#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকাল সকাল বাড়ির পরিবেশ ঠান্ডা গতকাল যে এক তান্ডব চলেছে এ বাড়ির বসার ঘরে, তা যেনো সবাই দিব্যি ভুলে গেছে।নেহা সিঁড়ি দিয়ে নামছে পড়নে তার সুতি একটা গোল জামা,প্রতিদিনের মতোই তার সাজসজ্জা খুবই সাধারণ কে বলবে এই মেয়েটি সদ্য বিবাহিত এক নারী!
নেহা সবার শেষে এসেছে আজ খাবার টেবিলে, সব গুলো চেয়ারে একে একে নজর বুলালো,দুইটা চেয়ার খালি একটা নিখিলের পাশে আরেকটা সাব্বির ভাইয়ার পাশে। মুখে হাসি নিয়ে নেহার দিকেই তাকিয়ে আছে বৃষ্টি ওর পাশের চেয়ার টা দখল করেছে তার বজ্জাত চাচাতো ভাই রৌফ।
নেহা এগিয়ে গিয়ে রৌফ কে খোঁচা মারলো,ইশারা করলো নিখিল ভাইয়ের পাশের চেয়ারে বসার জন্য,রৌফ ও একই ইশারা করলো তুমি যাও আমি উঠতে পারবো না।বৃষ্টি রৌফ কে চোখ রাঙিয়ে বললো যা বলছি,রৌফ দুজনকে মুখ ভেংচি কেটে উঠে দাঁড়ালো গিয়ে বসলো নিখিলের পাশে।রৌফ কে পাশে বসতে দেখেই নিখিলের কপালে একটা ভাজ পড়লো, আড়চোখে একবার দেখলো নেহার অবস্থান।
বৃষ্টি তো নেহাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করছে
,,এই এই বলনা,বাসর রাত কেমন কাটলো?আমি তো জানার জন্য সুপার এক্সাইটেড!
নেহা মুখ ছোট করে বললো
,,তোর ভাই আমাকে মেঝেতে ঘুমাতে দিয়েছে,শরীর ব্যাথায় টনটন করছে আর তুই পড়ে আছিস বাসর নিয়ে!
বৃষ্টি যেনো আকাশ থেকে পড়লো,তার ভাই যতই কঠোর হোক তাই বলে নেহাকে মেঝেতে ঘুমাতে দিবে, এটা আবার কেমন কথা,নিজের ভাইয়ের প্রতি সত্যি বিরক্ত সে,বৃষ্টি আরো কিছু বলতে যাবে তখনই তাদের দুজনকে ধম ক দিলেন হামিদা বেগম।
,,সারাদিন একই বাড়িতে থাকিস একই সাথে কলেজে যাস,পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু ফুসুরফাসুর করিস তাও তোদের কথা শেষ হয় না?খাবার টেবিলে খেতে এসেও নিস্তার নেই।আবার কথা বলতে দেখেছি তো দুইটারে কান মলা দিবো আমি।
স্ত্রী কে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন শাহআলম চৌধুরী
,,আহ্! হামিদা বাচ্চা মানুষ এখন কথা বলবে না তো কবে বলবে,শুধু শুধু বকো না তো।
,,হ্যাঁ হ্যাঁ আমি কিছু বললেই তো তোমার চোখে পড়ে,আর এদের জানি মাথার উপর পরীক্ষা সে কথা তো বেমালুম ভুলে বসে আছে,দেখবে এইচএসসি তে বড় বড় চারটা ডিম নিয়ে আসবো দুইটায় মিলে।
বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে বলে
,,মা তুমি সব কথার মধ্যে আমাদের পড়াশোনা টেনে নিয়ে আসো কেনো বলোতো?ভাললাগে না!
সাব্বির দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে
,,বড় মা তুমি বরং বৃষ্টি কেও বিয়ে দিয়ে দাও,নেহার তো হয়েই গেলো।এদের দ্বারা পড়াশোনা কিছু হবে না।
বৃষ্টি নাক ফুলিয়ে বলে
,, ছি! সাব্বির ভাইয়া তুমি তো দেখছি জেরিন আপুর সাথে মীরজাফর গিরি করছো
জেরিন এতোক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিলো,নিজের নাম শুনতেই নড়েচড়ে বসলো।
,,এই কি বলোস বৃষ্টি সাব্বির আবার কি করলো?
,,তুমি বুঝো নাই এখনো আপু ভাইয়া তোমার আগে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।বলো কতো বড় অন্যায় হলো এটা!
এদের তর্ক বিতর্ক যেনো থামার নয়,আজ টেবিলে তাদের দাদী আর ছোট চাচ্চু উপস্থিত না থাকায় যেনো কথার খৈ ফুটেছে। তাহমিদা বেগম এসে বললো
,,তোরা যে খাবার টেবিলে চিল্লাফাল্লা করছিস এখনই দেখলাম এদিকে একজন আসছে!
সবাই একসাথে বলে উঠলো
,,কে আসছে ছোট মা?
,,কে আবার তোদের দাদী!
সব গুলার হাওয়া যেনো একসাথে বেরিয়ে গেছে।বৃষ্টি আর নেহা নাকে মুখে খাচ্ছে এমন ভাব,সাব্বির তো বলেই ফেলেছে আমার ভার্সিটি যেতে লেইট হয়ে যাচ্ছে আজকে মনে হয় ক্লাস নয়টায় শুরু হয়ে যাবে।
জেরিন বলে উঠলো
,,দ্বারা ভাই আমাকে অন্তত সাথে নে তোর থেকে এক বছরের বড় বোনের জন্য একটু হইলেও দয়া কর, বাঘের মুখে ফেলে এভাবে চলে যাস না ভাই!
জেরিন কে দেখেই তার দাদী আগে বলে মাইয়ার বয়স বাড়তাছে বিয়া করতে চায় না।আমার তো এই বয়সে তিন পোলা হইছিলো!জেরিনের কানে ঝংকার ধরিয়ে ফেলেছে তার দাদী বিয়ে কর বিয়ে কর বলে।বেচারি এখন দাদী কে দেখলেই অন্য দিক দৌড় দেয়।
রৌফ হচ্ছে সবচেয়ে ছোট বাড়ির, দাদীর মতে সবচেয়ে শান্ত সে তাই ওটাকে আবার এই বুড়ি কিছু বলে না।আরেকটা দাম*ড়া পোলা ওটারেও বাচ্চাদের মতো ট্রিট করে কথায় কথায় আমার নিখিল দাদু ভাই,, কথাটা মনে মনে ভেবেই হাজারটা গা লি দিয়েছে নেহা।
খাবার টেবিলে বসে নেহাকে দেখেই মুখ বাঁকালেন সেতারা বেগম।
নেহার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে
,,তাহমিদা তোমার মাইয়ার না কালকা বিয়া হইলো, কি পোশাক পড়ে বসে আছে,শাড়ি চুড়ি কিনার টাকার কি অভাব পড়েছে তোমাগো?বিবাহিত মেয়ের হাতে চুড়ি নাই কেনো এতে আমার নাতিটার অম’ঙ্গল হইবো বুঝো না তোমরা।
তার গমগমে কন্ঠটা যেনো সবাইকে মনে করিয়ে দিলো পূর্বের দিনের সব।তাহমিদা তাকালেন হামিদা বেগমের দিকে, দুই জা এর মাঝে চোখে চোখে কি যেনো কথা হলো!শাশুড়ী গলা শুনে রান্না ঘর থেকে ছুটে এসেছেন সাহারা বেগম।রৌফ ক্লাস টেনে পড়লেও ছেলেটা অতো শতো এখনো বুঝে না, প্যাচ কম মনে, বড়দের কথার মাঝে বসে থাকবে বিষয়টা বুঝতে পেরেই সাহারা ছেলেকে ইশারা করলেন উঠে যাওয়ার জন্য।
সবাই জানেন সেতারা বেগম এসব কুসংস্কার কতোটা বিশ্বাস করেন।এভাবে কঠোর হলেও মনের দিক থেকে নরম তিনি,তার পরও নরম রূপটা সবার থেকে আড়ালেই রাখেন। মানুষটা স্বামীর মৃত্যুর পর একা হাতে এতোবড় সংসার আগলে রেখেছেন, সময়ে পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে নিজেকে আড়াল করেছেন এক শক্ত খাঁচে।
নেহার কোনো স্বভাবই সেতারা বেগমের পছন্দ না ওইদিকে নিখিল আবার তার চোখের মনি বিয়েটাতে তার ঘোর আপত্তি ছিলো, ছোট ছেলের মেয়েকে তিনি শত্রু মনে করেন না কিন্তু নিখিলের মতো একজন শান্ত,ভদ্র ছেলের জন্য নেহার মতো উড়নচণ্ডী মেয়েকে নাত বউ হিসাবে মানতে তিনি নারাজ।তার মতে মেয়ে মানুষের এতো রাগ জেদ থাকতে নেই,এসব মেয়েরা সংসারী হয় না।
কিন্তু নাতির কথা ফেলতে পারেনি সে,কেনো যে নাতি এই ঘাড়’ত্যাড়া জে’দী মেয়েটাকে বিয়ে করলো কে জানে।শুধু নিখিল বলেছে পরিবারের ভালোর জন্যই এটা করতে বাধ্য হচ্ছে সে।
সেতারা বেগম তেঁতো মুখে আবার বললেন
,,নাকে তো ফুল ও পড়িস নাই। বিবাহিত মেয়েদের পড়তে হয় এসব। আজই যাবি নাক ফোঁড়াতে!
নেহা চেঁচিয়ে বলে
,,না, নাক ফুল পড়বো না আমি।আমার মোটেও পছন্দ না এটা,তোমার নাতির ভালো মন্দ এতো দেখতে পারবো না আমি!
,,নেহা,,,!
নেহা কথাটা বলার পরই খাবার টেবিলের সব কিছু কাঁপিয়ে নেহার নাম নিয়ে ধমক দিলো নিখিল।নেহা ও কিছুটা কেঁপে উঠেছে এতে।
নেহা একদমই শান্তশিষ্ট মেয়ে না,বাড়ির সবাই জানে কতোটা জে’দী নেহা,রাগ উঠে গেলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না কেউ নেহাকে।সবার ধারনা নেহা নিখিল কে কিছুটা ভয় পায় তাই ওর সামনে শান্ত থাকে।সেতারা বেগমের সাথে নেহার বনে না তবুও সে কিছু বলে না সেতারা বেগমকে, তবে আজ কিছু্টা হলেও গলার স্বর উঁচু হয়েছে।
হামিদা বেগম পরিস্থিতি সামলাতে বললেন
,,আম্মা আপনি এসব নিয়ে কেনো এতো ভাবছেন? মাত্রই তো বিয়ে হলো,নেহা ছোট মানুষ বড় হোক তখন সংসার বুঝবে স্বামী বুঝবে তখন গিয়ে না হয় নাক ফুলটাও পড়িয়ে দিবো।হঠাৎ করে বিয়েতে কেউই তো মানসিক ভাবে প্রস্তুত নয় তাই না।আপনি তো বড় একটু বুঝুন!
,,ঠিক আছে তবে হাতে চুড়ি পড়তেই হবে এখানে না শুনবো না আমি।নেহা খামচে ধরলো জামার দুপাশ রাগ লাগছে তার ভীষণ এখন,যে মানুষ টা তাকে স্ত্রী হিসেবে মানে না,তার নামে চুড়ি পড়ে বসে থাকবে কোন রঙে। এতো নাটক নেহা করতে পারবে না!
নেহা চোখ বন্ধ করে রেখেছে,দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেছে নিজের, বেয়া’দবি করতে চায় না কিছুতেই।
সেতারা বেগম সাহারা বেগম কে হুকুম দিলেন যাও আমার ঘর থেকে খাটের উপরে রাখা বক্স টা নিয়ে আসো।সাহারা যেনো মুহুর্তেই উড়ে গেলেন সেখানে।
——
বাড়িতে এখন নেহার বাবা আর সাব্বির,রৌফের বাবা নেই তারা দুজনই ব্যবসার কাজে বেড়িয়েছেন ভোরে।মায়ের সাথে কোনো দিনই পেরে উঠেন না শাহআলম চৌধুরী না পারেন ছেলের সাথে,তিনি নরম ধাচের মানুষ,বাড়ির প্রতিটি ছেলে মেয়ের সাথেই তার সম্পর্ক বন্ধুর মতো।নেহার জন্য খা রাপ লাগা কাজ করছে মনের এক কোনে,মেয়েটি তার ছোট ভাইয়ের একমাত্র সন্তান তার নিজের ছেলে যে খা রাপ তেমনটা না পাত্র হিসাবে সবাই পছন্দ করবে তাকে, তার ছোট ভাই ও মেয়ে দিতে দুবার ভাবেননি।কিন্তু ছেলেটা তো তার রগচটা এই বাচ্চা মেয়েটাকে ধম ক ছাড়া তো কিছু দেয় বলে মনে হয় না। প্রথমে তিনি ছেলের পাগ লামি দেখে ভেবেছিলেন নেহা কে হয়তো সে ভালোবাসে,একবার তো বলেছিলো নেহার আঠারো বছর হলেই নেহাকে বিয়ে দিয়ে দিবে কিন্তু বিয়েটা যে সে নিজে করবে এমনটা একবারও বলেনি। বিয়েটা ও করেছে একদম থ্রে ট দিয়ে।নেহার আঠারো বছর হয়েছে দুইদিন হলো,
বিয়ের আগের দিন সকালে হঠাৎ নিখিল এসে বললো সে নেহাকে বিয়ে করতে চায় তাও সময় দিয়েছে মাত্র একদিন,এখন যাতে শাহআলম চৌধুরী তার ভাইয়ের কাছে প্রস্তাব রাখে না হয় অন্য উপায় জানা আছে নিখিলের,শাহআলম সাহেব চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন যদি তার ভাই মেয়ে দিতে না করে দেয় তখন।কিন্তু না সব কিছুই ঠিক হলো নেহার মা তো নিখিল কে মেয়ের জামাই হিসেবে পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে পড়েছিলেন!
মাত্ররো দুইমাস পরই নেহার পরীক্ষা এর মধ্যে এতো মানসিক চাপ দেওয়া টা কি ঠিক হলো মেয়েটাকে, নিখিলকে কতোটা ভয় পেলে বিয়ের আসর ছেড়ে পালাতে পারে তা তিনি বুঝেছেন।তবুও নিরুপায় ছিলেন কাল কিছুই করতে পারেননি,না পারছেন এখন। কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে এতো কিছু করা টাকে তার কাছে অন্যায় মনে হচ্ছে। যা করছে তার ছেলে আর মা মিলে।
———
সেতারা বেগম নেহার হাত টেনে ধরে দুইটা স্বর্নের চুড়ি হাতে পড়িয়ে দিলেন।নেহার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কিছুতেই পড়বে না এটা,নিখিলের হাত মুষ্টিবদ্ধ হলো নহার প্রতি মনের কোনে জমে থাকা রাগ টা আরো কিছুটা বাড়লো
কঠিন পুরুষালী কন্ঠে নিখিল বললো
,,কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি তোদের এখানে সং সেজে বসে আছিস কেনো?কলেজে আজকে তোদের ফর্ম ফিলাপের লাস্ট তারিখ জানি ভুলে গেছিস, গিয়েই প্রথমে এই কাজটা শেষ করবি।
কথাটা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো নিখিল, পরেই জোরে হেঁটে প্রস্থান করলো ড্রয়িং রুম থেকে।
—–
কলেজ ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিরস মুখে বসে আছে নেহা।তাকিয়ে দেখছে হাতে পড়িহিত চকচকে চুড়ি গুলো।চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইছে তার,নিখিল নামক মানুষটার নামে সব কিছু তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবচেয়ে বেশি প্রিয়।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সে অন্য কারো হক মে রে দিচ্ছে, নিখিল তো নিজের স্ত্রীর জায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা করে তাকে তো করে না।মানুষটার কি তার প্রতি একটু করুনা ও হয় না?
কাল রাতে কিভাবে পারলো বলতে তুই মেঝতে ঘুমা তাহলে আমি খাটে ঘুমাবো।নেহা কি এতোটাই খারা প যে তাকে ভালোবাসা যায় না, আপন করে নেওয়া যায় না।নেহা চোখের কোনে আসা পানিটুকু মুছে ফেললো নিরবে।
নিজের রুমে বসে অপেক্ষা করছে বৃষ্টির কলেজ বেশি দূরে নয় হেঁটে গেলেও সময় লাগে আট থেকে দশ মিনিট,তাই অতোটা তাড়া নেই।
নেহা খেয়ালই করেনি কখন রুমে নিখিল এসেছে,নিখিল এসে দাঁড়িয়েছে নেহার ঠিক মুখোমুখি আচমকা নিজের সামনে নিখিলকে দেখে পিছনের দিকে হেলে গেলো নেহা।অবিশ্বাস্য চাহনি তার,নিখিল দুরত্ব কমিয়ে আনলো অনেকটা, নেহার হৃদপিণ্ডে যেনো হাতুড়ি পেটাচ্ছে কেউ,নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে ক্রমশ, কাঁপা কন্ঠে একবার বললো
,,কি,,কি করছেন নিখিল ভাই!
নিখিল এক পর্যায়ে নেহার হাত চেপে ধরলে বিছানায়, নেহা এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেছে, ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।
কিছু সময়ের মধ্যেই নিজের কানের কাছে নিখিলের রাগ ঘৃ না মিশ্রিত কঠিন কন্ঠ শোনা গেলো
,,আমার নামের চুড়ি হাতে দিতে এতো অনিহা তোর?প্রেমিকের নামের চুড়ি পড়তে পারিসনি বলে চোখের জল ফেলছিলি!
তোর সব কিছুতে অধিপত্যে শুধু আমার হবে,তোর জীবনের সব কিছু তুই নিজে লিখে দিবি আমার নামে,না দিলেও জোর করে হলেও নিবো আমি!তোর জীবনের সব গুলো বসন্তের ফুল ফুটবে আমার নামে।হোক সে ফুল বিষাদে ভরা!
নেহার মন চাইলো খুব করে জানতে চাইলো,কেনো জোর খাটাচ্ছেন আপনি, কিসের অধিকারে? কেনোই বা আপনি আমার বিষয় গুলো নিয়ে ভাবছেন?আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না।অন্য কাউকে ভালোবাসেন,যদি আমার মনে কেউ থেকেও থাকে তাতে আপনার এতো পুড় ছে কেনো নিখিল ভাই?
প্রশ্ন গুলো করার সাহস বা সুযোগ কিছুটাই পায়নি নেহা,তার আগেই নিখিল তাকে ওভাবে রেখে বেরিয়ে গেছে রুম থেকে।ফর্সা হাত দুটিতে নিখিলের আঙুলের ছাপ বসে গেছে।ব্যাথা ভুলে সেখানে হাত রাখলো নেহা,
মিহি সুরে বললো
,,ভালোবেসে না হোক, আপনি আমায় ছুঁয়ে তো দিয়েছেন নিখিল ভাই।আপনার ভালোবাসার স্পর্শ কোনো দিন পাবো কিনা জানি না।তবে আপনার ছোঁয়া পেতে আমি এরকম হাজার ব্যাথা মুখ বুঁজে সয়ে নিতেও রাজি!আপনি জানুন বা না জানুন আমি জানি আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি, আমার চাইতে বেশি ভালো কেউ বাসতে পারবে না আপনাকে, কখনো পারবে না!
ফুপিয়ে কেঁদে দিলো নেহা,কেনো সহ্য করতে পারছে না সে নিখিলের এতো উপেক্ষা? ভালোবাসার মানুষের উপেক্ষা কি দেয় মর ন যন্ত্র*ণা?
বৃষ্টি রুমে ঢুকে প্রথমেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নেহাকে, নেহার শুরু থেকে শেষ সব কিছু জানে বৃষ্টি দুজনের বয়সের পার্থক্য শুধু এক মাসের,বৃষ্টির এক মাসের ছোট নেহা।একই ক্লাসে পড়ে দুজন ছোট থেকেই একে অপরের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
প্রিয় বান্ধবীর কষ্ট গুলো যেনো ভিতরে ভিতরে গ্রা স করছে তাকেও জমছে মনের ভিতর নিজের ভাইয়ের প্রতি একরাশ অভিমান!
——
কলেজে প্রবেশ করই নেহার মন ফুরফুরে হয়ে গেলো,মেয়েটা সহজেই সব কিছু ভুলে যায়,এই হাসি তো এই কান্না।
কলেজের গেইট পেরিয়ে শহিদ মিনার, তার উপরেই বড় একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ।কৃষ্ণ চূড়া ফুল গুলো ছড়িয়ে আছে চারপাশে নেহা এক দৌড় লাগিয়েছে সেদিকে, এখন তেমন ক্লাস হয় না,টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে কিছুদিন আগে এখন ফর্ম ফিলাপ বা কোনো কাজ ছাড়া কেউ আসে না।বৃষ্টি অফিস কক্ষের দিক ছুটলো সে টাকা জমা দিয়ে এসেও পড়েছে দ্রুত সকালে একটু ভীড় কম থাকে না হয় তো পা ফেলার জায়গাই পাওয়া যায় না।
নেহা কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো বেনীতে লাগিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।কি যেনো দেখছে আর মুখভঙ্গিমা পরিবর্তন করছে।
বৃষ্টি এসে পাশে বসে একটা ঠেলা মারলো রসিকতা করে বললো
,,ও ভাবি কি এমন দেখো গো মোবাইলে? আমার ভাইয়ের ছবি নাকি?
নেহার এর মাঝে রেগে গেছে, ফোনটা বৃষ্টির হাতের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বলে
,,দেখ দেখ তোর ভাই ওই মেয়েটার সাথে,,,,আজকে তো এই মেয়েকে আমি সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।
বৃষ্টি চমকে উঠলো নেহা প্রায় অনেক দিন পর রেগেছে এর আগেও নিখিলের পাশে কোনো মেয়েকে দেখলেই গিয়ে মারা’মারি করে আসতো ওই মেয়ের সাথে। কতোবার তো বাড়িতে বিচার ও গিয়েছে বৃষ্টি সব সময় স্কুল কলেজের ঝা মেলা বলে কাটিয়েছে না হয় নিখিল ভাই নেহা কে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিতো!
বৃষ্টি নেহাকে থামায় মিনতির সুরে বলে
,,এরকম করিস না প্লিজ,ভাইয়া জানতে পারলে খারাপ হয়ে যাবে,ওই মেয়েটা ভাইয়ার পিএ!ওটা অফিসিয়াল প্রোগ্রাম তাই হয়তো একসাথে ছবি তুলেছে।
নেহা কথা শোনার পাত্রী নয়,সে এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটাকে ধরার জন্য। নেহার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভেবে,যদি অফিসে গিয়ে নেহা কিছু করে তো কেউ ভাইয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না নেহাকে।নেহা বৃষ্টিকে টেনে রিকশায় উঠালো।বৃষ্টি বুঝাতে গিয়েও হার মানছে।
নেহা রহস্যময় ভাবে হাসলো,বৃষ্টি দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
,,চিন্তা করিস না শুধু একটু উত্তমমধ্যম দিবো আর চাকরি টা ছেড়ে দিতে বলবো। আর মিহির ভাইয়ের সাথে ও বোঝাপড়া আছে আমার নিখিল ভাইয়ের জন্য মেয়ে পিএ রাখলো কেনো উনি?
,,মিহির কে টানছিস কেনো এখানে?
,,একদম প্রেমিকের জন্য দরদ দেখাবি না আমার সামনে।
,,যাচ্ছি কোথায় আমরা?
,,পিএ ওরফে লিমাকে কি ডনাপ করতে!
,,কিহ্!
নাম এসে পড়েছি,বৃষ্টি আশেপাশে তাকালো খুব সতর্ক ভাবে নেহা নিশ্চিত একদিন তাকে জেল হাজতে নিয়ে পরে থামবে,আর দাদী তো নেহাকে সাহায্য করার দন্ডে তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে কোনো বুড়ো লোকের সাথে।
ফর্মাল ড্রেসে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে গলির সামনে,নেহা মুচকি হেসে মেয়েটার সামনে গিয়ে বলে
,,আপু আপনি দেখতে ভীষণ সুন্দর এই ফুলটা আপনার জন্য!
মেয়েটা খুশিতে গদগদ হয়ে ফুলটা হাতে নিয়ে নাকে শুকলো।বৃষ্টি তার দিকে তাকিয়ে বলছে ফুলটা নাকের কাছে নিস না বইন। কিন্তু না বৃষ্টির মনকামনা পূর্ণ হলো না,চিকন গড়নের পাতলা মেয়েটা ঢলে পড়লো নেহার উপর।
——
দুপুর গড়াতেই নাতিকে কল করলেন সেতারা, এটা তার রোজকার নিয়ম, নিখিল দুপুরে অফিসে খেয়েছে কিনা তা জানতে একদিনও ভুল হয় না তার।
নিখিলের সাথে কথা বলার মাঝেই তিনি ড্রয়িং রুমে চেঁচামেচির শব্দ শুনলেন তাহমিদা নেহার উপর খুব চটেছেন। সেতারা কানে মোবাইল নিয়ে এগিয়ে গেলেন ঘটনা দেখতে নিশ্চিত মেয়েটা কোনো অকাজ করে এসেছে আবার।
সেতারা বেগম নেহাকে সদর দরজায় দেখে আঁতকে উঠলেন
সাদা কলেজের ড্রেসে রক্তের ছড়াছড়ি, হাতে সাদা রঙের একটা কাপড় পেঁচানো যার থেকে এখনো টুপটাপ লাল রঙের তরল পড়ছে।নেহার চোখে মুখে ক্রো ধ!
তার কানে তাহমিদা বেগমের কোনো কথাই ঢুকছে না।শব্দ করে পা ফেলে উঠে গেলো নিজের ঘরে।
পেছন থেকে বেরিয়ে আসলো বৃষ্টি তার জামায় অল্প লাল রঙ দেখা যাচ্ছে।
সেতারা বেগম কাহিনি না বুঝেই নিখিল কে বললো
,,আর বলিস না তো নিখিল নেহা টা তো দিন দিন মারা*মারি র উস্তাদ হয়ে যাচ্ছে আজকে তো মনে হয়
খু নখা*রাপি করে এসেছে রক্ত দিয়ে গোসল সেরে বাড়ি ফিরেছে হাত থেকে এখনো রক্ত পড়েছে ,,,
সেতারা বেগমের কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই কল কেটে গেলো।
“নিখিলের হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে সহসা বন্ধ হয়ে গেলো, মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো চেয়ারে।মিহির রুমে ঢুকলো তখনই।নিখিলের রাগে হাত পা কাঁপছে চোখ মুখ লাল হয়ে এসেছে।নিখিল গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে রাগে টেবিলের উপর রাখা একটা গ্লাস ফেলে দিলো।চেঁচিয়ে বলে উঠলো
,,আমি আজকে তোকে মে*রেই ফেলবো নেহা!এতো রাগ কেনো তোর নীহারিকা, একটু শান্তিও কি দিবি না আমায়,,,
চলবে?