প্রণয়ের মহাকাব্য পর্ব-০৫

0
16

#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(৫)
– কি হলো হুট করে গাড়ি থামলেন যে?
– কিছু খাবি? সন্ধ্যা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে?
হিয়া একটু অবাক হলো সত্যিই তার খুদা পেয়েছে, দুপুরে এক্সামের পড়া কমপ্লিট করতে করতে তেমন একটা খাওয়া পড়েনি । সামী বিষয় টা ভেবেছে , যদিও কথাটা তিতা করলার মত গম্ভীর করে জিজ্ঞেস করেছে তবুও হিয়ার ভালো লাগছে সামীর এই একটু আধটু কেয়ার তার দিকে আরও বেশি টানে,, সামী গাড়ি সাইট করলো হিয়া নেমে এলো কোনো রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফেতে নয় সামী তাকে নিয়ে তাদের কলেজের পাশের স্ট্রিট ফুড এরিয়াতে নিয়ে এসেছে , হিয়ার দু চোখ খুশিতে জল জল করে উঠল তার এইটা প্রিয় জায়গা, তার মতে বড় বড় রেস্টুরেন্ট থেকে রাস্তার এই ফুড কোডের খাবার গুলো বেশ ভালো , হালকা ঠাণ্ডা গোধূলী সন্ধ্যা সাথে প্রিয় পুরুষ, যদিও সামী হিয়ার পেছন পেছন আসছে তবুও আছে তো ! মুহূর্ত টা দারুন লাগলো হিয়ার কাছে । এগিয়ে গেলো তার পরিচিত একটা দোকানের কাছে , তারা বসতেই দোকানের কর্মরত একটা বাচ্চা নাম চিকু সে এগিয়ে এলো সে চিনে হিয়া কে , তাড়া মাঝে মাঝেই পুড়ো বন্ধু মহল আসে এখনে খাবার খায় আড্ডা দেয় যাওয়ার সময় তার হাতে কিছু টাকা আলাদা ভাবে গুজে দেয় , সে এগিয়ে আসে হাসি মূখে বলল
-আপু অনেক দিন পর আইলা, আর সবাই কই, এইডা কে? দুলাভাই?
হিয়া তড়িৎ চোখ বড় বড় করে চাইলো সামীর দিক দেখলো সে গম্ভীর হয়ে ফোনে মুখ গুঁজে আছে। হিয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো বাচ্চাটার দিকে একটু চেপে মুখ বাঁকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল ,,,
না তোর দুলাভাই না তবে হোলে কেমন হয় বলতো।ঐ জমজ দুই ভাই বোন আছে না ওদের বড় ভাই হয়, এমনি খুব ভালো আবার জেডেঞ্জেরাস লোক ও উল্টা পাল্টা কিছু বলিস না ।
চিকু মাথা ঝাঁকালো হেসে বলল,,
– দুলাভাই হলে ভালোই হবে , তোমার সাথে মানিয়েছে তাই তো দুলাভাইই বললাম ।
হিয়া হাসে সোজা হয়ে বসে মেনু কার্ড দেখার প্রয়োজন মনে করলো না সে জানে এখানে কি কি পাওয়া যায়। এই ঠাণ্ডার মাঝেই অর্ডার করলো কোল্ড কফি আর সেন্ডউইচ। হিয়ার অর্ডার শুনে সামী ফোনে থেকে মুখ তুলে চাইল, গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
– এই ঠাণ্ডার মধ্যে তুই কোল্ড কফি খাবি? এক্সাম চলছে ঠাণ্ডা লাগলে খবর আছে । অন্য কিছু খা
হিয়া ঠোট উল্টালো বলল
– কিন্তু আমার ঠান্ডার মধ্যে ঠাণ্ডা খেতে ভালো লাগে,,
– এক্সামের মধ্যে এসব খাওয়া যাবে না , তাড়াতাড়ি কর আমার আবার একটু হসপিটাল যেতে হবে।
হিয়া আর অমত করল না হলকা কিছু খাবার অর্ডার করলো, খাবার আসতেই দ্রুত শেষ করে বাড়ীর উদ্দেশে রওনা দিল।
____________
আজ শুক্রবার গতকালই হিয়াদের নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হয়েছে, পুড়ো বন্ধু মহল যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। হিয়া বরাবরই পড়া ফাকিবাজ তবে এক্সাম এলে সে খুব সিরিয়াস হয়ে যায় খুব ভালো রেজাল্ট তার দরকার নেই মোটামুটি ভালো একটা রেজাল্ট হলেই তার চলবে তাই সারা বছর পড়া ফাকি দিলেও এক্সামের সময় সে দিন রাত এক করে পড়ে। তার বন্ধু মহলের সোহানা আর নীরব বাদে সবারই একি অবস্থা, এই দুটো বরাবরই পড়া পাগল আর বাকি গুলো সব ফাকিবাজ কেবল পরীক্ষা এলেই তারা সিরিয়াসলি পড়াশোনাটা করে । এতদিন শুধু ফোনেই যোগাযোগ হয়েছে তাই সব বন্ধুরা মিলে প্লান করেছে শিকদার নিবাসে আজকে রাতে চিকেন বিবিকিউ পার্টি করবে এই বুদ্ধিটা মুলুত সোহানের , এতো দিনে ঠাণ্ডা টা বেশ ভালোই পড়েছে , এই শীতের রাতে বিবিকিউ পার্টি উফফ জমে পুড়ো ক্ষীর, ভেবেই সবাই রাজি হয়ে গেলো। হিয়ার মেজাজ আজ ভীষন ফুরফুরে শিকদার নিবাসে যাওয়ার আরেক কারণ হচ্ছে তার শিকদার সাহেব,, সেই যে প্রথম পরীক্ষার দিন দেখেছিল এর মাঝে আর দেখেনি, তামীমই বাকী এক্সামের দিনগুলোতে তাকে নিয়ে এসেছে, এই কদিনে সে ভালোই টের পায় যে পায় সামীহ শিকদার নামক পুরুষের প্রেমে সে ভালোই মজেছে। হিয়া প্রফুল্ল চিত্তে রেডি হচ্ছে সাথে গুনগুন করে গেয়ে উঠল তার প্রিয় একটা গানের কলি যা এখন তার অনুভূতির সাথে যায়,,

– চলে যাই দু’চোখের পথে..
– বলে যাই কথা তোরই যে..
– মন আমার ভবঘুরে যাবে দূরে ..
– তোকে না পেলে ..
– কেন তুই দূরে দূরে বল ..
– আকাশে উড়ে উড়ে চল ..
– মিশে যাই এই আকাশে তোর বাতাসে..
– পাখনা মেলে ..
– দিন শুরু তোর কথায় ..
– তুই ছাড়া নামে না রাত ..
– চাঁদ থেকে..
– উড়েছে মন ,পুড়েছে মন ..
– যা ছিল আমার সবই তোর হাতে..
– আকাশে দৃষ্টি তোর, বৃষ্টি তোর..
– মনে মেঘ জমে..
– জানালার হাওয়াতে ,ছাওয়াতে..
– মনের রোদ কমে..

°°°°°°°°°°°°°°°°
শিকদার নিবাসের ছাদে পাটি বিছিয়ে এক পাশে গোল হয়ে বসে আছে, হিয়া, সোহানা, ইরা, প্রীতি ।অন্য পাশে নীরব আর সোহান মুরগি পোড়ানোর ব্যবস্থা করছে, কয়লায় বাতাস দিতে দিতে বেচারা সোহানের হাত ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে, এই শীতের রাতেও তার ঘাম ছুটে যাচ্ছে। সে দাঁত কিরমিরিয়ে হিয়াদের দিক তাকালো তারা চার বান্ধবি মিলে বেশ আড্ডায় মজেছে, হীয়াদের এক কথা তারা মেয়ে মানুষ তারা এইসব কয়লা জনিত কাজে নেই, তাছাড়া এইগুলো
ছেলেরা ভালো পারে, তাই সোহান আর নীরবে দায়িত্বে সব কাজ দিয়ে তারা পটের বিবি সেজে আড্ডা দিচ্ছে। হটাৎ করেই তারা চার জন কথার তালে হেসে উঠলো, সোহান সে দিক তাকিয়ে বলল
– দেখ, দেখ ! কীভাবে হাসছে মনটা যা চাচ্ছে না দাঁত গুলো ভেঙ্গে দেই
নীরব একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো এই আদপাগলের কথা ধরতে আছে নাকি?
হুট করে ছাদের দরজা মেলার আওয়াজে সবাই সেদিক তাকালো, সামী এসেছে গায়ে তার জড়ানো কালো টিশার্ট ও টাউজার মাথার চুল গুলো ভেজা থাকায় নুয়ে পড়ে আছে কপোলের উপর কি স্নিগ্ধ সেই মুখ খানা, তবে এই শীতের রাতে এইলোক গোসল করেছে ভেবেই গাঁ কাটা দিয়ে উঠলো হিয়ার। হিয়ার হা করে থাকা মুখের দিক চেয়ে মুখ চেপে হাসছে সবাই, সোহানা একটু দুষ্টুমি করে মৃদু কেশে সামী কে বলল ,,
– কিছু লাগবে ভাইয়া?
সামী এক পলক তাকালো হিয়ার দিক হিয়া ও ওর দিকই তাকিয়ে ছিলো মুহুর্তেই চোখাচোখি হলো , সামী চোখে ঘুরিয়ে বলল-
– না, এমনি তোদের দেখতে এলাম,
– এসে যখন পড়েছো এখানে আমাদেরকে একটু সাহায্য করো এই ডাইনিগুলো শুধু বসে বসে পেত্নীর মতো হাসছে আমরা দুই নাদান বালক কি একা এতো কাজ সামলাতে পারি নাকি?
– ভাইয়া ওকে বলো ওর ঐ ফালতু মুখ টা বন্ধ রাখতে
সোহানার কথায় সোহান কিছু বলবে তার আগেই
সামীহ সোহানদের দিক এগিয়ে গেলো সোহানের মাথায় মেরে বলল,,
– এইগুলো কেমন ভাষা ইউজ করিস, দেখি সর
সামী বসলো সোহানের পাশে সোহান কে বলল,
– আম্মু কে গিয়ে বল আমার জন্যে এক কাপ ব্ল্যাক কফি দিতে সোহান উঠে দাড়ায় কোমরে হাত দিয়ে এপাশ ওপাশ কোমড় বাঁকিয়ে বলল,,
– পার্টি করার সখ মিটে যাচ্ছে একেবারে ,
বলে নিচে গেলো কিন্তু ফিরে এলো কফির বদলে গিটার হাতে ততক্ষণে সামী কয়লায় আগুন জ্বালিয়ে ফেলেছে , সে এখন ইরাদের সাথে কথা বলছে, আর নীরব একাই চুপচাপ বসে বসে বাতাস দিচ্ছে চিকেনে ওয়েল ব্রাশ করছে। সোহান এসে দুপ করে বসলো সবার মাঝে ,ওর হাতে গিটার দেখে প্রীতি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,,
– এইটা কার রে আগে তো দেখিনি
– ভাইয়ার,
হিয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো মনে মনে বলল –
– এই তিতা করলা আবার গান ও গাইতে পারে?
– ভাই একটা গান ধরত
সোহানের কোথায় হিয়া প্রফুল্ল চিত্তে তাঁকালো সামীর দিক কিন্তু সবার আশায় জল ঢেলে সামী সোজা না করে দিলো। ইরা হিয়া কে ধাক্কা দিলো ইশারা করলো কিছু বলার জন্য,
হিয়া ও সামীর গান শুনতে চায় তাই সে বলল,,
– গান না একটা গান শিকদার সাহেব, আমরা সবাই গানের গলা শুনতে উৎসুক। সবাই হিয়ার কথায় তাল মেলালো শেষে সামী রাজী হলো অনেক দিন অনেক বছর পর গিটার হাতে তুলে নিলো সুর তুলল তবে সুর এলো মেলো হলো, হিয়ার খুশি খুশি মুখ চুপসে গেল , পর মূহুর্তেই ওকে অবাক করে দিলো সে হতবাক হলো একটা সুরে এটা তো? এইটা কীভাবে সম্ভব? হিয়ার হুস ফিরল ,সামী গেয়ে উঠলো একটা গানের শেষের এক কলি,,

– চলে যাই দু’চোখের পথে..
– বলে যাই কথা তোরই যে..
– মন আমার ভবঘুরে যাবে দূরে ..
– তোকে না পেলে ..
– কেন তুই দূরে দূরে বল ..
– আকাশে উড়ে উড়ে চল ..
– মিশে যাই এই আকাশে তোর বাতাসে..
– পাখনা মেলে ..
– দিন শুরু তোর কথায় ..
– তুই ছাড়া নামে না রাত ..
– চাঁদ থেকে..
– উড়েছে মন ,পুড়েছে মন ..
– যা ছিল আমার সবই তোর হাতে..
– আকাশে দৃষ্টি তোর, বৃষ্টি তোর..
– মনে মেঘ জমে..
– জানালার হাওয়াতে ,ছাওয়াতে..
– মনের রোদ কমে…

#চলবে