প্রণয়ের সুর পর্ব-১৭

0
14

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১৭
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
দুপুর গড়িয়ে বিকেল রোদের তিক্ত উষ্ণতা মুছে দিয়েছে পাহাড়ি দখিনা বাতাস।রিসোর্টের এক পাশে স্বচ্ছ সজীব ঘাসের উপর বসে আছে সবাই,নানা রকম আড্ডায় মেতেছে,নেহা কিছুক্ষণ পর পর নিখিল কে ধম’কাচ্ছে,কিন্তু ছেলেটার লাগামহীন কথা থামার নাম নেই,জেরিন,সাব্বির তাদের নিয়ে মজা নিচ্ছে, সুর তুলে বলছে কি প্রেম কি প্রেম।
নেহা রেগে গিয়ে বললো–,,কচু প্রেম আছে তোমার ভাইয়ের সাথে!একটা আনরোমান্টিক তিতা লোক।

নিখিল নেহার হাত টেনে বললো–,,চল চল রুমে রোমান্টিক নাকি আনরোমান্টিক এখনই প্রমান করে দিচ্ছি।
মিহির বলে উঠলো–,,আমরা সিঙ্গেল তোকে রোমান্স করতে কোনো মতেই দিবো না আমরা।এই জেরিন কে তাড়াতাড়ি বিয়ে দে নিখিল, আমার কিন্তু আর তর সইছে না,বুড়ো হয়ে যাচ্ছি এখনো বিয়ে করতে পারছি না!

সাব্বির মিহিরের সাথে সহমত পোষণ করে বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ মিহির ভাই আমিও বিয়ে টা করতে পারি এ সুযোগে!
জেরিন বিরস মুখে বললো–,,ভাই আমাকে কেনো টানছো নিজেদের বিয়ে নিজেরা করো।আমি বিয়ে করবো না এখন!

সাব্বির চুল গুলো এক সাইডে সরাতে সরাতে বললো–,,এখন তো বলবাই, নতুন প্রফেসার টিকে যে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকো তখন মনে থাকে না?
তোর পছন্দ এমন কানা কোনার উপর যায় কেন বইন?চশমা পড়ে ছেলে!আর ভাই শা’লা শিক্ষক হইতাছে বাপের মতো কিন্তু ব্যাটা আসতে না আসতেই আমার বইনের দিক নজর দিলো!

জেরিন মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,কোন দিক দিয়া তোর কাছে বাপের বয়সী লাগে, আমাদের ভার্সিটিরই তো দুই বছরের সিনিয়র যোগ্যতা আছে তাই চাকরি টা পেয়েছে!
জেরিনের কথায় তার উপর সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখলো নড়েচড়ে বসলো জেরিন চোখ ছোট ছোট করে বললো
,,এভাবে তাকাচ্ছো কেনো আমার দিকে?

নেহা চেপে ধরে বললো–,,আপা তুমি তো দেখছি চুপিসারে হুম হুম!! বলে ফেলো জলদি কি কাহিনি।

বৃষ্টি গানের সুরে বললো–,,
সে যে চুপিসারে আমায় কেন
দেখেও দেখে না
আমার প্রাণ যে মানে না
কিছুই ভালো লাগে না!
কে বাঁশি বাজায় রে
মন কেন নাচায় রে,,,
বৃষ্টির গানের মাঝে সাব্বির উঁচু গলায় বলে এই ষাঁড়ের মতো গলায় গান গেয়ে কান টা নষ্ট করে দিস না বইন!

রৌফ বলে উঠে–,,সুন্দরই তো হচ্ছিল।ভাইয়া তোমার আসলে পছন্দ খারা’প। ভালো মন্দের পার্থক্য বুঝো না!
মিহির বলে উঠে –,,আসলেই তো সুন্দর হয়েছে,এ সুযোগে বৃষ্টির কন্ঠে গান ও শোনা হয়ে গেলো!

সাব্বির বলে উঠলো —,,এভাবে পাম দিয়ো না বুঝলে ভবিষ্যতে পরে জ্ব’লতে হবে তোমায়।তখন মানা করলে উল্টো ঝাড়ু হাতে পিটাবে!
বৃষ্টি মুখ কুঁচকে ফেললো,রৌফ বলে উঠলো–,,বুঝলাম না তুমি এমন লজিক ছাড়া কথা কও কেন মিহির ভাই কেনো জ্ব’লতে যাবো।
সাব্বির রৌফের মাথায় একটা মার’লো তেতে গিয়ে বললো–,,তোর বউ যে তার জীবন শেষ,মাইয়াটার জন্য এখনই মায়া হচ্ছে,তুই হইলি গিয়া নিখিল ভাইয়ার মতো পানসে!
চোখ পাকিয়ে তাকালো নিখিল।
সাব্বির আবার বললো–,,ভাগ্য ভালো জেরিন বইন তুই আমার থেকে এক বছরের বড়, না হয় পরিবারের সবার মাথায় যা সমস্যা দেখা দিয়েছে তোকে আর আমাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিতো।আল্লাহ ভাবা যায় কি লোমহর্ষক ঘটনা!

জেরিন বিরক্তি নিয়ে বললো–,,শা’লা তোর বয়স হয় নাই তেইশ প্রেম করিস পঁচিশ টা তোকে বিয়া করবো কোন মাইয়া!

,,সমস্যা নেই তুই ওই কানা প্রফেসার কেই বিয়া করিস!

নেহা চেঁচিয়ে বললো–,,ওফ কোন সময় থেকে প্রফেসর প্রফেসর করছো তার ডিটেইলস ও বলবা তো নাকি।দুলাভাই দেখবো না নাকি আমরা!
জেরিন কাচুমাচু হয়ে নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললো

,,বিশ্বাস করো ভাইয়া এরকম কিছুই না।সাব্বির বদল টা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছে!
সাব্বির বুঝানোর মতো করে বললো–,,আহ্! নেহা বইন নিখিল ভাইয়া এখন আমাদের দুলাভাই,আপন ভাই না বুঝলি দুলাভাইয়ের সামনে বলাই যায় এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো?
মিহির বলে উঠলো–,, হ্যাঁ নিখিল তুই তো আমার ও দুলাভাই!

নিখিল এবার বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই চুপ করবি তোরা!
নেহা ঠোঁট উল্টে বললো–,,উফ!আপনি যান তো এখান থেকে আপনার জ্বালা’য় অনাগত দুলাভাইটার সম্পর্কে কিছু জানতে পারছি না।আপনি এখানে থাকতে হলে চুপ থাকবেন,জেরিন আপু কে কিছু বলতে পারবেন না!

সাব্বির সুর তুলে বললো–,,হ্যাঁ রে জেরিন এবার বলে দে নেহা মানা করে দিয়েছে না ভাইয়া এবার কিছু বলবে না।
নেহা কথাটা শুনেই সরু চোখে একবার তাকালো নিখিলের দিকে।নিখিল তাকিয়েই ছিলো নেহা দিক, কিছু মুহুর্তের জন্য চোখাচোখি হলো নেহা থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।নিখিল ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো–,,জেরিন নিরবের কথা বলবি তাই তো!

সাব্বিরে চোখ বড় বড় করে তাকালো বিষ্ময়ে হা হয়ে গেছে সবাই।মিহির ঠেলা মেরে জিজ্ঞেস করলো–,,কোন নিরব?

নিখিলের দৃষ্টি এখনো নেহার দিক,নেহা চোখের পাতা ফেলছে একটু পর পর বৃষ্টি রৌফ ও উৎসুক। জেরিন বেচারি মাথা নিচু করে বসে আছে প্রেম করলো কখন পরিচিত হয়েছে দুদিন আর সাব্বির টা সব ঘেঁটে দিলো একা পেলে কাঁচা গি’লে ফেলবে ইত’র টাকে!

–,,আমাদের সাথে যে পড়তো নিরব।ভুলে গেলি যার বোন তোর উপর ফিদা হয়ে হাত কে’টে ফেলেছিলো!

বৃষ্টি চেঁচিয়ে উঠে বলে–,,কিহ্!
বৃষ্টি মিহিরের দিকে কটমট দৃষ্টি রাখলো,মিহির তড়িঘড়ি করে বললো–,,বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি!

মিহির নিখিলের গলা চে’পে ধরে বললো–,,শা’লা আমার সংসার হওয়ার আগেই ভেঙ্গে দিচ্ছিস।

নিখিল গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে–,,তোরা দুলাভাই বানিয়ে নিলি আমিও শালা শালিদের সাথে একটু মজা করতেই পারি!আফটারল আমার একটা মাত্র সুইট কিউট বউয়ের ভাই বোন তোরা।
জেরিন এবার বলে উঠলো–,,ভাইয়া তুমিও এদের সাথে যোগ দিয়েছো!

নিখিল হেসে বলে উঠলো–,,ধুর বোকা আমি তো তোর ভাই হই। বা’ঘ ভাল্লুক না কিন্তু তোদের বোন আমাকে দেখলেই ভয় পায় রোমান্স করার সময় ডিস্টার্ব করে!

নেহা কান চেপে ধরে বলে নিখিল ভাই আপনি একটা অসভ্য লোক!

হু হা করে হেসে উঠলো বাকিরা।
নিখিল সিরিয়াস হয়ে বললো—,,জেরিন নিরব কিন্তু ভীষণ ভদ্র ছেলে পছন্দ হলে বলতে পারিস বাবা মাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার!

এবার লজ্জা পেয়ে গেলো জেরিন।লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না,বৃষ্টি, নেহা সুযোগ পেয়ে খোঁচা মারছে।সাব্বির আনন্দের সহিত বললো
,,উফ!নিখিল ভাই তুমি তো একদম কলিজা ঠান্ডা করার মতো কথা বলেছো,এই পে”ত্নী টা বাড়ি থেকে যাবে ভেবেই আমার কলিজায় কেমন আইস আইস ফিল হচ্ছে!
জেরিন সাব্বির কে জোরে চিমটি কেটে বললো–,,সাব্বিরা তোকে তো আমি,,!

বৃষ্টি জেরিন কে বললো আপু সন্ধ্যা নেমে যাচ্ছে চলো নেহা কে নিয়ে!
জেরিন বুঝার মতো করে বললো–,,হুম চল না হয় দেরি হয়ে যাবে!
নেহা চোখ ছোট করে বললো–,,তোমরা আমাকে রেখে কি ফুসুরফাসুর করছো বলো তো।কি মতলব এটেছো?

জেরিন বললো–,,রুমে চল বলছি!
নেহা, জেরিন,বৃষ্টি উঠে যেতেই সাব্বির ও উঠলো।
নিখিল বলে উঠলো –,,কিরে তুই মেয়েগুলার সাথে কই যাস?সাব্বির তোকে নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে তুই আদো ছেলে তো মানে ওই রকম হরমোন আছে তো নাকি!
সাব্বির বিরক্ত হয়ে বললো–,,ভাইয়া!!
মিহির শব্দ করে হেসে দিলো।নিখিল আবার বললো
,,কোনো মেয়ের দিক তো তাকাস না,মেয়েদের ভয়ে ফেইসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে রেখেছিস ইন এ রিলেশনশিপ! সবাই কে বলে বেড়াস পঁচিশ ছাব্বিশ টা গালফ্রেন্ড তোর।সত্যি সত্যি কোনো মেয়ে কে আদো ভালো লাগেনি তোর?

মিহির সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো–,,আমিও জানতে চাই!
রৌফ ভ্রু বাঁকালো সে তো বিশ্বাসই করে নিয়েছিলো তার ভাই সেরা কোনো ফ্লাটিং বাজ।এখন এটা কি শোনলো?

সাব্বির মন মরা হয়ে বললো–,,কি বলবো ভাইয়া মেয়ে দেখলেই আমার ভয় করে।ভাগ্য ভালো ভার্সিটিতে জেরিন আছে ওর সাথে থাকলে কোনো মাইয়া কাছে আসে না।এরা যা ডা’কাত কি বলবো,কেমন কেমন করে তাকায় কি নির্লজ্জ এসব ঘরে কি বাপ ভাই নাই নাকি আশ্চর্য!
এতটুকু শুনেই মিহির হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে,সাব্বির মুখ ছোট করে বললো–,,তুমি মজা নিচ্ছো তো নেও ভাগ্যিস আমাদের বংশের মেয়ে গুলা ভালো না হয় তোমাদের কপালেও দুর্গতি ছিলো!
অন্য বংশের কোনো মেয়েকে আমি একদম বিশ্বাস করি না।দরকার পড়লে সন্নাসী হয়ে যাবো তাও মেয়ের চক্করে আমি নাই ভাই।
আমার সব ফ্রেন্ড ছ্যাকা খেয়ে বেকা হয়ে পড়ে আছে আমি বাপু এসবে নাই!

মিহির গুঁতো মেরে বললো–,,নিখিল তুই শা’লা মানুষ না দূরে কোথাও বিয়ে করলে সাব্বিরের একটা গতি হতো।
—————–
নেহা বৃষ্টি জেরিনের দিক তাকিয়ে আছে কিছু শোনার জন্য কিন্তু এরা কিছু বলছে না।ধরে এনে বসিয়ে রেখেছে কেনো?
,,,তোমরা কি কিছু বলবা নাকি চলে যাবো?

জেরিন বললো–,,আমরা সবাই মিলে রাতে ঘুরতে যাবো! প্ল্যানিং ভাইয়ার,এখন রেডি হতে হবে,সবাই শাড়ি পড়বো।
নেহার মনে পড়ে গেলো কিছুদিন আগের কথা রাতে তো নিখিলের সাথেই থাকতে হবে ঘুমানোর পর আর তার কোনো হুঁশ থাকে না শাড়ির অবস্থা হয় যা তা।মোটেও এসব পড়া যাবে না।
নেহা দ্রুত বললো–,,না আমি শাড়ি পড়বো না।শাড়ি ঠিক রাখতে পারি না আমি।
বৃষ্টি মুখ টিপে হাসলো বিড়বিড় করে বললো–,,আজকে না ঠিক রাখলেও চলবে!

বৃষ্টি নেহাকে বিশ্বাস করানোর জন্য আগে নিজে শাড়ি পড়লো।অগত্যা নেহা জোরাজোরিতে রাজি হলো।
জেরিন নেহা কে কালো রঙের সোনালী সুতার কাজের একটা শাড়ি পড়ালো,শাড়ি পড়ানোর পরই দু বোন নেহাকে চোখ ভরে দেখলো।মনে মনে একবার মাশাআল্লাহ বলে নিলো।শুধু শাড়িটাই নেহাকে এতো ভালো মানিয়েছে।চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে কানের পাশে দুইটা গোলাপ গুঁজে দিলো।সাজ বলতে হালকা লিপস্টিক দিয়েছে শুধু। গোলাপি ঠোঁটে খয়েরী রঙা লিপস্টিক টা যেনো নজর কাড়ছে বেশি।সিলভার কালারের গহনা পড়ালো গা ভর্তি করে চোকার ছোট কানের দুল,নুপুর, চুড়ি তে মুড়িয়ে দিয়েছে নেহা কে।নেহা বিরক্ত মাখা কন্ঠে বললো–,,কি শুরু করলে তোমরা ঘুরতে যাবে মনে হচ্ছে বিয়ে খেতে যাচ্ছো।এসব সরাও বলছি আমি পড়ি না এগুলা!
বৃষ্টি অনুরোধ করে বললো–,,বন্ধু আমার ভালো আজকে শুধু পড়।দেখতে ভালো লাগছে।
নেহা ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বললো–,,এভাবে ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে কথা বলবি না তুই মোটেও এতো ভালো না!
নেহা বিরস মুখে বসে আছে, সাজানো শেষ হতেই বৃষ্টি কিছুটা দূরে গিয়ে নেহাকে আপাদমস্তক দেখে বললো
,,হায়!আজ তো ভাইয়া পুরোপুরি শেষ!

রাত নয়টা বাজে,,জেরিন,বৃষ্টি, মিলে নেহা কে নিয়ে আসলো খাওয়ার জন্য!
নেহা অবাক হয়ে বললো–,,বাকিরা খাবে না আমরা একা?
বৃষ্টি বললো–,,ভাইয়া বলেছে এখানেই খেতে।বেশি কথা বাড়াস না তো এমনিতেই তোর ভীষণ এনার্জির প্রয়োজন হবে।পাগ”ল প্রেমিক সামলাতে হবে কিনা!

নেহা সন্দেহ মাখা দৃষ্টি তে তাকালো,জেরিন দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,,নেহা দ্রুত খা তো, এর কথা শুনিস না!
———
নেহা কে তাদের রুমে নিয়ে আসতে দেখে নেহা অবাক হয়ে বললো—,,আরে এই রুমে কেনো যাচ্ছো আমরা না ঘুরতে যাবো?

জেরিন বললো –,,দেখ বাহিরে কতো ঠান্ডা বাতাস বইছে নিশ্চিত রাতে বৃষ্টি হবে!একটু পরই নামতে পারে মিহির ভাই বললো এখানে বসতে এখানেই নাকি আড্ডা দিবে!
নেহা এবার বেশ রাগলো–,,রাত বিরাতে সং সাজিয়ে এখন বলছে যাবে না!ধুপধাপ পা ফেলে ভিতরে গেলো।
রুম পুরো অন্ধকার আরে ভাই লোডশেডিং এর কি আর সময় পায় না নাকি।

নেহা কোনো রকম গিয়ে বিছানায় বসলো।মোবাইল খুঁজলো কিন্তু পেলো না,এ কোন মসিবত! একসাথে সব আসতে হবে কেনো?
নেহা বৃষ্টি বলে একবার ডাক দিলো।এরা কি মুহুর্তেই উবে গেলো নাকি?নেহা সাজতে গিয়ে সত্যি ক্লান্ত তাই চুপচাপ খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো।

মিহির, সাব্বির মিলে নিখিল কে নিয়ে আসছে।নিখিলের মেজাজ খারাপ হলো —,,তোরা আমার রুমে আড্ডা দিবি কেনো?আর কোনো জায়গা নেই?আমার বউ তাড়াতাড়ি ঘুমায় তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে সাব্বির তোর রুমে চল!
মিহির বললো–,,চুপ ব্যাটা বউ পাগ’ল। একদিন না ঘুমালে কিছু হয় না, চল বলছি!
নিখিল কে ঠেলে আগে পাঠালো,অন্ধকার রুম বাহির থেকে মৃদু আবছা লাল নীল বাতির ঝলক দেখা যাচ্ছে।নিখিল ভিতরে ঢুকতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে চোখ বিঁধে আসলো!বাহির থেকে সুযোগ বুঝে দরজা লাগিয়ে দিলো বাকিরা।
নিজেদের কাজ শেষ করেই হাই ফাই দিলো ওরা।মিহির বৃষ্টির হাত টেনে ধরে বললো–,,তোরা ভাগ আমরা প্রেম করতে গেলাম!
সাব্বির বললো—,,আমার বোন রে নিয়ে যাও সাহস তো কম না।
জেরিন বললো–,,ছেড়ে দে আজ ওদের দিন, পরে আমাদের আসবে।
জেরিন সাব্বির কে টেনে নিয়ে গেলো!
—————
নিখিলের অন্ধকারে পা লাগলো কিছু একটায়।কিছুটা শব্দ হলো, নেহা হকচকিয়ে গেলো কন্ঠ খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,কে?

নিখিল মৃদু স্বরে বললো–,,আমি!তুই এখানে?
,,,,আপু তো বললো আপনি নাকি বলেছেন এখানে আড্ডা দিবেন?বসিয়ে রেখে গেলো,এখনো আসলো না!
এবার ভ্রু কুঁচকে ফেললো নিখিল শয়’তান গুলা নিশ্চিত কোনো কান্ড ঘটাবে।

হুট করে লাইট চলে আসলো!তবে লাইটের আলো উজ্জ্বল না হালকা সোনালী আলোয় রুমটা জ্বল মল করে উঠলো!খাটের উপর বেডশিটের উপর লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধুরী!

নেহা চমকে উঠলো লাফিয়ে নেমে গেলো খাট থেকে,একবার চোখ ছোট করে তাকালো নিখিলের দিক!নিখিল অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নেহার দিক!
হঠাৎ করেই নিখির বুকে হাত দিয়ে দেয়ালের পিঠ ঠেকালো চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিলো।
এতো শীতল পরিবেশেও ঘামছে অনবরত। শার্টের উপরের তিনটে বোতাম খুলে শ্বাস টানলো।নেহা আত”ঙ্কিত হয়ে বললো–,,আপনি ঠিক আছেন তো?
নেহা এগিয়ে এসেছে কিছুটা!

নিখিল হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,কাছে আসিস না প্লিজ!
নিখিল চোখ তুলে তাকালো আবার!মেয়েটা আজ এরকম একটা ভয়াবহ মোহনীয় সাজ কেনো সাজলো।অসময়ে কেনো করতে হবে তাকে এই কাজ টা,নিখিল এখন কি করে সামলে নিবে নিজেকে।ঠোঁট কামড়ে ধরলো নিজের।হাঁটা দিলো বাহিরের দিকে,নেহা হতবাক বিমূঢ হয়ে চেয়ে রইলো!
নিখিল ভাই হঠাৎ এরকম আচরন কেনো করছে?
নিখিল দরজা খুলতে না পেরে শিট!বলে উঠলো।
পকেট হাতরে ফোন বের করলো কল দিলো মিহিরের নাম্বারে দুবার রিং হতেই রিসিভ করলো

,,কিরে ভাই নিজের বউ রেখে আমাকে ফোন করলি কেনো?
,,দরজা খোল বলছি!বেশি ভালো হবে না, না হয়।

,,এই চুপ থাক তো, মনে হচ্ছে তুই একদম শেষ আজকে?লাড্ডু ফুটেছে মশাই!

নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো–,,রুমের ভিতর টাইমার বো’ম সেট করে জিজ্ঞেস করছিস ফাটবে কিনা!
,,এনজয়!
নিখিল আবার বললো–,,প্লিজ দোস্ত!দরজা খোল যা করতে চাইছিস তা আজ সম্ভব না নেহা অসুস্থ, এখানে থাকলে আমি ধম আঁটকে মর’বো ভাই!

,,এই ফালতু কথা কম বল তো।নেহা সুস্থ একদম ফিট এন্ড ফাইন!যা খুশি কর আজ দরজা খুলবো না।
ফট করে কল কেটে দিলো মিহির নিখিল রাগে বিরক্তিতে মোবাইল ছুঁড়ে ফেললো বিছানায়!

নেহা এগিয়ে গিয়ে নিখিলের হাত চেপে ধরলো–,,কি হয়েছে আপনার?এমন করছেন কেনো?

নিখিল নেহার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো।নেহার গালে হাত রেখে বললো–,,ওরা আমাদের এখানে একা রেখে বাহির থেকে দরজা লক করেছে বুঝতে পারছিস কেনো?
নেহা কিছুটা দূরে সরে গেলো,হঠাৎই অস্বস্তি হতে শুরু করেছে তার!

,,কেনো কাছে আসলি?নিখিলের কাঁপা কন্ঠস্বর, নেশা”ভরা চাহনি, রিতীমতো কেঁপে উঠলো নেহা।অজানা অদ্ভুত শিহরণে।
নেহা পিটপিট করে তাকালো,নিখিল ধীর পায়ে হেঁটে আসলো নেহার দিক।নেহা পেছাতে থাকলো,নিখিল কাছে চলে আসতেই নেহা মাথা নিচু করে ফেললো।
নিখিল খুব যত্ন সহকারে হাত রাখলো নেহার গলায়, দুবাহু চেপে ধরে পিছন ঘুরিয়ে পিঠ ঠেকালো নিজের বুকের সাথে।নেহা চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।নিখিল চুল গুলো সাইড করে চোকারটা খুলে ফেললো–,,নেহা স্বস্তি পেলো যেনো!
নিখিল নেহার কানে ফিসফিস করে বললো–,,আমার প্রিয় জিনিস টা ঢাকার সাহস তোকে কে দিয়েছে নেহা?
গলার ওই তিলটা আমার কতো প্রিয় তুই জানিস?ওটাকে ছোঁয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমার দীর্ঘ দিনের!
একটু ছুঁয়ে দেওয়ার অনুমতি দিবি?

(রিচেক করার সময় পাইনি,ভুল হলে একটু কষ্ট করে পড়ে নিয়েন!)
চলবে?