#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিখিলের রুমের দরজায় কান পেতেছে সাব্বির,বৃষ্টি, মিহির,জেরিন দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
সাব্বির কান খাঁড়া করে শোনার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু না ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না।এতো সময় ধরে কি কথা বলছে নিখিল?
সাব্বিরে অধৈর্য কন্ঠ–,,পুলিশ কে কল লাগা জেরিন বইন!নেহা কে নিশ্চিত খু*ন করে গু’ম করে দিয়েছে নিখিল ভাই।
জেরিন সহসা একটা মেরে দিয়েছে সাব্বিরের মাথায় ছেলেটা এতো আজগুবি কথা বলে না মাঝেমধ্যে।
মিহির দরজায় ধাক্কা দিতে থাকলো এবার,শা’লা একা একা প্রেম করছিস আমরা সবাই সিঙ্গেল ভুলে যাবি না একদম।আমরা যেহেতু পারছি না তোর ও কোনো রাইট নাই বউ নিয়ে দরজা বন্ধ করে থাকার বের হ বলছি!
মিহিরের দরজা ধাক্কানোর মাঝেই দরজা খুলে গেলো,নিখিল দরজা খুলতেই নেহা নিখিলের হাতের নিচ দিয়ে বের হয়ে এক দৌড় লাগিয়েছে।
সাব্বির জেরিন বৃষ্টি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো,মিহির দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো সাথে গেলো নিখিল।
সাব্বির,বৃষ্টি, জেরিন ছুটলো নেহার কাছে, ভাইয়ের থেকে জানার মতো দুঃসাহস এখনো একটারও জন্মায়নি।
একদম হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নেহার রুমে তিন জন।জেরিন দুহাত বুকে গুঁজে নেহাকে পুরোপুরি স্ক্যান করছে।বৃষ্টি পাশে গিয়ে বসলো,সাব্বির আয়েশি ভঙ্গিতে বসলো চেয়ারে।
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো—,,কি করছিলি ভাইয়ার রুমে?ভাইয়া তোকে নিয়ে গিয়ে মাই’র টাইর দেয়নি তো আবার!
নেহা সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো
,,মার’বে কেনো?এমনি কথা বলতে ডেকেছিলো!
জেরিন নেহার মুখ উঁচিয়ে নিজের দিক করে বললো
,,এই আমি তোর বড় না?মিথ্যা বইলা যে ধরাত পড়বি জেনেও বলিস কেন?
নেহা এবার বিরক্ত হয়ে বললো—,,রো’মান্স করছিলাম!এবার শেষ হয়েছে তোমাদের প্রশ্ন করা?
সাব্বির, জেরিন চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সাব্বির অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো
,,নিখিল ভাই আর রোমান্স প্লিজ নেহা বইন সত্যি কথা টা বল কয়টা চ’ড় খেয়েছিস!আমি তোর চ’ড় খাওয়ার লিস্ট বানাচ্ছি গিনিস বুকে নাম লিখাবো বলে এই এখনই রোমান্স টোমান্স করলে কেমনে হবে? আমার চ’ড়ের রেকর্ড করা হবে না তাইলে!
নেহা কপাল চাপড়ালো মিথ্যা টাও বিশ্বাস করলো না এখন সত্যি টাও না কি মসিবত!
জেরিন সাব্বিরের সাথে তাল মিলিয়ে বললো
,,হ্যাঁ হ্যাঁ আমার ভাই যা নিরামিষ ওসব এর দ্বারা হবে না।তুই ঝেড়ে কাশ তো বাপু সত্যি কাহিনি ক!
বৃষ্টি চুপচাপ নেহাকে পর্যবেক্ষন করছিলো,কিছুক্ষণ পর মিটমিটিয়ে হাসা শুরু করেছে,তা দেখে জেরিন,সাব্বির দুজন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো।
সাব্বির বললো–,, এই তোর আবার কি হলো রে বৃষ্টি?
,,নেহা সত্যি কথাই বলেছে!
,,তুই কিভাবে বুঝলি?
,,চিহ্ন সাথে করে নিয়ে এসেছে তো!
জেরিন হঠাৎ করে তাকালো নেহার গলার দিকে ফর্সা ত্বকে লাল দাগটা স্পষ্ট, নেহার ওড়নাটা জড়ানো হলেও গলার উপরের অংশের দিকটা ঢাকতে পারেনি!
জেরিন তো চিৎকার করে বললো—,,এই সাব্বির আমারে চিমটি কাট জলদি ইয়া মাবুদ কতো কিছু যে আরো দেখতে হবে!
সাব্বির বললো —-,, নেহা বইন তুই এটা কোনো কাজ করলি তোর এক মাত্র বড় ভাই এখনো সিঙ্গেল। আর তুই মানা যায় না এসব! আহ্ কি কষ্ট পুরাই কষ্টের কাঁথা বালিশ!
কিন্তু তুই আমাদের কে আসবি বলে গিয়ে প্রেম করা শুরু করে দিলি, প্ল্যানটা অর্ধেক রাস্তায় পড়ে আছে,বড় আব্বুর কাছে যেতে হবে, মিহির ভাইয়া নিখিল ভাইয়া কে আটকে রাখবে এ সুযোগে আমাদের কাজটা আমাদের করে ফেলতে হবে!
নেহাকে টেনে নিয়ে গেলো ওরা।শাহআলম চৌধুরীর রুমের বাহিরে পায়চারি করছে কিন্তু ভিতরে ঢুকছে না কেউ।শাহআলম চৌধুরী নরম মানুষ তার সাথে সবারই ভাব আছে কিন্তু আজকের টপিকটাই কেমন কেমন টাইপের তার উপর উনার নিজের ছেলের বিপক্ষে তাকে মানাতে এসেছে।
বৃষ্টি নেহাকে ঠেলে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়,শাহআলম চৌধুরী চমকায় হঠাৎ
নেহা গড়িমসি করে বলে—,, বড় আব্বু আসসালামু আলাইকুম!
সাব্বির বাহির থেকে মিন মিন করে বললো–,,ওরে ভদ্রলোক,সালাম দিচ্ছে দেখো!শ্বশুর পটানোর নিনজা টেকনিক কেউ এর থেকে শিখ।
জেরিন সাব্বিরের মুখ চেপে ধরেছে।বৃষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,কি শুরু করলে তোমরা, মা বা ছোট মা কেউ আসলে এদিকে সব একদম ঘেটে ঘ হয়ে যাবে সাবধান!
শাহআলম চৌধুরী দেখলেন নেহা বার বার হাত কচলাচ্ছে। কিনি অভয় নিয়ে বললেন–,,কিছু বলবি তুই মা?
নেহা অধৈর্য কন্ঠে বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ বড় আব্বু কিন্তু আগে তুমি কথা দাও আমাদের কথা শুনে রাগ করবে না!
,,আমাদের মানে সব গুলা বাদর আছে নাকি সাথে?
দাঁত কেলিয়ে ভেতরে ঢুকলো তিনজন।সাব্বির পুরো কাহিনি বুঝিয়ে বললো শাহআলম চৌধুরী কে,শাহআলম চৌধুরী এসব ছেলেমানুষী তে যোগ দিতে চাইলো না কিন্তু তেঁদড় ছেলেটাকে একটা শিক্ষা দিতে এসব বাচ্চামিতে সায় দিবে ভাবলো!
শাহআলম চৌধুরীর গম্ভীর কন্ঠ শুনে চারজনই চিন্তায় পড়লো যদি রাজি না হয়!
শাহআলম চৌধুরী হেসে বললেন–,, রাজি আমি!কাল থেকেই মিশন শুরু তাহলে এই বলে হাত বাড়ালেন তিনি।
চারজন খুশিতে গদগদ হয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো,শেষে হাত মিলিয়ে নিলো।যেভাবেই হোক নিখিলের মুখ থেকে বের করতে হবে সে নেহাকে ভালোবাসে!প্রোপোজ না করা পর্যন্ত নেহা নিখিল কে পাত্তা দিবে না,কঠোর হতে হবে! এটাই সবার নির্দেশ।
————-
সকাল বেলা তে বাহিরে হাঁটতে যান শাহআলম চৌধুরী, আজও ব্যতিক্রম হয়নি,তবে আজ তিনি ফিরেছেন বেশ দেরি করে।
টেবিলে বসে একটু একটু করে খাচ্ছে নেহা, বৃষ্টি, রৌফ,জেরিন এসেছে সবে সেও প্লেট উল্টে পরোটা তুলে নিলো।সাব্বির এসে ছিনিয়ে নিলো তার প্লেট খেতে খেতে বললো–,,তোর হাতের ছোঁয়া লেগে জেরিন বইন কি বলবো পরোটার টেস্ট ছয়গুন বৃদ্ধি পেয়েছে!
আহ্!তোর জামাই তো তোকে মাথায় তুলে আছাড় দিবে খুশিতে।
কথা শুনে হু হা করে হাসি দিলো বাকিরা।নিখিল বসে আছে সোফায়।অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নেমেছে সে।শহিদুল চৌধুরী, মাহফুজ চৌধুরী আসলেই সে টেবিলে আসবে।সেতারা বেগমের খাবার রুমে দিতে গেলেন সাহারা বেগম।সবগুলাকে হাসতে দেখে কড়া আদেশ ছুঁড়ে গেলেন
,,এই খাওয়ার সময় এতো কথা কিসের তোদের, গলায় খাবার আটকে যাবে। কথা কম বল খাবার শেষ কর সবগুলাতে!
শাহআলম চৌধুরী বাসায় ঢুকলেন থমথমে মুখ নিয়ে।সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো,তাদের প্ল্যান শুরু করার কথা আজকে খাবার টেবিল থেকেই।
শাহআলম চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো–,,রাস্তাঘাটে আজকাল মা’স্তানিও শুরু করে দিয়েছো দেখছি!
তখন ড্রয়িং রুমে আসলো শহিদুল চৌধুরী আর মাহফুজ চৌধুরী বড় ভাইয়ের কথা শুনে এগোলেন সেদিকে।
নিখিলের মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই,সে এক মনে এখনো খবরের কাগজের দিকে তাকিয়ে।বিরক্তির সীমা এবার বাড়লো শাহআলম চৌধুরীর ছেলে তাকে পাত্তা দিচ্ছে না একদম!
শাহআলম চেঁচিয়ে বললেন –,,কি হলো কথা শুনতে পাচ্ছো না তুমি?
নিখিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো এবার।শহিদুল ভাইকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে,সকাল সকাল এতো রেগেছেন কেনো তিনি?শাহআলমের রাগী কন্ঠ
,, তোর আদরের ভাই পো মেয়রের ছেলের হাত ভেঙ্গে তাকে হসপিটালে এডমিট করে দিয়ে এসেছে নিজ দায়িত্বে!কমিশনার সাহেবের কাছে কথা তুলেছেন মেয়র সাহেব,তিনি আসবেন বাড়িতে,এবার বলে দিচ্ছি একে আমি বাঁচাতে পারবো না,যা খুশি হোক নিয়ে যাক ধরে পুলিশ!
নিখিল উঠে দাড়িয়ে বললো–,,আসতে দেও কমিশনার কে তিনি না আসলে আমিই যেতাম!
খাবার টেবিলে সব ভাই বোনরা হা করে কথা শুনছে,বৃষ্টি ফিসফিস করে বললো–,, ভাইয়া তো দেখছি একদম ফাটিয়ে দিয়েছে রে বন্ধু!
নেহা গুঁতো মারলো বৃষ্টি কে,নিখিলের সরু দৃষ্টি নেহার উপর নেহা দাঁত বের করে কোনো রকম পানির গ্লাস হাতে তুলে নিলো।এই ছেলের দিক এখন ভুলেও তাকানো যাবে না।আওয়াজ শুনে ছুটে এসেছে গৃহিণীরা।
মাহফুজ চৌধুরী কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,, এমনটা কেনো করেছিস নিখিল?
,,আমার বউয়ের হাত ধরেছিলো রা’স্কেল টা!ওকে যে জানে মে’রে দেইনি এটা ওর ভাগ্য।
নিখিলের কথা শেষ হওয়ার আগেই মুখে পানি নিয়ে কেশে উঠলো নেহা,বেচারির চোখ উল্টে আসার উপক্রম।হামিদা বেগম এগিয়ে এসে পিঠে হাত বুলালেন তার ব্যস্ত কন্ঠ
,,সাবধানে খাবি তো!
নেহা একবার তাকালো নিখিলের দিকে,ওর কাশির চোটে চোখে দিয়ে পানি চলে এসেছে,নাক মুখ লাল হয়ে গেছে।নিখিল নেহার দিক তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো
নেহা চোখ নামিয়ে ফেললো।আজকের মতো আর ওরকম পরিবেশ নেই নিজেদের প্ল্যান স্থগিত করেছে ওরা।নিখিল হনহন করে চলে গেলো না খেয়ে।হামিদা বেগম ডাকলেন কিন্তু শুনলো না।
বাকিরা টেবিলে বসলো এসে,ছোটরা কোনো রকম খেয়ে ভাগলো।
জেরিন,সাব্বির ভার্সিটিতে চলে গেলো।বড় আব্বুর রাগ শান্ত হলে কাল সকালে আবার নিজেদের কাজ করবে তারা!
**
বেশ অলস সময় কাটছে নেহা আর বৃষ্টির।দুজন মিলে কথা বলছে সাদের এক পাশে দাড়িয়ে ভেবেছে একটু বের হবে বাহিরে হাঁটার জন্য।
আজ আবহাওয়া ভীষণ ভালো,ফুরফুরে বাতাস ছড়িয়েছে, ছাদের একপাশে ফুলের গাছ লাগানো, গোলাপ,গন্ধরাজের গ্রাণ মিশে এক মিষ্টি সুবাস ছড়িয়েছে।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানলো নেহা।ফুরফুরে মেজাজ তার,তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে নিখিল আজ সারাদিন খেয়েছে কিনা,সকাল সকাল তো ভাব নিয়ে বেরিয়েছে এই ছেলে।
বিকেল তিনটে বাজতে চললো,বৃষ্টির ফোন বেজে উঠলো শব্দ করে।মিহির নামটা জ্বলজ্বল করে উঠলো স্ক্রিনে।বৃষ্টির মুখ জুড়ে হাসি যা মুগ্ধ নয়নে দেখলো নেহা।
দোয়া করে ফেললো, ফটাফট যাতে সারাজীবন এমন ভাবেই হাসিখুশি থাকে মেয়েটা,মিহির ভাই সত্যি অমায়িক মানুষ!
হঠাৎ নেহার মন খারাপ হলো,নিখিল ভাই কেনো তাকে একবার ফোন করে না,কাজের ফাঁকে জানতে চায় না সে কি করছে?সারাদিন কি মানুষটার তার কথা একবারও মনে পড়ে না?এতো কাজ কাজ করা লাগবে কেনো তার?বিষন্ন মনে তাকালো লম্বা ডাল পালা ছড়িয়ে দেওয়া গাছটার দিকে,ফোন হাতে তুলে নিলো কিন্তু ফোন দেওয়া হয়ে উঠে না আর কোথায় যেনো একটা অদৃশ্য দেয়াল রয়ে গেছে তাদের মাঝে!
বৃষ্টি এসে হঠাৎ নেহার হাতে ফোন গুঁজে দিয়ে বললো
,,কথা বল!
নেহা ভ্রু কুঁচকে বললো–,,মিহির ভাইয়ার সাথে আমি কি কথা বলবো?
বৃষ্টি ফোন ধরিয়ে দিয়ে ততোক্ষনে চলে গেছে,নেহা বোকার মতো তাকিয়ে থেকে ফোন কানে ধরলো
নেহা কিছু বলার আগেই ওপাশ গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠটি ভেসে আসলো
,,ফোন টা কানে দিতে এতো সময় লাগে তোর?
নেহা চমকে উঠলো মিহির ভাইয়ার বদলে নিখিল ভাই ফোন করেছে তাকে?
,,কথা বলবি না নাকি?
,,কি কথা বলবো!
নেহার কথা শুনে হাসলো নিখিল সত্যি মেয়েটা আস্ত বোকা!শুধু মুখেই ফটফট করে।
নিখিল চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো
,,যা খুশি!
,,আপনি খেয়েছেন তো নিখিল ভাই?
,,তা জেনে তুই কি করবি?আমার খাওয়া না খাওয়ায় তোর কি আসে যায়?
নেহার রাগ লাগলো ফোন দিয়ে এগুলো কেমন কথা,সব কথার উত্তর দিতে গিয়ে প্যাচানো লাগবে কেনো এতো।
,,কিছু না।ফোন দিয়েছেন কেনো আপনি আমাকে?আমার প্রতি হঠাৎ এতো দরদ উতলে উঠলো কেনো?
ফোন দিয়েছেন তো মনে হয় ভুল করে, মিহির ভাই আপনাকে জোর করে মোবাইল ধরিয়ে দিয়েছে না হয় তো জীবনেও ফোন করতেন না আমাকে।
নেহা ফট করে কল কেটে দিয়ে হনহন করে নিচে চলে গেলো।বিরবির করে বললো–,,অসহ্য লোক!
নেহা বৃষ্টির হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হ শাড়ি পড়বি বুঝলি আজকে মন ইচ্ছা মতো ঘুরবো রিকশায় করে,তোর ভাই দিয়েছে মেজাজ টা বিগড়ে,আর কোনো দিন যদি এর হয়ে ফোন আমাকে দিতে আসিস তো বেশি ভালো হবে না বলে দিলাম!
বেচারি বৃষ্টি হা হয়ে কথা গুলো শুনে নিলো,কি থেকে কি হলো!
——–
মিহির নিখিল কে দু চারটা ঘু’ষি দিয়েছে ইতিমধ্যে এই শা’লা কে দিয়ে জীবনে প্রেম হবে না!একটুও রসকষ নেই,কি বললো মেয়েটা কে তুই জেনে কি করবি তা না সুন্দর করে বলতো খেয়েছি তুমি খেয়েছো।কপাল করে এমন বন্ধু জুটিয়েছে!নেহার জন্য দশ বস্তা আফসোস ছেড়ে রুম থেকে বেরোলো সে।
নিখিল ভাবলেশহীন ভাবে কাজে মন দিলো!
বৃষ্টি রেডি হয়ে এসে দাড়ালো নেহার রুমের সামনে,নেহা বড় হওয়ার পর শাড়ি পড়েছে কিনা সন্দেহ তবে মেয়েটার ভীষণ পছন্দ, শাড়ি কিনে রেখেছে না হয় বড়রা কেউ না কেউ গিফট করেছে,আলমারির বড় অংশ জুড়ে শুধু শাড়ি।বিয়ের দিন শাড়ি পড়িয়ে ছিলো ওকে ধরে বেঁধে ছোট মা।নিজেও পারে টুকটাক।
বৃষ্টি দরজা ঠেলে ঢুকলো ভিতরে,নেহা শাড়ির কুঁচি ধরে রেখেছে ঠিক করতে ব্যস্ত।
বৃষ্টি নিচে ঝুঁকে বসে পড়লো কুঁচিতে হাত রেখে বললো–,,দে আমি করে দিচ্ছি।
শাড়ি পড়তে গিয়ে মেয়েটা পুরো ঘেমে গেছে,নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।নেহা সাজ বলতে শুধু হালকা রঙের একটা লিপস্টিক দিয়েছে আর একটু আইলেনার।কাজল পড়তে গিয়ে কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দেয় তাই আর পড়ার ইচ্ছা জাগেনি বাদ দিয়েছে পুরোপুরি। চুল গুলো খোঁপা করে নিলো ভালো করে,গোলাপী পাড়ের আকাশি রঙা শাড়ি।
বৃষ্টি উঠে দাড়িয়েই প্রথমের মাশাআল্লাহ বলে নিয়েছে,পরে শাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
,,কিরে এই শাড়ি কবে পেলি আমাকে দেখালি না তো, ভাইয়া দিয়েছে নাকি?
নেহা যেনো আকাশ থেকে পড়লো,বিদ্রুপের সহিত বললো–,,ছি!ছি! বৃষ্টি নিজের ভাইকে তুই চিনতে কিভাবে ভুল করলি বইন?এই ব্যাটা দিবো শাড়ি, আর মানুষ পেলি না।যদি কোনো দিন দেয় তো মনে করবি ওইদিন পৃথিবীর কোনো এক দিক দিয়া ধসে পড়ে গেছে।
বড় আব্বু এবার জন্মদিনে গিফট দিয়েছিলো আমায় পড়াশোনার চক্করে তো গিফটই খোলা হয়নি।তোর ভাইয়ের এতো টাকা দিয়ে কি করে বলতো, কিপটা ব্যাটা সবাই জন্মদিনে গিফট দিলো আর এ কোনো দিন আমাকে একটা লজেন্স ও দিলো না।হতাশ আমি হতাশ এই জামাই নিয়ে ভবিষ্যতে আমার কি হবে?মিহির ভাই তোকে প্রেমিক হয়েও কতো কিছু গিফট দিলো আর এরে দেখ আগে তো দূর বিয়ের পর ও দিলো না।আবার নাকি ভালোবাসে,তোর ভালোবাসার খেঁতায় আগু’ন বদ লোক!
বৃষ্টি শুনলো,কি বলবে এখন তার ভাইয়া টা আসলেই কেমন জানি সবাইকে এতো কিছু দেয় কিন্তু নেহার বেলায় ঘন্টা বোন হিসাবেও তো দিতে পারতো কিছু।তপ্ত শ্বাস ছাড়লো নেহার হাত টেনে রুম থেকে বের হলো
দুজন মিলে বিদায় নিয়ে রিকশায় উঠলো।ফুরফুরে বাতাসে মন ভালো হয়ে গেলো ওদের সারা বিকাল ঘুরবে আজ।
পাশাপাশি হাঁটছে দুজন,রাস্তার পাশে দাড়িয়ে চা নিলো দুকাপ,ফুটপাতের উপর অনায়াসে বসে পড়লো নেহা রাস্তার উপর পা গলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে চা কে অনুভব করলো যেনো,বৃষ্টি একপাশে দাড়িয়ে খাচ্ছে,পরিবেশ টা আজ সত্যি মুগ্ধকর।রাস্তায় গাড়ি চলছে কিছুক্ষণ পর পর ব্যস্ত শহরে আজ কোলাহল কিছুটা কম।বৃষ্টি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো বাহারি ফুলের দোকান টায়,দুইটা বেলি গাজরা কিনে নিলো,সাথে কয়েকটা গোলাপ।সাদা গোলাপির মিশ্রনে ফুটন্ত গোলাপ গুলো জলমল করছে।
নেহা খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ব্যস্ত,টানাটানা আঁখিযুগলে মুগ্ধতা, মন আজ অতিশয় ভালো এতো এতো বিষাদ মানুষের জীবনে তবুও এই ছোট ছোট মুহুর্ত গুলো যেনো থমকে দেয় সব কিছু।কখনো কখনো সব কিছুর উর্ধে গিয়ে নিজেকে সময় দেওয়া উচিত,, নিজেকে নিয়ে আমরা ভাবতেই ভুলে যাই।নিজেকে ভালোবাসা মানে স্বার্থপরতা নয়,সবাইকে ভালো রাখতে নিজেকে ভালো রাখাটা জরুরি!
নেহার ঘোর কাটলো বৃষ্টি কন্ঠে–,,আমার ভাই দেয় নি তাই আমি দিলাম।
নেহা তাকালো বৃষ্টি বাড়িয়ে দেওয়ার হাতের দিকে,গোলাপ গুলো দেখে হাসলো।হাত বাড়িয়ে নিয়ে নাকের কাছে ধরলো,দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো।গোলাপের সবটুকু সুগ্রাণ যেনো শুষে নিলো নিজের ভিতর।
বৃষ্টি নেহার খোঁপায় গাজরা গুঁজে দিতে দিতে বললো–,,
তিন মাস বিবাহিত জীবনের শুভেচ্ছা ভাবী!
নেহা জোরে হেসে ফেললো এবার।
,,তিন মাস ধরে সিঙ্গেল লাইফ বিদায় নিয়েছে আমার জীবন থেকে কিন্তু মনে হচ্ছে আমি আজীবন সিঙ্গেলই থাকবো।তোর ভাই যা মানুষ এরকম জামাই থাকলে সব মেয়েই সারাজীবন বিবাহিত সিঙ্গেল থাকবে।
সন্ধ্যা গড়াতেই দুজন বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো জেরিন, আর সাব্বির ভাই জানতে পারলে ওদের দুটোকে পঁচা নালায় চুবিয়ে দিবে,ওদের কে রেখে একা একা ঘুরতে আসায়।
বাড়ির কাছে এসে ফুচকা খাওয়ার বাহানা ধরলো বৃষ্টি, নেহা ও নামলো ওর সাথে এই গলির পরের গলিতেই ওদের বাসা আজান পড়েছে ইতিমধ্যে।
নেহা ঝাল খেতে পারে না তবুও বৃষ্টি কে সঙ্গ দিতে এক প্লেট নিলো,দোকানীকে কম ঝাল দিতে বললেও নেহার মনে হলো এখানেই কৌটার সব ঝাল দিয়ে দিয়েছে!
বৃষ্টির টকের দিক তাকিয়ে নাক কুঁচকালো নেহা টকটকে লাল হয়ে আছে মরিচের গুড়াতে।
নেহা এক পাশে দাড়িয়ে খেতে লাগলো,অনেক কষ্টে চারটা ফুচকা খেয়েছে।বাকিটা প্লেট সহ রেখে মুখ হা করে বাতাস করছে,না পাচ্ছে পানি না আছে মিষ্টি জাতীয় কিছু কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে নেহার,বৃষ্টি নিজে খাওয়া শেষ করে আসলো নেহার কাছে।
নেহা বুঝালো সে ঠিক আছে।
কিন্তু ফর্সা মুখশ্রী ইতিমধ্যে টমেটো হয়ে গেছে।নেহার ফোন বেজে উঠলো হঠাৎ নাম্বার দেখার সময় নেই যেনো তার কাছে বাসায় গিয়ে পানি খেতে পারলে বাঁচে এখন!
নেহা ফোন কানে ধরলো,ওপাশ থেকে নিখিলের রাগী কন্ঠ ভেসে আসলো–,,কোথায় তুই?
নেহার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো–,,ঝা,,,ল!
নিখিল দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো–,,তুই কোথায় ইডি’য়েট!
নেহা ফোন বৃষ্টির দিকে বাড়িয়ে দিলো কথা বলার মতো পরিস্থিতি তার নেই।
বৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে খারুস নাম লেখা দেখে ভয়ে জমে গেলো
রাত হয়ে গেছে দুজন বাসায় যায়নি নিশ্চিত খবর পেয়ে গেছে।
বৃষ্টি কাঁপা কন্ঠে বললো–,,,ভাইয়া!
,,তোরা দুজন কোথায়, রাত হয়েছে খেয়াল নেই?ঘুরা বের করবো দুইটার আমি।নেহার কি হয়েছে কথা বলতে গিয়ে ঝাল বললো কেনো?
বৃষ্টি ঢোক গিললো একসাথে এতো প্রশ্ন?
,,বাসার কাছেই ভাইয়া একমিনিট লাগবে আর।নেহা ফুচকা খেয়ে ছিলো এখন ঝাল লেগেছে!
নিখিল নিরব ধমক দিলো যেনো বৃষ্টি কে,বৃষ্টি নেহার হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো।নেহার কাঁদো কাঁদো ফেইস বেচারি মোটেও কথা বলতে চায় না এখন।
নেহা তীব্র অনিহা নিয়ে কানে ফোন ধরলো।
,,আজকে বাসায় আসি আমি,তোকে এতো ফুচকা খাওয়াবো সারাজীবনের মতো সখ ঘুচে যাবে তোর। দেখবো কতো খেতে পারিস!
চলবে?