#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাব্বির কান থেকে হাত সরিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করলো–,,নেহা বইন তুই কি আরো চিল্লাফাল্লা করবি?নাকি এখানেই সমাপ্ত, না মানে কান টাকে একটু যদি রেহাই দিতি!
নেহা ভোঁতা মুখে বসে রইলো,কিছুতেই মানতে পারলো না সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে এতো বড় একটা স্বর’যন্ত্র করে রাখবে!
,,তোমরা আমাকে কেনো নিয়ে এসেছো বলো?আমি কি বলেছি আমাকে নিয়ে যাও।যত্তসব!আমি তোমাদের নামে কিড”নাপিং এর কেইস করবো বলে দিলাম।তোমাদের লিডারের নাম দিবো নিখিল মেহমেত চৌধুরী!
জেরিন,বৃষ্টি এবার মুখ খুললো–,,তুই চুপ থাকতো বইন তোর যন্ত্র’ণায় ঘুরাটাই বাদ হয়ে যাচ্ছিলো,ঘুরতে গিয়ে পরে যত পারিস ঝ’গড়া করিস, দেখ বাসায় বসে বেশি ফিল পাইতি না মারা”মারি করে, সাজেক গিয়ে মেঘ ভরা আকাশ দেখবি আর যা খুশি করবি।
এখন তুই চুপ করে থাক।
নেহা বিরস মুখে বললো–,,তোমরা সবাই সেজেগুজে এসেছো আর আমাকে দেখো চ্যাংদোলা করে তুলে এনেছো,এখন আমাকে একটুও সুন্দর লাগছে না!আর আমি কি ওখানে গিয়ে এই এক কাপড়েই থাকবো নাকি?আমার লাগেজ ও তো আনিনি!সব দোষ তোমাদের ভাইয়ের একটা খারা’প লোক।
মিহির সরু চোখে নিখিলের দিকে তাকালো,দুই তিন বার ধাক্কা ও দিলো ছেলেটা কি শুনতে পেলো না নাকি?নেহা যা চিৎকার দিয়েছিলো মনে হয় তো আশেপাশের এক এলাকার মানুষ উঠে গেছে শব্দে!
মিহির নিখিলের কান থেকে টেনে এয়ারফোন খুলে ফেললো–,,কি ভাই কি সমস্যা তোর?দুনিয়া উল্টে গেলেও তো কিছু শুনতে পাবি না তুই!
নিখিল নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো–,,গাড়ি চালানোর সময় শুধু সেখানেই মনোযোগ দিতে হয়!অন্য কিছু দেখার সময় নেই এতো,কিছু মানুষের কাজই চিল্লাচিল্লি করে সিনক্রি’য়েট করা,এসব আগে থেকেই জানতাম আমি তাই যাতে কিছু শুনতে না হয় সে ব্যবস্থা করে রেখে ছিলাম!
নেহা সুক্ষ্ম অপমান গায়ে মেখে বললো–,,গাড়ি থামান বলছি যাবো না আমি আপনাদের সাথে, বাড়ি চলে যাবো!নিজেরা জোর করে এনে এখন আবার কথা শুনানো হচ্ছে।
নিখিল এক ধমক দিয়ে বললো–,,রাতের বেলা ডোজ মনে হয় কম পড়েছে তোর?আয় এবার ডাবল ডোজ দিয়ে দেই এক সপ্তাহ আর মুখ দিয়ে কথা বের হবে না।
নেহার মুখ চুপসে যাওয়ার বেলুনের মতো হলো,কি অসভ্য লোক,সবার সামনে কি যা তা বলে।
নিখিলের কথা শুনা মাত্রই পেছনের সিট থেকে জেরিন,সাব্বির,পাশে বসা বৃষ্টি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখলো নেহার উপর,বৃষ্টি পাশে বসা রৌফ একবার তাকিয়ে মনোযোগ দিলো বাহিরের পরিবেশ দেখায়।
নেহা ওড়নার কোনা আঙুলে পেঁচিয়ে ধরছে একটু পর পর।সবার দিকে ঘুরে একবার মুখ ভেংচি কাটলো।
বৃষ্টি তো মিন মিন করে বলে উঠলো–,,কিরে বল না কি ডোজ দিয়েছে ভাইয়া?না শোনার আগ পর্যন্ত তো আমার পেটের ভাত হজম হচ্ছে না!
নেহা দ্বিগুণ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–,,তোর ভাইয়ের সাথে মিলে আমার সাথে এমন করার আগে মনে ছিলো না।এখন আমিও তোদের চিনি না!
,,দোস্ত শোন না আমার কথাটা, আমরা কি তোকে রেখে যেতাম কোনো দিন?তাই ভাইয়ার কথায় রাজি হয়েছি,আমাদের প্ল্যানটাও তো তোকে ছাড়া পূর্ন হতো না।
নিখিল ড্রাইবিং এ মনোযোগ রেখেই বললো–,,কিরে কিসের প্ল্যান তোদের?
বৃষ্টি কাচুমাচু ভঙ্গিতে তাকালো মিহিরের দিকে!মিহির নিখিলের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো–,,শা’লা তুই ছোটদের কথায় এতো কান দিস কেন?
,,তুই ছোটদের সাথে প্রেম করতে পারলে আমি ওদের কথায় কান ও দিতে পারি!
নেহা এবার নিখিল কে জিজ্ঞেস করলো –,,আপনি আমাকে গাড়িতে কিভাবে এনেছেন?আপনাকে বিশ্বাস নেই সিঁড়ি দিয়ে টেনেটুনে আনেননি তো আবার?কি ভয়া’নক ভয়া’বহ কান্ড! আল্লাহ আমার হাত, পা, কোমড়!
নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো–,,মাথা মোটা একটা!
,,মাথা মোটা হবে আপনার চৌদ্দ গুষ্টি!
সাব্বির থমথমে মুখে বললো–,, ভাই বুঝি না ঝগ’ড়া করোছ তুই আমাদের সবাইকে টানিস কেন বইন?
নিখিল আবার বললো–,,আহ,! নেহা এতো কি ভাবিস তুই তোর জামাই এতোটাও নির্দয় না বউ কে টেনেটুনে আনবে, আদর করে যত্ন সহকারে কোলে তুলে এনেছি তোকে!
নেহা মুখ বাঁকালো যত্তসব আদিখ্যেতা!
কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে গাড়ি থামলো ওদের, সবাই মিলে নামলো,নিখিল নেহা কে টেনে ধরে বললো তুই পরে নামবি!
নেহা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো–,,কেনো?
,,তোকে চুমু খাবো তাই!
নেহার চোখ ফেটে বেরিয়া আসার উপক্রম।সবাই বেরিয়ে যেতেই নিখিল বের হলো–,,গাড়ির কাঁচ টেনে দিয়ে বললো–,,ওই ব্যাগে ড্রেস আছে চেঞ্জ কর!
নেহা অবিশ্বাস্য সুরে বললো–,,গাড়িতে?
,,না আয় বাহিরে সবার সামনে কর!
নেহা মুখ কুঁচকে ফেললো বিরক্তিতে,নিখিল বের হয়ে গাড়ির দরজায় হেলান দিয়ে দাড়ালো। কিছুক্ষণ পরই নেহা বেরিয়ে আসলো,নিখিল চাবিটা দূরে দাড়িয়ে থাকা ড্রাইবারের হাতে দিয়ে দিলো।নেহার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে সামনের দিক হাটা দিলো।
নিখিল কন্ঠ খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,তুই আমাকে গাড়ির দরজার সামনে দাঁড় করিয়েই ড্রেস চেঞ্জ করে ফেললি নেহা?ডোর তো লক ও করিসনি তোর কি ভয় লাগেনি?যদি আমি লুকিয়ে দেখতাম তখন?
নেহা চমৎকার হাসলো, কেনো জানি কথাটা শুনে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে।নেহা হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো–,,আমার স্বামী কোনো চরিত্রহীন পুরুষ নয় নিখিল ভাই!সে নিতান্তই সুপুরুষ,নিজের বউকে দেখার মাঝে দোষের কিছু নেই,কিন্তু সে এমনটা করবে না তাও আমি জানি।যদি দেখারই হতো,আপনার মতে বা’জে কোনো চিন্তা থাকতো তার মাঝে, তবে অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতো না!আমার ইচ্ছেকে বেশি প্রাধান্য কোনো দিনই দিতো না।
নিখিল মুগ্ধ হলো,নেহা তাকে বিশ্বাস করে ভেবেই পুলকিত হলো মন।
–,,মাঝেমধ্যে যে ছুঁয়ে দেই সে সময় তো তোর অনুমতি নেই না নেহা তখন কি তুই রাগ করিস?আমার উপর বিরক্ত হয়ে যাস তুই?
নেহা সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো–,,বলবো না!
নিখিল নেহার হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে যার ফলে নেহা সামনেও যেতে পারছে না,ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাকিরা,ট্রেন ছাড়বে আরো বিশ মিনিট পর।
নিখিল চাপা ধমকের সুরে বললো–,,উত্তর না দিয়ে আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবি না এখন,চারদিকে দেখ কতো মানুষ, সবার সামনে তোর সাথে কিছু করলে নিশ্চয়ই তুই খুশি হবি না?
নেহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,ব্লাকমে’ইল করছেন?
নিখিল পকেট থেকে হাত বের করে চুলে হাত বুলালো নেহার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো–,,যা খুশি ভাবতে পারিস!
,,আমি না চাইলে আপনি আমাকে কোনো দিনই ছুঁয়ে দিতে পারতেন না!
মিসেস নেহা চৌধুরী কে ছুঁয়ে দেওয়া এতোটাও সহজ না মিস্টার নিখিল মেহমেত চৌধুরী!
নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসলো,নেহাকে ফের জিজ্ঞেস করলো–,,তার মানে তুই চাস আমি তোকে ছুঁয়ে দেই?
নিখিলের কথা বলার আগেই নেহা ছুটে চলে গেছে বৃষ্টি,জেরিনের কাছে।
সবাই মিলে ট্রেনে উঠে পড়েছে ওরা ইতিমধ্যে, কেবিন নিয়েছে দুইটা, তবে যাওয়ার সময় এক কেবিনেই সব গুলাতে ঘাপটি মেরে বসেছে দূরে বসলে তো আড্ডা দেওয়াই হবে না।
ট্রেন ছেড়েছে মিনিট কয়েক হবে।সাব্বির পায়ের উপর পা তুলে বসেছে তার পাশে জেরিন একপ্রকার ঠেলাঠেলি করছে –,,কিরে ভাই সাব্বির বড় বইনদের নূন্যতম সম্মান তো দিবি নাকি?এমনে ছড়াইয়া বসলি কেন,জায়গা হচ্ছে না!
সাব্বির চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,তাই তো বলি একটু কম করে খা দিন দিন মোটা হচ্ছিস পরে দেখা যাবে তোর জামাই তোকে কোলে তুলতে গিয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে যাবে।ইশ! শেষ শেষ মানইজ্জত সব শেষ!
সাব্বিরের কথা শুনে নেহা আর বৃষ্টি শব্দ করে হেসে দিলো।জেরিন জোরে এক ঘা বসিয়েছে সাব্বিরের পিঠে।নেহা আর বৃষ্টি কে চোখ রাঙানি দিলো!
মিহির বলে উঠলো–,,তা তোরা কে কার টাকায় যাচ্ছিস ঘুরতে আমার ভাই বড়লোক বন্ধু আছে তার টাকায় যাচ্ছি!দোয়া মানে দিলছে দোয়া করি এমন বন্ধু আর কেউ না পাক!
সাব্বির বলে উঠলো–,,এটা কোনো কাজ করলা মিহির ভাই?বড়লোক বন্ধু পাওয়ার ভাগ্য টা মেরে দিলা!
মিহির চুল গুলো একবার ঠিক করে বললো–,,বুঝলি না সাব্বির তোর উপকার করলাম। ফ্রিতে উপকার করতে নেই আজ বুঝলাম।দুষ্টু গরুর চাইতে শূন্য গোয়াল ভালো রে তাই তো তোর ভালোর জন্য দোয়া করলাম!
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,এরকম ও কথা আছে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো!
নিখিল দাঁত বের করে হেসে বললো–,,এই না হলে আমার বোন।
নেহা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,কাজে লাগলেই আমার বোন আমার ভাই একটা সুযোগসন্ধানী লোক!
মিহির আবার বললো –,,তা বাকিরা বলে ফেলো কে কার টাকায় যাচ্ছো?
সাব্বির ভাব নিয়ে বললো –,,ভাইয়ার টাকায়!
নিখিল বলে উঠলো তোরা কি ভেবেছিস ফ্রি ফ্রি নিচ্ছি এখন তোদের টাকা নেই তাই আমি দিয়েছি সব গুলাতে টাকা ফেরত দিবি আমায়।
সাব্বির বত্রিশ কপাটি বের করে বললো–,,ভাইয়া একবার বিয়েটা করে নেই,শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতু”ক নিয়েই তোমার টাকা পরিশোধ করে দিবো!আমাকে এমনিতেও কেউ চাকরি বাকরি কিছু দিবে না,কোনো রকম টেনেটুনে পাশ করি।
জেরিন বিরক্তি নিয়ে বললো–,,তোরে কেউ মেয়ে দেয় কিনা সন্দেহ আবার নিবে যৌ’তুক , তোর নামে তো আমি আগে কেইস করমু শা’লা পরে মেয়ে পক্ষ!
সাব্বির আহাজারি করে বললো–,,আল্লাহ এখনই মাটি ফাঁক করো আমি থাকতে চাই না এই ধরনি তে, কি বইন দিলা মাবুদ সবই ঘসেটিবেগম!মীরজাফরের খালা।
রৌফ তীব্র বিরোধীতা করে বললো–,,নবাব সিরাজুদ্দৌলার খালা তো ঘসেটিবেগম।মীরজাফরের খালা হলো কেমন?
বৃষ্টি একটা মে’রে ছে রৌফের মাথায়–,,এই তুই চুপ থাক তো আল্ট্রা বিল্ডিং পোলা।এতো পড়াশোনা করলে বউ পাইতি না তুই, এমনে কথায় কথায় তুই প্রশ্ন করলে মাইয়া তোরে রেখে ভাগবো!
সাব্বির বলে উঠলো–,,বুঝলাম না ভাই আমারে দত্তক নিলো নাকি ওরে, কোনো দিক দিয়াই তো মিলে না!আমার বাপ এটারে কেমনে ডাউনলোড করলো?
নিখিল এবার দিয়েছে সাব্বির কে একটা–,,মুখে লাগাম দে ছা’গল বাপ মাকে অন্তত ছাড় দে!
সাব্বির ভোঁতা মুখে বললো–,,তোমরা সবাই মিলেই এতো মার মারছো,আমার বউয়ের জন্য ও কিছু জায়গা বাকি রাখো তো নাকি,যাতে বলতে পারি তোমার জামাই একদম ইনটেক।
মিহির এবার জোরে বলে উঠলো,,,,এ ভাই থাম তোরা, আমার প্রশ্নটাকে গুরুত্ব দিচ্ছিস না তোরা।এবার বাকি দুজন বল শেষে নেহা।
বৃষ্টি, জেরিন হেসে বলে উঠলো –,,বইনের জামাইয়ের টাকায় যাচ্ছি।বউয়ের বোন ছোট হোক বা বড় তাদের কিছু দিলে আর ফেরত দিতে হয় না।
সাব্বির চোখ বড় বড় করে বললো–,,তোদের এই গোবর মাথায় সার কে দিলো,এ বুদ্ধি টা আমাকে আগে দিবি না তোরা তাহলে তো আর যৌ’তুক নেওয়া লাগতো না আমার বিয়েটাও ভাঙ্গতো না।
রৌফ বললো–,,তোমার বিয়ে হচ্ছিলো কখন?
,,তুই চুপ থাক ভাই রৌফ।কল্পনা ও করতে দিবি না,যা ডাকা’ত বাপ জীবনে তো বিয়া করাবে বলে মনে হয় না!
মিহির নেহার দিকে তাকালো,নিখিল ও কৌতুহল নিয়ে তাকালো।নেহা ভাব নিয়ে কপালের চুল গুলো সরালো
স্বাভাবিক ভাবে বললো–,, নিজের টাকায় যাচ্ছি তোমাদের মতো অন্যের টাকায় যাই না আমি!
বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো সবাই,নিখিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মিহির জিজ্ঞেস করলো কিভাবে হলো?
,,বিয়ে করার পর স্বামীর যা স্ত্রীর ও তা তার মানে নিখিল ভাইয়ের সব টাকা আমার।তো হলো না আমার টাকায় যাওয়া!
সাব্বির বাহবা জানিয়ে বললো–,,হ্যাঁ বইন আমি বিশ্বাস করলাম তোর ঘটে সবজি চাষ হয়েছে!
——-
রাত প্রায় দশটা নেহাকে ঘুম থেকে জাগালো বৃষ্টি, মেয়েটা এতো ঘুম কাতুরে সব জায়গায় ঘুমায়,তার সরকারি বালিশ নিখিল ভাই!রিসোর্টের সামনে এসে নেমেছে তারা,খোলা ছাউনির জিপ থেকে ব্যাগ পত্র নামিয়ে নিয়েছে যে যার টা।
কটেজের মতো ঘরগুলো ভাড়া নিয়েছে ওরা।নেহা হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলো–,,আমার রুম কোনটা বলো আমি ঘুমাবো!
সকলে যেনো ভুত দেখার মতো চমকালো পুরো রাস্তা ঘুমিয়ে কি এর হয়নি নাকি।পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আসার সময় সবার জান যায় যায় অবস্থা আর এই মেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে!
নিখিল জিজ্ঞেস করে আরো ঘুমাবি তুই?তাহলে যা ওই রুমটা তোর!
খুশিতে লাফিয়ে ছুটলো ওদিকে নেহা।যাক শান্তি অন্তত কয়েক দিন নিখিল ভাইয়ের জ্বালা’তন থেকে বাঁচা যাবে,একা একা চিল মুডে ঘুমাতে পারবে।নেহা ভাবনায় পানি ঢেলে নিখিল এসে হাজির রুমে।
নেহা ঠোঁট উল্টে বললো–,,আমার রুমে আপনি কেনো এসেছেন?
নিখিল লাগেজ টা সাইডে রেখে খাটের উপর সটান হয়ে শুয়ে পড়লো–,,তোর ট্রেনের লজিক টাই আমাকে এখানে এনেছে!
নিখিল নেহার ঠোঁট আঙুল দিয়ে চেপে ধরে বলে–,,একদম বক বক করবি না আর,পুরো রাস্তা আমার উপর ঘুমিয়েছিস, গা হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে,ছোট খাটো একটা হাতি!
,,একটা হাতিকে নিজের উপর ঘুমাতে দিতে কে বলেছে আপনাকে?যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন ফেলে দিলেই পারতেন!
অভিমানে টইটম্বুর হলো নেহা,গাল ফুলিয়ে চলে গেলো কটেজ সংলগ্ন বারান্দায়। পাহাড়ের উঁচুতে নির্মিত এই ঘর গুলো,নিচে যতদূর চোখ যায় অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই।
কিছুক্ষণ পর নেহা বুঝতে পারলো পেছন থেকে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরেছে,মানুষটি অতি পরিচিত নেহার, তার গায়ের পুরুষালী সুভাস টা বরাবরই নেহাকে টেনে নিয়ে যায় অন্য কোনো জগতে! তবুএ নেহার অভিমানী মন দূরে সরাতে চাইলো মানুষ টিকে।
,,ছাড়ুন,,!
নিখিল নেহার ঘাড়ে থুঁতনি ঠেকিয়ে বললো–,,না।
নিখিল নেহাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ঘুরালো,নিজের ওষ্ঠ দ্বারা ছুঁয়ে দিলো নেহার ললাট।মেয়েটি কেঁপে উঠলো কিছুটা!
,,সামান্য কথায় এতো অভিমান করলে চলে অবুঝ পাখি?
নেহা মুখ ঘুরিয়ে নেয়,নিখিল নেহাকে ঘুরিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মিহি সুরে ফিসফিস করে বলে–,,তুই তো এতোটাও বোকা না। জেনে-বুঝে দূরত্ব বাড়িয়ে কষ্ট দেস আমায়।
হারিয়ে গেলে তখন খুঁজেও লাভ হবে না!
নেহা এবার নিখিলের শার্ট খামচে ধরে পেছন থেকে
নিখিল হাসে,বুকের মাঝে গুটিয়ে থাকে নেহা,নিখিল নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসে জিজ্ঞেস করে
–আমাকে হারিয়ে ফেলার এতো ভয় কেনো তোর?ভালোবাসিস আমাকে?
নেহা চট করে মাথা তুলে উল্টো প্রশ্ন করে–,,আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা আগে বলুন?
,,প্রশ্ন আমি আগে করেছি?
,,কিন্তু উত্তর আপনি আগে দিবেন!
,,কেনো? তোর কথা এখন শুনতে হবে আমাকে?
,,হ্যাঁ শুনতে হবে,বলুন!
,,একদম ঝ’গড়া করবি না নেহা!রোমান্স করার টাইমে তুই ঝ’গড়া করিস এতো আনরোমান্টিক কেন তুই?
,,কথা ঘুরাবেন না নিখিল ভাই!
,,আমি কথা ঘুরাই?ঝগ’ড়ুটে একটা!
,,দেখুন দেখুন ভালো হবে না বলছি।
নেহা নিখিলের থেকে নিজে কে সরিয়ে নিয়ে বলে
,,আমি একজন কে ভালোবাসি কিন্তু তার নাম তো আপনাকে বলবো না,আগে নিজে বলুন পরে আমারটা আমি বলবো!
,,বলে ফেল নেহা এতে তোরই লাভ!
নেহা ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে–,,কি রকম লাভ?আপনি কি মহান সেজে তার কাছে রেখে আসবেন নাকি আমাকে?
নিখিল ততক্ষণে রুমে চলে এসেছে,নিখিল সম্মতি সূচক হ্যাঁ বলতে তেড়ে আসলো নেহা।
পা হড়কে বিছানায় পড়ে যায় নিখিল নেহা বিছানায় উঠে নিখিলের উপর চড়াও হয় কলার চেপে ধরে বলে
,,নিজের বউকে অন্যের কাছে দিয়ে আসবি তুই?
নেহার চুল গুলো খুলে পড়েছে নিখিলের মুখে।নিখিল আঙুল উঁচিয়ে বললো–,,আমার উপর থেকে সর নেহা,তুই তোকারি করবি না একদম।আমি তোর থেকে বড় ভুলে যাবি না!
,,একশো বার ভুলে যাবো,ঘরের ভিতর এতো সম্মান দিতে পারবো না আমি।সবার সামনে আপনাকে সম্মান দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলবো কিন্তু এখন পারবো না!আপনি একটা ব’দ লোক আমাকে অন্য কারো কাছে দিয়ে আপনি আপনার ওই শাঁক’চুন্নি মার্কা গালফ্রেন্ডের কাছে যাবেন?মে’রে রেখে দিবো দুটোকে!
,,নিখিল নেহাকে নিজের উপর থেকে সরিয়ে এবার নেহার উপর আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়লো।নেহা এবার একদম শান্ত নদীর মতো হয়ে গেলো,নিখিল ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,এবার বল কি বলছিলি?তুই নিজেই তো বললি তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস তার কাছেই তো থাকতে চাইবি এটা স্বাভাবিক!
নেহার কণ্ঠনালী কেঁপে উঠে এবার তার পর ও দমে যায় না সে–,,কেনো শুনতে পাননি আপনি?আর আমি বললেই আপনাকে কেনো সব কথা শুনতে হবে?ভালো কথা তো জীবনে শুনেন না,কাকে ভালোবাসেন তার নাম বলুন আমি নিজে গিয়ে রেখে আসবো আপনাকে তার কাছে!
নিখিল এবার নেহার ঘাড়ের উপর কামড় বসায়!নেহা ছটফট করে উঠে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। এবার নিজ থেকেই সরে পড়ে নিখিল,নেহা একটা বালিশ ছুঁড়ে মারে নিখিলের দিকে,রেগে বলে উঠে–,,আপনাকে ও আমি কামড়ে দিবো বলে দিলাম।
,,ঠিক আছে দে,তবে আমি যেখানে দিয়েছি সেখানে দিতে পারলে আমার কোনো সমস্যা নাই!
নেহা জোরে বলে উঠে –, অসম্ভব!
—————
সাব্বির বিরস মুখে বলে –,,আজ একটা বউ থাকলে তোদের মতো লতিফাবানুদের সাথে আড্ডা দিতে হতো না আমার!
নিখিল ভাই আর নেহার তো হানিমুন ও হয়ে যাচ্ছে এই ফাঁকে। মিহির নাকোচ করে বললো–,এদের হবে হানিমুন,দেখ গিয়ে মাথা ফাটি’য়ে বসে আছে দুজন দুজনের!
জেরিন হাই তুলে বললো কাল আড্ডা দেওয়া যাবে,সবাই গিয়ে ঘুমাও এবার।নিখিল ভাই টায়ার্ড তাই আসেনি, নেহা কে তো চিনিস ই ঘুমাচ্ছে কুঁড়ে টা!সব সময় উল্টো পাল্টা চিন্তা বন্ধ কর তুই সাব্বির।
নিখিল সদ্য গোসল সেরে এসেছে,নেহা সুযোগ বুঝে নিখিলের ফোন ঘেটেঘুটে দেখছে,বাড়ি থেকে ফোন এসেছিলো সে সুবাধে ফোন আর লক হয়নি।
গ্যালারি তে একদম চিরুনি তল্লাসি চালাচ্ছে,কোনো মেয়ের ছবি আছে কিনা।একটা ফোল্ডারে লক করা দেখেই নেহা ভ্রু কুটি করলো, আবার ফোল্ডারের নাম দেখো কি প্রেম প্রেম “মাই লাভ”!
নেহার হাত থেকে হঠাৎ ফোন ছিনিয়ে নিলো নিখিল!
,,আপনার মাই লাভ টা আবার কে লক টা একটু খুলে দেন দেখি!
নিখিল সত্যি এবার ক্লান্ত আর মেয়েটাকে দেখো,সারাদিন ঘুমিয়ে এখন বক বক করছে!
নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,নেহা একদম বারাবাড়ি করবি না।সবসময় দুষ্টুমি কিন্তু মেনে নিবো না আমি।বড় হচ্ছিস না তুই,সব কিছুতে এতো কৌতূহল কিন্তু ভালো না সময় হলে সব জানতে পারবি!
নেহা ফ্যাল ফ্যাল নয়নে তাকালো, সত্যি মনে হয় বারাবাড়ি করে ফেলেছে আজ,নেহার মন খারাপ হলো,সামান্য ফোল্ডারই তো দেখতে চেয়েছে না করলেই তো হতো।নেহা নিজের মনকেই ধমকায় কয়দিন যাবৎ বেশিই লাফালাফি করছে।
নেহা ছোট করে বলে–,,স্যরি!
নিখিল কিছুক্ষণ নেহার দিকে তাকিয়ে থাকে,নেহা হাসি দিয়ে বলে–,,ঘুমান আপনি,আমি ঘুম আসলে ঘুমাবো!
নেহা আবার নিজের ফোনের দিকে নজর দিলো, হেডফোন গুঁজে দেয় কানে,লাইট অফ করে দেয় নিজ থেকে,সত্যি বলতে নেহার ভীষণ মন খারাপ হয়েছে।কি আছে এমন মোবাইলে একটু ধরেছে বলে কথা শুনিয়ে দিবে,আর ধরবে না নেহা মানুষের মোবাইল!
নেহার খেয়াল ও নেই নিখিলের দিকে,নিখিল এখন ও চুপচাপ দেখছে নেহা কে,নিজের করা ব্যবহারে নিজেই গিলটি ফিল করছে,নেহা যে মন খারাপ করেছে তা বুঝতে বাকি নেই তার।কিন্তু নেহা একবারের জন্য ও প্রকাশ করলো না কিন্তু কেনো?পরীক্ষা দেওয়ার পর যতদিন কেটেছে ততদিন নেহা ভীষণ খুশি ছিলো নিখিলের সাথে নিজ থেকে কথা বলতো,দুষ্টুমি করতো,বকা দিলেও ওসব গায়ে মাখতো না,কখনো তো স্যরি বলতো না এখন কেনো বললো!মেয়েটা আবার নিজেকে লুকিয়ে রাখা শুরু করবে না তো?আঁতকে উঠলো নিখিলের প্রেমিক স্বত্ত্বা!
নেহা ততক্ষণে চোখ বুঁজে ফেলেছে নিজের।নিখিল শুধু তাকিয়ে রইলো,ঘুম উবে গেছে তার!হৃদয়ে কেমন অদৃশ্য দহ’নে পুড়া’চ্ছে তাকে।কেনো যেনো কোনো শব্দ বের হলো না কন্ঠ নালী থেকে।
———
সকালে ঘুম দেরিতে ভাঙ্গলো নিখিলের,নেহা কে পাশে না দেখে ঘড়িতে সময় দেখলো সারে নয়টা বাজে!
নিখিল ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো,সব গুলাতে মিলে চা খেতে খেতে হাসাহাসি করছে, নেহাকে হাসতে দেখে নিখিলের অশান্ত মন কিছুটা শান্ত হলো যেনো।
সবাই মিলে ঘুরতে বের হলো, সবুজে ঘেরা আঁকাবাকা রাস্তা গাইড সাথে নিলো তাড়া।
ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে সবাই রাতের খাবার খেতে যাবে পাশে একটা হোটেলে,ওখান কার খাবার দেখে নাকি সাব্বিরের ভীষণ খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে।
——-
রাতের বেলা রিসোর্টের আশপাশ ঘুরে দেখছিলো নেহা,
হঠাৎ কেউ একজন ওর হাত চেপে ধরে হঠাৎ, নেহা ভয়ে ছিটকে দুরে সরে যায়,একজন অত্যাধিক সুদর্শন ছেলে,অনেকটা নিখিলের মতোই লম্বা চওড়া!
ছেলেটার পাশে আরো একটি ছেলে দাড়িয়ে তার হাতে কিছু ফাইল।
পাশে থাকা ছেলেটি ধীর কন্ঠে বললো–,,স্যার কি করছেন কি এখানে? কেউ দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে!
,,ও কি সত্যি এখানে ছিলো?নাকি আমি ভুল দেখলাম সিফাত?
,,না স্যার ওটা নেহা ম্যামই ছিলো!
,,এখানে কার সাথে এসেছে?চৌধুরী পরিবারের সবাই এসেছে নাকি?
সিফাত নামক ছেলেটির সাথে নেহাকে অনুসরণ করলো সুর্দশন যুবকটি।নেহা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেছে এক ছুটে গিয়ে পড়লো নিখিলের বুকে।নিখিল ফোনে কথা বলা অবস্থায় ছিলো,নেহাকে হাঁপাতে দেখে ফোন রেখে নেহার গালে এ হাত রেখে জিজ্ঞেস করে–,,কি হয়েছে? ভয় পেয়েছিস?
অতিরিক্ত ভয়ে নেহা, কথা বলতে পারলো না কিন্তু নিখিলের থেকে দূরে সরে পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
তোতলানোর সুরে বললো–,,আসলে স্যরি নিখিল ভাই,আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই ছুটে এসে আপনার উপর পড়ে গিয়েছিলাম!ব্যাথা পাননি তো আপনি?
নিখিল নেহার দুগাল আগলে ধরে বলে–,,কি বলছিস এসব?তুই ধরলে আমি ব্যাথা কেনো পাবো?এমন করছিস কেনো?বল আমাকে কি দেখে ভয় পেয়েছিস!
মিহির চলে আসলো ওখানে পর পর বাকিরা,মিহির অবাক কন্ঠে বললো–,,সাহিল ইসরাক খান এখানে?
নিখিল যেনো ভয়া’নক কোনো কিছু শুনে ফেলেছে, নিখিল নেহার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো সামনে,রিসোর্টের চকচকে আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ছেলেটিকে!নিখিল আর সাহিল নামক অগ্যাত ব্যক্তির দৃষ্টি বিনিময় হলো।যেনো ভয়ান’ক কোনো তান্ডব লীলার আভাস দিচ্ছে তাদের চোখ জোরা।নেহা নিখিলের পেছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখলো ছেলেটিকে!
সাহিল রাগে ফুসফুস করতে লাগলো,সাহিল কে রাগতে দেখে সিফাত আস্বস্ত সুরে বললো–,,স্যার আপনি তো ম্যাম কে ভালো করেই চিনেন।যা ভাবছেন ভুল স্যার।নিখিল মেহমেত চৌধুরী তো নেহা ম্যামের কাজিন, ভাই হিসাবে আগলে ধরেছিলো!
,,তাই যেনো হয় সিফাত!না হয় আমি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবো ওই নিখিল কে।নেহার দিক হাত বাড়ালে ওই হাত কে’টে নিবো আমি শিয়াল কুকুরে খাইয়ে দিবো!
,,কিন্তু স্যার ম্যাম তো ভয় পেয়েছে আপনাকে!
,,ভালোবাসা দিয়ে ভয় কাটিয়ে দিবো আমি!এখন এখান থেকে চলো, জানপাখিটাকে বেশি ভয় দেখানো উচিত হবে না,ইউ নো না কতোটা অসুস্থ ব্রেনে একদম প্রেশার যাতে না পরে ওর!গার্ডদের বলে দিবে পাহারা দিতে আমার প্রাণ ভোমর এখানে আছে।
(টুইস্ট কেমন লাগলো?)
চলবে?
#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১৬
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাহিল নামক ব্যক্তিটি মুহুর্তেই সবার দৃষ্টিগোচর হলো।নিখিল মুর্তির ন্যায় এখনো দাঁড়ানো,মানুষ যে জিনিস থেকে মুক্তি পেতে চায়,এরিয়ে যেতে চায় সে জিনিস টাই ঘুরে ফিরে নানান রূপে সামনে চলে আসে!
বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বির,রৌফ দাড়িয়ে আছে চুপচাপ নেহা কে ধরে রেখেছে বৃষ্টি। নেহা চুপচাপ বনে গেছে পুরো।এরা কেউই সাহিল কে চিনে না,ব্যবসায়িক ঝা’মেলা কখনো বাড়ি বয়ে আনেনি চৌধুরী পরিবারের বড়রা।
মিহির নিখিলের হাতে টান দিলো,নিখিল অদূর অন্ধকারে এখনো তাকিয়ে, মিহির সবাই কে বললো–,,যে যার রুমে যা তো,রাত বেড়েছে গিয়ে শুয়ে পর কাল আবার আড্ডা দেওয়া যাবে।
বৃষ্টি তুমি নেহা কে নিয়ে যাও তোমার রুমে,নিখিল আসার পর রুমে যাবে!
সবাই চুপচাপ কথা মেনে নিলো,হঠাৎ কি হলো কে জানে ওরাও প্রশ্ন করলো না।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে জানা যাবে।
নিখিলের অতিসয় গম্ভীর কন্ঠ —,,ও এখানে কি করছিলো? বিজনেস মিটিং করার জন্য আর জায়গা পেলো না?এই খান নামযুক্ত মানুষ গুলা পুরাই ভে”জাল!
,, আমার ভালোবাসার দিক নজর দিয়েছে,যদি ছোট আব্বুর বারণ না থাকতো কবেই এটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতাম আমি!
মিহির নিখিলের কাঁধে হাত রাখে–,,রুমে যা তো, একটা কথাই বলবো নেহা কে যত তাড়াতাড়ি পারিস আপন করে নে।সময় অনেক কিছু পাল্টে দেয় নিখিল,অবহেলা যদি ভুলেও এক ফোঁটা করিস অন্য জন্য সে সুযোগ টা নিয়ে সামান্য তম যত্ন দেখিয়ে জায়গা দখল করে নেয়!
তখন কিন্তু তোর এতো গভীর ভালোবাসা, আদর, যত্নেও কারো মন গলবে না,হারিয়ে গেলে সত্যি আর ফিরে পাওয়া যায় না!
————-
নেহা সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকেছে এখনো বের হচ্ছে না।বৃষ্টি কতো করে জিজ্ঞেস করলো–,,বললো এসে বলছি!
দীর্ঘ সময় পর নেহা বের হলো,ফর্সা হাতটায় লাল লাল ছাপ স্পষ্ট, যত পেরেছে হাতটা ঘঁষে ঘঁষে পরিষ্কার করেছে নেহা।নিখিল ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ তার হাত ধরেছে বিষয়টা এখনো মেনে নিতে পারছে না।সাব্বির ভাইয়া,রৌফ হাত ধরেছে কতোবার কতো মারামারি করেছে তবুও তাদের সামনে এতো অস্বস্তি ফিল হয়নি নেহার।নিজের আপন ভাইয়ের মতোই লাগে তাদের।নেহা বুঝলো না ওই ছেলেটার এভাবে হাত চেপে ধরাটা কি কাকতালীয় নাকি পরিকল্পনা মাফিক!
বৃষ্টি নেহা হাত দেখে চমকে উঠলো –,,তোর হাতে কি হয়েছে নেহা?
,,ময়লা লেগেছিলো পরিষ্কার করেছি!
বৃষ্টি অবিশ্বাস্য সুরে বললো–,,পাগ’ল হয়েছিস?এভাবে কেউ করে নাকি।ভাইয়া তোকে দিবে এবার বকাটা!
নেহা মৃদু হেসে বলে–,,তোর ভাই ওটা ছাড়া আর কিছু পারে না।
,,ভাইয়ার উপর রেগে আছিস?সকাল থেকে দেখছি তোর মন খারাপ!
,,তুই যে বেশি বুঝোছ,কেউ তো বুঝলো না মন খারাপ কিন্তু সারাদিন আজাইরা চিন্তা করোস তাই তোর মনে হলো মন খারাপ আমার।
বৃষ্টি বিরক্তি নিয়ে বলে–,,আমার থেকে কিছু লুকাতে আসবি না তোকে ভালো করেই চিনি আমি।ভাইয়া কিছু বলেছে তোকে?
,,তেমন কিছু না!আমার মনে হয় আমি তোর ভাইয়ের লাইফে বেশি ইন্টারফেয়ার করি যেটা ওনার পছন্দ না।আচ্ছা আমাকে একটা কথার উত্তর দে তো,,
,,কি কথা?
,,আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তোর ভাই এক মাস আমার সাথে কথা বললো না, পরে হঠাৎ এসে প্রেম দেখাচ্ছে,ভালো করে কথাও বলছে,কাহিনি টা বুঝলাম না!না মানে ডাক্তার কি এমন কোনো কথা বলেছে,যে আমি ম’রে টরে যাবো!তাই সবাই মিলে ভালোবাসা দেখাচ্ছে।
,,এসব ফালতু কথা তোর মাথায় কেনো আসে নেহা?ভাইয়া তোকে ভালোবাসে তাই এসব করছে।সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করছে,তুই ও তো ভালোবাসিস তুই ও ভাইয়ার সাথে ভালো করে কথা বলবি দুজনের মধ্যে সব ঠিক করে নিবি তাহলেই হলো!
,,বাদ দে তো এসব ভালোবাসার উপর থেকে রুচি উঠে যাচ্ছে এখন আমার,আগে জানলে ভালোবাসার কথা মুখেও আনতাম না!
,,ভালো তো বেসে ফেলেছিস এখন আর কি করবি!
,,তুই বন্ধ কর এসব ভালোবাসার কথা,এখন আমি বিবাহিত বুঝলি বিবাহিতদের জীবনে এসব প্রেম টেম নেই।তোর ভাইকে বিয়ে করে এখন আমার জীবনের সব প্রেম ভালোবাসা নাই হইয়া যাইতাছে!
নিখিল দরজায় দাড়িয়ে বলে–,,নেহা রুমে আয়!
নেহা একবার দরজায় তাকায় পরে বলে –,,আজকে বৃষ্টির সাথে থাকবো আমি!
নিখিল রাগী কন্ঠে বললো—,,তুই আমার কোলে উঠতে চাচ্ছিস বললেই হয়!এভাবে বাহানা না বানিয়ে সরাসরি বললেই তো পারিস!
নেহা বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো নিখিল কে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
নিখিল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,বল নেহা কাকে ভালোবাসে কার কথা বলছিলি তোরা?
বৃষ্টি চোখ ছোট করে তাকালো–,,তার ভাই সব সময় মাঝপথে এসে অর্ধেক কথা কেনো শুনে পুরোটা শুনলেও তো পারে!
,,আমি বলতে পারবো না!তুমি নেহা কে জিজ্ঞেস করো ও তোমাকে বলে দিবে।
নিখিল চুপচাপ চলে আসলো, সে ভালো করেই জানে তার বোন বান্ধবীর কথা ভুলেও ফাঁস করবে না।
নিখিল রুমে ঢুকে দেখে নেহা বিছানার উপর শুয়ে পড়েছে।নিখিল টেবিলের উপর হাত ঘড়ি খুলে রাখলো,দরজা আটকে এসে বসলো খাটের এক পাশে।
নেহা একবারের জন্য ও তাকালো না তার দিকে!
নিখিল ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো–,,এখন ভাব দেখাচ্ছিস কেনো,ভুত দেখে ভয় পেয়ে তো আমার উপর এসেই পড়লি তখন,সব সময় তো কিছু না হতেই এসে জড়িয়ে ধরোস।এখন এমন করছিস কেন?কি করেছি আমি!
নেহা থমথমে কন্ঠে জবাব দিলো–,,কবে থেকে জড়িয়ে ধরি আমি আপনাকে আগে কখনো ধরেছি বলুন?একদিন শুধু নিজ থেকে চেয়েছি আর আজ ভুল ক্রমে তার জন্য তো স্যরি বলেছি!আপনার এতো অসুবিধে থাকলে মুখে বলে দিলেও পারেন।আর কোনো সময় ভুলক্রমে ও ধরবো না।আপনাকে বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।আমার সাথে থাকার জন্য আপনাকে জোর করিনি আমি।বিয়েটা করেছেন নিজের ইচ্ছেতে,এখন যদি এতো সমস্যা হয়,আপনার মতো যদি কেউ থাকে তো তাকে জীবনসঙ্গী বানান,আমি আসবো না মাঝখানে আমার ওরকম স্বভাব নেই!
নেহা উল্টো দিক মুখে করে শুয়ে পড়লো।নিখিল হা হয়ে তাকিয়ে আছে,নেহার হাত টান দিতে গিয়ে আরেকদফা চমকালো।উৎকন্ঠায় চেঁচিয়ে উঠলো
,,তোর হাতে কি হয়েছে নেহা!
নেহা শান্ত কন্ঠে বললো–,,সামান্য লালই হয়েছে,এমন করছেন যেনো ম’রে গেছি।ম’রে গেলে তো আপনি বেঁচে যান একটা আপ’দ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।যাকে ভালোবাসেন তাকেও পেয়ে যাবেন!
নিখিল এবার নেহা কে এক টানে উঠিয়ে গালে ঠা’স করে একটা চ’ড় বসিয়ে দিয়েছে।
নেহা এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ঠোঁট উল্টে অভিমানী সুরে বললো–,,আপনি একটা খারা”প মানুষ নিখিল ভাই।
নিখিল এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নেহাকে,নেহা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো নিজেকে।
,,তোর হাত ধরেছিলো সাহিল?তাই হাতের এই অবস্থা করেছিস তুই!
,,আপনাকে কেনো বলবো?দূরে সরুস বলছি!
কান্না ভেজা কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান, নিখিল নেহার মাথায় চুমু দিলো।নেহাকে টেনে ভালো করে বুকের উপর রাখলো,শক্ত হাতে জড়িয়ে নিলো,যেনো একটু ছাড়া পেলে পালিয়ে যাবে পাখি!
,,তোর কেনো মনে হয় আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি?
,,আমি আপনাকে কয়েকদিন একটু বেশি জ্বালি’য়েছি নিখিল ভাই?তাই আপনি আমার উপর এতো রাগ দেখান সব সময়?আমি কি অনেক বা’জে আমার সাথে একটু ভালোবেসে কথা বলতে পারেন না আপনি?সব সময় শুধু ধ’মক দেন।
,,আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে,সব অভিযোগ শুনবো আজ আমার কোনো তাড়া নেই!
,,আপনি তো কোনো দিন বলেননি আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে কিভাবে বুঝবো আমি?
,,মুখে ভালোবাসি না বলে কি ভালোবাসা যায় না?আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ তো খুঁজে পাস কিনা?
,,আপনার চোখে তাকাতে আমার ভয় হয়!
,,এই যে আদুরে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে আছো আমার সাথে এখন ভয় করছে না তোমার?শুধু চোখে তাকাতেই এতো ভয়?
নেহা লজ্জা পেলো অনেকটা,গুটিয়ে গেলো আরো নিখিলের সাথে,নিখিল হাসলো গাল এলিয়ে!
,,যদি ভালোবাসি কোনো দিন ছেড়ে যাবি না তো নেহা?ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না আমি,তাই বলে ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো এতো বড় সিদ্ধান্ত টা নিয়ে ফেলবি তুই?একবার ও ভেবেছিস তুই? জানিস তুই নেহা? ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্র’ণা টা কতো গভীর, কতোটা পু’ড়ায়?জীবনে যখন প্রেম বুঝলাম, ভালোলাগার অনুভূতি আসলো, তখন তোকে দেখে সেটা অনুভব করতে পেরেছিলাম।আমি বরাবরই কাটখোট্টা, প্রকাশ করতে পারি না, হয়তো কোনো দিন পারবোও না অন্যদের মতো!তোর প্রতি অনুভূতি গুলো এলোমেলো করে দিতো আমায়,নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তোর উপর রাগ দেখিয়ে ফেলতাম। অধিকার বোধ শাসনের আড়ালে বার বার ঢাকা পড়ে যেতো অনুভূতি!
তোর যখন চৌদ্দ বছর বয়স!অষ্টম শ্রেনি পার হবি,সে সময়টায় আমি তোর প্রেমে পড়েছিলাম।ভালোলাগা টা তীব্র পছন্দে পরিনত হয়েছিলো আমার।তখন আমি পরিপক্ব যুবক বুঝতে পারছিস নেহা কি করে সামাল দিয়েছি নিজেকে,রোজ রোজ তোকে চোখের সামনে দেখে কতো রূপে কতো শতো বার তোর প্রেমে পড়েছি!আমি কোনো দিন প্রেমিক হতে চাইনি,প্রেমিক স্বত্ত্বা নড়েবড়ে আমার,তোর অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যার্থ হয়ে যেতাম জানি।তোকে এমন এক বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম,যেই সম্পর্কে তুই অভিমান করে দূরে থাকতে পারতি না,মুখ ঘুরিয়ে নিলেও তোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার অধিকার থাকতো আমার।
আমি জড়িয়ে ধরা ছাড়া কিছু পারি না জান প্লিজ একটু মানিয়ে নিস!
আমি ভেবেছিলাম তুই শুধু মোহ কিন্তু তুই ভুল প্রমান করে দিতে যেনো উঠে পড়ে লাগতি নেহা।তুই বড্ড অবাধ্য এই আমার মতো মানুষ টাকে ঠিক নিজের জালে জড়িয়ে নিয়েছিস।
“আমি ঘুড়ি হয়ে গেলাম নাটাই টা তুই নিজের হাতেই রেখে দিলি ইচ্ছে মতো উড়ালি নিজের আকাশে,তাও নিজের অগোচরে “!
ভালোবাসা টা কখন এসেছে জানি না,হয়তো প্রথম থেকেই ছিলো নয়তো প্রেমে পড়ার পড়!তুই জানতে চেয়েছিলি না তুই আমার যোগ্য কিনা,তোকে আমার পছন্দ কিনা?তুই কি জানিস আমি রোজ রাতে এটা ভাবতাম এই শুভ্রতম ফুলের ভালোবাসা কোনো দিন হতে পারবো কিনা?তার ভালোবাসার যোগ্য আমি কিনা!তার চোখে আমি সুন্দর রূপে ধরা দেই কিনা,তার শীতল হরিণী আঁখি জোড়া আমার উপর থমকে থাকে কিনা?তার মনের দখলদারী কোনে দিন পাবো কিনা!
আমি প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয় মনে পুষি।তোকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেও আমার বুক খা খা মরুভূমির মতো হয়ে যায় নেহা!জানিস তার কারন?
,,তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যে মনটা আজও ব্যাকুল, তোন মন দুয়ারে দাঁড়িয়ে তৃষ্ণায় কাতর পথিক আমি, দিবি না ভালোবাসার এক চিলতে পরশ।যা শান্ত করে দিবে আমার মনে বয়ে চলা অশান্ত ঝড়!
ভালোবাসা প্রকাশ করিনা বলে দূরে চলে যাস তুই পাখি?একবার ও বুঝে নিতে পারিস না এ মনের অব্যক্ত অনুরুক্তি!
জানি তুই বুঝবি না বুঝেও কষ্ট দিবি,তবুও তো আমি এতেই খুশি পাখি,তুই যে আমার খুব যত্ন করে আগলে রাখা অবুঝ পোষা পাখি!
ভালোবাসি কিনার জানার জন্য এভাবে এতো কিছু করলি?অভিমানে এক মাস দূরে থেকেছি।তুই বড্ড পাষা’ণ জান পাখি,আমি আসি নি বলে নিজেও আসবি না?এতো রাগ এতো অভিমান আমার প্রতি?রাগ করে কখনো অধিক কাছে আসতে পারিস না?সব সময় কেনো দূরে যেতে হবে তোকে?নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি ভাবিস তুই সব কিছু মিটে যাবে।এতো বোকা কেনো তুই নেহা, নিজের নাম করে বার বার আমার হৃদয়ে রক্ত’ক্ষরণ করিস তুই!আমাকে জ্বা’লিয়ে পুড়ি’য়ে মারিস
এর শাস্তি তো তোকে আমি ভালোবেসে দিবো,তুই রোজ রোজ এর শাস্তি ভোগ করবি আমার ভালোবাসার পরশে!
,,আমার ভালোবাসার তা’ন্ডব স’হ্য করতে পারবি তো জান?না পারলেও তোকে এক বিন্দু ছাড় দিবো না আমি।আমি তোকে ভালোবাসতে চাইনি তুই চুম্বক নেহা,তুই মা’দকের চেয়েও বড় নে”শা!তুই নিজ থেকে নিজের কাছে টেনে এনেছিস আমায়।এখন তুই আমার বদলে অন্য কাউকে ভালোবাসলেও আমার কিছু যায় আসে না।তুই আমার মানে আমার,অন্য কারো নাম মুখে ও আনলে —,,তো’কে তো’কে আমি নিজ হাতে খু’ন করে ফেলবো জান!
আমার ভালোবাসা মানে পুরোটাই আমার তোকে আমি কাউকে দিতে পারবো না।আমি মহান মানুষ হতে পারবো না এক্ষেত্রে বড্ড স্বার্থপর আমি,আমি তোকে দিয়ে দিলে ম’রে যাবো।অন্য কারো কাছে যাওয়ার আগে আমাকে নিজ হাতে মে’রে ফেলিস নেহা!
তবুও তবুও অন্য কারো হওয়ার কথা বলিস না।
নিখিলের কন্ঠ কেঁপে উঠলো, চোখ চিকচিক করছে জলে,নেহা নিরব শ্রোতার ন্যায় সব শুনছে,নেহা চায় আজ শুধু নিখিল বলুক ও শুনবে!নিখিল নেহার মুখ দুহাতের আজলে ধরলো,অসংখ্য চুমুয় ভরিয়ে দিলো ছোটখাটো মুখটা!আদরে আবেশে চোখ বুজে নিলো নেহা।
নিখিল নেহার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে চুপ রইলো কিছুক্ষণ।
কাঁপা কন্ঠে বললো–,,কথা দে ছেড়ে যাবি না!
নেহা নিখিলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো,নিখিল ভয় পেয়ে গেলো হঠাৎ এই বুঝি মেয়েটা বললো–,,কথা দিতে পারবো না নিখিল!ভিতর টা কেমন মুচড়ে উঠলো তার।
নেহা চট করে নিখিলের হাত ধরলো দৃষ্টি নিখিলের আকুল চোখে–,,যদি ভালো না বেসে সারাজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি দেই! তবুও কি আপনি মেনে নিবেন?
তবে আমি কথা দিতে পারি ছেড়ে যাবো না কোনো দিন!মৃত্যু ছাড়া কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাদের।
আপনি কি এই নিদা’রুণ কষ্ট হাসি মুখে মানতে রাজি?
,,আমার ভালোবাসার গভীরতা পরীক্ষা করতে চাচ্ছিস?
তবে তাই হোক!তার পর ও কথা দিতে হবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারবি না তুই,আমাকে কথা দেওয়ার মানে তুই আমার নেহা।আমাকে ভালোবাসতে মানা করতে পারবি না,অধিকার ফলাতে বাঁধা দিতে পারবি না।আমি ভীষণ রকম পসে’সিভ নেহা,তুই জানলে ভালো না জানলে এখন থেকে জেনে নে,তুই নিখল মেহমেত চৌধুরীর বউ সে তার জিনিসে এক ফোঁটা ও ছাড় দেয় না।
নেহা মনে মনে হাসলো,তার মন এখন খুশিতে আকুপাকু করছে মন চাচ্ছে এখনই নিখিলের গলা জড়িয়ে বলে দেই ভালোবাসি, ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।কিন্তু নেহা বলতে চায় আর কিছুদিন পর!
ততদিন এই পাগ’লটা ঠিক থাকলে হয়।নেহা যথাসম্ভব নিজেকে কঠিন করে রেখেছে!
,,আমার একার ভালোবাসাতে চলবে না তোর নেহা?কথা দিচ্ছি ভীষণ রকম ভালোবাসবো তোকে।তুই আমাকে ভালোবাসতে সময় নিবি নে,আমি তোকে সময় দিলাম আমৃত্যু!শুধু আমি ভালোবাসবো তুই শুধু আমার সাথে থাকবি আমার সামনে থাকবি আমি তোকে তৃপ্তি নিয়ে দেখবো তাতেই হবে!আর কিছু চাই না আমি, শুধু তোকে ছাড়া!
নেহা আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো নিখিল কে, চোখ বন্ধ করে ফেললো এবার,এটা না করলে নিখিল কখন কি করবে তা নেহার ধারনার বাহিরে,কন্ট্রোল হারিয়েছে নিখিল!নেহার মনে হলো ঘুমের ভান ধরাটাই উত্তম।
নিখিল নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো—,,শুনতে পাচ্ছো নক্ষত্রের রাত?
এই অগোছালো প্রেমিকটা আজ জানাতে চায় তার প্রেম প্রেয়সীকে। ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!ভীষণ রকম ভালোবাসি নক্ষত্রের রাত!
তুমি নীহারিকা থেকে হয়েছো নক্ষত্র, জ্বলেছো আমার হৃদয়ে ভালোবাসার স্ফুলিঙ্গ হয়ে!
তুমি জ্বলজ্বল করবে ততদিন ভালোবেসে যাবো আমি তোমায় যতদিন!
নেহার ভীষণ রকম কান্না পেলো এখন ভালোবাসার মানুষটির এমন স্বীকারোক্তি অনুভূতির অতল সাগরে তলিয়ে নিচ্ছে তাকে।চুপচাপ পড়ে রইলো শুধু যেনো নিজেকে আড়াল করতে চায় নিজেরই থেকে!
নিখিল যেনো নেহার লুকোচুরি ধরে ফেললো সহজে,সেও দেখতে চায় তার বউ কতদূর যেতে পারে।তাকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে সময় নিচ্ছে!নিখিল না হয় করলো আরো ক্ষণকাল অপেক্ষা।তবে বেশি সময় দিতে নারাজ নিখিলের মন।তবুও জানতে চায় নেহার ভালোবাসার পরিসর,দেখতে চায় প্রেমিকা সত্তা যেতে পারে কতদূর!
নিখিল নেহার চুল গুলো সরিয়ে কাঁধে গভীর চুমু আঁকলো।নেহার ঘুমের ভান ধরাটা যেনো ধরা পড়ে গেলো নিজের শরীরের কাঁপুনি তে। নিখিল থামলো না মোটেও নেহাকে অতিষ্ঠ করার সুযোগ টা মিস করতে চাইলো না কিছুতেই!
ছোট ছোট চুমু দিতে থাকলো কাঁধ জুড়ে।কাঁধ ছড়িয়ে মুখ গুঁজলো গলায়,নেহার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা!তবুও নড়তে পারছে না।নেহার বুঝতে বাকি নেই নিখিল ইচ্ছে করে এমন করছে।মনে মনে বলে উঠলো –,,শয়’তান একটা!
নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসলো—,,নেহার কানে হিসহিসিয়ে নে’শা ভরা কন্ঠে বললো আমাকে ব’কা পরেও দিতে পারবি।তুই সত্যি ভীষণ বোকা আমার থেকে পালাতে চেয়ে আমার ভিতরই লুকানোর চেষ্টা করছিস! আমার চোখে তাকালে তুই নিজেকে প্রকাশ করে ফেলবি সেই ভয়ে তাকাতে পারিস না।
চুপ থাকলে কিন্তু আমি আজকে ছাড়বো না তোকে, আমাকে বাধ্য করবি না, একবার একবার কাছে,,,,,
নিখিল আর কথা বললো না,নেহাকে টেনে উঠিয়ে তাকলো তার মুখের দিকে,লজ্জায় লাল হয়ে এসেছে মুখ,চোখ দুটি কাঁপছে তড়তড় করে।ঠোঁটের কোনে হাসিটা নিখিল ধরে ফেললো খুব দ্রুত।নিখিল নিজের মুখ বাড়িয়ে আনলো নেহার মুখের দিকে,নেহা এবার চোখ খুলে ফেললো।চোখে চোখ মিললো,নিখিল নেহার চাহনি এরিয়ে ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হলো,আঁকড়ে ধরলো নেহা কম্পনরিত ঠোঁট।
বেশ কিছুক্ষণ পর নেহাকে ছেড়ে দিলো নিখিল।নেহা হাঁপাতে থাকলো এবার,নিখিলের বুকে এলোপাতাড়ি কি’ল, ঘু’ষি দিলো নিখিল খিলখিল করে হাসছে, ছেলেটার প্রাণবন্ত হাসিটা চোখ ভরে মনের মাধুরি মিশিয়ে দেখলো নেহা।
নিখিল নেহাকে বললো–,,এই আয় ঘুমাবি,উফ”নেহা তুই আমাকে দিয়ে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি নিয়েই ছাড়লি!তুই একটা কি যেনো বলে হ্যাঁ হ্যাঁ তুই একটা ব্লাক”মেইল কুইন!
নেহা তেতে উঠে বললো আমি ব্লাক’মেইল করি?তার মানে এসব আপনি ভয়ে বলেছেন? কিছু সত্যি না!
নিখিল হাসি দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।নেহা তেড়েফুঁড়ে গিয়ে বললো–,,তবে রে অসভ্য লোক একটা!আজকে তো আমি আপনাকে,,,,
নিখিল নেহার ঠোঁট আঙুল চেপে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বললো –,,ঘুমা!না হয় কিন্তু যা হবে তার জন্য দায়ী থাকবি শুধু তুই।
নেহা নিখিলের পিঠে আলতো হাতে চাপড় মেরে বললো–,,আপনি একটা যা তা!
——————
ঘুম থেকে উঠে নেহার মন ফুরফুরে নিখিলের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
ইশ!তার জামাইটা কতো সুন্দর, হ্যান্ডসাম,গুড লুকিং।উফ পার্সোনালিটি একদম ঘায়েল করার মতো।এই মানুষটা রাতে তাকে ভালোবাসি বলে বলে কতো পাগলা’মি করলো নেহার নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে।
নেহা নিখিলের মুখে হাত রাখলো,ছুঁয়ে দিলো আলতো হাতে।মুখ বাড়িয়ে চুমু দিলো নিখিলের কপালে।
নিখিল এখনো ঘুমে না হয় নেহার এতো সাহস কোথায়?নিখিলের কাছে আসতেই সব শক্তি লোপ পায় তার।
নিখিলের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো–,,ভালোবাসি!
নিখিলের ঘুম ভেঙ্গে গেলো কিছুক্ষন পর, নেহা রুম থেকে বেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যে, বৃষ্টি নেহাকে হাসি হাসি মুখে বের হতে দেখে এগিয়ে গেলো,খোঁচা মেরে বললো
,,কি ব্যাপার ভাবী ভীষণ ফুরফুরে লাগছে তা কি খবর?
,,বলবো না!
জেরিন,সাব্বির বের হয়ে আসলো হাই তুলতে তুলতে,মিহির আসলো আরো কিছুক্ষণ পর।তিনজন কে একসাথে দেখে জিজ্ঞেস করলো
,,তা নেহা তোমার বর মশাই কোথায়?
,,রুমে ভাইয়া তুমি যাও না!
মিহির যেতেই তিন জন চেপে ধরলো নেহা কে,,,বল বল বলে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।নেহা কান চেপে বললো–,,এই চুপ করো তোমরা!বলছি
তিন জন উৎসুক হলো নেহা গলা খাদে নামিয়ে বললো–,,তোমাদের ভাই রাতে স্বীকার করেছে সে আমাকে ভালোবাসে!
তিন জন একসাথে চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,কিহ্!
সাব্বির বললো–,,তুই কি বলেছিস কিছু?
নেহা ভাব নিয়ে বললো–,,না আমি আবার কি বলবো!কিছু বলিনি।
,,তোকে ভালোবাসি বললো তুই ভালোবাসার কথা জানাবি না নিরামিষ কোথাকার,তাহলে তো তোদের বাসর টা কাল রাতেই হয়ে যেতো!
নেহা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,চুপ করো তো সাব্বির ভাইয়া।ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে নির্লজ্জ হচ্ছো ব্যাটা আস্ত ব’দ হাড়মাস জ্বালি’য়ে খেয়েছে!
ওফ!আর বলো না ভালোবাসার কথা বলেছে কিন্তু শর্ত দিয়েছে পাঁচশো টা!কি ডাকা’ত লোক।
জেরিন বললো–,,তাও তো বলেছে ভাইয়ের মতো মানুষ! এতেই খুশি থাক,এবার তুই কবে বলবি বল তো ভাই, ফু্প্পি হতে হবে তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি!
সাব্বির চোখ ছোট করে বললো–,,চশমা ওলাটা মন্দ না লাইন টাইন করে ফেল, তোর টা ক্লিয়ার আমাদের ও পথ ও সহজ হবে কি বলিস বৃষ্টি?
বৃষ্টি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো–,,চশওলা টা কে আবার!
তাদের কথার মাঝে মিহির,নিখিল চলে আসলো।
সবাই মিলে খেতে যাবে এখন!
নিখিল নেহা এগিয়ে যেতেই মিহির কে থামিয়ে দিলো বাকিরা।
সাব্বির জেরিন বললো–,,আজ রাতে এদের বাসর প্ল্যান করবো আমরা তুমিও সাথে থাকবে ভাইয়া কোনো না শুনতে চাই না আমরা!
মিহির ভ্রু বাঁকিয়ে বললো–,,বাসর করার মতো আদো কিছু আছে এদের মধ্যে?
তিনজনই গদগদ হয়ে সব বলে দিলো,মিহির হাসলো যাক অবশেষে গা’দা টা বলেছে,সাহিলের আগমন টা ভালো কিছুই বয়ে আনলো এবার!
চলবে?