#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৬ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
তার মানে শুভ স্যার যেহেতু ভাবির এলাকার ছেলে। তাদের প্রেম ছিল?
হতেই পারে। তা না হলে এটা গোপন কেন আমার ও আম্মুর কাছে ?
এজন্যইতো শুভ স্যারকে আমার দিকে ফেরাতে এত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
একমাত্র বড় ভাইয়ের হাতে চড় খাওয়ার ব্যথাটা আলিশার মৌনাকাশে বাতাসার মতন মিলিয়ে গেল। সেই স্থান আরো পাকাপোক্ত করে দখল করে নিল,
শুভ পিয়াসাকে বিয়ে করতে চেয়েছে এই বিষয়টা।
আয়মানের মা উদ্ধিগ্ন কন্ঠে,
হায় আল্লাহ কি বলিস এসব? এই ছেলেরতো আসলেই মন্দ স্বভাব। অংক করানোর ছলে দেখি আলিশার মাথাটাই খেয়ে ফেলছে ও।
আয়মান বোনের দিকে ক্ষিপ্ত নজরে চেয়ে,
আমি তোর একাউন্টিং সাবজেক্ট ধরবো। দেখব কতটা আয়ত্তে নিয়েছিস বলেই বেরিয়ে যায় রুম থেকে। তার মা ও বের হয়ে গেল ছেলের সাথে সাথে।
আয়মানকে নিজের রুমে ডেকে নিল তিনি। গলার স্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করলো,
পিয়াসাকে বিয়ে করতে চাইলো শুভ? কই বললিনাতো আমাকে?
আয়মান মায়ের পিঠে ভালোবাসার হাত রাখল। শীতল মেজাজে শুভ পিয়াসার বিষয়টা বিস্তারিত জানাল। আরো বলল,এবার বল এটা জানানোর মতো বিষয়?
একদম নাহ। তার বাবা কথা দিয়েছে। শুভ চেয়েছে। পিয়াসা চায়নি। ব্যাস।
আর পিয়াসা আমাকেই ভালোবাসতো মনে মনে। বুঝ এবার। আরেহ আম্মু। আলিশার সামনে পরিক্ষা। তাই ফাঁফরে রাখতে হবে। আর শুভর বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিব সামনে।
হুম বুঝলাম হারামজাদা। যা ভয় পাইয়ে দিলি। এবার আলিশা পিয়াসাকে ভুল বুঝলে? ননদ ভাবির মিষ্টি সম্পর্কটা না জানি তেতো হয়ে যায়?
কিছুই হবেনা। বরং মিষ্টির পরিমাণ বেড়ে সুগার হাই হয়ে যাবে।
তাই যেন হয় বলে, আয়মানের মা মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করলেন।
তুমি থাকো আম্মু। আমি গেলাম বলে আয়মান চলে গেল তার রুমে।
পিয়াসা পড়ছে তার পড়ার টেবিলে বসে। টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠল।
” ভাবি প্লিজ একটু আমার রুমে আস। জরুরি দরকার। ”
পিয়াসা তড়িঘড়ি করেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আয়মান রুমে ঢুকতেই পিয়াসাকে বের হয়ে যেতে দেখে,
কই যাচ্ছো?
আসছি বলে পিয়াসা বের হয়ে গেল। আয়মান উঁকি দিয়ে দেখল আলিশার রুমে ঢুকল পিয়াসা। ধরে নিলো ভাবির কাছে কোন হেল্প চাইবে হয়তো আলিশা নিজের প্রেমের বিষয়ে।
ল্যাপটপ অন করে নিজের কলেজের কাজে মন দিল ।
কি হয়েছে আলিশা? কোন পার্সোনাল সমস্যা? পড়তেছিলাম আমি । তোমার মেসেজ পেয়েই ছুটে এলাম। সৌহার্দপূর্ণ ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো পিয়াসা।
শুভ’র কাছে বিয়ে না বসে আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলে পড়লে যে? রায়হান ভাইয়াও তোমাকে বিয়ে করতে চাইলো? কাহীনি কি?
রূঢ় কন্ঠে জানতে চাইলো আলিশা।
শুনে পিয়াসা আকাশ থেকে পড়লো । বোয়াল মাছের মতো হা হয়ে রইলো তার দুই ঠোঁট। হতভম্ব হয়ে আলিশার দিকে চেয়ে রইলো। মুখ দিয়ে তার কোন শব্দই বের হচ্ছেনা।
আলিশা পুনরায় বলে উঠল, কিহ ? সত্যি কথাটা হজম হচ্ছেনা। নাহ? যখন আমি তোমার কাছে শেয়ার করলাম, শুভ স্যারকে ইমপ্রেস করা যাচ্ছেনা। তখন মনে মনে নিশ্চয়ই বলেছিলে, শুভর মনে কেবলই পিয়াসা নামটা। নিবিড় প্রশান্তি লাভ করেছিলে তখন নাহ?
পিয়াসা আলিশার সাথে পাল্টা তর্কবাণে জড়ালোনা। রুম থেকে বেরিয়ে এলো। গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে গেল। তার মাথার ভিতরে যেন একশো পোকা কিলবিল করছে৷ ঘূনেপোকার মতো সেই পোকাগুলো পিয়াসার মাথার সমস্ত মগজ যেন কুটকুট করে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে।
আলিশা নিজের ক্ষোভ কিছুটা হলেও পশমিত করতে পারলো বলে একটু স্বস্তি অনুভব করছে। রাতের ভাত না খেয়েই দরজা বন্ধ করে শুয়ে গেল। তার মা বহুবার বাইরে থেকে ডাকল। আর সে ভিতর থেকে চেঁচানো গলায় জানিয়ে দিল খাবেনা। ক্ষুধা নেই।
ধাপুসধুপুস করে পিয়াসা তার বইপত্র গুছিয়ে ফেলল। এখন কোন পড়াই ব্রেনে ধরবেনা। আয়মান মাথা ঘুরিয়ে পিয়াসাকে দেখল। জিজ্ঞেস করলো, আর পড়বেনা?
পিয়াসা চুপ হয়ে রইলো।
বয়রা হলো কবে থেকে আমার প্রেমাঙ্গিনী?
পিয়াসা ভার মুখে আয়মানের দিকে এক ঝলক নেত্রপল্লব মেলে ধরলো। আয়মান পিয়াসার চোখের ভাষা পড়ে নিল। কুচ গড়বড় হোতাহে।
রুম থেকে বের হয়ে গেল। আবার একটু পরেই এসে বলল,
সবাই কি অনশন করল নাকি? কেউ রাতে ভাত খাবেনা? আমার ক্ষুধা পেয়েছে।
পিয়াসা বের হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। ডাইনিংয়ে সব খাবার বেড়ে আনল রোজকার মতো। শ্বাশুড়ির রুমে গিয়ে,
মা ভাত খেতে আসেন। ঘুমিয়ে গেলেন নাকি?
আয়মানের মা তসবিহ হাতে নিয়েই বিছানা ছাড়লেন। বললেন, নারে মা ঘুমাইনি। আয়মান পিয়াসাকে বকাবকি করল। পিয়াসাও না খেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তাই মনটা একটু খারাপ।
মন খারাপ করবেন না মা। এটা আবেগের বয়স৷ ভুলের বয়স৷ ঠিক হয়ে যাবে।
বৌমা তুমি গিয়ে একটু ডাক দাওনা মেয়েটাকে ভাত খাওয়ার জন্য।
শ্বাশুড়ির আদেশ অমান্য করলনা পিয়াসা। তাই সে এখন আবার আলিশার রুমের সামনে গেল। দরজা ধাক্কাছে। আলিশা খুলছেনা৷
পিয়াসা গলা তুলে ডাকল এবার,
আলিশা ভাত খেতে আস বলছি। মা নইলে ভাত খাবেনা কিন্তু। প্লিজ ভাত খেতে আস।
আলিশা ভিতর থেকে গলাকে চড়ায় এনে বলল,
তুমিতো দেখি জন্মের বেহায়া মেয়ে। তখন এত কথা শুনালাম। তাও আবার আমার সাথে কথা বলতে আসছ। তুমি আমার সাথে আর কোন কথা বলবেনা বলছি।
পিয়াসা পা ঘুরিয়ে নিতেই দেখে আয়মান পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আয়মান আলিশার কথাগুলো শুনতে পেয়েছে।
আয়মান রাগে ফেটে যাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে আলিশার পিঠের চামড়া তুলে ফেলতে। কিন্তু এই রাতে সে আর কোন ঝামেলা বাড়াতে চায়না। পিয়াসার থেকে শুনতে হবে তখন কি বলছে। তারপর ।
পিয়াসা ডাইনিং এ চলে এলো। তাদের তিনজনের জন্য ভাত বেড়ে নিল। তার ও খেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু না খেয়ে ঘুমালে রাতে পেটে মোচড়ামুচড়ি শুরু হবে। আয়মান ও এসে খেতে বসে গেল। তিনজনেই বিষন্ন মন নিয়ে শেষ করলো নৈশভোজ।
আয়মান রুমে গিয়ে বারান্দায় চলে গেল। সিগারেট জ্বালিয়ে নিল। রাগ উঠে গেলে সে একটা সিগারেটের ধোঁয়া না ছাড়লে মনে অস্থিরতা প্রকট আকার ধারণ করে।
পিয়াসা হাতের কাজ ঝটপট শেষ করে শ্বাশুড়ির থেকে বিদায় নিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। বিছানায় আয়মানকে না দেখে বারান্দায় উঁকি মারল।
সিগারেটের গন্ধ রুমে থেকেই সে টের পেয়েছে। আয়মানকে দেখেই আবার রুমে ঢুকে গেল। কোন বিশেষ হেলদোল দেখালনা।
আয়মান অবাক হয়ে গেল। যেখানে পিয়াসা সিগারেট খাওয়া দেখলেই তেতে যায়। সেজন্য সে টুকটাক যা খেত মাঝেমধ্যে। তাও ছেড়ে দিয়েছে পিয়াসার জন্য। আর সেই পিয়াসা তাকে সিগারেট খাওয়া দেখেও নিঃশ্চুপ রইলো। আয়মান আধ খাওয়া সিগারেটটা মেঝেতে ফেলে দিল। জুতোর নিচে ফেলে পিষে জলন্ত সিগারেটটি নিভিয়ে দিল। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে গেল। পিয়াসা কাত হয়ে আছে৷
এইই? বলে পিয়াসার পিঠের উপর হাত রাখল আয়মান। আলিশা তোমাকে তখন ডেকে নিয়ে কি বলল?
কিছু বলেনি।
সমস্যা কি বলতে?
বলার প্রয়োজন মনে করিনা আমি।
আপনি জানেন না কি বলতে পারে? শুভ ভাই আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে এটা আলিশা কিভাবে জানল?
ওহ হো। খুউব খুউব স্যরি হানি। এই বলে, কেন বলল সেই কথা, তা আয়মান পিয়াসাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিল।
আর তুমি মন খারাপ করে থেকোনা প্লিইজ । ওই অসভ্য ফাজিলকে দেখনা রাত পোহালেই কি করি? বড় ভাবির সাথে সে যাচ্ছেতাই বিহেভিয়ার করলো। রাগত স্বরে বলল আয়মান।
পিয়াসা এবার মাথা ঘুরে আয়মানের দিকে ফিরল।
নিরস ভঙ্গিতে বলল,
আপনি কিছুই বলবেন না আলিশাকে প্লিজ। ওর উপরে আমার আর কোন কমপ্লেইন নেই। আপনি যেভাবে বলছেন সেভাবে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এমন সময় অনিয়ন্ত্রিত আবেগের বশে মানুষ ভুলভাল আচরণ করে কাছের মানুষদের সাথে। তা কিছুদিন পরে আবার ঠিক হয়ে যাবে।
পিয়াসার প্রতি আয়মানের মুগ্ধতা অতিমাত্রায় বেড়ে গেল। বিমুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। বলল, বুকের ওমে আস। পিয়াসা মেটাও। পথিকের তপ্ত মরুভূমিতে ঘন বর্ষন ঢালো। জুড়াও এ প্রান।
পিয়াসা ঘুষি দিল আয়মানের বুকে হালকা জোরে।
পিয়াসাকে নিজের শরীরের সাথে ভিড়িয়ে নিল আয়মান । শাড়ির নিচে দিয়ে পেটে হাত দিল। সুড়সুড়ি দিতে লাগল পুরো পেটজুড়ে। পিয়াসা কুচিমুচি করে হেসেই খুন হয়ে যাচ্ছে কাচভাঙা হাসিতে।
” কন্যা তোমার হাসিতে
মন চায় শুধু ভাসিতে। ”
সুড়সুড়ি থামান না বলছি। পারছিনা আর নিতে। সত্যিই বলছি। আহু!
তার একদিন পর বিকেলে শুভ পড়াতে এলো। খাতায় লিখে জিজ্ঞেস করলো আলিশাকে,
এনিথিং রং? নিউ কোন প্রবলেম? গাল হুতোম পেঁচা হয়ে আছে কেন?
ভাবিকে খুব পছন্দ করতেন?
আচ্ছা এই কাহিনী? কে কি বলছে?
কে কি বলছে এটা মূখ্য নয়। আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।
হ্যাঁ করতাম।
ভালোবাসতেন?
একদম নাহ বলে শুভ বিষয়টার সারসংক্ষেপ লিখে দিল খাতায়। এবং শেষে লিখলো,
আশাকরি এতটুকু কমনসেন্স তোমার রয়েছে। এরপরেও ভুল বুঝলে আর কিছুই করার নেই।
আলিশা তবুও মুখ গোঁজ করে রইলো। কোন রিপ্লাই লিখলনা।
শুভ আবার ও লিখে দিল। শুনো,
সন্দেহ আর অবিশ্বাস হলো বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ংকর। জীবনটাকে তিলে তিলে বিষময় করে তোলে কার্বলিক এসিডের মতো।
তুমি চাইলে একে মনের ভিতর পুষতে পার। চাইলেই ধোঁয়ার মতো উড়িয়ে দিতে পারো। এটা একান্তই নিজের ব্যাপার। তবে কোন কিছু আগে পরে বিস্তারিত না জেনে কাউকে এভাবে ভুল বোঝা একদম অনুচিত। অতি ঠুনকো একটা বিষয়কে তুমি বিশাল করে তুললে৷ মশা মারতে কামান দাগানোর মতো।
আলিশা চুপ হয়ে রইলো। লিখে দিল স্যার, আজ আর অংক করতে ইচ্ছে করছেনা।
শুভ কোন রিপ্লাই দিলনা। দুই চুমুক চা খেয়েই উঠে চলে গেল।
আলিশা মুচকি হেসে শুভ’র খাওয়া অবশিষ্ট চা খেয়ে নিলো। গুনগুনিয়ে গাইতে লাগলো,
” টিপ টিপ বরষা পানিইই..
পানি নে আগ লাগায়ী..
আগ লাগি দিল মেয়নে তু..
দিল তো তেরি ইয়াদ আয়ী।”
চলবেঃ ২৬
#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৭ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
সময় তার আপন নিয়মেই বয়ে যায় প্রবাহমান নদীর স্রোতধারার ন্যায়৷ সেই সাথে সমান্তরালে এগিয়ে যায় চলমান মানব জীবন।
আলিশার কলেজ জীবনের ইতি ঘটল। পৌঁছে গেল শিক্ষা জীবনের আরেক ধাপ উঁচু সিঁড়িতে। তার পিতার অগাধ স্বপ্ন ছিল প্রিয় দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করে আত্মমর্যাদার সাথে বাঁচতে শেখাবে। বাবার সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে ভাইয়ের মতো আলিশাও বদ্ধপরিকর।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নব দ্বারে পা দিয়েই সে আপ্লুত। উল্লসিত। বাবাকে মনে করে চোখের কোনে চিকচিক করে জড়ো হলো দুফোঁটা নোনাজল। টুপ করে ঝরে পড়ল ভোরের কুয়াশার মতো।
বাবার সাথে তার অমলিন জ্বলজ্বলে স্মৃতি একটাই। এক দুপুরে ভাত খেতে বসেছিল বাবার সাথে আলিশা । মা মুরগী রান্না করেছিল। বাবাকে তার হাতে মুরগীর কলিজা খাইয়ে দিচ্ছিল।
অমনি ভুলক্রমে বাবার কামড় বসে যায় তার কচি আঙ্গুলের ডগায়। সেই আফসোসে বাবার চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। সে নিজের আঙুল একহাত দিয়ে চেপে ধরেছিল। আরেক হাতের আঙুল দিয়ে বাবার চোখ মুছে দিয়েছিল। মা বাবাকে খুব বকেছিল। ভাবতেই বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে আলিশার কন্ঠ।
তাকে বাসায় গিয়ে পড়ানোর পালার ইতি ঘটল শুভ’র। তাই তারা এখন বাইরেই খোলা প্রাঙ্গণে দেখা করে। শুভ’র সাথে তার প্রণয় এগিয়ে যাচ্ছে নানা পর্বে। কখনো সংঘাতে। কখনো রঙিন মধুরতায়। কখনো দুষ্ট মিষ্টি খুনসুটিতে। কখনো বিয়ে পরবর্তী দাম্পত্য জীবনের লেনাদেনা নিয়ে।
পিয়াসা আয়মানকে শুভ আর আলিশার বিষয়ে বুঝিয়ে পজেটিভ করলো। শ্বাশুড়িকেও। তারা এক দুপুরে শুভকে ডেকে বলল,
আলিশা শহরে জন্ম। শহরেই বেড়ে উঠা। গ্রামে গিয়ে থাকতে পারবেনা।
শুভ জানাল তার মা বাবা এতে আপত্তি করলেও সে ম্যানেজ করে নিবে তাদের। আলিশাকে ঢাকায় তার সাথেই রাখবে৷
রায়হান ফোন দিল অনেক দিন পর আয়মানকে।
হ্যালো আয়মান। ভুলেই গেলি মনে হয়?
উল্টো ফাঁফর নিচ্ছিস নাকি গা বাঁচানোর জন্য? বলল আয়মান।
নারে দোস্ত। ভোলা যায় তোকে? ও হ্যাঁ। সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছি সামনের মাসেই। দোয়া করিস। তুই কবে এমন সুসংবাদ দিবি?
ওয়াও! গ্রেট নিউজ দিলিতো। এমন কিছুইতো ভাবিনিরে। বরং কেয়ারফুল্লি থাকি। কারণ পিয়াসার অনার্স শেষ হোক অন্তত।
তাও ঠিক বলছিস। খালাম্মা, আলিশা কেমন আছে?
আলহামদুলিল্লাহ। আম্মু ভালো আছে। আলিশাও ভালো আছে। দেশে আসবি কবে?
আসবো কিছুদিন পরেই। অনেকক্ষণ মুঠোফোনে দুই বন্ধু নানা স্মৃতি বিজড়িত আলাপনে মেতে রইলো।
সেদিনে রাতেই আয়মান পিয়াসার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলো,
এই শুননা কামাঙিনী, তুমি মা হবে কবে?
পিয়াসা ঝট করেই কাঁথার নিচে নিজেকে আবৃত করে ফেলল। লজ্জায় দুগাল রক্তিম হয়ে গেল। ক্ষানিক পরেই আয়মান ও নিজেকে কাঁথার নিচে আবৃত করে ফেলল।
পিয়াসা কাঠিন্যতার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আয়মানের চোখে, শাণিত ছুরির ফলার মতো।
অদ্ভুত তো। বিয়ে হলো কতকাল হয়ে গেল। তবুও এত লজ্জা তোমার? আজ রায়হান ফোন করেছে। সে বাবা হতে যাচ্ছে। দেখলে কতটা এগিয়ে আছে সে যুগের সাথে। আর আমি পিছিয়ে আছি তোমার জন্য। এখন আর এত মেনেটেনে চলতে পারবোনা। শুধুই উড়াধুড়া খেলাধুলা হবে। কি বল?
আপনি আমার কাঁথার নিচ থেকে বের হন বলছি। বদের হাড্ডি কোথাকার। কটমট চোখে চেয়ে বলল পিয়াসা।
ওকেহ ভ্যানিলা! বের হচ্ছি বলেই আয়মান পিয়াসাকে টেনে নিজের গায়ের উপর তুলে নিল টানটান করে । দুই হাত দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরল। পিয়াসার মাথাকে বুকের উপর চেপে ধরল। কান পেতে শোন, কিসের ধ্বনি?
স্বরধ্বনির আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে। কোন ধ্বনির সাহায্য নিচ্ছেনা। চাপা স্বরে হেসে বলল পিয়াসা।
এইনা হলে আমার খাঁটি প্রণয়ীনি। ধরতে পারলে তাহলে । দেখলে ভালোবাসি কতো। আচ্ছা বলনা,
কবে বাবু নিবে? তোমার কোন নিজস্ব প্ল্যান আছে?
আমার একদম ভালো লাগছেনা এসব শুনতে। প্ল্যান করার ও উপযুক্ত সময় এখনো হয়নি। সো এই টপিক বাদ। বেশরম পুরুষ। ছাড়ুন না। পায়ের তালুতে মশা কামড়াচ্ছে কুটকুট করে।
কাঁথার নিচে মশা কিভাবে ঢুকল?
কাঁথা আছে নাকি পায়ের পাতার উপরে ? সরে গিয়েছেনা আপনার জন্য। সিঙ্গেল কাঁথার নিচে ডাবল ঢুকলে এমনিই হবে। নাকি নাকি স্বরে বলল পিয়াসা।
এইই মধুবালা কিসের সিঙ্গেল? ডাবল সব। ডাবল।
আর মশা হলো আমার চোখে দেখা খুব শক্তিশালী একটা প্রাণী। আস্ত একটা মানুষকে সে কিভাবে নাস্তানাবুদ করে ফেলতে পারে। দেখছেন?
তা দেখার প্রয়োজন মনে করিনা। দেখিতো তোমার পায়ে কোথায় মশা কামড়াচ্ছে। আয়মান পিয়াসাকে চিৎ করে শুইয়ে দিল নিজের গায়ের উপর থেকে নামিয়ে।
পায়ের কাছে গিয়ে, আসলেইতো তোমার পা খালি। পিয়াসার পরনের শাড়িও একটু উপরে উঠে গিয়েছে। মশার কামড়ের স্থানে লাল হয়ে আছে। আয়মান উঠে গিয়ে সেভিং লোশন নিলো হাতে। পিয়াসার পায়ের লাল হওয়া স্থানে লোশন লাগিয়ে দিল।
কি করছেন আমার পায়ে?
আরেহ উপকার করছি রাণী।
তা ভালো কথা উপকার করছেন। কিন্তু হাত এদিক ওদিক যাচ্ছে কেন?
মশার বাচ্চা মশা যেন আমার বউয়ের দেহের আর কোন স্থান লাল না করতে পারে। তাই সব স্থানে অগ্রিম লোশন দিচ্ছি। লাল করার দায়িত্ব ওকে দিয়েছি। সেই গুরু দায়িত্ব একান্তই আমার।
এই তোমার পা এত সুন্দর বউ। উফফস! আয়মান গ্রামের পুকুরে ডুবিয়ে থাকা পিয়াসার পা নিয়ে বিষয়টা বলল।
পিয়ায়া আলতো হেসে বলল,
আপনি একটা চোর। লুকিয়ে লুকিয়ে যুবতী মেয়ের পা দেখেছেন।
আয়মান সেই হাসিতে প্রশ্রয় খুঁজে পায়। পিয়াসার হাঁটু অবধি উদাম পা দুটোকে টেনে নিজের কোলের উপর নিয়ে নেয় । দুষ্টমি করতে থাকে দুপা নিয়ে। পিয়াসার পায়ের আঙ্গুলগুলো ফোটাতে থাকে একটা একটা করে।
পিয়াসা একটু ব্যথা পেয়ে,
উহু এত জোরে ফোটায় কেউ?
কেউ না ফোটাক। তোমার বর ফোটাবে। তোমার সকল ব্যথায় যে আমার বিশ্ব সুখ। তোমার শরীরে ব্যথা যত বেশী। আমার মনে স্বর্গসুখ ও বেশী। আচ্ছা যাও। হাতের কাজ শেষ। ঠোঁটের কাজ শুরু করিই?
একদম নাহ বলছি। রোজ রাতে এত কিসের মাখামাখি আমার সাথে?
কোথায় তোমার সাথে কি করি। আমি যা করিই। আমার বউয়ের সাথে করিই। নেশাতুর চোখে আয়মান কথাটা বলেই পিয়াসার পায়ে হাত বোলাতে লাগলো মসৃণ করে।
একটা মজার ছবি দেখ বলে, মোবাইলের গ্যালারি থেকে একটা ছবি জুম করে পিয়াসার নাকের সামনে ধরল।
ওমাগো কি জটিল ভয়াবহ দৃশ্য।
কিসের জটিল? কিসের ভয়াবহ? এক ললনা বধুর পেট থেকে এক রোমান্টিক স্বামী মধু চেটে চেটে খাচ্ছে। বিষয়না দারুণ মনোরঞ্জনের নাহ?
ঘোড়ার ডিম। ফালতু।
মানলাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে পিয়াসা। বলেই পিয়াসার পা নামিয়ে দিল কোল থেকে। শাড়ি টেনে দিল নিচের দিকে গোড়ালি পর্যন্ত। কাঁথা দিয়েও পায়ের দুপাতা ঢেকে দিল ভালো করে৷ পিয়াসাকে কাত করে নিজের দিকে ধরলো।
নিজের শুষ্ক ঠোঁট দুটি পিয়াসার দুই ঠোঁটের উপর বসিয়ে দিল। তার আগে কৌশল করে বলল,
তোমার জিভটা একটু দেখি। বের কর।
কেন?
দরকার আছে জরুরী।
পিয়াসা তার গোলাপি জিভটা সামান্য বের করতেই আয়মান টুপ করে মুখের ভিতর পুরে নিল।
পিয়াসা শব্দ করার ও সুযোগ পেলনা আর। আসামীর রিমান্ডের মতো চুপচাপ হজম করা ছাড়া তার আর কোন গতি রইলোনা। বেশ সময় পর আয়মান নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিল।
এটাও আপনার রোমান্টিসিজমের পার্ট?
অফকোর্স৷ আসলে আমার ঠোঁটের চামটা টানটান হয়ে আছে৷ তাই ভাল করে ভিজিয়ে নিলাম।
ভ্যাসলিন দিতে পারেন না তাহলে। পঁচা৷
তোমার কাছেইতো নির্ভেজাল বিশুদ্ধ ভ্যাসলিন রয়েছে। ভেজালযুক্ত নকল টা দিব কেন?
পিয়াসা মনে মনে,
একটা সঠিক মানুষকেই হৃদয় দিয়েছি। লাভ ইউ আয়মান। লাভ ইউ সো মাচ। তোমার এত এত রোমান্টিসিজমে আমি কতটা সুখ পাই গোপনে। কতটা শিহরিত হয় আমার অঙ্গের প্রতিটি ভাঁজ। তা কেবলমাত্র আমিই জানি। উপর দিয়ে তোমাকে যা বলি তা শুধু বলার বলা। আমি তোমায় ভালোবাসি এক দরিয়াসম।
আয়মানের বুকে পিয়াসা ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো আদুরে ভঙ্গিতে। গভীর সুখ নিদ্রায় তলিয়ে গেল দুজন।
পরের দিন সকালে আয়মানের মা বিষন্ন মনে আয়মানকে বলল,
বাবা গত রাতে মা খুউব একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। তাই একটা সদকা মানত করেছি।
কি স্বপ্ন আম্মু?
তুই শুনিসনা বাবা। মন খারাপ হবে তোর।
আহ! বলনা প্লিইইজ।
আমাদের কাছের কেউ মারা গিয়েছে।
কে আম্মু? তা দেখনি?
না বাবা। ধর আমিই মরে গিয়েছি।
আয়মান মাকে বুকে চেপে ধরে কেঁদে ফেলে। নাহ আম্মু। ওমন বলোনা। তুমি আলিশা, পিয়াসা আমার বেঁচে থাকার উৎস। ভালো থাকার অবলম্বন। আনন্দে থাকার কেন্দ্রবিন্দু।
আমিই আজই তোমার মানত ছাড়াব।
বল কি করতে হবে আমাকে?
এখানে এতিম খানার বাচ্চাদের শুক্রবার দুপুরের বেলা আমরা খাওয়াবো।
তাই হবে আম্মু। আমি সেই মসজিদে গিয়েই ইমামকে বলে দিব যেন শুক্রবার দুপুরে তারা রান্না না করে। তুমি মন খারাপ করোনা প্লিজ। এই সংসারের প্রাণ প্রদ্বীপ একমাত্র তুমিই। আল্লাহ ভরসা। তুমি অমন ভেঙ্গে পড়না।
শুভ আলিশাকে নিয়ে আজ বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসল। আলিশা অনেকদিন ধরেই এখানে আসার বায়না ধরেছে। কখনো আসেনি সে। বন্ধুদের কাছে শুনেছে গাছগাছালিতে ভরা এই নির্জন পার্ক নাকি প্রেম করার জন্য উৎকৃষ্ট লোকেশন।
একটু ভিতরে চলে গেল দুজনে। ঘনিষ্ঠ হলো একে অপরের। শুভ পিয়াসাকে বলল,
কিছুদিন পরই কাবিনটা সেরে ফেলতে চাই। কি বল? তোমার অনার্স শেষ হলে একবারে তুলে নিব। ততদিনে আমিও নিজেকে ভালো করে গুছিয়ে নিই।
আলিশা শুভ’র পাচ আঙ্গুল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,
আমি দুপায়ে রাজী। তাহলে আমরা একান্ত মুহুর্ত কাটাতে পারব। কোন গুনাহ হবেনা তখন।
শুভ হেসে ফেলল। আলিশার নাক টেনে বলল,
কি জামানা। প্রেমিকারাই দেখি এডভান্স প্রেমিকের চেয়ে। চক্ষু শরম নেই।
খবরদার বলছি। নিজে মনে হয় চাননা কিছু। সাধু। আমি বুঝিনা?
তারা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।
পিছন দিয়েই দুজন পুলিশ এসে দাঁড়ালো তাদের সামনে। এই যে স্যার ম্যাডাম। একটু মাল ছাড়ুন। নয়তো সোজা থানায় নিয়ে যাব। আপনাদের কাছে ইয়াবা পেয়েছি এই মর্মে।
আলিশা ভয়ার্ত নিষ্পলক চোখে পুলিশের দিকে চেয়ে রইলো। শুভ’র মেজাজাটাই বিগড়ে গেল।
চলবে ঃ২৭