প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব-২০+২১

0
412

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২০ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
” তুমি চাইলে আমার কলাবতীকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। ইচ্ছে আছে কলাবতীকেই বিয়ে করব। টাকা পয়সা কম খরচ হবে তাকে বিয়ে করলে। কারণ সে বেশিরভাগ সময় নাস্তা সেরে নেয় পাকা কলা দিয়ে। আর কাঁচা কলার বিভিন্ন রেসিপি দিয়ে লাঞ্চ ডিনার সেরে নেয়।”

আলিশা খুক করে হেসে ফেলল শুভ’র কলাবতীকে চিনে ফেলায়। কিন্তু কোন রিপ্লাই দিলনা শুভ স্যারের মেসেজের। ঘুম আর এলনা তার আঁখিকোণ জুড়ে। ফাগুনের উদাম বৃক্ষে নবপল্লবিত শাখার মতই তার হৃদয়ের প্রণয়ডালগুলো গজাতে লাগল রঙ বেরঙ ছড়িয়ে।

কবে যে শুভ স্যারের সাথে চুটিয়ে প্রেম করব। স্যার এমন কেন। কেমন যেন খিঁচ মেরে থাকে। আমি মেয়ে হয়ে আর কত বেহায়া হব। এমনিতেই স্যারের প্রেমে বেহায়ার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছি। প্রেম যে মানুষকে কত বেহায়া বানিয়ে ছাড়ে তা এখন বুঝি। পরশু আসুক স্বাদহীন কাঁচকলাটা আমার।

শুভ দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও আলিশার রিপ্লাই পেলনা। বুঝে নিল আলিশা হয় মেসেজ দেখেনি। নয়তো দেখেও ভুল বুঝে ফুঁসে আছে কলাবতী অন্য মেয়েকে মনে করে।

আজ শুক্রবার। বিকেলে আয়মানকে ডেকে তার মা বলল,
আমি আর আলিশা একটু বের হচ্ছি। তোরা থাক।

কোথায় যাচ্ছ তোমরা?

ফোন এলো একটু আগে। আমার চাচাতো বোন সাহেরার জামাই ব্রেন স্ট্রোক করে হাসপাতালে। তাই দেখতে যাচ্ছি।
পিয়াসা পাশ থেকে বলল,
মা আমিও যাব আপনাদের সাথে।

তুমি নতুন বউ। হুট করে এভাবে নিয়ে যাবনা আমি। থাকো তোমরা। নাস্তা কিছু বানিয়ে খেও দুজনে।

আলিশা পাশ থেকে একগাল সরস হাসি হেসে বলল,
তোমরা টম এন্ড জেরি ডিংকা চিকা ডিংগা চিকা করো খালি বাসায়। নয়তো ডুগডুগি খেল।

তারা মা মেয়ে চলে গেল। পিয়াসা বাসার গেট বন্ধ করে দিল। ফ্রিজ খুলে দেখল কি আছে সন্ধ্যার নাস্তার জন্য। এরপর কিচেনে গেল।

পিয়াসা আসছেনা কেন রুমে, এটা ভেবেই আয়মান ও কিচেনে চলে গেল।

রসপূর্ণ গলায় জিজ্ঞেস করলো,
বাসার গেট বন্ধ করতে এত সময় লাগে?

পিয়াসা কপাল ভাঁজ করে,
আজব চিজতো আপনি। বাসার গেটতো কয়েক সেকেন্ডেই লাগানো হলো ।

তাহলে আমার কাছে আসছনা কেন?
আর তাদের সাথে তুমি যেতে চাইলে কেন আমাকে একা রেখে?

বলেছি একটা কারণে? মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল পিয়াসা।

ফাঁকিবাজি? আমাকে ঠকানো? আমি বুঝিনা কিছু নাহ? এখন এর ডাবল উসুল করেই ছাড়বো।

ওরে বাবারে বলে পিয়াসা লুকালো ডাইনিং টেবিলের নিচে।

পিয়াসা বের হও বলছি। আচ্ছা কিছুই করবনা প্রমিজ।

সত্যিতো?

তিন সত্যি।

পিয়াসা বের হয়ে এলো। বলল কিচেনে চালের গুড়া দেখলাম। তেলের পিঠা বানাতে পারি। মানে পোয়া পিঠা৷ অবশ্য মাটির খোলা থাকলে চিতই ও বানাতে পারতাম। কিন্তু এই পিঠা খেতে কুরানো নারকেল দরকার। নারকেলতো বাসায় নেই। আবার মধু হলেও চলতো। মধু দিয়ে এই পিঠাটা খেতে দারুণ লাগে। আমি এভাবে অনেক খেয়েছি নানুদের বাড়িতে ছোটবেলায়।

আয়মান সাথে সাথেই বলল,
এই পিয়াসা মধু আছেতো। একদম খাঁটিটাই আছে৷ আমাদের বাসায় তুমি আসার আগে আম্মুর অনেক কাশি হলো। তখন আগোরা সুপার শপ থেকে এক বয়াম কিনে এনেছি।

তাহলে ডিম দিয়ে খোলাজালি বানাই? মধু দিয়ে খাব দুজনে।

আয়মান একটুক্ষণ চুপ হয়ে রইলো। কিচেনে গিয়ে মধুর বয়াম ও একটি চামচ হাতে নিলো। বলল পিঠা বানাতে হবেনা। অন্য লিকুইড নাস্তা খাব।

মানে। বুঝলাম না? বলল পিয়াসা।

আরে মধু খাব মধু মধু করে।

এটা বেশী খাওয়া যায়? কাশি চলে আসেনা?

আসুক কাশি। তবুও মধুপান করব এক নিরালায়। রুমে আস।

দূর আমি কেন যাব?

আরেহ আস বলছি। মধু দিয়ে মধু মধু প্রেম করব। রোমান্স করব।

নাহ যাবনা আমি। ভয় করে।

কিসের ভয়। খেয়ে ফেলব নাকি। আমি না তোমার প্রেমিক?

সেটা আগে ছিলেন। এখনতো অন্যকিছু।

ওরেহ! বলে কি সুইটহার্ট। সেটা হলেতো জোর করে সব ছিনিয়ে নিতে পারি। আয়মান পিয়াসার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেল।
পিয়াসাকে খাটের কিনারায় বসিয়ে দিল। নিজে হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসল। পিয়াসার পাঁচ আঙ্গুল চুবিয়ে ধরল মধুর বয়ামের ভিতরে। একে একে সব আঙ্গুল থেকে আয়মান তার মুখে পুরে নিয়ে চুষে চুষে মধু খেল।

পিয়াসা নুয়ে আসা কণ্ঠে,
এই নাস্তায়তো মন ভরে। কিন্তু পেট ভরেনা৷ আপনি এত রোমান্টিক পুরুষ। সরেন বলছি। ফাজিল। অসভ্য।

আয়মান ঘোর লাগা চাহনিতে বলল,
পেট ভরার নাস্তা বাইরে কিনতে পাওয়া যাবে। কিন্তু মন ভরার নাস্তাতো তোমার হৃদয় কোষাগারেই বহুল পরিমাণে সঞ্চিত। আচ্ছা প্রণয়ের অতল সুখ কি শুধু আমি একাই উপভোগ করছি। আমার প্রেমিকাটা করছেনা? মিথ্যা বলবানা বলছি।

পিয়াসা লাজুক লাজুক চোখে অন্যদিকে চেয়ে রইলো। আয়মান পিয়াসার দুগাল তার দুহাত দিয়ে চেপে ধরল। দুচোখের পাতায় নরম চুমু খেল।

পিয়াসা বলল আমি এবার যাই?

আমি এখানে। তুমি যাবে কোনখানে?
একটু মধু খেয়ে আমার কিছুই হয়নি। আরো খাব।

বয়াম তো টেবিলেই আছে। নিয়ে খান। আমার কাছে কি?

শোন, “দাম্পত্য টা হলো একটা আর্ট। প্রতিদিন তাকে নতুন করে গড়বার চাই। ”
এটা কে বলেছে জান?

না জানিনা।

এটা কবিগুরু তার শেষের কবিতা উপন্যাসে বলছে। চমৎকার একটি রোমান্টিক উপন্যাস। দর্শনে মাখামাখি। তোমাকে গিফট দিব। পড়ে নিও। মজা পাবা।

আচ্ছা দিয়েন। যাই?

আবার যাই যাই করে। ভাবখানা এমন যেন বাঘের খাঁচায় বন্ধী। যে কোন সময় বাঘ হালুম বলে কড়মড়িয়ে খেয়ে ফেলবে।

আপনি না মধু খাবেন। খাচ্ছেন না কেন?

মধু খাব বলেই তো এই উদাহরণ টানতে হলো। শৈল্পিকভাবে পরিবেশন করলে যে কোন খাবার খেতে বেশী রুচিবোধ হয়। খাওয়া ও যায় বেশী। এই বলে আয়মান পিয়াসাকে খাটের মাঝ বরাবর চিৎ করে শুইয়ে দিল। পিয়াসা হকচকিয়ে গেল। বলল,
কি করবেন আমাকে?

চুপ। একদম চুপ। জাস্ট ফিল করো দুচোখ বন্ধ করে। পিয়াসা চুপ হয়ে গেল। নিজের দুইহাত দিতে মুখ ঢেকে ধরল লজ্জায়।

আয়মান পিয়াসার পেটের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নিল। মনে মনে বলল,
আম্মুকে ধন্যবাদ পিয়াসাকে এই কয়দিন বাসায় শাড়ি পরতে আদেশ দেওয়ার জন্য। পিয়াসার উদাম পেটে এক টেবিল চামচ মধু ঢেলে দিল৷

পিয়াসা টের পেয়ে চোখ মুখ বন্ধ রেখেই চেঁচিয়ে উঠল। আমি গোসল করেছি না? আমার পেট আঠালো হয়ে যাবেনা এখন ? এটা কেমন মধু মধু প্রেম? রোমান্স? আমার পছন্দ হচ্ছেনা এতটা।

আয়মান কড়া গলায়,
এই যুবতী থামো বলছি। ইসসস! ন্যাকা। পছন্দ না উনার। মেয়েদের বুক ফাটে মুখ ফাটেনা। এটা ঢের জানি আমি। উপর দিয়ে বলেন না না। সরে যাও৷ ভিতর দিয়ে বলে আরো চাই। আরো।
আমি মধু তোমার পেটে ঢালিনি। সুন্দর একটি ছোট্ট বাটিতে ঢেলেছি। উহু! আমার পরিবেশনা প্রসংশার দাবিদার। সাদা বাটির ভিতরে লাল গাঢ় মধু। ছবি তুলে নিচ্ছি। তোমাকে দেখানোর জন্য।

আয়মান পিয়াসার উদাম পেটের ছবি তুলে নিল। তার পরে জিভ দিয়ে সব মধু চেটে চেটে খেল। পিয়াসা এবার টের পেল স্বামী তার নাভিতেই ঢেলেছে মধু।

আয়মানের গরম জিভের উষ্ণতায় পিয়াসা অস্থির হয়ে গেল। আয়মানের ঘন চুলগুলো দুহাত দিয়ে খামচি দিয়ে ধরল। আয়মান পিয়াসার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। লাল হয়ে আসা দুচোখ দিয়ে পিয়াসার চোখে চোখ রাখল।
তুমি আমার এক পৃথিবী উষ্ণতা। তুমি আমার বুক ভরা সুখ। তুমি আমার অমাবস্যা রাতের জোনাকিপোকা। তুমি আমার জোছনা রাতের মায়াবি চাঁদ।

যাও লাভলী। ছেড়ে দিলাম। আর কিছু করবনা। আয়মান পিয়াসার চুল মোছার পাতলা তাওয়েলখানি বারান্দা থেকে নিয়ে আসল। তাওয়েলের এক কোন বেসিন থেকে ভিজিয়ে নিল। পিয়াসার পেটের চারপাশ মুছে দিল। লেখিকা রেহানা পুতুল এর সাথে যুক্ত হউন দারুণ স্বাদের সব গল্প পেতে৷

আমার তাওয়েল ভিজালেন কেন? নিজের আকাম পরিশুদ্ধ করার জন্য অন্যের তাওয়েল ভেজানো ঠিক হয়নি। আমি এখন আপনার তাওয়েল ভিজিয়ে দিই?

দাও। কোন মানা নেই। আমার সব ভেঙ্গে চুরে গুড়ো গুড়ো করে দাও নিষ্ঠুর প্রিয়তমা।

পিয়াসা উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে দাঁড়িয়ে রইলো। তার ঘন নিঃশ্বাস উঠানামা করছে। ছন্দ হিল্লোল তালে উপর নিচে একি তালে দুলে দুলে উঠছে উইপোকার ঢিবির মতো বুকের দুটো ঢিবি। বেসামাল সুখে মরে যাচ্ছে। প্রিয় মানুষের স্পর্শ, কথা,দুষ্টমি, রাগ,অভিমান,আবদার, জোর খাটানো, কামুক চাহনি এত ভালো লাগে কেন। এত সুখ কেন। ও ঠিকই বলছে। মেয়েদের বুক ফাটে মুখ ফাটেনা। উফফস! অসহ্য সুখে অসুখ হয়ে যাবে মনে হয় আমার। আর পারছিনা থাকতে।

আয়মান মধুর বয়াম আর চামচ ধুয়ে নিদিষ্ট স্থানে রেখে দিল।

আজ শনিবার। শুভ পড়াতে এলো আলিশাকে। আলিশা আগের দিনের মতই মুখ গোঁজ করে রইলো। অংকের বিষয় ছাড়া অতিরিক্ত কোন শব্দই মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলোনা।

শুভ মুখেই জিজ্ঞেস করলো। কেমন আছ?

আলিশা চুপ রইলো।

শুভ অংকের নিচে লিখলো। রাতে মেসেজ পেয়েছ? আমার কলাবতীকে নিয়ে লিখা।

পেয়েছি স্যার। আপনার কলাবতী হোক আর মধুমতী হোক। তাকে নিয়ে রাতে বিরাতে আমাকে মেসেজ করবেন না। এটা লিখে আলিশা খাতা ছুঁড়ে মারার মতই ঠেলে দিল শুভ’র সামনে।

খাতা ছুঁড়ে মারাতে শুভ অপমানবোধ করল। রেগে গেল।

আচ্ছা দিবনা। কিন্তু তোমার কাউকে ভালোলাগা ও ভালোবাসার মানে এই নয় যে,
তুমি তাকে অশ্রদ্ধা করবে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আচরণ করবে। মনে রেখ,
” শ্রদ্ধার মাঝেই প্রকৃত প্রেম নিহিত। যার প্রতি যত প্রেম, তার প্রতি তত শ্রদ্ধা। ”

এটা আমাদের দেশের বিখ্যাত এক প্রজ্ঞাবানের মুখ নিঃসৃত অমর বাণী। গুগল করে দেখবে বলে,
আয়মান একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে গেল।

আলিশার অসমাপ্ত অংক পড়ে রইল। রয়ে গেল প্লেট ভর্তি নাস্তা। ফ্যালফ্যাল ভেজা আঁখিতে আলিশা শুভ’র যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো।

চলবে ঃ ২০

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২১ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
শুভ একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে গেল। আলিশার অসমাপ্ত অংক পড়ে রইল। রয়ে গেল প্লেট ভর্তি নাস্তা। ফ্যালফ্যাল ভেজা আঁখিতে আলিশা শুভ’র যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো।

দুদিন বাদেই আলিশার জন্মদিন পালিত হলো । প্রতি বছরের মতো এবার ও ঘরোয়াভাবে আয়োজন করা হয়েছে। একমাত্র আদরের ছোট মেয়ে আলিশা। ছোটবেলায় সে বাবাকে হারিয়েছে। এতটুকু না করলে মায়ের মনে একরাশ অতৃপ্তি রয়েই যায়। তাই সবাই সবাইর মতো করে তাকে উপহার দিতেও আলসেমি করলোনা।

পিয়াসা উপহার দিল একটি ফ্রেমে বন্ধী ছবি। যেখানে সে ও আলিশা বোনের মতো গলাগলি করে আছে। তার বিয়ের আগে তোলা এই ছবিটা। আলিশা উৎফুল্ল হয়ে গেল তা দেখে। সুইট ভাবি বলে পিয়াসার গালে নিজের গাল ঠেকিয়ে ধরলো আদুরে ভঙ্গিতে।

তার মা নিজের হাতে মেয়ের পছন্দের কেক,পিৎজা,ফিরনি তৈরি করলেন। একমাত্র বড় ভাই আয়মান মাথায় হালকা টোকা মেরে বোনের হাতে পরিয়ে দিল সুন্দর একটি ব্রেসলেট ঘড়ি।

আলিশার এসবে যতই মন ভরুক না কেন,তার হৃদয় জুড়ে অপেক্ষা কাল বিকেলের জন্য। শুভ স্যার কি তাকে আসলেই ভালোবাসে কিনা। এটার উপযুক্ত প্রমাণ হবে কালই। কয়েকদিন আগে কথা প্রসঙ্গে শুভ স্যারকে সে খাতায় লিখে জানিয়েছিল আজ যে তার জন্মদিন ।

পরেরদিন শুভ এলো পড়াতে। তার খালি হাত দেখে আলিশার হৃদয় পাড়ে মেঘনার ঢল নামল। বেজার মুখে চুপচাপ অংক করা শেষ দিল। শুভ ট্যারা চোখে দেখল আজকের নাস্তায় রয়েছে জন্মদিনের কেক।

শুভ সব সময় পড়ানো একেবারে শেষের দিকে এলেই নাস্তা খাওয়া শুরু করে। কারণ অংকের মতো জটিল বিষয়ের সাথে খাওয়া চালানো যায়না।

তাই অংক করা শেষের দিকে এলে,
কাঁটা চামচে কিছুটা কেক গেঁথে নিল একপাশ থেকে কেটে। নরম কামড় বসিয়ে খেতে খেতে দুর্বোধ্য হাসি দিয়ে বলল,
পেষ্টি কেক আমার পছন্দ। কারো জন্মদিন ছিল আলিশা?

আলিশা ফুলে ফেঁপে উঠছে রেগে ।

সেই অভিব্যক্তি শুভ’র দৃষ্টিগোচর হতে মুহুর্ত লাগলনা। শুভ আরেকটু কেক কাঁটা চামচে গেঁথে নিল। চোরাচোখে দুপাশে দেখে নিল বাসার কেউ আছে কিনা। আলিশা মাথা ঝুঁকিয়ে অংক করেই যাচ্ছে। শুভ স্যারের দিকে তার তাকাতেই মন চাচ্ছেনা।

শুভ আলিশার ঠোঁটের সামনে কেকটা এগিয়ে ধরলো। যারই জন্মদিন হোক না কেন কেক খাও। আলিশা নিস্তেজ দৃষ্টি ফেলল শুভ’র চোখে।

শুভ জন্মদিন আলিশা মনি। নাও। হা করো। কেক খাও । আলতো হেসে দিল শুভ।

আলিশা তড়িতেই শুভ’র হাত ধরে কেক খেয়ে নিল। থ্যাংক ইউ স্যার বলে নজর কাড়া শিশুসুলভ হাসি ছড়িয়ে দিল। জিজ্ঞেস করলো আমার উপহার?

সব উপহার কি চোখে দেখা যায়? বলে শুভ পকেট থেকে নীল খামে মোড়ানো একটি চিরকুট আলিশার হাতের মুঠোয় ধরিয়ে দিল। কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

আলিশা খুশীতে আটখানা হয়ে উঠে। বসা থেকে চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়ায়। ব্যাঙের মতো এক লাফে চেয়ার থেকে লাফিয়ে নামে। খরগোশের ন্যায় লাফিয়ে লাফিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। খাম খুলে চিরকুটটি চোখের সামনে মেলে ধরলো। নীল কালির কয়েকটি বাক্য মাত্র। প্রতিটি শব্দ জ্বলজ্বল করে দ্যুতি ছড়াচ্ছে আলিশার মন কুঠিরে। নিবিষ্ট চিত্তে আবিষ্ট হয়ে বার কয়েক পড়ল।

” তোমার আবেগে ভেসে যাওয়ার বয়স। তাই প্রশ্রয় দিয়ে তোমার পড়াশোনার ক্ষতি করতে চাইনা। কারণ ভালোবাসি। আর চাঁদমুখটাকে তাওয়ায় ফোলা রুটি বানিয়ে রেখনা কিন্তু । ভালোথেকো। ”

আলিশা আনন্দে টগবগিয়ে উঠল। বিবশ হয়ে গেল তার টুকরো সাধের অনুভূতিগুলো। প্রতিটি শব্দের উপরে নিজের অধর বুলিয়ে নিলো মসৃণ করে। জামা ফাঁক করে বুকের ভাঁজে চিরকুটটি রেখে দিল সযতনে। নিজে নিজেই পাগলের মতো শুভকে বকতে লাগল। ভেংচি কাটতে লাগল ঠোঁট বাঁকিয়ে।

রাতে খেয়ে আলিশা তাড়াতাড়ি শুয়ে গেল। মনের ভিতর উড়ন্ত সুখের ঝাঁপি নিয়ে, ফেসবুকে গেলো।
ক্লাস ফ্রেন্ড মনিকে ফেসবুকে মেসেজ দিল।
” হাই দোস্ত। আমারতো সেরে গিয়েছে রে। ”

মনি অনলাইন ছিল। উৎসুক হয়ে রিপ্লাই দিল,

” কি সেরে গিয়েছে বান্দর মাইয়া?”

” আরেহ মনি। আমিতো বাকুম বাকুম পায়রা এখন। ট্রিট দিও সিস। কোন রক্ষা নাই। ”

” এই আইলসা? আই মিন শুভ স্যার তোর প্রেমে কুপোকাত হয়েছে? ”

” ইয়েস ডার্লিং। আই হোপ তোমাকে বেট ধরার কথাটা মনে করিয়ে দিতে হবেনা? ”

” এই চুমু খেয়েছে স্যার তোকে? প্রেমের প্রথম সোপান হলো চুমু খাওয়া। এই স্তর অতিক্রম করেছিস আইলসা?”

” ওই মনি মুক্তা। আমি কি তোর মতো লুচু মেয়ে নাকি? আমি এসব চাইনা। শুধু মন চাই মন। ”

” ওহে বালিকা। প্লেটোনিক লাভের যুগ এখন খতম। দেখব কত। এনি ওয়ে তুই ও প্রেমে সফলতা পেলি। তাই এই ইচিংবিচিং উড়াধুড়া আনন্দে এক দুপরে ফুচকা ট্রিট দিস।”

” আগে তোর প্রমিজ টা পূর্ণ হোক। দেন দেখা যাবে। আর দেখলি,
বলছিনা শুধু তুইই হাউজ টিউটরের সাথে প্রেম করতে পারিস। আর কেউ পারেনা? কেমন দিলাম। তোকে চিরকুটের ছবি দিচ্ছি দেখ। লিখল টা কি? ”

” আচ্ছা দে। দেখব। রাখি। বাই। টাটা। উম্মাহ!”

কথা শেষ হলে আলিশা প্রণয় সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে খেতে সুখ নিদ্রায় ঢলে পড়ে।

পিয়াসা আচমকা এক দুপুরে ওয়াশরুমে টাইলসের উপরে পা পিছলে পড়ে গেল। উঠে দাঁড়াতেই পারছেনা। গোঙানির শব্দ শুনে রান্নাঘর থেকে বুয়া ছুটে গেল। ধরে দাঁড় করালো পিয়াসাকে। আয়মান কলেজে। আলিশাও তার কলেজে। বুয়া খালাম্মা বলে জোরে ডাক দিলো।

আয়মানের মা ওয়াশরুমের সামনে গেল। চোখ কপালে তুলে উৎকন্ঠার স্বরে বলল,
হায় আল্লাহ! একি ঘটে গেল! আমার রুমে নিয়ে যাও। আমি বরফ পানির ব্যবস্থা করছি। বুয়ার কাঁধে ভর দিয়ে পিয়াসা চলে গেল শাশুড়ীর রুমে। কাঠের চেয়ারে বসল। তিনি বড় গামলার পানিতে বরফের টুকরো দিয়ে নিয়ে এলেন। বুয়া আলিশার পায়ের পাতাকে পানিতে চুবিয়ে ধরলো।

ব্যথায় ওমাগো বলে পিয়াসা আবারও কুঁকিয়ে উঠল। আয়মানের মা বুয়াকে হালকা মেজাজে জিজ্ঞেস করলো,
তুমি এই সপ্তাহে ওয়াশরুম ধোওনি?

খালাম্মা কি যেন কন। পরশু না বাথরুম ধুইলাম।

মা থামেন। আমি আমার ভুলেই পড়ে গিয়েছিলাম।

পায়ের পাতা তুলে ফেল এবার। পানি নরমাল হয়ে গেল। না ফুলে গেলে বুঝতে হবে হাড় ভাঙেনি বা মচকায়নি। তবে রাতে ব্যথা কিছুটা বাড়বে।

তার মা ঘড়ি দেখে আয়মানের ক্লাস শেষ হলে ফোন দিল। জানাল আসার সময় ফার্মেসি থেকে বলে যেন ব্যথা উপশমের ট্যাবলেট নিয়ে আসে।

আয়মান অস্থির হয়ে ছুটে এলো বাসায়। মায়ের রুমে চলে গেল। পিয়াসার পায়ের পাতা চেপে ধরে দেখল। পিয়াসা আঃ বলে মৃদু চিৎকার দিল।

আয়মান শাসনের সুরে বলল,

মন কই থাকে ওয়াশরুমে ঢুকলে? দেখে শুনে চলতে পারনা?

পিয়াসা ও রেগে গেল। আপনার ঔষধ নিয়ে যান। খাবনা। দুই টাকার ঔষধ না আনতেই খবরদারি শুরু হলো। কেউ ইচ্ছে করে নিজের শরীরে আঘাত করে?

আয়মান ঔষধ বুঝিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। পিয়াসা এখন শ্বাশুড়ির সাথেই ঘুমায়। কারণ ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে শাশুড়ী সুরা পড়ে পিয়াসার পায়ের পাতায় তিনবার ফুঁক দিয়ে দেয়। পিয়াসাও আশাবাদী এতে ব্যথা উপশমে ভূমিকা রাখতে পারে বলে।

পিয়াসা এক সপ্তাহ পরে রাতে নিজের রুমে ঘুমাতে গেল। আয়মান কন্ঠে শীতলতা এনে নিরস ভঙ্গিতে বলল ,
না এলেও চলবে আমার। যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ঘুমাতে পার তুমি।

পিয়াসা পিছন থেকে আয়মানের ঘাড়ের দুপাশে আহ্লাদীর মতো পেঁচিয়ে ধরল। টেনে টেনে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করল,
হ চলেতো। শালার মশার জন্য। নয়তো পুরো বাসায় কত জায়গায় ঘুমাতে পারি। থাকতে পারি। আবার চিন্তা করে দেখলাম,
আপনাকে নিঃসঙ্গ বনবাসের জীবন থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত।

আয়মান ভিলেনের মতো কুটিল হাসির প্রলেপ বুলিয়ে বলল,
তাইতো আজ রাতে তোমাকে বোঝাব কত ধানে কত চাল।

একদম না বলছি। আমার পা পুরোপুরি সেরে উঠেনি। বেশী মুভ হলেই একটু ব্যথা করে উঠে।

করবেনা। কাছে আস বলছি।

হুম এলাম। কিইই?

জামাইকে কষ্ট দিয়ে কি সুখ পাচ্ছ প্রেয়সী। বলেই আয়মান পিয়াসার লম্বা চুলগুলোকে এক হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো। ঘাড়ে আস্তে করে কামড বসিয়ে দিল।

এই বজ্জাত। আমি ব্যথা পাইনি?

পাও। খুব ব্যথা পাও। তাতে আমার কি।
তোমার সকল ব্যথার বিনিময়ে আমি সুখের স্বর্গরাজ্যে অবগাহন করব অবলীলায়। উম্মাদনায়। এক আকাশ স্বাধীনতা নিয়ে। বাধা দেওয়ার সাধ্য আছে প্রেমিকা?

খুউব আছে বলেই পিয়াসা দ্রুত বেরিয়ে গেল রুম ছেড়েই।

আয়মান বেকুবের মতো চেয়ে রইলো দরজার দিকে। তার বাড়া ভাতে পিয়াসা যেন সুখ মনে ছাইঁ ঢেলে দিল। লেখিকা রেহানা পুতুলের গল্পের সাথে যুক্ত হউন।

আজ তিনদিন পর শুভ এলো পড়াতে। গায়ে জ্বর ছিল বিধায় আসতে পারেনি। সেটা আলিশাকে মেসেজে জানিয়েছিল।

তবুও আলিশা মুখ মলিন করে বসে রইলো। তার আবার লজ্জা ও লাগছে এখন শুভর দিকে চোখ তুলে চাইতে। তবুও আড়চোখে চেয়ে দেখল শুভকে। কেমন বিবর্ণ শুষ্ক পত্রের ন্যায় দেখাচ্ছে শুভকে। আলিশা অংকের নিচে কলমের ভাষায় জানতে চাইলো,

স্যার এখন সুস্থ বোধ করছেন? জ্বর সম্পূর্ণ সেরেছে?

আলহামদুলিল্লাহ। সেরেছে। তুমি কেমন আছ?

জানিনা।

যে নিজের বিষয়ে নিজেই উদাসীন। সে বাকি জনের প্রতি কেয়ারিং হবে কিভাবে?

সেটা সময় হলেই দেখা যাবে। যৎ বিচার তৎ সময়।

নাহ! আগেও দেখার অত্যাবশ্যক রয়েছে। এখন একবিংশ শতাব্দী। সুতরাং সবকিছু আগেই যাচাই করে নিতে হবে।

অংক করা শেষ হলে শুভ খাতা এগিয়ে দেওয়ার ছলে আলিশার হাতে মৃদু ছোঁয়া দেয় তার হাতের।

আলিশা চিনাগুড়া লাজুক হাসি হেসে দেয়। শুভ আলিশার হাসির স্রোতে ভেসে যায়। এক সমুদ্র প্রশান্তি নিয়ে বের হয়ে যায় পড়া শেষে।

রাতে আলিশার সাথে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অনেক গল্প হয়। শেষে একটা মেসেজ দেয়,

আলিশা আমার সাথে বাইরে একটু দেখা করবে? তোমার সময় সুযোগ মতই আমিও সময় করে নিব। ইনডোর নাকি আউটডোর? কিভাবে দেখা করতে চাও জানাও।

চলবেঃ ২১