#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিখিল সবার দিকে একবার তাকালো সরু চোখে,সব গুলাতে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো
,,কি সমস্যা আমার মুখে কি দেখছিস এভাবে?টিভি লাগিয়ে রেখেছি নাকি!নাটক সিনেমা চলছে কোনো?
নেহা বিরক্তি নিয়ে তাকালো এতোক্ষণ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো,সবাই ওকে বলেছে এমন ভাব করবি যেনো তোর এসবে কোনো ইন্টারেস্ট নাই!
সাব্বির,বৃষ্টি, মিহির,জেরিন ভোঁতা মুখে তাকালো তাদের ভাই একটা খাঁটি করলাম জুস।না হয় সব কিছুতে এতো তেঁতো জবাব দেয় কি ভাবে।
জেরিন ইনিয়েবিনিয়ে বললো –,,,ভাইয়া সবাইকে বলো না প্লিজ আমরা কোথাও ঘুরতে যাই,অনেক দিন তো হলো যাওয়া হয় না,এখন বন্ধ পেয়েছি।তুমি বললেই যেতে দিবে!
নিখিল ভাবলেশহীন ভাবে বললো–,,এসব বিষয়ে আমি কোনো সাহাস্য করতে পারবো না।আব্বুকে গিয়ে বল তোদের কে নিয়ে যেতে।
নেহা চোখ মুখ কুঁচকে বললো–,,তোমাদের আগেই বলেছি, উনার থেকে কিছু আশা করো না।আসলে হয়েছে কি পরিবারে উনার মূল্য কমে গেছে,এখন কেউ উনার কথায় দাম দেয় না, জানে নিশ্চিত সবাইকে বললে মুখের উপর না করে দিবে,নিজের সম্মান আর ভাব বজায় রাখতে এখন তোমাদের সামনে না করছে!
তোমরা বড় আব্বুর কাছে গিয়ে বলো তোমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবে!
নিখিল তেতে গিয়ে বললো–,,কি বললি তুই?বড় আব্বুর চা’মচি!
,,ভালো হয়েছে আপনার কোনো সমস্যা? আমি যার খুশি তার চা’মচা গিরি করবো!আমি তো আপনাকে কিছু বলিনি না আমি কোথাও ঘুরতে যাবো,ওরা যেতে চেয়েছে ওদের সাথে বুঝুন,আমাকে কিছু বলবেন না। বেশি বেশি করলে আপনার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আমি!
সাব্বির জেরিন কে খোঁচা মে’রে বললো–,,জেরিন বইন নেহা বইন তো এবার সারে সর্বনা’শ টা করলো।নিখিল ভাইয়ের সামনে একটু চুপ থাকতে পারলো না, এদের ঝগ’ড়ায় তো যাওয়াই এবার বাতিল হয়ে যাবে।
বৃষ্টি বললো–,,ওফ!তোমরা ও না নেহা কে এখানে এনেছিলে কেনো?পরে দেখতাম ওর বিষয় টা।এখন সব পরিকল্পনায় বস্তা ভর্তি পানি পড়লো!
মিহির নাকচ শুরে ফিসফিস করে বললো–,,বস্তায় পানি রাখা যায় না তো জানপাখি,ওটা বালতি হবে!
বৃষ্টি বালিশ ছুঁড়ে মারে মিহিরের উপর।সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে বলে–,,মিহির ভাই আপনার প্রেম টেম জান টান এখন পকেটে রাখেন তো,এদিকে এদের মিল করাতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমি সিঙ্গেল থাকতে থাকতেই বুড়ো হয়ে যাবো!
নিখিলের কন্ঠে যেনো বিস্ফো’রণ হলো–,,আয় আয় পারলে চুল টেনে ধর,তোর জন্যই তো চুল গুলো বড় করেছি যাতে টেনে ছিঁড়তে পারিস!
নেহা এবার উঠে এসে সত্যি সত্যি টেনে ধরলো নিখিলের চুল।সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি গোল গোল চোখে তাকালো!মিহির যেনো আঁতকে উঠলো,নিখিলের চুলে কেউ হাত দেওয়া মানে তার তোপের মুখে পড়া।নিখিলের কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় ওর চুলে হাত দেওয়া।
নেহা মুহুর্তেই চুল গুলো টেনে পুরো এলোমেলো করে দিয়েছে।নিখিল এবার জোরে ধমকের সুরে ডাকলো
,,নেহা!
নেহার হাত থেমে গেছে,হঠাৎ এমন হওয়ায় ভয়ে কিছুটা কেঁপে ও উঠেছে।হাত সরিয়ে নিয়ে বুকে থু থু করে বলে উঠলো–,, ডায়নো’সরের মতো ডাকেন কেনো?আমি কি কানে শুনতে পাই না নাকি?মানুষের তো হার্ট অ্যা’টাক করিয়ে ছাড়বেন আপনি!
,,তোর সাহস তো কম না আমার চুল গুলোর কি অবস্থা করেছিস তুই?
নেহা এগিয়ে এসে বললো–,,করেছি তো বেশ করেছি।একশোবার করবো! আবার করবো কি করবেন আপনি?আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি?
নেহা ফের টান বসালো নিখিলের চুলে!
মিহির সাব্বির কে বললো–,,তোদের যাওয়া আর হবে না রে সাব্বির এবার বাসায় বসেই মুড়ি খা!
নিখিল এবার নেহার খোঁপা করা চুলে টান মারলো।নেহা দ্বিগুণ চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,নিখিলের বাচ্চা তোর মাথা ফা’টিয়ে দিবো আমি!আমার চুলে কেউ ধরলে একদম সহ্য হয় না আমার।
সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি সমানে মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো।নিখিল ভাইয়া এবার নেহার কি করবে?আপনি না তুমি না সোজা তুইয়ে নেমে গেছে!
নিখিল সরু চোখে তাকালো নেহার দিকে,নেহা নিজের হুঁ’শে থাকলে এমন কথা বলার দুঃসাহস জীবনেও দেখাতো না।
সাব্বির চট করে বললো–,,নেহা বইন তোর চুল গুলা কি সুন্দর মাশাআল্লাহ!আমার ভবিষ্যৎ বউয়ের যেনো এমন চুল থাকে!তুই তোর চুলের যত্নের সকল টিপস, তেল শ্যাম্পুর নাম গুলা বল আমাকে বইন শিখে রাখি!
জেরিন গুঁতো মেরে জিজ্ঞেস করে –,,কিসের মধ্যে কি বলিস?
নেহা গদগদ হয়ে বলে–,,ধইন্নাপাতা সাব্বির ভাইয়া।তুমি দেখে প্রশংসা করলে, তুমি সবচেয়ে ভালো ভাইয়া!
জেরিন,বৃষ্টি, মিহির বললো–,,আর আমরা?
নেহা বললো–,, আগে প্রশংসা করো পরে তোমাদের ও ভালো বলবো।
নিখিল বিরক্তি নিয়ে বললো—,,ড্রামাবাজ!ঘু’ষ খোর মহিলা!
নেহা নিখিল কে মুখ ভেংটি কাটলো,যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তখন নিখিল বললো
,,তোরা সবাই ঘুরতে যেতে চাস তাই তো?নিয়ে যাবো একটা শর্তে!
তিনজনে সমানে মাথা নাড়লো,রৌফ এসে বললো আমি যাবো ভাইয়া।জেরিন বললো–,,বলো বলো কি শর্ত সব শর্তই মেনে চলবো আমরা!
নেহা নিখিলের কথা শোনে সিঁড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় কি শর্ত দেয় শোনার জন্য।
নিখিল আড়চোখে একবার দেখে নেহা কে।থমথমে কন্ঠে বলে—,,ওই বাঁ’দর টাকে যদি সাথে যাওয়ার জন্য মানাতে পারিস তো নিয়ে যাবো!
মিহির চোখ ছোট করে তাকালো নিখিলের দিকে।মনে মনে বললো–,,শা’লা একটা আস্ত চালবাজ!
নিখিল গলা উঁচিয়ে নেহাকে আরো রাগিয়ে দিয়ে বললো
,,কেউ যদি আমার সাথে যেতে রাজি হয় তো সে একটা ছুঁচা বিলাই!বেহায়া!
নেহা কটমট দৃষ্টিতে তাকালো রাগে ফুস ফুস করে শ্বাস ছাড়ছে–,,আমাকে দেখে কি মনে হয় মানুষের? কোনো সম্মান নেই নাকি।দুনিয়া উল্টে গেলেও তো আমি আপনার সাথে যাবো না।আমি একবার ও যাওয়ার কথা বলিনি,কিছু মানুষ পৃথিবীতে আসেই অন্য মানুষের পেছনে লাগার জন্য। অসহ্যকর একেবারে!
জেরিন বিরস মুখে বললো-,,ভাইয়া এটা কি করলে তুমি,নেহা তো প্রথম থেকেই যেতে চায়নি তার উপর তুমি যা বললে এখন কি যেতে রাজি হবে?নিয়ে যাবে না বললেই হতো শর্ত ও দিয়েছো এমন যেটা কখনো হবে না!
সাব্বির,রৌফ,বৃষ্টি ও মন খারাপ করে চলে যেতে নিলো।
নিখিল বলে উঠলো –,, তোদের কি মনে হয়,নেহা যাবে না?গিয়ে বল একবার নাচতে নাচতে রেডি হয়ে যাবে,কোনো দিন অপমান গায়ে লেগেছে ওটার? গন্ডারের চামড়া লাগিয়ে রেখেছে এসব ওর গায়ে লাগে না!
বৃষ্টি মিন মিন করে বলে–,,যদি রাজি না হয়?
নিখিলের সোজাসাপটা উত্তর –,,আমরা সবাই যাবো ও বাড়িতে থাকবে!
সাব্বির, জেরিন,বৃষ্টি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো,এবার কি হবে?সবার চোখে একই প্রশ্ন!ওদের জন্য যদি নেহা যেতে না পারে তো, ওদের কে মা’র একটা ও কম দিবে না এই মেয়ে।আর ওরাও তো নেহা কে ছেড়ে যাবে না কোনো দিন!
ওরা তিনজন মিলে ছুটলো নেহার ঘরে আজ রৌফ ও যাচ্ছে নেহাকে রাজি করাতে।
মিহির বাতাস করার ভঙ্গিতে হাত নাড়ালো,নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললো–,, এখানে বড্ড গরম।মানুষ জনের কথার ভিতরে ও কেমন কেমন গরম গরম বাতাস।যে মানুষ বউ ছাড়া এক ঘন্টা থাকতে পারে না সে থাকবে সাত দিন কি দিন আসলো।আল্লাহ আকাশ ফুটা করে ঠা’ডা ফালাও!
নিখিল মিহিরে দিকে তাকিয়ে বললো–,,তুই কি আমাকে মিন করে কিছু বললি?
মিহির আশেপাশে তাকিয়ে বললো–,,না না তোর কথা বলবো কার ঘাড়ে কটা মাথা রে।তুই তো ভাই সাধু পুরুষ তোর তো বউ ছাড়াই চলে!আমি বরং বাড়ি যাই,তোদের বাড়িতে সত্যি গরম বেশি লাগছে!
—————
নেহা থমথমে মুখে বসে আছে।বৃষ্টি বলে উঠলো–,,এটা কোনো কাজ হলো? তোমরা যা বুদ্ধি করে রেখেছিলে তার উল্টোটাই তো হলো এবার।ভাইয়া বলে দিয়েছে নেহা কে ছাড়াই যাবে!
নেহা এবার রেগে বললো–,,আমাকে নিয়ে যাবে কেনো?তোর ভাইয়ের তো গালফ্রেন্ডের অভাব নেই ব্যাটা ব’দ।মিথ্যা মিথ্যা ডিভোর্স টাকে এবার সত্যি সত্যি বানিয়ে ফেলবো আমি দেখিস।ওনার ভাব দেখে একদম গাঁ জ্বা’লা করে আমার।ভালোবাসতে পারবে না কিন্তু বিয়ে করতে পারবে।এর নামও নিবি না আমার সামনে, যদি এক সপ্তাহের ভিতর স্বীকার না করে না ভালোবাসে আমি চলে যাবো বিদেশে,তখন আরেকটা বিয়ে করে নিতে বলিস,উনার সাথে থাকবো না আমি!
জেরিন নেহার কাঁধে হাত রেখে বললো–,,এতো রাগ করছিস কেনো সোনা?
বৃষ্টি বললো–,, ঝ’গড়াটা তো লাগিয়েছিস তুই।আর একটু চুপ থাকলেই তো পরিকল্পনা মাফিক হতো সব কিছু!
,,আমিই তো ঝ’গড়া করি ঝা’মেলা করি আমাকে নিয়ে যেতে বলেছি তোদের?তোরা যা আমাকে না নিলে শান্তিতে ঘুরতে পারবি,বিরক্ত করার মতো কেউ থাকবে না সেখানে।তোর ভাই ও শান্তি তে থাকতে পারবে।
আমি এতো ছেঁচ’ড়া না কোনো মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ও তার সাথে যাবো।
তোমরা গিয়ে ঘুরে আসো যাও!নেহা মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো,রৌফ এসেছিলো সবে নেহার শেষ কথা গুলো শোনেই দৌড়ে গেলো নিখিলের ঘরে।
বৃষ্টি, সাব্বির,জেরিন বোকার মতো সব শুনে চেয়ে রইলো,নেহা যে এখন হাজার বার বললেও যাবে না এটা ওরা ভালো করেই জানে।তার মানে ওদের যাওয়াও বাদ।তিন জন মন খারাপ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
——–
নিখিল রৌফ কে ছুটে আসতে দেখে বললো–,,কিরে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এভাবে ছুটে কি খবর দিতে আসলি।ওরা যদি একবার ও টের পায় ওদের কথা তুই আমার কাছে পাচা’র করিস তো তোকে উল্টো ঝুলিয়ে পিটাবে!
রৌফ মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো–,,ওরা জানতেই পারবে না!এখন শুনো আসল কাহিনি
,,বল।
,,নেহা আপু যাবে না।বাকি তিন জন ও মুখ ফুলিয়ে বসে আছে!নেহা আপু বলেছে তোমরা একা একা যাওয়ার জন্য, আপু যাবে না।
,,ওহ!যা সব গুলাকে ডেকে নিয়ে আয়,শুধু নেহা কে ডাকবি না।
রৌফ মাথা দুলিয়ে আবার ছুটলো,বৃষ্টির রুমে বসে ছিলো ওরা।এখনই খেতে যাওয়ার কথা তখনই রৌফ এসে বললো–,,ভাইয়া তোমাদের যেতে বলেছে।
জেরিন এগিয়ে গিয়ে বললো–,,ভাইয়া আমাদের ডেকেছো?
নিখিল ল্যাপটপ থেকে মুখ না সরিয়েই বললো–,,ভিতরে আয়!
তিন জন গুটি গুটি পায়ে ঢুকলো ভিতরে।নিখিল আবার বললো–,,কালকে ভোরে বের হবো আমরা যা গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেল।সাজেক যাবো!
তিনজনের খুশিতে লাফিয়ে উঠার কথা হলেও ওরা মাথা নিচের দিক দিয়ে রেখেছে।সাব্বির মিন মিন করে বললো–,,আমরা কেউ যেতে চাই না ভাইয়া!
নিখিল সরু চোখে তাকালো–,,কেনো?তখন তো খুব করে লাফাচ্ছিলি।এখন নিয়ে যেতে চাচ্ছি আর যাবি না বলছিস?
,,হ্যাঁ ভাইয়া আমরা কেউ যাবো না।নেহা না গেলে যাবো না তুমি একা যাও!
নিখিল শান্ত কন্ঠে বললো –,,নেহাও যাবে।ওর চিন্তা তোদের করতে হবে না, গিয়ে ব্যাগ গুছা, ভোরের আগে যাওয়ার বিষয়ে নেহার সাথে কেউ কোনো ধরনের কথা বলবি না!
**
রাতের বেলা খাবার টেবিলে নেহা এসেছে,তবে কারো সাথে কথা বলছে না।বৃষ্টির দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেনো ওরই সব দোষ!বৃষ্টি কাচুমাচু হয়ে খেয়ে চলেছে।
শাহআলম চৌধুরী নেহার দিকে তাকিয়ে বললেন–,,মন খারাপ আমার নেহা মায়ের?ঘরের ভিতর যে একটা বড়সড় গা’দা আছে ওটা কি তোমাকে কিছু বলেছে মা?
নেহা যেনো মুখ্যম সুযোগ পেয়েছে।এক ধমে মাথা উপর নিচ করলো।
শাহআলম চৌধুরীর কর্কস কন্ঠ –,,কি করেছে বল আমাকে।একবারে সিদে করে দিবো!
,,আমাকে দিনের ভিতর যতবার সামনে পায় ততবারই বকা দেয় বড় আব্বু!চোখ গুলোকে বড় বড় করে তাকায়,যেনো টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলবে।আমার মতো একটা ছোট মানুষের প্রতি এতো রাগ দেখায়।উনার সামনেই তো যাই না আমি পায়ের উপর পারা দিয়ে ঝগ’ড়া করতে আসে!যদি বলি বড়দের কাছে বিচার দিবো উল্টো শাসিয়ে বলে তোর কথা কেউ বিশ্বাসই করবে না।আজকে সন্ধ্যায় ও বকা দিয়েছে!
সাব্বির মনে মনে বলতাছে আর কিছু কইছ না বইন,চুল টানাটানির কথা সবার সামনে বললে কি একটা অবস্থা হবে!জেরিন,বৃষ্টি চোখ রসগোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে।নিখিল নিজেও অবাকের শেষ সীমানায় সুযোগ বুঝে ফাঁসি’য়ে দিয়েছে কি জালি’য়াত মেয়ে!
এরকম একটা বউ নিয়ে সারাজীবন কাটাবে কি করে ভেবেই হতাশ হয় নিখিল!
শাহআলম চৌধুরী নেহাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো–,,আহা!লক্ষ্মী মা আমার এভাবে মন খারাপ করে না,চলেই তো যাবে আর কয়েকদিন একটু সহ্য করে নাও,একটা দাম’ড়া ছেলেকে তো আর কিছু বলতে পারি না।বড় হয়েছে কিন্তু মানুষ হয়নি!
গৃহিণীরা মুখ দেখাদেখি করলো,খাবার টেবিলে এরা শুরু হয়ে যায় প্রতিদিন, এদিকে ছেলের বউ আর ছেলের বাপ মিলে ছেলের বিরুদ্ধে লেগেছে।
নিখিল দাঁত কিড়মিড় করে বললো–,,যাওয়াচ্ছি তোকে কোথাও!মে’রে হাত পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো,বেশি উড়ার সখ ঘুচিয়ে দিবো বলে রাখলাম।
নেহা যেন এখন ন্যাকার হদ্য,কাঁদো কাঁদো ফেইস করে বলে–,,বড় আব্বু দেখেছো তোমার সামনেই হুম’কি দিচ্ছে!ভাবো একবার একা পেলে কতো মা’র মার’বে!
নিখিল রেগে গিয়ে বললো–,,এই একদম চুপ বলছি নেহা!তোকে অযথা বকা দেই আমি?কি করেছিস সন্ধ্যায়?চুল টানাটানি করে আমার চুল অর্ধেক ছিঁড়ে ফিলেছিস তুই,এখানে ন্যাকা সাজা হচ্ছে!আমি তোর বড় না বেয়া’দব বড়দের চুল টেনে দেয়।কোনো ভদ্রতা শিখিসনি তো পারিস শুধু ভ্যা ভ্যা করতে!
নেহা নাক মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,আপনি মনে হয় সাধু সন্নাসী,আপনি নিজেও তো চুল টেনেছেন আমার তাহলে তো সমান সমান হয়ে গেছে,আমি কি আপনাকে বকা দিয়েছি নাকি? আপনার মতো এতো খারা’প না আমি!
সাব্বির জেরিন কে গুঁতো মেরে বললো–,,এই তোর ভাই আর ভাইয়ের বউ মিলে সার্কালে চাকরি নিচ্ছে না কেনো?ফ্রিতে বিনোদন দিয়ে কি লাভ।এতোক্ষণ দোয়া করলাম যাতে নেহা এসব চুল টানাটানি নিয়ে কথা না বলে কিন্তু তোর ভাই এটা কি করলো!
মানে এরা কোন দিক দিয়া বড় আমার তো বুঝে আসে না।
সাহারা বেগম হু হু করে হেসে উঠলো,হাসতে হাসতে বললো–,,তোরা দুজন কি এখনো এভাবে লেগে থাকিস, আল্লাহ দুইদিন পর এরা বাবা মা হয়ে যাবে তখন দেখা যাবে বাচ্চাদের সামনে ও এরা মারা’মারি লাগছে!
কথা শুনেই বিষম খেলো নিখিল,তাহমিদা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।নেহা তো লজ্জায় শেষ,মেজো মা একদম হাঁটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে।কোনো রকম খেয়ে নেহা কেটে পড়লো,নেহা কে লজ্জা পেতে দেখে নিখিল নিজেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো!
নিখিল কোনো রকম খেয়ে ভাগলো,বোকামি করে লজ্জায় পড়ার মতো খারাপ পরিস্থিতি মনে হয় আর নেই।নেহার সাথে থাকতে থাকতে ওর নিজেরও বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে দিন দিন।
দুজন কে এভাবে ভাগতে দেখে এবার সশব্দে হেসে উঠলো টেবিলের সকলে।
সেতারা বেগম বললেন–,,ঠিকই বলেছো মেজো বউ মা এদের একটা বাচ্চা হলে মন্দ হয় না!যখন দুজন বাবা মা হবে তখন বাচ্চা সামলাতেই সময় চলে যাবে নিজেরা আর বাচ্চামো করবে না!
হামিদা বেগম বললেন–,,তা তো ভালো বলেছেন আম্মা।কিন্তু নেহা এখনো তো ছোট মাত্ররো বিয়ে হলো,ওদের টা ওরা বুঝে নিবে।আল্লাহ চাইলে সময় সুযোগ মতোই নতুন সদস্য আসবে এতো তাড়া তো নেই।
সেতারা সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো।জেরিন সাব্বির আর বৃষ্টির সাথে মিন মিন করে বললো–,,ওদিকে দুজনের দুরত্ব শেষ হচ্ছে না এরা এদিকে বাচ্চার প্ল্যানিং করে ফেলছে!দাদী তো সুপার ফাস্ট ভাই।
সাব্বির ঘোর বিরোধিতা করে বললো–,,দাদী সুপার ফাস্ট হলে আব্বুরা দশ ভাই হতো বোন হতো কম করে হলেও সাত জন!কিন্তু কি হইলো আব্বুরা মাত্ররো তিন ভাই আর এক বোন।আগের যুগে তো পনেরো বিশটা বাচ্চা কমন ছিলো!
বৃষ্টি ভ্রু বাঁকিয়ে বললো–,,সাব্বির ভাইয়া দাদীকে বলবো কথাটা?
,,ছি!ছি! বৃষ্টি বইন তুই তো একটা ঘসেটিবেগম!
তাহমিদা বেগম বললেন–,,তোরা কি ফুসুরফাসুর শেষ করবি? খাবার খাওয়ার নাম নেই যখন দেখো বক বক শুরু।
———
আরে ভাই ধাক্কা খাওয়ার আর মানুষ পান না নাকি?আমার সাথেই এতো লাগতে হয় কোনো আপনার?নেহা বিরক্ত নিয়ে বলা কথাটা উপেক্ষা করে নিখিল।
নেহা লজ্জা পেলেই ওর নাক গালে গোলাপি আভা দেখা দেয়,ন্যাচারাল ব্লাস!, ফর্সা মুখশ্রীতে এখনো লজ্জার আভা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নিখিল।মেয়েটা কি জানে লজ্জা পেলে তাকে কতো মারাত্মক সুন্দর লাগে!একদম খেয়ে ফেলার মতো টকটকে একটা টমেটো হয়ে যায়!
নেহা ফের যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওর হাত টেনে সামনে দাড় করায় নিখিল,দুহাতে চেপে ধরে নেহার পাতলা গড়নের কোমড়!
কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে–,,আমাকে দেখলে এতো পালাই পালাই করোস কেন?
নেহার হা শিরশির করে উঠে এই অভদ্র লোক যখন তখন এভাবে কাছে চলে আসে কেনো?নেহা জবাব দেওযার মতো ভাষা হারিয়ে বসে থাকে।নেহা চোখ বন্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করে।হালকা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে–,,,আপনি এমন কেনো বলুন তো নিখিল ভাই,সবার সামনে কি সব বলছিলেন তখন?লজ্জা শরম কিছু নেই আপনার?
নিখিলের নির্লিপ্ত কন্ঠ–,,না নেই!লজ্জা থাকবে মেয়েদের,যেমন তোর। আমার কাজ লজ্জা দেওয়া!আদর করে তোর লজ্জা ভাঙ্গানোর নাম করে আরো আরো বেশি লজ্জায ডুবিয়ে ফেলা তোকে!
নিখিল নেহার ঘাড়ে মুখ গুঁজে কানের কাছে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে–,,ইশ!নেহা তুই একদম মাখনের মতো সফট্,হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো তুলতুলে হাত লাগাতেই একদম গলে যাস।এই দেখ তোকে একটু ছুঁয়ে দিতে না দিতেই তুই কেমন নেতিয়ে পড়েছিস লজ্জাবতী পাতার ন্যায়।এতো লজ্জা পেলে কিভাবে হবে জান?এখনো তো গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেওয়া বাকি!
,,,যেদিন আসবো সেদিন তুই হাজার চেষ্টা তরে দূরে যেতে পারবি না!ভালোবাসায় মুড়িয়ে রেখে দিবো তোকে!
নেহা ফট করে চোখ খুলে কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে
,,আপনি আমাকে ভালোবাসেন নিখিল?
নিখিল মুখ উঠিয়ে নেহার চোখের দিকে তাকালো,আজ কোনো চঞ্চলতা নেই সেই চোখে,লুকানোর কিছু নেই,নেহার সরল দৃষ্টি জানতে চাচ্ছে নিজের করা প্রশ্নের জবাব!নিখিল গভীর দৃষ্টি রাখলো সে চোখে,,কি হলো কে জানে দুজনই ব্যস্ত চোখের গভীরে হারাতে।
সিঁড়ির শেষ মাথায় এসে সাব্বির হাঁটা বন্ধ করে দেয়,কথা বলতে বলতে আসা জেরিন, বৃষ্টি পর পর ধাক্কা খায় একে অপরের সাথে।
জেরিন বিরক্তি নিয়ে বলে–,,কি সমস্যা তোর সাব্বির মাঝরাস্তায় এভাবে ঠ্যাটার মতো দাঁড়িয়ে পড়েছিস কেনো?
সাব্বির প্রতিউত্তর করলো না,জেরনি বৃষ্টি সাব্বিরের হঠাৎ তব্দা খাওয়ার কারন খুঁজতে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়।
নেহার কোমড় জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে নিখিল,নেহার মুখ ঢাকা পড়েছে নিখিলের বুকে,নিখিল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে!
বৃষ্টি সাব্বির হঠাৎ জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো –,,,আমরা কিছু দেখিনি, আমরা কিছু দেখিনি!
নিখিলের দৃষ্টি তখনো নেহার উপর,ওদের দিকে না তাকিয়েই বললো–,,তোদের কে দেখানোর জন্যই তো এখনো দাড়িয়ে আছি।দেখ দেখ বড় ভাইকে দেখেই তো ছোটরা শিখবে!বড় ভাই হিসাবে আমার ও তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি?তোদের কে রোমান্স শিখানোটাও তার মধ্যে পড়ে!
নেহা বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেছে,এ কোন নির্লজ্জের পাল্লায় পড়লো,নিজের লজ্জা শরম নেই দেখে কি অন্যের ও নেই নাকি!
বৃষ্টি, সাব্বির,জেরিনের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম তাদের এতো ভোলাভালা ভাই জন সম্মুখে রোমান্স করছে!তারা কি ভুল ধারনা টাই না করেছিলো ভাইয়ের ব্যাপারে, আজকে থেকে আর কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না, সবাই গোপনে গোপনে নিজের রোমান্টিকতা লুকিয়ে রাখে!তাদের ভাই তো একদম মাস্টার বের হলো!
নেহা নিখিল কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,আমি গেলাম ঘুমাতে তোমরা যা খুশি করো!
নিখিল নেহাকে আদেশের সুরে বললো–,,এই এই আমার রুমে চল একসাথে ঘুমাবো!
নেহা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,নিখিল ভাই আপনি কি মুখটা বন্ধ রাখতে পারেন না?যা তা বের হয় আপনার মুখ থেকে!
,,তুই আমার কথা শুনলেই তো আমি আর এসব করবো না!
,,আপনার সাথে ঘুমাবো না আমি।
সাব্বির বললো –,,আজকে অন্তত ঘুমা বইন, সকালে তোকে তুলে নিতে সহজ হবে!
নেহা ভ্রু কুঁচকালো–,,তুলে নিবে মানে?
জেরিন সাব্বির কে জোরে এক চিমটি কেটে বললো–,,আরে নেহা তুই এই গা’দার কথা কেনো শুনছিস?আসলে বিয়ের পর তো এক সাথে থাকতে হয় তাই,,
বৃষ্টি বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ মা আর ছোট মা যদি জানে তুই ভাইয়ার রুমে না থেকে আলাদা থাকিস,তখন তোকে আস্ত রাখবে না!তাই ভালোয় ভালোয় ভাইয়ার সাথে গিয়ে ঘুমা!
নিখিল এর মধ্যে নেহা কে কোলে তুলে নিলো সবার উদ্দেশ্য বললো–,,আমি আমার বউ নিয়ে গেলাম, তোরা ও গিয়ে ঘুমা।
নেহা নিখিলের পিঠে কি’ল, ঘু’ষি যা পেরেছে মেরেছে কোনো মতেই নামায়নি নিখিল।নেহার সবার দিকে কটমট চোখে তাকিয়েছে, একবার পাই তো তোমাদের দেখাবো মজা!
ওরা চলে যেতেই জেরিন সাব্বির কে একটা মেরেছে পিঠে–,,শা’লা আর একটু হলেই তো দিছিলি সব কিছুতে পানি ফেলে!
সাব্বির পিঠে হাত বুলিয়ে বললো–,,আরে খুশি তে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে!
বৃষ্টি নিরস গলায় বললো–,,হ্যাঁ এখানে তো “হামসাকাল” মুভি ছেড়ে দিয়েছিলো কেউ যার জন্য তুমি খুশিতে উত্তে’জনায় একদম ফেটে পড়ছিলে।
চলো তো আপু এখন ঘুমাই ভোরে না উঠতে পারলে ভাইয়া রেখে চলে যাবে!
———
সকালে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে নেহা দিয়েছে এক চিৎকার।
—,,আল্লাহ!আমাকে কিড’নাপ করা হয়েছে ও বড় আব্বু, আব্বু,মা,বড় মা আমাকে বাঁচাও!
পাশের সিটে বসে কান চেপে ধরে রেখেছে বাকি সবাই।নিখিল ড্রাইবিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে তার মাঝে কোনো হেলদোল নেই!
চলবে?