেই ভালোবাসবেন?’

‘আমি তো এক সময় কত মানুষকে পিটিয়েছি,অস্ত্র দিয়ে ভয়ও দেখিয়েছি। তুমি তো আমায় এসব দেখেও ভালোবেসেছো। সব ছেড়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেও হাত ধরেছো আমার। আমি তোমার সকল সত্যি মেনে নিতে বাধ্য।’

‘কথাগুলো শোনার পর আমাকে আপনার মাঝে টেনে নিবেন প্লিজ।’
প্রিয়তার চক্ষু হতে টপাটপ অশ্রুপাত হয়। জাইন সাথে সাথে প্রিয়তাকে নিজ বক্ষে টেনে নেয়। শক্ত করে আলিঙ্গন করে। মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন বোকা বোকা কথা বলে শুনতে অদ্ভুত লাগে। জাইন তো তার প্রিয়ের সব কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত। সে-ও চায় প্রিয়তা নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখা দুঃখ গুলো তার সাথে ভাগ করে নিক।
জাইনের আশ্বাসে প্রিয়তা খানিকটা সহজ হয়। কান্না আঁটকে ধীরে ধীরে শুরু করে সবটা বলা। গম্ভীর হয়ে মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনে জাইন। প্রিয়তার কথার মাঝে একটি কথাও বলেনি। তার ভেতরটা মোচড় দেয় প্রিয়তার কথা শুনে। এই মূহুর্তে সে নিজেও দূর্বল অনুভব করছে।

পুরোটা বলা শেষ করে প্রিয়তা জাইনের দিকে দৃষ্টি তুলে তাকায়। জাইন কোনো কথা না বলে প্রিয়তার কেশগুলো পিছনে টেনে তার ললাটে চুম্বন দেয়।
শো শো করে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করে। চারিদিকের পরিবেশ নিরব। শুধু একটু পরপর প্রিয়তার নাক টানার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জাইনের গেঞ্জি সে অশ্রুপাত করে ভিজিয়ে একাকার করে দিয়েছে। এখনো জাইন তার সাথে কোনো রকম বাক্য বিনিময় করেনি।

নিরবতা ভেঙে জাইন বলে,’শুনেছি মেয়েদেরকে তার মায়েরা রাজপুত্রের গল্প শোনায়। আমার বেলায় আমার মা রাজকন্যাদের গল্প শোনাতো। মা সবসময় বলতো “একদিন এক রাজকন্যা তোর জীবনে এসে তোকে আলোকিত করে দিবে কিন্তু সেই রাজকন্যা জনম জনমের দুঃখীনি হবে। তুই সেই রাজকন্যাকে আগলে নিয়ে তার সকল দুঃখ দূর করে দিবি।”
তুমি আমার জীবনে আসা একমাত্র রাজকন্যা। আমার রাজ্যের রাণী। তোমার সকল সুখ দুঃখের ভাগ সেদিনই নিয়েছি যেদিন তুমি সব ছেড়ে আমায় আপন করে নিয়েছো।’

জাইন প্রিয়তার মুখ তুলে তার ললাটে নিজের ললাট ঠেকিয়ে চক্ষু বন্ধ করে।
‘প্রিয়র জন্মই হয়েছে এই জাইনের জন্য। জাইনকে সে আগলে রাখবে বিনিময়ে জাইন তাকে চিরকাল ভালোবেসে যাবে। তুমি এক বিন্দু ভালোবাসা দিলে আমি এক সমুদ্র ভালোবাসা ঢেলে দিবো। কেউ আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না।’

প্রিয়তা জাইনের দু’গালে হাত রেখে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,’প্রিয়তা চিরকাল আপনাকে আগলে রাখবে।’

জাইন চক্ষু মেলে প্রিয়তার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলায়। এরপর ঠান্ডা গলায় বলে,’জাইনও চিরকাল তার প্রিয়কে ভালোবাসবে। এক তিল ভালোবাসা অন্য কাউকে দিবে না। কথা দিলাম।’

জাইনের কথা শুনে প্রিয়তার অশ্রু বাঁধ ভেঙে টাপাটপ ঝরতে শুরু করে। সাথে সাথে জাইনকে জড়িয়ে ধরে সে। চক্ষু বুজে জাইন নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে।
সে রাত্রিটা এক অন্যরকম রাত্রি। তাদের জীবনে এমন সময় কখনো আসবে ভাবেনি তারা। কথা জমিয়ে রেখে প্রিয়তার ভেতরে অপরাধবোধ কাজ করছিলো। জাইনকে সবটা জানিয়ে হালকা হয়ে যায় সে। বর্ষণের পর স্বচ্ছ গগণ দেখা যায় কিন্তু এবার গগণে বর্ষণ হলো না গগণ আগের ন্যায় অভিমান করে রইলো। তবে দু’জন মানবের মধ্যে থাকা একটা বিশাল পাথর সরে গেলো। মিটলো এ জনমের দূরত্ব।

_________

প্রিয়তার তন্দ্রা ভাঙে গলায় আলতো স্পর্শে। চোখমুখ কুঁচকে তাকায় সে। জাইন তার পাশে বসে ছিলো। সকাল সকাল জাইনকে এভাবে বসে থাকতে দেখে প্রিয়তা কিঞ্চিত আশ্চর্য হয়। সাধারণত প্রিয়তা তার আগে ঘুম থেকে উঠে এরপর অনেক ডাকাডাকি করে জাইনকে তুলতে হয়।

জাইন প্রিয়তার নাক টেনে জিজ্ঞেস করে,’ঘুম ভাঙলো অবশেষে?’

‘ভাঙেনি আরেকটু ঘুমাবো।’

‘না উঠলে যে দেরি হয়ে যাবে।’

‘কীসে দেরি হবে?’

‘উঠে তৈরি হও বলছি।’

‘আমরা কোথাও যাচ্ছি?’

জাইন মাথা ঝাকায়। প্রিয়তা সাথে সাথে উঠে বসে।

‘কোথায় যাচ্ছি?’

‘সারপ্রাইজ।’

‘বলেন না।’

‘উহু। উঠো তৈরি হও। গেলেই দেখতে পাবা।’

জাইনের কথা মতো প্রিয়তা বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে চলে যায় মুখ ধুতে। জাইন তাকে তাড়া দেয় ফলে খুব দ্রুতই সে তৈরি হয়। বাসা থেকে বেরিয়ে বাহিরে সকালের নাশতা দু’জনে সেরে নেয়। এরপর রওনা দেয়। বাসে পুরোটা রাস্তা প্রিয়তা জাইনের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। গত রাতে দু’জনের একজনেরও ঘুম হয়নি। ভোরের দিকে প্রিয়তা একটু চোখ বুজে ছিলো কিন্তু জাইন এখনো নির্ঘুম।

বাস থামতেই জাইন প্রিয়তাকে ডেকে তুলে। চক্ষু ডলে প্রিয়তা আশেপাশে তাকায়। জায়গাটা তার পরিচিত। বাস থেকে নেমেই জাইন রিকশা ডাক দেয়। রিকশায় উঠায় পর প্রিয়তা বুঝতে পারে তারা কোথায় যাচ্ছে।

জাইনের বাহু ধরে প্রিয়তা জিজ্ঞেস করে,’আমরা কি সেখানে যাচ্ছি?’

প্রিয়তার প্রশ্নের উত্তরে জাইন হেসে মাথা ঝাকায়। প্রিয়তা খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়। প্রিয়তাকে এতো হাসিখুশি দেখে জাইনের আত্না শান্ত হয়। গতরাত থেকে ভাবছিলো কীভাবে প্রিয়তাকে একটু খুশি করবে। অবশেষে মনে হচ্ছে সে সফল। কুড়ি মিনিট পর তারা গন্তব্যে পৌঁছায়। রিকশা হতে নেমে জাইনকে রেখে প্রিয়তা ছুটে যায়।

জাইন গলা উঁচিয়ে তাকে ডাকে।
‘প্রিয় আস্তে যাও।’

প্রিয়তা তার কথায় কান না দিয়ে আপন মনে বাড়ির দিকে ছুটে। তার মনে পড়ে যায় ছোট্ট বেলার কথা৷ তখন রিকশা চলতো না চলতো ভ্যান। ভ্যান থেকে নেমে বাবার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে ছুটে আসতো। এরপর গলা উঁচিয়ে সকলকে ডাক দিতো। আজও তার ব্যতিক্রম করলো না। ঠিক ছোট্ট বেলার মতো করে ডাকতে শুরু করলো।

‘নানীইই আমি এসে গেছি। ও নানী বাহিরে আও। মামা,নানাভাই কোথায় তোমরা জলদি আও।’

সখিনা বেগম বিছানা থেকে নেমে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।
উচ্ছ্বসিত গলায় ডাকে,’প্রিতুউ তুই!’

প্রিয়তা দ্রুত পা চালিয়ে আসে। সখিনা বেগম ঘর থেকে নামতেই প্রিয়তা তাকে জড়িয়ে ধরে।

সখিনা বেগম প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কতদিন বাদে প্রিয়তাকে দেখছে সে। মেয়েটাকে নিয়ে তার বড্ড চিন্তা হয়।
‘তুই একা আসছিস?’

‘না সাথে তার বরও এসেছে।’
জাইনের গলা পেয়ে সখিনা বেগম প্রিয়তাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রিয়তা তাকে ছাড়ে না। দু’হাতে তার কোমড় জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখে। তার ওষ্ঠে দেখা যাচ্ছে মিষ্টি হাসি।

সখিনা বেগম জাইনকে দেখে বলে,’আমি তো মজা করে বলছিলাম এটারে নাগর বানাইতে আর তুই প্রিতুউ তাই করলি?’

সখিনা বেগমের কথা শুনে প্রিয়তা জোরে হেসে দেয়। এরপর বলে,’কি আর করবো বলো এই লোক হুমকি দিয়ে আমার নাওয়া খাওয়া নিজের সাথে করে নিয়ে চলে যায়। বুঝলাম অন্য কাউকে বিয়ে করলে সারাজীবন এনাকেই মিস করবো তাই আর তাকে ছাড়িনি।’

সখিনা বেগম বলে,’যখন কানে খবর আসছে প্রিতুউ বাসা থেকে পালাইছে তখন খালি জানার জন্য মন আনচান করছে ও কার সাথে গেলো। আমি আর প্রিতুউর নানা দিনরাত ওর মারে কল দেই কিন্তু সে কোনো খবরই দেয় না আমাদেরকে। প্রিতুউর মামা একদিন ওর বাপের বাসায় যায় কিন্তু রমিজ সরাসরি ওরে কথা শুনায়। যাইহোক এইগুলা পুরান আলাপ। ঘরে চলো নাতজামাই। তোমার নানা ভেতরে ঘুমায়।’

প্রিয়তা বলে,’মামা কই?’

‘বাজারে গেছে।’

‘নানী আমি তোমার হাতের মাছ ভুনা আর শাক ভাজি খাবো।’

‘যা চাস তাই রানবো৷ নাতজামাইকে নিয়ে আগে ঘরে আয়।’

প্রিয়তা সখিনা বেগমকে ছাড়ে না। তার আঁচল ধরেই ঘরের দিকে যায়। ব্যাগ নিয়ে জাইন তাদের পিছু পিছু ভেতরে প্রবেশ করে।

সখিনা বেগম ভেতরে এসে করিম উল্লাহকে ডেকে তুলে ঘুম থেকে।
করিম উল্লাহ প্রিয়তাকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে।
‘পুতুল তুই ভালো আছিস?’

প্রিয়তা নানার পাশে বসে তার হাত ধরে।
‘তোমাদের দোয়াতে অনেক ভালো আছি।’

‘বিয়ে নাকি করছিস?’

‘হ্যাঁ। এই যে আমার বর।’

প্রিয়তা ইশারায় জাইনকে দেখায়। জাইন হেসে করিম উল্লাহকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে।

সখিনা বেগম বলে,’পরে গল্প করিস যা নাতজামাইকে নিয়ে কল পাড় থেকে হাত-মুখ ধুয়ে আয় আমি চুলার কাছে গেলাম।’

নানার কাছ থেকে উঠে প্রিয়তা ভেতরের দিকে যায়। নানার বাড়িতে একটা কক্ষ আছে যেটা প্রিয়তার খুব পছন্দ। দরজা খুলে সে ভেতরে প্রবেশ করে। দরজা লাগানোর শব্দ পেয়ে ঘুরে তাকায়।
‘দরজা লাগাতে হবে না। ব্যাগ রাখেন আমরা কল পাড়ে যাবো।’

জাইন প্রিয়তার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
ফিসফিস করে বলে,’তোমাকে খুশি করলাম এখন আমাকে খুশি করো। ঘুম পেয়েছে অনেক।’

প্রিয়তা দুষ্ট হেসে বলে,’এখনই?’

জাইন প্রিয়তার ওষ্ঠে আলতো চুমু দিয়ে বলে,’উহু শুধু ঘুমাবো। তোমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে।’

‘আর কিছু না তো?’

‘আর একটু চুমু খাবো। মন চাইলে একটু দুষ্টুমি করবো। বাকিটা রাতে।’

জাইনের কথা শুনে লজ্জা পাওয়ার বদলে প্রিয়তা হাসে। জাইনের হাত ধরে বিছানায় বসায়। এরপর তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। পাশ থেকে একটা বালিশ হাতে তুলে নেয়।

হাসতে হাসতে বলে,’ঘুমান তবে বালিশের সাথে আর মনে চাইলে চুমুও দিয়েন বালিশকে।’

এরপর বালিশটা জাইবের দিকে ছুঁড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। জাইন আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে খোলা দরজার পানে।

………..
(চলবে..)

#প্রণয়ী
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
|৩৯.|
(কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
………

নানুবাড়িতে এসে প্রিয়তা যেনো তার ছেলেবেলাকে খুঁজে পেয়েছে। নানীর সাথে কাজে সাহায্য করছে আর নানান গল্পগুজব করছে। তার মামা বাজার থেকে ফিরে প্রিয়তাকে দেখে আবারো বাজারে ছুটেছে। প্রিয়তা না করলেও সে শোনেনি। প্রিয়তার প্রতি এ বাড়ির মানুষের একরাশ টান। দুপুরের রান্না হতেই গোসল সেরে প্রিয়তা যায় জাইনকে ডাকতে। কক্ষের দরজা চাপানো ছিলো। প্রিয়তা ভেতরে উঁকি মেরে দেখে জাইন উপুড় হয়ে গভীর তন্দ্রাচ্ছন্ন। সেই যে জাইনকে কক্ষে রেখে গিয়েছিলো এরপর মাত্রই এলো তার খোঁজ নিতে।
ভেতরে প্রবেশ করে জাইনের পিঠে কয়েকবার আলতো থাপ্পড় দিয়ে তাকে ডাক দেয় কিন্তু তার কোনো সাড়া নেই।

‘জাইন উঠুন।’

জাইনের কোনো সাড়াশব্দ নেই। প্রিয়তা আবার তাকে ডাক দেয়।

‘খেয়ে আবার ঘুমাবেন৷ উঠুন এখন। বেলা পেরিয়ে গেলো।’

তন্দ্রাচ্ছন্ন গলায় জাইন জবাব দেয়,’বিরক্ত করো না পরে উঠবো।’

প্রিয়তা রাগান্বিত গলায় বলে,’এক্ষুণি উঠবেন নইলে আপনাকে উঠানোর উপায় আমার কাছে আছে।’

‘যা খুশি করো।’

প্রিয়তা বিলম্ব না করে ভেজা কেশগুলো জাইনের মুখমন্ডলের সামনে ঝারতে শুরু করে। ফলে বিন্দু বিন্দু জল জাইনের চোখেমুখে ছিটকে পড়ে। সাথে সাথে চোখমুখ কুঁচকে তাকায় সে। চক্ষু মেলতেই সামনে প্রিয়তাকে দেখে। ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।

‘উঠবেন নাকি পানির বালতি…’

কথাটা শেষ করার পূর্বেই জাইন তার বাম হাত ধরে টান দেয় ফলে সোজা সে এসে পড়ে জাইনের বুকের উপর। ভেজা কেশ গুলো কপাল থেকে সরিয়ে কানে গুঁজে দেয় জাইন। মুখ তুলে জাইনের পানে দৃষ্টি রাখে প্রিয়তা।

মৃদু গলায় জাইন বলে,’আমি তো তোমায় ছুইনি তাহলে গোসল করলে যে?’

জাইনের কথা শুনে প্রিয়তা তার বুকে কিল দেয়।

গলা উঁচিয়ে প্রিয়তা জিজ্ঞেস করে,’কয়টা বাজে খবর আছে?’

‘যে ক’টা বাজার বাজুক আমার জন্য তো সবসময়ই মাঝ রাত।’

চক্ষুদ্বয় ছোট ছোট করে প্রিয়তা তাকায়।
‘মাঝ রাত মানে?’

জাইন ফিসফিস করে বলে,’আদর করার পারফেক্ট সময়।’

প্রিয়তা জাইনের গলা জড়িয়ে বলে,’আদর লাগবে?’

ছোট বাচ্চারা মতো জাইন দ্রুত গতিতে উপর নিচ করে মাথা নাড়ায়।

‘চোখ বন্ধ করেন।’

‘কেনো?’

‘করেন না।’

প্রিয়তার কথা মতো জাইন চক্ষু বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকে। হুট করে নাকে মুখে এক সঙ্গে পানির উপস্থিতি টের পেতেই উঠে বসে। গ্লাস হাতে নিয়ে প্রিয়তা এক পাশে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে।

প্রিয়তা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে,’ঘুম ভেঙেছে নাকি আরো মেডিসিন লাগবে?’

জাইন জবাব দেয়,’তোমাকে লাগবে।’

‘পারলে ধরে দেখান।’

জাইন বিছানা থেকে নেমে প্রিয়তাকে ধরতে নিলে সে সেখান থেকে পালায়। গায়ের পোশাক ভিজে যাওয়াতে উপয়ান্তর না থাকায় গোসল করার জন্য কলপাড়ে পা বাড়ায় সে।

….

দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে করিম উল্লাহর কক্ষে জাইন বসেছে। আগে থেকে উনি মোটামুটি সুস্থ তবে বেশিরভাগ সময় শুয়ে বসেই থাকেন। সাহায্য ছাড়া তেমন হাঁটা চলা করতে পারেন না। চেয়ারে বসে জাইন তার সাথে গল্পগুজব করছে।
ঘর থেকে প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে বের হয়। চোখ তুলে জাইন সেদিকে তাকায়।

প্রিয়তা সখিনা বেগমকে বলে,’নানী আমি মিনুর সাথে দেখা করে আসি।’

ভ্রু কুঁচকে জাইন প্রশ্ন করে,’মিনু কে? এই ভর দুপুরবেলা কোথায় যাবা?’

প্রিয়তা উত্তর দেয়,’আমার ছোট বেলার সই। ওর বাড়ি পিছনেই।’

জাইন বলে,’ভরদুপুরে কোত্থাও যেতে হবে না৷ তোমার সইকে বাড়িতে ডেকে পাঠাও।’

প্রিয়তা বায়না শুরু করে,’নানী একটু বুঝিয়ে বলো না।’

সখিনা বেগম বলে,’নাতজামাই যেতে দাও। পিছনের বাড়িতে যাবে।’

জাইন তার সিদ্ধান্তে অটল। মন খারাপ করে প্রিয়তা নিজ কক্ষে চলে যায়। আধা ঘন্টা পর বাহিরে চেঁচামেচি শুনতে পায়। এ তো পরিচিত গলা। আরে মিনুর গলা শোনা যাচ্ছে!

‘কিরে আমায় ভুলে গেলি?’
কক্ষের দরজায় মিনুকে দেখে প্রিয়তা চমকায়। এক ছুটে গিয়ে মিনুকে আলিঙ্গন করে। কতদিন পর মিনুর দেখা পেলো। প্রিয়তা যেনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। মিনু এসেছে সাথে করে আরো বাচ্চাদের এনেছে। ঘর ছেড়ে দু’জনে উঠানে যায়। অনেকদিন পর পুরনো সইকে পেয়ে প্রিয়তা সব ভুলে গল্পে মশগুল হয়ে যায়। ঘরের ভেতর হতে প্রিয়তাকে খুশি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জাইন।

‘প্রিতুরে ভালোবাসো?’

সখিনা বেগমের প্রশ্ন শুনে জাইন ঘাড় ঘুরিয়ে উত্তর দেয়,’অনেক।’

উত্তর পেয়ে সখিনা বেগম মিটমিট করে হাসে।
করিম উল্লাহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’মেয়েটা অবশেষে সুখ পেলো। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। কষ্ট দিও না আমাদের পুতুলকে।’

এগিয়ে এসে করিম উল্লাহর হাত ধরে জাইন বলে,’আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’

সখিনা বেগম বলে,’আমাদের নাতনী তোমাকে যতটা বিশ্বাস করে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসে। যেদিন তুমি বৃষ্টির মধ্যে আসলা সেইদিন আমি প্রথম প্রিতুকে এতো অস্থির দেখি। মুখে স্বীকার না করলেও ওর আচরণে আর বুঝতে বাকি থাকে না মাইয়াটা তোমাকে পছন্দ করে।’

‘আমি প্রিয়র জীবনের সবটা জানটা চাই। শুরু থেকে শেষ,সবটা।’

জাইনের মুখে এমন কথা শুনে করিম উল্লাহ আর সখিনা বেগম একে অপরের পানে তাকায়।

‘অল্প সল্প জানি। যদি আপনারা সবটা বলেন তাহলে খুবই উপকৃত হবো।’

করিম উল্লাহ কিছু বলতে নিলে সখিনা বেগম চোখ রাঙায়।

সখিনা বেগম জবাবে বলে,’কই তেমন কিছু তো নাই যা তোমারে বলা উচিত। সবই তো জানো।’

সখিনা বেগমের কথায় জাইন চুপ হয়ে রয় খানিকক্ষণ।

‘বেশ আপনারা যখন বলতে চাইছেন না তখন জোর করবো না। তবে সবটা না জানলেও আমার কোনো আপত্তি নেই।প্রিয় যেমনই হোক ও চিরকাল আমারই থাকবে। ওর জীবনে আর বিপদ আসতে দিবো না। আর না কখনো ওকে একা ছাড়বো। এইটুকু ভরসা আমায় করতে পারেন আপনারা।’

কথাগুলো বলে জাইন বসা থেকে উঠে ঘরের ভেতর চলে যায়।

‘আজকে সবটা বলে দিলেই পারতে।’
করিম উল্লাহর কথায় সখিনা বেগম চেতে গেলেন।

‘কি দরকার ঝামেলা বাড়ানোর। যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলবা না। মাইয়াটা সুখে আছে। এসব জানাজানি হলে যদি ওর ঘর ভাঙে? এমনিতেই ওর পোড়া কপাল।’

করিম উল্লাহ ভেবে দেখলেন সখিনা বেগমের কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো না। সত্যিই তো একবারো এটা সে ভেবে দেখেনি। সবটা ভেবেই ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো করিম উল্লাহর।

…….

সারাদিন প্রিয়তার কেটেছে বেশ ব্যস্ততায়। মিনুর সাথে পুরান বাড়ি গিয়ে ঘুরে এসেছে। পুরোটা সময় সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সে বিবাহিত আর তার বরকে বাড়ি রেখে এসেছে। সন্ধ্যা নামার বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফেরে। ফোনটাও নিজ কক্ষে ফেলে গিয়েছিলো। এই প্রথম বেড়াতে এসে প্রিয়তা এতো উচ্ছ্বসিত। প্রায় সকলেই প্রিয়তার আচরণে অবাক হয়েছে। মেয়েটাকে সবসময় চুপচাপ আর স্বল্প ভাষী হিসেবে সকলে জানতো। তাছাড়া তাকে তার মায়ের পিছন পিছন দেখা যেতো। মিনুর সাথেও ঘরে বসেই আলাপ সারতে হতো বাহিরে যাওয়ার অনুমতি মিলতো না। জাইন আজ তাকে বলতে গেলে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে।

‘নানী উনি কই?’

‘তোর কথা জিগাইলো পরে কই যে গেলো।’

প্রিয়তা চিন্তিত হয়। জাইন নিশ্চয়ই এতোক্ষণ তার খোঁজ না পেয়ে চিন্তায় ছিলো তাই হয়তো তাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। নিজেকে অপরাধী লাগে প্রিয়তার। মিনুর হাত ধরে তখন না বলেই বেরিয়ে গিয়েছিলো পুরান বাড়ির উদ্দেশ্যে। কাজটা সে মোটেও ঠিক করেনি যা এখন বুঝতে পারছে।
ফোনটা হাতে নিয়ে দুয়ার খুলে ঘর থেকে বের হয় জাইনকে কল দিতে। ঘরের ভেতর একদমই নেটওয়ার্ক নেই। ফোন উঁচিয়ে দেখতে থাকে কোন পাশে নেটওয়ার্ক আছে। হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে এসে বসে। গ্রামে রাত আটটা মানে বেশ গভীর রাত। পূর্ণ চন্দ্র থাকায় সবটা আলোকিত। সখিনা বেগম যদিও ঘর হতে গলা উঁচিয়ে কয়েকবার বলেছেন বেশিক্ষণ বাহিরে থাকতে না৷ তিনি আবার জ্বীন ভূতে বিশ্বাসী।
জাইনের নাম্বার ডায়াল করার কয়েক সেকেন্ড পর নাম্বারে কল ঢুকে। কল বাজতে বাজতে একটা সময় কেটে যায়। আবারো নাম্বারে কল লাগায় প্রিয়তা। এবার কল রিসিভ হয়।

‘হ্যালো,শুনতে পারছেন?’
প্রিয়তার কন্ঠে ব্যকুলতা।

‘বলো শুনছি।’

‘কোথায় আছেন?’

‘আছি কোথাও।’

‘মজা করবেন না প্লিজ। বাড়ি ফিরে আসেন জলদি। আমার চিন্তা হচ্ছে।’

‘ফিরে কি লাভ আমাকে তো পাত্তাই দিচ্ছো না। তুমি বরং আজ রাতে তোমার সইয়ের সাথে ঘুমাও।’

‘দেখুন আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। আপনাকে বলে যাওয়া উচিত ছিলো।’

‘যা হবার তো হয়েই গেছে। আমি আজ রাতে ফিরছি না।’

‘আপনি আমার উপর রেগে আছেন?’

‘হুম অনেকটা।’

‘কি করলে আপনার রাগ কমবে?’

‘কিছু করতে হবে না। তুমি ভেতরে গিয়ে ঘুমাও।’

প্রিয়তার কান্না পায় জাইনের কথায়।

‘যা বলবেন করবো তো।’

‘যা বলবো তা ই?’

‘হ্যা।’

‘না থাক লাগবে না।’

‘বলুন না কি করলে আপনার রাগ ভাঙবে।’

‘তাহলে চট করে দুষ্টু ঠোঁটে চুমু খেয়ে ভিজিয়ে দাও।’
কানের কাছে ফিসফিস করে জাইনের গলা পেয়ে পিছনে ফিরে তাকায় প্রিয়তা। খানিকটা ভড়কে যায় সে। তার কানেও ফোন এমনকি জাইনের কানেও ফোন। মিটমিট করে প্রিয়তার পানে তাকিয়ে হাসছে সে। এতক্ষণ আড়ালে লুকিয়ে মজা করছিলো জাইন। বিষয়টা বুঝতে পেরে প্রিয়তার রাগ হয়। এতক্ষণ সে ভাবলো কি আর হলো কি। জাইন এগিয়ে এসে প্রিয়তাকে ধরতে নিলে সে সরে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। পেছন থেকে তার ওড়না টেনে ধরে জাইন।

‘কোথায় যাচ্ছো?’

‘জাহান্নামে।’

‘আমাকে নিয়ে যাও।’

‘আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই।’

প্রিয়তাকে টেনে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে সে।

‘রাগ করা উচিত আমার আর রাগ করছো তুমি! হোয়াই?’

‘ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।’

‘তুমি তো এমনিতেও কম কথা বলো আর আদর করার সময় তো একদম মিউট থাকো। বকবক তো আমি করি।’

জাইনের কথা শুনে চোখ গরম করে প্রিয়তা তাকায়।

ফিসফিস করে জাইন বলে,’কি কি বলি মনে থাকে তোমার? আমার তো মুখস্থ। যেমন তোমার ঠোঁট নিয়ে কত্ত কমপ্লিমেন্ট দেই। আদরের সময় এত্তো এত্তো চুমু খাই তবুও তখন মন ভরে না। ইউর লিপ ইজ লাইক আইসক্রিম। যত্ত খাই তত আরো খেতে মন চায়।’

প্রিয়তার কান গরম হয়ে যায় লজ্জায়। জাইন যে বেশরম লোক তা সে জানে তবুও মাঝে মাঝে তার এসব কথাবার্তা শুনে প্রিয়তা ভীষণ লজ্জা পায়।

‘যা ই বলেন আমি গলছি না। আপনি আমাকে শুধু শুধু চিন্তায় রেখেছিলেন।’

‘তুমি যখন তোমার সইয়ের হাত ধরে না বলে চলে গেলে তখন বুঝি আমার চিন্তা হয়নি? আচ্ছা যাও যা খুশি করো।’

অভিমান করে প্রিয়তাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায় জাইন। প্রিয়তার খারাপ লাগে জাইনের কথায়। সে জাইনের হাত টেনে ধরে কিন্তু জাইন তাকে পাত্তা দেয় না।

‘সরি আর হবে না।’
প্রিয়তার কথার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না জাইন। প্রিয়তা জাইনকে জড়িয়ে তার গালে চুম্বন দেয় তবুও জাইন চুপ থাকে। গলা জড়িয়ে ছোট করে জাইনের ওষ্ঠে চুমু দেয়। এরপর সরতে নিলে জাইন তাকে দু হাতে আগলে নেয়। কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই প্রিয়তাকে নিজ বশে নিয়ে নেয়। তবে বাঁধা পড়ে সখিনা বেগমের ডাকে। জাইন বিরক্ত হয় এই মূহুর্তে তার কাজটা অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়াতে। ভেবেছিলো মিছে মিছে রাগ করলে প্রিয়তা তাকে কাছে টেনে নিবে।

প্রিয়তার ওষ্ঠের দিকে তাকিয়ে বলে,’তুমি জানো তুমি কতটা ভয়ংকর মা দ ক? তোমার মা দ ক তায় ডুবে আমি তো শেষ প্রিয়। বাঁচাও আমায়। ডু সামথিং।’

প্রিয়তা চুপ থাকে তবে তার শ্বাস দ্রুত গতিতে ওঠানামা করছে। চোখ বন্ধ করে প্রিয়তার গালে নাক ঘষে আর বিরবির করে কিছু বলে।

‘প্রিয়!’
জাইনের ডাকে প্রিয়তা ঢোক গিলে তাকায়।

‘এই প্রিয়!’

‘হ্যা।’

‘ডু ইউ লাভ মি?’

‘হ্যা।’

‘হয়নি ঠিক করে বলো।’

‘ইয়েস আই ডু।’

‘এভাবে না ছে ইউ লাভ মি।’

‘আই লাভ ইউ।’

প্রিয়তার ওষ্ঠের কোণে চুমু দিয়ে জাইন বলে,’আই লাভ ইউ মোর। তুমি কখনো হারাবা না তো? আমার কেন জানি ভয় হয় তোমায় নিয়ে।’

প্রিয়তা জাইনের বুকে মাথা রাখে।
‘এই খোলা আকাশের নিয়ে দাঁড়িয়ে কথা দিলাম চিরকাল আপনার কাছে রবো।’

এবার ঘর থেকে প্রিয়তার মামার গলা পাওয়া যায়। সেও দু’জনকে খেতে ডাকছে। মাথা তুলে প্রিয়তা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। জাইনের শার্ট ঠিক করে দেয়।

‘আপনি মামার সাথে ফিরেছেন?’

‘এতক্ষণে বুঝলে?’

‘আমি শুধু শুধু চিন্তা করছিলাম।’

‘আমি তো তোমায় খুঁজতেই বেরিয়েছিলাম পথে মামার সাথে দেখা সে জানালো তুমি পুরান বাড়ি ঘুরতে গেছো তাই আমি মামার সাথে গিয়ে এলাকাটা ঘুরে এলাম।’

‘আর আমি মিছে মিছে কষ্ট পেলাম।’

প্রিয়তার কথা শুনে জাইন হাসে। প্রিয়তা তাকে ফেলেই ঘরের দিকে হাঁটা দেয়। জাইন যেতে চাচ্ছিলো না। তার ইচ্ছে করছে এই খোলা আকাশের নিচে পুরো রাত্রি পাড় করতে। উপায়ন্তর না থাকায় যেতে হয়।

________

প্রিয়তা বিছানা ঝারছে শলার ঝাড়ু দিয়ে। বিছানা ঝারা শেষে চাদরটা ঠিক করে বিছিয়ে দিচ্ছে। নানী বাড়িতে তিনদিন বেড়ানোর পর ফিরেছে তারা। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। জাইনও তার নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে। সারাদিন রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ করে প্রিয়তার সময় কাটে। অবসরে বই নিয়ে পড়তে বসে আর না হয় বান্ধবীদের কল দিয়ে গল্প করে। সারাদিন পর সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরে জাইন। ক্লান্তি শরীরে এসেই আগে প্রিয়তাকে জড়িয়ে আধঘন্টা বসে থাকে। চেঁচামেচি করলেও সরে না যতক্ষণ না তার ইচ্ছে হয়। এরপর উঠে গিয়ে গোসল সেরে খেয়ে নেয়। রাতের বেলা যতক্ষণ না প্রিয়তা এসে তার মাথার চুল টেনে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ততক্ষণ সে ঘুমায় না। বলতে গেলে সব ঠিকঠাকই চলছে ছোট্ট এই সংসারে। প্রিয়তার ধ্যান ভাঙে দরজায় ঠকঠকের শব্দে। চোখ তুলে দরজার পানে তাকায়। ছাদের দরজা এমনকি কক্ষের দরজাও খোলা ছিলো। দরজায় দাঁড়ানো মেহমানকে দেখে সে চমকায়। হাতের ঝাড়ুটা ফেলে দ্রুত মাথায় ওড়না টেনে ঘোমটা দেয়।

‘আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন?’

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ আছি। জাইন কোথায়?’

‘উনি তো ঘরে নেই ডিউটিতে গেছে। আপনি ভেতরে আসুন। নিহারিকা নুহাশ ভেতরে আসো।’

মিসেস পারুল পুরো কক্ষে চোখ বুলায় এরপর ভেতরে প্রবেশ করে। নিহারিকা আর নুহাশও এসে তার পাশে খাটে বসে। প্রিয়তা অস্থির হয়ে যায় কি করবে। তিনজনকে ঘরে বসিয়ে রেখে রান্নাঘরে যায় চা বসাতে। চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে বাসার নিচের দোকানে যায় বিস্কুট আর কোমল পানীয় আনতে। মিসেস পারুল সবটা দেখেন। প্রিয়তার অস্থিরতা দেখে কিঞ্চিত হাসেন। হুট করে দেখতে এসে মেয়েটাকে নিশ্চয়ই সে বিপদে ফেলে দিয়েছে। তিনিও রান্নাঘরে এগিয়ে যান সাহায্য করতে। প্রিয়তা এসে দেখে মিসেস পারুল চা বানাচ্ছে।

‘আপনি রাখুন আমি করছি।’

‘কেনো আমি চা বানালে খাবা না? আমি কিন্তু অনেক ভালো চা বানাই৷ জাইনের বাবা আমার বানানো চা ছাড়া খানই না।’

প্রিয়তা লজ্জা পায়।

‘না আমি তা বলিনি।’

মিসেস পারুল প্রিয়তার মাথায় হাত রেখে বলে,’হুট করে এসে তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিলাম। নিশ্চয়ই ভাবছো হঠাৎ কেনো এলাম? আসলে মায়ের মন তো। যতই দূর হতে শুনি তোমরা ভালো আছো মন মানে না যতক্ষণ না তোমাদের দেখতে পাচ্ছি। আজ সাহস করে ছেলেমেয়ে দুটোকে নিয়ে চলেই এলাম।’

‘আপনি আসবেন আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’

‘আমি বুঝিরে মা তোর কষ্ট হচ্ছ এভাবে নতুন সংসারে একা থাকতে। চিন্তা করিস না খুব জলদি তোকে ঘরে তুলবো। তুই আমাদের সকলের যত্ন,ভালোবাসা সবটা পাবি শুধু একটু ধৈর্য্য ধর। তোদের জন্য সবসময় দোয়া করি। এই মায়ের দোয়া তোদের সাথেই চিরকাল থাকবে।’

মিসেস পারুলের কথা শুনে প্রিয়তার চোখে অশ্রু এসে হানা দেয়। প্রিয়তার গালে হাত রাখে মিসেস পারুল।

‘কিরে তুই বলেছি বলে রাগ করিসনি তো? মায়েরা সন্তানদের ভালোবেসে তুই করেই বলে।’

প্রিয়তা সাথে সাথে মিসেস পারুলকে জড়িয়ে ধরে আবেগে অশ্রু ঝরায়। আজ ভীষণ মা কে মনে পড়ছে প্রিয়তার। মিসেস পারুল প্রিয়তার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটার জায়গায় নিজের অতীত সে দেখতে পাচ্ছে। এককালে বাবার অমতে ঘর ছেড়ে হাত ধরেছিলো রমিজ উদ্দিনের। সেই সময় তার পাশে কেউ ছিলো না। কত কষ্টে তার দিন কেটেছে খেয়ে না খেয়ে। এমনকি তার জন্মদাতা মাতা পিতাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। সেই সময় কেউ ছিলো না তাকে ভরসা দেওয়ার। নিজের সন্তানের বেলায় সে হতে চায় ভরসার স্থান।

………..
(চলবে..)