প্রণয়ের মহাকাব্য পর্ব-০২

0
2

#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(২)

‘ কে ! শিকদার সাহেব?’
নিজের অজান্তেই নামটা মুখে চলে এলো হিয়ার, সামীহ শিকদার এই নামটা সে জানে খুব ভালো করে জানে , তার জীবনে ঘরে বাহিরে সব খানে এই লোক আর তার পরিবারের উপস্থিতি, তাই এই নাম চিনতে তার কোনো সমস্যাই হয়নি কিন্তু উনি তো,,আর ভাবতে পড়লো না মেয়েটি দরজার ওপাশ থেকে ভেসে এলো গম্ভির পুরুষালী কন্ঠ,,
_ আমি কি চলে যাবো?
হিয়ার টনক নড়ে দ্রুত দরজা খুলে না তাকিয়েই বলে _আরে না না , সবাই জানলে খুব বকবে, মাআআআআ দেখে যাও কে,,
শেষ করতে পড়লো না মেয়েটি সামনে তাকালো আপাদমস্তক দেখলো সামনে তার দাঁড়িয়ে বেশ লম্বা এক যুবক যার পরনে ফুল ব্ল্যাক আউট ফিট ইন করে পড়ে থাকা কালো শার্টের টপ দুটো বোতাম খোলা,সেখানে ঝুলছে কালো সানগ্লাস , গাল ভর্তি ছোটো ছোটো সাইজ করে রাখা দাড়ি , লোকটা কে দেখে দুটো হার্টবিট মিস করলো হিয়া , সে কি প্রথম দেখায় ক্রাশ খেল!নিজের ভাবনায় নিজেকে বকলো হিয়া ,কথা ভুলে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে থাকলো সামীহর দিকে , আট বছর আগে দেখেছিল একটু একটু মনে পড়ে তবে কাছাকাছি না থেকেও যেনো সব সময় ছিল, হিয়ার ভাবনার সুতো ছিঁড়ল তার ক্রশের উপর বাঁশ ফেলে রেগে গেলো সামীহ ঝাঁঝালো গলায় বলল,,
_এই মেয়ে সমস্যা কি? সর সামনে থেকে ,

মনটা বিষিয়ে গেলো হিয়ার এ কার উপর এক দেখায় এমন হাবলামো করলো সে এতো পুরাই ফালতু মুখ বাঁকিয়ে কিছু বলার আগেই পেছন থেকে ভেসে এলো মধ্য বয়সী এক নারির কন্ঠস্বর
_কে এলো রে হিয়া , কার সাথে কথা বলছিস তুই,
এগিয়ে মেন ডরের সামনে এলেন তামিম ও হিয়ার মা মিসেস আঞ্জুমান মীর আয়েশা, এসে চৌকাঠে সামীহ কে দেখে যেনো আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন ,, তার কাছে তামীম যা সামীহ্ ও তাই দুটো কে আলাদা কখনও দেখেছে নাকি ? হিয়াকে টেনে সামনে থেকে সরিয়ে নিজে গিয়ে সামনে দাড়ালো চোখে মুখে হাত দিয়ে কাপা কন্ঠে বলল,,
– আমার সামীহ , কেমন আছিস বাপ? আল্লাহ আমার তো বিশ্বাসই হয় না আমার সেদিনের ছোট্ট সামিহ আজ এতো বড় হয়ে গেছে !
মায়ের আদিখ্যেতায় বিরক্ত হয় হিয়া একে নিয়ে মায়ের ব্যস্ততা দেখে আরো বেশি বিরক্ত লাগে এমন ফালতু লোকের সাথে এতো মিষ্টি করে কেও কথা বলে নাকি ! আয়েশার সাথে কথার এক পর্যায়ে একটু শব্দ করে হাসে সামীহ হিয়া সোফার এক কোনে দাঁড়িয়ে ছিল হাসির শব্দ শুনে তাকায় হাসির মালিকের দিকে, কি দারুণ লাগলো হিয়ার চোখে সেই গম্ভীর মুখের হাসি টুকু, বেলাজ হার্টটা তার আবারও দুটো বিট মিস করলো মনে মনে ধমকে উঠলো হিয়া ,
– খবরদার হিয়ারানি যদি যার তার উপর পিছলেছিস তো !এই ব্যাটা বদ লোক , আমাকে ধমকেছে, কিন্তু মন টাকি তার কথা শুনলো? উহু শুনল না উল্টো হৃদপিণ্ডের গতি যেনো বেড়ে গেলো ,
– ও কে? চিনলাম না তো মামুনী
সামীহ আয়েশাকে হিয়া কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে কথা টিতে হিয়ার হুস হলো দু শব্দের একটি বাক্য তে একটু কষ্ট পেলো বোধহয়, দ্রুত পা বাড়াল নিজের ঘরের দিক যাওয়ার জন্য যাওয়ার আগে শুধু তার কানে এলো , ,
আয়েশা মীর অবাক হয়ে বলছেন,
– সে কি তুই হিয়া কে চিনিস নি ?
– ওহ,অনেক দিন পর তো তাই হয়তো চিনতে পারিনি কত ছোটো দেখেছিলাম, তামিম কখন আসবে? ওকে ফোন করে বলো তাড়াতাড়ি আসতে এখনো বিডির সিম নেই নি,, তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে সোজা বাসা থেকে এখানে চলে এসেছি।
___________
– সিরিয়াসলি সামীহ !তুই আম্মুকে বলেছিস তুই হিয়াকে চিনিস নি? মানে এও সম্ভব যাকে সামান্য পাত্র পক্ষের দুইজন মহিলা দেখতে এসেছে বলে তুই পরদিনই দেশে উড়ে এসেছিস তাকে তুই চিনিস নি? হাসালি ভাই,
– ওটা তো কথার কথা,
সামীর সহজ স্বীকারোক্তি ,হাসলো সে নিজেও হাত বাড়িয়ে ঘড়িতে চোখ বুলালো,তামিমকে বগলদাবা করে টেনে বের হতে হতে বলল,,
– আমাদের বাসায় চল, তোদের দুই ভাই বোনকে সাথে নিয়ে যাবো বলে এখনো আছি বাড়িতে অনেকে আসছে আমার সাথে দেখা করতে, চল চল।
____________
ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকায় গরীব দুস্থ মানুষদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করেছে ঢাকার দুই বড় বড় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই জন অধ্যাপক ,অধ্যাপক ডাঃ জসীম শিকদার ( স্যার সলিমু্ল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মেডিসিন) এবং অধ্যাপক ডাঃ তাসাউফ মীর ( ঢাকা কলেজ মেডিকেল, মেডিসিন) ও তাদের নিজস্ব হাসপাতালের তাদের চিকিৎসক টিম তারা দুই জন সিনিয়র হিসেবে লিড করেছেন।পাহাড়ি এলাকায় থাকায় নেট যেনো আকাশের চাঁদ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল তারা তবে একটু আগে সন্ধ্যা পর খবর পেলেন জসীম শিকদার তার গুনধর ছেলে দেশে ফিরেছেন। দুই বন্ধুই থমথমে মুখে মুখমুখী বসে আছে , নীরবতা ভাঙলেন তাসাউফ মীর মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
– এসে গেছে তোর গুনধর বড় ছেলে,
শিকদার সাহেব ও কম যান না তিনিও ঠেস দিয়ে বললেন
– এসে গেছে তোর একমাত্র গুনধর মেয়ের জামাই ,
দুজন তাকালেন একে অপরের দিকে তারপর হুহা করে হেসে উঠলেন,
– কি মীর সাহেব তৈরি তো বন্ধু থেকে বেয়াই হতে?
মুখ বাকালেন মীর সাহেব জসীম শিকদার কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– কিসের তৈরী? আমার মেয়ের এখনো আঠারো হয়নি তোর বুড়ো ছেলের কাছে বিয়ে দিবো না , ঐ দুইদিনের ছেলে কে আমি ভয় পাই নাকি?
– ডোন্ট টেক মাই সন লাইটলি, বন্ধু ! তোর মেয়েকে তোর চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাবে আর তুই কিছুই করতে পারবি না ,যেমন পারিস নি আট বছর আগে উল্টো তার শর্ত মেনে নিতে হয়েছে ভুলে গেলি?
– সেতো শুধু তোর মুখের দিক তাকিয়ে , না হলে ঐ দুদিনের সামীহকে তাসাউফ মীর ভয় পায় নাকি??
– কথায় তোদের সাথে আর পারলাম কই?
হার মেনে নেওয়ার মতো দু হাত তুলে সমর্পন করলেন শিকদার সাহেব। তার পর দুজনই হেসে উঠলেন, তাদের দুই বন্ধুর খুনসুটি যেনো বয়সের কাছে তুচ্ছ, তার এখনো সেই মেডিকেল কলেজ লাইফের স্টুডেন্টের মত করে আড্ডা দেয়, খুনসুটি করে। জসীম শিকদার ছিলেন ঢাকার স্থানীয় বাসিন্ধা আর তাসাউফ মীর ছিলেন নাটোরের ঢাকা কলেজ মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর তিনি ঢাকা থাকতে শুরু করেন , একই বিভাগে ছিলেন তারা দুজন এক সময় তাদের দুজনের বন্ধুত্ব খুব গাঢ় হয় , এক সময় জসীম শিকদার মীর সাহেবের সাথে কত যে নাটোরের টুর দিয়েছেন, শিকদার নিবাসেও অহরহ যাতায়াত ছিল মীর সাহেবের,যদিও তাদের পরিচয় মেডিকেল কলেজের স্টুডেন থাকা অবস্থায় হয়েছিল তবে তারা এমন ভাবে চলতো যেনো কত কালের বন্ধুত্ব এমন কিছু বন্ধুত্ব হয় যা অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই অটুট হয় । একটা সময় দুজন পাশাপাশিই দুই মেডিকেলে ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন আর আস্তে আস্তে তারা এখন মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক , দুই বন্ধুর মালিকানায় গড়েছে নিজেদের প্রাভেট হাসপাতাল, শিকদার নিবাসের কাছাকাছি মীর সাহেব ক্রয় করেন নিজস্ব ফ্ল্যাট । আর সেই বন্ধুত্বকে পরমআত্মীয় করতে দুজনই রাজি তবে সামীর ঘাড় ত্যাড়ামোটা তাসাউফ মীর নিতে পারে না ভাবা যায় সদ্য আঠারো তে পা দেওয়া ছেলে কিনা তাকে সাসিয়েছিল আরও আট বছর আগে!!
___________
অনেক বলে কয়ে সোহান ,সোহানার কথা বলে হিয়া কে মানিয়ে শিকদার নিবাসে নিয়ে এসেছে তামিম , তামিম আর সামীহ যেমন প্রাণের বন্ধু ঠিক তেমনই সোহানা,সোহান আর হিয়াও একে অপরের জানেজিগার যদিও তাদের দলে তাদের কলেজ ফ্রেন্ড আর ও তিনজন সদস্য আছে, তবে তামিম আর সামীর আর কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড নেই এমনি দু এক জন জাষ্ট ফ্রেন্ড থাকলেও সামীর জ্বালায় তামিম কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে নি। শিকদার নিবাস হিয়া তামিমের কাছে নিজের বাড়ির মতোই তাই তামিম সামীর সাথে এলেও তাদের ফেলেই হিয়া সোজা দোতলায় সোহানার রুমে চলে যায়। সোহানার রুমে এসে দেখে সোহানা পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ে মুখ গুজে আছে মেয়েটা প্রচুর পড়া পাগল সেই দিক থেকে হিয়া আর সোহন বিন্দাস,, এইসব পড়াশোনায় তাদের এলার্জি আছে হিয়া মুখ বাকায় ব্যঙ্গ করে বলে,
– আমাদের সোহা আফা পদার্থ বিজ্ঞানে আটানব্বই পেয়েছিলো দুই কেনো পাইনি জানিস কারণ আফার কলমের কালী ফুরাই গেছিল, একটুর জন্য নিউটনের মেলায় হারানো বোন হতে পারে নাই! ক তো বইন এই দুঃখ সোহা আফা রাখব কই?
– কই আর রাখব ওর নিউটন জামাইয়ের কোলে ,তুই একটু ভুল বললি মামা, নিউটন ওর ভাই না ওর হারায় যাওয়া জামাই লাগে ,
হিয়া ও সোহানের আগমনে সোহানা পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ায় শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
– আমি তোদের মত এইম লেস নই, আই হ্যাভ আ এইম ইন লাইফ আমি বড় হয়ে আমার আব্বুর মত একজন ভালো ডক্টর হবো তার জন্য আমাকে পড়তে হবে,
– ইয়েহ আইছে আমার ডক্টর মেডাম ,এই হিয়া ওরে কিছু ক তো বইন ওরে দেখলেই আমার গাঁ চুলকায়
দুপ করে সোহানা কিল বসায় সোহানের পিঠে আবারও লেগে যায় দুটো মিলে এদের কি কখনও ভাব হবে না এই দুটো না জমজ এদের মারামারি তে বিরক্ত হয় হিয়া এমনি মন তার কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে চোখের সামনে খালি এক গম্ভীর মুখের হাসি ভাসে তার উপর এই দুটো হিয়া বিরক্ত হয়ে আস্তে করে বলতে গিয়েও একটু জোরেই বলে ফেললো ,,
– এদের তিন ভাই বোনের সমস্যা কি জ্বালিয়ে মারছে তো!
সোহান সোহানকে ছেড়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় হিয়ার দিকে সন্ধেহ নজরে তাকিয়ে বলে
– ভাইয়া আবার তোকে কি করলো?
হিয়া লুকায় না তাদের ফ্রেন্ডশিপে কেউ কারো থেকে কিছু লুকায় না , হিয়াও লুকালো না নির্দ্ধিধায় বলল,,
– কিছু করেনি তবে অনেক কিছু করেছে , মানে আমার না শিকদার সাহেব কে একটু একটু ভালো লেগেছে , ব্যাটার মুখের কথায় করলার রস থাকলেও দেখতে কিন্তু জোস দোস্ত ,আর শা*লার হাসিটা সেই মামা সেই, আমি একটু আধটু ক্রাশ খেয়েছি বোধয়!
সোহান আর সোহানা অবাক হলো একে অপরের মুখ চাইলো তার পর এক সাথে শব্দ করে বলে উঠলো,
_কিহহহহ….!!

#চলবে,