#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বাড়িতে একেবারে হুড়মুড় করে ঢুকলো নেহা। শাড়ির কুঁচি ধরে লাগিয়েছে এক দৌড়,ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো।কিছুটা হয়তো স্বস্তি পেয়েছে ওর মুখ।পানি খাওয়ার সময় শাড়ি ভিজে অবস্থা খারাপ সেদিকেও খেয়াল নেই তার।ফ্রিজ খুলে ভাগ্যক্রমে আইসক্রিম পেয়ে গেলো,ওইদিকে তাহমিদা বেগম বকে চলেছে একনাগাড়ে এসব কানেও তুলছে না নেহা,হামিদা বেগমও এসে যোগ দিয়েছে সাথে। ছেলের বউদের উচ্চ বাক্য শুনে বেরিয়ে আসলেন সেতারা বেগম।
বউদের কড়া করে বললেন
,,আহা!তোমরা বকছো কেনো এভাবে,ঘুরতে গেলে একটু দেরি হতেই পারে।এখন ঘুরবে না তো কবে ঘুরবে?যা তো বৃষ্টি ঘরে যা এদের কথায় কান দিস না!
হামিদা বলে উঠলো—,, আম্মা আপনি এই বদ দুটোকে লাই দিবেন না একদম মাথায় চড়ছে দিন দিন।রাস্তায় কতো বিপদ আপদ ঘুরে বেড়ায় বলুন তো।
সেতারা বেগম উল্টো বউদের বুঝালেন।সেতারা বেগমের মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়েছে,নাতি নাতনিদের সাথে যথাসম্ভব বন্ধুর মতো মিশার চেষ্টা করেন,একজন প্রিয় দাদী হওয়ার লক্ষ্য তার সে পথেই হাঁটছেন বাকিটা তো নাতি নাতনিরাই বলবে,তবে এবার আর কোনো ভুল করতে চায় না। মানুষ মাত্রই ভুল তবে সে ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা অধিক জরুরি,যেটা সেতারা বেগম করতে পেরেছেন!
——-
বাসায় ফিরেছে নিখিল,তার হাত ভর্তি পলিথিনে মোড়ানো ফুচকা!জেরিন, সাব্বির নামলো সিঁড়ি বেয়ে,নেহা আর বৃষ্টি কে আচ্ছা মতো বকার ইচ্ছে থাকলেও হয়ে উঠেনি তাদের,নেহা তো এসেই বিছানায় ধপ করে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।মেয়েটার অবস্থা সত্যি শোচনীয়, নাম মুখ লাল হয়ে আছে এখনো তাই বেশি ঘাটেনি ওরা পরেও কথা বলা যাবে ভেবে চুপ রইলো।
নিখিল পলিথিন জেরিনের হাতে গুঁজে দিয়ে বললো
,,সাহসী দুই বীর নারী কোথায় রাতের বেলা ঘুরার মতো সাহস হয়েছে দুজনের।আজ যদি মে’রে সিদে না করেছি তো দেখিস,ফুচকা খাওয়া হচ্ছিলো এদের, ডেকে নিয়ে আয় যা, সামনে বসিয়ে খাওয়াবো!
জেরিন মিনমিন কন্ঠে বললো–,,নেহা তো ঘুমাচ্ছে ভাইয়া!
নিখিল ভ্রু বাঁকিয়ে বললো—,, রাত সারে আটটার সময় কোন মানুষ ঘুমায়? ভং ধরেছে চিনিস না তো এটাতে হারে হারে ব’দ বুদ্ধিতে ভরা। তোকে ডাকতে হবে না আমি নিজেই যাচ্ছি!
সাব্বির,জেরিন একে অপরের সাথে ফুসুরফাসুর করলো নেহাকে নিয়ে,আজকে যে ওকে কি করবে ভাইয়া!
নিখিল নেহার রুমের সামনে গিয়ে ওকে বার কয়েক ডাকলো,দরজা খোলা, বাতি নিভানো পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার, তাহলে কি সত্যি ঘুমাচ্ছে নেহা?
নিখিল রুমের ভিতর গিয়ে লাইটের সুইচ অন করতেই বড়সড় একটা বিষম খেলো!
নেহার পুরো এলোমেলো অবস্থা উপুর হয়ে ঘুমাচ্ছে, শাড়ির ভাঁজে উন্মুক্ত পিঠ,কোমর!খোঁপা করা চুলের অর্ধেক ছড়িয়ে পড়েছে মুখে ঘাড়ে।
নিখিল পর পর চোখের পলক ফেললো,রুম জুড়ে ঠান্ডা বাতাস তবুও তার গরম লাগছে,ঘামতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে শার্টের দুই তিনটা বোতাম খুলে নিলো।চোখ সরিয়ে নিলো নেহার উপর থেকে,নেহাকে শা’স্তি দিতে এসে নিখিল নিজেই ফেঁ’সে গেছে।মেয়েটা ওকে পা’গল বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে!
নিখিল উল্টো দিক ঘুরে নেহার নাম ধরে ডাকলো আবার।নেহার ঘুম কিছুটা পাতলা হলো,তবু চোখ খুললো না।নিখিল আবার বললো
,,তুই কি উঠবি নাকি?টেনে তুলতে হবে?
নেহার ঘুম জড়ানো কন্ঠ—,, আমি কার মাথায় বারি দিয়েছি?আমার ঘুম দেখে কারো সহ্য হচ্ছে না কেনো?ঘুমাবো এখন আমি আবার ডাকলে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবো বলে দিলাম!
নিখিল এবার নিজে গিয়ে নেহার হাত টেনে তাকে বসালো,নেহা চোখ খুলে নিখিল কে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে!ঘুম টুম সব হাওয়া হয়ে গেছে মুহুর্তেই, ব্রেনে কিছুক্ষণ আগের সব ঘটনা জমা হতে লাগলো এক সাথে,নেহার মনে হলো তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে হঠাৎ।
,,কি বলেছিস আবার বল?আমার চুল ছিড়বি তুই?
নেহা না স্বরূপ মাথা নাড়ায়।
নিখিল নেহার দিকে এবার সরু চোখে তাকায়,এই বোকার হদ্য টার নিজের প্রতি কোনো খেয়ালই নেই,যে জিনিস সামলাতে পারে না ওটা পড়তে যায় কেনো?
নেহা হাত উঁচিয়ে চুল বাঁধতে লাগলো নিখিল এবার কিছুটা জোরেই বললো।
,,এই আগে নিজেকে ঠিক কর তুই।না হয় কিন্তু আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না,নেহা পরে আমার দোষ দিতে পারবি না বলে রাখছি!
নেহা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকালো বিরক্তি নিয়ে বললো—,,কি সমস্যা আপনার নিখিল ভাই?আমি তো ঠিকই আছি।আপনি আমার এতো সুন্দর ঘুমটা কেনো ভাঙ্গালেন এবার বলুন,পরে এখান থেকে বিদায় হন আমি আবার ঘুমাবো!
,,তুই ঠিক আছিস সিউর?
,,হ্যাঁ!
নিখিল শার্টের হাতা গোটাতে মন দিলো সেদিকে তাকিয়েই বললো–,,আমি এখন যা করবো তার জন্য আমি অনুতপ্ত নই,যদি এটা না করতাম তো আফসোস থাকতো!আফটারল,এতো সুন্দর বউ আমার,তার সৌন্দর্যের সোভা বর্ধন করা আমার মৌলিক অধিকার।
আমি মহান কোনো পুরুষ না, নিজের বউয়ের এমন আবেদনময়ী রূপ দেখেও হুঁশে থাকবো।তবে নেহা একটা ছোট্ট স্যরি তোকে আমি বলে নিচ্ছি!
নেহা শুধু শুনেই যাচ্ছে,কি সব বলছে এই লোক,নিখিল নেহার পুরো কাছে আসার আগেই যেনো ওর হুঁশ ফিরলো,নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা কা’টা গেলো ওর।নিখিল এগিয়ে আসতেই পিছন ঘুরে বসে পড়লো।টেনে টুনে যতটুকু পেরেছে শাড়ি ঠিক করে ফেলেছে,ঘুমানোর আগে সেফটিপিন গুলা খুলে ফেলেছিলো, যার ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে।নেহার লজ্জা দ্বিগুণ হলো,লজ্জাবতী পাতার নেয় একেবারে নুইয়ে ফেলেছে মাথা।এই ভয়ংকর লজ্জায় পড়তে হবে জানলে সত্যি শাড়ি পড়তো না!
কিন্তু নিখিল থামবার পাত্র নয়,মনে হলো নিখিল পুরো ঘোরের মধ্যে আছে,নেহার দিকে এগিয়ে এসেছে পুরোপুরি নেহা এবার উঠে সরে পড়লো,দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে হবে না হয় নিখিল আজ যা খুশি একটা করে ফেলতে পারে!
নেহা দৌড় দেওয়ার আগেই নিখিল ধাপ করে দরজা লক করে ফেলে।নিখিল বুকে দুহাত গুঁজে দাড়িয়ে পরে দরজার সামনে।
নেহা এবার নাক ফুলিয়ে বললো–,,দেখুন নিখিল ভাই,,
নিখিলের সোজাসাপটা জবাব–,,আজ অনেক কিছুই তো দেখিয়েছিস।আর কি কি দেখাতে চাচ্ছিস?দেখা আমি অপেক্ষা করছি,কোনো তাড়া নেই আজ যত সময় ইচ্ছে নিতে পারিস!
,,ছি!ছি! নিখিল ভাই আপনি,,,
নিখিল ঠান্ডা স্বরে এক ধম’ক দিলো নেহা কে
,,কে তোর ভাই?অনলি কল মি নিখিল!
চাইলে জান, প্রাণ, কলিজা,যা খুশি ডাকতে পারিস!
নেহা কানে দু হাত চেপে ধরে বললো–,,দয়া করে চুপ করুন প্লিজ।কিসব বলছেন আপনি ?
আমাকে যেতে দিন বাহিরে যাবো আমি।
,,এতো তাড়া কিসের জান?ফুচকা খাবে না?আমি অনেক গুলো ফুচকা এনেছি নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দিবো!
নেহা হতবিহ্বল হতবাক দৃষ্টিতে তাকালো।হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে মন চাচ্ছে এবার,আগের নিখিলই তো ভালো ছিলো,এ নিখিল ভাই চরম নির্লজ্জ!
,,বিশ্বাস করুন নিখিল ভাই আমি ফুচকা খেতে চাইনি।
আর জীবনেও খাওয়ার নাম নিবো না।এবারের মতো ছেড়ে দিন!
,,ঘুরতে যাওয়ার আগে পারমিশন নিয়েছিলি আমার থেকে?
,,আপনার থেকে কেনো নিতে হবে?মাকে বলে গিয়েছিলাম তো!
,,মুখে মুখে তর্ক করা শুরু করে দিয়েছিস আজকাল, আমি তোর স্বামী ভুলে যাবি না!আমাকে একবার বলে যাওয়া উচিত ছিলো তোর,এখন তুই আমার দায়িত্বে আছিস।
নেহা বিদ্রুপের হাসি হাসলো,,আচ্ছা তাই বুঝি আমি আপনার স্ত্রী এটাই বলতে চাচ্ছেন তো?কিন্তু আমার তো মনে হয় না কথাটা সত্যি।অন্য মানুষের সামনে আপনি আমাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পান নিখিল মেহমেত চৌধুরী! অন্য মানুষ খুব সহজে আপনার সামনে আমাকে নানান রকম কথা শোনানোর অধিকার রাখে,কিন্তু আমার মনে হয় আপনার প্রতি নূন্যতম অধিকার আমার নেই,তা আপনি আমাকে দেননি।আপনি মুখে মুখেই এসব বলতে পারেন কাজের সময় কিছুই পারেন না।জোর করে আপনাকে দিয়ে করানো হয়েছে এসব।আপনি তো আমাকে পছন্দই করেন না, এসব মিথ্যা ভালোমানুষি আমাকে না দেখালেই বেশি খুশি হবো,জোর করে আপনাকে আমার সাথে থাকতে হবে না মানিয়েও নিতে হবে না সবকিছু,আপনি আপনার মতো থাকুন আমাকে আমার মতো থাকতে দেন!
নেহা নিখিলকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়,নিখিল নেহার হাত চেপে ধরে থামিয়ে দেয়।
তার কন্ঠ গম্ভীর, শান্ত–,,বেশি কথা শিখেছিস দেখছি।
এতো এতো অভিযোগ করলি তা তুই কোনো দিন আমার উপর অধিকার ফলাতে চেয়েছিস?অধিকার বলে কয়ে নেওয়া যায় না অধিকার ফলাতে হয় আদায় করে নিতে হয়!
যদি তুই অধিকার নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াতি আমি তোকে ফিরিয়ে দিতাম তাহলে তুই এ কথাটা বলতি, আমি মাথা পেতে নিতাম,মিথ্যা অভিযোগ কেনো করছিস নেহা?
তুই নিজেও জানিস আমাকে দিয়ে জোর করে কিছু করানো যায় না।যা করি নিজ ইচ্ছেতে,কেনো এমন করছিস তুই?
নেহা জবাব দিলো না,চুপচাপ চাপা কন্ঠে বললো
,,হাত ছাড়ুন আমার!
,,অভিমান করে চলে যেতে চাইলে তাকে যেতে দেওয়া উচিত না।অভিমান বাড়িয়ে দেয় দুরত্বের দেয়াল।তোর থেকে দুরত্ব আমি কোনো দিন চাই না!
নেহা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো নিখিল উল্টো নেহার হাত পেঁচিয়ে এনে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
নিখিল নেহার শাড়ির ভাঁজ ছাড়িয়ে হাত রাখলো নেহার মসৃণ পেটে!নেহা খামচে ধরেছে শাড়ির দু পাশ,কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে ক্রমশ।নিজের প্রতি বিরক্ত হচ্ছে সে,কেনো নিখিলের ছোঁয়ায় নিজেকে এতোটা দুর্বল লাগে তার।কেনো অনুভূতির জালে ফেঁসে যায় বার বার,এই ছেলের থেকে যে তার মুক্তি নেই,চায় না ও এমন মুক্তি যে মুক্তিতে থাকবে পাহাড় সমান বিষন্নতা, গভীরতম নিদারুণ য’ন্ত্রণা!
নেহা চোখ বন্ধ করে নিয়েছে, চুপচাপ দাড়িয়ে আছে শুধু।নিখিল নেহার কাঁধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে ফিসফিস নেশাভরা কন্ঠে বলে।
,,তুই এক নিষ্ঠুরতম প্রিয় নেশা!তোর সুধা পান করলেও ম’রণ! না করলেও হতে হবে উন্মাদনায় পা’গল। ভুগতে হবে অনুভূতির কঠিনে অসুখে।পুড়’তে হবে প্রেম দাবা’নলে!
নেহা কেঁপে উঠলো, শিরশিরে অনুভূতি খেলে গেলো সর্বাঙ্গে।সহ্য করতে পারলো না আর নিজের দুহাত দিয়ে চেপে ধরলো নিখিলের অবাধ্য হাত দুটি!
চোখ ভিজে উঠেছে নেহার,নিজের অনুভূতি চেপে রেখেছে পুরো দমে,নিখিলের অদৃশ্য অবাধ্য উস্কা’নিতে সায় দিতে চাইলো মন তবুও নিজেকে সামলাতে চাইছে নেহা,নিখিল ভালোবাসে একবার ও বলেনি তবে কোন সূত্র ধরে নেহা নিখিলকে সুযোগ দিবে,নিজেকে সপে দিবে তার কাছে।
নেহার কাতর কন্ঠ —,,প্লিজ নিখিল ভাই দূরে সরে দাঁড়ান!আমি আর নিতে পারছি না এসব।প্লিজ যেতে দিন।
,,শাস্তি না দিয়ে যেতে দিবো না!
,,শাস্তি দিতে কাছে আসার প্রয়োজন নেই, দূরে সরুন বলছি,হুটহাট কাছে আসবেন না!
নিখিল নেহার থেকে দূরে গিয়ে মুখোমুখি দাড়ালো, মোবাইল বের করে ফোন দিলো সাব্বির কে,নেহার বোধগম্য হলো না এই বাড়িতে থেকে এক রুম থেকে অন্য রুমে ফোন করার কি দরকার!
নিখিলের কাঠকাঠ কন্ঠ –,,ঝাল ঝাল এক প্লেট ফুচকা নিয়ে নেহার রুমে আয় এক্ষুনি!
এদিকে সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি নেহার রুমের বাহিরে দাড়িয়ে ছিলো,কি কি শা’স্তি দিচ্ছে তা আন্দাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছিলো ওরা।বৃষ্টির এবার ভীষণ খারাপ লাগলো তার জন্য মেয়েটাকে এভাবে শাস্তি পেতে হবে!তার ভাইটাও এমন কেনো?অন্য উপায় ও তো ছিলো বকা দিতে পারতো বুঝাতে পারতো না উল্টো ঝাল ফুচকা খাওয়াতে চাচ্ছে,সাব্বির বেচারা চুপচাপ প্লেট হাতে নিয়ে এসেছে,বৃষ্টি দরজার সামনেই দাড়িয়ে ভাইকে থামানোর একটা শেষ চেষ্টা করতেই হবে।
নিখিল দরজা খুলে বাহিরে আসতেই বৃষ্টি বিদ্যুৎতের গতিতে বললো
,,ভাইয়া বিশ্বাস করো নেহা খেতে চায়নি আমি ওকে জোর করেছি,প্লিজ ওর সাথে এমন কিছু করো না,আমরা আর কোন দিন না বলে যাবো না এতো রাতও করবো না এবারের মতো,,,
নিখিল ধমক দিয়ে বললো—,, চুপ চোরের সাক্ষী চোর!
বৃষ্টির মুখটা চুপসে গেলো।নেহা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে দরজার পাশে আপাতত ওর কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছে না যা খুশি করুক নিখিল।
সাব্বির প্লেট আনতেই নেহা ওটা ছু মেরে নিলো।নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললো–,,বলুন আপনার দেওয়া শা’স্তির কথা?এই প্লেটের সব ফুচকা খেতে হবে তাই তো?
নিখিলকে বলার সুযোগ ও দিলো না নেহা,মরিচে চুবানো ফুচকা একটার পর একটা মুখে দিতে লাগলো।নেহা যে কি পরিমাণ জে*দী এটা সবাই জানে।নিখিল নেহার হাত থামিয়ে দিলো
,,কি করছিস কি?অসুস্থ হয়ে যাবি নেহা, থাম বলছি।
নেহার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে,চোখ মুখ লাল হয়েছে সন্ধ্যায় চারটা খেয়ে যা হয়েছিলো এখন কম হলেও দশটা মুখে পুরেছে নেহা।নেহা নিখিলের হাত সরিয়ে আবারও খেতে লাগলো।
সাব্বির অধৈর্য হয়ে বললো–,,নেহা বইন কি করছিস তুই থাম বাচ্চাদের মতো জে*দ করবি না। জেরিন ও না করলো কিন্তু কারো কথা কানে নিলো না।নিখিল বাধ্য হয়ে প্লেট টা নেহার হাত থেকে কেঁড়ে নিয়ে মেঝেতে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো!
নেহা বিছানার চাদর খামচে ধরে বসে আছে মুখ জ্ব’লে যাচ্ছে তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।
জেরিন পানি নিয়ে আয় ওর জন্য যা।নিখিলের কথা শুনে নেহা রেগে গিয়ে বলে,পানি লাগবে না আমার, আপনার কাজ শেষ এবার এখান থেকে যান আপনাকে এক মুহুর্তও আর আমি চোখের সামনে দেখতে চাই না।বের হোন।নেহার টকটকে লাল ঠোঁট তিড়বিড় করে কাঁপছে ঝাল সহ্য করতে না পেরে ঠোঁট কামড়ে ধরেছে নিজের।
নিখিল বাকিদের উদ্দেশ্য বললো –,,তরা এখান থেকে যা এখন ওকে আমি সামলাচ্ছি।
সাব্বির বের হওয়ার আগে দরজা আটকে গেলো।
নেহার নিজের চুল ছিড়তে মন চাচ্ছে এখন পা’গল প্রায় অবস্থা, প্রকাশ ও করছে না সব মিলিয়ে চোখে মুখে অস্থিরতা ফুটে উঠেছে।
নিখিল নেহার দিকে চকলেট বাড়িয়ে দিলো নেহা ছুঁড়ে ফেলে দিলো নিচে।নিখিল এবার নেহার খোঁপা করা চুলের ভাজে নিজের হাত গলিয়ে দিলো,নেহাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো,নেহার কাঁপতে থাকা ঠোঁটে মিলিয়ে দিলো নিজের ঠোঁট জোড়া।
শুষে নিতে চাইলো নেহার মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সবটুকু ঝাল।নেহা শ্বাস নিতে পারছে না,নিখিলকে নিজের থেকে ছাড়াতে ব্যস্ত সে।নিখিল আরো চেপে ধরলো নেহাকে!
বেশ কয়েক মিনিট পর নিখিল নেহাকে ছেড়ে দিলো,নেহা জোরে শ্বাস নিতে ব্যস্ত।নিখিল নেহার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস কন্ঠে শুধালো
,,মাঝেমধ্যে এমন জে’দ দেখালেও পারিস নেহা এতে লাভ আমারই বেশি।
নেহার লাল টকটকে নাকের ডগায় রাগের পরিমাণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে,ঝাল অনেকটাই কমে গেছে,ঝালের পরিমান মোটেও কম ছিলো না নিখিলের নিজের ঠোঁট ও লাল হয়ে এসেছে ইতিমধ্যে।
নেহা নিখিলের কলার চেপে ধরে বললো–,,কি পেয়েছেন কি আপনি আমাকে, নিজেই ক্ষ’তের সৃষ্টি করবেন আবার নিজেই তাতে মলম পট্টি করতে আসবেন এ কেমন রুলস আপনার?আমি আপনাকে খু’ন করবো নিখিল মেহমেত চৌধুরী মে’রে কে’টে কু’টে ভাসিয়ে দিয়ে আসবো নদীতে।আপনি একটা খারাপ নির্দয় লোক।আমাকে শুধু কষ্টই দিতে পারেন।কি ক্ষ’তি করেছি আমি আপনার কেনো সব সময় আমার সাথেই এমন করেন বলুন।ঝালের তীব্রতায় এবার পুরো শরীরে ব্যাথ্যা করছে নেহার।সহ্য করতে না পেরে হু হু করে কেঁদে দিলো।নিখিল আগলে নিলো তাকে।নিখিলের বুকে এলোপাতাড়ি কি’ল ঘু’ষি বসিয়েছে তবুও নিখিল সরায়নি নেহাকে।
নেহা ক্লান্ত হয়ে এবার ঘুমিয়ে পড়েছে নিখিলের প্রসস্ত বুকে।
নিখিলের ভিতরে ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করলো। ও তো শুধু ভয় দেখাতে এনেছিলো,এই পা’গল যে খেয়ে ফেলবে কে জানতো।তপ্ত শ্বাস ছাড়লো নিখিল।
নিজেকে ও ছাড়িয়ে নিতে পারলো না,ভীষণ কান্ত লাগছে নিজেকে,অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হওয়ার ও সুযোগ হয়নি,যখন বাড়ি থেকে হামিদা বেগম ফোন দিয়ে বললো দুজন এখনও বাড়ি ফিরেনি তখন ভয়ে অবস্থা খারাপ ওর, বৃষ্টি নেহা দুজনই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, শ’ত্রুর অভাব নেই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রচুর মানুষের সাথে নিরব যুদ্ধ চলছে ওদের।ওইদিন মেয়রের সাথেও একটা ঝা’মেলা হলো।মেয়েটা এতো অবুঝ!
নিখিল নেহাকে নিয়ে ওভাবেই শুয়ে পড়েছে।সারাদিন কাজ করার পর ভীষণ ক্লান্ত শরীর তার।
সাব্বির, জেরিনের কাছে সব শুনে দৌড়ে এসেছেন তাহমিদা,হামিদা বেগম,দরজা লক করা হয়নি শুধু আটকানো।লাইট এখনো জ্বালানো,তাহমিদা বেগম দরজা খুলে লজ্জায় পড়লেন যদিও বা নেহা নিখিল দুজনেই ঘুমে বিভোর!
হামিদা বেগমও দেখলেন ছেলে মেয়ে দুটোকে,দুজনের মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই শুধু ঝ’গড়া কবে এরা ভালো করে কথা বলেছে কেউ মনে করতে পারবে না।ছোট থেকেই এরা ঝা’মেলা করে যেখানে নিখিল নেহার থেকে আট বছরের বড় সেদিকে ও খেয়াল নেই, ঝ’গড়া করাতে দুজনেই সমানে সমান,আল্লাহ যে এদের দুজনকে এভাবে একই সুত্রে গেঁথে রাখার পরিকল্পনা করে রেখেছিলো কেউ কোনো দিন কল্পনাও করেনি।
নিখলের বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে নেহা,নিখিল আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে!
দুই মা ছেলেমেয়েদের কে দেখলেন মুগ্ধ নয়নে,সবকিছুর মাঝেও এদের মাঝে অগাধ ভালোবাসা আছে। নিজেদের কে কি সুন্দর সামলে নিতে পারে এরা,এতো কিছুর মাঝে শুধু ভালোবাসাটাই অপ্রকাশিত।
——-
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো নেহার,হঠাৎ করে নিজেকে নিখিলের বুকের মাঝে দেখে ছোট খাটো একটা চিৎকার দিয়েছে।নিখিলের ঘুম জড়ানো কন্ঠ
,,নেহা সকাল সকাল চেঁচামেচি করবি না একদম,ঘুমাতে দে বলছি।
নেহা মোচড়ানো শুরু করে দিয়েছে এর মধ্যে।
,,আপনি ঘুমান আমাকে যেতে দিন!
নিখিল নেহাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার উপর আধশোয়া হয়ে ঝুঁকে পড়লো।
নেহা নিখিলের দৃষ্টি নিজের ঠোঁটের দিকে দেখেই দু হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো।
নেহার কান্ডে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো নিখিল।নেহা সুযোগ বুঝে উঠে দৌড় লাগিয়েছে বাথরুমে।
******
খাবার টেবিলে বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বির, নেহা মিলে কথা বলছে বড় আব্বুর মেজাজ ও আজ ঠিক কথাটা বলেই ফেলবে আজকে,নিখিল টাকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।
সবাই আসতেই খেতে শুরু করলো ওরা।খাওয়ার মাঝ পথে নেহা প্লেটে মনোযোগ রেখেই বললো
,,আমার একটা কথা বলার ছিলো সবাই কে!
সবার চোখ নেহার দিকে।নেহা ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলো–,,আমি নিখিল ভাই কে ডিভোর্স দিতে চাই!
সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো নিখিলের।চোখ বড় বড় করে তাকালো নেহার দিকে,সত্যি নিখিল অবাক হয়েছে নেহা এমন একটা কথা বলবে ভাবেওনি কখনো!
নিখিলের অবিশ্বাস্য কন্ঠস্বর–,,কি বললি তুই?
,,আপনাকে ডিভোর্স দিবো আমি।আরো একটা কথা দেশের বাহিরে পড়তে যেতে চাই আমি!
নিখিল চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বললো–,,ডিভোর্স দেওয়াচ্ছি তোকে আমি!যা নয় তা মুখে আসলো আর বলে দিবি?সম্পর্ক জোড়া লাগার আগেই ভাঙ্গার কথা বলছিস কেনো তুই?দেশে কি ভার্সিটির অভাব পড়েছে বিদেশ পড়তে যাওয়া কোনো দিন হবে না তোর!এর থেকে একটা বেশি কথা বললে ভালো হবে না বলে৷ দিচ্ছি!
,,আপনি ডিভোর্স দিলেও আমি বিদেশ যাবো না দিলেও যাবো,বড় আব্বু আমার সাথে আছে,উনি সব ব্যবস্থা করে দিবে বলেছে!
সবাই পর পর অবাক হচ্ছে তাহমিদা বেগম,হামিদা বেগম হা হয়ে তাকিয়ে আছেন।
শাহআলম চৌধুরী নেহার কথায় সায় দিয়ে বললো–,,নেহা যা বলেছে তাই হবে!আমার কাছে ওর কথার মূল্যই বেশি।নিখিলের মতো বেপরোয়া মানুষের কাছে আমার মেয়েকে রাখতে চাই না আমি!
নিখিল নিজের বাবার কথায় অবাক,এই একটা মানুষই ওর বিপক্ষে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে!
নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে বলে
,,তুমি ওর ছেলেমানুষীতে ওর সঙ্গ দিচ্ছো কোন যুক্তি তে বাবা?কি দোষ আমার যার জন্য নেহার যোগ্য নই আমি?
,,তুমি বিয়ের পর ওর সাথে কখনো ভালো করে কথা বলেছো?বিয়ের পরে স্ত্রী হয়েছে নেহা তোমার তার প্রতি কি দায়িত্ব টা পালন করেছো তুমি?কাজ করো ভালো কথা তাই বলে তুমি মেয়েটাকে একেবারে পাত্তা দিবে না?সব কিছু দেখে বুঝে শুনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।আর তোমার বিয়ে লুকানোর ব্যপারটার ঘোর বিরোধী আমি।নেহা যেতে চাইলে তুমি তাকে বাঁধা দেওয়ার মতো কেউ নও।আগে নিজেকে স্বামী হিসাবে যোগ্য প্রমান করো, নেহা যদি নিজ থেকে তোমাকে মেনে নেয় তোমাকে ছাড়তে না চায় তো আমিও বাঁধা হবো না!
নিখিল শহিদুল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
,,তুমিও কি নেহার যাওয়া টাকে সমর্থন করো ছোট চাচ্চু?
শহিদুল চৌধুরী তাকালেন নেহার দিকে,তিনি চুপচাপ থাকলেন কিছুক্ষণ পর মুহুর্তেই বললেন–,,নেহা খুশিতেই আমি খুশি ও যদি যেতে চায় তো যাবে!
নিখিল শাহআলম চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো
,,বাবা একটা পার্টির আয়োজন করো তোমার একমাত্র ছেলে বিয়ে করেছে সে খবর টা সবাই কে জানানোর জন্য, বিজনেস পার্টনার থেকে শুরু করে সকল আত্নীয়দের ও বলতে ভুলবে না!
শহিদুল চৌধুরী নিখিল কে থামিয়ে দিয়ে বললো,,এটা তো কথা ছিলো না নিখিল!বিয়ের কথাটা এখন কিছুতেই সবাইকে জানানো যাবে না।নেহা চমকালো তার বাবা চায় না বিয়ের খবর কেউ জানুক।চার ভাই বোনই চমকালো ওরা শুধু নিখিলের থেকে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি আদাই করতে চেয়েছিলো এখন তো গোপন রহস্য বেরিয়ো আসছে!
নিখিলের নিরব শান্তি কন্ঠ,,,, তুমি কথা রাখছো না ছোট আব্বু তাই আমিও আমার দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি।আমি নেহাকে হারাতে পারবো না!
শহিদুল চৌধুরী মনে মনে হাসলেন,তবুও অতি কঠোরতা বজায় রেখে বললেন–,,তাহলে তোমাকে আমাদের অফিস থেকে বরখাস্ত করা হবে তুমি তোমার চাকরি হারাবে নিখিল!
,,দুপুরের মধ্যে রেজিগনেশন লেটার পৌঁছে যাবে ছোট আব্বু!
,,তুমি যা খুশি করতে পারো চাকরি ছেড়ে দেও না হয় যা খুশি করো আমার মেয়ের ক্ষ’তি হবে এমন কিছুই করতে দিবো না আমি তোমায়,বিয়ের কথা জানাবে না মানে না!
নিখিল নেহার দিকে তাকিয়ে বললো–,,যাওয়ার জন্য হলেও তো কতো গুলো প্রসেস আছে সব গুলো শেষ হওয়ার আগেই আমি নিজেকে তোর যোগ্য করে তুলবো,তার পর ও যদি আমি ব্যর্থ হই তো চলে যেতে পারিস আমি তোকে আটকাবো না!
নিখিল বেরিয়ে চলে গেলো বাড়ি থেকে,নেহার ভীষণ রকম কান্না পেয়ে গেলো এবার।নিখিল ভাই শুধু ওর জন্য এতো দিনের পরিশ্রমে পাওয়া চাকরি নিজের পজিশন সব কিছু ছেড়ে দিলো! বিয়ের কথা না জানানোর পেছনে তার নিজের বাবা আছে আর সে কিনা মানুষ টাকে বার বার ভুল বুঝেছে।নেহা খাবার টেবিল ছেড়ে দৌড়ে উপরে চলে গেলো।সিঁড়িতে উঠতেই গড়িয়ে পড়েছে তার চোখের জল।বৃষ্টি, সাব্বির,জেরিন ও ছুটলো তার পেছনে।
এদিকে এতোকিছুর মাঝে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না রৌফ,তাহমিদা,হামিদা,সাহারা, সেতারা বেগম।
চলবে?