#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সময় কেটে যায় খুব দ্রুত।তবুও কিছু কিছু মানুষের কাছে এক একটা দিন মনে হয় বছরের সমান তাদের জীবনের সময় গুলো যেনো থমকে থাকে কারো অপেক্ষায়!
সপ্তাহ কেটেছে আজ কথা মতো নিখিলের ফিরে আসার কথা!অভিমানী নেহা উপরে উপরে দেখাচ্ছে নিখিল আসলেও তার কিছু না! না আসলেও তার কিছু যায় আসে না।তবুও মন সে তো মানে না সকাল থেকে হয়তো একশোবার গিয়ে বারান্দায় দাড়িয়েছে নিখিল এসেছে কিনা দেখার জন্য।
কিন্তু মানুষটি আসলো না।তবুও নেহা ছট’ফট করছে কখন আসবে নিখিল কখন সে তার প্রাণপুরুষের মুখটি দেখবে!কতোদিন দেখে না মানুষ টিকে একবারও কি মনে পড়েনি তার কথা লোকটার?একটা কল ও করা যায় নি, এতো এতো রাগ তার নেহার উপর!
সকাল দশটা নাগাদ একটা গাড়ি ঢুকেছে গেইট দিয়ে,গাড়ি কার এসব দেখার যেনো নেহার সময় নেই সে ছুট লাগিয়েছে সদর দরজার কাছে, নিজেই প্রথম দরজা খুলে চোখের তৃষ্ণা মিটাবে,এতে তাকে নির্লজ্জ বেহায়া উপাধি দেওয়ার হলে দিবে!
কলিং বেল বাজার অপেক্ষাটাও নেহা করেনি দরজা খুলে ফেললো ঝটপট। দরজাটা খুলে হাস্যউজ্জ্বল মুখটা চুপসে গেলো ওর।নিখিলের পরিবর্তে নিখিলের বড় মামা বড় মামি দাড়িয়ে দরজায়!
নেহা সালাম দিতেও ভুলে গেছে যেনো।নিখিলের বড় মামার কথায় হুঁ শ ফিরলো নেহার।
মৃদু হেসে তাদের সালাম দিলো ভিতরে আসতে বললো।
নিজেকে সামলে নিলো খুব দ্রুত।গলা উঁচিয়ে ডাকলো
–,,বড় মা শুনছো দেখে যাও কে এসেছে!
নেহা রান্না ঘরে গেলো সরবত আনতে।এতোটা পথ এসেছেন তারা।নেহার কন্ঠে ডাক শুনে সবাই একে একে নিচে নামলো।হামিদা বেগম তো ছুটে আসলেন এক প্রকার কতোদিন পর ভাই ভাবি কে দেখলো।সংসার সামলে যাওয়া হয়ে উঠে না কতোদিন!
তাহমিদা,সাহারা রান্না ঘরে যাবে ভাবলো নাস্তা আনতে, তার মধ্যেই নেহা সব কিছু নিয়ে হাজির পেছনে কাজে সাহায্য করা মেয়েটা,তার হাত ভর্তি ফলমূল!
সাহারা নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে শাশুড়ীর ঘরে গেলেন।তাহমিদা মেয়ের কাজে খুশি হলেন অবশেষে মেয়েটা বড় হচ্ছে।সংসারে মন দিচ্ছে,এবার সুখে থাকলেই তিনি নিশ্চিন্ত।
নেহার মাথায় ছোট খাটো একটা ঘোমটা।হাতে সরবতের ট্রে।হাসি মুখে এগিয়ে দিলো আলাউদ্দিন সাহেবের দিকে।লোকটি চমৎকার হেসে তা গ্রহণ করলো।
আজ শুক্রবার তাই বাড়িতেই আছে সাব্বির,বৃষ্টি, জেরিন,তাদের সাথে সিঁড়ি বেয়ে নামছে রৌফ,জেবা,ফারহান!
সাব্বির তো চোখ বড় বড় করে তাকালো নেহার দিকে,নিজে এক গ্লাস পানি নিয়ে খায় না, সে মহিলা মামা শ্বশুর শাশুড়ী কে একদম সেবা যত্ন করে উপরে পাঠিয়ে দিচ্ছে!
জেরিন,বৃষ্টি এগিয়ে গেলো মামার পাশে বসে পড়লো, ভাগ্নিদের পেয়ে তিনি আপ্লূত।সাথে অভিমান করে বললেন–,,তোদের তো সময়ই হয় না।তাই আমরাই চলে এসেছি।
হামিদা বেগম মুগ্ধ হলেন নেহার কাজে,বৃষ্টি উঠে গিয়ে নেহা কে খোঁচা মেরে বললো–,,কিরে তুই তো দেখছি একদম পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছিস।হুম হুম কি ব্যাপার?
নেহা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।বড়দের আড্ডায় ছোটরাও আর বসলো না।
সবগুলোতে মিলে গেলো ছাদে।জমিয়ে আড্ডা দিবে আজ,নেহার মন খারাপ থাকায় এ কয়দিন একদম বিরস কেটেছে ওদের।
সবাই মিলে অনেক ভেবে ঠিক করলো ট্রুথ ডেয়ার খেলবে!
সাব্বির, বৃষ্টি, জেরিন,নেহা,জেবা,ফারহান বসলো ছাদের মেঝেতে গোল হয়ে।কাচের বোতল এনে মাঝে রেখে দিলো।
বোতল ঘুরাতেই প্রথমে পড়লো জেরিনের উপর।জেরিন তাড়াতাড়ি করে বললো–,,আমি ট্রুথ ভাই!
ফারহান বলে উঠলো–,,বল বল কাউকে পছন্দ আছে নাকি?থাকলে তার নাম কি?
নেহা বিরোধিতা করে বললো–,,ভাইয়া এটা কি হলো এক সাথে দুইটা প্রশ্ন কেনো? এটা রুলস বহির্ভূত!
জেবা বলে উঠলো–,,কিরে তুই দেখছি ননদের পক্ষে,এটা খেলা বুঝলি এখানে কোনো সম্পর্ক খাটবে না,আপু তুমি প্রথম প্রশ্নের উত্তর বলো।
সাব্বির বলে উঠলো–,,কি আর বলবে ওই চশমা ওলা!
বৃষ্টি, নেহা ঠোঁট চেপে হাসলো।জেরিন কটমট দৃষ্টি রাখলো সাব্বিরের দিকে।
ফারহান চোখ ছোট করে বললো–,,চশমাওলা টা কে জলদি বল বোন আমার পেটে সুরসুরি অনুভব হচ্ছে।
রৌফ বলে উঠলো–,,সুরসুরি কে দিলো তোমার পেটে?
ওদের কথার মাঝে ছাদের দরজা ঠেলে ভিতরে আসলো মিহির,বন্ধু যাওয়ার পর আজ এসেছে মহাশয় নিশ্চিত বন্ধুকে দেখতে।
সাব্বির নেহা একসাথে বলে উঠলো বাহ বাহ বাড়ির জামাইয়ের পা টা অবশেষে পড়লো বাড়িতে!
কথা শুনে সরু চোখে তাকালো ফারহান।মিহির হেসে এগিয়ে এসে বললো–,,তেমন কিছু না।
জেরিন বলে উঠলো–,,ভাইয়া যাওয়ার পর তুমি এই আজ আসলে মিহির ভাই,তোমার কি এই দুই মিনিটের রাস্তা পার হতে এক সপ্তাহ লেগে গেলো!
–,,তোরা রাগ করছিস কোন যুক্তিতে তোদের ভাই যাওয়ার পর থেকে তার হিট’লার শ্বশুর সব কাজ আমাকে দিয়ে করাচ্ছে।শা’লা নিজে গিয়ে চিল করছে সুখে উড়ছে আর আমাকে কাজে ঢুবিয়ে গেছে।আর কি বলবো দুঃখের কথা আজকে আসলে বাঁচি আমি।
নেহা মুখ তেঁতো করে বললো–,,বুঝলাম না তোমরা নিজেদের মাঝে আমার আব্বু কে টানো কেনো?
–,,আরে এক মাত্ররো শালিকা এ কথা আমি বলিনি তো নিখিল বলেছে।তা তোমার কি খবর?
নেহা হেসে বলে উঠলো–,,অনেক ভালো!
ফারহান,জেবার সাথে নেহা মিহিরের পরিচয় করিয়ে দিলো।মিহির কে বৃষ্টি পাশে বসতে দেখেই ফারহানের কিছুটা গাঁ জ্বা’লা করে উঠলো আর কোথায় জায়গা ছিলো না নাকি!
জেবা বলে উঠলো –,,আপু তুমি প্রশ্নের উত্তর দাও তাড়াতাড়ি।
জেরিন ইনিয়েবিনিয়ে বললো–,,পছন্দ বলতে একটু আকটু ভালো লাগে একজনকে!
সাব্বির নাক ছিটকে বললো–,,শেষ শেষ অ”নিষ্ট করলো পুরো মাইয়াটা শেষে কিনা কপালে কানা দুলাভাই জুটবে?
কপাল চাপড়ালো দুইবার!নেহা বলে উঠলো
–,,থামো থামো সাব্বির ভাইয়া।জানো না প্রেমে পড়লে মানুষ রাতেও সূর্য দেখে তাও দক্ষিণ আকাশে।
নেহার কথায় হু হা করে হেসে দিলো বৃষ্টি, ঢলে পড়লো মিহিরের উপর,মিহির ও হাসলো।জেরিন মুখ ফুলালো।
ফারহান বলে উঠলো–,,এই এই বৃষ্টি তুই এই পাশে এসে বস!
মিহির চোখ ছোট করে তাকালো বৃষ্টির দিক, ফারহান কে নিয়ে রাতে এমনিতেই মিহিরের সাথে হালকার উপর ঝাপসা কথা কাটা’কাটি হয়ে গেছে।মিহিরের সাফ কথা ওই ছেলের থেকে দূরে থাকবা!
নেহা বলে উঠলো –,,এখানেই থাকুক ভাইয়া সমস্যা নাই তো তুমি বোতল ঘুরাও!
ফারহান বিরক্তি নিয়ে তাই করলো।এবার ঘুরে গিয়ে পড়লো সাব্বিরের উপর।
জেরিন বলে উঠলো তোর লাভ লাইফ থেকে শুরু করে বাথরুম যাওয়া সবই আমরা জানি,তুই ডেয়ার নিবি তোর কোনো অপশন নাই!
জেবা মিন মিন করে বললো–,,সাব্বির ভাইয়া প্রেম ও করতো নাকি!
সাব্বির জানে এই মেয়ে তার উপর নজর দিতে চাচ্ছে কোনো মতেই এটাকে সুযোগ দেওয়া যাবে না।সাব্বির বুক ফুলিয়ে ভাব নিয়ে বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ জানিস না এবছর সব মিলিয়ে ছাব্বিশ টা হলো গালফ্রেন্ড।
ফারহান জেবা অবাক হয়ে বললো–,এ্যা!
মিহির বলে উঠলো –,,হ্যাঁ আমাদের সাব্বির পুরো প্লে বয়!
বৃষ্টি বললো–,,হুম যে প্লে বয় মেয়ে দেখলে পা,,,!
সাব্বির এসে মুখ চেপে ধরলো বৃষ্টির।চিল্লিয়ে বললো–,,আমার বউয়ের সংসারে পেট্র”ল ঢালিস না বইন,আশেপাশে শুধুই বারু”দ!
নেহা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,আমার জামাইয়ের বন্ধুর বউ মে’রে ফেলছো তুমি, শ্বাস আটকে যাবে মুখ ছাড়ো।
বৃষ্টি জেরিন মিলে সাব্বির কে দিলো কয়েক দফা।
মিহিরের ফোন বেজে উঠায় উঠে গেলো দূরে।সাব্বির কে সবাই ধরে বেঁধে ডেয়ার দিলো, আউলা জাওলা নাচ দিতে হবে!
নাচ দেওয়ার আগে থেকেই নেহা, জেরিন হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ছে।
————
মিহির নিখিলের কল রিসিভ করেই বললো–,,কিরে শা’লা কবে আসবি তুই।এখনো আসছিস না কেনো,নাকি এখনো রাগ শেষ হয় নাই বউয়ের উপর,অন্য কেউ এসে নিয়ে গেলে বুঝবি তুই।মানুষ বউ কে ছয় বেলা তেল দিয়ে রাখতে পারে না আর তুই ব্যাটা মিনিটে ছয়বার রাগ দেখাস।তোর বউতো বিমান দিয়ে ভাগবে।
নিখিলের গম্ভীর কন্ঠ –,,আমাদের বাড়িতে আসলি কখন?
–,,এইতো কিছুক্ষণ, শা’লা তাড়াতাড়ি আয় আমি বিয়ে করমু তোর মতো মহান না আমি, আমার বউ অন্য কেউ নিয়ে যাবে এসব সহ্য করতে পারবো না আমি।তোর ফুফাতো ভাই টা আমার কলিজায় হাত দিতে চাচ্ছে!
–,,ক্যামেরা ঘুরিয়ে আমার বউ দেখা!
–,,এতো দেখার ইচ্ছে হলে,বাড়ি এসে দেখ।
–,,দেখাবি তুই,ভাবছি আজ আসবো!
মিহির ক্যামেরা ঘুরাতেই নেহার হাসি ভরা মুখ দেখলো নিখিল,রাগে গাঁ রি রি করে উঠলো ওর! এই মেয়ে তো ওকে ছাড়া দিব্যি ভালো আছে,কি করে হাসছে দেখো আর এদিকে নিখিল কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে!
নিখিল রেগে বললো ফোন রাখ আর আসবোই না বাড়িতে।কিছু মানুষ আমি না আসলেই বেশি খুশি থাকে!
মিহির তড়িঘড়ি করে বললো–,,আরে ভাই,তুই তো চাইতি যাতে নেহা হাসিখুশি থাকে এখন,,,
নিখিল ফোন কেটে দিয়েছে ইতিমধ্যে। মিহির এগিয়ে গিয়ে বললো–,,বে’ড নিউজ গাইস।আমাদের এটম বো’মা নাকি আসবে না মাত্ররো কথা হলো।সে নাকি সেখানেই খুশি আছে, কাজ শেষ এখন একা একা কিছুদিন ঘুরবে।বাড়িতে নাকি তার কোনো প্রয়োজন নাই!
নেহার মন খারাপ হলো তবু,কিছু বললো না উল্টো রাগ নিয়ে হন হনিয়ে চলে গেলো!
———-
আলাউদ্দিন সাহেব ও মাহমুদা বেগম খুশি মনে বলে উঠলো–,,শুভ এর তো বিয়ে ঠিক হয়েছে হামিদা।হঠাৎ করেই ঠিক হলো,মেয়ে দেখতে গিয়েই এতো পছন্দ হলো আমাদের কি বলবো,তোকে তো আগেই জানাতে চেয়েছিলাম,তোর ভাই বললো একবারে মেয়ে পছন্দ হোক পরে এসে জানাবে।
মাহমুদা বেগম হাসি মুখে মোবাইল বের করে মেয়ের ছবি দেখালেন।সেতারা বেগম,নাহার বেগম বসে আছেন।
তাহমিদা,সাহারা রান্নায় ব্যস্ত আপাতত মেহমান এসেছে দুপুরে না খাইয়ে তো বিদায় দেওয়া যায় না।
মেয়ে দেখে মাশাআল্লাহ বলে উঠলো সবাই! এক সপ্তাহ পরই বিয়ে।সবাইকে দাওয়াত করতে এসেছেন তারা।
খবর পেয়ে দুপুরেই বাড়িতে ফিরলো তিন ভাই।শুক্রবারেও কাজ থাকে তাদের বিরক্ত হন তাহমিদা,সাহরা।হামিদা বেগম বলেন গাঁ সইয়ে গেছে এসবে বড় ভাইজান নাকি বিয়ের পর থেকেই এমন কাজ ছাড়া কিছু বুঝে না।
খাবার টেবিলে আজ বসেছে সবাই,অতিথি আসায় এক পাশে আরো একটি টেবিল যুক্ত করেছেন।সবাই মিলে কানায় কানায় ভর্তি,শুধু নিখিল নেই,এতো মানুষের মাঝেও নেহা শূন্য। একবার কি চলে আসা যায় না অভিমান ভুলে?নেহা তার পরও কল দিয়েছিলো কিন্তু নিখিল রিসিভ করেনি তাতে ব্লক করে রেখেছে ছেলেটা,নেহা নিজের ইগো সম্মান ভুলে নিখিল কে পর পর তিন দিন কল করেছে তবুও রিসিভ করেনি নিখিল এর থেকে বেশি আর কি করতে পারে নেহা,কথা বললে অন্তত বলতে পারতো ফিরে আসেন,কিন্তু যে মানুষ টা কথাই বলতে চায় না তার থেকে আর কি আশা করা যায়!
শাহআলম চৌধুরী সহ সবাই কে বিয়ের কথা জানালেন আলাউদ্দিন, বিয়ের আগেই যেতে বলেছেন সবাইকে পরিবার সমেত।
শহিদুল চৌধুরী বাঁধ সাধলেন, কাজ রেখে সবাই কি করে যাবে?
আলাউদ্দিন আর শহিদুল চৌধুরী ভার্সিটি সময়ের বন্ধু। ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি আত্মীয় ছাড়াও অন্য রকম ভালো সম্পর্ক তাদের।
আলাউদ্দিন রেগে বললেন–,,তুই কাজ কাজ দেখাবি না তো আমাকে, সাত দিনে তোর ব্যবসা লাটে উঠে যাবে না।তুই যাবি মানে যাবি আর কথা শুনতে চাই না আমি।
তাও যদি যেতে রাজি না হোস তো আমার সাথে তোর বন্ধুত্ব নাই।
শহিদুল চৌধুরী চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন–,,অন্য কোনো হুম”কি দিতে পারলে দে ভাই, এটা তো তোর পুরনো ডায়লগ।
টেবিলের সবাই হেসে উঠলো।মাহমুদা বেগমও অনুরোধের সুরে বললেন–,,আপনি না করবেন না ভাই।আপনারা ছাড়া কাছের বলতে আর কে আছে আমাদের।ছেলেটার বিয়েতে আপনারা না গেলে সত্যি কষ্ট পাবো।
অনেক তর্ক বিতর্কের পর রাজি হলো সবাই,তবে বিয়ের দুইদিন আগে যাবে শুধু আবার চলেও আসবে বউভাতের পর।অগত্যা শর্ত মানলেন আলাউদ্দিন, তিনি বললেন নিখিল কে নিজে ফোন করবেন তিনি।
শাহআলম চৌধুরী বিরক্তি নিয়ে বললো–,,আর বলো না ভাই তোমার ভাগ্নি টা হয়েছে ব’দের হাড্ডি, তখন কাজে যেতে চাইলো না এখন নাকি শুনি আসবে না।কাজ শেষ এখন নাকি রেস্ট করবেন মহাশয়!
——————
বিকেলে চলে গেলেন নিখিলের মামা মামী।বৃষ্টি হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো নেহার রুমে।নেহা বিছানায় বসে বই পড়ছে।
কিছুক্ষণ পর জেরিন, সাব্বির ও একই ভাবে ঢুকলো।কাহিনি না বুঝে তাকিয়ে রইলো নেহা।
বৃষ্টি অধৈর্য কন্ঠে বললো–,,ভাইয়া একটা মেয়ের সাথে ছবি আপলোড করেছে ফেইসবুকে দেখেছিস নেহা?
নেহার হাত থেকে বইটা পড়ে গেলো নিচে।অবাকের রেশ কাটিয়ে বললো–,,দেখতে ভুল হচ্ছে তোর।নিখিল ভাই মেয়েদের থেকে দূরে থাকে!
জেরিন সাব্বির দুজনই বললো–,,ঘটনা সত্যি নেহা।
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো–,,তুই দেখস নাই?
নেহা যেনো অধিকতর শান্ত হয়ে গেলো,নিস্তেজ কন্ঠে বললো–,, আমাকে ব্লক করে রেখেছে সব দিক থেকে!
তিন জন চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,কিহ্!
–,,আরে ধীরে বল শুনবে কেউ।এখন দেখা দেখি কোন মেয়ের সাথে ছবি তুললো তোর ভাই।
বৃষ্টির হাত থেকে মোবাইল টেনে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো নেহা।ফর্মাল ড্রেস পড়া এক অতি সুন্দর রমনী, লম্বায় নিখিল থেকে কিছুটা খাটো,এক হাত নিখিলের কাঁধে রেখেছে মেয়েটা।
চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস ছেড়ে মোবাইল ফেরত দিয়ে বললো–,,ছবি তুলতেই পারে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।বিজনেসের খাতিরে তুলেছে হয়তো।
বৃষ্টি অবাক হয়ে বললো–,, তুই বলছিস এই কথা!
আগে হলে তো এখনই সিলেট গিয়ে তুই ওই মেয়ে কে মে’রে ভর্তা করে দিতি।
সাব্বির,জেরিন বলে উঠলো–,,নেহা আর মারা”মারি!
বৃষ্টি মিনি মিন কন্ঠে আগের সব কথা ওদের বললো।দুজনের চোখ ফেটে বেরিয়ে আসার উপক্রম!
নেহা মুচকি হেসে বললো–,,আরে আগে তো আমি মনে করতাম তোর ভাই আমাকে ভালোবাসে না।কিন্তু এখন তো বাসে তাই এই ছোট বিষয় নিয়ে রাগ করতে নেই
নেহা কতোটা কষ্ট নিয়ে কথাটা বলেছে তিন জনই বুঝতে পারলো,নিখিল ভাই যে কেনো মেয়েটাকে এতো কষ্ট দিচ্ছে কে জানে।
বৃষ্টি মুখ কুঁচকে বললো–,,মেয়েটা তো দেখছি প্রচুর মেজাজ খারাপ করার মতো।এসে আবার কমেন্ট করেছে, শাঁক”চুন্নি কোথাকারের। তুমি কতো গুড লুকিং, হ্যান্ডসাম নিখিল একদম প্রেমে পড়ার মতো!সত্যি কয়েকদিনেই তোমার প্রতি আমি ইমপ্রেস হয়ে গেছি!একদম ক্রাশ খেয়ে গেছি।ইউ আর লুকিং সো হ,,!
নেহা দু কানে হাত রেখে বলে উঠলো –,,চুপ কর। আর কিছু বলিস না যা এখান থেকে এসব শোনার কোনো ইচ্ছে নেই আমার!
সাব্বির মুখ ছোট করে বললো–,,,ভাইয়া কমেন্ট টাতে লাভ রিয়েক্ট ও দিয়েছে!
নেহা তড়তড় করে ঘামতে শুরু করেছে,লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলছে।জেরিন ভয় পেয়ে গেছে এবার ব্যস্ত হাতে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।নেহা কাঁপা হাতে পানি পান করলো।
বৃষ্টি বললো আমি মাকে ডাকছি।নেহা মানা করে বললো–,,সামান্য বিষয়ে কেনো ডাকছিস সবাইকে।আমি ঠিক আছি যা একটু ঘুমাই মাথা ব্যাথা করছে।
রুম থেকে বের হয়েও তিনজনের চিন্তা কমলো না।সাব্বির বেশ কয়েকবার টাইপ করে কেটেছে মেসেজ।নিখিল ভাই আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।জেরিন সাব্বিরের পাশে দাড়িয়ে, অবশেষে সাব্বির পাঠিয়েছে ছোট মেসেজ টি “ভাইয়া নেহা অসুস্থ তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো প্লিজ”!
————
সকালেই নাস্তা করার পর বাড়ির মহিলারা বসলেন শপিং প্ল্যান করার জন্য। সাব্বির, জেরিন,রৌফ বেরিয়ে গেলো ভার্সিটি আর স্কুলের উদ্দেশ্যে!
বৃষ্টি, নেহাকে সামনে বসিয়ে লিস্ট বানাচ্ছে,ওনারা।নেহার এসবে কোনো আগ্রহ নেই।
সব শেষে ঠিক হলো বিকালেই বের হবেন হাতে বেশি সময় নেই!
————–
ফারহানের সাথে কথা বলছে নিখিল। সাব্বির, বৃষ্টি আর জেরিন কে বলছে কি করে নিখিল ভাই মেসেজ সিন করেও আসলো না!
ফারহান হেসে হেসে বলছে –,,ওকে ডান তাহলে বিয়ে বাড়িতেই তোর সাথে দেখা হচ্ছে চলে আসিস সময় মতো!
নেহা কথাটা শুনেই ঠিক করে নিলো বিয়ে বাড়িতে কিছুতেই যাবে না।নিখিল যেহেতু দেখা করতে চায় না দূ্রে গিয়ে অন্যের কাছে সুখ খুুঁজে পেয়েছে তো নেহা কেনো বাঁধা দিবে!
সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি এগিয়ে এসে বললো–,,তুই তৈরি হবি না, এখনই তো যাবে সবাই!
নেহার কঠিন শান্ত কন্ঠ—,,যাবো না আমি।
ফারহান লাউডস্পিকারে দিয়েছে পানি খাচ্ছে,নিখিলের সাথে কথা হচ্ছে এখনো।
সাব্বির বলে উঠলো–,,শপিং করবি না তুই,বিয়েতে যাবি।চলনা ভালো লাগবে।
নেহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,বিয়েটা তো আমার নিজের না ভাইয়া যে নাচতে নাচতে শপিং করতে যাবো।অনেক ড্রেস আছে আমার লাগবে না তোমরা যাও!
নিখিল মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠলো–,,সাব্বির এই অভদ্র টার সাথে কেনো কথা বলতে যাস তুই।ভাব বেড়েছে এর তোরা এতো মাথায় তুলিস তাই এগুলা করার সুযোগ পায়।
নেহা রাগে এবার,একটা গ্লাস আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলে।বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে বললো —,,,কি করছিস এসব?শপিং যেতে হবে না, বিয়েতে যাবো শুধু তুই রুমে যা।
নেহা দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো–,,যাবো না বিয়েতে কোনো মতেই যাবো না।ফালতু মানুষের চেহারা দেখার ইচ্ছা নাই আমার!
নিখিলের রাশভারি কন্ঠ–,, ভেবেছিলাম আ’পদ টা বাড়িতে না থাকলে বাড়ি আসবো।এখন তো নিজের বাড়িতেও আসতে পারবো না,কিছু মানুষের মুখ দেখলেই রাগ উঠে আমার।
নেহা রাগে হিতাহিতজ্ঞান ভুলে বললো–,,সাব্বির ভাইয়া
এই লোকরে চুপ থাকতে বলো বলছি,যদি আমার বাড়িতে থাকাটা উনাকে এতোই কষ্ট দিচ্ছে আমি যাবো বিয়েতে,উনাকে দেখারও কোনো ইচ্ছে নেই আমার।বিয়ে তে আমি যাবো কিছু মানুষের আত্মা মন কলিজার শান্তির জন্য হলেও যাবো!উনাকে বলে দেও আমার মুখ আর কোনো দিন দেখতে হবে না।আমি চলে যাবো এমন কোথাও যেখানে থাকলে কারো সুখ নষ্ট হবে না।যার কাছে উনার এতো শান্তি মিলে তার কাছেই যেনো গিয়ে থাকে,আমি দোয়া করবো উনি শান্তির চোটে যাতে বেহুঁ’শ হয়ে যায়।নিজের বাড়িতে এসে শান্তিতে থাকুক আমি কখনো আসবো না আর উনার সামনে!
জেরিন চেঁচিয়ে বলে উঠলো সাবধান নেহা পায়ে কাঁচ আটকে যাবে,নেহা জোরে পা চালিয়ে যাওয়ার সময় একটা কাঁচ ঢুকে যায় পায়ের পাতায়।নেহা দাড়িয়ে হাত দিয়ে টেনে বের করে ফেলে সিঁড়ি দিয়ে রক্তের ছাপ ফেলে নিজের রুমে চলে যায়!
পেছন থেকে ডাকে ওরা সবাই নেহা শুনে না কারো কথা।
ফারহান আগামাথা কিছু বুঝলো না।সাব্বির,জেরিন, বৃষ্টি তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।কি হবে এবার দুজনই তো একদম এক রুখা।তবুও নেহা এবার অনেক কিছু করেছে কিন্তু নিখিল বারাবাড়ি টা বেশিই করছে,না জানি নেহা এবার কি করে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,
শপিং করতে কেউ নিয়ে যেতে পারেনি নেহাকে,তাহমিদা বেগম বলছেন সমস্যা নেই এমন তো নয় কোনো কাপড় নেই যদি ওর ইচ্ছে না হয় তাহলে থাক।
সকল কাজ শেষ হলো এবার ওদের যাওয়ার পালা, নেহা যে যাবে এতেই খুশি সবাই,মেয়েটা যা গো ধরে বসেছিলো।
বাড়ির ছোটরা এবার মোটেও এক গাড়িতে একা যাবে না,নিখিল নেই একজন বড়কে তো সাথে নিতেই হবে তাদের।মাহফুজ চৌধুরী সাথে যাবে বলেছেন,সাব্বির নাক কুঁচকে বললো–,,,তুমি রস কষ বিহীন পানসে মানুষ আমরা বড় আব্বুকে সাথে নিবো।
বাকিরাও সহমত পোষণ করলো,হামিদা বেগম বিরক্তি নিয়ে বললো বয়সই শুধু বাড়ছে তোমার যাও যাও বাচ্চাদের সাথেই তোমাকে মানায়!
গাড়িতে উঠে বসলো একে একে সবাই।শাহআলম চৌধুরী সামনে বসতে গেলেই,, নেহা বললো বড় আব্বু তুমি পেছনে এসে বসো ফারহান ভাইয়া সামনে যাও।
গাড়ি স্ট্রার্ট দিতেই সাব্বিরের বক বকানি শুরু।শাহআলম চৌধুরীর পাশে নেহা,বৃষ্টি। পেছনে রৌফ,জেরিন,সাব্বির,জেবা।
নেহা চুপচাপ বসে আছে,শাহআলম চৌধুরী জিজ্ঞেস করলো–,,মা মন খারাপ?
সাব্বির বলে উঠলো –,,হবেই তো তোমার ছেলে যা তা বলেছে নেহা কে,এক তো নিজে কথা বলা বন্ধ করেছে
,তার উপর ফোন দিয়ে বলেছে নেহা বাড়িতে থাকলে নাকি বাড়িতে আসবে না,নেহা যাতে বিয়ে তে যায় তখন ভাইয়া বাড়িতে আসবে!
শাহআলম চৌধুরী বললো–,,সভ্যতার লেস মাত্ররো নেই,একবার পাই সামনে চ’ড়িয়ে সিদে করে দিবো আমার মাকে কষ্ট দেওয়া!
জেবা,ফারহান নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো তাদের বড় মামা এতো রাগী মানুষ কিন্তু ছোটদের সাথে কতো সুন্দর মিশে যায়!তাদের সাথে মিলে বাচ্চামো করেন,তাদের প্ল্যানে সামিল হন।তারা দুজন তো ভয়ে কথা বলতেই যায় না।সত্যি মানুষের উপর দেখে কখনো বিচার করা উচিত না,সব কঠিন মানুষের ভিতরই একজন নরম,বাচ্চাদের মতো নাজুক মানুষ থাকে তা বুঝাই যায় না!
জার্নিতে সবাই এতো এতো কথা বললো,কিন্তু নেহা সেই বরাবরের মতোই ঘুমিয়েছে,এবারে তার বালিশের ভূমিকা পালন করেছে শাহআলম চৌধুরী।
দীর্ঘ সময়ের পথ পাড়ি দেওয়ার পর তারা এসে থামলো গন্তব্যে।তিনতলা এক বড় দেয়াল করা বাড়ি,রাতের অন্ধকারে চকচক করছে রঙিন বাতির জ্বলকানিতে।তারা সবাই একে একে নামলো,গেইটে অবস্থান করছে বৃষ্টির সকল কাজিন রা।বিয়ে উপলক্ষে বৃষ্টিদের সকল আত্মীয়সহ মাহমুদা বেগমের বাবার বাড়ির সব আত্মীয়রা এসেছে!
একঝাক ছেলেমেয়ে,নেহার অস্বস্তি হলো,কয়েকজন কে মোটে চিনে ও আগে এসেছিলো তখন দেখেছে।সবার মাঝে টয়া কে দেখে আরো বেশি বিরক্ত হলো!কিছুই করার নেই,এই মেয়েটাকে এখন পাঁচদিন সহ্য করতে হবে।টয়ার মামাতো ভাইয়ের বিয়ে সে তো আসবেই!
বৃষ্টির বড় মামাতো বোন আইরিন এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো জেরিন কে পরে বৃষ্টি কে।নেহাকে ও জড়িয়ে ধরলো।
জেরিনের মেজো মামার মেয়ে রূপা জিজ্ঞেস করলো
–,,নিখিল ভাই আসেনি?
নেহা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না বড়দের সাথে হেঁটে ভিতরে চলে গেলো,এতো এতো মেয়ে দেখে সাব্বির কোনো রকম ভাগলো,বলা তো যায় না কখন কোনটা এসে কাম”ড়ে দেয়!
বৃষ্টি, জেরিন সবার সাথে কথা বলতে বলতে আসছে, রাত হয়ে গেছে,তবুও বিয়ে বাড়িতে রাত বলতে কিছু নেই,রাত মানেই আড্ডা দেওয়ার উত্তম সময়।
অন্য সবাই আড্ডা দিতে চলে ও গেছে ইতিমধ্যে। শুধু ওরা ছাড়া এতো পথ এসে ভীষণ ক্লান্ত।এখন একটু হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লে বাঁচে!
সবাইকে একে একে ঘর দেখিয়ে দিচ্ছেন মাহমুদা বেগম।বৃষ্টি আর নেহাকে একটা রুম দেখিয়ে বললো তোরা ওইটায় যা।বৃষ্টি মনে মনে বললো–,,এই রুমটায় তো সব সময় ভাইয়া থাকে,আজ তাদের কে দিচ্ছে কেনো মামি?তবে কি ভাইয়া সত্যি আসবে না!
বড় জা এর কান্ডে পেছন থেকে বিরক্তি নিয়ে রুবি বেগম বললেন—-,,এটা কি করলেন ভাবি এটা তো নিখিলের ঘর,ছেলেটা এসে যদি দেখে ওর ঘরে অন্য কেউ তখন রাগ করবে না?ওর তো নিজের ঘরে কারো থাকা পছন্দ করে না।
মাহমুদা বেগম থমথমে কন্ঠে বললেন–,,নিখিলই বলেছে এই রুমটা যাতে নেহাকে দেওয়া হয়!এখন বিয়ে বাড়ি মানুষ জন বেশি তাই নেহার সাথে বৃষ্টি ও থাকবে।আর নিখিল রাগ কেনো করবে ওর বোনদেরই তো ঘর দিয়েছি।এসব চিন্তা বাদ দিয়ে এসো রান্না ঘরে মেহমানে ভরপুর কাজের লোক গুলা কাজ করছে কিনা দেখি গিয়ে!
—————
রাত বারোটা,চারদিকে আওয়াজ যেনো বাড়লো,ওফ রাতে কেনো এদের গান বাজনা করতে হবে।নিজেরা না ঘুমাক অন্যদের তো দিবে নাকি!
নেহা বালিশ কানে চেপে বলে উঠলো–,,ওই বৃষ্টির বাচ্চা কি করে ঘুমাচ্ছিস তুই,এতো আওয়াজ কেনো করছে এরা মাথা ধরে গেছে একদম!
—,,প্রেম করছি ঘুমাচ্ছি না।
নেহা বিরক্ত হয়ে উল্টো পাশ ফিরলো কানে তুলা গুঁজতে পারলে ভাললাগতো।
সাব্বিরের সাথে ফারহান,আর শুভ কে থাকতে দিয়েছে বেচারা সাব্বির বিরস মুখে মেসেজ পাঠালো জেরিন কে,জেরিন শুয়েছে মাত্ররো।তার পাশে জেবা,আইরিন
জেরিন মোবাইল উচিয়ে দেখলো সাব্বির কান্না ইমুজি পাঠিয়েছে আর লিখেছে–,,এই দুইজন দাম’ড়া পোলার সাথে একা রেখে তোরা কেনো চলে গেলি।এরা আছে এদের চাকরি বাকরির কথা নিয়ে আমি বোর হচ্ছি!
জেরিন,হাসির ইমুজি সেন্ড করেছে যত রকমের ছিলো সব গুলা।
সাব্বির মুখ বাঁকানো ইমুজি দিয়ে বললো এর থেকে ভালো ছিলো আমাদের সাবই কে এক ঘরে থাকতে দিলে,আমরা সবাই মেজেতে ঘুমালেও শান্তি ছিলো!
জেরিন লাইক মেরে বললো–,,তা যা বলেছিস।এখন কিছু করার নেই নাকে তুলো দিয়ে ঘুমা!
—,,বুঝলাম না ভাই সব সময় মারা”র ধান্দা!
আইরিন জেরিনের ফোন টেনে নিয়ে বললো–,,,বাহ ভাই প্রেম চলছে এদিকে!
আইরিন ভ্রু বাঁকিয়ে বললো–,,বাপরে এক ঘরে থাকতে চাইছে!কে রে এই পঁচা কুমড়া?
জেবা মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলো নিক নেইম পঁচা কুমড়া!
জেরিন বলে উঠলো–,,সাব্বির এটা যখন তখন তোরা যা তা ভাবিস!
আইরিন বুঝানোর সুরে বললো–,,সাব্বির তো কি হয়েছে ছেলে তো নাকি!
জেরিন চোখ বড় বড় করে তাকালো অবিশ্বাস্য সুরে বললো—,,মাথা খারাপ তোদের সাব্বির আমার ভাই!
জেবা ও বললো –,,হ্যাঁ তাই তো!
আইরিন বললো—,,আপন তো নয়। এই রকম ভাই গুলাই তাড়াতাড়ি বর হয়ে যায়!
জেরিন আর কিছু বললো না,এটা কে বুঝালেও এখন কিছু বুঝবে না।
তাই চোখ বন্ধ করে ঘুম দিলো।
********
রাত একটা বাজে বৃষ্টি ঘুমানোর জন্য লাইট অফ করলো, তখনই দরজায় টোকা পড়লো। বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো–,,কে?
—,,দরজা খোল!
বৃষ্টি ভাবলো হয়তো বড়রা কেউ,হেঁটে গিয়ে দরজা খুলতেই চমকালো নিখিল দাঁড়িয়ে!হঠাৎ নিজের ভাইকে দেখে কাঁপা কন্ঠে বললো—,,ভাইয়া তুমি!
নিখিল ভিতের ঢুকে বললো–,,যা মায়ের সাথে গিয়ে ঘুমা!
–,,এখন মা আমাকে জায়গা দিবে?ঘুমিয়ে গেছে নিশ্চিত!
–,,ঘুমায়নি আমি বলে এসেছি তুই যাবি।এখন কথা না বড়িয়ে যা!
বৃষ্টি মোবাইল হাতে নিয়ে চলে গেলো!
নিখিল দরজা আঁটকে এসে বসলো নেহার পাশে,বালিশের নিচে এক হাত আরেক হাতে কাঁথা খামচে ধরে ঘুমাচ্ছে।কিছু চুল এসে পড়েছে মুখে।নিখিলের মন চাইলো এই শুভ্র তম মায়াপরী কে এখনই টুপ করে খেয়ে ফেলতে।না হয় পুরো পুরি নিজের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলতে।কতোদিন পর দেখছে এই মুখ!কতোদিন ছুঁয়ে দেয় না, নিখিলের হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠে নেহা ওইদিন কি বললো এগুলো রাগের মাথায়
–,, আমি চলে গেলো যদি সুখে থাকেন তো এমন কোথাও যাবো সেখানে আমার মুখটাও আপনাকে দেখতে হবে না,যার কাছে সুখে থাকবেন তার কাছেই থাকুন!
ঘুমন্ত নেহা কে নিখিল শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ঘুমের মাঝেও নেহা নড়েচড়ে উঠলো।
নেহার চোখ খোলার শক্তি নেই যেনো মনে হচ্ছে রোজকার মতো আজও নিখিল কে স্বপ্নে অনুভব করছে,মনে হচ্ছে নিখিল তাকে জড়িয়ে ধরছে!নেহার কেমন শান্তি শান্তি লাগলো,ভিতরটা ছেয়ে গেলো মিষ্টি শীতলতায়।নেহা ঘুমের ঘোরেই নিখিল কে জড়িয়ে ধরলো।
ঘুমন্ত আধো আধো কন্ঠে বললো—-,,,ফিরে আসুন প্লিজ। আপনাকে ছাড়া থাকতে আমার ভীষণ রকম কষ্ট হয় নিখিল!
নিখিলের ঠোঁট জুড়ে প্রশান্তির হাসি।নেহার চোখে মুখে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো।আমার তৃষ্ণা বেরে গেছে জান।এই তৃষ্ণা তুই ছাড়া কেউ মিটাতে পারবে না,তুই ভাবলি কি করে তোকে ছাড়া আমি খুশি থাকবো সুখে থাকবো।সেদিন যদি ওভাবে কথা না বলতাম কোনো দিন আসতি তুই এখানে?একটা ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে।
নিখিল নেহার কপালে গভীর ভাবে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো —,,ভালোবাসি জান ভীষণ ভীষণ রকম ভালোবাসি!
কথা দিচ্ছি আর কোনো দিন কষ্ট দিবো না।কোনো দিন দূরে যাবো না,সব কষ্ট বুলিয়ে দিবো এবার ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবো!
নেহা যেনো আরো মিশে গেলো নিখিলের সাথে কতোদিন পর এতো শান্তির ঘুম হচ্ছে ওর।ঘুমন্ত নেহা এখনো জানে না তার শান্তির কারন।
দুজন মানুষের মনে আজ প্রশান্তির ছোঁয়া!
—————–
সকালে ভোরে ঘুম থেকে উঠলো নিখিল,নেহা কে জাগালো না, উঠার সময় হাসলো নেহা এক হাতে জড়িয়ে ধরে আছে ওর শার্ট।নিখিল ধীরে ধীরে উঠে চলে গেলো।বৃষ্টির তো খুশিতে রাতে ঘুম হয়নি অবশেষে ভাইয়া আসলো।সকালে ঘুম থেকে উঠে দৌড় লাগালো জেরিন আর সাব্বির কে খবর টা দিতে,বৃষ্টি দেখলো নিখিল উঠোনে তার মানে নেহা এতোক্ষণে জেনে গেছে ভাইয়া এসেছে।ওর রিজেকশন কেমন হয়েছে দেখার জন্য জেরিন,সাব্বির কে এক প্রকার টেনে টুনে নিয়ে আসলো
সাব্বির বার বার হাই তুলছে আর জিজ্ঞেস করছ–,,আরে বইন বলবি তো আগে কি হইছে?কে মর’ছে!
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,ভাইয়া এসেছে রাতে!
জেরিন সাব্বিরের ঘুম টুম এক ছুটে পালিয়েছে দুজন বলে উঠলো –,,সত্যি!
তিনজন রুমে গিয়ে দেখলো নেহা এখনো ঘুমাচ্ছে!
বৃষ্টি মিন মিন করে বললো–,,তাহলে কি নেহা জানে না ভাইয়া যে এসেছে!
দাড়াও আমি ডেকে তুলছি!জেরিন থামিয়ে দিয়ে বললো–,,না না বলবি না।সারপ্রাইজ টা ও নিজ থেকে পেলে বেশি খুশি হবে!
নিজ চোখে দেখা না পর্যন্ত আমরাও কিছু বলবো না!
———
নেহার সাথে নিখিলের দেখা হয়নি এখনো, বাড়ির সবাই তো এখনো জানে না সে এসেছে।রাতে শুধু হামিদা বেগম কে বলেছে আর বৃষ্টি!
সকালে খাবার খাওয়ার পরই সবাই কে টেনে উপরে উঠালো এক প্রকার আজ সন্ধ্যায় হলুদ।সকাল থেকেই ওরা বিভিন্ন প্রোগ্রাম করবে ভেবে রেখেছে।
এখন হবে ছেলে আর মেয়েদের আলাদা আলাদা টিমে গানের কলি খেলা।
নেহা বিরক্তি নিয়ে দ্বিতীয় সারিতে বৃষ্টির পাশে বসলো।
ফিসফিস করে বললো–,,এসব খেলায় আমাকে এনেছিস কেনো?তোরা খেল আমি যাই!
বৃষ্টি জেরিন রিকুয়েষ্ট করে বললো–,,প্লিজ শুধু আমাদের জন্য!
সাব্বির আজ না চাইতেও বিপক্ষ দল।জেরিন এ নিয়ে তাকে ছয়বার খোঁটা মেরেছে।
সাব্বির বলে উঠলো–,,বিশ্বাস কর আমি নিরুপায়।
গানের লড়াইয়ে মেতে উঠেছে সবাই।কেউ কারো থেকে কম যায় না।প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও নেহার এখন বেশ ভালো লাগছে,হাড্ডাহাড্ডি লড়া’ই!
——–
নিচে একে একে সবার সাথে দেখা হচ্ছে নিখিলের।নিখিলের মেজো মামি রুবি বেগম নিখিল কে দেখেই দৌড়ে আসলেন।
গদগদ সুরে বললো—,,বাবা কখন আসলে?
—,,এইতো মামি রাতে!
–,,ঘুমিয়েছো কোথায়!ভাবিকে কতো করে বললাম তোমার ঘরটা যাতে মেয়েটা কে না দেয়!
—,,রুমেই ঘুমিয়েছি মামি অসুবিধে হয়নি আপনি ব্যস্ত হবেন না।
রুবি বেগম কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো এক প্রকার মহিলা বেশি বকে।
নিখিলের ছোট বেলার বন্ধু রোহান আরো কয়েকজন ছেলে পেন্ডেলে ফুল লাগাচ্ছে।
রোহান হুট করে বলে উঠলো–,,ওই জেরিনের চাচাতো বোন টা আছে না ওটাকে কিন্তু আমার বেশ মনে ধরেছে,এবার পটাতে পারলেই হয়!
তখনই নিখিল অধিক রাশভারি কন্ঠে বলে উঠলো
—,, ওটা আমার নজর দিবি না!চোখ উপ’রে ফেলবো!
পর পর চমকে পেছনে তাকালো রোহান।নিখিল কে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললো–,,আরে নিখিল কখন আসলি?ভেবেছিলাম এবার ও আসবি না তুই!
আর কি বলছিলি তখন?
–,,এটাই নেহা তোদের ভাবি, ওর দিকে তাকাবিও না,নয়তো ভুলে যাবো তোরা আমার বন্ধু!
সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো–,,তুই আর প্রেম?
–,,বিয়ে!বউ হয় আমার, সবাই সাবধান!
–,,আচ্ছা আচ্ছা ভাই তাকাবো না।এবার চল উপরে মহল গরম হয়ে উঠেছে এবার আমাদের যেতে হবে।শুভ কখন ডেকে গেছে।
এদিকে এবার মেয়েদের গান গাওয়ার পালা,তাও এই পয়েন্ট পেলেই ওরা জিতে যাবে না হয় ড্র!
শর্ত ও আছে একটা পুরো গান গাইতে হবে,”ত” দিয়ে!
চলবে?