প্রণয়ের সুর পর্ব-০৫

0
12

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সিঁড়ির উপরের করিডরে দাঁড়িয়ে এসব দেখে জেরিন বেশ ক্ষি’প্ত হয়।যতই প্রিয় খালামনির মেয়ে হোক তাই বলে এই মেয়ে তার ভাইয়ের সংসারে আ’গুন লাগাবে আর সে বসে বসে দেখবে এটা কখনো হতে পারে না।যে কোনো মূল্য এটাকে বিদায় করতে হবে।
জেরিন পেছন ফিরতেই ধাক্কা খায় সাব্বিরের সাথে,জেরিন মাথা ঘঁষে বলে
,,কিরে ভাই তুই যেখানে সেখানে চলে এসে এভাবে মানুষের মাথা ফা’টিয়ে দিতে চাস কেন?আজব এখনো বিয়ে করি নাই মাথা ফা’টলে পরে জামাই পাইতাম না আমি!

সাব্বির ভাবলেশহীন ভাবে বললো
,,তুই জামাই না পাইলে ও তোরে এই বাসায় রাখতাম না জেরিন বইন!
এতোক্ষণ তুই যা যা বিরবির করে বলছছ সবই আমি শুনে ফেলেছি।
আমার তেইশ নাম্বার সত্যিকারের গালফ্রেন্ডের লিপস্টিক ছুঁয়ে বলছি এ ক্ষেত্রে আমিও তোর সাথে সহমত!
আমার নেহা বইনরে ছাড়া নিখিল ভাইয়ের পাশে আমি আর কাউকে সহ্য করতে পারি না।

জেরিন মুখ কুঁচকালো মুখ তেঁতো করে বলে উঠলো

,,ছি! ছি! একটা শুভ কাজে তুই তোর গালফ্রেন্ড কে টেনে কাজটারে অপবিত্র করে দিলি একদম।

,,আচ্ছা আসল কথায় আসি,আমরা আমাদের কাজ সফল করতে সাথে বৃষ্টি আর মিহির ভাইকে নিতে পারি।রৌফ টাকে নেওয়া যেতো কিন্তু কি আর বলবো দুঃখের কথা, ভাইটা আমার পুরা মা ভক্ত সব কথা গিয়ে বলে দেয়।এ তো বিয়ের পর বাসরে কি কি করলো তা ও বলে দিবে বিশ্বাস কর জেরিন বইন আমার ভাইয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে আমি তিন প্য্যকেট কাঁচা কফি খেয়ে ফেলেছি।কিন্তু কোনো লাভ হলো না যেদিকে তাকাই শুধু কফির মতোই তিতা অন্ধকার দেখতে পাই!

জেরিন এবার কান চেপে ধরে বললো
,,প্লিজ এবার চুপ যা তুই।ভালো কথার মাঝে আজগুবি কথা গুলো কই পাস তুই।আল্লাহ তোর মুখে এতো শক্তি দিয়া দিছে।সর সর আমি রুমে যাবো।

জেরিন সাব্বির কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
,,,,
নেহা ঠিক করেছে সে কিছুতেই নিখিলের ঘরে থাকবে না রাতে।যে ভাবেই হোক বাবাকে বলে পরীক্ষার আগে পর্যন্ত অন্তত ওই ছেলের মুখোমুখি হবে না,পেয়েছেটা কি চকলেট আনা হচ্ছে আবার এনেছে ভালো কথা দেওয়ার আর বলার মুরোদ না থাকলে আনতে গেলো কেনো?যখন টয়া নিয়ে নিচ্ছিলো তখন বলতে পারেনি এটা নেহার জন্য এনেছি।যত্তসব ঢং তো শুধু নেহাকেই দেখাতে পারে, যত রাগ সব নেহার উপর অন্যদের সাথে হেসে একদম ঢলে পড়ে যায় অস’ভ্য পুরুষ!
নেহা একটু ভালোবেসে কথা বলে দেখে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি,আর এই ছেলেকে এক ফোঁটা ও দাম দিবে না নেহা, দেখাও গিয়ে পারলে এতো সব নাটক অন্য কাউকে।

নেহার একটা বই খুঁজে পাচ্ছে না রুমে।পুরো রুম খুঁজে ফেলেছে একদম এবার বিরক্তিতে বলে উঠলো
,, ধুর ছাই।
খাটে বসে পড়লো সে, এক তো নিখিলের উপর সে রাগ করেছে তার উপর বই খাতা গুলার ও ভাব বেড়েছে।
নেহা অনেকক্ষণ ভাবার পর মনে পড়লো বইটা নিখিলের ঘরে।
নেহা ওড়না গলায় ঝুলিয়ে নিখিলের রুমের কাছে আসলো তার ঘরের দুই ঘর পরের ঘরটা নিখিলের।নিখিলের ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে সবাই, নেহা একবার ভেবেছে নক করবে,পরক্ষণেই ভাবে সে কেনো অনুমতি নিবে হিসাব মতে এই ঘর তো ওর নিজের ও, বিয়ে করেছে না নিখিল এবার ওকেও বুঝতে হবে বউরা কি জিনিস হারে হারে যদি টের না পাইয়ে দিয়েছি তো ওর নাম নেহা না!
নেহা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেলো,তখনই গম্ভীর কন্ঠে কেউ বলে উঠলো

,,এই কারো রুমে ঢুকতে হলে যে পারমিশন নিতে হয় জানিস না?ম্যানা’রলেস কোথাকার!

নিখিল পুরোটা কথা নিজের ল্যাপটপের দিক তাকিয়ে বলেছে সে ভেবেছে টয়া হয়তো আবার চলে এসেছে।তাকে অবাক করে দিয়ে নেহা গমগমে কন্ঠে বললো

,,নাম মাত্ররো বউদের অনুমতি নিতে হয় না মিস্টার নিখিল মেহমেত চৌধুরী!

নেহার কথায় যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে নেহার মুখে নিজের নাম শুনে।
নিখিল ল্যাপটপ বন্ধ করে খাট থেকে নেমে আসে, নেহা একবারের জন্য ও তাকায় না তার দিকে,নিখিল বেশ বুঝতে পারছে রাগের কারন।
নেহা এদিক ওদিক তাকায় বইটা খুঁজতে।আশেপাশে না পেয়ে নিখিলকে জিজ্ঞেস করে

,,আমার বইটা এই রুমে ছিলো,ওইটা নিতে এসেছি দিয়ে দেন চলে যাই।আপনাকে বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই!

নিখিলের কপালে ভাজ পড়ে,তাই তো সে বলে নেহা কেনো এসেছে, এই মেয়ে তো জেঁচে আসার মানুষ না।
নিখিল পকেটে হাত রেখে নেহার সামনের দেয়ালটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়,তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নেহার ব্যতিব্যস্ত মুখে উপর।

,,দিতে পারি একটা শর্তে!
নেহা তাকায় নিখিলের দিকে, কালো রঙের টিশার্ট পরনে মুখে হাসি নিয়ে দাড়িয়ে থাকা একজন অতিশয় আকষর্ণীয় পুরুষ!নেহা মনের অগোচরে একবার আওরায় এই মানুষটি শুধু তার, একান্তই তার ব্যক্তিগত পুরুষ।নেহা নিজের ভাবনায় বিরক্ত হয়,সে একপাক্ষিক সব কিছু কেনো ভেবে বসে বার বার, মানুষটি তো কখনো তাকে নিজের ভাবে না,তবে সে কেনো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।চোখ গুলো অবাধ্যের ন্যায় কেনো বার বার এই পুরুষটিকেই দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে!

নেহা চোখ ফিরিয়ে অন্য পাশে তাকায়,নিখিল তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে,তার মানে তার বউটাও তাকে দেখে অপলক মুগ্ধ নয়নে!কিন্তু কেনো নেহা কি তাকে পছন্দ করা শুরু করেছে?নিখিলের ভাবনা আর এগোতে দেয় না নেহা, তার মধ্যেই বলে

,,বলুন কি শর্ত?তবে কোনো অযৌক্তিক শর্ত মানতে পারবো না আমি!

নিখিল দু কদম এগিয়ে আসে নেহার দিকে,নেহা পিছায় না নিখিল প্রশ্ন করে

,,এখন দেখছি বেশ কথা বলতে শিখেছিস, এখন বুঝি আমাকে আর ভয় পাস না?
নেহা মৃদু হাসলো,ভীষণ কষ্টে হাসিটা বের করেছে মনে হয়।
,,আমি আপনাকে আগেও ভয় পেতাম না, এখনো পাই না!
,,সবার ধারনা তুই আমাকে ভয় পাস তাই সবার সাথে চো টপাট দেখালেও আমার সামনে চুপ থাকতি!
নেহা সেকেন্ড দুইয়েক তাকিয়ে আবার বললো

,,আপনি কি ভাবতেন নিখিল ভাই?
নিখিল চুপ রইলো,নেহার চোখে মুখে অন্য কিছু আছে যা সে পড়তে চাইছে কিন্তু নেহা তা আড়াল করতে চাইছে,কিন্তু কেনো?
নেহা আবার হাসলো তবে এই হাসিটা পূর্বের চেয়ে দীর্ঘ সময়ের,নেহা হেসেই বললো
,,যদি আপনার ধারনাও একই হয় তবে আমি বলবো আপনি ভীষণ বোকা!
আপনি অনেক বুদ্ধিমান, জ্ঞান সম্পন্ন একজন মানুষ নিখিল ভাই, তবে একটা কথা জানেন তো মানুষ কখনো সব দিক দিয়ে নিখুঁত হয় না।
তেমন আপনিও একটা দিক থেকে দুর্বল,আমার মতে সে দিকটায় আপনি মস্ত বড় একটা বোকা।

“মানুষের চোখ পড়তে ব্যার্থ আপনি”
“একটা মানুষের হাজার হাজার ভালোলাগার অনুরক্তি বুঝতে ব্যর্থ আপনি”
“একটা মানুষের রোজ রোজ নিজেকে ভিন্ন রূপে আপনার সামনে সমার্পণ করেছে সেটা দেখতে ব্যর্থ আপনি”
“একটা মানুষের হাজারটা হার স্বীকার করার মানে বুঝতে ব্যর্থ আপনি”
“একটা মানুষের রাগ, অনুরাগ,অভিমান বুঝতে ব্যর্থ আপনি”
“একটা মানুষের তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজস্ব জগৎ এর সবগুলো রঙিন বসন্ত বিরাজ করে আপনার মাঝে সেটা ও বুঝতে ব্যর্থ আপনি”

নিখিল মানে কি জানেন নিখিল ভাই?
সমগ্র জগৎ বা এই সমস্ত পৃথিবীটা।
কিন্তু একটা মানুষের গোটা পৃথিবী আপনি,সে নিজেকে হারিয়েছে আপনার মাঝে তবুও নিজের মধ্যে থেকে তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ আপনি!

নেহা চলে যেতে পা বাড়ালো এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো আরো অনেক কিছু বলে ফেলবে, সব সময় চাইলেও অনুভূতি প্রকাশ করা যায় না, করা উচিতও না,অনুভূতি তার কাছে প্রকাশ করা উচিত যে সেটার যথাযথ সম্মান দিবে,ভালোবাসা জিনিস টা সুন্দর, নেহার কাছে তার ভালোবাসাটা পবিত্র অতিশয় যতনে রাখা কিছু, এর অপমান কেউ করুক সেটা সে মানতে পারবে না।যদি নিখিল ভাইয়ের মনে তাকে নিয়ে কিছু একটা কোনো দিন জন্মায় তো তখন সে বলবে। যদি সময়টা কোনো দিন আসে তো!তবুও কারো দুয়ারে ভালোবাসা ঠেলে নিজের ভাগে তাচ্ছিল্য নিতে রাজি না, অন্যের ভাগের ভালোবাসা দয়া হিসেবে নিতে রাজি না কখনো না!

নিখিল এতোক্ষণ যাবৎ নেহার কথা শুনে নিজেই থ মেরে গেছে,কি কি বললো মেয়েটা নিখিল মেহমেত চৌধুরীর ভুল গুলো ধরিয়ে দিলো? মুখের উপর বললো সে বোকা!কোনো দিন যে মেয়ে চোখ তুলে কথা বলেনি সে তাকে মুখের উপর এতোগুলো কথা বললো?কেনো বললো কোন ভিত্তিতে বললো?কাকে বুঝতে ব্যর্থ নিখিল, তাকে তো জানতেই হবে!
নিখিলের কন্ঠে কোনো তেজ নেই সে খুব স্বাভাবিক শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলো

,,কাকে বুঝতে আমি এতোটা ব্যর্থ নীহারিকা? কার কথা বলছিস তুই,তার নামটা বলে এখান থেকে যাবি তার আগে না!
নিখিলের শান্ত সুর তবু কেঁপে উঠলো নেহা,এই প্রশ্নের উত্তর তো নেহা দিবে না ম*রে গেলেও না।নিখিলের কথা অগ্রায্য করে পা বাড়ালো নেহা,ঠিক সে মুহুর্তে নেহার হাত চেপে ধরলো নিখিল।
এই নিয়ে দুইবার নেহার হাত ধরেছে নিখিল,আগের বার কোনো অধিকার ছাড়া আজ অধিকার নিয়ে!নিখিল বরাবরই দুরত্ব বজায় রাখতো,শুধু তার ক্ষেত্রে না সবার জন্য এই রুলস বজায় রাখে নিখিল। তার এই ডিসেন্ট ম্যানারস গুলোই তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলে সবার মাঝে!

,, এতো গুলো কথা বললি আমার নামে, এখন জবাব না দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিস কেনো নেহা?

নেহা উত্তর দেয় না,নিখিল নেহার কথার মাঝেই উপস্থিত হয় টয়া নিখিলের দরজাটা হাট করে খোলা নেহাকে নিখিলের ঘরে আসতে দেখেছিলো টয়া,এখনো বের হচ্ছে না দেখে মনের ভিতর খচখচ করছিলো ওর,তাই চলে এসেছে দেখতে।

টয়া উৎকন্ঠায় মৃদু চেঁচিয়ে বললো
,,নেহা তুমি নিখিল ভাইয়ের রুমে কি করছো,সেই কখন দেখলাম এসেছো!
টয়া আরো চমকালো নেহা নিখিল কে এতোটা কাছাকাছি দেখে,টয়ার কন্ঠ শুনেই নেহার হাত ছেড়ে দিয়েছিলো নিখিল।
নিখিল টয়াকে পাত্তা না দিয়ে নেহার উদ্দেশ্য বললো

,,তোর বই আলমারির ভিতর রাখা, খুলে তার পর নিয়ে যা!
নেহা কিছু না বলে আলমারির হাতলে হাত রাখলো,ফের টয়া বলে উঠলো

,,নেহা তুমি যে নিখিল ভাইয়ের আলমারিতে হাত দিচ্ছো,এতে নিখিল ভাই রাগ করবে না?আর আমি তো তখন দেখলাম তুমি অনুমতি বিহীন রুমে ঢুকেছে এতেও কি নিখিল ভাই রাগ করেনি?তুমি জানো না নিখিল ভাই তার জিনিসে হাত দেওয়া পছন্দ করে না!তিনি কতোটা ডিসিপ্লিন ম্যন্টেইন করে চলে?

নেহার মেজাজ এতোটা হয়তো আগে কোনো দিন
খা রাপ হয় নি টয়া কে যথাযথ সম্মান সে করে তা আত্মীয় হোক বা অন্য মানুষ হিসাবে,কিন্তু এখন মেয়েটা সত্যি বারাবাড়ি করছে,শুধু নিখিলের প্রতি তীব্র অভিমান থেকে সে বিয়ের কথাটা টয়া কে বলছে না,না হয় এই মেয়ের মুখে ধামা খসে দিতো।

নেহা আলমারির হাতল ছেড়ে সোজা হয়ে দুহাত ভাজ করে দাঁড়ালো।
টয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে পুরো দম নিয়ে বলল

,,না আমার অনুমতি লাগে না টয়া আপু।তুমি এই বাড়িতে একটা পরিচয়ে থাকো।আর আমি দুই দুইটা পরিচয়ে,আর দুইটাই খুব ভিআইপি বুঝলে!আমি চাইলে যখন তখন যা খুশি করতে পারি। যেটা সবাই পারে না!

নিখিলের ভাইয়ের আলমারি কেনো তার পরিহিত শার্ট, প্যান্ট, ঘড়ি,ওয়ালেট, ব্যাংক একাউন্ট।এমনকি নিখিল ভাইয়ের কলিজায় হাত দেওয়ার অধিকার ও আমার আছে।যা তোমার নেই, বুঝতে পারছো তো পার্থক্যটা?অন্যের সাথে আমাকে একদম মিলাবে না বলে দিলাম,অন্যরা যা পারে না আমি তা পারি।তাই অনুমতি লাগেনা।

নিখিল আজ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে,তবে এখন বেশ ভালো লাগছে তার,নিখিল মনে মনে দোয়া করছে যাতে নেহা রেগে গিয়ে বিয়ের কথাটা বলে দেয় তাতে অন্তত এই মেয়ের থেকে তার মুক্তি মিলবে।বিয়ের কথা জানাজানি হলে তা সে সামলে নিবে কিন্তু মেয়ে মানুষ সামলানো তার কর্ম নয়!
কিন্তু না এই মেয়ে তো তা বলবে না।
নেহা আলমারি টা খুললো এক টানে তার হাত ভিতরে দিলো, টয়া আবার বলে উঠলো

,,নিখিল ভাইয়ের আলমারিতে শাড়ি!
নেহা নিজেও তাকালো ভ্রু কুঁচকে কারন তার নিজের কাপড় তো এ ঘরে আনেনি তবে এটা কার!

শাড়ি একটা না আরো আছে,নেহা দেখেও কিছু বললো না,বইটা হাতে নিলো,টয়া কে জ্বালা’নোর একটা মুখ্যম সুযোগ।নেহা শাড়িটা হাতে নিয়ে নিলো সাদা পাড়ের আকাশী রঙা একটা শাড়ি, পুরোটা শাড়িতে মেঘ আর তারার সেপে হাতের কাজ করা!নেহা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝলো কেউ কাস্টমাইজড করে খুব যত্ন সহকারে বানিয়েছে,কিন্তু নিখিল ভাই এটা কার জন্য আনলো?

নেহা টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
,,আরে টয়া আপু তুমি দেখছি কিছুই জানো না।এটা তো নিখিল ভাই তার প্রেমিকার জন্য এনেছে!নিখিল ভাইয়ের প্রেমিকা ভীষণ সুন্দরী কি বলবো তোমায়, আমরা সব ভাই বোন তো তাকে দেখে একদম হা হয়ে গেছিলাম,কিন্তু একটা সমস্যা আছে বুঝলে,বড়মা কিছুই জানে না।আবার বড় মা মাঝেমধ্যে এসে নিখিল ভাইয়ের আলমারি গুছিয়ে দেয়, ভাইয়া তাই শাড়িটা লুকিয়ে রাখতে আমার কাছে দিবে বলে রুমে ডেকে এনেছে!
,,আফটার অল আমি ভাইয়ার সবচেয়ে প্রিয় আদরের ছোট চাচাতো বোন কিনা!আমাকেই বেশি ভরসা করে তাই না নিখিল ভাই?

নেহা নিখিলের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললো।নিখিল চোখ কটমট করে নেহার দিকে তাকায়,উপায়ন্তর না পেয়ে নেহার কথায় উপর নিচ মাথা নাড়ায়!

টয়ার চোখ টলমল করে উঠলো,নিখিলেরও গালফ্রেন্ড আছে কথাটা আর ভাবতে পারলো না। নিখিল নেহার দিকে তাকিয়ে বললো
,,তা দাড়িয়ে আছিস কেনো?যা নেহা শাড়িটা নিয়ে চলে যা মা এসে আবার দেখে ফেলবে!

নেহা পড়লো মহা সমস্যায়, বলতেও পারছে না আরে ভাই তোমার প্রেমিকার শাড়ি আমি কেনো নিবো? কোন দুঃখে নিবো?আমার কি শাড়ির অভাব পড়েছে নাকি?যত্তসব!
নেহা রাগে গট গট করতে করতে চলে গেলো।টয়া ও চলে গেলো মেয়েটা পুরো কেঁদে দিয়েছে।তবুও হার মানার পাত্রী টয়া নয়,দরকার পড়লে নিখিলের গালফ্রেন্ডের সাথে তার ব্রেকআপ করিয়ে দিবে তবুও নিখিল কে তার চাই!
——-
নেহা নিজের আলমারির ভিতরে শাড়িটা ছুঁড়ে ফেললো।
পরমুহূর্তেই কেঁদে দিলো,সে তো মজা করে বলেছে প্রেমিকা আছে,কিন্তু সত্যি সত্যি আছে এটা তো সে নিজেও মানতে পারছে না।

,,বৃষ্টির রুমে বসে বসে যুক্তি করছে জেরিন,সাব্বির।তারা কালকে যে করেই হোক ঘুরতে যাবে, নেহা নিখিলের মাঝে একটু ভাব করাতেই হবে।বৃষ্টি নেহার কথা ভেবে রাজি হয়,তবে তার ভাই কতটুকু কি করবে সে জানে না।

সবাই রাতের খাবার খেতে নিচে নামলো, আজ রাত দশটা বেজে গেছে, প্রতিদিন তো নয়টার মধ্যে খেয়ে নেয়।তবে আজ মাহফুজ চৌধুরী আর শহিদুল চৌধুরী দেরিতে ফিরেছেন।তাই খাবার টেবিলেও সবাই আসলো দেরিতে।
নেহা তো খাবে না আজকে, কিছুতেই না সকালে তাকে অপমান করা একটু হাত কে’টেছে বলে তাকে সবাই মিলে বকা দিলো কোনো তার কি কোনো মূল্য নেই নাকি, তাকে কেউ দাম দেয় না নিজের মা সাপোর্ট করে ওই নিখিল কে এই কষ্ট কই রাখবে নেহা।

নিখিল নেহার রুমে এসে নেহাকে বললো
,,পাঁচ মিনিটের ভিতরে রেডি হয়ে রুমে আসবি।

,,আমি আপনার কথা শুনতে যাবো কোন সুখে?

,,তোকে যদি বলি তোকে নিয়ে আমি এখন লং ড্রাইবে যাবো তবে তুই যাবি আমার সাথে!

নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো,আল্লাহ কি সব শুনছে সে নিখিল ভাই তাকে লং ড্রাইবে নিতে চায়,নিশ্চিত এটা তার মনের ভুল না হয় ভ্রম!

নিখিল আবার বললো,তুই রাজি না হলেও এখন আমার সাথে যেতে হবে তাকে,ছোট মাকে বলছি আমি দেখি না গিয়ে কিভাবে থাকিস তুই!

নেহা কিছুটা অবাক হলো নিখিল ভাই দুপুরের ঘটনার জন্য তাকে বকাও দেয়নি না একবারও রাগ দেখিয়ে কথা বলেছে।কি চলছে এই লোকের মনে হঠাৎ এতো ভালোমানুষি দেখাচ্ছে কেনো?কিছুক্ষণ আগে এতোগুলা কথা নেহা তাকে শুনিয়েছে,তবুও চুপচাপ! নিশ্চিত ভুলিয়ে বালিয়ে বাহিরে নিয়ে পরে নেহা কে কষি’য়ে দু চারটা চড় লাগাবে। নেহা যাবে না এই লোকের বিশ্বাস নেই।

,,নেহা এবার কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো দুনিয়া উল্টে যাক আজ শোয়া থেকে উঠবে না কিছুতে।

,,,,
কিছুক্ষণ পর ঠিক তাহমিদা বেগম এসে নেহার রুমে হাজির,নেহার ঘুমটাও আজ তার সাথে বেইমানি করছে।নেহা কে দেখে নেহার মা বললো

,,নেহা উঠ তোর সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আমার!

নেহা নড়লো না পর্যন্ত,তাহমিদা বেগম দুরন্ত মেয়ের ছলচাতুরী ধরতে বেশি সময় নিলেন না।কাঁথা গলিয়ে নেহার হাত টেনে বসিয়ে দিলেন।
নেহা ধরা পরে কাঁথার নিচেই মুখ লুকালো।তাহমিদা বেগমের একটাই সন্তান নেহা যত দুষ্টুমিই করুক সারাদিন যত বকা দেক না কেনো মেয়েকে তিনি কতোটা ভালোবাসেন সেটা একমাত্র তিনি আর তার আল্লাহ জানেন।নেহার জন্ম হয়েছিলো বিয়ের প্রায় সাত বছর পর,তার পর আর কোনো সন্তান হয়নি তার,মেয়েটা তার কাছে কি তিনি শুধু জানেন।পুরো পৃথিবী একপাশে তো মেয়ে এক পাশে।মেয়ের সুখের জন্য সব কিছু করতে পারেন তিনি।নিখিলের সাথে বিয়ের সম্বন্ধে রাজি হওয়ার অন্যতম কারন মেয়েটা সারাজীবন একই বাড়িতে তার চোখের সামনে থাকবে,এর থেকে বেশি পাওয়া একজন মায়ের কাছে আর কি হতে পারে!

,,এভাবে ছেলেমানুষী করিস কেন নেহা?এভাবে সংসার করা যায় নাকি বোকা মেয়ে!
নেহা চোরা চোখে একবার মায়ের দিকে তাকালো,নিশ্চিত নিখিল টা তার মাকে উল্টো পাল্টা কানপড়া দিয়েছে,বদ লোক!

,,সংসারে স্বামী স্ত্রীর মাঝে একটু আধটু ঝগড়া হওয়াটা স্বাভাবিক তাই বলে তুই নিখিলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবি,রুম আলাদা করে দিবি?এটা কেমন কথা!

নেহা যেনো আকাশ থেকে পড়লো,সে রুম আলাদা করেছে?কথা বলা বন্ধ করেছে কি মিথ্যুক লোক এসব বলেছে তার মাকে।

,,সম্পর্কে কখনো তৃতীয় ব্যক্তিকে জায়গা দিতে নেই নেহা।এরা সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হবে!
আমার নজর কিন্তু কোনো কিছু এরায় না।বয়স কম হয়নি আমার,সামান্য বিষয় নিয়ে দূরত্ব বাড়িয়ে নিলে,অন্য মানুষ এতে সুযোগ পায় বেশি।বড় হচ্ছিস এবার নিজের টা বুঝে নিতে শিখ!
যা নিখিল নিচে অপেক্ষা করছে ওর সাথে গিয়ে ঘুরে আয়!
তাহমিদা বেগম বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে তৃতীয় ব্যক্তি কথাটা ভেবেই নেহার ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো।তাদের সম্পর্কে তো সে নিজেই তৃতীয় ব্যক্তি,নিখিল ভাই তো তাকে ভালোবাসে না ভালোবাসে অন্য কোনো ভাগ্যবতী রমনীকে।
কেউ হাজার চেষ্টা করেও পায় না কেউ আবার না চাইতেও পেয়ে যায়।দুনিয়ার নিয়মনীতি গুলো এতো কঠিন এতো নিষ্ঠুরতম কেনো?

নেহা কোনো রকম একটা থ্রি পিস পড়ে বের হয় চুল গুলো ঠিক মতো আঁচড়ায়নি একটা কাটা দিয়ে কোনো রকম আটকে নিয়েছে।

,,নেহা নিচে নেমে অবাক হয়, নিখিল পুরো সেজেগুজে ফুল বাবু সেজে এসেছে!আজব লোক এতো ভাব মারার কি আছে মনে হয় তো বিয়ে খেতে যাচ্ছে।

নেহা গিয়ে চুপচাপ সিটে বসে সিট বেল্ট লাগিয়ে নেয়।নিখিল নেহার ফুলা মুখ দেখে একবার,তাহমিদা বেগম যে ঠেলে পাঠিয়েছে ঠিক বুঝলো নিখিল।

,,নিখিল ড্রাইবিং সিটে বসে নেহা কে বললো

,,এভাবে পে ত্নী সেজে এসেছিস কেনো একটু ঠিকঠাক মতো চুল গুলো বেঁধে আসতে পারলি না?

,,না পারলাম না।আমার মতো পেত্নীর সাথে যেতে কে বলেছে আপনাকে?কোনো সুন্দরী রমনীকে পাশে বসালেই পারেন!আমি তো জোর করে আসিনি আপনার
সাথে যাওয়ার জন্য।

,,কথায় কথায় এভাবে রেগে যাস কেনো এখন!

নেহা মুখ ঘুরিয়ে নিলো বিরক্তিকর লোকের সাথে কোনো কথা বলবে না।

নিখিল গাড়ি থামালো কোথাও একটা গাড়ি থেমে যাওয়াও নেহা নিজেও এবার মাথা তুলে দেখলো।
নিখিল নিজ নেমে গাড়ির দরজা খুলে নেহাকে বললো

,,নেমে পড়!

,,কেনো?মাঝরাস্তায় আমাকে রেখে যাওয়ার ধান্দা আপনার?

,,হ্যাঁ!
নেহাকে হাত টেনে নামালো নিখিল।নেহা একরাশ মন খারাপ নিয়ে নামলো।

একটা জায়গায় ছোট ছোট দোকান সব গুলো দোকান নানা রঙের বাতি দিয়ে সাজানো মনে হয় কোনো মাজার, বড় কথা মেলা হচ্ছে রাতের বেলাতে ও মানুষের অভাব নেই।নেহা চোখ চকচক করে উঠলো, তার কতোদিনের ইচ্ছে ছিলো রাতের বেলা মেলায় যাবে,শুধু একবার গ্রামে মেলায় গিয়েছিলো তাও সন্ধ্যা হওয়ার আগে বাড়িতে ফিরতে হয়েছিলো তাদের।নেহার মন খারাপ টারাপ সব দৌড়ে পালিয়ে গেছে,নিখিলের প্রতি রাগ টা পড়ে গেছে,সে ভুলেই গেছে তাকে এখানে নিখিল নিয়ে এসেছে,নেহা ব্যস্ত মুগ্ধ নয়নে রঙবেরঙের জিনিস গুলো দেখতে,সেদিকে পা বাড়াতেই একটা শক্তপোক্ত হাত তাকে টেনে থামিয়ে দিলো।নিজের কাজে বাঁধা পেয়ে নেহা তাকায়, নিখিল বলে উঠে

,,একা একা যাওয়ার চিন্তা ও করবি না।তোকে হারিয়ে নিজেকে পা’গল বানানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই।চুপচাপ দাড়িয়ে থাক আমি কথা বলে আসছি।

নেহা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। নিখিল একটু দূরে দাড়িয়ে ফোন কানে ধরলো ওপাশ থেকে মিহির বললো

,,কিরে ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারলি তো,শা লা তুই এই রাত বিরাতে এমন জিনিসের লোকেশন চাস কি বলবো,ফ্রিতে কামলা পেয়েছিস আমাকে।শোন আমার বউয়ের জন্য ও গিফট কিনে আনবি না হয়, পরের বার আর কোনো সাহায্য তোকে আমি করবো না।

,,তোর বউকে তোর থেকেও বেশি ভালোবাসার মানুষ আছে এখানে,আমার বউ আমাকে ভুলে যেতে পারে কিন্তু নিজের জন্য কিছু নিবে আর বৃষ্টির জন্য নিবে এটা হতেই পারে না!

,,হুহ! যা যা তোরই সময়।

,,কাজের জন্য থ্যাংস দিতে পারলাম না বায়।
——-
টয়া খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে নিখিলের,তার দৃষ্টি অশান্ত, নিখিলের সাথে নেহাও নেই!বিষয়টা কেমন খটকা লাগলো,তাহমিদা বেগম টয়ার নজর দেখলেন মনোযোগ সহকারে,তার বুঝতে বাকি নেই কিছু।তাহমিদা প্রশ্ন করেই বসলেন
,,টয়া খাচ্ছো না কেনো?কারো অপেক্ষা করছো নাকি?
টয়া থতমত খেলো কিছুটা,আমতা আমতা করে বললো
,,না মানে আন্টি, নেহা আর নিখিল ভাই কি খাবে না তাদের কে দেখছি না যে!
,,না তারা দুজন বাহিরে একটু ঘুরতে গেছে!
তাহমিদার অতি শান্ত কন্ঠ,টয়া অবাক হলো কিছুটা রাতের বেলা মেয়েকে তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে একা ঘুরতে পাঠিয়ে মহিলা এতো শান্ত ভাবে কথা কি করে বলছেন!
সাব্বির বলে উঠলো
,,আরে টয়া তুমি বুঝছো না এখনো,তখনকার কথা মনে আছে তো তোমার শাড়ি আর আলমারি!
টয়া বুঝলো সাব্বিরের কথা সে মাথা নাড়লো।
,,সাব্বির আবার বললো ওই শাড়ির মালিকের কাছেই গেছে নিখিল আর নেহা।নেহাকে নিয়ে যাওয়ার কারনটাও একই ওকেই বেশি ভরসা করে নিখিল ভাই!
সাব্বির কথাটা শেষ করে হাসলো।জেরিন বৃষ্টি দুই দিক থেকে সাব্বির কে খোঁচা মারলো, কাহিনি কি জানার জন্য।
সাব্বির খাবার মুখে তুলতে তুলতে বললো
,,দুজন পাঁচশো পাঁচশো দে, সব বলবো,ওফ কিয়া সিন থা!
জেরিন,বৃষ্টি বললো
,,দিবো দিবো আগে বল!
—–
নিখিল মোবাইল পকেটে রেখে নেহার কাছে আসলো।নেহার দিকে তাকিয়ে নিজ থেকেই ওড়না টেনে ঘোমটা দিয়ে দিলো।নেহা খুশি হলেও তা প্রকাশ করলো না।

নিখিল নেহার হাতের দিকে তাকালো স্বর্নের চুড়ি দুটি জ্বলজ্বল করছে,একহাতে শুভ্র রঙা বেন্ডেজ। ফর্সা ত্বকে সোনালী রঙটা ফুটেছে অনেক,নিখিল দৃষ্টি হাতে নিবদ্ধ করেই বললো

,,তোর হাত ধরে হাঁটি নীহারিকা!

নেহা চমকালো নিখিল ভাই তার হাত ধরতে অনুমতি চাইছে?এ ও কি হওয়ার ছিলো!
নেহা অবাক নেত্রে তাকিয়ে আছে,নিখিল আবার বললো
,,অনুমতি দিবি না?
নেহা বাকরুদ্ধ স্তব্ধ, কি বলবে এখন।নিখিল নেহার মুখ দেখে হাসলো,নিজ থেকেই হাত ধরলো নেহার।নেহা একবার চট করে তাকালো নিজের বাম হাতটার দিকে,আজ নিখিল হাতটা কবজিতে ধরেনি।আঙুলের ভাঁজে আঙুল গলিয়ে শক্ত করে ধরেছে।

নেহার শরীরে খেলে গেলো মৃদু কম্পন, নিজেকে কেমন অসার অসার লাগছে,মনে হচ্ছে দুর্বলতায় নেতিয়ে পড়বে শরীর, এ কি অধিক সুখের ফল নাকি অবিশ্বাস্য কান্ড নিতে পারেনি মস্তিষ্ক!

,,কি খাবি বল?এখানে একটা জিনিস পাওয়া যায় যেটা তোর মতোই মিষ্টি!

,,ছি!ফ্লাট করা শিখেছেন আপনি!

নিখিল বললো ওখানটায় মসুরডালের তৈরি চিকন জিলাপি পাওয়া যায় খাবি?
নেহা এবার আর না করতে পারলো না,দুপুরে অল্প খাওয়ায় খিদে টাও বেশ বেড়েছে,পেটের ভিতরটা কেমন খাবারের কথা শুনেই চনমনে হয়ে উঠেছে।নিখিল ঠিক বুঝেশুনে তার প্রিয় খাবার টার নাম নিয়েছে।

নেহা উপর নিচ মাথা নেড়ে বুঝালো সে খাবে।

দোকানের এক পাশে দাড়িয়েছে দুজন,ভিড় নেহাৎ মন্দ নয় এখানে।নেহা হাত বাড়িয়েছে দোকানির নিকট,নিখিল নিজের হাতে নিয়ে নিলো কাগজে মোড়ানো লালচে লোভনীয় জিলাপি, নেহা তা দেখে ঠোঁট উল্টালো।
নিখিল আরেক হাতের আঙুলের সাহায্য নেহার নাকের উপর টোকা মেরে বললো।চল ওদিকে এদিকে বেশি মানুষ।

নেহার বাম হাতের উপর নিখিল পেকেট টা রাখলো,নিজের হাত টিস্যু নিয়ে তাতে জিলাপি ধরে নেহার মুখে কাছে দিয়ে বললো
,,এবার খা।নিজের হাতে খাবি কম ছড়াবি বেশি আবার এক হাত তো আগেই আহ’ত করে রেখেছিস,রস লাগিয়ে সর্ব নাশ টা না করে খেয়ে নে।
নেহা কথা না বাড়িয়ে খেতে লাগলো।খাওয়া শেষ হতেই নিখিল স্বযত্নে নেহার মুখ মুছিয়ে দিলো।নেহার কাছে আজকে এই নিখিল মেহমেত চৌধুরী খুব অচেনা,কোনো অন্য ধাঁচের নতুন মানুষ যে নেহাকে কথায় কথায় রাগ দেখাচ্ছে না।এমন না যে মিষ্টি করে কথা বলছে,বা রোমান্টিক কিছু বলছে!তবুও নেহার মনে হচ্ছে এই মানুষটার ব্যক্তিত্ব তার চিরচেনা নিখিল ভাইয়ের সাথে মিলে না।

ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখলো ওরা,নেহার হাত এক মুহুর্তের জন্যও ছাড়েনি নিখিল।

,,চল সবার জন্য কিছু কিনে নে,কাল যখন জানবে তোকে একা মেলায় ঘুরিয়েছি তখন সব গুলা যখন ধরবে তখন তো কিছু না কিছু দিয়ে বুঝ দিতে হবে নাকি!

নেহা মিন মিন করে বললো,সবাইকে নিয়ে আসলেই হতো।

নিখিল মনে মনে বললো, হুম তোমার মতো মাথামোটা তো আমি সবাইকে নিয়ে আসি সাথে ওই টয়াটাও আসুক।

নেহা সবার জন্য অনেক গুলো জিনিস কিনেছে,মা, বড় মা, মেজো মায়ের জন্য ও নিয়েছে।সব গুলো কেনা শেষে নিখিলকে বললো

,,শেষ চলুন!

,,তুই নিজের জন্য কিছু নিলি না কেনো?

,,আমার তো কিছুই লাগবে না, সব কিছুই তো আছে আমার।বেশি কিনে কি করবো!

নিখিল কিছু বললো না,নেহার হাত ধরে গাড়ির কাছে চলে আসলো
নেহা পেছনে সিটে ব্যাগ গুলো রেখে দিলো।গাড়িতে উঠার আগে নিখিল আবার আসলো
নেহাকে বলল
,,চোখ বন্ধ কর নেহা।
নেহার এদিকে ঘুম পেয়েছে রাত ও তো বাড়ছে আর উনাকে দেখো রঙে ধরেছে।
নেহা বিনাবাক্য চোখ বন্ধ করলো
,,এবার তাকা!
নেহা চোখ খুলে অবাক হলো একটা তোড়া পুরোটা চকলেটে ভরা!তাও সব গুলো ওর পছন্দের চকলেট কোনো ব্রেন্ড বাকি রাখেনি কিটকেট থেকে শুরু করে ডার্ক চকলেট সব আছে।
,,ইট’স ফর ইউ অবুঝ পাখি!

নেহা এবার তোড়া হাতে নিয়ে বললো
,,এই এক এক মিনিট অবুঝ পাখিটা আবার কে,আপনার মতলব কি বলুন তো,আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছেন কেনো?
নাকি আপনার প্রেমিকা আপনাকে ছেকা দিয়েছে তাই আমাকে এসব দিয়ে পটাতে চাচ্ছেন?
নেহা ভ্রুযুগল নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
নেহা হতাশ কন্ঠে বললো
,,আপনার জন্য আমার এক বালতি সম পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে,আপনার মতো একজন কে যে রমনী ছেকা দিলো তাকে দেখার অনেক সাধ জেগেছে আমার।
নিখিল বিরক্তি নিয়ে বললো
,,মাথামোটা!
নেহা গাড়িতে উঠে নিখিল কে আর পাত্তা দেয়নি,সে মনের সুখে চকলেট খাচ্ছে।নিখিল ড্রাইব করার ফাঁকে দেখছে নেহাকে।মেয়েটা ক্ষনে ক্ষনে একেক রুপ নিয়ে হাজির হয়, কখনো অনেক বুঝদার আবার কখনো একটা বাচ্চা।
নেহা ঘুমে বিভোর, হাতে একটা অর্ধেক খাওয়া চকলেট কিছুটা মেল্ট হয়ে হাতে লেগেছে।ঠোঁটের কোনেও কিছুটা লেগে আছে।
বাড়ির কাছে এসেই গাড়ি থামলো ওদের নিখিল টিস্যু দিয়ে নেহার হাত মুখ পরিষ্কার করলো।নেহার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে কপালে গভীর চুম্বন দিলো।
বিরবির করে বললো
,,তোমাকে দেওয়া আমার ভালোবাসার দ্বিতীয় স্পর্শ এটা নক্ষত্রের রাত!
শুধু তোমাকে জানিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায়!

চলবে?