#প্রণয়ের_বাঁধন |৩৩|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত
একটি কর্মচঞ্চল দিনের পরেই আগমন ঘটে সুন্দর বিকেলের। সূর্যের নরম সোনালী রোদ্দুরে বিকেলের মাধুর্য কয়েকগুণ বাড়ে। দিন শেষে বিকেলের এই সময়টুকু আমজনতার কাছে অনেক প্রিয়। পার্কে পার্কে দেখা যায় শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সী ছেলেমেয়েদের, সাথে বুড়ো-বুড়িদের গল্পের আসর। একসাথে তিনটা মেয়ে আর একটা ছেলে হেঁটে আসছে আর উচ্চস্বরে কিছু বলছে তো আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। খোলা আকাশের নিচে, মুক্ত যায়গায় হাসির শব্দ পাখিদের কলতানের মতো বাতাসে মিশে চারদিকে সুর তুলে ছড়িয়ে পরে। পার্কের পুকুরের সাইডে শান বাঁধানো বসার জায়গায় নিতি আর ওর ফ্রেন্ডরা বসতে নেয়। এমন সময় বিশালাকার গাছটির মগডালে বসা একটি কাক পটি করে। কপাল ভালো থাকায় অল্পের থেকে নিতি বেচারি বড় বাঁচা বেঁচে যায়। আর এক ইঞ্চি এমন-তেমন হলেই সোজা পড়ত নিতির মাথায়। শ্যাম্পু করা ঘ্রাণ ছড়ানো চুলগুলো মূহুর্তেই নোং/রা হতো। এটা ভাবতেই নিতি শিউরে উঠল। একলাফে দু’কদম পিছিয়ে গেল। বন্ধুরা নিতিকে নিয়ে একদফা মজা লুটতে ভুলেনি। বন্ধুদের উচ্চস্বরে হাসির শব্দে নিতি রাগান্বিত মুখবিবরে চাইল। চেঁচিয়ে উঠল,
-” অ্যাই হা/রা/মির দল। মাথার উপর পটি পড়েনি তাই এমন মজা নিচ্ছিস, যদি হতো তাহলে কীনা কী করতিস? ইয়া আল্লাহ! রক্ষা করেছো। বড়সড় বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম।”
থেমে ফ্রেন্ডদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে ফের বলল,
-” কোথায় আমার সাথে সাথে দুই হাত তুলে শুকরিয়া জানাবি। তা না এরা কী না হে হে করে হাসছে। যত্তসব!”
নিতির কাঁধে একহাত রেখে অন্যহাতে পেট চেপে হাসতে হাসতে রিয়া বলল,
-” স-স্যরি দোস্ত।”
নিতি এক ঝটকায় কাঁধ থেকে রিয়ার হাতটা নামিয়ে চোখ গরম করে চাইল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” বে’ক্কে’লের মতো হাসি বাদ দে। আর চল ওদিকে গিয়ে বসি। আমি আর এখানে কোনো গাছের তলায়-টলায় থাকছি না ভাই।”
তুষার বলল,
-” নিতি এই জায়গাটা কিন্তু নিরিবিলি ছিলো। এদিকে ভিড়ও একটু কমই। কী সুন্দর পুকুরের স্বচ্ছ টলটলে পানি! তারপর সুন্দর হিমেল হাওয়া বইছে! এক কথায়…”
কথার মাঝেই দাঁড়ি টেনে দেয় নিতি। দুই হাত তুলে স্যারেন্ডার করার ভঙিতে বলে,
-” ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়। আমি আর এক সেকেন্ডও এখানে নেই ভাই। তোরা থাক। পুকুরের স্বচ্ছ জল আয়না বানিয়ে তোদের থোবড়াখানা দেখ। আমি গেলাম।”
নিতির বলতে দেরি তবে পা চালাতে সময় নেয় না। শেষ কথাটা বলতে বলতে হনহনিয়ে হাঁটা ধরে। ফ্রেন্ডরা একসাথে ডেকে ওঠে,
-” অ্যাই নিতি? চলে যাচ্ছিস নাকি?”
উপরে কংক্রিটের তৈরি ছাতার মতো ছাউনী। মাঝে একটা গোল টেবিল চারপাশে চেয়ার। সেখানে এসে ধপ করে বসে নিতি। পরপর বাকি সবাইও এসে বসে পরে। তুষারের হাতে থাকা বক্সটা টেবিলে নামায়। রিয়া হঠাৎ প্রশ্ন করল,
-” অ্যাই কি’প’টের রাজা জন্মদিনে ট্রিট দিতে রাজি হচ্ছিলি না কেনো? আগের বছরগুলোতেও তোকে অনেক করে বলেছি, এটাসেটা বলে পাশ কে’টে গিয়েছিস। এবার যখন সবাই মিলে ধরলাম কূলকিনারা না পেয়ে মাইনকাচিপায় পরে রাজি হলি।”
তুষার মশা তাড়ানোর ভঙি করে একহাত কানের পাশে নাড়িয়ে বলল,
-” আরে এসব জন্মদিন-টন্মদিনের কালচার আমাদের ফ্যামেলিতে তেমন করা হয় না। ছোটবোন বায়না করলেও আমার গিন্নী তো ক্ষেপে ওঠে। তোদের ট্রিট দেওয়ার জন্য মায়ের থেকে টাকা চাইতেই তিনি শুনে তো কথা শুনিয়ে দিলেন। বুড়ো বয়সে আবার জন্মদিন কীসের? যেদিন জন্ম নেয়, ঐদিনই তো হয় জন্মদিন। এখন এত্ত বড় দামড়া ছেলে নাকি কেক-ফেক কিনে রঙ তামাশা করবে। মুখের উপর এমন কথা শুনে মেজাজ খা’রা’প হয়েছিলো।”
নিতি কপাল কুঁচকে বলল,
-” তোর দাদি?”
-” হুম।”
-” আমার নানু আপুর অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন নাকি! কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে।”
রিয়া বক্সের উপরের বাঁধন দুই হাতের সাহায্যে খুলে একটা মাঝারি সাইজের চকলেট কেক বের করে। তারপর ক্যান্ডেলগুলো সাজিয়ে দেয়।
দিব্যর এক ফ্রেন্ড প্রজেক্টে ভালো একটা জব পেয়েছে। সেই খুশিতে বন্ধুদেরকে চা-নাস্তা খাওয়াবে। এরা এই দিকেই ছিলো আড্ডা দিচ্ছিলো। এরমধ্যে একজন বলে সামনের পার্কের ভেতর ভালো একটা ক্যাফেটেরিয়া আছে চল ওখানে গিয়ে নাস্তা করি। যেমন বলা তেমন কাজ। বন্ধুদের সাথে আসতে নিয়ে হঠাৎ দিব্যর দৃষ্টি আটকায় নিতির দিকে। নিতি গ্যাস লাইটার অন করে একএক করে ক্যান্ডেল জ্বা’লি’য়ে দিচ্ছে। নিতি দাঁড়িয়ে টেবিলের দিকে ঝুঁকে কাজটি করছে। ওর খোলা চুল পাশের চেয়ারে বসা ছেলেটির মুখের উপর পড়েছে। এটা দেখে কেনো জানি দিব্যর হাতের আঙুল আপনাআপনি মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ হয়। কার উপর রাগটা হচ্ছে? কী জন্য হচ্ছে? দিব্যর রাগি সত্ত্বা তা জানে না। তবে না চাইতেও চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে।
ওদের থেকে সামান্য দূরত্বে থাকা বসবার জায়গায় দিব্যরা বসে। একজন ক্যাফেটেরিয়ার ভেতর ঢুকে অর্ডার দিতে। দিব্য চেয়ারে বসে আড়চোখে বারবার ওদিকে চাইছে। রিয়া ফিসফিসিয়ে বলল,
-” যেই এখানে মেয়ে দেখেছে আর অমনি পিছুপিছু ঘুরঘুর করতে বসে পড়েছে। লুজাররা!”
নিতি কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে শুধায়,
-” মানে? কাকে কী বলছিস? বুঝতে পারছি না।”
কণ্ঠ একদম খাদে নামিয়ে বলল,
-” আরে দেখ না। ঐযে কয়েকটা ছেলে পাশের টেবিলে বসেছে। আমি তো ভ’য়ে আছি ব্যাড টোন আবার না দেয়। মেয়ে দেখলেই তো..”
কথার মাঝেই তুষার ভাব নিয়ে শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে বলল,
-” আরে ভ’য় পাচ্ছিস কেনো? আমি আছি না। আমি থাকতে নো চিন্তা, ডু ফুর্তি। চিল কর আজেবাজে কিছু বললেই একেকটার চৌদ্দ গুষ্টির নাম ভুলিয়ে দিবো।”
রিয়া ভেংচি কে’টে বলল,
-” আরে গায়ে এক মুরগির বল নেই, আর ভাব নিচ্ছিস সিংহের মতো। খালি বাঁশের মতো লম্বা একটা দেহই তোর। ছাঁটাই করলে দু কিলো গোশত পাওয়া যাবে কীনা সন্দেহ!”
রোগা-পাতলা শরীরটাকে নিয়ে মুখের উপর ঠাসঠাস এরুপ বলায় বেচারার মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে যায়। নিতি আর অন্য বান্ধবী ঠোঁট চেপে হাসে। রিয়া আরো বলে,
-” আর অ্যাই নিতি আর স্মৃতি তোরা কিছু বল। মনে নেই সে বছর কলেজে র্যাগিং এর স্বীকার হয়েছিলাম। আমাদের থেকে বেশি ভ’য় তো এই ব্যাম্বু তুষার পেয়েছিলো। ইয়া আল্লাহ! সে কী থরথরিয়ে কাঁপা। আরেকটু হলে তো প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলতো। ভাগ্যিস স্যার চলে আসে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা আর ঘটে না।”
নিতি একহাতে মুখ চেপে হাসতে থাকে। তুষার রিয়ার দিকে চোখ পাকিয়ে চায়। এদিকে হাসির রোল পড়েছে। অন্যদিকে কেমন পো’ড়া পো’ড়া গন্ধ ভুরভুর করছে। কখন যেনো ধপ করে ধোঁয়া বেরুতে পারে। হঠাৎ পাশের টেবিলে নজর দিতেই নিতির চোখ গিয়ে পরে সর্ব প্রথম দিব্যর দিকে। দিব্যও ফের চায়। দু’জনের চোখে চোখ পরে। দিব্য দু সেকেন্ড সময় ব্যয় না করে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। নিতিও নজর সরিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মশগুল হয়। নিতির ডোন্ট কেয়ার ভাবে দিব্যর রাগ তরতরিয়ে বাড়ে। কোকোকলার ক্যানের মুখ খুলে ঢকঢক করে অর্ধেক শেষ করে শব্দ করে টেবিলে নামায় দিব্য।
ওদিকে কেক কে’টে ওরা খেতে থাকে। সাথে একে অপরের মুখে মাখাতেও থাকে। দিব্যর ফ্রেন্ডরা এটাসেটা কথায় মশগুল থাকলেও দিব্য চুপচাপ। নিতির মুখে কেক লেগে থাকায় কেমন যেনো চুলকাতে থাকে। নিতি ওয়েট টিস্যু বের করে মুছতে মুছতে বলল,
-” ধ্যাত! রিয়া তোকে বললাম মুখে দিস না ভাই। কেমন তেলতেলে লাগছে। চুলকাচ্ছে।”
থেমে আরো বলে,
-” দ্যাখ তো মুখে আরো আছে কিনা। মুখের এই হাল করে বাসায় ফিরলে আমার মান্ধাতার আমলের নানুআপু এক পাও ভিতরে ঢুকতে দিবে না।”
তুষার নিজের ফোনটা একহাতে নিতির সামনে ধরে বলে,
-” ওয়েট। তাড়াহুড়ো করিস না। এবার দেখে ধীরে ধীরে পরিষ্কার কর।”
ওদিকে এহেন দৃশ্য আর আবছা কথা কর্ণপাত হতেই দিব্যর রাগ আকাশ ছুঁলো। দপ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাতের ক্যানটা নিচে ফেলে পা দিয়ে সজোড়ে লা’থি মা’রে। ক্যানটা গিয়ে সোজা নিতিদের টেবিলে পরে। এটা দেখে দিব্যর ফ্রেন্ডরা ভড়কায়, আতংকিত হয়। নিতি কপাল গুটিয়ে চাইল। রিয়া রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
-” দেখেছিস তো কী ফা’জি’লের দল। তখন বললাম না। এখনই অ’সভ্য’তামি শুরু করে দিলো। তবে চল কিছু বলে আসি। চুপ থাকলে মাথায় উঠে ধে ধে করে নাচবে। সুযোগ পাবে।”
কথাটা শেষ করেই চেয়ার ছেড়ে ওঠে গটগট পা ফেলে এগোয় রিয়া। পিছুপিছু নিতি আর বাকিরা আসে। রিয়া একহাত কোমড়ে রেখে অন্যহাতের আঙুল তুলে বলল,
-” এটা কী ধরণের অ’সভ্য’তামি? ভেতরে কোনো ম্যা..”
কথার মাঝেই দিব্যর এক ফ্রেন্ড বলল,
-” স্যরি আপু স্যরি। আসলে ও খেয়াল করেনি।”
দিব্য নিজ বন্ধুর দিকে রাগি দৃষ্টিতে চায়। এত সাফাই কেনো দিতে হবে! দিব্যর মাঝে ছিটেফোঁটা অনুশোচনার লেশ মাত্রও দেখা যাচ্ছে না। পাশের ছেলেটির কথায় রিয়ার রাগ খানিকটা পড়লেও দিব্যর নির্লিপ্ত নির্বিকার ভাব দেখে বলল,
-” আপনি কেনো স্যরি বলছেন। কাজটি করেছে উনি। তাই ওনাকে স্যরি বলতে হবে।”
দিব্য মুখ খুলবে তন্মধ্যে আগেভাগে নিতি তড়িৎ বলল,
-” অ্যাই রিয়া বাদ দে না। ”
নিতির কথা শুনে দিব্যর ফ্রেন্ড নিতির দিকে চাইল। মস্তিষ্কে প্রেশার দিয়ে কিছু মনে করল। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলল। সেদিন কাজী অফিসে সাক্ষী ছিলো এরা। মূহুর্তেই আবছা অবয়ব স্পষ্ট হয়। হ্যা এটাই তো দিব্যর কাজিন প্লাস বউ। এটা মনেমনে বলেই তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,
-” দোস্ত এইটা ভা..”
নিতির কথায় এর কথা অসম্পূর্ণ রয়। নিতি বলল,
-” উনি আমার পরিচিত বাদ দে।”
রিয়া, স্মৃতি একসাথে বলল,
-” পরিচিত!”
-” হ্যাঁ। আমার কাজিন।”
দিব্যর বন্ধুরা খুকখুক করে কেশে উঠল। তড়াক করে দিব্যর মেজাজ তীব্র চটল। দিব্যর অবচেতন মন অন্য পরিচয়টা আশা করেছিলো হয়তো। তাই তো কাজিন পরিচয়টায় রাগ বাড়ল। নিতির দিকে নিটোল চাহনিতে একপল চেয়ে হনহনিয়ে হাঁটা ধরে দিব্য। স্মৃতি এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-” তোর কাজিন কিন্তু দেখতে মাশাআল্লাহ হেব্বি সুন্দর! একদম হ্যান্ডসামের ডিব্বা। কী রাগি লুক মাইরি! আমি তো এক পলকেই ফিদা।”
একহাতে চুলগুলো পিছনে বাতাসে উড়িয়ে দিতে দিতে নিতি বলে,
-” একদম ওদিকে নজর দিবি না। ওটা অলরেডি বুকড।”
মূহুর্তেই স্মৃতির মুখের হাসি কর্পূরের মতো উবে যায়। মুখটা ম্লান হয়। ঠোঁট উল্টে বলল,
-” সত্যি?”
নিতি মাথা নাড়িয়ে বলল,
-” হুম।”
নিতি হঠাৎ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। বন্ধুদেরকে তার বিয়ের কথা বলে। এরা সব কটা সপ্তম আকাশ থেকে সোজা জমিনে পড়ার মতো বিস্মিত হয়। একসাথে উচ্চস্বরে বলে উঠল,
-” সত্যিই ওটা তোর বর! তুই ঐ রাগি হ্যান্ডসামের বউ?”
নিতি মুচকি হেসে ভাব নিয়ে বলল,
-” হুম সত্যি সত্যি তিন সত্যি। রাগি মহারাজের ঘাড়ত্যাড়া বউ আমি।”
_________
কয়েকদিন পর…
ঘড়ির কাঁটা রাত একটার ঘর ছুঁইছুঁই। নিতি মেসেজে কথা বলছে। মেসেজের টুং টুং শব্দ দিব্যর কানে পৌঁছাতেই শরীরের শিরা-উপশিরায় র/ক্ত টগবগ টগবগ করছে। যখন শুনেছে নিতি তুষারের সাথে চ্যাট করছে তখন থেকেই মেসেজ নোটিফিকেশনের শব্দটা গায়ে কা’টা’র মতো ফুটছে। মনে হচ্ছে মৌমাছি হুল ফোটাচ্ছে। দিব্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” ফোনটা সাইলেন্ট করে যত গল্প করার কর। এরকম
টুং টং শব্দে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। ঘুমাতে পারছি না।”
নিতি এককান দিয়ে কথাটা ঢুকিয়ে অন্যকান দিয়ে বের করে দেয়। গায়েই মাখে না। ওর মতো চ্যাট করছে। এরকম বেশ কিছুক্ষণ চলতে চলতে দিব্য নিতির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে। নিতি উঠে বসে অসহায় চোখে ফোনের দিকে চাইল। মাথায় একহাত রেখে আফসোস করে বলল,
-” ইয়া মাবুদ! আমার সাধের ফোনটার কী হাল করলে?”
দিব্যর সোজাসাপ্টা উত্তর,
-” এবার চ্যাটিং কর। তখন থেকে বলছি কথা তোর কানেই ঢুকছিলো না তো।”
নিতির রাগ হলো। বলে উঠল,
-” ইশশ্! এই ফোনটা আমার পাপা আমার তেইশতম বার্থডে তে গিফট করেছিলো। এটা আমার কাছে কতটা স্পেশাল ছিলো তোমার কোনো ধারণা আছে?”
থেমে ফোঁসফোঁস নিঃশ্বাস ফেলে হুমকি দিয়ে বলল,
-” দাঁড়াও তোমার ফোনের কী অবস্থা করি দ্যাখো।”
এই বলে ঝট করে বালিশের পাশ থেকে দিব্যর ফোনটা হাতে তুলে নেয়। দিব্য তড়িৎ গতিতে উঠে বসে নিতির হাতটা ধরে ফেলে। বলে,
-” নিতি রাখ আমার ফোন। রাখ বলছি। নইলে খারাপ হবে কিন্তু!”
দিব্যর হাতটা অন্যহাতের সাহায্যে ছড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে নিতি। শক্তিতে না পেরে দুষ্টু বুদ্ধি আঁটে। ভাবার সাথে সাথেই নিতি চিমটি কা’টে দিব্যর হাতে। দিব্য কপাল কুঁচকে হাত সরিয়ে নিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। নিতি হাতটা উঁচুতে তুলে ফেলে দিবে বলে। এমন সময় দিব্যও নিতির দিকে সরে হাত বাড়ায়। আচমকা দু’জনে এদিক সেদিক ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে দিব্য নিতির গায়ের উপর পরে। পরপর দিব্য নিতির একটা হাত নিজের হাত দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে। নিতি শুকনো ঢোক গিলে অসহায় চোখে চায়। দিব্য অন্যহাত দিয়ে নিতির হাত থেকে ফোন খুব সহজেই কেড়ে নেয়। পরপর ফোনটা বালিশের কাছে ছুঁ’ড়ে নিতির মুক্ত হাতটাও বিছানার সাথে চেপে ধরে। কপালে গাঢ় ভাঁজ ফেলে নিতির দিকে ঝুঁকে। শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-” তোর সমস্যা টা’কি বলতো?”
নিতি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-” ক-কীসের সমস্যা?”
দিব্য আরেকটু নিতির দিকে ঝুঁকে। কপালের ভাঁজ মিলিয়ে নেয়। শান্ত শীতল চোখে চেয়ে বলল,
-” বিয়ে করার জন্য তো উঠে পড়ে লেগেছিলি। আচ্ছা এবার বল তো সেদিন বন্ধুদের সামনে শুধু কাজিন কেনো বললি? আর ইদানিং তোর হাবভাব আমার মোটেই সুবিধার ঠেকছে না। ইচ্ছে করে আমাকে রাগিয়ে দিস। আর সবার সামনে আমাকে খারাপ প্রমাণ করিস।”
নিতির শ্বাস প্রশ্বাস ক্রমশ বাড়ছে। দিব্যর নিঃশ্বাস মুখের উপর এসে পড়ছে। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিতি উত্তর না দিয়ে মিহি স্বরে বলল,
-” ছাড়ো। আমার লাগছে তো।”
দিব্য ডান ভ্রু উঁচিয়ে ব্যঙ্গ করে বলল,
-” বিয়ে করার জন্য যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছিলি। তারপর সু-ই-সা-ই-ডের হুমকি-ধামকি সব দেখেশুনে আমি তো ভেবেছিলাম অ’ন্ধের মতো ভালোবাসিস। একেবারে ভালোবেসে অন্ধ হয়ে গিয়েছিস তাই ম’র’তে গিয়েছিস।”
নিতি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
-” মাথা খা’রাপ হয়েছে আমার।”
-” তোর মাথা নতুন করে খারাপ হবে কী? কোনো সময় ভালো ছিলো? আমার জানামতে তো ছিলো না।”
নিতি ভেংচি কাটল। ওর মতো বলল,
-” কথা না বাড়িয়ে আসল কথায় আসি; আমার বয়েই গিয়েছে ভালোবেসে অ’ন্ধ হতে। আমি অন্ধ হই আর তুমি সুযোগ লুফে নাও।”
দিব্যর কপালে সুক্ষ্ম রেখার উদয় হয়। বিস্ময়ে কৌতুহলী গলায় প্রশ্ন করল,
-” সুযোগ নেই মানে?”
-” ভালোবেসে অ’ন্ধ হই। আর তুমি সেই অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে আমার হাতে একটা বাটি তুলে দাও ভি-ক্ষা করতে। বেকার মানুষ তুমি তোমায় নিয়ে বিশ্বাস নেই এমনটা করতেও পারো। মনে তো ভালোবাসা-টালোবাসা এক আনাও নেই। তাই বউ দিয়ে ভি’ক্ষা করাতে দুদুবার ভাববে না।”
#চলবে
#প্রণয়ের_বাঁধন |৩৪|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত
সময়ের বাঁধনহারা স্রোতে, দিন- রাত্রির আবর্তনে চোখের পলকে কে’টেছে অনেকগুলো দিন। উল্টেছে বর্ষপঞ্জিকার পাতা। এসেছে নতুন মাস, নতুন ঋতু। শীতের রিক্ততা,শুষ্কতা পেরিয়ে আগমন ঘটেছে বসন্তের। কোকিলের সুমধুর কুহুকুহু কলরব। ফুলের মনমাতানো সুবাস। প্রকৃতির সাথে নব রুপে মানব হৃদয়েও জাগে এক অন্যরকম শিহরণ। এসকল কিছুই ঋতুরাজ বসন্তের আয়োজন। এমনই মনমাতানো ফাগুনে সেজে ওঠেছে গোটা মির্জা বাড়ি। জাঁকজমকপূর্ণ আভিজাত্যের ছোঁয়া বাড়িটির কোণায় কোণায়। পুরো বাড়ি ঝলমল করছে কৃত্রিম আলোয়। হরেক রঙের বাহারি মরিচ বাতির আলোয় নজর কাড়ছে মেইন ফটক। আভিজাত্য পূর্ণ লোকজনে গমগম করছে চারিদিক। সাঁঝের পর থেকেই বাড়ছে লোকসমাগম।
অনাকাঙ্খিতভাবে হুট করেই বাড়ির দুই ছেলের বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানাদি তো দূর আত্বীয়-স্বজনকে জানানোর সময় অবধি মেলেনি। আত্বীয়-স্বজন তারপর সোসাইটি,অফিসসহ পরিচিত লোকজন শাহারিয়ার সাহেবকে খুব বলতো,
-‘মির্জা বাড়ির দুই-দুইটা ছেলের বিয়ে হলো। একটার বেলায়ও দাওয়াত পেলাম না। এখনো পুত্র বধূ দেখালেন না।’
লোকজনের বলা তারপর নুরজাহানেরও খুব শখ ছিলো অনুষ্ঠান করে লোকজনকে খাওয়ানো। বিভিন্ন ব্যস্ততা,ঝামেলায় সময় হয়ে ওঠেনি। ওদিকে তামান্নাও ঢের দিন মেয়েসহ বাড়ির সবার সাথে ঠিকমতো কথা বলতো না। সময়ের সাথে সাথে ইদানিং সেও অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। বাড়ির সদস্যদের সকলের সম্মতিক্রমে আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজগোজে ব্যস্ত নিতি। সাজতে এতটা বিভোর যে আশপাশে তাকানোর ফুরসত নেই তার। তন্মধ্যে কক্ষে দিব্যর প্রবেশ ঘটে। নিচে ফ্রেন্ডদের সাথে ছিলো দিব্য। হঠাৎ প্রয়োজনে ফোনের তালাশ করতেই পকেট হাতড়ে মেলেনি ফোন। আচানক মনে ওঠে রেডি হয়ে ফোন বিছানায় রেখেই চলে আসা হয়েছে তো। বিছানার একপাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলতে তুলতে আড়চোখে নিতির দিকে তাকায় দিব্য। পরনে গোল্ডেন কালারের গর্জিয়াস ভারী শাড়ি। শাড়িতেই মানায় বাঙালি নারী। এই কথাটার জলজ্যান্ত প্রমাণ দিচ্ছে সামনের শাড়ি পরিহিতা রমণী। ফর্সা,লম্বা, ছিমছিমে শরীরে শাড়িটা দারুণ মানিয়েছে। সাথে মানানসই গহনা আর কৃত্রিম প্রসাধনীর ছোঁয়ায় নিতিকে একদম অপ্সরা লাগছে। রুপকথার রাজ্যের ডানা কা’টা পরীর মতন লাগছে নিতিকে। দিব্যর চোখের পলক পরতে ভুলে যায়। আজকের নিতিকে দিব্যর কাছে অন্যরকম ঠেকছে।
একএক করে চুড়ি গুলো পরে আয়নার সামনে হাতটা ধরে নিতি। পরপর মুখে আলতো হাসি ফোটে মেয়েটার। গোলগাল চিকনা হাতে চুড়ি গুলো খারাপ লাগছে না। নিতি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের আপাদমস্তক দেখতে থাকে। ঠোঁটজোড়া এক করে কিঞ্চিৎ চোখা করে আয়নার দিকে দৃষ্টি তাক করে কপাল গুছিয়ে ফেলে। মনে হচ্ছে লিপিস্টিক লাগানো কম হয়েছে। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে লাল-খয়েরি লিপিস্টিকটা হাতে তুলে নেয়। পরপর ঘষে ঠোঁটে গাঢ় রঙ করে। অতঃপর এপাশে ওপাশে দুলে শাড়িটা কেমন মানিয়েছে দেখতে নেয়। বাম দিকে ঘাড় কাত করতেই ভূ’ত দেখার মত চমকে ওঠে নিতি। মনে মনেই এক দফা বুকে থুতু ছিটিয়ে নেয়। কণ্ঠে অবাকতা নিয়ে প্রশ্ন ছুঁ’ড়’ল,
-” এমা..তুমি! তুমি কখন রুমে আসলে? আর এভাবে তাকিয়ে আছো যে?”
নিতির কথায় সম্বিৎ ফেরে দিব্যর। তড়িৎ গতিতে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। ঘনঘন চোখের পলক দু’বার ফেলে। হাতের ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে পুড়তে পুড়তে জবাবে বলে,
-” ফোন নিতে আসছিলাম।”
একহাত বুকের উপর রেখে ঠোঁট গোল করে বুকের উপর ফু দেয় নিতি। বলে,
-” উফ্ফ! ভ’য় পেয়ে দিয়েছিলে। আমি তো তোমাকে অন্যকিছু ভেবেছিলাম।”
দিব্যর কপালে সুক্ষ্ম রেখার সৃষ্টি হয়। ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত করে জিজ্ঞাসা করল,
-” অন্যকিছু মানে?”
কয়েক কদম এগোয় নিতি। চোখেমুখে ভয়ার্তের ছাপ টেনে আনে। সতর্ক চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
-” আরে শুনেছিলাম, সুন্দরী মেয়েদের উপর জীনে আছড় করে। সেই জীন আবার কারো রুপ ধরে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিজেই নিজেকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছিলাম। কখন চো’রের মতো চুপিচুপি রুমে ঢুকেছো কিছুই তো জানি না। তাই ভাবলাম তোমার রুপ ধরে কোন জীন আসেনি তো। শেষমেষ তোমার রুপ নিয়েই আমার ঘাড়ে চাপ..”
-” স্টুপিট কোথাকার! তোর ননস্টপ ব’ক’ব’কানি বন্ধ কর।”
দিব্যর ধ’ম’কে নিতির একনাগাড়ে বলা কথা থেমে যায়। এই মেয়ে একবার ভূ’ত বানাচ্ছে তো আরেকবার চো’র। দিব্য কটমট চোখে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফের বলল,
-” নিজের রুমে নিজে প্রবেশ করতে আমাকে কী ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে হবে? আর অলওয়েজ এমন ধরণের লজিকলেস আ’জ’গু’বি চিন্তা ভাবনা একজনের মাথায় কী করে আসে! ও গড! আমি ভেবে পাই না।”
-” আরেহ আরে তুমি জানো না। নানুআপুর থেকে
কত ভয়ানক গল্প শুনেছি।”
দিব্য তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল। বলল,
-” তোর থেকে আমি সেসব আ’জা’ই’রা গল্প শুনতে চেয়েছি? বল চেয়েছি?”
নিতি সরু চোখে চেয়ে নিরুত্তর দাঁড়িয়ে রইল। দিব্য নিজেই প্রত্যুত্তর দেয়,
-” চাইনি.. চাইনি তো। তাই দয়া করে মুখটা বন্ধ রাখ। তুই অযথা এত ব’ক’ব’ক করিস যে আমার ইচ্ছে করে তোর ঠোঁটে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে।”
নিতির রাগ হলো। মনের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হয়। হাসি-খুশি মুখটা ঝট করে ম্লান হয়ে যায়। অভিমানের পাল্লা ভারী হতে লাগলো। রাগ-ক্ষোভে গাল দু’টো টমেটোর মতো ফুলিয়ে হাঁটা ধরল। হিলে খটখট শব্দ তুলে হাঁটছে। পিঠজুড়ে থাকা খোলাচুল জোরে হাঁটার দরুণ তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ তুলেছে। যেতে যেতে ডান হাত দিয়ে পিঠ থেকে খোলা চুল কাঁধের উপর দিয়ে সামনে রাখে নিতি। নিতির যাওয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো দিব্য। কী এমন বলা হলো? তাতেই নিতি রেগে-মেগে একশা। ভাবনার মাঝেই আচানক দিব্যর দৃষ্টি নিতির পিঠের দিকে পড়তেই তড়াক পিছুন থেকে ডেকে উঠল,
-” অ্যাই নিতি, ওয়েট?”
নিতি পিছু ফিরে তাকায় না। শুনতে পায়নি এমন ভঙ্গিতে যেতে থাকে। দিব্য ডান হাতটা উঁচিয়ে ফের গলার স্বর চড়িয়ে ডাকল,
-” নিতি দাঁড়া। শোন?”
কে শোনে কথা! নিতি পণ করেছে কথা বলবে না। আজকের মতো এত সুন্দর দিনে! যেখানে বাড়ি ভর্তি মেহমানে। সবাই কত সুন্দর আনন্দ উচ্ছ্বাস, হৈহুল্লোড় করছে! এমন দিনেও খারসের মতো বিহেভ করলো। ধ’ম’কিয়ে কথা বলল। নিতির ছোট্ট সত্ত্বা এই ভেবে তীব্র অভিমানের জোয়ারে ডুব দেয়। কক্ষের দুয়ার পেরিয়ে করিডোরে কয়েক পা ফেলতেই অকস্মাৎ হাতে টান পরে নিতির। ঘাড় ফিরিয়ে কড়া চোখে চাইল নিতি। দিব্য পরোয়া করলো না সে চাহনী। আরেকটু শক্ত করে ধরল নিতির নরম তুলতুলে হাত। নিতি চোখমুখ শক্ত করে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায়। দিব্য উত্তর না দিয়ে হেঁচকা টানে নিতিকে রুমের দরজার ওপাশে নিয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ নিতির হাতটা ছেড়ে দেয়। এক আঙুলে কপাল চুলকিয়ে নিয়ে ঠান্ডা প্রগাঢ় স্বরে বলল,
-” লাল তিলটা দেখা যাচ্ছে।”
খোলা আকাশে তারকা যেমন জ্বলজ্বল করে , তেমনি ফর্সা পিঠে লাল তিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। দিব্যর কথাটা কর্ণকুহরে ঢুকতেই সেকেন্ডে মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে সাড়া জাগে। আপনাআপনি ডান হাতটা বাঁকিয়ে পিছনে পিঠের উপর নেয় নিতি। হাতটা পিঠে রাখতেই ধ্বক করে উঠে বুক।
-” এইরে কী করে খুলল হুক?” তড়াক উদয় হয় প্রশ্নের। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাথাটা নুইয়ে নেয় মেয়েটা। দিব্য একহাতে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করতে করতে চলে যেতে নেয়। নিতি দুইহাতের সাহায্যে ব্লাউজের হুক লাগানোর চেষ্টা করতে থাকে। পিছনে হুক হওয়ার জন্য নিতি লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছিলো। সমস্ত রাগ-ক্ষোভ গিয়ে নৃত্যর উপর বর্তায়। মনেমনে বকতে থাকে নৃত্যকে।
-” এই নৃত্যটাকে হাতের কাছে আগে পাই। ও ব্যাগার দিয়েছে আমায়। কীরকম করে লাগিয়ে দিয়েছে; যে এক ঘন্টা নাই হতে আপনাআপনি খুলে-টুলে একাকার। আরেকটু হলেই মানসম্মানের দফারফা হয়ে যেতো। ইয়া আল্লাহ! বাঁচিয়েছো।”
বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় নিতি। অতঃপর দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে বকের মতো গলা লম্বা করে করিডোরে নজর বুলায়। উদ্দেশ্য মাম্মা বা মামীর হেল্প নেওয়া। কিন্তু বিধিবাম! করিডোর ফাঁকা। সবাই নিচে হয়তো। নিতির এবার রাগে দুঃখে প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। সবাই রেডি হয়ে নিচে গিয়ে আনন্দ করছে। আর সাজগোজ করতে করতে নিজেই পিছিয়ে পরেছে। তার উপর এখন উটকো ঝামেলা। দরজা থেকে দু’পা বাইরে এসে এদিক-ওদিক তাকাতে নজর পরে ফোন কানে চেপে দিব্য ওপাশ থেকে আসছে। নিতি উপায়ান্তর না দেখে দিব্যকে ডেকে বলল,
-” মাম্মাকে বা মামীকে একবার ডেকে দিবে প্লিজ। দরকার ছিলো।”
দিব্য কয়েক পা এগিয়ে ফোনটা হোল্ড করে জবাব দেয়,
-” ফুপি, মাম্মা নিচে। নিচে গেস্টদের আপ্যায়নে ব্যস্ত আছে। কেনো কী দরকার?”
নিতি শুকনো ঢোক গিলল। মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,
-” আমি একা পারছি না। হেল্প লাগবে।”
দিব্য বুঝতে পারে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
-” মাম্মা তো খুব ব্যস্ত, ফুপিও। আমি বরং নৃত্যকে ডেকে দিচ্ছি।”
-” এই না না। নৃত্য নয়। ও কোনো কাজেরই নয়। কাজ তো নয়, যেন ফ্রি সেবা দেয়। যার ফলাফল ভয়াবহ। আচ্ছা তুমি এক কাজ করো ভাবিমণি বোধহয় উপরেই আছে। তাকেই ডেকে দাও। মাম্মা, মামী থাক। এই ছোট্ট একটা কাজের জন্য তুমি গিয়ে তাদের ডাকলে; বিষয়টা বাজে হবে। তখন সন্দেহ হবে তোমার আমার সম্পর্কটা আর সবার মতো নয়।”
নিতির কথায় লজিক আছে তাই দিব্য বাড়তি কথা বলল না। তনুজার বিষয়টা এড়িয়ে যেতে দিব্য আগ বাড়িয়ে বলল,
-” ওয়েট আমি হেল্প করছি।”
বিস্ময়ে নিতির চক্ষু চড়কগাছ। বিস্ময়ে ঠাসা নিতি উপরে স্বাভাবিক আবরণে নিজেকে আবৃত করে মাথা নাড়িয়ে -‘ঠিক আছে ‘ বোঝায়। পরপর দরজা থেকে দু’কদম ভেতরে প্রবেশ করে। দিব্য কল কে’টে ফোনটা পকেটে রাখে। উল্টোদিক পিঠ করে নিতি দিব্যর সামনে দাঁড়িয়ে। মেয়েটার দৃষ্টি জমিনে। পিঠের উপর থাকা চুলগুলো একহাতে সরাতে থাকে দিব্য। আচমকা দিব্যর হাতটা মৃদু কাঁপছে। ওদিকে উষ্ণ স্পর্শে নিতির কণ্ঠনালী শুকিয়ে চৈত্রের খরার ন্যায় চৌচির হয়। শ্যাম্পুর ঘ্রাণটা মাদকতার ন্যায় ঠেকছে। দিব্য দুই হাতের সাহায্যে হুকটা লাগিয়ে দিতে থাকে। দিব্যর নিঃশ্বাস স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ছে। বার দুয়েক ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়। কম্পিত হাতে কাজটা সম্পন্ন করে দিব্য। উন্মুক্ত ফর্সা পিঠ, মেয়েলি অবয়ব। দিব্যকে সম্মোহিত করে। সামনের রমণী চুম্বুকের ন্যায় আকর্ষণ করছে। পরপর নিতি ঘুরে দাঁড়ায়। দিব্যর দিকে তাকিয়ে অস্ফুটে বলে,
-” থ্যাংকস।”
দিব্যর চোখ-মন সবটাই নিজের সাথে বেইমানি করছে। চোখের পলক নিবদ্ধ হয়েছে নিতির মুখশ্রীতে। মনটা যেন কোথায় অজানায় ডুব দিয়েছে। মনের বাতায়নে নাম না জানা অনুভূতির স্রোত বইছে। কোনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে দিব্য। নিতির রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙানো আকর্ষণীয় ওষ্ঠজোড়া দিব্যকে বিমোহিত করেছে। বারবার বেপরোয়া অবাধ্য করে তুলতে চাইছে। দিব্যর ঘোর লাগা দৃষ্টি নিতির বুকের ভেতর সমুদ্রের ঢেউ তোলে। রীতিমত দুরুদুরু বুক কাঁপছে। নিতি দু’পা পিছায়, পিঠ গিয়ে দেওয়ালে ঠেকে। দিব্য দু’পা এগিয়ে একহাত নিতির কাঁধের উপর দিয়ে দেওয়ালে রাখে। অন্যহাতটা নিতির কোমড়ের কোল ঘেঁষে দেওয়ালে রাখে। বসন্তের প্রেমময় বাতাস রুমজুড়ে বইতে থাকে। এক টুকরো স্বর্গীয় সুখের অনুভুতির স্রোতে হারিয়ে গিয়েছে দিব্য। নিতির ঠোঁট দুটো গাছের কচি পাতার মতো তিরতিরিয়ে কাঁপছে। যা দিব্যকে বেশি উন্মাদ করছে। দিব্য যেন হুঁশে নেই। নিতি কম্পিত গলায় বলল,
-” স-সরো।”
দিব্যর কানে মনেহয় না কথাটা ঢুকেছে। দিব্য যেন কোন আকর্ষণ বলয়ের বেষ্টনীতে আবদ্ধ পড়েছে। সামনের শাড়ি পরিহিতা রমণী ক্ষণিকেই তাকে অস্থির করে তুলেছে। দিব্যর নয়নজোড়া সম্মোহিত হয়ে আছে নিতির দিকে। নিতির শ্বাস প্রশ্বাস ক্রমশ উঠানামা করছে। দিব্য মাথাটা নিতির মুখের দিকে নুইয়ে নেয়। দিব্যর খাঁড়া নাক নিতির নাক ছুঁইছুঁই। দিব্যর উষ্ণ নিঃশ্বাসে নিতির দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। মেয়েলি মিষ্টি গন্ধটা দিব্যকে বেসামাল করছে। আবেশে আবেশিত হয়ে দিব্য চোখদুটো বুঁজে নেয়। অতঃপর নিতির দিকে মুখটা এগিয়ে নেয়। নিতি শাড়ি মুঠো করে ধরে; অতঃপর দিব্যর হাতের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসে। ওদিকে মুখটা এগিয়ে নিতেই কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা ধাক্কা লাগে দিব্যর। অল্পের থেকে মুখটা গিয়ে দেওয়ালে ঠেকতে ঠেকতে নিজেকে সামলে নেয়। পরপর সম্বিৎ পেতেই হাতের আঙুল মুষ্টিবদ্ধ হয়। দিব্য দাঁত কিড়মিড় করে অস্ফুটে বলে,
-” ওহ্ শিট!শিট!”
নিতি বড়বড় শ্বাস টেনে নেয়। বুকের উপর একটা হাত রেখে বলল,
-” থ্যাংক গড! অল্পের থেকে লিপিস্টিকটা ন’ষ্ট হয়নি। আরেকটু হলেই এতক্ষণ ধরে করা সাজগোজ মাটি হচ্ছিলো।”
এমন মেয়ে কোন সিনেমা,গল্প-উপন্যাসেও দেখেনি দিব্য। এমনি সময় তো আনরোমান্টিক বলে খুঁচিয়ে বেড়ায়। আজ যখন কোনো একটা ঘোরের মধ্যে পরে কিস করতে.. সেখানে এই মেয়ের কাছে ঠোঁটের লিপস্টিকই আগে। নিতির কথা তারপর সবকিছু ঠাহর করতেই দিব্যর নিজের উপর নিজেরই চরম রাগ হয়। ভেতরে ভেতরে লজ্জায়ও পরে। নিতি সহসাই বলে উঠল,
-” বাব্বাহ! আজকাল দেখছি আবহাওয়ার মতো তোমার মুড চেঞ্জ হচ্ছে। চোখের পলকে..”
এতটুকু বলে জিভ কা’টে নিতি। দিব্য বেচারা অস্বস্তিতে পরে। মাথাটা কিঞ্চিৎ নিচু করে পিছুনের চুলে হাত বুলিয়ে লম্বা পা ফেলে বেড়িয়ে যায়। নিতির সামনে থেকে সরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দিব্য বেরিয়ে যেতেই নিতি মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তোলে। শাড়ির আঁচল আঙুলে পেচাতে পেচাতে ঠোঁট টিপে হাসে। বিড়বিড় করে বলে,
-” বলবো না আর ভালোবাসি। করবো না তো কভু জোর। মন থেকে যেদিন ভালোবাসবে, সেদিন আমায় পাবে।”
__________
তনুজা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুঁচি কেমন যেনো একটা উঠেছিলো। সেটা দেখার পর উবু হয়ে ঠিক করতে নিবে, এমন সময় ইভানের গলার স্বরে থেমে যায় তনুজা। দরজার নব ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকছিলো ইভান। তনুজাকে উবু হতে দেখে বলল,
-” এই তনুজা দাঁড়াও, আমি করে দিচ্ছি।”
তনুজা ঘাড় ঘুরিয়ে বিনিময় স্মিত হাসল। ইভানের পরনে সাদা পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির গলার কাছে গোল্ডেন কালারের রেশমি সুতার কারুকাজ খচিত। পাঞ্জাবির হাতা কনুই অবধি গোটানো। হাতে কালো হাতঘড়ি। সুঠাম দেহে আঁটসাঁট পাঞ্জাবিতে দারুণ আকর্ষণীয় লাগছে ইভানকে। তনুজা মুগ্ধ চোখে কিছুপল চেয়ে রইল। ইভান এগিয়ে তনুজার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ঠিক করে দেয়। অতঃপর জিজ্ঞেস করল,
-” ঠিক আছে।”
-” হুঁ।”
ছোট করে জবাব দেয় তনুজা। ইভান উঠে দাঁড়ায়। তনুজার আপাদমস্তকে নজর বুলায়। গোল্ডেন কালারের গর্জিয়াস শাড়ি। একসাথে দুইভাই আর তাদের বউয়ের জন্য সেইম পোশাক কেনা হয়। ইভান প্রশ্ন করলো,
-” তুমি রেডি। সব কিছু কমপ্লিট?”
তনুজা মাথা নাড়িয়ে বলল,
-” হ্যাঁ।”
-” দাড়াও কিছু বাকি আছে।”
এই বলে ইভান আলমারি খুলে একটা প্যাকেট বের করে। তনুজা বোকা বোকা চোখে চেয়ে থাকে। লাল বক্স থেকে একটা বিছা বের করে ইভান। ফের হাঁটু ভেঙে বসে। একহাতে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে তনুজার কোমড়ে পরিয়ে দিতে দিতে বলল,
-” সেদিন একসাথে সব গহনা কেনার সময়, এটা দেখে পছন্দ হয়। সবার মাঝে বলা হয়নি, ওরা সবাই ছিলো ছোটরা। তাই পরে আলাদা করে এটা নেই।”
তনুজা অবাক বনে যায়। তন্মধ্যে পেটে উষ্ণ স্পর্শে গোটা শরীর কেঁপে ওঠে তনুজার। সারা শরীর শিহরিত হয়। ইভান তনুজার পেটে ঠোঁট ছোঁয়ায়। পরপর পেটের উপর কানটা রেখে বলল,
-” হ্যালো বেবি! আজকের দিনটা তোমার পাপা-মাম্মাসহ গোটা মির্জা বাড়ির জন্য স্পেশাল। আর এই স্পেশাল দিনটা তোমার আগমনের জন্য আরো বেশি বেশি স্পেশাল করেছে আমার জন্য। তুমি জলদি চলে এসো তো। পাপা তোমার প্রতিক্ষায় দিনগুনছে। চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় আছে।”
পরপর আরো দু’টো চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়ায় ইভান। ইভানের পা’গ’লা’মি দেখে তনুজার ঠোঁটের কোণের হাসি চওড়া হয়। তনুজার প্রেগন্যান্সির তিনমাস চলছে। ইভানের কেয়ার তারপর বাড়ির সবার আদর-যত্নে তনুজা আবেগাপ্লুত। আনন্দের আতিশয্যে মাঝে মাঝে চোখ জল চলে আসে। আর অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করে সৃষ্টিকর্তার উপর।
সোফায় থাকা একটা ব্যাগ হাতে নেয় ইভান। ব্যাগ থেকে একটা রজনীগন্ধা ফুলের গাজরা বের করে। তনুজা ইভানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। ইভান উত্তর না দিয়ে সরাসরি তনুজার চুলের খোঁপায় এঁটে দেয়। তারপর একহাতে তনুজাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। চোখে কাজলের গাঢ় প্রলেপ, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপবাম মুখে হালকা প্রসাধনী। সাধারণ সাজেই তনুজাকে বেশি অসাধারণ লাগছে। ইভানের আঁখি জোড়া শীতলতায় ছেয়ে যায়। মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে আছে ইভানের। ঠোঁটের কোণের হাসি প্রশস্ত করে অস্ফুট স্বরে বলল,
-” মাশাআল্লাহ! কাজল কালো চোখে তোমাকে ভারী মিষ্টি আর স্নিগ্ধ লাগছে। মিসেস ইভানকে অনিন্দ্য সুন্দরী লাগছে। আমার চোখের পাতা নড়তে ভুলে যাচ্ছে। উচাটন মনটা নির্নিমেষ নিষ্পলক চেয়ে থাকতে চাইছে।”
তনুজা হেসে বলল,
-” জানি আপনি বাড়িয়ে বলছেন। একটু-আকটু নয় অনেক বেশিই বাড়িয়ে বলছেন। কারন আমি জানি, আমি দেখতে সুন্দরী নই।”
ইভান তীব্র প্রতিবাদ করে বলল,
-” ইউ রং। তুমি সম্পূর্ণ ভুল জানো। আমি মোটেই বাড়িয়ে বলছি না। ইভানের দু’চোখেতে তার বউ সবচেয়ে বেশি সুন্দরী। ইভানের কাছে ইভানের মিসেস বেস্ট।”
তনুজার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে কাছে এনে দূরত্ব ঘুচায় ইভান। তনুজার চোখে চেয়ে বলে,
-” সৌন্দর্য তো সময়ের সাথে সাথে মলিন হয়। কিন্তু ভালো মন, সততা তো আজীবন অমলিন রয়ে যায়।”
থেমে তনুজার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে,
-” এই পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী গিফট কী? জানো তুমি?”
তনুজা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। ইশারায় প্রশ্ন করে,
-” কী?”
তনুজার দিকে ঝুঁকে কপালে কপাল ঠেকায় ইভান। শান্ত শীতল গলায় বলল,
-” এই পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী গিফট হলো একজন উত্তম জীবন সঙ্গী। যা টাকা-পয়সা, ধনদৌলত, ঐশ্বর্য দিয়ে কেনা যায় না। ভাগ্য দিয়ে কিনতে হয়। আমার ভাগ্যকে আমি সুপ্রসন্ন মনেকরি, আমি তোমাকে পেয়েছি। তুমি আমার জীবন সঙ্গী। আমার অর্ধাঙ্গিনী।”
আবেগে আপ্লুত হয়ে তনুজার কাজলটানা মৃগ আঁখিজোড়া চিকচিক করে ওঠে। নিজেকে ওর ভাগ্যবতী মনে হয়।
____________
ইভান-তনুজা পাশাপাশি আবার দিব্য-নিতি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। গেস্টদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করছে। অদূরে দাঁড়ানো নুরজাহান নাতি আর তাদের বউদের পাশাপাশি দেখে মন ভরে দোয়া করলেন। বৃদ্ধার চোখ জুড়িয়ে আসে।
সোসাইটিতে কিছু আন্টি থাকে যাদের কাজই পরনিন্দা পরচর্চা করা। আর সব কিছুতেই একটা না একটা খুঁত ধরা। একসাথে তিনচারজন প্রৌঢ়া মহিলা দাঁড়িয়ে। তামান্নার সাথে কুশলাদি বিনিময় করছে। বিভিন্ন আলাপের এক ফাঁকে এক ভদ্রমহিলা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
-” বড় ছেলের বউটা আরেকটু ফর্সা হলে মানাতো। দু’জনেই শ্যাম বর্ণের। না জানি বাচ্চা কাচ্চা কেমন রঙের হয়। একজন ফর্সা থাকলে তাও ফর্সা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।”
আরেকজন ফোড়ন কাটলেন,
-” ছোট ছেলের পাশে আপনার মেয়েকে খুব মানিয়েছে আপা। খুব সুন্দর লাগছে দু’জনকে।”
নিজ মেয়ের প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ হয় তামান্না। যাক নিজের মেয়ে একধাপ হলেও এগিয়ে আছে, এই ঢের তামান্নার কাছে। মহিলাটি বলতে থাকে,
-” মির্জা বাড়ির ছোট ছেলের পাশে তার বউকে দারুণ মানিয়েছে! তবে বড় ছেলের পাশে তার বউকে তেমন মানায়নি।”
শিরিন খানিকটা দূরত্বেই ছিলো। কথাগুলো তার কানে পৌঁছায়। ভদ্রতার খাতিরে চুপ ছিলেন। তবে এবার ধৈর্য্যর বাঁধ হারা হয়ে এগিয়ে এসে মুখ খুললেন,
-” কাকে কার পাশে কেমন মানায় এটা জরুরী নয়। কে কার সাথে কতটা হ্যাপি এটাই জরুরী। শো অফের থেকে আসল তো মানসিক প্রশান্তি, সুখ, শান্তি।
#চলবে