#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(৩)
– কিসের কিহ? তোরা দুটো এমন চিৎকার করছিস কেন? ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল তামিম ,তামিমের হটাৎ আগমনে একটু অপ্রস্তুত হলো সবাই সোহানা আর সোহান তাকালো হিয়ার দিক হিয়া মাথা নেড়ে চোখ রাঙিয়ে শশালো মুখ না খোলার জন্য ,ভাইয়ের দিক তাকিয়ে কথা ঘুড়িয়ে ফেললো বলল,,
– আরে ভাইয়া তুমি ওদের কথা ধরছো কেনো ওরা দুটো তো এমনি, তোমার হাতে ওটা কিসের বক্স?
হিয়ার কথা শুনে সবাই তাকালো তামিমের হাতের দিক তামিম হেসে হাতে থাকা বক্সটা খুলে দেখিয়ে বলে,
– সামী আমার জন্য এই ঘড়িটা নিয়ে এসেছে, সুন্দর না? সবাই তাকালো আসলেই সুন্দর হয়েছে ঘড়িটা বেশ দামী দেখেই বোঝা যাচ্ছে সোহান লাফ দিয়ে তামিমের কাছে গিয়ে বলল,,
– ওয়াও ভাইয়া কি সুন্দর হয়েছে তোমার ঘড়িটা, কিছু মনে পড়ার মতো করে সোহানাকে জিজ্ঞেস করল ঐ ভাইয়া তোকে কিছু দিয়েছে?
সোহানা মাথা নাড়িয়ে না করলো, তামিম হেসে বলল,
তোদের গুলো দেওয়ার জন্যেই তোডাকতে এলাম চল।
_________
হুহা করে হাসতে হাসতে সোহানার গাঁয়ের উপর পড়ে যাচ্ছে সোহান, সোহনাও মুখ চেপে হাসছে, হিয়ার প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে না বেচারি খুব বড় ঝটকা খেয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তামিমেরও একি অবস্থা সক কাটিয়ে সে এগিয়ে যায় বলে
– তুই আমার বোনের জন্য এগুলো কি এনেছিস সামী
– কেন? কমপ্লেন দেখতে পাচ্ছিস না?
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি, তাই বলে তুইওর জন্য এগুলো আনবি? এইগুলো খাওয়ার বয়স আছে নাকি ওর?
সামী তামীমের দিক তাকায় ওর দিক ঝুকে চাপা কন্ঠস্বরে বলে
– খুব তো দুই বাপ বেটা মিলে বোন ছোট বোন ছোট বলে চিৎকার করতি তাই এগুলো এনেছি , খাইয়ে তাড়াতাড়ি বোনকে বড় করে আমার বউ আমাকে দিয়ে দে আর কত দিন বউ ছাড়া থাকবো? হিয়ার দিক তাকিয়ে বলে
– তোর ভাই শুধু বলে তুই নাকি এখনোসেই এই টুকুই আছিস, আমার খুব মায়া হলো তাই তোর এইগুলো নিয়ে এলাম, শুনেছি কমপ্লেন খেলে নাকি খুব দ্রুত হইট বাড়ে তাই এই সব গুলো তোর চকলেট ফ্লেবার আছে , তোর তো চকলেট ফেব্রেট, নে!কি হলো নে এইগুলো !!
এইবার হিয়া বেজায় চটেছে , উচ্চতায় সে পাঁচ ফিট তিন তাও এই লোক তাকে ইন্ডিরেক্টলি খাটো বলল? রাগে দুঃখে মেয়েটা ঠিক মত কথা বলতে পারলো না মূলত কথা এলো না শুধু তির্যক এক চাহনী দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো , হিয়ার যাওয়া দেখে সোহান সোহানা ও নিজেদের জন্য আনা গিফ্ট গুলো নিয়ে ছুটলো ওর পিছু পিছু।
_________
মধ্যাহ্নের শেষ প্রহর চলছে, কলেজ মাঠে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে পাঁচ সদস্যের অপূর্ণ এক বন্ধুমহল, তাদের বন্ধু মহল এর সদস্য সংখ্যা ছয়, তাদের বন্ধু মহলের একটা বিশেষত্ব আছে তারা সবাই এক বিভাগের না যেমন সোহানা আর ইরা বিজ্ঞান বিভাগের, সোহান, প্রীতি আর নিরব মানবীক, শুধু হীয়াটাই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের,সোহান সোহানা আর হিয়া তো জন্মের পর থেকেই একসাথে, তবে কলেজে আসার পর সোহানের ভাব হয় প্রীতি আর নিরবের সঙ্গে আর সোহানার হয় ইরার সঙ্গে, পড়ে তারা সবাই মিলে তৈরি করেতাঁদের এই বন্ধু মহল। অল্প দিনের পরিচিত হলেও তাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর,হিয়া বরাবরই চঞ্চল আর পড়া ফাকিবাজ কলেজে আসে ঠিকই তবে ঠিক মত ক্লাস করে না ,একটা দুটো ক্লাস করে কেটে পড়ে আড্ডা দেয় তার মতে এতো পড়ে কি হবে সেই তো বিয়ে করে ঘর সংসার সামলাতেই হবে তার থেকে ভালো এখন একটু চিল করে নিক পড়ে বাঁশ খেলে সেইটা অন্য কথা। দু দিন পর থেকেই তাদের নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু ঠিক মত ক্লাস না করায় হিয়ার কাছে এক্সাম আপডেট ঠিকঠাক সিলেবাস নোট কিছুই নেই, তাই এখন সব জোগাড় করতে একটু বেগ পোহাতে হচ্ছে ,তার জন্যই আজ তার বের হতে একটু লেট হলো, আর বন্ধু মহলের সব মাঠে বসে তারই অপেক্ষা করছে। পাঁচ সদস্যের সেই অপূর্ণ বন্ধু মহল কে পূর্ণতা দিয়ে তাদের কথার মাঝে হুট করে এসে দুপ করে বসলো হিয়া কাধের ব্যাগটাকে ছুঁড়ে ফেললো মাঠের কচি ঘাসের ওপর। সোহানার পাশ ঘেষে বসে ওর কাধে মাথা রাখল সে, পর পর এতো গুলো ক্লাস আর ছোটাছুটি করে করে ক্লাস মেটদের কাছ থেকে নোট লিখে টিকে ক্লান্ত মেয়েটা । হিয়ার ক্লান্তি মুখের দিক তাকিয়ে একটু বিচলিত হলো নিরব বিচলিত কন্ঠ শুধালো,,
– কি হলো হিয়া? বেশি খারাপ লাগছে? একটু পানি খাবি? তার জন্যই বলি ঠিক মত ক্লাসগুলো কর পড়াশোনায় মনযোগী হ শুনলে তো এখন আর কষ্ট করতে হতো না।
– ঠিকই তো,যদি ক্লাস গুলো ঠিক মত করতি এখন তো,,
শেষ করতে পড়লো না সোহানা, হিয়া ওর কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে নেয় সোহানকে উদ্দেশে বিরক্তকর গলায় বলে_
” এই দুটো জ্ঞানী কে সরা তো ভাই আমার সব চোখের সামনে থেকে নয়তো এই দুটোকে এখনই আমি কিছু একটা করে ফেলব।” সোহান মাথা ঝাকালো তেজী কন্ঠে সোহান ও নীরব কে উদ্দেশ্য করে বলল ,,
-এই দুই জ্ঞানী বিজ্ঞানী চুপ করতো না হলে এক লাথি দিয়ে মঙ্গলে পাঠিয়ে দিব, আর বেইব (হিয়াকে উদ্দেশ্য করে) তুই কি ভাইয়ার দেওয়া কমপ্লেন টা ঠিক মত খাচ্ছিস না? একটুতেই কেমন ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিস এই জন্যেই তো ভাইয়া তোর জন্য এতো গুলো কমপ্লেন আনলো খাইস বোন বল পাবি!
বলেই হু হা করে হাসলো সোহান, হাসলো সোহানাও সোহনের কথা কেও বুজতে পারলো না তাই ইরা জিজ্ঞেস করে,
কি তখন থেকে যা তা বলছিস বুজিয়ে বল মামা সোহান দাঁত কেলিয়ে শুরু থেকে সব বলল হিয়ার ক্রাশ আর বাঁশ খাওয়ার পুরোটাই বলল সব শুনে সবাই এক সাথে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে গগণ ফাটিয়ে হাসে। শুধু এক জন হাসতে পারে না সে গম্ভীর হয়ে বিরক্ত হিয়া কে দেখে হিয়ার বিরক্ততাকে দূর করতে নীরব সবাইকে ফুচকা খাওয়া অফার করে , ফুচকার কথা শুনেই হিয়া লাফ দিয়ে উঠল,, ইস আর যাই হোক ফুচকার জন্য কখনো না করা যায় না!
______
ফুচকা খাওয়ার জন্য সবাই কলেজ গেট চলে গেলো এখানের আর কিছু যেমন তেমন ফুচকাটা দারুণ হয়,
সবার জন্য পাঁচ প্লেট ফুচকা অর্ডার করে নীরব যায় স্পিরিট ক্যান আনতে, এইসব হাবিজাবি খাওয়ার মধ্যে সে নেই, নিরব এসে দুপ করে হিয়ার পাশের জায়গাটায় বসলো, এরই মধ্যে তাদের অর্ডার চলে এলো সবাই হইচই করে ফুচকা খাওয়ায় মন দিলো,হিয়া ফুচকার প্লেট থেকে একটা ফুচকা মুখে পুরে খেতে খেতে একটু উঁচু গলায় ফুচকা ওয়ালা মামাকে বলল, সেই মামা সেই তুমার হাতে জাদু আছে, বিনিময়ে হাসলো লোকটি। নিরব চোখ জুড়িয়ে দেখলো হিয়ার তৃপ্ত মুখ খানা, নিরব কে এইভাবে চেয়ে থাকতে দেখে হিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,,
-একদম নজর দিবি না আমার শরীর খুব সেনসেটিভ একটু নজর দিলেই খুব পেট ব্যাথা করে, লাগলে একটা খা তাও নজর দিস না।
নীরব হাসে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– তুইই খা আমার এইসব হাবিজাবি খাবার পোষায় না,
হিয়া শুনলো না সুযোগ বুঝে একটা ফুচকা মুখের কাছে তুলে বলল,,
– তবুও যদি নজর লেগে যায় একটা খা একটা খেলে তো মরে যাবি না ,
নীরব হাসে মাথা নাড়িয়ে মুখ এগিয়ে হা করে প্রিয় নারির হাত থেকে খাওয়ার সুযোগ খোয়ানো যায় নাকি?
– এখানে কি হচ্ছে? গম্ভীর গলার কথা শুনেই সবাই মিলে পেছনে তাকালো দেখলো কালো জিন্স প্যান্ট সাদা শার্ট পরা সে এক সুপুরুষ যার মাথার সিল্কি চুল গুলো বাতাসে অগোছালো হয়ে আছে ,যে এখন এক জোড়া আগুন চোখ তাকিয়ে আছে তাদের দিক , নিরব চিনলো না সামী কে তাদের বলছে কিনা সিওর হতে বলে,
– আপনি কি আমাদের বলছেন ভাইয়া? মানে আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না,
সামী নীরবের কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না এক ভ্রু উঁচিয়ে সোহানের দিক তাকাতেই সোহান ঝটপট বলল,,
– আরে ভাইয়া তুমি এখানে,কোনো দরকার ছিল কি এই দিকে?
– না আব্বুরা ফিরছেন রাতের মধ্যে, তাই তামিমদের আজ আমাদের বাসায় ডিনারে ইনভাইট করেছে আম্মু ।মামুনি অলরেডি আমাদের বাসায় চলে গেছেন হিয়া বাসায় গেলে পাবে না তাই তোদের নিতে আসলাম,
শান্ত কন্ঠে বলল সামী । সোহান মাথা নাড়িয়ে সবার সাথে সামীর পরিচয় করিয়ে দেয়, সামী সবার সাথে টুকটাক কথা বলে,পর পরই সবাই উঠে দাড়ায় নিরব বিল দিতে গেলে সামী বাঁধা দেয়। বিল পরিশোধ করে ওদের তিন জনকে ফেলে আগে আগেই যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় , সামী কে দেখে ইরা দুষ্টু হাসে হিয়া কে হাল্কা ধক্কা দেয় মজা করে কিন্তু লেগে গেল একটু জোড়ে, মুহূর্তেই ঘটে গেলো এক অভাবনীয় কাণ্ড হিয়া সামী কে এই লুকে দেখে তাকে দেখতে এতোই বিভোর ছিলো যে তার যেনো হুস নেই তাই সে ধাক্কার বেগ সামলাতে পারল না পা ভেঙ্গে দুম করে পড়লো সে পিচ ঢালা রাস্তায়,ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো সবাই হিয়ার ব্যাথাতুর কন্ঠ কানে যেতেই ঝড়ের গতিতে পেছন ফিরলো সামী, হিয়াকে মাঝ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে ঝড়ের গতিতে ছুটে এলো, উত্তেজিত হয়ে হিয়ার হাত পা দেখতে দেখতে বলল,,
_ হিয়া কি হলো তোর? পড়লি কীভাবে এই তাকা আমার দিক বল কোথায় ব্যথা পাচ্ছিস , আল্লাহ পাগোল করে দিবি আমায়?
উপুর হয়ে পড়ায় হাতের কনুই সহ পায়ের গোড়ালি ছুলে সাদা কলেজ ড্রেসের উপর দিয়ে লাল লাল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ বসে গেছে , সামী আর অপেক্ষা করলো না ঝট করে কোলে তুলে হিয়াকে, ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে , শুধু পেছন ফিরে সোহানদের উদ্দ্যেশে বলল,,
– ওর ব্যাগ নিয়ে দ্রুত আয় ফাস্ট,
সোহান মাথা নাড়িলো ব্যাগ নিয়ে সবাই ছুটলো সামীর পেছনে। নীরব শুধু নীরব দর্শকের মতো সব দেখলো,!
ব্যাথা ভুলে হিয়া অবাক হয়ে চেয়ে রইলো সামীর দিকে এ কেমন উদ্দ্যেগ, যত্ন দেখাচ্ছে শিকদার সাহেব তার জন্য, এমন হলে কি এই লোক কে সে ভালো না বেসে থাকতে পারবে? পরক্ষনেই নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে লজ্জা পেলো ভীষন লজ্জা পেলো, বুক ধড়ফড় করে উঠলো, এতো লজ্জা লাগছে কেনো তার এই লজ্জা লুকাতে কোথায় মুখ গুজবে সে শিকদার সাহেবের বুকে??!
#চলবে,,