প্রণয়ের বাঁধন পর্ব-১৮+১৯

0
135

#প্রণয়ের_বাঁধন |১৮|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত

রৌদ্রজ্জ্বল ঝলমলে বিকেল। পুরো মির্জা বাড়ি জুড়ে শুনশান নীরবতায় আর নিস্তব্ধতায় ঘেরা। এই সময়টাতে বাড়িতে থাকা বেশিরভাগ সদস্য; দুপুরের পর ভাতঘুমে বিভোর থাকে। তনুজা আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে বেরোয়। ছাদ থেকে শুকনো কাপড় আনার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরুতেই; কলিংবেলের শব্দ কর্ণপাত হয়। নিচে কাউকে দেখতে না পেয়ে তনুজা এগিয়ে; দরজা খুলতেই ক্যাপ মাথায় হাতে প্যাকেট নিয়ে একটা ইয়াং ছেলে দাঁড়িয়ে। মুখে সৌজন্যমূলক হাসি ঝুলিয়ে সালাম দেয়,

-” আসসালামুয়ালাইকুম।”

তনুজা ভ্রুকুটি করে মিহি স্বরে জবাব দেয়,

-” ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

-” আমি____থেকে আসছি; ডেলিভারি বয়। এই ঠিকানায় একটা পার্সেল পাঠানো হয়েছে। তনুজা ম্যাম আছেন? উনার নামে পার্সেল এসেছে।”

তনুজার মসৃণ কপালে পরপর দু’টো ভাঁজ পরে। মনেমনে আওড়ায়,-” পার্সেল? আমার নামে! কে পাঠিয়েছে?”

প্রশ্নগুলো মনের এক কোণে ঠেসে রেখে মুখে বলল,

-” জ্বি, আমি তনুজা।”

ছেলেটি অমায়িক কণ্ঠে বলল,

-” এসএম গ্রুপ অফ কোম্পানির সিইও স্যার পাঠিয়েছেন।”

তৎক্ষণাৎ তনুজা মনেমনে আওড়ায়, ” ইভান” পরপর ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করে পার্সেলটা হাতে নিয়ে দোর বন্ধ করে ভেতরে যেতে থাকে। একহাতে প্যাকেট, অন্যহাতে শাড়ির কুঁচি আগলে তনুজা ঠোঁট কামড়ে কিছু ভাবতে ভাবতে যাচ্ছিল। সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেলতেই চোখে পড়ে দিব্য নামছে। দিব্য একপল তনুজাকে দেখেই দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। তনুজার হঠাৎ করেই অস্বস্তি হতে থাকে। তনুজা দৃষ্টি নত করে যেতে থাকে। দিব্যও আশেপাশে না তাকিয়ে গটগট করে সিঁড়ির একপাশ ঘেঁষে নামছে।

অনেকেরই; এভাবে নাহলেও, পরিবারের চাপে পরে পছন্দের মানুষকে ছেড়ে অন্যকারো সাথে বাঁধতে হয় ঘর। সাজাতে হয় সংসার। সেখানে বিয়ের রাত থেকেই মেনে নিতে হয় স্বামী নামক পুরুষটিকে। অধিকাংশের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্মে। ভুলে যায় প্রথম ভালোলাগাকে। পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্বামী নামক ব্যক্তিটিই হয়ে ওঠে সবচেয়ে কাছের আর আপনজন। তনুজা মন থেকে বিয়েটা মেনে নিয়েছে। সে তার জীবনটা স্বামী নামক ব্যক্তিগত মানুষটির সাথে গুছিয়ে নিতে চায়। রাখতে চায় না কোনো পিছুটান। তবুও দিব্যর সামনাসামনি হলে, কেমন একটা অস্বস্তি হয় ওর। এমন না যে দিব্যর প্রতি কোন ফিলিংস, আর নাতো দূর্বলতা এখনো আছে ওর মনে। তারপরও দিব্যর সামনাসামনি হলে অস্বস্তিটা আপনাআপনি এসে হাজির হয়। হয়তো এই অস্বস্তিবোধটা সহজে কাটবে না; আজীবনেও অস্বস্তিটা যাবে কীনা তনুজা জানে না! ওদিকে দিব্যর-ও একই অবস্থা। দিব্য নিজের মনকে শাসিয়ে নিয়েছে, মানাতে চেষ্টা করে; তনুজা এ বাড়ির বড় বউ। ইভানের বউ। ওর বড় ভাইয়ের বউ। তবুও দিব্য জানে ওরা-দুজনে বাকিদের মতো সহজ কখনো হতে পারবে না। নাতো তনুজা পারবে, আর নাতো দিব্য নিজে পারবে। তনুজার অস্বস্তি তারপর নিজের অস্বস্তি দূর করতেই দিব্যর ইউ.এস.এ পারি দেওয়ার সিদ্ধান্ত। সামনাসামনি দেখা না হলে, দু’জনের লাইফই সহজ হবে। এইভেবে যত দ্রুত সম্ভব বাইরে চলে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে দিব্য।

__________

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের আঁধার নেমেছে অনেকক্ষণ হবে। ইভান কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরে তনুজাকে রেডি হতে তাড়া দিয়ে নিচে অপেক্ষা করছে। তনুজা বেশ সময় নিয়ে রেডি হয়। বিকেলে ইভানের পাঠানো শাড়ি আর হালকা অর্নামেন্টস তার গায়ে। অনেকটা সময় গড়িয়ে যাওয়ার পরও তনুজাকে নিচে আসতে না দেখে বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ উচ্চারিত হয় ইভানের মুখে। এরমধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দৃষ্টি আটকায় আলতো পায়ে হেঁটে আসা তনুজার পানে। ইভানের চুজ করা হাফ সিল্কের রেড-মেরুন শাড়ি আর ফুল নেক ব্লাউজ তনুজার অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে। কানে ছোট ইয়ার রিং, গলায় পেনডেন্ট। মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়া। কোমড় সমান ঘনকালো চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। তনুজা এগিয়ে আসতেই আরো স্পষ্ট হয়; কৃষ্ণচূড়ার ন্যায় লাল টকটকে লিপস্টিকে রাঙানো ঠোঁট, কাজল কালো দু’টো চোখ। কাজল কালো চোখে চোখ পড়তেই আচমকা ইভান নিস্তব্ধ হয়ে যায় । তনুজার চোখ পরে শ্যামবর্ণের সুঠামদেহী স্বামী নামক মানুষটির পানে। গায়ে কালো পলো শার্ট, কালো প্যান্ট উপরে কালো ব্লেজার। ইভানকে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে। দু’জনের চোখে-চোখ মিলতেই অদ্ভুত অনুভূতি স্নায়ুতন্ত্রে কড়া নাড়ে ইভানের। কেমন নিস্তব্ধ হয়ে যায় ধূসর চোখজোড়া। হৃদসায়রে উচ্ছ্বল ঝড় বইছে ওর। কিছুপল পর তনুজা দৃষ্টি নামিয়ে হালকা কেশে মৃদুস্বরে বলে,

-” স্যরি; একটু দেরি হয়ে গেলো।”

পরপর সম্বিৎ ফিরে পেতেই ইভান এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। নিজেকে তটস্থ করে রোলেক্স হাতঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বলল,

-” প্রায় ঘন্টাখানেক হবে ওয়েট করছি। ফাইনালি এলে। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আবার ঘুমিয়ে-টুমিয়ে পড়নি তো। না মানে তোমার তো আবার রাত হওয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ার রেকর্ড আছে।”

তনুজা অপ্রস্তুত হয়। হ্যা সে খুব ঘুম কাতুরে, তাই বলে সাজতে গিয়েও ঘুমিয়ে যাবে নাকি! আ’জ’ব! আর মেয়েদের সাজগোজ করতে কত সময় লাগে; তা ছেলেরা জানবে কী করে! তনুজা সহসাই বলে উঠল,

-” হ্যা আমি একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ি। তাই বলে সন্ধ্যারাতেই নয়।”

ইভান আনমনে আলতো হাসে। যে হাসি তনুজার দৃষ্টির অগোচরে রয়ে যায়। মুখে বলল,

-” ব্যাপার না। এবার তাহলে যাওয়া যাক।”

-” দিদুনকে একবার বলে আসি।”

-” বলতে হবে না, আগে থেকেই তো জানে দিদুন। আর দিদুন এতক্ষণ এখানেই ছিলো। মাত্র রুমে গিয়েছে। জানে তুমি আমার সাথে যাচ্ছো। আর তুমি কোথাও নাইওরে যাচ্ছো না যে ঘটা করে বারবার বলে যেতে হবে।”

তনুজা সামান্য ঘাড় নাড়িয়ে “ঠিক আছে” বোঝায়। ইভান ব্যস্ত গলায় বলল,

-” লেটস গো।”

___________

কারওয়ান বাজারে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাঁচ তারকা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এনগেজমেন্ট পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। রাতে চতুর্দিকে কৃত্রিম আলোয় হোটেলের পরিবেশটা বেশি জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে, নজরকারে সৌন্দর্যে। তনুজা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগল। নামিদামি আভিজাত্য পূর্ণ লোকদের মাঝে তার আনইজি হচ্ছে। বিজেনেস পার্টনারসহ পরিচিত সবার সাথে বেশ এটিটিউড নিয়ে কুশলাদি বিনিময় করছে ইভান। সাথে নিজের স্ত্রী হিসেবে তনুজাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তনুজা মুখে সৌজন্যমূলক হাসি টেনে রেখে সালাম দিচ্ছে আর কারো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে; ব্যাস এতটুকুই। আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি আরকে গ্রুপের এমডির ছেলে সাজ্জাদ ইভানকে দেখে এগিয়ে আসল। হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বলল,

-” আরে ইফতিয়ার ইভান যে। হাউ অ্যাবাউট ইউ?”

ইভান হাত মিলিয়ে বলল,

-” আ’ম ওয়েল। এন্ড ইয়্যু?

-” আ’ম ভেরি ওয়েল।”

তনুজার দিকে সাজ্জাদ কপাল কুঁচকে তাকাতেই; ইভান ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,

-” মাই মিসেস।”

-” ওহ্।” বলে পরপর হাত বাড়িয়ে দেয়,

-” হ্যালো ভাবী! আ’ম সাজ্জাদ তালুকদার।”

ইভানের ভেতর কেমন জেলাসি ফিল হয়, রাগে কপাল টানটান হয়। মনটা খুব করে চাইছে তনুজা যেনো করমর্দন না করে। ইভান দুই হাত প্যান্টের পকেটে গলিয়ে সটান দাঁড়িয়ে কপাল গুটিয়ে তনুজার দিকে চেয়ে। তনুজা জোর করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,

-” হাই; আ’ম ফারিশতা নূর তনুজা।”

সাজ্জাদ হাতটা গুটিয়ে নেয়। মনে মনে অপমানিত বোধ করে সে। ঐতো তার উডবি পরিচিত-অপরিচিত কতজনের সাথেই নির্দ্বিধায় হাত মেলাচ্ছে। পরপর মুখে হাসি টেনে বলল,

-” নাইস টু মিট ইউ।”

তনুজা বিনিময় সৌজন্যমূলক হাসার চেষ্টা করল। সাজ্জাদ মুখে হাসি টেনে ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-” মি. ইভান এটা কিন্তু মোটেই ঠিক হয়নি। না জানিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছেন। দাওয়াত মিস করে গিয়েছি।”

ইভান আলতো হেসে; অপ্রস্তুত হয়ে বলে,

-” আসলে হঠাৎ করেই। তবে ব্যাপার না সামনে বড় করে আয়োজন করা হবে। তখন দাওয়াতটা উসুল করে নিবেন।”

-” অপেক্ষায় থাকলাম।”

ইভান বিনিময় মেপে স্বল্প হাসল। সাজ্জাদ ফের বলল,

-” মি. ইফতিয়ার ইভান ইনজয় দ্য পার্টি। ওদিকে আমাকে ডাকছে আসছি।”

-” শিওর।”

ইভান সন্তুষ্ট চাউনিতে তনুজার দিকে তাকায়। এখানে উপস্থিত অধিকাংশ মেয়ের ড্রেসআপই মার্জিত নয়। শাড়ি পড়া মেয়েদের পেট-পিঠ বেরিয়ে আছে। অথচ ইভান খেয়াল করলো, তনুজার পেট-পিঠ কত সুন্দর ঢাকা। সুন্দর করে পিন আপ করা। অপরিচিত সবাই তারপর সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ। তনুজার অস্বস্তি বুঝতে পেরে; তনুজার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল ইভান,

-” অস্বস্তি হচ্ছে তোমার? কষ্ট করে একটু মানিয়ে নাও, প্লীজ। তাড়াতাড়িই চলে যাব। নার্ভাস ফিল করিও না; আমি আছিতো।”

ইভানের ভরসার বাণী নিমিষেই তনুজার অস্বস্তি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। তনুজা সন্তুষ্ট চিত্তে আওড়ায়,

-” সমস্যা নেই। ঠিক আছি।”
.

নিরিবিলি স্পেসের কর্ণারের সাইডে টেবিলের চেয়ারে বসে তনুজা। বিভিন্ন রঙের লাইটিংয়ে ফকফকা পরিষ্কার চতুর্দিক। লোকজনে গমগম করছে, সাথে হালকা মিউজিক বাজছে। ইভানের একটা কল আসায় কথা বলতে মাত্রই একটু ওদিকে গিয়েছে। এরমধ্যে টেবিলের ফাঁকা চেয়ারে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরিহিত একটা মেয়ে এসে বসল। ওয়েটারকে ডেকে কিছু বলতেই; মিনিট খানেকের মধ্যে রঙিন পানীয়ের ট্রে হাজির। মেয়েটি পায়ের উপর পা তুলে বসে ফোন স্ক্রল করতে থাকে আর কাঁচের গ্লাসে থাকা পানীয় খেতে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে তনুজার গলাটাও শুকিয়ে ছিলো। ভালোই তৃষ্ণা পেয়েছে। তনুজা টেবিলের উপর থেকে একটা গ্লাস হাতে তুলে নেয়। যেই চুমুক বসাবে সেই সময়,

-” এই তনুজা? ওয়েট ওয়েট।”

খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে ইভান। ফোন কানে চেপে কথা বললেও নজর ছিলো তনুজার পানে। তনুজার হাতে ওয়াইনের কাপ দেখতেই ওর চোখ বড়বড় হয়ে যায়। ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে আর কিছু না বলেই কল কেটে এগিয়ে আসে। তনুজা বুঝতে পারে না। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ও ওর মতোই ফের কোমল পানীয়ের গ্লাসটা মুখের সামনে ধরে। এরমধ্যে ওর নরম হাতটা চট করে ধরে ইভান। তনুজা চোখ ঘুরিয়ে তাকায়। ইভান ব্যস্ত হয়ে তড়িঘড়ি করে বলল,

-” আরে তোমাকে থামতে বললাম না। তারপরও এটা খেতে যাচ্ছো। রাখো রাখো এটা।”

তনুজা ভ্রু-ট্রু কুঁচকে নির্বোধের মতো চাইল। বিরক্ত কণ্ঠে বলল,

-” আমার পানি পিপাসা পেয়েছে, তাই ভাবলাম এটা দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নেই। কিন্তু বুঝতে পারছি না, আপনি এভাবে আটকাচ্ছেন কেনো?”

ইভান তনুজার থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে নামিয়ে রাখল। চেয়ারে বসতে বসতে চটজলদি ওয়েটারকে ডেকে বলল,

-” মিনারেল ওয়াটার লাগবে। কুইক।”

বলার সাথে সাথেই সেকেন্ডের মধ্যে মিনারেল ওয়াটার হাজির হয়। ইভান বোতলের ক্যাপ খুলে তনুজার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

-” নাও এবার তৃষ্ণা মেটাও।”

তনুজা কয়েক ঢোক খেয়ে বোতলটা নামিয়ে রেখে প্রশ্ন করে উঠল,

-” বললেন না তো, ওটা খেলে কী এমন সমস্যা হতো?
উনি তো খাচ্ছে।”

মেয়েটিকে ইশারায় দেখিয়ে ফিসফিসিয়ে শেষের কথা বলে তনুজা। ইভান ডান ভ্রুটা বাঁকিয়ে বলল,

-” ওটা সফট ড্রিংকস ছিলো না। ওটা ওয়াইন ছিলো। একবার যদি ভুল করে ওটা খেয়ে নিতে, তাহলে তো আমি তোমাকে নিয়ে সমস্যায় পরে যেতাম কনফার্ম।”

তনুজার মৃগ আঁখিজোড়া বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে যায়। ইভান বলতে থাকে,

-” সঠিক সময়ে আমি না দেখলে, এতক্ষণ এই ভরা মজলিসে তুমি নোরা ফাতেহির দিলবার দিলবার আর নয়তো; তমান্না ভাটিয়ার বর্তমান ভাইরাল গানে ডান্স শুরু করে দিতে।”

ইভান দুষ্টুমি করে বলে। থেমে.. তনুজার দিকে ঝুঁকে লো ভয়েজে বলল,

-” শুধু এখানেই শেষ নয়। তোমাকে সামলাতে আমাকে বেগ পোহাতে হতো। নির্ঘাত নিজেই কন্ট্রোললেস হয়ে পড়তাম।”

তনুজা আক্কেলগুড়ুম হয়ে যায়। মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কান দু’টো উষ্ণ হয়। মানুষটা যে ঠোঁট কা’টা দেখে তো মনে হয়নি কখনো। আর এরুপ কিছু বলতে পারে কখনো ধারণাই আসেনি। লজ্জায় আড়ষ্টতায় গাঁট হয় তনুজা। ইভান আয়েশ করে বসে ফোন স্ক্রল করতে থাকে। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,

-” আমি মজা করে বলেছি। তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো? সিরিয়াসলি নিয়ে লজ্জা-টজ্জা পেয়ে তো একাকার হচ্ছো।”

মুখের উপর থাকা বেবি হেয়ার কানের পিঠে গুজতে গুজতে মিনমিনে স্বরে মিথ্যা বলার প্রয়াস চালায়,

-” কই না তো।”

তনুজাকে পাশে নিয়ে সময়টা ইভানের কাছে বেশ অন্যরকম ঠেকছে। ইভান কোণাচোখে তনুজাকে পরক্ষ করছে। মেয়েটার কাজল কালো মায়াবী আঁখিজোড়া ইভানকে বড্ড বেশিই মায়ায় জড়িয়ে নিয়েছে। কিছুপল পর…ইভান একটা গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে চুমুক বসায়। তনুজা ঈষৎ কপাল কুঁচকে চাইল। পরপর শুধিয়ে উঠল,

-” আমাকে তো ঠিকই খেতে দিলেন না, তাহলে এবার নিজে কেনো খাচ্ছেন?”

-” আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”

-” নিশ্চয় এটা ভালো অভ্যাস নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা খুবই বাজে-বদ অভ্যাস।”

তনুজার কণ্ঠ কঠোর শুনালো। ইভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তনুজার দিকে তাকায়। তনুজা পরোয়া করল না, ইভানের দৃষ্টিকে; বরং সে এক দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলে। হাতটা বাড়িয়ে ইভানের মুখের সামনে থাকা গ্লাসটা কেড়ে নিয়ে শব্দ করে টেবিলে নামায়। তনুজার হঠাৎ কঠোরতা দেখে ইভান বো’কা বনে যায়; অবাক হয়ে নির্বাক ঠাঁই চেয়ে রইল। তনুজা দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

-” আমি এমনি কোমল পানীয় ভেবে তখন খেতে যাচ্ছিলাম। জানতাম না। এখন জেনেশুনে আমার সামনে কাউকে হা-রা-ম পান করতে দেই কী করে? আমার সামনে অন্তত আজ বাদ রাখুন।”

ইভান প্রশ্নাতুর চোখে চাইল,

-” আশেপাশের অনেকেই তো খাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তোমার অভিমত কী?”

তনুজা প্রগাঢ় স্বরে বলল,

-” আশেপাশে অন্যকারো উপর অধিকার নেই।”

ইভান ফের জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইল,

-” তাহলে কাউকে যে বললে! তোমার কাউকে- এর মধ্যে তাহলে শুধু আমিই আছি, রাইট?”

তনুজা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

-” আরে ওটা তো কথার কথা। আপনি মূল পয়েন্টটা না নিয়ে কাউকে এসব ধরছেন কেনো? আমি আপনাকেই বলেছি।”

তনুজার প্রতি মুগ্ধতায় ভরা দৃষ্টিতে তাকায় ইভান। তনুজার এভাবে অধিকারবোধ নিয়ে বলায়, ইভানের চিত্ত সন্তুষ্ট হয়। তনুজাকে একদম আইডিয়াল বউ-বউ লাগছে। তনুজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হঠাৎ বলতে থাকে,

-” জানেন আমি দুই শ্রেণীর লোককে খুব বেশি অপছন্দ করি। শুধু অপছন্দ বললে, ভুল হবে। আমি ঘৃ/ণা করি তাদেরকে। খুব বেশিই ঘৃ/ণা করি তাদের.. যারা পর°কিয়া করে, আর যারা নে/শা করে তাদেরকে। যদিও এই দু’টো খারাপ কাজ, ঐ একই মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে বেশি।”

ইভান সহসাই বলে ওঠে,

-” তাহলে তো তোমার ঘৃ°ণার তালিকায় আমিও আছি। তোমার প্রথম ঘৃ’ণার তালিকায় না থাকলেও, দ্বিতীয় তালিকায় টপে থাকছে ইভানের নাম।”

তনুজার চোখদুটো নোনা জলে টলমল করে উঠল। ভারী স্বরে বলল,

-” স্যরি! আমি ওভাবে বলতে চাইনি। তবে সত্যি আমি এসব পছন্দ করি না। আর শুধু আমি কেনো! একজন বিবেকবান মানুষ কেউই হা-রা-ম কোন কিছুর সাপোর্ট নিবে না। কোন কারনে হতাশ হলে, ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে, তাকে বাজে নে’শায় আ’সক্ত হতে হবে? খারাপ দিয়ে কখনো ভালো হয়? কখনোই না। এতে নিজের শরীরের ক্ষতি হয়; সাথে আত্মা কলুষিত হয়। তাই প্লিজ রিকোয়েস্ট করব, আপনি এই হা’রাম পান করা ত্যাগ করুন।”

ইভান নিস্প্রভ চাহুনিতে চেয়ে রয়। তনুজার অধিকার বোধ নিয়ে বলা কথাগুলো ইভানের কাছে বেশ ভালো লাগলো। সাফাই গাওয়ার জন্য টু শব্দ বেরোলো না। চুপ থেকে প্রতিটি যুক্তিযুক্ত কথায় নীরব সম্মতি দেয়। একটা মেয়ের জন্য একটা ছেলে যেমন উচ্ছন্নে যেতে পারে; আবার ঠিক একটা ভালোর গুণসম্পন্ন মেয়ের সহচার্যে ভালোও হতে পারে। বাজে নে’শা কাটানো সহজ হয়ে যায়। ঐযে ভালোর মধ্যে জাঁকজমকপূর্ণতা না থাকলেও; থাকে এক টুকরো প্রশান্তি। আজকাল তনুজা আশেপাশে থাকলে ইভানের মনেপ্রাণে একফালি স্নিগ্ধ শান্তি-প্রশান্তি অনুভব হয়।

____________

ডিনার করে বাড়ি ফিরতে রাত দশটা পেরিয়ে যায়। ঘড়ির কাঁটা এখন এগারোটার ঘর ছুঁইছুঁই। তনুজা বিছানাটা ঝেরে নেয়। পরপর বালিশগুলো ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই চোখ পরে ইভানের দিকে। ইভান ফোন স্ক্রল করতে করতে রুমে ঢুকছে। এতক্ষণ বোধহয় ছাদে ছিলো। এতক্ষণ রুমে না দেখে তনুজা কিছু ভেবে বসে। তাই তো চটজলদি মুখ ফস্কে বলে ওঠে,

-” আপনার বোধহয় হাঁসফাঁস লাগছে?”

ইভান কপাল কুঁচকে তনুজার দিকে তাকায়। ডান ভ্রূ উঁচিয়ে শুধায়,

-” মানে? হাঁসফাঁস লাগবে; কিন্তু কেনো?”

-” এইযে আজকে আমার জন্য আপনার অতি প্রিয় শরাব প্রাণ করতে পারলেন না। তাই অস্থিরতায় তো আজ আপনার ঘুমই আসবে না।”

তনুজা ব্যঙ্গ করে বলতে থাকে। ইভান বলল,

-” হাঁসফাঁস লাগছে না এমন নয়। অস্থিরও ঠেকছে। কেউ যদি সিডিউস করার জন্য মেদহীন মসৃন পেট বের করে রাখে। চোখের সামনে এভাবে ঘুরে-ফিরে তাহলে তো, অস্থির লাগবেই।”

তনুজা পরপর নিজের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। দ্রুত কোমড়ে গুঁজে রাখা শাড়ির আঁচল টেনে ছাড়িয়ে দিতে থাকে। বিছানা ঝাড়ার সময় কোমড়ে গুঁজে নিয়েছিলো, ইশশ্! খেয়ালই তো ছিলো না। আর লোকটার নজরও তো বড্ড বেহায়া।

.

কিছুক্ষণ পর.. তনুজা ব্রাশ করে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়েল আনতে সোজা ব্যালকনিতে পা দেয়। টাওয়েল দিয়ে মুখটা মুঝতে নিয়ে ঘটে এক বিপত্তি। টাওয়েলের একটা সুতা এড়িয়ে কানের দুলের সাথে আঁটকে যায়। তনুজা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। আর অস্ফুটে আওড়ায়,

-” ধ্যাত .. উফ্! খুলছে না কেনো।”

ইভান ব্যালকনিতে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সটান দাঁড়িয়ে ছিলো। সবটাই তার নজরে আসে। এগিয়ে যায়। ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

-” দেখি আমার কাছে দাও! এভাবে টানাহেঁচড়া করে কাজের কাজ কিছুই হবে না; শেষমেষ কানটাকে ক্ষ’ত করে ছাড়বে।”

তনুজা স্তব্ধ-বিমূঢ় হয়ে চেয়ে রয়। পরপর নিজের হাত দু’টো সরিয়ে নেয়। ইভান মনোযোগ সহকারে আলগোছে সুতাটা ছাড়াতে থাকে। থেকে থেকেই ইভানের হাতের স্পর্শ তনুজার সফট গাল ছুঁইয়ে যাচ্ছে। সেকেন্ডের ছোঁয়াতেই তনুজার কেমন হাঁসফাঁস লাগছে। ইভান সুতাটা ছাড়িয়ে পূর্ণ দৃষ্টি দেয় তনুজার মুখশ্রীতে। লাইটের মৃদু আলো সাথে চাঁদের রুপালি আলো। একসাথে মিলেমিশে একাকার। সেই আলোতে তনুজার মুখটা ভীষণ স্নিগ্ধ-মোহনীয় লাগছে। এইযে তনুজার কাজল লেপ্টানো চোখের ঘনপল্লব কেমন থেকে থেকেই কাঁপছে, এই দৃশ্যটা ইভানের কাছে কী যে ভালো লাগছে। ইভানকে বড্ড সম্মোহিত করছে। তনুজার মুখের উপর থাকা বেবি হেয়ারগুলো আচমকা একহাত দিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দেয় ইভান। তনুজার বুকটা ধড়ফড় করতে থাকে। ইভানের দৃষ্টি বড্ড শান্ত-স্থির আর সমুদ্রের ন্যায় গভীর। এই চোখদুটোতে তনুজা চোখ রাখার সাহস পাচ্ছে না; মনে হচ্ছে এই গভীর চোখজোড়ায় সে হারিয়ে যাবে। তনুজা পরপর দৃষ্টি নত করে নিলো। ইভান লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,

-” তনুজা আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।”

তনুজা না তাকিয়ে মিহি স্বরে প্রত্যুত্তরে দেয়,

-” হু।”

তনুজার কাঁধের উপর দিয়ে একটা হাত রেলিংয়ে রাখে ইভান। অপর হাতটা ট্রাউজারের পকেটে গলিয়ে তনুজার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,

-” আমি জানি না আমার সমন্ধে তোমার কিরুপ ধারণা! তবে আমার মনেহয় আমার ব্যাপারে তোমার পজেটিভ ধারণার থেকে নেগেটিভ ধারণাই বেশি। এইযে আমি ড্রিং করি। তারপর আমার একটা অতীত আছে। যেকোন মেয়েরই জেনেশুনে এরুপ পুরুষকে সহজে মেনে নিতে কষ্ট হবে। তবে বিশ্বাস করো; আমি আমার অতীতকে ঘৃ’ণা করি। ঘৃ’ণা করি আমার রুচিকে। সৌন্দর্যের মোহে পরে তৃষাকে বিয়ে করার জন্য উতলা হয়েছিলাম। ইভেন ভালোবেসেছিলাম-ও। তবে ঐ মেয়ে নিজের আসল রুপ দেখানোর পর আমার মোহ-ভ্রম ভাঙে। ঐ নামটা মুখে আনতেও আমার ঘৃ’ণা হয়। নিজের বাবাকে একজন নারীর কাছে প্রতারিত হতে দেখেছি। তারপর যখন নিজেও একটা মেয়ের কাছে ঠকলাম। তখন আমি ডিপ্রেশনে চলে যাই। একাকীত্বকে সঙ্গী করে মানসিক যন্ত্রণা কমাতে হাতে ওয়াইন ওঠে আসে। তবে এটা ক্ষণিকের জন্য মস্তিষ্ককে শান্তি দেয়। ক্ষণিকের জন্য হতাশা থেকে দূরে রাখে। কিন্তু মানসিক কষ্ট সেটা রয়েই যায়।”

থেমে তনুজার চোখে চোখ রেখে বলল,

-” তৃষার থেকে প্রতারিত হওয়ার পর থেকে আমার ভেতর মেয়ে জাতির উপর ঘৃ’ণার সৃষ্টি হয়। মনে হতো পৃথিবীর সব মেয়েই সমান। দিনশেষে সবারই একই রুপ বেরোয়। এতটা ঘৃ’ণা থাকা সত্ত্বেও; কেনো জানি আমি তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়লাম। সেই প্রথম থেকেই তোমার প্রতি কঠোর হতে চেয়েও আমি কঠোর হতে পারিনি। তোমার মায়াবী মুখ, তোমার স্বচ্ছ টলটলে দু’টো চোখের দিকে তাকালে; আমি কেমন দূর্বল হয়ে পরি। চেয়েও পারিনি কঠোরতা বজায় রাখতে। একটা মেয়ে যেমন আমাকে কঠোর বানিয়ে দিয়েছিলো; ঠিক তেমনি আরেকটা মেয়ের সংস্পর্শে এসে আমার কঠিন পাথর হৃদয়টা বরফের ন্যায় গলতে শুরু করে। জানি না আমি তোমার জন্য কতটা পার্ফেক্ট। তারপরও তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া থাকবে, প্লিজ কখনো ছেড়ে যেয়ো না। কখনো ঠকিয়ো না। আমি সব মানতে পারব, তবে ঠকে গেলে আমি এবার একদম নিঃশেষ হয়ে যাব।”

তনুজার চোখদুটো টলমল করে উঠল। ইভানের কথাগুলো তনুজার রুহু অবধি কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তনুজা কাঁপা কাঁপা গলায় থেমে থেমে বলল,

-” ইভান! আমি জানি আপনি খারাপ নন। আপনার প্রতি আমার কোনো নেগেটিভ ধারণা নেই। সময় পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দেয়। ঠিক তেমনি মাঝখানে আপনিও বদলে গিয়েছেন। তবে আপনার ভেতর মনুষ্যত্ব আছে, একটা সুন্দর মন আছে। যা সবারই নেই। ”

একটু থেমে ঢোক গিলে ফের বলে তনুজা,

-” ইভান, আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে।”

ইভান তনুজার কথায় দাঁড়ি টেনে দেয়। পরপর নিজে বলে উঠল,

-” তনুজা আমার জীবনের শুরুতে তুমি না থাকলেও, আমার জীবনটা তোমাকে দিয়েই শেষ করতে চাই। আমার মনমস্তিষ্কে তোমার একার রাজত্ব চলবে। আমার হৃদয়ে শুধু তুমি বসবাস করবে। সেখানে অন্যকারো ছায়াও থাকবে না। তনুজা আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, ভরসা আছে তোমার প্রতি। এই বিশ্বাস আর ভরসা আজীবন রাখার দায়িত্ব তোমার।”

আচমকা ইভান তনুজাকে জড়িয়ে ধরে। তনুজার দু’চোখে পানি টলটল করছে। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। তনুজার একটু ভয় হলেও ওর ভেতরের সত্ত্বা সাহস যোগায়, ও তো জানতে, ইচ্ছায় কখনো ইভানকে ঠকাবে না। তাই ও আ°মৃ°ত্যু পারবে এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে। ইভান শক্ত করে আলিঙ্গন। তনুজার দেহ বরফখণ্ডের ন্যায় হিম শীতল হয়ে আসে। কিছুপল পর তনুজাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় ইভান। তনুজার নরম তুলতুলে গালে একহাত রেখে বলল,

-” জানি না তোমার মাঝে কী এমন আছে! তবে তুমি আশেপাশে থাকলে আমার মনে প্রশান্তি বয়ে যায়। কেমন শান্তি শান্তি অনুভব হয়। আমার জীবনের শুণ্যতার খাতায় পূর্ণতার আরেক নাম তনুজা। আই প্রমিজ আমার জীবনের গল্পে তুমি কখনো অপ্রিয় হবে না।”

ইভান কথাটা শেষ করে তনুজার কপালে অধর ছোঁয়ায়। তনুজার সমস্ত শরীর শিরশির করে ওঠে। বাড়ে বুকের কাঁপুনি। দুরুদুরু থেকে ডিবডিব শব্দ তুলে কেঁপে ওঠে বুক। ইভান একহাতে তনুজার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। অন্যহাতটা তনুজার মাখনের মতোন নরম গালে রাখে। তনুজার শুষ্ক ওষ্ঠজোড়া তিরতিরিয়ে কাঁপছে। ইভানের পুরুষালি মনকে যা নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। ইভান ঘোরলাগা দৃষ্টিতে পলকহীন চেয়ে আছে তনুজার মায়াবী মুখবিবরে। তনুজার নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। ফাঁকা ঢোক গিলে নেয় ও। পরপর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কোন রকমে অস্ফুট স্বরে বলল,

-” ইভান ছাড়ুন।”

ইভানের কানে কথাটা গেলো কি গেলো না বুঝা যায়নি! সে ঘোর থেকে-ই তনুজার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবায়। তনুজার চোখ বড় বড় হয়ে যায় খাঁমচে ধরে ইভানের বাহুর কাছের টিশার্ট। জীবনে প্রথম পুরুষালি স্পর্শ, অচেনা অনুভূতি। শিরশির করে উঠে তনুজার পুরো কায়া। ইভান মত্ত তার কাজে। মিনিট খানেক পরে ছাড়া পেতেই তনুজা বড়বড় শ্বাস নিতে থাকে। ইভানের হাত তখনো তনুজার গালে স্থির রেখেই কপালে কপাল ঠেকায়। তনুজার চোখ বন্ধ সেই চোখে তাকিয়ে ইভান আলতো হাসে। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল,

-” স্যরি। শরাবের ঘাটতি মেটালাম। রোজরোজ এমন হালাল মিষ্টি ন্যাচারাল শরাব পেলে, কেমিকেল শরাব ত্যাগ করা ব্যাপারই না।”

তনুজা লজ্জায় চোখ মেলে চাইতে পারল না। অস্বস্তি আর আড়ষ্টতায় একশা হয় ও।

____________

বড়দের ব্রেকফাস্ট অনেক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। নিতি আর নৃত্য দেরিতে জেগে মাত্র ডায়নিংয়ে আসলো। নিতি চেয়ার টেনে নেয়। ঝুঁটি বেঁধে রাখা চুলগুলো কাঁধের উপর দিয়ে সামনে রাখা ছিলো। পরপর একহাতে চুলগুলো বারি মে’রে পিছনে দিতেই ”হাচচো” শব্দে চমকে উঠে নিতি। ঘাড়টা কিঞ্চিৎ ঘুরাতেই হকচকায়, ভড়কে যায়। নখ কামড়ে ধরে ভীতু সন্ত্রস্ত মুখ করে অসহায় চোখে চাইল ও। কথায় আছে না; যেখানে বাঘের ভ’য়, সেখানে সন্ধ্যা হয়। দিব্য এক আঙুলে নাক ঘষে দু’টো অ’গ্নি চক্ষু নিতির দিকে তাক করে রেখেছে। নিতি নখ কামড়ে ধরেই বলল,

-” স্যরি! দেখিনি। আর আমার কি দোষ? তুমিই তো আমার পিছনে ছিলে তাই তো চুলগুলো বারি দিতেই তোমার মুখে পড়ল, হু। আমি তো আর জানতাম না তুমি আমার পিছুপিছু ঘুরঘুর করছো।”

সকাল বেলায় মেজাজটা চড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িতে একটা ফা’জিল আছে। দিব্য মনে মনে এটা বলে। দাঁত কটমট করে মুখে বলল,

-” ইচ্ছে তো করে তোকে…”

শেষ কথাটা গিলে নেয় দিব্য। সকাল বেলা আজ আর রাগারাগি করতে মন চাইল না। নিতি ভ্রু কুঁচকে তাকায়,

-” চুমু-টুমু খেতে ইচ্ছে করে?”

বিড়বিড় করে বলে নিতি। দিব্য চোয়াল ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,

-” কিছু বললি?”

নিতি ভদ্র মেয়ের মতো তড়িৎ ঘাড় নাড়িয়ে বলল,

-” কই না তো।”

দিব্য ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ার টেনে বসল। বাড়ির এই সদস্যরা বেশি সময়ই লেট লতিফ। নিতি ঢাকনা উঁচু করে খাবার বেড়ে নেয়। নৃত্যও নিজে খেতে থাকে। দিব্য ব্রেড আর জেল এগিয়ে নেয়। খাবার খেতে খেতে নৃত্য হঠাৎ বলে উঠল,

-” এইরে আপু তোমাকে তো একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছি।”

নিতি উৎসুক হয়ে বলল,

-” কী?”

দিব্য ব্রেডে বাইট দিয়ে বিরক্ত চোখে তাকায়। এই হয়েছে দুইবোন বয়সে বেশ ব্যবধান থাকলেও, দু’জনের এত সখ্যতা। সারাক্ষণ গুজুর-গুজুর, ফুসুর-ফুসুর করতেই থাকে। কীযে এত গল্প করে দুই বোন, আল্লাহ মালুম। নৃত্য উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,

-” অ্যাই আপু জানো, নুরির বোন নুসরাত আছে না। নুসরাত আপুর বিয়ে নেক্সট ফ্রাইডে।”

নিতি হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠল,

-” ইয়া আল্লাহ! ইয়া মাবুদ! কী শুনছি এসব!”

নিতির এহেন আহাজারি শুনে দিব্য কপাল কুঁচকে আড়চোখে তাকায়। মনেমনে আওড়ায়,

-” এর আবার কী হলো? আশ্চর্য!”

নিতি মুখটায় বেদনার ছাপ টেনে আনলো। কণ্ঠে আফসোস ঝরল,

-” ইয়া মাবুদ আমার হাঁটুর বয়সী বাচ্চা মেয়েরা সবাই বিয়ে করে নিচ্ছে। আবার আমার বান্ধবীর অনেকে তো বিয়ে-থা করে বাচ্চা-কাচ্চা জন্ম দিয়ে হেট্রিক-টেট্রিক করে একাকার। আর এদিকে আমি এখনো পিওর সিঙেলই রয়ে গেলাম। একটা প্রেমও করতে পারলাম না। ইয়া মাবুদ! এই বিরহ আমি কোথায় রাখি।”

দিব্য পানি খাচ্ছিলো, নিতির আহাজারিতে বেচারার হঠাৎ বেষম লাগে। খুকখুক করে কেশে উঠে। নিতি দিব্যর দিকে সরু চোখে তাকায়। দিব্য নিজেকে স্বাভাবিক করে দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকায়। ওদিকে নৃত্য আবার সুর টানলো,

-” তুমিই তো বিয়ে করতে চাচ্ছ না। মাম্মা তো তোমাকে ঐ ডক্টর ভাইয়ার সাথে সেদিন রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলল। তুমি কাটকাট না করে দিলে। তবে পিক দেখে আমার কিন্তু ডক্টরটারে বেশ ভালোই লেগেছে। পাপা বলে ভাইয়াটা খুবই ভদ্র আর অমায়িক। এরকম হ্যান্ডসাম শান্ত , ভদ্র জিজু পেলে আমি তো সর্বপ্রথমে এফবিতে পোস্ট দিবো। সবাইকে দেখাবো এটা আমার জিজু। কিতনা কিউট আর ড্যাশিং।”

নিতি চোখ বড়বড় করে চাইল। রাগি স্বরে বলল,

-” থামবি ওসব শান্ত – শিষ্ট , অতি ভদ্র ডক্টর-ফক্টর আমার পছন্দ নয়, হু।”

নৃত্য চোখ ছোট করে প্রশ্ন করল,

-” তাহলে তোমার কেমন পছন্দ, শুনি?”

নিতি মুখে লাজুক হাসি টেনে আনে। ঠোঁট মেলে বলে,

-” আমি তো; এক রাগি রাজার মহারানী হতে চাই।”

নৃত্য বড়বড় চাউনিতে চেয়ে শুধাল,

-” শান্ত- শিষ্ট মানুষ রেখে তোমার রাগি মানুষকে পছন্দ। তোমার এরুপ পছন্দের কারণ ব্যাখ্যা করো তো শুনি?”

-” শোন তাহলে বলছি, প্রচণ্ড রে’গে গেলে শরীরের রোগ জীবাণু ম’রে যায়। যারা ঘন ঘন রা’গে তাদের অসুখ বিসুখ হয় না বললেই চলে।”

নিতি থামে। নৃত্য আকাশ থেকে পড়ার মতো অবাক হয়ে বলল,

-” এইজন্য রাগি লাইফ পার্টনার তোমার পছন্দ! তা এই কথা কে বলেছে তোমায়? কোথায় শুনেছো?”

নিতি ভাব নিয়ে বলে,

-” সারাক্ষণ তো ডিটেকটিভ গল্প পড়িস। মাসুদ রানা সিরিজ শেষ করিস। এছাড়া তো আর গল্প উপন্যাস পড়িস না। এটা আমার কথা নয়। এটা হুমায়ূন স্যারের কথা। সাজেস্ট করছি, হিমু সমগ্র পড়বি। সেখানে এটা পাবি।”

নৃত্য ঠোঁট উল্টাল। এদের দুইবোনের গল্পের আসরে বেচারা দিব্য মাইনকাচিপায় পড়েছে। যত ভাবে কারো সাথে রুড আচরণ করবে না, ততোই তারা উস্কে দেয় ওকে। দিব্য মনেমনে বলে,

-” এই নিতিটা আসলেই এলার্জি।”

#চলবে

#প্রণয়ের_বাঁধন |১৯|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত

অদূরে দাঁড়িয়ে পরপর নিতির কথাগুলো শুনে এক রমণীর ফর্সা মুখে অন্ধকার নামে। ক’দিন ধরে যে সন্দেহটা করছিলেন, তা যেনো লহমায় প্রকট আকার ছাড়িয়ে দিনের আলোর মতো ফকফকা পরিষ্কার হয়ে যায়। মায়েরা সাধারণত মেয়েদের মন খুব সহজেই পড়তে পারে। পড়ে নেয় চোখের ভাষা। সেদিন নিতির পড়ার টেবিল থেকে প্রয়োজনে পেন নিতে গিয়ে, আচমকা নজরে আসে খোলা ডায়েরির পাতা। নিতি খোলা রেখে ওয়াশরুমে গিয়েছিলো। না চাইতেও কিছু শব্দ নজরে আসে। মেয়ে বড় হয়েছে, আর এই বয়সটা আবেগের। তাই আর অত মাথা ঘামায়নি। তবে তক্কে তক্কে ছিলেন, মেয়ের হাবভাব বোঝার। এখানে রাগি রাজা বলতে যে দিব্যকে বুঝিয়েছে তা তামান্না ঢের বুঝতে পারলেন। মনেমনে তামান্নাও কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলেন। দিব্যকে ভাইপো হিসেবে ভালোবাসে না এমন নয়। তবে তার কাছে আদরের মেয়ের জন্য দিব্য পারফেক্ট নয়। দেখতে সুদর্শন হলেও, দিব‌্যর মাত্রারিক্ত রাগ, জিদ মোটেই পছন্দ নয়। স্বয়ং নিজেও তিরিক্ষি মেজাজের হলেও, ঠান্ডা টলটলে পানির মতো স্বভাবের ছেলে তার পছন্দ। খুব করে চান ওনার স্বামীর মত ধৈর্যশীল আর খুবই অমায়িক পাত্র যেন মেয়েদের জন্য পান। এই হিসেবে ডক্টর ছেলেটাকে তামান্নার বেশ মনে ধরেছে। তামান্না গম্ভীর মুখে ডায়নিংয়ের দিকে এগিয়ে আসলেন। মেয়েদের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে শাসিয়ে উঠলেন,

-” ঘুম থেকে উঠেছো তো বেলা করে। দু’জনের একজনও সকালে মর্নিং ওয়াকে বেরুলে না। আচ্ছা তা নাহয় বাদ দিলাম। খাবার খাওয়ার সময় যে চুপচাপ আদবের সাথে খেতে হয়; তা জানো না? নাকি দিনদিন বড় হচ্ছো আর আদব-কায়দা সব খুইয়ে বসছো।”

দুইবোন মায়ের হঠাৎ কঠোরতা দেখে বোকা বনে যায়। ছোট্ট মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবাক হয় নিতি। খাবার খেতে বসে দুইবোন একটু গছিপ করছে, এতে হঠাৎ কী এমন হলো! মাম্মা হুট করে কড়া করে বলছে! দুইবোন মা’কে রেসপেক্ট করে, সাথে ভ’য়-ও করে। টু শব্দও উচ্চারণ করল না। দৃষ্টি খাবারের প্লেটে নুইয়ে রাখল। তামান্না নিতিকে উদ্দেশ্য করে ফের বললেন,

-” নিতি তোমার না নেক্সট মান্থে ফাইনাল সেমিস্টার। কোথায় বই নিয়ে টেবিলে বসে থাকবে; তা না সারাক্ষণ দুইবোন আ-জা-ইরা গল্প গুজব করে সময় ন’ষ্ট করছো। আবার এদিকে তোমার যখন মন চায় অমনি ক্লাস মিস দিয়ে হোস্টেল থেকে বাড়ি চলে আসো। বাড়িতে তো পড়তে দেখিনা কখনো। পড়াশোনার এরুপ দুর্দশা হলে সিজিপিএ যে কেমন হবে তা বোঝায় যাচ্ছে।”

তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে একটু থামলেন। ফের পুরোদমে শুরু করলেন,

-” নিতি তুমি তো বড় তোমার তো পড়াশোনা নিয়ে সবসময় সিরিয়াস থাকা উচিত। সেখানে কী করছ? নিজের মত ছোট বোনকেও পড়াশোনার প্রতি উদাসীন বানাচ্ছো; আর বাঁদরামি শেখাচ্ছো। এইযে নৃত্য আজ স্কুল মিস দিলো তোমার সাথে ঘুরতে যাবে বলে। তুমি বড় কোথায় ছোট বোনের বায়না না শুনে বোঝাবে। তা না করে তুমি সায় দিয়ে আরো উস্কে দাও। বাড়িতে এভাবে আড্ডা দিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি না করে হোস্টেলে গিয়ে থাকলে নিজের জন্যও ভালো হয়; বোনের জন্যও।”

নিতির মিষ্টি মুখটা বেজার হয়ে যায়। প্লেটের খাবার শুধু নেড়েই যাচ্ছে। ভারী মুখশ্রীতে মাথা নুইয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,

-” স্যরি! মাম্মা।”

এরমধ্যে দিব্য উঠে চলে যেতে যেতে মনেমনে আওড়ায়,

-” উফ্! কখন কার কী হয়! বুঝা মুশকিল! ফুপি বোধহয় সারা বছরের শাসন আজ এক মিনিটে শেষ করছে। যত বয়ান জমানো ছিলো তা যেন এখনই দেওয়ার ছিলো।”

তামান্না মুখটা গম্ভীর করেই ওদিকে সোফায় গিয়ে বসলেন। নিতি প্লেটের অবশিষ্ট খাবার রেখেই উঠে যায়। বেসিনে হাত ধোঁয়ার সময় নৃত্য ফিসফিসিয়ে বলল,

-” অ্যাই আপু! মুখটা বেজার করে রাখো না তো। মন খারাপ করো না। আমার মনেহয় মাম্মা অন্যকোন রা’গ এভাবে মিটালো। পৃথিবীর সব মায়েদের এক কমন ডায়লগ, কমন বিষয়; বাচ্চাদের উপর সব রাগ মেটাতে পড়াশোনা টেনে আনা।”

নিতি ঠোঁট টিপে ফিক করে হেঁসে ফেলল। এরমধ্যে নুরজাহান বেগম সোফায় বসে হাঁক ছেড়ে ডাকলেন,

-” নিতি এদিকে আয় তো।”

নিতি এগিয়ে গিয়ে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইল। নুরজাহান হাতে থাকা মুঠোফোনটা নিতির দিকে বাড়িয়ে বললেন,

-” দ্যাখ তো এই যন্ত্রখানার আবার কী হলো! কেমন আলো জ্বলে একা একাই কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভরা পৌষের কনকনে শীতেও আমার মত বুড়ি যতটা না কাঁপতে থাকে, তারচেয়েও বেশি কাঁপছে যন্ত্রখানা। এর হঠাৎ হলো টা-কি?”

নিতির ভীষণ হাসি পেলো। ঠোঁট চেপে হাসল। সোফায় আয়েশ করে বসে ফোনটা হাতে নিলো। পরপর মুখে কপট চিন্তার ছাঁট ফেলে ভারিক্কি গলায় বলল,

-” ভারী চিন্তার বিষয় তো তাহলে! যেখানে সত্তোরোর্ধ্ব বুড়ি কনকনে শীতে যতটা না কাঁপে, আর শীত না আসতেই যন্ত্রটা তার থেকেও অত্যধিক বেশি কাঁপছে। তাহলে তো নির্ঘাত বড়সড় সমস্যা। বলার অপেক্ষা রাখে না; ভ’য়ং’কর সমস্যা হয়েছে। ভালো করে দেখতে হচ্ছে তো।”

থেমে দুষ্টুমির স্বরে ফের বলল,

-” নানুআপু সমস্যা ধরা পড়েছে। তবে সলভ করতে হলে, বিগ অ্যামাউন্ট লাগবে।”

নুরজাহান বুঝলেন না। কুঁচকানো চামড়ার কপাল আরো খানিকটা কুঞ্চিত করে বললেন,

-” সে আবার কী?”

নিতি কপাল চাপড়ে বলল,

-” বিগ অ্যামাউন্ট মানে হলো, মোটা অংকের টাকা লাগবে। তবেই ফোনের এই কম্পন দূর হবে।”

-” কত টাকা?”

-” এই বেশি না। পাঁচ হাজার হলেই আমি ঠিক করে দিতে পারব।”

নিতি মজা করে বলতে থাকে। তামান্না ওপাশের সোফায় বসে ছিলেন। এবারে মেয়ের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালেন। নুরজাহান একহাতে নিতির কান চেপে ধরে বললেন,

-” ফা’জ’লামি বন্ধ করে ঠিক করে দে। কী ভেবেছিস? বুড়িটা একেবারেই জানে না, বুঝে না! আরে আমার এই যন্ত্রখানার দামও তো পাঁচ হাজার টাকা নয়।”

নিতি ঠোঁট মেলে হাসল। বলল,

-” সে দাম যাইহোক! নাতনি ঠিক করে দিচ্ছে এইজন্য হলেও তো বকশিস দিতে হয়।”

বাটন ফোনটা চাপ লেগে ভাইব্রেশন হয়ে গিয়েছিলো। নিতি বেছে বেছে সুন্দর একটা রিংটোন সেট করে দিতে থাকে। নুরজাহান স্বল্প হাসলেন। বললেন,

-” যা বকশিস পাচ্ছিস। তোদের দুইবোনের আজকের কেনাকাটার টাকা আমি দিচ্ছি।”

নিতি স্মিত হেসে বলল,

-” আমি এমনি মজা করে বলেছি, লাগবে না নানুআপু। পাপা টাকা দিয়েছে। ওগুলো দিয়েই কিনে শেষ করতে পারব না।”

-” তোর পাপার দেওয়া টাকা রেখে দে। আরেকদিন করিস। আজ আমারটা দিয়েই কর। আর শোন আমি বেশি করে টাকা দিয়ে দিবো, তোদের কেনাকাটা করার সময় নাতবউয়ের জন্যও কিছু কিনে আনিস। আমি তো বুড়ি হয়েছি। বি-ষ ব্যাথায় কোথাও বেরুতে পারি না। তাই শখ-আহ্লাদ করে নিজে পছন্দ করে তোদের জন্য কিছুই দিতে পারি না। যাইহোক তোরা নিজেরাই পছন্দ করে কিনেনিস।”

নিতি ফোনটা নানুর দিকে বাড়িয়ে ভাব নিয়ে বলল,

-” নানুআপু আমি চাকুরী পেলে প্রথম মাসের স্যালারী দিয়ে তোমাকে একটা স্মার্টফোন গিফট করব, হু।”

-” তোমাদের সেই স্মাট ফোন চালানোর জন্য আমাকে একটা মানুষ ভাড়া করে রাখতে হবে তো। এটা তাও একটু আধটু পারি। কল ধরতে কা’ট’তে। ওটায় কোথায় কী করব, এই ভেবে দিশেহারা হবো!”

নৃত্য গমগমে স্বরে ফোড়ন কাটল,

-” ব্যাপার না নানুআপু। আমি আছি তো। আমি নাহয় তোমার হেল্পিংহ্যান্ড হবো।”

তনুজা উপরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনল। দিদুন যে তার জন্যও এভাবে বলল, এটা শুনে আবেগাপ্লুত হয় ও। এই সংসারটা এখন নিজের মনেহয়। আগের মত খারাপ লাগে না ওর কাছে। একটা জায়গায়ই শুধু অস্বস্তি তাছাড়া স্বপ্নের মত সাজানো গোছানো পরিপূর্ণ একটা সংসার। যা প্রত্যেকটা মেয়েরই চাওয়া থাকে।

___________

রুমময় শুনশান নীরবতা আর নিস্তব্ধতায় ঘেরা। ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে রাত্রি বারোটার ঘরে পৌঁছায়। পড়ার টেবিলে বসে সাদা-কালো দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে তনুজার বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরোয়। আজ চারদিন হচ্ছে ইভান অফিশিয়াল কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছে। সেখানে কনফারেন্স আছে। প্রতিদিন নিয়ম করে রাতে এক মিনিটের জন্য হলেও তনুজাকে ফোন দিয়ে ভালো-মন্দ খোঁজখবর নেয়। আজ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে; গড়িয়ে যাচ্ছে রাত্রির প্রহর। তারপরও ইভানের ফোনকল না পেয়ে আচমকা তনুজার চিন্তা হতে থাকে। উদ্বেগ, উদ্বিগ্নতায় কেমন অস্থির ঠেকছে। মনটা খুব করে চাইছে একটা ফোনকল। হোক না সেটা দু-তিন বাক্যের। বইটা সামনে মেলে বারংবার ফোনের দিকে চাইছে ও। একবার ভাবে আজ নাহয় নিজেই ফোন দিয়ে খোঁজ নিক। পরক্ষণেই আবার জড়তা আড়ষ্টতায় মিইয়ে যায়। অনেকটাক্ষণ গড়ানোর পর; দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচল থেকে বেরিয়ে ফোন হাতে কললিস্টে উপরে থাকা ‘Evan’ নামে সেভ করা নম্বরটিতে কল করে। রিং হওয়ার দ্বিতীয় বারের মাথায় রিসিভ হয়। ওপাশ থেকে ঘুমুঘুমু কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,

-” বলো।”

হঠাৎ তনুজার জিভ ভারী হয়। গুছিয়ে রাখা শব্দগুলো কেমন অগোছালো এলোমেলো হয়ে যায়। অকস্মাৎ কী বলবে ভেবে দিশেহারা মেয়েটা! ইভান অনেকটা সময় নিলো। অবশেষে নীরবতার পাল্লা ভারী হতে না দিয়ে ঘুমঘুম আদূরে গলায় ডাকল,

-” তনুজা?”

আদুরে প্রগাঢ় স্বর শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতেই তনুজার বুকের ভেতরটা ছলাৎ করে উঠল। সময় নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,

-” হুঁ।”

-” ফোন দিয়ে চুপ করে আছো যে। কথা বলছ না। আচ্ছা আমি কী ফোন কে’টে দিবো?”

তনুজা অপ্রস্তুত হয়ে মিহি স্বরে প্রত্যুত্তরে বলল,

-” না..মানে।”

ইভান তনুজার কথাশুনে চোখ দু’টো বুঁজেই নিঃশব্দে হাসল।

-” বি ইজি।”

পরপর সময় দেখে কিছু ভেবে ইভানের কপাল গুটিয়ে আসে। উদ্বিগ্ন গলায় শুধাল,

-” রাত একটা বাজতে চলল। এখনো ঘুমাওনি? শরীর খারাপ লাগছে? নাকি দুঃস্বপ্ন দেখেছো?”

তনুজার চোখদুটোয় আজ কেনো জানি ঘুম নামছিলো না। তার অবচেতন মন মানুষটাকে মিস করছিলো। প্রতীক্ষায় ছিলো কাংখিত ফোনকলের। একসাথে এতোগুলো প্রশ্ন শুনে তনুজা আনমনে হাসে। কোমল কণ্ঠস্বরে বলল,

-” ঘুম আসছিলো না। তাই বই নিয়ে বসেছিলাম। পড়ছিলাম আর..।”

এতটুকু বলে থেমে যায় তনুজা। ওপাশ থেকে নিচু স্বরে শুধায়,

-” আর? আর কী?”

-” আর তেমন কিছু না। আপনি আজ ফোন দেননি, তাই ভাবলাম ফোন দিয়ে খোঁজ নিই।”

-” কনফারেন্স শেষে ওখানে ডিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। ডিনার করে হোটেলে ফিরতে ফিরতে আজ বেশ দেরি হয়ে যায়। বেশি রাত হওয়ায় ভাবলাম তুমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছো, তাই আর কল দিয়ে ডিস্টার্ব করিনি। সারাদিন ব্যস্ততায় ভীষণ ট্রায়ার্ড ছিলাম, বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ি।”

-” ওহ্। আমি বোধহয় কল করে বিরক্ত করে ফেললাম।”

-” মোটেই না।”

ইভানের কণ্ঠ দৃঢ় শোনাল। খানিকক্ষণ দু’পাশে নীরবতা চলল। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। নিস্তব্ধতায় ঘেরা রুমময় সেই শব্দ প্রগাঢ় শোনাল। ওপাশের ব্যক্তি নীরবতাকে প্রশ্রয় দিলো না। ঠান্ডা স্বরে বলল,

-” বাই দ্য ওয়ে তুমি কী আমাকে মিস করছিলে? ভালোটালো-বেসে ফেলনি তো আবার?

তনুজা লজ্জা পায়। নিরুত্তর রয়। ইভান মৃদু হাসল। তনুজার লজ্জা, অস্বস্তি বাড়তে না দিয়ে মোলায়েম স্বরে বলল,

-” আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পড় কেমন।”

তনুজা অকস্মাৎ প্রশ্ন করে উঠল,

-” আপনি ফিরছেন কবে?”

-” চিন্তা করো না তাড়াতাড়িই ফিরব ইনশাআল্লাহ। হয়ত দু-তিন দিনের মধ্যেই।”

-” আচ্ছা।”

কয়েক সেকেন্ড পর ইভান কণ্ঠে আদর জড়িয়ে শান্ত শীতল গলায় ডাকলো,

-” তনুজা?”

-” হু।”

-” আই মিস ইউ।”

শব্দগুলো কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কের নিউরনে সাড়া জাগাতেই বরফের মতোন হিম শীতল হয়ে আসে তনুজার গোটা শরীর। সারা শরীরে বিদ্যুৎস্পন্দন খেলে যায়। তনুজা নিস্তব্ধ, নিস্পন্দ রয়। ইভান প্রত্যুত্তর না পেয়ে চোখদুটো বুজেই ম্লান হাসল। কণ্ঠে আবেগ আদর জড়িয়েই বলল,

-” অনেক রাত হয়েছে। এবার ঘুমিয়ে পড়। নিজের যত্ন নিও। গুড নাইট, মাই মিসেস। বাই।”

তনুজার মনে টুকরো টুকরো প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়। আলতো গলায় প্রত্যুত্তরে আওড়ায়,

-” টেইক কেয়ার। গুড নাইট, বাই।”

___________

একদিন পর….
দূরের মসজিদ থেকে ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি ভেসে আসছে। সূচনা হয় আরেকটি নতুন দিনের। পুব আকাশে লালাভ বর্ণ, বাড়ছে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। তনুজার ঘুম হালকা হতেই নিজেকে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ পায়। পিটপিট করে চোখ মেলে চাইতেই ভূত দেখার মতো চমকায়, ভড়কায়। বিস্ময়ে চোখদুটো কোটর ছাড়িয়ে যাওয়ার জো হয়েছে। ইভানের গায়ের সাথে লেপ্টে আছে ওর কোমল দেহখানা। উষ্ণ হাতে কোমড় পেঁচিয়ে জড়িয়ে আছে ইভান। “ইভান কখন আসলো?” এটা ভেবে অবাক হলেও, এখন মানুষটার এত কাছে ঠাহর করতেই তনুজার গোটা শরীরে বিদ্যুৎস্পন্দন খেলে যায়। বেড়ে যায় শ্বাস-প্রশ্বাস। তনুজা তড়িৎ কোমড় পেঁচিয়ে রাখা ইভানের হাতটা ছাড়াতে নেয়। মূহূর্তেই কানে আসলো ঘুমঘুম কণ্ঠস্বর,

-” চুপচাপ ঘুমাও। আর আমাকেও শান্তিতে ঘুমাতে দাও। প্লিজ ডিস্টার্ব করো না। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।”

ডিম লাইটের সবুজ আলোয় ইভানের বুঁজে থাকা চোখমুখের দিকে চাইল তনুজা। বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে উঠল,

-” আপনি? কখন আসলেন? আর আপনার না আগামীকাল আসার কথা।”

ইভান আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। চোখদুটো বুজে রেখেই বলল,

-” কাজ শেষ হয়ে গেল। ভাবলাম শুধু শুধু রাত থেকে কী লাভ! তারচেয়ে বাসায় ফিরে প্রশান্তিতে ঘুম দেওয়া যাবে। যেমন ভাবা, তেমনি রাতেই ব্যাক করা।”

-” বাসায় কখন আসলেন? আমাকে একবারো ডাকলেন না যে!”

আচমকা তনুজাকে ছেড়ে দিয়ে নড়েচড়ে ওঠে; কনুই বালিশে ঠেকিয়ে হাতের উপর মাথা রাখে ইভান। পরপর তনুজার দিকে ঝুঁকে বলল,

-” সাড়ে তিনটে নাগাদ বাসায় ফিরেছি।”

-” আমায় ডাকলেন না কেনো?”

ইভান শান্ত চাউনিতে চাইল। নির্লিপ্ত জবাবে বলল,

-” প্রয়োজন মনে করিনি।”

থেমে, কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চাইল; শীতল কণ্ঠে বলল,

-” এসে ঘুমন্ত এলোমেলো তোমাকে দেখতেই থার্টি মিনিটস পেরিয়ে গিয়েছে। তোমার নির্মল ঘুমটা ভাঙতে একদম ইচ্ছে করেনি। বরং যেটা ইচ্ছে করেছে সেটিই করেছি।”

বিস্ময়ে তনুজার চোখদুটো রসগোল্লার আকার নিলো। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কোনরকমে শুধাল,

-” মানে? কি করেছেন?”

ইভান শব্দ করে হাসল। তনুজার কপালের উপর এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বেবি হেয়ার ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ তনুজার মৃগ আঁখিজোড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরপর উষ্ণ হাতের ছোঁয়া নরম গালে পেতেই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় তনুজার। তনুজার সফট গালে হাত রেখে ইভান নিচু ঠান্ডা গলায় ডাকলো,

-” তনুজা?”

-” হুঁ।”

-” চোখ খোলো। তাকাও আমার চোখের দিকে।”

ধীরে ধীরে ঘনপল্লব মেলে চায় তনুজা। ইভানের ঘোরলাগা চোখে চোখ মিলতেই তনুজার বুক দুরুদুরু কাঁপতে থাকে। অদ্ভুত অনুভূতিতে তনুমন কম্পিত হয়। গোটা শরীর অনুভূতির জোয়ারে ভাসতে থাকে। ইভান তনুজার চোখে চোখ রেখে হাস্কি স্বরে বলল,

-” ভ’য় পেয়ো না। আমি তোমার ঘুমের সুযোগ নেইনি। আপাতত আমার ইচ্ছে তোমাকে টাইটলি জড়িয়ে প্রশান্তির সহিত ঘুমানো।”

এই বলে ইভান তনুজাকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরল। ফের মুচকি হেসে বলল,

-” এটাই করেছিলাম। মাঝখানে তুমি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে। এখন গুড গার্লের মত, ঘুমিয়ে পড়। আর আমাকেও ঘুমাতে দাও। আ’ম টায়ার্ড।”

তনুজা ইতস্তত গলায় আওড়ালো,

-” আপনি ঘুমান। আমি উঠব। সকাল হয়ে গিয়েছে, না উঠলে দেরি হয়ে যাবে।”

ইভানের কানে মনেহয় কথাটা ঢুকেনি। ইভানকে নির্লিপ্ত, নির্বিকার দেখে তনুজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

-” ইভান ছাড়ুন। এখন ঘুমালে দেরি হয়ে যাবে। কিচেনে যেতে হবে তো। ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে হবে।”

-” বাড়িতে বুয়া আছে, আরো লোক আছে। তোমাকে অত ভাবতে হবে না। একদিন দেরি করে উঠলে ব্যাপার না। আমি ভীষণ ক্লান্ত। ডিস্টার্ব করো না, ঘুমাতে দাও।”

-” আশ্চর্য! আপনি ঘুমান। আম__”

কথাটা সম্পুর্ন করার আগেই লম্বা একটা দাঁড়ি টেনে দেয় ইভান। তনুজার গলায় মুখ ডুবায়। গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,

-” তুমি কী চাইছো, না হওয়া বাসরটা আজ সারি? অনবরত কথা বলে আমাকে উস্কে দিচ্ছো। শেষমেষ দূর্ঘটনা ঘটলে, আমাকে দায়ী করে বসো না কিন্তু।”

ইভানের স্পর্শ তারপর লাগামহীন এহেন কথা শুনে তনুজা মূর্ছা যাওয়ার ন্যায় হয়। লজ্জায় ভেতরে ভেতরে নুইয়ে পরে। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে চুপচাপ চোখদুটো বুজে নিলো। ইভান হাতের বাঁধন শক্ত করে তনুজার গলায় মুখ গুঁজে অস্ফুট স্বরে বলল,

-” তুমি পাশে থাকলে আমি অনুভব করি এক আকাশ শান্তি। নিমিষেই দূর হয়ে যায় আমার সকল অবসাদ আর ক্লান্তি! আমার প্রশান্তি, আমার অর্ধাঙ্গিনী।”

#চলবে