প্রণয়ের মহাকাব্য পর্ব-০১

0
3

#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
#সূচনা_পর্ব

তোর বাপের সাহস হয় কিভাবে তামিম? আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার যত্নে রাখা ফুলকে অন্য কারো সামনে আনার? সে কি ভুলে গেলো তার কথা?

ফোনের অপর পাশে থাকা অগুন্তকের গমগমে সুরে একটু ভড়কে গেলো তামিম। হায় আল্লাহ এই ছেলে এই খবর পেলো কোথা থেকে? ঠিক এই ভয়ে ই ছিল তামিম ,,যদি প্রাণ প্রিয় বন্ধু টের পায় নিশ্চই কেলেংকারী একটা করবে ! হলো ও ঠিক তাই। একটু ঘাবড়ে গেলো তামিম,, মনে মনে কিছু শব্দ সাজিয়ে মুখ খোলার পূর্বে ই ওপাশ থেকে আবার ও হুংকার ছাড়লো অগুন্তক ,,

কি হলো কথা বলছিস না কেন ইডিয়েট? বল কোন সাহসে তোরা হিয়া কে পাত্র পক্ষের সামনে বসেয়েছিস?
তামিম শুকনো এক ঢোক গিলে এইবার মুখ খুলল
কৈফিয়ত দাওয়ার মত করে বললো,,

বিশ্বাস কর সামীহ হিয়া কে পাত্র পক্ষ দেখতে আসার বিষয়ে আমরা কেও জানতাম না ,,ফুপ্পি ও তো জানেন না আমাদের ভিতরের কথা গুলো হুট করে কথ্যেকে দুই জন মহিলাকে নিয়ে হাজির । এখন বাসায় মেহমান এলে কি ধাক্কা দিয়ে বের করে দাওয়া যায় তুই বল? আর তুই ভুল জেনেছিস হিয়া ওই ছেলের বাড়ীর সামনে আসেনি, আর না,,,,

তামিম কে পুরো কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে গম্ভীর সরে সমীহ বলল ,,

তোর বাবা কে বলে দিস কালকের মধ্যে আসছি আমি, টুটু শব্দ করে কেটে গেলো ফোন, অসহায় তামিম চেয়েই রইলো ফোনের দিক, একি ঝড় উঠলো তার জীবনে বাপ নাকি বন্ধু এখন সে যাবে তো যাবে কোন দিক ঘাড় ত্যাড়া দুই জনের মধ্যে তো সে অসহায় যাতাকলে পিষে মরবে, নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ছেলেটি এখন শুধু সামীহ শিকদার নামক ঘূর্ণিঝড়ের দেশের মাটিতে আসার অপেক্ষা,,
________________
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , দেশের মাটি! ইসসস কতগুলো দিনপর উহু কত গুলো বছর পর? প্রায় আট বছর ,বুকের বা পাশে থাকা মাংসপিন্ডটা যেনো কোনো প্রতিযোগিতায় নেমেছে,, খপ করে নিজের বুকে থাবা বসলো সামীহ , ধমকে উঠল যেনো, নিজেই নিজে আওরাল,, হুসসসসস এখনই এমন করিস না তার মুখ যে এখনও সামনে থেকে দেখা বাকি এখনই এমন করলে চলবে? নিজের পাগলামিতে নিজেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো ছেলেটি, এগিয়ে যায় পার্কিং এর দিক,এখন গন্তব্য তার শিকদার নিবাস,
__________
রাগে মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে মিসেস শাহানা শিকদারের, রাগ রীতিমতো সে রান্নাঘরের বাসনের উপর ঝাড়ছেন, সহজ সরল লক্ষী পুত্রবধূর এমন রাগের কোনো কারণ খুজে পেলেন না , জাহানার বেগম তাই এগিয়ে গেলেন রান্নাঘরের দিকে, উকি দিতেই দেখলেন পুত্রবধূ তার রেগে ব*ম নিজের মনে কি কি আওরাচ্ছেন আর ধুপধাপ কাজ করছে,,এগিয়ে গেলেন বৃদ্ধা কাঁধে হাত রেখে বলল,,কি হইছে শাহানা? আমার ঘরের লক্ষী আজ অমন রেগে ক্যান ?
-আমার আর রাগ মা ! আমি যে মানুষ সেই জ্ঞান কি আছে আপনার নাতি নাতনি আর আপনার ছেলের?
আপনার বড় নাতি তিনি তো বিদেশ বিভুরে বসে ভুলেই গেছে যে দেশে তার একটা মা আছে সে তার জন্য চিন্তা করতে পারে, নাহ না আছে তার মায়ের জন্য চিন্তা আর না আছে দুইদিন ধরে তার খবর,আপনার ছোটো নাতি,তিনি হলেন আরেক ঝড় সারা দিন সোহানার সাথে ঝগড়া করবে একটু আগেও সামান্য বিষয়ে মেয়েটাকে জ্বালিয়েছে,আর আপনার ছেলে তিনি তো সব নাটের গুরু তাদের বাপ প্রমাণ করা লাগবে না? তিনিও সেই যে মেডিকেল ক্যাম্পে গেলেন নয় দিন হয় বাড়ী ফেরার খবর নেই , কাজে গেছে ভালো কথা দেরি করে ফিরছে আরও ভালো কথা তো ফোন করে খোঁজ খবর দিবে না? না তেনাকেও সকাল থেকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, তাতে ওনার কি? উনিতো আর চিন্তা করে না আমাদের নিয়ে!
একদমে কথা গুলো বললেন শাহানা, পুত্রবধুর কান্ডে হাসলেন জাহানারা বেগম,বললেন
-থাক হয়েছে অনেক রাগারাগি সব্বাইরে আমি কইয়া দিমু, যাও লাগলে বইক্কাও দিমু,তাও ঠান্ডা হও খবর ঠিক পাইবানে চিন্তা কইর না,আর সামীহ,,,
শেষ করতে পারলেন না বৃদ্ধা তার আগেই কলিং বেল বাজলো শিকদার নিবাসের ভ্রু কুঁচকে গেল শাহানা শিকদারের শাশুরির মুখ পানে চেয়ে শুধালো,, এতো সকালে কে এলো?
-দেখো জসিম এলো কিনা
– কিন্তু উনি তো পনের দিনের মেডিকেল ক্যাম্পে গেলেন
– আরে আগে জাইয়্যা তো দেখো কে এলো,

শাহানা যাওয়ার আগেই সোহানা গিয়ে খুলে দিলো সদর দরজা, খুলেই আম্মুউউ,,বলে চিৎকার দিলো ,
মেয়ের চিৎকারে ছুটে গেলেন শাহানা , বৃদ্ধ শরীর নিয়ে কোনো মতে ছুট লাগালেন জাহানারা বেগম ও ,
সদরের সামনে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন শাহানা দরজায় দিক তাকিয়ে পলক জাপটালেন, পর পরই ছুটে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন হুহু করে কেঁদে উঠলেন, কত গুলো বছর পর সামনে থেকে দেখছে, মৃধু হাসে সামীহ এক হাতে জড়িয়ে ধরে মাকে আরেক হাতে মায়ের মাথায় হাত বুলায় মুখ নিচু করে মাথায় চুমু খায় ,, হাসি মুখেই বলে,,
– কি সমস্যা মা? বাড়ী না আসলেও কাঁদো,ফিরলেও কাঁদো , এখন কি চলে যাবো ?
মাথা নেড়ে না করেন শাহানা,বলেন
-তুই কি বুজবি পাজি ছেলে সন্তানের জন্য মায়ের কেমন লাগে আসবি বলে এলে কি হতো , কালকে থেকে খবর নেই আমার বুজি চিন্তা হয়নি?
– সারপ্রাইজ দিতে বলিনি,
এরই মধ্যে হইচই শুনে নিচে নেমে এলো সোহান,বাড়ির দুয়ারে বড় ভাই কে দেখে ভাইয়া বলে লাফিয়ে গেলো সে , সামীহ মা কে ছেড়ে ছোটো ভাই বোনের দিক তাকায় শুধু মাত্র সোহানার লম্বা চুল গুলোর জন্য নয়তো কোনটা কে বুজারই উপায় নেই দুটোর চেহারা একদম হুবহু এক, সামী হাসে এগিয়ে দু হাত মেলে ভাই বোনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-কাম ফাস্ট
সোহান দৌড়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে,কিন্তু সোহানা এগোয় না সামী বোনের দিক চেয়ে বলে,
– কিরে আয়,
সোহানা যায় না মুখ ঘুরিয়ে নেয় , এতো কষ্ট করে দরজা খুলল সে আর ভাই তাকে না আদর করে মা আর ঐ পাজি সোহান কে আগে আদর করলো? কথাই বলল না সোহানা , সোহানার রাগের কারণ বুজে সোহান শত হোক জমজ দুই ভাই বোন ওরা ,
মুখ বাঁকিয়ে বলে
_ আরে হিংসুক মহিলাকে চিনো না ভাই ? তার তো কলিজা ভুনা হয়ে পুড়ে যাচ্ছে হিংসের জ্বালায়,যাও যাও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেও থুরি পানি ঢেলে নিভিয়ে দাও,
সোহানের মাথায় মেরে সামী বোনের কাছে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলায় বলে,
_ভাইয়া সরি, তবে গাল ফুলিয়ে রাখলে একদম কোনো গিফট পাবি না,
সোহানা আর চোখে সোহানের দিক তাকায় সোহানকে মুখ ভেঙ্গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে,সামীহ বোনের কাণ্ডে হাসে, বোন কে রেখে এগিয়ে যায় কোনে দাড়িয়ে থাকা দাদুমনির কাছে, নোনা জলে চিকচিক করছে বৃদ্ধার চোখের কোন , এইতো সেই দিনও এই সামীহ দাদুমনি দাদুমণি করে তার পিছু পিছু ঘুরত তার পর একদিন হুট করেই জেদ ধরলো দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে পারি জমাবে,চলে গেলো আর ফিরলো কত বড় হয়ে, আগের সেই কিশোর সামী আর নেই তাগড়া জোয়ান পুরুষ হয়ে ফিরে এসেছে, পরনে ব্ল্যাক ব্লেজার সুট লম্বায় বাপ দাদার মতোই পাঁচ ফুট এগারো কি ছয় ফুট পুরোই এমনই হবে আন্দাজা লাগলো বৃদ্ধা ,গায়ের রং আগে একটু চাপা ছিল তবে এখন শ্যামপুরুষ হয়েছে ,গাল ভর্তি ছোটো ছোটো সাইজ করে রাখা দাড়ি সব মিলিয়ে নাতি তার রাজপুত্তুর হয়ে ফিরেছে, আবেগাপ্লুত হয়ে যান বৃদ্ধা পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দেয় নাতির মাথায়,, সামী হাত ধরে দাদুমনিকে নিয়ে এগিয়ে যায় সোফার দিকে একে একে এগিয়ে গেলো সোহান, সোহানা তিন ভাই বোন আর দাদুমনি মিলে শুরু করলো আড্ডা ,শাহানা শিকদারও দ্রুত পা বাড়ালেন রান্না ঘরের দিক এতো গুলো বছর পর তার বড় ছেলে এসেছে কি রেখে কি আয়োজন করবেন তালগোল পাকিয়ে গেলো এখন মনে হচ্ছে জসীম শিকদারের কথা মত একটা হেল্পিং হ্যান্ড বসায় রাখলে ভালোই হতো,একা হাতে এতো রান্না তার উপর সবাইকে জানাতে হবে তো অবশেষে ঘো
ঘরে ফিরেছে তার গুনধর বড় ছেলে!
_______

সবার সাথে কথা বলে আট বছর পর আবারও নিজের ঘরে পা রাখলো সামী বাড়ির সাথে সাথে তার রুমের ও বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে তবে এই পরিবর্তন সম্পূর্ণ তার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েছে তার ইচ্ছা মতই সব সাজিয়েছেন শাহানা। সামীর অবর্তমানেও বেশ গুছিয়েই রেখেছেন শাহানা শিকদার তাই সামীর কোনো প্রকার সমস্যাই হলো না এগিয়ে যায় বেডের কাছে এখন লম্বা একটা গোসল প্রয়োজন সাথে প্রয়োজন একটু বিশ্রামেরও।
_______
সামীহ ফেরার খবর পেয়ে , কাছের আত্মীয় অনেকেই বাড়ী তে এসেছেন সবার সাথে টুকটাক কথা বলে বাড়ী ভর্তি মেহমানের সামনে দিয়েই বেড়িয়ে পরে সে , শেষ বিকেল চলছে একটু পরই সন্ধ্যা নামবে বলে , বাড়ির গাড়ি জসীম শিকদার নিয়ে গেছেন তাই রিক্সায় উঠে বসলো সে , যতই গন্তব্যের দিকে আগায় ততই যেনো উদ্দীপনা বেড়েই চলছে অবশেষে প্রায় মিনিট দশেক পর গন্তব্যের কাছে এসে পৌঁছাল সামীহ ভাড়া মিনিয়ে তাকালো সামনে থাকা বহুতল ভবনের দিকে এগিয়ে গিয়ে চেপে বসলো লিফটে, চার তলায় এসে শব্দ করে দরজা খুলে গেলো সমীহ এগিয়ে যায় কাঙ্খিত ফ্ল্যাটের দিকে শুকনো দু তিনটে ঢোক গিলে দুবার কলিং দিতেই কে এই কে বলে ওপাশ থেকে ভেসে এলো মেয়েলি কন্ঠস্বর,,
সামীহ সময় নিয়ে বলে
_আমি সামীহ শিকদার,
কয়েক সেকেন্ড পর ওপাশ থেকে আবারো চিকন মেয়েলি কন্ঠস্বরে কেউ জিজ্ঞেস করে,

_কে! শিকদার সাহেব?

#চলবে,,