#প্রণয়ের_বাঁধন |১০|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত
তনুজাদের বাড়ি মফস্বলে। একটু ভেতরে। পিচের আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা দিয়ে ইভানের গাড়িটা চলছে। পাশে বসা তনুজা পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। তিন রাস্তার মোড়ে আসতেই তনুজা মিহি স্বরে বলে ওঠে,
-” ডান দিকে।”
দু’তিন মিনিট যেতেই তনুজা ফের বলে,
-” থামুন থামুন। চলে এসেছি। গাড়ি সাইড করুন।”
ইভান গাড়িটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে নেমে তনুজার পাশের ডোর খুলে দেয়। তনুজা ঝটপট নেমে পা বাড়ায়। তনুজার এভাবে যাওয়া দেখে ইভানের কপাল গুটিয়ে আসে। ইভান মনে মনে আওড়ায়,
-” কী মেয়ে রে বাবা! লাফিয়ে লাফিয়ে একাই চলে যাচ্ছে। সৌজন্যমূলকও একবার বলল না, ভেতরে যাওয়ার কথা। ওদিকে দিদুন তো আমায় কড়া শাসন করে বলে দিলেন, আমি যেনো যথাযথভাবে ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করি।”
বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ বের হয় ইভানের মুখ দিয়ে। ইভান গাড়ির ভেতর থেকে ফলমূল আর মিষ্টান্নর প্যাকেট হাতে করে পিছু ডাকে,
-” তনুজা?”
ডাকটা শোনার সাথে সাথে পা থেমে যায় তনুজার। এই নিয়ে মানুষটা তার নাম ধরে দুইবার বোধহয় ডাকলো। তাদের মধ্যে কথাই তো তেমন হয় না। যেটুকু প্রয়োজনে হয়। নাম ধাম উয্য থাকে। তনুজা অপ্রস্তুত হয়ে পরপর পিছন ঘুরে তাকায়। অনেকদিন পর নিজ বাড়িতে আসছে ভেতরে ভেতরে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। ইভান আছে সেসব তো সে বেমালুম ভুলে বসেছে। তনুজা জিভে কা’মু’ড় দিয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে চায়। ইভান কয়েক পা এগোয়। বলে,
-” এগুলো ফেলেই যাচ্ছো।”
তনুজা নির্বোধের মতোন ইভানের দু হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। দুহাত মিষ্টি আর ফলমূলের প্যাকেটে ভর্তি তার। তনুজা অপ্রস্তুত গলায় বলে,
-” হু?”
ইভান গম্ভীর স্বরে বলে,
-” বুঝোনি? এগুলো নিয়ে ভেতরে যেতে বলেছি। আর তুমি যাও, আমি সন্ধ্যার পর এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।”
-” আপনি ভেতরে যাবেন না?”
তনুজা আচমকা প্রশ্ন করে উঠে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে রয়। ইভান জবাবে বলে,
-” আমার কাজ আছে। তখন বলে ছিলামই তো, তোমাকে ড্রপ করে অফিসে যেতে হবে। সমস্যা নেই আমি নিতে আসবো।”
ইভান ভেতরে না গেলে দাদি বেজার হবে। বৃদ্ধা মানুষ নাতনি আর নাতজামাইকে একসাথে দেখতে চেয়েছেন। দাদির কথা ভেবে তনুজার মনটা চাইছে ইভান ভেতরে যাক। কিন্তু তাদের সম্পর্কটা তো আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক নয়। তাই অধিকার বোধ নিয়ে জোর করে কিছু বলতেও পারছে না তনুজা। আবার তনুজার দিক হতে অদৃশ্য একটা দেওয়াল আছে। যে দেওয়াল টপকানো এতটা সহজও নয়। তারপরেও দাদির কথা ভেবে তনুজা বলে ওঠে,
-” ইয়ে মানে এভাবে বাড়ির সামনে থেকে চলে গেলে দাদি মন খা’রাপ করবে। তাই বলছি ভেতরে চলুন। একটিবারের জন্য হলেও দেখা করে যাবেন। জাস্ট ফর্মালিটিজের জন্য, প্লিজ।”
তনুজার কণ্ঠে অনুনয় ঝরে পরে। ইভান দ্বিমত করে না। মুখাবয়বে গাম্ভীর্য বজায় রেখেই বলে,
-” ওকে।”
বেশ পুরোনো একতলা বিল্ডিং। তনুজার দাদা করেছিলেন এই বাড়িটা। দাদা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এক ছেলে-মেয়ে ছিলো। ছেলেটা উচ্ছন্নে যায়। মেয়েটা ঘর-সংসার, সন্তান সন্ততি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাপের বাড়ি খুব কমই আসতো। দাদার পেনশনের টাকা দিয়ে দাদি তনুজাকে বড় করেছেন। এখনো সেই টাকা দিয়েই এই সংসার কোন রকমে চলে। শুধু মাত্র একটা লোকের জন্য এই সংসারে শান্তি ছিলো না। তনুজার বাবা। বাবা যদি একটু ভালো হতো তাহলে অভাব থাকলেও মানসিক প্রশান্তির সাথে বেড়ে উঠা হতো তনুজার। বাড়ির আঙিনায় পা দেওয়ার সাথে সাথে পুরোনো কষ্টের কথা স্মরণ হতেই চোখ দু’টো নোনতা জলে টইটম্বুর হয়। তনুজা কাঠের দরজার কড়া নাড়ে। মিনিট খানেকের মধ্যেই দরজা খুলে যায়। সাদা আটপৌরে শাড়ি পরনে এক বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে। বয়সের ভারে চামড়া কুঁচকে গিয়েছে। রোগে-শোকে জরাজীর্ণ হওয়া শরীরটা হঠাৎ করেই কেমন প্রফুল্ল হয়ে উঠলো যেন। আদরের নাতনিকে দেখে মুখে হাসি ফোটে। প্রশস্ত হেঁসে আওড়ায়,
-” তনু.. আমার তনু? তুই এসেছিস আপা!”
তনুজা কিছুই বলে না। মুখটা ভার করে রাখে সে। নাতনি এখনো বেশ অভিমান পুষেই রেখেছে বৃদ্ধা ঢের আঁচ করতে পারলেন। নাতনির পিছনে দাঁড়ানো শ্যামসুন্দর নাতজামাইকে দেখে চোখ দু’টো তার জুড়িয়ে আসলো। দু’জনকে একসাথে দেখে মনে মনে আওড়ায়,
-” মাশা-আল্লাহ!”
যা ওদের দু’জনের কারোরই কানে পৌঁছায় না। পরপর কপালে হাত রেখে গমগমে স্বরে বলেন,
-” দ্যাখো দ্যাখো, দ্যাখো তো কান্ড আমার! নাতজামাইকে কেমন বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। ইয়া আল্লাহ! ভেতরে আসতে না বলে, নিজে দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছি।”
ইভান সালাম দেয়। বৃদ্ধা উত্তর দিয়ে একগাল হেসে অমায়িক গলায় ফের বলেন,
-” ভেতরে আসো তোমরা।”
কোথায় বসতে দেবেন ঠাওর করতে পারছেন না বৃদ্ধা। খুশিতে যেনো আত্মহারা হয়ে গিয়েছেন। কাঠের একটা চেয়ার নিজেই টেনে মুছতে নিবেন। সেই সময় তনুজা গিয়ে দাদির হাত থেকে কাপড়ের ন্যাকড়াটা হাতে নেয়। মুখ ভার করে বলে,
-” বসো তুমি। আমি করছি। তোমার না শরীর খা’রা’প। এখন এতো বল আসছে কোথা থেকে?”
নাতনির অভিমানী মুখটার দিকে তাকিয়ে আলতো হাসেন বৃদ্ধা। আহ্লাদি স্বরে বলেন,
-” আমার আপাকে দেখে শরীর খা’রা’প উবে গিয়েছে। আমার আপা বল যোগাচ্ছে।”
তনুজা দাদির দিকে তাকায় না। চেয়ারটা মুছে পরপর ইভানের কাছে নিয়ে বলে,
-” বসুন।”
-” হু।”
ছোট করে প্রত্যুত্তর দেয় ইভান। তিনটা বেডরুম, তার একটা বসার রুম যেখানে একপাশে পুরোনো একটা ডায়নিং টেবিল। আর একপাশে একটা সিঙ্গেল খাট পারা। এখান থেকে ছোট্ট কিচেনটা সরাসরি দেখা যায়। তনুজা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নজর বুলায়। সবকিছুতেই কেমন যেনো আলগা ধূলো জমে আছে। দাদি বয়সের ভারে ধুয়ে-মুছে রাখতে পারেন না অতো। তনুজা থাকাকালীন পুরোনো আসবাব হলেও ঝকঝকে তকতকে করতো। ইভানের সামনে নাস্তা দেওয়া হয়। দাদির নিজে হাতে বানানো নারিকেলের নাড়ু আর মোয়া। সাথে ইভানের আনা মিষ্টি ফল সাজিয়ে তনুজা ইভানের সামনে দেয়।
____________
গোধূলি লগ্ন। র’ক্তি’ম আকাশ। হাতিরঝিলে বন্ধুদের সাথে বসে দিব্য। হাতে তার বেনসন সিগারেট। সিগারেট ফুঁকছে সে। এমন সময় লিমন দিব্যর কাঁধে হাত রেখে ডেকে উঠে,
-” অ্যাই দিব্য? দিব্য!”
-” হুঁ।”
অস্ফুটে সাড়া দেয় দিব্য। লিমন দিব্যর দিকে আরেকটু ঝুঁকল। ইশারা করে ফিসফিসায়,
-” ওদিকে দ্যাখ। দ্যাখ দ্যাখ।”
ঠোঁটের ভাঁজে সিগারেট চেপে উদাস চোখে আকাশপানে চেয়ে ছিলো দিব্য। লিমনের এভাবে ফিসফিসানিতে বি’র’ক্ত হয় সে। রাগি স্বরে বলে,
-” বল বা/ল। মেয়েদের মতো গা ঘেঁষে ফিসফিস করে বলা বাদ দিয়ে, দুইহাত দূরত্বে সরে বস। আর কী হয়েছে?”
লিমন সোজা হয়ে বসে,
-” ওদিকে তাকা। ওটা তোর কাজিন না? নিতি না কী যেনো নাম। ওটা সেই নিতি না?”
দিব্য সচকিত ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। নিতিকে দেখে কপাল গুছিয়ে আসে দিব্যর। লিমন ফের শুধোয়,
-” পাশের ছেলেটা কে?”
পরপর দিব্যর চোখ যায়। নিতি আর একটা ছেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। নিতির কাঁধে ব্যাগ। হাতে বুকের সাথে ধরা একটা বই। পাশের ছেলেটার সাথে হেঁসে হেসে কথা বলছে। দিব্যর মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা যায় না। সে উত্তরে বলে,
-” জানি না।”
দিব্য ওর মতো সিগারেটে সুখটান দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। আজকাল সিগারেটেও সুখানুভূতি আসে না তার।
নিতি আর ওর ফ্রেন্ড রিফাত, ঝিলের ধারে হাঁটছে আর বিভিন্ন গল্প করছে। হঠাৎ হাঁটতে হাঁটতে নিতির চোখ যায় খানিকটা দূরত্বে থাকা দিব্যর দিকে। দিব্য মুখটা উঁচু করে ধোঁয়া ছেড়ে ফের সেদিকে তাকাতেই নিতির সাথে চোখাচোখি হয়। নিতি ভ্রুকুটি করে এদিকে তাকিয়ে। দিব্যর দিকে তাকিয়ে নিতি ভাব নিয়ে বামহাতের দুই আঙ্গুল নিজের পাতলা গোলাপী ঠোঁটের উপর রাখল। এই দেখে দিব্য ভড়কায়। ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে দিব্যর অবচেতন মনভাবে,
-” নিতি ফ্লাইং কিস-টিস ছুঁড়বে নাকি! ওভাবে ঠোঁটের উপর আঙুল?”
দিব্যর চোখজোড়া বিস্ময়ে কপালে উঠে। নিতি ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে মুচকি হাসে। পরপর ঠোঁটের উপর থেকে আঙুল সরিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে ধোঁয়া ছাড়ার ভঙ্গি করে। দিব্য ভ্যাবাচ্যাকা খায়। দিব্য সিগারেট খাচ্ছে সেটা দেখেই ফাজলামি করে সিগারেটে ধোঁয়া ছাড়ার অ্যাক্টিং করে নিতি। আচমকা অমন ভাবনা আসায় দিব্য নিজেকে কয়েকটা গা/লি দেয় মনেমনে। দিব্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দুইহাতে প্যান্ট ঝেড়ে বলতে থাকে,
-” আমি গেলাম। কাজ আছে আমার।”
এই বলে একপাশে দাঁড় করানো বাইকের দিকে এগোয় দিব্য। নিতি ওর ফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করে মিষ্টি হেসে বলে,
-” রিফাত সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমি আসছি। ভালো থেকো।”
রিফাত বিনিময় আলতো হেসে বলে,
-” ওকে ওকে ম্যাম। তুমিও ভালো থেকো। মাঝেসাঝে ফোন দিও।”
নিতি ঘাড় নাড়িয়ে বলে,
-” শিওর।”
রিফাত অফার করে,
-” নিতি কিছু মনে না করলে চলো তোমাকে ড্রপ করে দেই। আমি ফ্রি-ই আছি।”
-” নো থ্যাংকস। ঐযে দেখছো না, ওটা আমার কাজিন। আমি ওর সাথেই চলে যেতে পারব। বাই।”
তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে। রিফাত বলে,
-” ওকে। বাই, টেইক কেয়ার।”
নিতি বড়বড় পা ফেলে এগোয়। দিব্য বাইকের ইঞ্জিন চালু করছে। একটু দূর থেকে নিতি ডাকে,
-” ওয়েট ওয়েট।”
দিব্য ঘাড় ঘুরিয়ে দাঁত কটমট করে তাকায়। নিতি কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-” বাসায় যাচ্ছো? চলো আমিও যাব।”
দিব্য মোটা মোটা চোখে তাকিয়ে কাটকাট গলায় জানায়,
-” আমি বাড়ি যাচ্ছি না। আর গেলেও তোকে এখন বাইকে চড়াতাম না। যা হুট।”
নিতি দৃষ্টি সরু করে তাকায়। প্রশ্ন করে,
-” কেনো?”
দিব্য ‘কেনোর’ উত্তর দেয় না। বলে,
-” কথা বলে সময় ন’ষ্ট না করে সিএনজি দ্যাখ। আমি গেলাম।”
নিতি হইহই করে ওঠে,
-” এই না না। থামো থামো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। দ্রুত বাসায় যেতে হবে। প্লিজ প্লিজ।”
-” নো নেভার।”
-” হোয়াই?”
দিব্য দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
-” আ’ম নট ইন্টারেস্ট টু ছে ইউ।”
-” বলতে হবে না। জলদি নিয়ে চলো তাতেই হবে।”
-” বললামই তো সিএনজি দ্যাখ।”
ধ’ম’ক দিয়ে বলে দিব্য। নিতি বলে,
-” টাকা নেই। ভাড়া হবে না। বই কিনতে গিয়ে সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। ব্যাগ ভর্তি বইয়ে। এই দ্যাখো হাতেও।”
হাতের বইটা তুলে ধরে দিব্যর সামনে। নিতির হাতে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের “দূরবীন” বই। দিব্য ভ্রু নাচিয়ে বলে,
-” মিথ্যে বলা বাদ দে। আমাকে না দেখলে তখন কী করতিস? আমি না থাকলে বাসায় যাওয়া লাগতো না।”
দিব্য পরপর বাইক স্টার্ট দিয়ে যেতে থাকল। সুন্দর করে টাকা নেই মিথ্যেটা বলেও লাভ হলো না। নিতি হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বিড়বিড় করে,
-” খা/টা/স একটা। কিছুই বুঝে না।”
নিতি গাল ফুলিয়ে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ায়। এমন সময় বাইকের হর্ন শুনে চকিতে তাকায়। দিব্য বাইক নিয়ে ফিরে আসে। নিতির সামনে বাইক থামিয়ে আদেশের সুরে বলে,
-” উঠ।”
নিতি খুশিতে গদগদ হয়। তবে বাইরে কপট রাগ ধরে মুখ ভার করে রাখে। গাল ফুলিয়ে বলে,
-” লাগবে না, তুমি যাও। আমি একাই চলে যাবো।”
দিব্য ধ’ম’ক দিয়ে তিরিক্ষি গলায় বলে,
-” নাটক বাদ দিয়ে উঠে বস। বস। আর একটা কথা বললে কিন্তু তোকে সত্যি সত্যিই ফেলে রেখে যাব। আর দিদুনের কানে এ-ও খবর দিয়ে দিবো তার আদরের নাতনি একটা ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছে।”
নিতি থমকায়। বিস্ময় নিয়ে ঠোঁট আওড়ায়,
-” হোয়াট? এটা নানুআপুকে বলার কী আছে! ও আমার ফ্রেন্ড। জাস্ট ফ্রেন্ড।”
-” তুই উঠবি? নাকি আমি চলে যাব।”
এই বলে দিব্য বাইক চালু করে। নিতি তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। ফাঁকা ঢোঁক গিলে নিয়ে বলে,
-” সব সময় এমন ধ’ম’কিয়ে কথা বলো কেনো? একটু ভালো করে বলতে কী সমস্যা তোমার! আর ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। ম্যাধমিক, উচ্চ মাধ্যমিক একসাথে দিয়েছি আমরা। ও বুয়েটে পড়ে। নীলক্ষেত বই কিনতে গিয়ে হঠাৎ ওর সাথে দেখা। অনেকদিন পর দেখা। তাই ঘুরতে ঘুরতে এখানে আসা। ব্যাস এতটুকুই!”
নিতি একা একাই কৈফিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দিব্যর হাসি পায়। সে তো এমনি দিদুনকে বলবে বলে ভ’য় দেখাচ্ছিল। নিতি যে সত্যি সত্যি ভ’য় পাবে তা ভাবেনি দিব্য। নিতির ভ’য় পাওয়াতে মনেমনে পৈ/শাচিক আনন্দ পায় দিব্য।
___________
ইভানের ভীষণ রাগ হচ্ছে। এখানে এসে এভাবে আঁটকে যাবে কস্মিনকালেও ভাবেনি সে। সুফিয়া বেগম সন্ধ্যায় নুরজাহানকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন আজকে রাতটা ওদের দু’জনকে এখানে রাখতে। দেড় ঘন্টার পথ আসতে আসতেই তো গোধূলি হয়ে যায়। আবার যদি রাতেই চলে যায়। এটাসেটা বলে অনুরোধ করেন। অবশেষে নুরজাহান বেগম রাজি হোন আর ইভানের সাথে ফোনে কথা বলে থাকতে বলেন। ইভান ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে অবশেষে থাকতে রাজি হয়। একটু আগে তনুজা ওর রুমে তুলে রাখা সবচেয়ে দামি পরিষ্কার চাদরটা বিছানায় পেরে দেয়। রাতের খাওয়া দাওয়া কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। ইভান বিছানায় শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে।
দাদির রুমে তনুজা। দাদির কোলে মাথা দিয়ে দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। সুফিয়া বেগম তনুজার চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। দাদি আদুরে গলায় এটাওটা শুধোচ্ছেন। তনুজা চোখদুটো বুজে হা-হু করছে। সুফিয়া বেগম বলেন,
-” তোরা যে আজকেই আসবি তা আমি জানতাম না। তোর দাদি শাশুড়ি বলে ছিলো দু একদিনের মধ্যে পাঠাবেন। তা আসার আগে একবার ফোন দিয়ে আসতে পারতিস।”
দাদির পেটে মুখ গুঁজে তনুজা। ওভাবে শুয়েই বলে সে,
-” আমিও জানতাম না আজকেই আসবো। উনি রাজি হওয়াতে দিদুন আজকেই বললেন। দিদুনও ভেবেছিলেন যদি রাজি না হয়। তাই আগে থেকেই বলেনি তোমায়। আর ফোন দিয়ে বললে তুমি একা অসুস্থ মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়তে। তাই বলেনি।”
-” এ অসুস্থ আর কী! বয়স হয়েছে বি/ষ ব্যাথা এসব এখন থাকবেই। জ্বর – ঠান্ডা লেগেছিলো। ঔষধ খেয়েছি কমে যাচ্ছে। তবে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তুই তো অভিমান করে ফোন-টোন দিস না। তাই সামান্য জ্বর-ঠান্ডাকে বাহানা বানিয়ে তোকে দেখার লোভে তোর দাদি শাশুড়িকে বলে আসতে বলেছি।”
একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের বললেন,
-” আপা! তুই কী এখনও আমার উপর রে/গেই আছিস? এই বিয়েতে মত দেওয়াতে। এই বিয়ে করে নিতে তোকে জোর করাতে তুই কী আমার উপর খুব বেশিই অসন্তুষ্ট হয়েছিস? আমার উপর কী খুব বেশিই অভিযোগ তোর?”
তনুজা নিরুত্তর থাকে। নাতনির চুলের ভাঁজে আঙুল চালাতে থাকেন বৃদ্ধা। খানিকক্ষণ পর তনুজা ধরে আসা গলায় বলে,
-” জানি না। দাদি এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্যকিছু বলো। আর আমার কারো উপর কোনো অভিযোগ নেই। সবই আমার কপাল। এটা হয়তো হওয়ারই ছিলো। তাই আমি এসব নিয়ে আর ভাবি না। ভাবতে ভালো লাগে না।”
-” আচ্ছা আর এসব শুধাবো না। তা তনু তুই কলেজ যাস না কেনো? সেদিন রুপার সাথে দেখা হয়েছিলো। তোর কথা বলল। তুই নাকি বিয়ের পর একদিনও কলেজ যাসনি। কেনো?”
-” ওনার দিদুন পড়াতে চান না।”
ওয়াশরুমে যাচ্ছিল ইভান। এখানে রুমের সাথে অ্যাটাস্ট ওয়াশরুম নেই। বসার রুমের সাথে কমন ওয়াশরুম। তনুজার দাদির রুমের সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে কথাটা কানে আসে ইভানের।
সুফিয়া বলেন,
-” তা নাতজামাই কী বলে? নাতজামাইও কী না করে?”
-” ওনার সাথে এ নিয়ে কোন কথা হয়নি আমার। আর ও বাড়িতে দিদুন যা বলে সবাই তো তাইই করে।”
-” তাও তুই একবার নাতজামাইয়ের সাথে আলোচনা করে দেখিস। আমার মনেহয় সে রাজি হবে। এত দূর পড়ে এসেছিস যখন, আর দুই বছরই তো আছে। একটু কষ্ট করে সংসার সামলে ঠিক হয়ে যাবে।”
তনুজা নিশ্চুপ থাকে। ইভান পরপর সবটা শুনে। কিছুক্ষণ পর সুফিয়া তাড়া দিয়ে বলেন,
-” তনু! ইভান একা রুমে আছে। এমনিতে নতুন জায়গা। আসার পর থেকেই তো সে একলা আছে। তুই রান্নাবান্না করলি। আবার খাওয়ার পর আমার কাছেই আছিস। যা রুমে যা তুই।”
তনুজা দাদির পেটে মুখ এঁটে বলে,
-” আজ তোমার সাথে থাকব।”
দাদি মৃদু হাসলেন। আদূরে গলায় বলেন,
-” পাগ/লি একটা। ছিঃ তা কেমন দেখায়। যা সোনা আমার।”
কিছুপল পর তনুজা উঠে দাঁড়ায়। সুফিয়া তনুজার হাতে একটা নতুন লুঙ্গি আর গেঞ্জি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-” নাত জামাইকে এটা দিও। রাতে পড়ে শুবে। কাপড়-চোপড় তো কিছুই আনোনি। শার্ট প্যান্ট পড়ে ঘুমাবে কীভাবে?”
তনুজা কপাল কুঁচকে ফেলে।
-” লুঙ্গি! উনি এসব পড়বে?”
মনেমনে বলে তনুজা তবে আর বাড়তি কথা না বলে হাতে নেয়। হঠাৎ যদি পরেও এইভেবে দ্বিরুক্তি করে না সে। তনুজা হাতে নিয়ে পা বাড়ায়। তন্মধ্যে দাদি জড়তা নিয়ে বলেন,
-” তোর বাবার সাথে একটিবার কথা বলবি না? খাওয়ার সময় তোর কথা বলতেই তোকে দেখতে চাইলো একবার।”
বাবা ঘন্টাখানেক আগেই বাড়ি ফিরেছে। তনুজা তারপর আর একটিবারও রুমের বাইরে যায়নি। এই রুমে সে ছিলো। বাবা নামক মানুষটির জন্য তনুজা আজ এখানে রাত কাটাতেও রাজি হচ্ছিলো না। অবশেষে দাদির সরল আবদার রাখতে রাতটা থাকতে রাজি হয়। ঐ মানুষটার মুখ দর্শন করতেও ইচ্ছে হয় না তার। নরম তনুজা মূহুর্তেই কেমন শক্ত পাথর বনে যায়। দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
-” নাহ। তাকে বলে দিও জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। বাবা হতে গেলে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে তো দায়িত্ব পালন দূর, বরং তার জন্যই আজ আমার এই অবস্থা। আমার সাথে যা যা ঘটেছে এর পেছনে দায়ী যদি কেউ থাকে, তবে আমার মনেহয় সেই দায়ী। তার কারনে এই বাড়ি ছাড়তে হলো আমায়। অন্যর বাড়ি আশ্রয় নেওয়া কখনোই সম্মানের নয়। তারপর.. উফ্। বাবা তো দূর সে তো একজন মানুষই নয়।”
ঘৃণা নিয়ে বলে তনুজা। থেমে..গলার স্বর আরেকটু কঠিন করে ফের বলে,
-” তাকে বলে দিও আমি কখনো তার মুখও দেখতে চাই না। আমি শুধু আমার মায়ের মেয়ে। আমার চোখের সামনে এখনো আমার হারানো মায়ের কষ্টের ছবি ভাসে। আমার নিজের সাথে ঘটা সবটার জন্য তাকে ক্ষমা করতে পারলেও, আমার মা’কে করা অত্যা/চার যার সাক্ষী আমার দু’চোখ। এইজন্য কখনোই তাকে ক্ষমা করতে পারব না আমি।”
তনুজা আর বাক্য ব্যয় না করে প্রস্থান করে।
.
তনুজা রুমে গিয়ে দেখে ইভান বিছানার হেডে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে। তনুজা হালকা কেশে ‘এহেম’ করে। ইভান চোখ তুলে তাকায়। তনুজা বিছানার থেকে খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে বলে,
-“ইয়েএ! বাড়তি পোশাক তো আনা হয়নি। আর প্যান্ট-শার্ট পড়ে ঘুমাতে অসুবিধা হবে। তাই এগুলো দাদি আপনার জন্য পাঠালেন।”
ইভান উঠে বসে। তনুজার হাতের দিকে ভ্রুকুটি করে তাকায়। তনুজা বিছানার একপাশে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলে,
-” এগুলো নতুন। এখনো ইউস করা হয়নি। আপনি চাইলে পড়তে পারেন। লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি।”
ইভানের কপালের ভাঁজ দৃঢ় হয়। চোখদুটো কপালে তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-” হোয়াট? মাথা খারাপ হয়েছে তোমার! আমি কখনো লুঙ্গি পড়েছি? আশ্চর্য! লাগবে না এসব। নিয়ে যাও। আমি এমনি থাকতে পারব। সমস্যা নেই।”
তনুজা মিনমিনে স্বরে বলে,
-” আপনার ইচ্ছা। তবে এখানে থাকলো। ভেবে দেখতে পারেন। এই পোশাক পরেই আবার কালকে যেতে হবে। রাতে শুয়ে থাকলে ঘুচিয়ে যাবে।”
ইভানের গায়ে সাদা শার্ট ছিলো। ব্লেজারটা আলনার সাথে ঝুলানো। তনুজার কথাটাও যুক্তিযত। ইভান মাথা চুলকিয়ে ভাবে কী করবে! তনুজা কাঠের আলমারি খুলে প্লাজু আর কামিজ নিয়ে বেরিয়ে যায়। ইভান গেঞ্জিটা হাতে করল। সাইজ অনেক বড়। নিশ্চয় খুব ঢিলেঢালা হবে। পড়তে ইচ্ছে করলো না তার। লুঙ্গিটা হাতে করে ইভান, তন্মধ্যে শাড়ি চেঞ্জ করে থ্রি পিস পরে রুমে আসে তনুজা। তনুজার দিকে তাকায় ইভান। মনেমনে আওড়ায়,
-” সেদিন তো ওর শাড়ি পরা নিয়ে বলেছিলাম। আজ লুঙ্গি পড়লে আমার মানসম্মানের বারোটা বাজবে। লুঙ্গি খুলে যাবে। না না লুঙ্গি ইম্পসিবল।”
ইভান হালকা কেশে বলে,
-” ওগুলো রেখে দাও। লাগবে না। লুঙ্গি ঠিকঠাক পড়তে পারব না। শেষে প্রব্লেম হবে।”
তনুজা বেড থেকে লুঙ্গি, গেঞ্জি সরিয়ে রাখে। ইভানের গরম লাগছিলো। মাথার উপর ফ্যানটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ তুলে ঘুরছে। বাতাস গায়ে খুব কমই লাগছে। ইভান পরপর শার্টের বাটন খুলে গা থেকে শার্টটা খুলে ফেলে।
হঠাৎ পিছন ফিরে তাকাতেই তনুজার অস্বস্তি হয়। তনুজার দৃষ্টি যায় ইভানের উদাম দেহে। ইভান শার্টটা খুলে একহাতে নিয়ে উঠে রাখতে যাচ্ছিলো। তনুজা পিছন ঘুরতেই দু’জনে সামনাসামনি পরে। ইভানকে এভাবে সামনে দেখে তনুজার অবচেতন মন অনেক কিছুই ভেবে নেয়। তনুজার বুকটা দুরুদুরু করে কাঁপছে। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। তবে তনুজাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে ইভান শার্টটা রেখে দেয়। পরপর প্যান্টের পায়ের কাছে কয়েক ভাঁজ দিয়ে গুটিয়ে রাখতে রাখতে বলে,
-” নাও এবার আপাতত প্রব্লেম সলভ হলো। এভাবে থাকা যাবে। আর একরাতেরই তো ব্যাপার। রাতে বাইরেও যাচ্ছি না, যে খালি গায়ে কারো সামনে পড়তে হবে। ফ্যান খুব আস্তে ঘুরছে। মনে হচ্ছে না গায়ে লাগছে বাতাস। প্রচন্ড গরম লাগছে। এভাবেই শুয়ে পড়াই বেটার হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে শার্ট পড়ে নিবো। তাহলে ঘুচানোরও ঝা/মেলা নেই।”
তনুজা কিছু বলে না। দৃষ্টি নত করে থাকে সে। কিছুপল পর বড়বড় শ্বাস ফেলে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। ও বাড়ির খাটটা এর তুলনায় অনেকটাই বড়সড়। তারপর দু’জনের মাঝে থাকে বড় কোলবালিশ। এইরুমে কোলবালিশ নেই। এখন দাদির রুম থেকে কোলবালিশ আনতে যাওয়াও সম্ভব নয়। তনুজার কেমন হাঁসফাঁস লাগছে। ইভানেরও চোখে ঘুম আসছে না। দু’জনেই চুপচাপ উল্টোদিক ফিরে শুয়ে। তবে দু’জনের মাঝেই কেমন অস্থিরতা কাজ করছে। ইভানের রোজকার অভ্যাসের আজ একটা জিনিস বাদ পরেছে। ইভান ধরে নেয় সেইজন্যই বোধহয় তার এমন লাগছে। ওদিকে তনুজা শুয়ে নড়াচড়া করছে। চোখ খিঁচে বন্ধ করলেও আজ আর ঘুম সহজে নামছে না।
.
ভোরের আলো ফুটেছে অনেকক্ষণ আগেই। সকালের একফালি সোনালী নরম রোদ পর্দার ফাঁকফোকর গলিয়ে রুমময় ছড়িয়ে পড়েছে। তনুজার নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে। ঘুমের মধ্যে নড়তে গিয়ে নিজের উপর ভারী অনুভব করে। গলার দিকে কেমন সুড়সুড়ি লাগছে। পিটপিট করে চোখ তুলে তাকায় তনুজা। চোখ মেলে চাইতেই চোখজোড়া তার অস্বস্তি আর বিস্ময়ে বেরিয়ে আসার জো হয়। ইভানের মাথাটা ওর বুকের উপর দেখে অপ্রস্তুত হয়। ইভান তনুজাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। শুধু তাইই নয়। নিজের কোমল হাত একটা হাত ইভানের পিঠ জড়িয়ে রাখা, এটা দেখে তনুজা আরেক দফা চমকায়। তনুজা তড়িঘড়ি করে ইভানের মাথাটা সরিয়ে আলগোছে বালিশের উপর দেয়। নিজের কোমড় থেকে ইভানের হাত দু’টো ছাড়িয়ে নেয়। ফট করে উঠে বসে তনুজা। তনুজা দেখে ইভান ওর পাশেই আছে। বরং সে নিজের বালিশ ছাড়িয়ে ইভানের জায়গায় এসে রয়েছে। ঘনঘন লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে তনুজা। অবিন্যস্ত খোলা চুলগুলো ত্রস্ত হাতে খোঁপা করে নেয়।
__________
তামান্না ডায়াবেটিসের রুগি হওয়ায় রোজ সকালে হাঁটাহাঁটি করে। মায়ের সাথে শখ করে দুই বোনও হাঁটছে। মাঝে মাঝেই মায়ের সাথে মর্নিং ওয়াকে বের হয় ওরা। কিছুক্ষণ হেঁটে নিতি দুইহাতে কোমড় চেপে ধরে নিচের দিকে ঝুঁকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-” উফ্! মাম্মা এতো এনার্জি পায় কীভাবে? আমি তো একটু হেঁটেই হাঁপিয়ে গেছি। মাম্মা এখনও পুরোদমে হেঁটেই চলেছে। এদিকে আমার পা দুটো আর নাড়াতে পারছি না।”
নৃত্য আর নিতি বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ একটা ছোট্ট টুনটুনি পাখিকে রাস্তার একপাশে ছোট্ট গাছে উড়ে এসে বসতে দেখে নৃত্যর কিছু মনে পরে। নিতির বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,
-” উফফো আপু। তোমাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি। বাড়ির দক্ষিণ সাইডে কিছুদিন আগে খসখসে গাছের পাতায় টুনটুনির বাসা দেখেছিলাম। শুধু তাইই নয়। তিনটে ডিমও দেখেছিলাম। চলো তো গিয়ে দেখি বাচ্চা ফুটেছে কিনা।”
পাখির ডিমের কথা শুনে নিতিও কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বোনের সাথে দেখতে যায়। বাড়ির এই এদিকটায় ছোটবড় আগাছা আর লতাপাতায় ভরপুর। নৃত্য অনুসন্ধানি চোখে খসখসে গাছটা খুঁজতে থাকে। তার পিছু নিতি। হঠাৎ নিতির পায়ের তলায় কিছু পরে। নিতি পা সরিয়ে তাকায়। একটা স্প্রে পাম্প বোতল দেখতে পায়। উৎসুক হয়ে আচমকা কেডস পরিহিত পা দিয়ে বোতলটা উল্টায় সে। বোতলের গায়ে লেখা দেখে কপাল কুঞ্চিত হয় তার। নিতি দাঁত দিয়ে নিম্নোষ্ঠ চেপে ধরে অস্ফুটে আওড়ায়,
-” ক্লোরোফর্ম স্প্রে পাম্প বোতল! এটা এখানে কী করে আসলো? কে ফেলেছে?”
নিতি মাথা তুলে আশেপাশের এদিক-ওদিক তাকায়। সামনে উপর বরাবর নজরে আসে ইভানের ব্যালকনি। এদিকে তো ইভানের রুম।
#চলবে