প্রণয়ের বাঁধন পর্ব-০২

0
339

#প্রণয়ের_বাঁধন |২|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত

বাসর ঘরে বসে আছে ফারিশতা নূর তনুজা। তবে এটাকে আদৌতেও বাসর ঘর বলে? কারন বাসর ঘর কথাটা শুনলেই সাধারণত চোখের উপর জ্বলজ্বল করে ভাসে পুষ্পে সজ্জিত ঘর। যে ঘরে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে নতুন জীবনে পদার্পণ করে নববধূ। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও ঘটে। কখনো পরিবারের চাপে বা অন্য কোনো কারনে স্বপ্ন ভে’ঙ্গে, মনের চাওয়াকে প্রায়োরিটি না দিয়ে পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। তেমনই আজ পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে তনুজা। রঙিন স্বপ্ন নিয়ে সে স্বামীর ঘরে পা রাখতে পারেনি। তার স্বপ্ন, তার মনের চাওয়া, তার ভালোবাসা কাঁচের টুকরোয় পরিণত হয়েছে। ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়েছে তার রঙিন স্বপ্ন। ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তার ছোট্ট হৃদয়। স্বপ্ন ভেঙ্গে মনের চাওয়া, ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে আজ পুষ্প বিহীন, সাজানো কক্ষ বিহীন কথিত বাসর ঘর, তথা স্বামীর ঘরে।

এই তো আজ সন্ধ্যায় তিনবার কবুল বলে তনুজা আর ইভানের বিয়ে হয়েছে। তনুজার গায়ে লাল টকটকে বেনারসী। গলায় একটা হার, কানে ছুমকা, দু হাতে দু’টো বালা। মুখে নেই কোনো সাজসজ্জা। এটাই ছিলো তনুজার বিয়ের সাজ। শিরিন সুলতানা তনুজাকে শাড়ি পড়ানোর সময় বলেন শাড়ি আর গহনাগুলো ইভানের মায়ের।

ফাঁকা ঘরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফ্লোরে বসে আছে তনুজা। তনুজার নিজেকে বড্ড অসহায় ঠেকছে। খুব বেশিই অসহায় লাগছে তনুজার। এই ঘরে ঐ লোকটার সাথে কীকরে একসাথে থাকবে? কীকরে লোকটার সাথে জীবনের বাকীটা পথ পারি দিবে? না না তনুজা ভাবতে পারছে না। ভাবতে পারছে না সে। যার প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই। যদি থেকে থাকে কিছু সেটা হলো ঘৃণা। ঘৃণিত একটা লোকের সাথে এক ছাদের নিচে কীকরে থাকবে তনুজা! কী করে ? এই বাড়িতে থাকা কালীন তনুজা শুনেছে লোকটা অতিরিক্ত ম/দ্যপান করে। আর স্বচক্ষে দেখেছেও তো। বুয়াকে এই রুম থেকে বড় ম’দের খালি বোতল নিয়ে বের হতে। তনুজা ছোট থেকেই নে/শাগ্রস্ত লোকদের ভ/য় পায়। আর নীরব ঘৃ’ণা থাকে সেইসব নে/শাগ্রস্ত লোকদের উপর। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস আজ একজন অসুস্থ, নে/শাগ্রস্ত মানবই তার স্বামী। হ্যা তার স্বামী। তনুজার আজ মায়ের কথা বড্ড বেশিই মনে পড়ছে। চোখের সামনে বারংবার ভেসে উঠছে বাবার নে’শা করে বাড়ি ফিরে মায়ের উপর করা অ’ত্যা’চার, অ’ক’থ্যভাষায় গা/লি/গা/লাজ। বাবা মা/রধরও করত মা’কে। সেইসময় ছোট্ট তনুজা ভ’য়ে সিটিয়ে একপাশে লুকিয়ে থাকত। তার খুব ভ’য় করত। বড় হয়ে যখন বাবার বা’জে চরিত্রের কথা লোকমুখে শুনল সেই থেকে বাবার প্রতি তীব্র হলো ঘৃ/ণা। এই লোকটাও ম/দপান করে এ-ও নিশ্চয় চরিত্রহীনই হবে। বেছে বেছে তনুজার ভাগ্য এমন একটা লোকের সাথেই জড়ানো ছিলো। হায় খোদা! এটা কেমন পরীক্ষা!

তনুজার সত্তা জানান দিচ্ছে, তনুজার পরিণতিও বোধহয় তার মায়ের মতোই হতে যাচ্ছে। তনুজা ফুঁপিয়ে উঠল। ঝরঝর করে কেঁদে উঠে অস্ফুটে আওড়ায়,

-” হে খোদা! আজ আমার মনে হচ্ছে আ/ত্মহ/ত্যা মহাপাপ না হলে অনেকেই এই নি’ষ্ঠু’র পৃথিবীতে থাকত না। থাকত না..থাকত না এই নি’ষ্ঠু’র পৃথিবীতে। এই পৃথিবী খুব নি/ষ্ঠু/র। আমিই এক হতভাগিনী এই পৃথিবীতে যার বাবা থাকতেও বাবার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা পায়নি। যার বাবাকে সে প্রচন্ড ঘৃ/ণা করে।এই নি’ষ্ঠু’র নির্দয় পৃথিবী প্রথমে মা’কে কেড়ে নেয়। যেটুকু শান্তি ছিল, সেটুকুও আজ কেড়ে নিলো। আমার চোখে আমি ধূধূ মরুভূমি দেখতে পাচ্ছি। যেখানে আমার জন্য এক অন্ধকার কষ্টের ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে।”

সৃষ্টিকর্তার উপর তনুজার মাঝে মাঝে অভিমান হয়। অভিমান হয় তার ভাগ্যের উপর। ভাগ্যটা একটু সুপ্রসন্ন হলে খুব কী বেশি ক্ষ’তি হতো!

দাদি চলে যাওয়ার আগে কত কী বুঝ দেয়, স্বান্তনা বাণী আওড়ায়,

-” সামনে কী আছে সেটা কেউ বলতে পারে না, আর নাতো কেউ জানে। তবে ভালো কিছুরই আশা রাখতে হয়। সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তার সিদ্ধান্তে নিরাশ হতে নেই। কিসে কল্যাণ নিহিত আছে আমরা জানি না। তবে আশা হারাতে নেই । আমার সোনা আপা যদি ভালো হয়ে থাকে, তবে সে এই ভালোর ফল পাবেই। এটা আমার বিশ্বাস। আমার আপা খুব বুঝদার। আশাকরি তুমি হতাশ হবে না, আর নাতো নারাজ হবে। সবুর করো কষ্টের দিন শেষ হবে।”

আরো অনেক কিছুই বলে বুঝ দেয় দাদি। দাদির দেওয়া বুঝ আজ আর মন মানতে চাইছে না। মনটা আজ ভাগ্যকে দোষারোপ করছে। দাদির বলা কথাগুলো পর পর স্মরণ করে ঝরঝরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্বগোতক্তি করে,

-” দাদি তোমাকে আমি কতবার করে বললাম সমাজ, সবাই যা বলার বলবে। তুমি দয়া করে এই বিয়ে থামাও। আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও। আমি এখানে এভাবে থাকতে পারব না। সম্ভব নয় আমার পক্ষে। কিন্তু আজ তুমি আমার কোন কথাই শুনলে না। এত বড় দুনিয়ায় আমি সবার বোঝা হয়ে আছি। এতদিন দাদি তোমার বোঝা হয়ে ছিলাম। ভালো হয়েছে ভালো হয়েছে তোমার ঘাড় থেকে আমি নামক বোঝা নেমেছে, নেমেছে তো এবার।”

অসহায় তনুজা দাদির প্রতি অভিযোগ করতে থাকে। বড় শ্বাস ফেলে তনুজা বিছানার সাথে মাথা ঠেকায়। চোখ দু’টো বুজতেই দিব্যর কথা মনে পরে। দিব্য দিব্য, দিব্যও কী আমার মতো কষ্ট পাচ্ছে? দিব্য বোধহয় আমার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছে। কারন ভালোবাসার শুরুটা দিব্যর দিক থেকেই হয়েছিল। দিব্য আ’ম স্যরি। তুমি আমাকে মাফ করে দিও।”

তনুজার অবচেতন মন আওড়ায়,

-” দিব্য আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে তুমিও কী বাকী সবার মতো আমাকে ভুল বুঝেছো? তুমিও কী আমাকেই দোষি সাব্যস্ত করছো? তা না হলে একটিবারো আমার সাথে দেখা কেন করলে না। আমি শেষ অব্দি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। ভেবেছিলাম এই তুমি সবার সামনে আসবে। আর এই বিয়ে হতে দিবে না। যে করেই হোক এই বিয়ে আটকাবে। তবে সত্যি হলো না। সত্যি হলো না আমার ভাবনা।”

দুই হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে তনুজা। কংক্রিটের চার দেওয়ালের ভেতর কান্নার শব্দরা প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।

____________

বড় আলিশান রুম। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। রুমটা থেকে থেকেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে, তো আবার টেবিল ল্যাম্পের মৃদু মোহনীয় আলোয় আলোকিত হচ্ছে। টেবিলের উপর থাকা টেবিলল্যাম্প লাইটের বাটন হাতের মধ্যে মুখে শ’য়’তানির হাসি নিয়ে একবার সুইচ অন করছে, আবার অফ। হঠাৎ নিস্তব্ধতা, নীরবতা ভেঙে রুমজুড়ে খিলখিলিয়ে হাসির আওয়াজ ঝংকার তুলল। একা একাই এরকম হাসি কেউ দেখলে একে নির্ঘাত ম্যাড উপাধিতে ভূষিত করত। হাসি থামিয়ে একহাতে মুখের উপর থাকা চুল কানের পিছে গুজে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

-” ইশশ্! বেচারি ফারিশতা নূর তনুজা। বো’কা মেয়ে। বো’কা মেয়ে তনুজা। ইউ নো?ইউ আর ফুলিশ?” হা হা….হা

আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। কিছুক্ষণ পর এবার তার চোয়াল শক্ত হয়। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

-” বো’কা তনুজা। যা কিছু হয়েছে তার জন্য পরোখ ভাবে তুমি দায়ী ছিলে। তবে ভেবেছিলাম কাজটা শেষে মনেমনেই তোমার থেকে স্যরি বলে নিবো। কিন্তু এখন তো দেখছি তোমার থেকে বড়সড় একটা থ্যাংকস আমারই পাওনা থাকল। বলতে বাধ্য হচ্ছি ইউ আর লাকী। সম্মান ন’ষ্ট হওয়ার যায়গায় তুমি সম্মান পেয়ে গেলে। বাহ!বাহ্! রাতারাতি মির্জা বাড়ির বড় বউ হয়ে গেলে। বাহ!”

একটু থেমে। টেবিলের উপর থেকে একটা পেন হাতে নিয়ে সজোরে টেবিলে গেঁথে কুটিল হেঁসে,

-” দিব্য বেব। টিট ফর ট্যাট। নিজেকে খুব চালাক ভাবো না। ইউস করবে দেন ছুঁ’ড়ে ফেলবে। সেটা অতো সহজ নয়। আমাকে তোমার নির্বোধ মনেহয় বেব? কামিং সুন। আই উইল সী ইউ সুন। বে____ব।”

_________

ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটার ঘরে। ঘুম নেই শিরিনের চোখে। ঘরময় পায়চারী করতে করতে কিছু ভেবে নিচে নামে। শ্বাশুড়ির ঘরে আলো জ্বলতে দেখে সেদিকে এগোয়। দরজার দাঁড় গোড়ায় দাঁড়িয়ে মিহি স্বরে বলল,

-” মা ঘুমাননি এখনো। আপনার শরীর খা’রা’প করছে কী?”

-” ভেতরে আসো।”

গম্ভীর স্বর আসলো। শিরিন ভেতরে যায়। নুরজাহান রকিং চেয়ারে বসে , হাত দু’টো চেয়ারের হাতলে। ওভাবে বসেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালেন,

-” ইভান বাড়ি ফিরেছে?”

-” নাহ। না মা ফেরেনি এখনো।”

-” আর ছোটো দাদুভাই,সে? সে কোথায়?”

-” দিব্য। দিব্য তো এখনো আসেনি। চলে আসবে এক্ষুনি।”

শিরিন কিছুটা ভ’য়ে ভ’য়ে বলে। নুরজাহান ফের জিজ্ঞাসা করে,

-” তার আবার কী হলো? পাঁচদিন পর ট্রিপ থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে রুমে ভাঙচুর করে কোথায় গেল সে? সে তো রাগের খনি। তা কী জন্য তার হঠাৎ মে’জাজ বি’গ’ড়ে গেল যে ভাংচুর করল? আর এত রাত হয়েছে এখনো ফিরলো না যে।”

শিরিন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

-” এ এমনিই মা। জানেনই তো ওর রাগ বেশি। একটু ব’কে ছিলাম তাই আরকি।”

শিরিন গুছিয়ে মিথ্যে বলে। পরপর ছেলের সাফাই গাইতে, সে ফের বলল,

-” ক কোথায় আর যাবে। আছে বন্ধুদের সাথে। আড্ডা দিচ্ছে হয়তো। বন্ধুদের সাথে থাকতেও পারে। আপনি চিন্তা করবেন না। দিব্যর সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে।”

-” একবার বলছো এক্ষুনি চলে আসবে। আবার বলছো থাকতেও পারে। কিছু কী লুকাচ্ছো , আড়াল করছো আমার থেকে?”

-” ইয়ে না না মা।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসে নুরজাহান। ভরাট গলায় বলল,

-” আজ আমি একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি বউমা। তুমি অন্যের ছেলেটাকে তো দেখে রাখতে পারোইনি, সাথে নিজের ছেলেটাকেও। সংসার, ব্যবসা একসাথে সামলাতে গিয়ে সংসারের প্রতি তুমি উদাসীন ছিলে।ব্যবসা আমার ছেলেরাই একা হাতে সামলাতো। না তুমি নিজেকে সব ক্ষেত্রে পারদর্শী প্রকাশ করতে গিয়ে আমার কথা না শুনে অফিসের কাজে জড়িয়ে পরলে। অফিসের কাজ কাজ করে বাড়ির বাচ্চাদের সময় দিতে পারোনি। তাদের যত্ন নিতে পারোনি। সংসারে মনোযোগ তোমার ছিলো না। তুমি ভেবেছো অর্থ দিয়েই সব হয়। যখন যা প্রয়োজন তা দিলেই ভালোবাসা হয়, যত্ন নেওয়া হয়। নিজের ছেলেটাকে তো বদমেজাজি, জিদি বানিয়েছো। সঠিক আদব- কায়দার খুব অভাব ছোট দাদুভাইয়ের। আরেকজন। উফ্! তার কথা আর নাই বলি।”

শিরিন নিশ্চুপ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। মুখে তার একটিও কথা নেই। শাশুড়ির কথায় তার নীরব সম্মতি আছে। শাশুড়ির কথা পুরোপুরি না হলেও একেবারে মিছে নয়। সত্যিই তো ছেলেরা কে কী করছে সে দিকে তার নজরই ছিলো না। খেয়ালেই আসেনি তার। ছেলেদের প্রতি আরেকটু নজর দেওয়া উচিত ছিলো। তাহলে আজ অবেলায় এসে আর আফসোস করতে হতো না।

_________

তারকাখচিত খোলা আকাশের নিচে ঘাসের উপর গোল হয়ে বসে আছে ইয়াং চারটে ছেলে। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে। সবার মধ্যমণি আজ দিব্য। সে পিছন দিকে হেলে বসে দুইহাত ঘাসের উপর ঠেস দিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে লিমন সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে টিটকারী দিয়ে বলল,

-” দিব্য শা’লা দেবদাস বনে গেলি নাকী?”

দিব্য উত্তর দেয় না। সে জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধও করে না। লিমন কপাল কুঁচকে ফের জিজ্ঞেস করল,

-” অ্যাই দিব্য তুই তনুজাকে এখনো সাপোর্ট করছিস কেন আমি বুঝতে পারছি না। আর তোর ভাইকেই বা কেন দো’ষ দিচ্ছিস? তনুজা ক্যারেক্টারলেস হতে পারে।”

দিব্য আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ধ’ম’ক দেয়। লিমনের শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলল,

-” শাট আপ। জাস্ট শাট আপ। তনুজা সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বলবি না। তনুজাকে আমি খুব ভালো করে চিনি-জানি। ও অমন কোয়ালিটির মেয়ে নয়। আর ইভান রিভেঞ্জ নিচ্ছে আমার থেকে। ইভান প্ল্যান করে এসব কিছু করেছে। সেদিন একচুয়েলি কী হয়েছিল আমাকে জানতে হবে। আর যা আমার তা যেভাবেই হোক আমার করতেই হবে।”

কলার ছেড়ে হাত ঝারতে ঝারতে সোজা হয়ে বসে দিব্য। উপস্থিত কয়েকজোড়া চোখে বিস্ময় প্রকাশ পায়। লিমন বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করে,

-” দোস্ত তুই কী সত্যিই তনুজার প্রেমে পড়েছিস? তুই কী সত্যি সত্যিই তনুজাকে ভালোবেসে ফেলেছিস?”

শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বলে দিব্য,

-” ইয়াহ। আই লাভ হার। আই লাভ ফারিশতা নূর তনুজা।”

লিমনের চোখ দু’টো বড়বড় হয়ে যায়। বিস্ময়ের পারদ আকাশ ছুঁইছুঁই হয়। অবাক হয়ে শুধায়,

-” হোয়াট? তৃষা?”

___________

সময় গড়িয়ে যায়। তনুজা ঠাঁয় ফ্লোরে বসে রয়। অসাড়ের মতো শরীর নিয়ে মাথাটা বিছানার সাথে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে তনুজা। তন্মধ্যে শব্দ করে দরজা খোলার শব্দে আঁতকে উঠে তনুজা। পর পর মাথা তুলে ইভানকে এদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অজানা ভ’য়, আতংকে সিটিয়ে যায় তনুজা। লোকটার চোখ দু’টো কেমন লাল টকটকে হয়ে আছে। লোকটা নিশ্চয় নে/শা করে আসছে। ইভান যত এগোতে থাকে তনুজার গলা শুকিয়ে আসতে থাকে। এই লোকটা কী এখন স্বামিত্ব ফলাবে? তনুজাকে ছুঁবে? জোরজবরদস্তি করে বাসর করবে? এসব মনে উঠতেই তনুজার কেমন গা ঘিনঘিন করে উঠে। তনুজা এই লোকের স্পর্শ না মেনে নিতে পারবে, আর না তো চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে পারবে। কারন সবাই বলবে ইভান তার স্বামী তার পুরোপুরি হক আছে তনুজার উপর। ইভানের প্রতি আকাশসম ঘৃ/ণা হচ্ছে তনুজার। সব দোষ এই লোকের, এ ইচ্ছে করে তনুজাকে ফাঁসিয়েছে। যে একটা মেয়েকে ফাঁসিয়ে ফাঁ/দে ফেলে বিয়ে করতে পারে, আর যাইহোক সে কখনো ভালো মানুষ হতে পারে না। সে খুব খা’রা’প লোক। হ্যা খুব খা’রা’প। তনুজা এসব কিছুর জন্য ইভানকে দায়ী করে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে খা’রা’প লোকের ট্যাগ লাগায় ইভানের নামের পাশে। ইভান এঁকেবেঁকে পা ফেলে বিছানার দিকে যত এগোচ্ছে। তনুজা তত আ’তং’কি’ত হয়, ভ’য়ে আড়ষ্ট হয়। তনুজার পেলব শরীর ভ’য়ে জুবুথুবু হয়ে যাচ্ছে।

#চলবে