#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(১৬)
তামিম গাড়ীর ব্যাক সিট থেকে উঠে বসে, এতক্ষণ শুয়ে ছিল কাচ নামিয়ে মাথা বের করে দূরে হেঁটে যাওয়া এক জোড়া চড়ুই কে দেখে আবারও হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,,
– চিন্তা করিস না, তোর ভাই আর ভাবী একদম ঠিক আছে, তোর ভাই শালা নির্লজ্জ আমারই সামনে, আমাকেই পাহারাদার বানিয়ে ,আমারই বোন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রোমান্স করছে, এমন নির্লজ্জ লোকের বন্ধু হয়ে বড় ভাই হয়েও বোনের লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার পাহারাদার হতে হলো! এই শীতের ভোর রাত থেকে সকাল করলাম তোর ভাই ভাবীরে পাহারা দিয়ে!
– কিহ,,,
সোহানা বিস্ময়ে এতো জোরেই কিহ,, বলে চিৎকার করলো যে তামিমের মনে হলো কানের পোকা টা বুঝি নড়ে উঠলো ,সোহানা আবারও উচ্ছ্বাসিত তরঙ্গের ন্যায়
বলে উঠে,,
– হিয়া ভাইয়ার সাথে সেই ভোর রাত থেকে ঘুরছে? ওয়াও, আপনি ও কিন্তু পারতেন আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে,
সোহানার আদুরে আবদারে তামিম ফোন টা কানে ধরে কাধের সাথে ঠেকিয়ে দুই হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙ্গে বলে,,
– ভাবছি,খুব শীগ্রই তোকে আমার বউ করে ফেলব কি বলিস? তখন আমিও তোকে নিয়ে তোরই ভাইদের সামনে ঘুরবো, চুমু খাব,ইটিসি ইটিসি করবো আমাকে বাঁধা দিবো কোন শালায়?
– এই ভাইয়া এই ফোন রাখেন তো, হিয়ার খোঁজ পেয়ে গেছি আর কথা কিসের?
বলেই সোহানা খট করেফোনটা কেটে দিলো, তামিম অসহায় চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,
– বানাতে চাইলাম বউ, ভাইয়া ডেকে হয়ে যাচ্ছে বোন!
এরা দুই ভাইবোন শুরু টা কি করেছে!
—————-
একটা সুন্দর স্নিগ্ধ শীতের সকাল চারিপাশে ঘন কুয়াশায় ঘেরা তার মধ্য দিয়েই পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে এক নতুন বিবাহিত যুগল, হিয়া একটু ভাবলো বিয়ের পর এটাই সামীর সাথে তাঁর কাটানো প্রথম সকাল, হিয়া মাথা ঘুড়িয়ে সামীর দিকে তাকালো তাঁর মুখ থমথমে তার অনুভূতি বোঝা দায় হিয়া বুঝে না মূহুর্তেই কীভাবে এই লোকের মুড এভাবে চেঞ্জ হয়ে যায়? সামী মুখ গম্ভীর করে এক হাতে ফোন স্কোর্ল করছে অন্য হাতে ধরে রেখেছে হিয়ার হাত, পরনে তার ব্লাক ট্রাউজার আর টিশার্ট তাঁর উপর ডেমিন জ্যাকেট,, হিয়ার চঞ্চল চোখে মুখে তার তৃপ্তির আবেশ ফুটে ওঠে, এক হাতে প্রিয় পুরুষের হাত ধরে হাতে জুতো জোড়া ধুরে খালি পায়ে এগিয়ে যায় শিশিরে ভেজা নরম ঘাসের উপর দিয়ে । একটু ভিন্নভাবে হলেও তাঁর সেদিনকার সেই দিবাস্বপ্ন টা যে সামী পূরণ করছে ভেবেই হিয়ার মনে আনন্দরা ঢেউ খেলে ঊঠে হুট করেই হাতে টান পড়ায় হিয়া ভাবনা ছেড়ে পিছন ফিরে চায়, সামী তাঁর হাতে থাকা ফোনটা পকেটে পুরে থম থমে গলায় বলে,,
– মিটেছে তোর শীত বিলাসের সখ? এইবার বাড়ি ফেরা উচিত,
হিয়া মিন মিন করে বলে,,
– আরেকটু থাকি? ভালো লাগছে,
সামী হতাশার শ্বাস ফেলে এগিয়ে গিয়ে হিয়ার মুখটা আলতো করে দু হাতে ধরে বলে,,
– বিয়ের ব্যাপার টা সবার সামনে আসুক তাঁর পর তুই না চাইলেও আমার সাথেই সবসময় থাকতে হবে, এখন বাড়ী চল,
হিয়া আর দ্বিরুক্তি করলো না সামীর হাত ধরেই এগিয়ে গেলো গাড়ির কাছে, গাড়ীর কাছে এসে দেখে তামিম গাড়ীর সাথে হেলান দিয়ে তাদের দিকই চেয়ে আছে, তামীম কে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে হিয়া একটু অপ্রস্তুত হলো অবশ্য, এই পাগল লোকটা তাঁর ভাইকে নিয়ে এসেছে তারদের পাহারা দিতে এখন হিয়ার লজ্জা লজ্জা লাগছে, সোহান আর হিয়া তাদের বন্ধু মহলের বিখ্যাত কুখ্যাত দুই বেলাজ তবে যতই বেলাজ হোক বড় ভাইয়ের সামনে একটু লজ্জা পেলো হিয়া। হিয়া কে ওমন অপ্রস্তুত হতে দেখে তামিম হেসে বলল,,
– তো আপনার সখ কি পূরণ হয়েছে বেহনা? আপনার জন্যই আপনার ভাইয়ের এতো কষ্ট করা।
হিয়া কিছু বলে না সম্মতি জনক মাথা নারায়। তামিম হেসে বলে,,
– তাহলে বাড়ী ফেরা যাক? তোকে না পেয়ে তোর বান্ধবী তো চিন্তায় চিন্তায় অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে,
– কীহ? তুমি সোহানাকে বলে দিলে?
তামিম নাড়িয়ে বলে,,
– হুম, তোকে রূমে না পেয়ে ওড়া দুটো তো বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল, তাই বলে দিলাম তুই আমাদের সাথে আছিস!
– দুটো মানে? সোহান কেও বলে দিলে?
তামিম সম্মতি জনক মাথা নাড়িয়ে বলে,,
– হ্যায়,, দুটো মিলেই তো কল দিলো, কেনো?
– কিছু না চলো বাসায় যাবো,
বলেই হিয়া তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে ঠাস করে ডোর টা লাগিয়ে দিল, তামিম সামীর দিকে তাকিয়ে বলে,,
– কি হলো তোর বউ এমন হুট করে রেগে গেলো কেনো? আমি আবার কি করলাম?
সামী ভ্রূ কুঁচকায় গাড়িতে থাকা হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,
– তোর বোন তুই জানিস,আমিও বুঝতে পারছি না, এই তো হাসিখুশি ছিলো, এখন আবার কি হলো?
তানিম হতাশার শ্বাস ফেলে হিয়ার পাশের সিটে উঠে বসে, সামী ড্রাইবিং সিটে বসেই গাড়ি স্টার্ট দেয়, এগিয়ে চলে মীর মেনশনের উদ্দেশ্যে, মাঝ পথে তানিম অনেক বার হিয়াকে জিজ্ঞেস করে রেগে যাওয়ার কারণ, তবে বেচারি হিয়া ভাইকে বলতে পড়লো না, এখন যে সোহান তাঁকে বিভিন্ন ভাবে ক্ষেপাবে,লজ্জায় ফেলবে।
————–
বিয়ে বাড়ির হৈচৈ, ব্যস্ততা, আর কলরব বাড়িয়ে দিয়ে নিচ থেকে বাচ্চারা চিৎকার করে উঠলো, বর এসেছে, বর এসেছে! সাথে সাথে তায়েবার রুম থেকে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এলো সাজসজ্জায় পরিপূর্ণ একদল তরুণী, তারা এতক্ষণ তায়েবার রুম জুড়ে বসে ছিলো আর তাদের মধ্যমণি ছিলো লাল টুকটুকে বউ সেজে থাকা তায়েবা। বর এসেছে শুনেই সব ছুটেছে গেট ধরবে বলে,, তবে যাওয়ার আগে সবাই তায়েবাকে উত্যক্ত করতে ভুললো না, তাদের কথা শুনে লাজুক মেয়েটা যেনো আরো লজ্জায় মিলিয়ে গেলো, তবে হতবাক হলো যখন তারই এইটুকু বোন তানিয়া বললো,,
– তুই বস আপু, আমরা যাই চিন্তা করিস না আমরা দুলাভাইয়ের ভালোই খাতির দাড়ি করবো,,
– তবেরে,,
তায়েবা রাগ দেখাতে গিয়ে ও লাজুক হেঁসে ফেলে, যা দেখে সবাই মজা করে হৈহৈ করে চলে যায় গেট আটকাবে বলে,, তবে এর মধ্যে বাঁধলো আরেক বিপত্তি সবাই যখন গেট আটকাবে বলে ফুল, মিষ্টি, ডালা হাতে নিয়ে ছুট লাগিয়েছিল সোহান তখন তাসাউফ মীরের আদেশ মতে জরুরি কাজে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করছিল ,সোহান সব মেয়েদের এড়িয়ে ভেতরে আসতে পড়লেও শেষ মেষ হুট করেই ধাক্কা খায় তাঞ্জিলার সাথে, ঘটে যায় সিনেমাটিক এক ঘটনা তানজিলার হাতে ছিল ফুলের ডালা আকস্মিক ধাক্কায় হাতের ডালা ছিটকে পড়ে তানজিলার হাত থেকে , আর তানজিলা পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে সোহান কে ধরতে গেলে সোহান টাল সামলাতে না পেরে দুজনেই পড়ে যায় মেঝেতে আর তানজিলার হাতের ডালায় থাকা ঝুড়ো করে রাখা ফুলের পাপড়ি গুলো ছিটিয়ে পরে তাদের উপর, সোহান ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো সে ভুলে বসল সে একটা বিয়ে বাড়ীতে আছে সে চিৎকার করে উঠলো,,
– ওড়ে আল্লাহরে,, কোন হাতি পরলি রে,,,, শেষ আমি শেষ,
বলে যেই চোখ খুলল, সোজা চোখ পড়ল মিষ্টি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা তানিয়ার দিকে, সে কেমন করে যেনো তাঁকিয়ে আছে,সোহান তানিয়ার নজর অনুসরণ করে চোখ নামিয়ে তাকাতেই লাফ দিয়ে উঠে, তানজিলা এখনো সোহানের দিকেই তাকিয়ে,সোহানের মন চায় তাঁর গালির লিস্টের একখান গালি দিতে, এক তো তাঁর উপর পড়ে কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছে তার উপর এমন ভাবে তাঁকিয়ে থাকার মানে হয়? এখন যদি তানিয়া ক্ষেপে যায়, তার তো প্রেম শুরুর আগে শেষ হবে, তানিয়ার কথা মনে হতেই তাঁকিয়ে দেখে তানিয়া ততক্ষণে সদর পেরিয়ে গেছে, তখনই কানে ভেসে আসে নরম মেয়ে কন্ঠ তানজিলা হাত বাড়িয়ে রিনরিনে কন্ঠে বলে,,
– আমাকে একটু উঠতে সাহায্য করবেন, সোহান?
সোহান একটু বিরক্ত হয় তবুও তানজিলাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে উঠাতে উঠাতে বলে,,
– ভাইয়া ডাকেন মিস, আমি আপনার বড় হই,
– মাত্র তো ওয়ান ইয়ার,
– তাও বড় তো,
– তানিয়া তো আরো ছোটো তাও ও আপনাকে ভাইয়া ডাকে না, তাহলে আমি নাম ধরে ডাকলে সমস্যা কি?
– আমি পছন্দ করছি না, প্লিজ,
বিরক্ত হয়ে সোহান চলে যায়, আড়াল থেকে সোহানের কথা শুনে মুচকি হাসে ললনা, সে খুশি মনে গান গাইতে গাইতে যায় ,,
– প্রেমে পড়েছে মন,
– প্রেমে পড়েছে,
– অচেনা এক মানুষ আমায়
– পাগল করেছে,,,,(প্রিয় একখ্যান গান 😫)
————-
এইদিকে সোহানা আর হিয়া চুপচাপ হিয়ার ঘরে বসে আছে, সোহানা যাও তৈরী কিন্তু হিয়া জেদ ধরে বাসার নরমাল পোষাকেই বসে আছে ,সোহানা কথা বলার সাহস পাচ্ছে না , সেই সকালে বাড়ী ফেরার পড় থেকেই চোখ মুখ কেমন করে আছে, এদিকে তামিম কে যে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার ও উপায় নেই, তামিম আর সামী বাড়ী ফিরেছে পর থেকে কোনো না কোনো কাজে বেস্ত আর সামী কে তো ভুলেও জিজ্ঞেস করার মতো সাহস সোহানার নেই অবশ্য সোহানটার কোনো ভয় ডর নেই ও জে কিছু বলবে তাঁর ও উপায় নেই সে ও কাজে বেস্ত, সোহানা কিছু ক্ষন ভাবলো, তার পড় তাঁকালো হিয়ার দিকে সে জানালার পাশে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,,সোহানা সাহস করে এগিয়ে যায় হিয়ার কাছে কাঁধে হাত রেখে বলে,,
– কিরে রেডি হবি না? বরপক্ষ তো বুঝি চলে এসেছে, নিচ থেকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে,
হিয়া যেনো সোহানার এই প্রশ্নটারই অপেক্ষায় ছিলো বাঘিনীর ন্যায় গর্জে বলে,,
– তৈরী হয়ে কি করবো তোর ভাইয়ের কোলে বসে থাকবো? মেজাজ টা যা গরম হচ্ছে,, এই লোক আমার পুড়ো বিয়ে বাড়ির আনন্দ মাটি করে ছেড়েছে, না একটু আনন্দ করতে পারলাম মেহেন্দি তে,না কালকে হলুদে আর আজ তো তোর ভাই আমাদের ঘর বন্দী থাকার আদেশ ঝাড়ি করেছে বলতে পারিস, আরে ভাই বিয়ে বাড়ির মজাই তো গেট ধরায়, জুতো চুরি করায়, বরের হাত ধুয়ে টাকা নেওয়া এগুলো, তো এগুলো ই যদি না করি তাহলে কিসের বিয়ে বাড়ির আনন্দ?
কথা গুলো বলে একটু থামে হিয়া,সোহানার ও মন খারাপ করে তবুও ভাই তো তাদের ভালোর জন্যই ঐদিকে যেতে নিষেধ করেছে ,সোহানা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
– তাই বলে তৈরী হবি না? ভাইয়া তো শুধু ঐসব ঝামেলায় যেতে নিষেধ করেছে, তোকে তো ঘর বন্ধি হয়ে থাকতে বলে নি!
– হবো না আমি তৈরী, যাবো না নিচে পড়ে দেখা যাবে পান থেকে চুন খসলেই তোর ভাই আমাকে সবার সামনে থেকে টেনে রুমে এসে দৌড় দিবে,, শালা,,
আর কিছু বলার আগেই দরজার সামনে থেকে ভেসে আসে পুরুষালী কন্ঠসর,,
– সোহানা তুই একটু বাহিরে যা তো, তোর বান্ধবীর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে,
সামীর কথা শুনে যেই না সোহানা উঠবে হিয়া সোহানার হাত ধরে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,,
– খবরদার যদি বাহিরে গেছিস, এই আপনার যা বলার ওর সামনেই বলুন, নয়তো ভাগুন,,
সামী ভাবলেশহীন কাধ উঁচিয়ে বলে,,
– ওকে নো প্রবলেম,, এখন আসি মূল কথায় তাড়াতাড়ি রেডি হো, এইটাই বলার ছিল।
– হবো না,
– তুই নিজে রেডি হবি নাকি আমি,,
ভাইয়া আমার একটা জরুরি কাজ আছে, আমি একটু আসছি বলেই সোহানা নিজের হাত ছাড়িয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করে, হিয়া চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে সামী ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,
– তো আমরা যেনো কোথায় ছিলাম মিসেস? ওহ হ্যায় তো রেডি কি আপনি হবেন নাকি আমি,,
সামিকে শেষ করতে না দিয়ে হিয়া চেঁচিয়ে উঠে,,
– চুপ করুন অসভ্য পুরুষ, আল্লাহ্ এ কেমন লোক কে আমি বিয়ে করে ফেললাম? এই আপনি সত্যিই আমার শিকদার সাহেব তো?
সামী এগিয়ে আসে হিয়ার কাছে, বলে,,
– বিশ্বাস না হলে চুমু খেয়ে টেস্ট করে দেখুন, আপনার পুরুষই কিনা?
– আস্তাগফিরুল্লাহ, আল্লাহ্ এই আপনি আমার শিকদার সাহেব হতেই পারেন না!
সামী ঠোঁট কামড়ে হাসে হিয়ার কাছ এসে বেবী হেয়ার গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,
– অভদ্র হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে তাই,,
হিয়া সামী কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হাত ধরে রুমের বাহিরে বের করতে করতে বলে,,
– আপনি এক্ষুনি বেরোবেন আমার রুম থেকে আপনার এইসব নষ্ট কথাতে আমার মাথা ঘুরছে,, বেরন বলছি বেরণ!
বলেই হিয়া সামিকে বের করে দিয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়, হিয়ার কাণ্ডে সামী হাসতে হাসতে বলে,,
– আমার বোকা ফুল!
#চলবে,,,,
#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(১৭)
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই পাত্র পক্ষ রওনা হওয়ার তাঁরা লাগালেন তাতেই যেনো বিয়ে বাড়ির আনন্দে ভাটা পড়লো, হুট করেই সব কেমন থমকে গেল বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো তায়েবাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে গাড়ির কাছে জোড় করে নিয়ে গেলো তৌফিক মীর মেয়েটা বাবার বুকে মুখ গুঁজে কাদছে, তুহিন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পাশে দাঁড়িয়ে, বাড়ির সবার চোখে জ্বল চিকচিক করছে, তাসাউফ মীর তাইয়েবার হাত ধরে তাইয়েবার শশুরের হাতে দিয়ে বলেন,
– আমার বাড়ির অনেক যত্নে গড়া ফুলটাকে আপনার হাতে দিলাম ভাই সাহেব , ভাইয়ের মেয়ে হলেও ওর মুখে বাবা ডাক আগে শুনেছি, বড় বাবা বলে তবুও বাবা তো বলে! আমার বড় মেয়ে ও,ও কষ্ট পেলে মানতে পারবো না , আমার বাড়ীর ইজ্জত এখন আপনার বাড়ির বউ আশা রাখছি কোনো রকম অনাদর ওর হবে না,
দূর আড়ালে থেকে দাঁড়িয়ে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে হিয়া,তাঁর কল্পনায় ভেসে উঠলো কিছুক্ষণ আগের এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা, সে ঠিক কি করবে ভেবে পায় না, তামিম কে জানাবে? নাকি সামিকে, পরমুহুর্তে কি কি ঘটতে পারে তা ভেবেই হিয়া শিউরে উঠে, হিয়ার চোখে ভেসে ওঠে তামীমের ধ্বংসযজ্ঞ আর সামী! সামী যদি ভুল বুঝে ঘৃণা করে? তখন সে কি করবে? কোথায় যাবে?
হিয়ার ধ্যান ভাঙ্গে কাঁধে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে, হিয়া শিউরে উঠে সাথে সাথে পেছন ফিরে তাকায়, সামী কে দেখে ধরে রাখা শ্বাস ফেলে, সামী ভ্রু কুঁচকে গেল এলোমেলো হিয়া আর তার চোখে পানি দেখে বলে,,
– কি হয়েছে? এভাবে দূরে দাড়িয়ে আছিস কেন? তোর বোনের বিধায় হচ্ছে এখন অন্তত ওখানে যা,তোকে ছেলেদের থেকে দূরে দূরে থাকতে বলছি হিয়া,সব কিছু থেকে নয়,আমরা কাজে বেস্ত খেয়াল রাখতে পারবো না, বিয়ে বাড়ি কত রকম ছেলে পেলে আসবে ভেবে রাগ করেছিস আমার উপর? কাদছিস কেন? এই তাকা আমার দিকে!
হিয়া ছলছল চোখে মুখ তুলে তাকায় হুট করেই হুস জ্ঞান হারিয়ে সামীর বুকে মুখ গুঁজে হুহু করে কেঁদে ওঠে বলে,,
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে শিকদার সাহেব! আমি আপনাকে বোঝাতে পারছি না, আমি কাওকেই বলতে পারছি না,
সামীর বুকটা কেমন যেন করে উঠল, হিয়ার এই কান্নাটা কেনো যেনো ভালো ঠেকলো না, সে দেখলো অনেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তবে এতে তাঁর কিছুই এলো গেলো না সে এক হাতে হিয়াকে ধরে আরেক হাতে হিয়ার মাথায় রেখে কোমল কন্ঠে শুধায়,,
– কি হয়েছে ফুল? আমাকে বল মনে রাখিস তোর সাথে তোর স্বামী আছে, যা তুই কাও কে বলতে পারবি না তা আমাকে বলবি,, বল কি হয়েছে?
হিয়া কিছু বলে না উল্টো আরও জাপ্টে ধরে সামী কে, দূর থেকে এমন দৃশ্য দেখে তানিম, সোহান,সোহানা দৌড়ে আসে ততক্ষণে সাড়া বাড়ী হিয়া কে নিয়ে ছি ছি করে উঠে, অবিবাহিত দুই ছেলে মেয়ে সবার সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকায় কিচ্ছা রোটে যায়, খবর পৌঁছে যায় কনে বিদায়ে বেস্ত থাকা মীর বাড়ির সবার কানে ও, তাসাউফ মীর যেনো ভাষা হারিয়ে ফেললেন, বরের বাড়ির লোক জন এখনো বাড়ির উঠোনে কথা টা সাভাবিক ভাবেই তাদের কানেও চলে আসে, তাসাউফ মীর ছুটে যান হিয়া দের ওখানে গিয়ে দেখেন হিয়া সামী কে শক্ত করে ধরে হুহু করে কাদঁছে, তাসাউফ মীর কে দেখে ও সামী হিয়াকে ছাড়ে না উল্টো বেস্ত গলায় আবারও বলে,,
– কি হলো বল কি হয়েছে?
– ঐ লোক আমাকে ভীষণ বাঝে ভাবে স্পর্শ করেছে শিকদার সাহেব,
কথাটা শোনা মাত্রই সামীর কোমল হাত শক্ত হয়ে উঠে, তামিম, সোহানদের ও চোখে আগুন জ্বলে উঠল, তাসাউফ মীর সহ সবাই স্তব্ধ, হিয়া কান্না করতে করতে বলে,,
– অনেক বাজে কথা বলেছে, কু প্রস্তাব দিয়েছে,, বিশ্বাস করুন আমি,,
সামী হিয়াকে শেষ করতে না দিয়ে হিয়ার দু বাহু শক্ত করে ধরে বুক থেকে তুলে ধরে, শক্ত কন্ঠে বলে,
– কে সে? জলদি বল, এইই এইই মেয়ে নাম বল
সামী চিৎকার করে উঠে, সামীর রাগ দেখে হিয়া কাদে ততক্ষণে তামিম এসে হিয়াকে ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলে,,
– কি হলো বল, কে ঐ জানো*য়ার আজকে তাকে মাটি চাপা দিবো
হিয়া কাদতে কাদতে বলে
– আমি চিনি না ভাই তবে বরযাত্রীর ই একজন,
এ কথা শুনে সবাই আরো বেশি অবাক হয়ে গেল, লোকে উল্টো হিয়া কে ছি ছি করলো বর যাত্রীর লোক থেকে একজন বলে উঠল,,
– একদম আজেবাজে কথা বলবে না মেয়ে, আমাদের কোনো ছেলেই এমন কাজ করতে পারে না, আর যদি করে ও থাকে আমার তো মনে হয় তুমিই উস্কে দিয়েছ তোমারই তো চরিত্র দেখছি খারাপ না হলে এমন বাড়ী ভর্তি লোকের সামনে পরপুরুষের গায়ে অমন ঢলে পড়তে পারতে?
কথা টা শোনা মাত্রই হুংকার ছাড়লো সামী চেঁচিয়ে উঠলো, হিয়ার হাত ধরে বড় গলায় বলে উঠলো,,
– কে? কে বলল পরপুরুষ? বিয়ে করা বউ আমার বিশ্বাস না হয় ওর ভাই কে জিজ্ঞাস করুন, হিয়ার দিকে তাকিয়ে ওকে ধরে টেনে নিতে নিতে বলে,, আয় এক্ষুনি দেখা কে ?কার এতো বড় কলিজা হয়েছে আমার কলিজায় হাত দেয়,,
ছেলে টা কে খুজতে খুব বেশি কসরত করতে হলো না অবস্থার বেগতি দেখে ছেলেটা পালাতে গিয়ে ধরা খায় তুহিনের হাতে তামীমের নির্দেশ মতো ছেলে পেলে নিয়ে মূল ফটকের ওখানে ছিলো সে, জানা যায় ছেলেটা তাইয়েবার মানা শশুরের ছেলে মায়ান, যে লোক হিয়ার বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করে ঐ লোকের ছোটো ভাই, প্রথমে ছেলেটা অস্বীকার করলেও সামীর হাতে এক ধাপ মার খেয়ে শিকার করে । জানা যায় সামীর ধকম খেয়ে যখন হিয়া নিচে নেমে ছিলো তখন থেকেই মায়ান হিয়াকে ফলো করে, হিয়া প্রথমে ভালোভাবে নিষেধ করে, তাও না শুনলে কড়া হয়ে কথা বলে তাতেই মায়ানের ইগো তে লাগে এবং হিয়াকে সুযোগ বুঝে মুখ বন্ধ করে আড়ালে গিয়ে বাজে মন্তব্য করে এবং ধস্তাধস্তিতে খারাপ ভাবে স্পর্শ করে হিয়ার শরীরের, সব শুনে ক্রোধে ফুঁসে ওঠে দুই পুরুষ,সাড়া বিয়ে বাড়িতে মুহুর্তেই তাণ্ডবলীলা বয়ে গেল, এতো কিছুর মধ্যেও তাসাউফ মীর স্তব্ধ হয়ে আছেন ,, সব সময় যে তামিম সামী রেগে গেলে তাকে শান্ত করতো আজকে সে জায়গায় ওড়া দুজন মিলে বেধড়ক পেটান পেটালো ছেলেটাকে ,, সব প্রমাণ হওয়ার পর বরপক্ষ হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলেন মীর বাড়ির সবার কাছে, হিয়ার কাছে, কিন্তু তাসাউফ মীর স্তব্ধ, আয়েশা মীর মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে বসে চোখের জল ফেলছে, একি হয়ে গেল তাঁর ফুলের মত মেয়ের জীবনে, তৌফিক মীর মাথায় হাত এক মেয়ের বিয়েতে আরেক মেয়ের সাথে এইটা কি হয়ে গেলো ? সামীকে যখন কিছুতেই থামানো গেলো না তখন তৌফিক মীরের সাহায্যে জসীম শিকদার পুলিশ ডেকে মায়ানকে নি পুলিশ তুলে দিয়েছে তাদের হাতে, বরপক্ষ অনুরোধ করে পুলিশ না ডাকার জন্য,, জসীম শিকদার জানান, এই মুহূর্তে সামী কে থামানো মুসকিল, ওর হাতে মরার চেয়ে পুলিশের কাছে বন্ধী হওয়া ভালো, মায়ান কে পুলিশ নিয়ে যেতেই সামী হিয়াকে আয়েশা মীর এর কাছ থেকে টেনে নিয়ে তাসাউফ মীরের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়,, দৃষ্টিতে তার এখনও আগুন জ্বলে, কড়া গলায় বলে,,
– নিয়ে যাচ্ছি আমার বউ, কাবিন নামার প্রয়োজন হলে তামীমের থেকে নিয়ে নিবেন, অপনার বাড়িতে ও সুরক্ষিত নয় তাই নিয়ে যাচ্ছি, আসা করি অপনার কোনো সমস্যা নেই,
এই প্রথম সামীর কথার প্রতিবাদ করলো না, শুধু চেয়েই রইলো, সামী পেছন ফিরে সোহানাকে বলল,
– সোহা সাথে আয় আমরা এক্ষুনি বের হবো, ওর তোকে প্রয়োজন।আর মা সব গুছিয়ে দ্রুত ফিরে এসো, বলেই হিয়াকে টেনে নিয়ে
চলে গেলো সামী তাঁর পেছন পেছন দৌড় লাগালো সোহানা ! কিছুক্ষন পরেই শোনা গেলো গাড়ি স্টার্ট করার আওয়াজ তায়বার বিদায়ের আগেই অনাকাংখিত ভাবে বিদায় হলো হিয়ার, আয়েশা মীর তাসাউফ মীর কে বলে,,
– আপনি কিছু বললেন না কেন? আমি আমার মেয়েকে ছাড়া থাকবো কি করে? আমাকে এখন ওর দরকার!
– ওর এখন যার দরকার তার সাথেই গেছে, তৈরি হও আমরাও বের হবো।
বলেই তাসাউফ মীর উঠোন প্রস্থান করলেন,
—————-
নাটোর থেকে হিয়ারা ফিরেছে আজ তিন দিন, সামী সেদিন রাগের মাথায় হিয়া কে নিয়ে শিকদার নিবাসে আসলেও তামিমরা ঢাকায় ফিরতেই হিয়া কে নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটে দিয়ে এসেছে, হিয়া আশ্চর্য্য বনে গেলো তখন যখন তাদের বিয়ের খবর জানার পরও কেউ কোনো প্রকার টু শব্দ পর্যন্ত করলো না, তাসাউফ মীর ও না, হিয়া পা টিপে টিপে মা বাবার রুমের দিক গেলো তাসাউফ মীর চোখে চশমা লাগিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বই পড়ছে আয়েশা মীর রোদে শুকানো পোশাক ভাজ করে আলমারিতে তুলছেন, হিয়া রুমের দরজার সামনে এসে মিনমিনিয়ে বাবাকে ডাকে বলে,,
– আসবো?
তাসাউফ মীর উঠে বসে, বইটা সাইট টেবিলে রেখে চশমা খুলে হেসে বলে,,
– এসো,, তুমি আবার কবে থেকে অনুমতি নেওয়া শুরু করলে? এসো!
হিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বসে খাটের এক কোণে , আয়েশা মীর এসে বসে হিয়ার পাশে, হিয়া কিভাবে শুরু করবে ভেবে পায় না, তাসাউফ মীর বুঝলেন মেয়ের অবস্থা মুচকি হেসে বললেন,,
– তোমার সাথে তেমন একটা কথা হয়নি বলে ভেবো না আমি তোমার উপর রেগে আছি, আসলে আমি বা আমরা তোমাকে একটু স্পেস দিতে চাচ্ছিলাম, সময় নাও, যা হয়েছে ভুলে যাও ঐ নর্দমার কীট তোমার জীবনে এক মুহূর্তের জন্য হলে ও যেনো প্রভাব ফেলতে না পারে, আর যদি তুমি তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলতে চাও তাহলে বলব, চিন্তা করো না এই বিষয়ে তোমার বা তোমার ভাইয়ের প্রতি আমার বা তোমার মায়ের কোনো রাগ নেই, কারণ এই বিয়ে একটা সময় হতই, এটা আমি চাইলেও না চাইলেও,
হুট করেই তাসাউফ মীর একটু হাসলেন মুচকি হাসি না একটু জোড়ে সরেই হাসলেন, এভাবে মন খুলে মীর সাহেব সাধারণত হাসে না, হিয়া অবাক হয় বাবার স্বাভাবিক ব্যবহারে, মীর সাহেব হেসে বলেন,
– না চাইতেও দুশমনের আজ একটু সুনাম করতেই হচ্ছে শত হোক একমাত্র মেয়ে জামাই বলে কথা,সামী ঘাড় ত্যাড়া একটু বদ মেজাজী হলেও তোমাকে সুখে রাখবে,
হিয়া এখন মোটামুটি আগের ফর্মে ফিরে এসেছে কৌতুহলী হয়ে শুধায়,,
– তুমি না চাইতো ও বিয়ে হতই?
মীর সাহেব হেসে বলেন,, হ্যাঁ,, যে ছেলে সদ্য আঠারো বছরে পড়া যুবক হয়ে তোমার বাবার মতো শক্ত লোক কে হুমকি দিতে পারে সে ছেলে এখন বলবান, এখন কি আমাকে মানবে নাকি? যে ছেলে তোমাকে দেখতে এসেছে শুনে এক দিনের মধ্যে দেশে চলে এসেছে, আমাকে তোমার ভাইকে হুমকি দিয়েছে , সেখানে তোমাকে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়া স্বপ্ন!
হিয়া শুধু চোখ বড় বড় করে শুনলো,
#চলবে,,,
#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(১৮)
আজকে ডিসেম্বরের শেষ দিন আর কিছু ঘন্টা পরই শুরু হবে নতুন একটা বছর, আর সেই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মুখিয়ে আছে তরুণ প্রজন্ম, এক সাথে খাওয়া দাওয়া মজা মস্তি ফানুস,আতসবাজি,তারাবাতি গ্রেনেড বম, আরো কতো কিছুর জোগাড় । চারদিকের বেপার সেপারই অন্যরকম সারা বিকেল ঘুরে দু হাত ভর্তি বিভিন্ন রকম আতশবাজি বম, ফানুস ইত্যাদি কিনে বাড়ী ফিরলো সোহান, ড্রইং রুমের দরজায় দাড়িয়ে দেখলো সোহানা সোফায় দাদুমনির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে বায়োলজির বইয়ে মুখ গুজে আছে, সোহান বিরক্ত হলো, বলা যায় মহাবিরক্ত হলো, এই মেয়ে এখন সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে বই পড়বে আর বকা শুনতে হবে তাকে, তাঁর ভাবনাকে সত্য করে ড্রইং রুমে এসে উপস্থিত হলেন শাহানা শিকদার, সোহানের দু হাত ভর্তি ব্যাগ দেখে বলেন,,
– এসেছেন আপনি? কোন রাজ কার্যে সারা বিকেল খুইয়ে এলেন? আর হাতে ঐসব কি?
শাহানার কথায় সোহানা মুখ থেকে বই সরিয়ে উঠে বসে, জাহানারা বেগম তসবিহ হাতে জিকির করতে করতে তাকালো সদর দরজার দিকে। সোহান সবার চাহনী দেখে বিরক্ত হয়ে দু হাতে থাকা ব্যাগ গুলো তুলে দেখিয়ে বলে,,
– এগুলো কিনতে গিয়েছিলাম, তোমার মনে হয়না তুমি তোমার বড় ছেলে আর মেয়েকে বেশি ভালোবাসো?
সোহানের কথায় শাহানা শিকদার অবাক হয়ে গেলেন বলেন,,
– কি আজব ব্যাপার, এগুলো কেমন কথা? মায়ের ভালোবাসা কি ভাগ করা যায় নাকি?ভালো না বাসলে কি এমনি এমনি বড় হয়ে গেলি?
শাহানা রেগে গেলেন তাঁর সন্তান সবকটাকে সে নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসে আর এই হারে বজ্জাত ছেলে বলে কি? সোহান আরও বিরক্ত হয়ে বলে,,
– হয়েছিই তো তুমি ভাইয়া আর সোহা কে বকো নাকি? কিছু হলেই আমাকেই বকা দাও,এই বাড়ির যত দোস সোহান ঘোস!
বলেই সোহান হনহনিয়ে উপরে চলে গেলো, এদিকে শাহানা শিকদার টলোমলো চোখ নিয়ে জাহানারা বেগমের কাছে গিয়ে বলল,,
– দেখলেন আম্মা? দেখলেন এই ছেলে কি বলে গেলো? কোনো মা কি কোনো সন্তান কে কম ভালোবাসে? আমি নাকি তাকে ভালবাসি না বকাবকি করি, হ্যায় বকাবকি করি তার তো একটা কারণ থাকে, সারা দিন বাঁদরামি করবে আর আমি কিছু বলবো না? শুধু শুধুই রাগ করে গেলো আমার সাথে,
এইবার মুখ খুললেন জাহানারা বেগম পুত্রবধূ কে সান্তনা দিয়ে বলল,,
– এই পাগলের প্রলাপ শুনে দেখি তুমিও কান্নায় মজেছ, ও তো এমনই থাক আজ আর কিছু বললে বোকো না, কষ্ট পাবে। এই সোহা দেখতো পাগল ক্ষেপলো কেনো যাহ্।
জাহানারা বেগম চোখ টিপ দিতেই সোহানা বইটা সোফার উপরে ফেলে উঠতে উঠতে মাকে উদ্যেশ্য করে বলে,,
– কেঁদোনা, ও তো তারছিরা দেখো এখনই বেলাজের মতো হাসতে হাসতে নিচে নামবে, দাড়াও আমি দেখছি।
বলে সোহানের রুমে যেতেই দু ভাই বোন অপরের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো, সোহান হাসতে হাসতে বেডে বসা থেকে শুয়ে পড়লো,সোহানা বলল, খুব জব্ধ করেছিস আজকে আর কোনো কিছু তে বকা দিবে না, সোহান হাসতে হাসতে বলল,,
– হ্, যদি বলতাম বম এনেছি ফাটাব বলে , তা হোলে আম্মাজান এই বম আমার মাথায় ফাটাতো, বুড়ির মাথায় কিন্তু দারুণ বুদ্ধি,
তখনই রূমে প্রবেশ করে জাহানারা বেগম সোহানের শেষের কথা তিনি শুনে ফেলেছেন,, তাই মুখ ঝামটা দিয়ে বলে,,
– কে বুড়ি? তুই বুড়া তোর বউ বুড়ি, আসছে আমারে বুড়িকইতে, আমার এখনো বয়সের হইছে কি?
সোহান দাদুকে ক্ষেপাতে আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে হাসতে বলে,,
– বলো কি? তুমার বয়স হয় নাই? ঠেঙ্গ তো একটা নিয়া ঘুরো আরেকটা দাদাজানের কাছে, আর বলে কিনা বয়সের হইছে কি?
জাহানারা বেগম ক্ষেপে গেলেন বৃদ্ধ শরীর নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এগিয়ে গেলো সোহানের কাছে ক্ষেপাটে গলায় বলল,,
– ঐ ছেমরা ঐ,, তুই কি কইতে চাস? আমার এক পাও কবরে গেছে গা?
সোহান উঠে দাদুমনিকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
– আস্তাগফিরুল্লাহ,, নাহ আমি কেনো আমার জোয়ান প্রেমিকারে ওই সব কথা কমু, তুমি তো আমার বউয়ের সতীন আমার পয়লা ভালুপাসা আমার দাদা আর আমার বউ।
সোহানের রসিকতায় সোহানা দাদুমনী দুজনেই হাসলো, সোহান তাঁরা লাগিয়ে বলল,,
– হিয়া রে কল লাগা, সন্ধ্যা হয়ে গেছে আরেকটু পড় বললে মামুনি আসতে দিবো না। দাদু তুমি কিন্তু মামুনির থেকে হিয়ার থাকার পারমিসন নিয়ে নিবা।
জাহানারা বেগম মাথা দুলিয়ে বলে,,
– তার জন্যই তো আইলাম, লাগা ফোন ।
সোহানা হিয়াকে ফোন করে,, ভিডিও কল রিসিভ হতেই হিয়াকে দেখা যায় হাসি মুখে, জাহানার বেগম হিয়াকে দেখে বলে,,
– কি ব্যাপার বিবিজি? সেই যে সোয়ামির সাথে আইলা আমি বাড়ি আসার আগেই গেলা আর তো আসার খবর নাই, বিয়ার খবর পাইলাম বাড়ী আইসা দেখা সাক্ষাত না কইরাই গেলা গা,নাতিন থাকতে তো কতই আইলা গেলা এখন বাড়ির বউ হইয়্যা খবর নাই কে?
হিয়া হাসলো সত্যিই নাটোর থেকে সামী প্রথমে তাকে শিকদার নিবাসে নিয়ে গিয়েছিল, ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়েছে , আর পরের দিন সকাল হতে না হতেই খবর এলো তুহিনরা বাড়ী ফিরেছে তাই সামী ও তাকে সকাল সকালই তাদের বাড়ি দিয়ে এসেছে। জাহানারা বেগম ছিলেন মেয়ের বাসায় এতো জার্নি উনি করতে পারবেন না বিধায় তাকে সামীর ফুপ্পির বাসায় রেখে সবাই গিয়েছিল নাটোর, জাহানারা বেগম শিকদার নিবাসে এসেছে ওড়া ঢাকায় ফেরার ও দুই দিন পর তাই ওনার সাথে আর দেখা হয়নি হিয়ার। হিয়া হেসে বলল,,
– তুমিও তো খবর নিলা না বুড়ি তোমার ভাগের সতিন বলে কি ভুলে গেলে নাকি? সপ্তাহ খানিক পড় এসেছো খবর নিতে?
জাহানারা বেগম হাসে বলে ,,আইয়া পর বাড়ীতে তাড়াতাড়ি, তারপর খবর নিমু নেয় বাড়ির বউ বাপের বাড়ি থেকে এইডা কেমন কথা,এমনিতেও দূরে দূরে থাকলে ভালোবাসা কইম্মা যায়, যত কাছকাছি থাকবি ততই মায়া বারবো,
সোহান জাহানার বেগমের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,,
– এই জাহানারা বানু কথা কমায় কও, হিয়া তুই আমার কথা শুন , বলেই ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে আজকের জন্য আনা বম আতশবাজি ফানুশ সব দেখিয়ে বলে,, আজকে তো থার্টি ফাস্ট নাইট, তুই আজকে আমাদের বাসায় এসে পড়, আমরা সবাই মিলে সেই মজা করবো দরকার পড়লে কাল সকালে আবার চলে যাস ,,
এসব দেখে হিয়ার ও খুশিতে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে, এমনিতেও নাটোর থেকে ফেরার পর সোহানাদের সাথে তেমন কথাও হয়নি না তো দেখা হয়েছে , তার ও মনটা আকুপাকু করে উঠলো যাওয়ার জন্য,
– কিন্তু আম্মু কি রাজি হবে? এদিকে বাসায় ভাইয়া ও নেই যে এখন দিয়ে যাবে, তোর ভাই ও তো নেই !
কথাটা হিয়া একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেলে নিজেই তড়িৎ চমকে উঠলো ভুল জায়গায় যে ভুল কথা বলে ফেলেছে বুঝে আসতেই জিব কামড়ালো, সোহান সোহানা জাহানারা বেগম সবাই হেসে ফেলল হিয়ার কাণ্ড দেখে জাহানারা বেগম চোখ টিপ্পনী দিয়ে বলল,,
– জামাই নাই তো কি হয়েছে , দেবর তো আছে নিয়ে আসবে যা ফোন টা নিয়ে তোর মায়ের কাছে দে, আমিও দেখি আমার বাইত আইতে আমারই নাত বউরে কে আটকায়। হিয়া একটু লজ্জা পেলো, গিয়ে আয়েশার কাছে ফোন দিতেই জাহানারা বেগম হিয়াকে ও বাড়ী পাঠানোর আলাপ পারেন, আয়েশা মীর ও রাজি হয়ে যান, এমনি সময় বললেও উনি রাজি হয়ে যেতেন আর এখন তো মেয়ের তাদের বাড়ির বউ ,
———–
একটা ডার্ক স্কাইব্লু কালার চুড়িদার পড়ে সেজে গুঁজে একদম তৈরী হিয়া, ড্রেসিং টেবিল থেকে নিজের সবচেয়ে প্রিয় সুঘ্রাণের আতর টা নিয়ে মাখছিল, তখন তাঁর রূমে আয়েশা মীর প্রবেশ করে হাতে তাঁর একটা হটপট, নাটোর থেকে ফিরেও হিয়া ঐ বেপার টা নিয়ে এতদিন গুমরে মরেছে, একা একা থেকেছে, কথাও কম বলেছে, তবে এতো দিন পর হিয়াকে আগের মতো চঞ্চল দেখে যেনো শান্তি অনুভব করলেন মুচকি হেসে হিয়ার সামনে গিয়ে বলে,,
– মাশাল্লাহ! সুন্দর লাগছে, ও বাড়ী যেতে চেয়েছিস যেতে দিচ্ছি, তবে মনে রাখিস এখন আর আগের মতো বাঁদরাম করিস না যেনো, ভুলে যাস না তুই এখন ও বাড়ির বউ,
হিয়া ভ্রূ কুঁচকায় বলে,,
– তো?
– হায়াহায় মেয়ে বলে কি? বাড়ির বউ বাঁদরাম করলে লোকে মন্দ বলবে না?
– না মামুনি,মন্দ বলবে না। যদি কেও আমার বেইব কে মন্দ কথা বলে তাহলে তাকে বাঁদরাম কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি দেখিয়ে দেব!
সোহানের কথায় হাসলো আয়েশা মীর, হিয়া দুজনেই, সোহান ও হাসলো হিয়া কে দেখে বলল,,
– ওয়াও ভাবিজান সেই লাগছে, আফসোস ভাইয়া বাড়ী নেই,
আয়েশা মীর কেশে উঠে, সোহান বোকা হেসে বলে,,
– হে হে,, ওপস ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেললাম, হোয়াট এভার বেইবি তাড়াতাড়ি চল, না হলে আমদের থার্টি ফাস্ট নাইট এখানেই শেষ হয়ে যাবে,
হিয়া চোখ রাঙিয়ে বের হতে যাবে, আয়েশা মীর হাতে থাকা হটপট্ টা হিয়ার হাতে দিয়ে বলেন,, গরম গরম তেলের পিঠা দিয়েছি, তোর মামুনীর হাতে নিয়ে দিবি, হিয়া সম্মতি জানিয়ে বেড়িয়ে গেলো, ফ্লাট থেকে বেরিয়েই সোহানের মাথায় মেরে বলল,,
– সব জায়গায় শুধু উল্টা পাল্টা কথা তাই না?
সোহান হেসে বলে,, উল্টা পাল্টা কি ঠিকই তো কইছি তুমার জামাই শুধু থাকলে বুঝতা ঠিক কইছি নাকি ভুল,,
হিয়া তেড়ে গেলো,, সোহান দৌড় দিতেই পেছন থেকে হিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,,
– দাড়া! দাড়া শালা নির্লজ্জের বাপ, তোরে মেরে একটু লাজুক বানিয়ে দেই,
সোহান হটাৎ থেমে যায় হিয়া ততক্ষণে ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে লম্বা শ্বাস ছেড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সোহান ওকে থামিয়ে বলে,,
– এই এক মিনিট,
হিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,,কি?
– আমার বদলে তোর ঐ বদমেজাজী বোন মিস ঝগড়ুটে কে একটু মেরে লাজুক বানিয়ে দে না, একটু প্রেম করি, বাবাগো না হলে এমনি যেই রাগ, আর ঘাড় ত্যাড়া, ঝগড়ুটে! মিস ঝগড়ুটে নাম কি এমনি এমনি দিয়েছি নাকি!
হিয়া আবারও তেড়ে যায় বলে,,
– মগের মুল্লুক নাকি? প্রেম করার জন্য তোর কাছে বোন দিবো না..
– দিবি না?
– না
– তাহলে আমিও তোকে ভাবী হিসেবে মানি না , যা তুই বহিষ্কার ভাইয়ের বউ,
হিয়া সোহানের চুল টেনে বলে,, আয় দেখাচ্ছি কে বহিষ্কার ভাইয়ের বউ!
————–
হাত ভর্তি খাবার আর হিয়া কে নিয়ে শিকদার নিবাসে আসলো সোহান, শাহানা শিকদার রান্না ঘর থেকে হিয়া কে দেখে দৌড়ে আসলেন, হিয়া হেসে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে হাতে থাকা হটপটটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,
– আম্মু পাঠিয়েছে,,
শাহানা শিকদার হটপট টা নিতেই সোহান তার হাতে থাকা খাবার গুলো দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল ,,
– নিয়ে রেখে দাও, আজকে আমাদের থার্টি ফাস্ট নাইট পার্টি তাই এনেছি, হিয়া আজকে থাকবে এই বাড়িতে মামুনি কে বলে নিয়ে এসেছি,
শাহানা মীর এইবার যেনো একটু বুঝলেন সন্ধ্যার সেই শুধু শুধু রাগের কারণ, তেড়ে গিয়ে বললেন,,
– তার মানে সন্ধ্যায় ওগুলো বম টম ছিলো তাই না রে বেয়াদব, তাই তো বলি এমন নির্লজ্জ ছেলে কেনো শুধু কথায় রাগ করবে,, আন এক্ষুনি তোর ঐ বম টম আন ঐ গুলো সহ তোকে বিদেয় করি,
রাগে ফুঁসে উঠলো শাহানা শিকদার, এর আগের বছর নিউ ইয়ারে বম ফাটাতে গিয়েছিলো বাড়ির পাশের মাঠে, সেখানে এক বাচ্চা ছেলে তারাবাতি জ্বালাতে ভয় পাচ্ছিল বলে সোহান জ্বালিয়ে দিয়েছিল, আগুন জ্বলে উঠতেই বাচ্চা টা তারাবাতি টা ভয়ে সামনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে, সামনে যেহেতু সোহান ছিলো দেশলাই হাতে ওটা গিয়ে পড়ে ওর হাতে, আর বারুদের আগুনে মূহুর্তেই পুড়ে যায় সোহানের বা হাতের বৃদ্ধা আঙুলের পুড়ো পাশ টা, সে কি করুণ অবস্থা হয়েছিল বারুদের আগুন লেগে, শাহানা শিকদার তো তার পর থেকে ওকে বমের ধারে কাছে ও ঘেঁষতে নিষেধ করেছেন, বম ফাটানো তো দূর,, শাহানাকে রেগে যেতে দেখে হিয়া জড়িয়ে ধরে বলে,,
– আরে চিল মামুনি,, চিল আগের বার তো বাহিরে ছিলো বলে অমনটা হয়েছে এবার আমরা সাবদানে সব করবো তুমি চিন্তা কোরো না তো, কিছু থাকলে খেতে দাও, খিদে পেয়েছে। একথা শুনে শাহানা শিকদার দ্রুত রান্না ঘড়ে ছুটলেন।
————-
শিকদার নিবাসের ছাদের উপর মাদুর বিছিয়ে বসে আছে সোহানা, আর হিয়া তারা চিপস্ খেতে খেতে গল্প করছে আর সোহান তাঁর রুমের সাউন্ড বক্স গুলো ছাদে এনে ফিট করছে গান বাজাবে বলে,, খাবারের ঝামেলা নেই সোহান বাহিরে থেকে সব নিয়ে এসেছে, গতবারের গ্রিল পার্টিতেই তার ওইসবের সখ মিটে গেছে, তাই এবার সব কিনে এনেছে । সব ফিট করে হালকা সাউন্ড এ গান ছেড়ে সোহান ও তাদের আড্ডায় যোগ দিলো,, তাদের বন্ধ মহলের গ্রুপে কল করে যারা এক্টিভ হলো কথা বলল,, গ্রুপ কলেই আড্ডা জমলো বেশ ভালো করে,, সোহান হাত ঘড়ি দেখে টাইম দেখলো আর মাত্র দশ মিনিট বাকি বারো টা বাজতে,, হিয়া তাঁর ফোনটা নিয়ে একটু সাইডে গিয়ে সামী কে কল দিল, কিন্তু তাকে বরাবরের মতো হতাশ করে দিয়ে ফোনের রিং টোন বাজার আগেই কেটে গেলো দেখা গেলো নেটওয়ার্ক প্রবলেম,, হিয়া হতাশার শ্বাস ফেলে, নাটোর থেকে ফিরেই সামী আবারও তাঁর কাজের জন্য চট্টগ্রাম গেছে, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে কথাও বলতে পারে না, হিয়ার মন খারাপ হয়। তবে সামীর সেই এসএমএস টার কথা, সে যেনো এসএমএস রুপি এক রচনা, মনে পরতেই লাজুক হেঁসে উঠে,, যেখানে লেখা ছিলো,,
“ব্যবসার কাজে আবারও চট্রগ্রাম যেতে হচ্ছে, তোকে এই অবস্থায় রেখে যেতে মন চায় না তবে আমার পার্টনার অসুস্থ ওইদিকের কাজ সামলাতে পারছে না তাই যেতে বাধ্য হচ্ছি, তোর উপর রাগ করে যাচ্ছি ভুলেও ভাব্বি না, আমি তোকে বিশ্বাস করি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি, তাই এসব ভাবার কারণ নেই, কল দিলে কেঁদে কেটে ভাসাবি তাই এসএমএস করলাম, তুই কাদলে কি আর আমি যেতে পারি? ওহ আরেকটা কথা নিজেকে প্রস্তুত কর ফিরে এসে তোকে এতো ভালবাসবো যে তুই ঐ হারামির নামও ভুলে যাবি, ভালো থাকবি তোকে বাপের বাড়ি দিয়ে এসেছি যাতে মামুণীর কাছে থেকে মন ভালো করতে পারিস এক শোকের মাঝে শশুর বাড়ী এনে আরেক শোক দিতে চাইনি তাই তবে ফিরে এসেকিন্তু আমার বউ আমার চাই, আমার জন্য দোয়া করিস
আল্লাহ হাফেজ ”
সোহানের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে হিয়ার সোহান কেকের উপর ফায়ার ক্যান্ডেল রেখে তাঁর উপর দেসলাই ধরে রেখেছে, হিয়া দ্রুত ওখানে গেলো, সোহান হাত ঘড়ির কাটার দিকে চোখ দিয়ে গুনলো,,
পাঁচ, চার, তিন, দুই, এক,,,
সোহান মোমে আগুন জ্বালিয়ে দিলো, গুনতে গুনতে
সাথে সাথে তারা সহ আশে পাশের সব ছাদ থেকে সবাই চেঁচিয়ে উঠলো ,, চারো দিকে গুঞ্জিত হলো,,
“হ্যাপি নিউ ইয়ার”
#চলবে