#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২৩
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিখিল কোথা থেকে এসে নেহার কাঁধ জড়িয়ে দাঁড়ায় তা দেখে টয়া যেনো আরো ফোঁসে উঠে।
টয়া বাজখাঁই গলায় বলে উঠে–,,এসব নষ্টা’মি অন্য কারো সামনে গিয়ে দেখালেও তো পারেন!
নিখিল নেহা কে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে–,,প্রায় ছয় মাস আগে আমাদের বাবা মা ও আল্লাহ কে স্বাক্ষী রেখে তিন কবুল বলে পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম আমরা।তোর অবগতির জন্য বলছি পুরো দশ লক্ষ টাকা নগদ মোহরানা পরিশোধ করে আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম নেহা কে।
আমাদের পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে একটাও বা’জে কথা যদি তোর ওই নোং’রা মুখ থেকে বের হয় তো বেশি ভালো হবে না।আমার নেহা ফুলের মতো পবিত্র, স্নিগ্ধ! ওকে নিয়ে যদি একটাও খারা’প কথা রটানোর চেষ্টা করিস তো এবার তোর পরিনতি ভয়াব’হ হবে।এটা নেহার স্বামীর ওয়াদা তোর কাছে! আমার স্ত্রীর অপমান আমি কিছুতেই মেনে নিবো না।
ভালোয় ভালোয় বলছি ভালো হয়ে যা ভালো হইতে পয়সা লাগে না!
আর হ্যাঁ যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে বল কাবিননামা ও দেখিয়ে দেই!
টয়ার মুখ অপমানে থমথমে হলো,নেহা চুপচাপ শুধু শুনে যাচ্ছে!
নিখিল নেহা কে সাথে করে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,জান আয় না আর একটু আদর করি।
নেহা কনুই দিয়ে গুঁতো মারে নিখিলের পেটে।রাগে চোখ পাকিয়ে তাকায়, দাঁতে দাঁত চেপে বলে—,, খোলা আকাশের নিচে উঠোনের মধ্যে আপনার প্রেম জাগা শুরু হইছে!দূরে সরুন অসভ্য লোক।
–,,উফ নেহা এভাবে তাকাস না জান দিলে এসে লাগে,প্রেম কমার বদলে আরো বেড়ে যায়। কি করবো বল তোকে যতই আদর করি ততই কম মনে হয়!তুই এতো আদুরে মন চায় তো টু’প করে গিলে ফেলি।
–,,ছি!অ”শ্লীল লোক কোথাকার।
–,,বউয়ের সামনে অশ্লী”ল হওয়াটা দোষের কিছু না!পরনারীর কাছে বললে দোষের।
—,,সরুন তো খেতে যাবো আমি।
–,,আয় চুমু দেই পেট ভরে যাবে!
নেহা এবার নিখিল কে ঠেলে দূরে সরালো,নিখিল আবার এসে আঙুলের ভাঁজে আঙুল রেখে হেঁটে গেইটের বাহিরে যেতে লাগলো।
নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,ভর দুপুরে টেনেটুনে কই নিয়ে যাচ্ছেন।
—,,ঘুরতে যাচ্ছি,সন্ধ্যার আগে ফিরে আসবো পরে গায়ে হলুদে যাবো বুঝতে পেরেছিস, আর একটা কথাও বলবি না।তোর মুখ বন্ধ করানোর উপায় কিন্তু আমার জানা আছে।
————-
নেহা নিখিলের বিয়ের কথা শুনে যেনো মাথায় আগু’ন ধরে গেছে টয়ার উন্মা’দের মতো ঘরের সব কিছু এলোমেলো করে ফেলেছে।
বিরবির করে বললো–,,এট এনি কস্ট আমার তোমাকে চাই নিখিল,তার জন্য যা করতে হয় আমি করবো।এমন ভাবে ফাঁসাবো তুমি আমার হতে বাধ্য হবে!
জেরিন, সাব্বির, বৃষ্টি বসে আছে, বিকেল হয়ে এসেছে,কথা হলো আগে মেয়ের বাড়ির মানুষ আসবে হলুদ পড়াতে পরে যাবে ছেলে পক্ষ।কনের বাড়ি বেশি দূরে নয় চল্লিশ মিনিটের পথ।
মেয়েগুলো তো এখন থেকেই সাজতে শুরু করেছে।এক অদৃশ্য প্রতিযোগীতায় যেনো নিজেদের নাম লিখাতে মেক-আপের প্রলেপে ডেকে দেয় বদন।ফর্সা মসৃণ চকচকে ত্বকের লোভে ব্যয় করে ঘন্টার পর ঘন্টা!
সাব্বির বাড়ির পিছনে বসে আছে সাথে জেরিন,বৃষ্টি।
বৃষ্টি চোখ সরু করে বলে–,,কি ভাইয়া ঝিমা’নো মুরগীর মতো বসে আছো কেনো?গায়ে হলুদ শুরু হয়ে যাবে আর তোমকে দেখে মনে হচ্ছে এখনই ম’রে গেছো!
—,,একটা মেয়েকে হালকার উপর ঝা’পসা পছন্দ হয়েছে আমার!
জেরিন চোখ বড় বড় করে তাকালো–,,আইলা,,,,!কিতা কস।আমার বি’পি হাই হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি কোন দিক দিয়া না পইড়া যাই,নেহা টা থাকলে এতোক্ষণ বেহুঁ”শ হইয়া যাইতো।
সাব্বির মুখ তেঁতো করে বললো–,,কিন্তু মেয়েটা কে বলবো কি করে?
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো–,,এখানেরই নাকি?আইরিন আপুদের পরিচিত কেউ?
–,,পরিচিত কিনা জানি না।তবে এ বাড়িতেই দেখেছি!
জেরিন বলে উঠলো–,,একদম টেনশন নিবি না আমরা আছি না সব ব্যবস্থা করে ফেলবো,তুই শুধু টুপ করে মনের কথাটা বলে ফেলবি।
–,,যদি রিজেক্ট করে দেয়!
–,,করলে করবে মেয়ের কি অভাব পড়ছে নাকি,দেখ মেয়ের যদি ভালো না লাগে সে না করতেই পারে। সুন্দর করে না করে দিলে তুই নিজেকে সামলে নিবি,ভালোবাসা জোর করে হয় না।মেয়ের প্রতি তোর যতটুকু ফিলিংস আছে তার পরিমাণ বাড়বে যদি মেয়েটা তা গ্রহণ করে,তোর শুধুই ভালো লাগা এক সময় ভালোবাসাটাও হয়ে যাবে।যদি মেয়ে না চায় তো ভালো লাগা ভুলতে সময় নিবে না দেখবি এমনিতেই নাই হয়ে যাবে!
বৃষ্টি ও সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো!সাব্বির ওদের কথায় সাহস পেলো।প্ল্যান হলো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে প্রোপোজ করবে সাব্বির!
———
রাস্তার এক পাশে নদী মফস্বল শহর, সন্ধ্যা নামছে ধরনীতে,রাস্তার পাশে গজে উঠা ভৃঙ্গরাজ ফুল গুলো ডুবন্ত সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে সোনার মতো চকচক করছে!অযত্নে ফোটা সৌন্দর্য যেনো কারো মন ভালো করতে যথেষ্ট। হাঁটতে গিয়ে থামলো নিখিল থেমে গিয়ে অনেক গুলো ফুল তুলে আনলো,নেহা নদীর জলে সূর্য ডুবতে দেখতে ব্যস্ত।
বেশ কিছু সময় পর নিজের মাথায় কিছু একটা অনুভব করে সেদিকে তাকালো,নিখিল ভৃঙ্গরাজ ফুলের একটা ক্রাউন বানিয়ে নেহার মাথায় পড়াচ্ছে!
নেহা ঠোঁট ভরে হাসলো,নিখিল নেহার মুখটা দু হাতে আগলে ধরে কপালে চুপু খেয়ে ফেললো ঝটপট। রাস্তায় কিছু সময় পর পর যাচ্ছে গাড়ি,রাস্তায় জনমানব তেমন নেই।
—,,ভালোবাসি সোনালী পরী!ভালোবাসি আমার হৃদয় রাজ্যের ফুলকুমারি!
নেহা তুই এখনো ভালোবাসি বললি না কেনো একাবারও?তুই একটা বড় সড় কিপ্টুস!জামাইকে ভালোবাসার সময় তুই বড্ড কৃপণ।এতোগুলা চুমু নিলি তখন নিজ থেকে একটা ও দিলি না!
একবার বল ভালোবাসি
—,,বলবো না!
—,,তুলো ফেলে দিবো নদীতে!তুই না দিলে আমিও আর চুমু দিবো না,ভালোবাসি বলবো না।
নেহা মিট মিট করে হাসছে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,তাই?চুমু না দিয়ে থাকতে পারবেন?ভালো না বেসে থাকতে পারবেন?তাহলে তো আরো ভালো।
নিখিল এগিয়ে এসে বললো–,,নির্দয় মহিলা আমার দুর্বল জায়গায় খোঁচা মারিস তুই?
নেহা মাথা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে বলে–,,হুম!
নিখিল এগিয়ে এসে বলে দাঁড়া কিভাবে তোর থেকে চুমু আদায় করতে হয় জানা আছে আমার।
নেহা দৌড় লাগায় আর পিছন ফিরে বলে–,,আগে ধরে দেখান পরে চুমুর চিন্তা করবেন!
নিখিল দৌড় থামিয়ে বলে–,,আর দৌড়াস না নেহা, ব্যাথা পাবি, আয় বাড়ি ফিরবো আমরা।
নেহা দৌড় থামিয়ে দিলো,নিখিল এগিয়ে আসলো, এসেই নেহার গালে শব্দ করে একটা কিস করলো।
নেহা চোখ ছোট ছোট করে নাক ফুলিয়ে বললো
–,,চিটিং”বাজ!
নিখিল হেসে বললো–,,তাহলে আজ থেকে অন্য কাউকে দিবো!
নেহা মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো–,,মে’রে ফেলবো না আমি আপনাকে?ঠোঁট কে’টে নিয়ে জাদুঘরে রেখে আসবো!
নিখিল সরু চোখে তাকিয়ে বললো–,,তুই কি ডাকা’ত রে নেহা।আমাকে মা”রতে তোর হাত কাঁপবে না?
নেহা নিখিলের বাহু জড়িয়ে হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে বললো–,,অন্য কারো হয়ে গেলে জীবনেও হাত কাঁপবে না।আমার থাকলে একটা ফুলের টোকাও দিবো না শুধু ভালোবাসবো!
নিখিল হাসলো,দুজন নানা রকম কথা বলতে বলতে বাড়ির কাছে এসে পৌঁছালো,এতোটুকু সময় আবার ঝ’গড়া লেগেছে দুজন।
গেইটের থেকে কিছু দূরে হামিদা বেগম দাড়িয়ে।
নেহা নিখিল এগিয়ে যাচ্ছে আর একজন অন্যজন কে হাত দিয়ে মাই’র ইশারা করছে,আর একটু পর নিখিল নেহার চুল এলোমেলো করে দিলো।
হামিদা বেগম এগিয়ে এসে বললো–,,বড় হবি কবে?বাচ্চাদের মতো লেগে থাকিস সব সময়!
নেহা আহ্লাদী হয়ে হামিদা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,দেখছো বড় মা তোমার ছেলে কতো ব’দ আমার চুল টেনে দিছে,সারাদিন শুধু মা”রে আর বকা দেয়!
নিখিল বলে উঠলো–,,এই এই মিথ্যুক দুপুরে না তোকে আদর করলাম!
হামিদা বেগম নিখিলের কান টেনে ধরে বলে–,,এই নির্লজ্জ মায়ের সামনে এগুলা বলছিস মুখে কিচ্ছু আটকায় না?
নিখিল ব্যাথা পাওয়ার মতো করে বললো—,,আহ! মা লাগছে তো তুমি সব সময় শুধু নিজের বৌমার পক্ষ নেও,এটা কিন্তু ঠিক না!
নেহা হেসে বলে উঠে–,,একদম ঠিক হয়েছে!
নিখিল আবার নেহার চুল টানে।নেহা নাক ফুলায়।
নিখিল হামিদা বেগম কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে নেহাকে বলে–,,এভাবে নাক ফুলাতে হবে না তোর চল চুল আঁচড়ে দিবো আমি!
হামিদা বেগম দুজনকে আলতো হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে–,,যা এবার দুজন তৈরি হয়ে আয়। জরিন, বৃষ্টি, সাব্বির কখন থেকে তোদের খুঁজতেছে।
আর নিখিল আমার মেয়েটাকে একদম জ্বা লাবি না!
নেহা খুশি হয়ে হামিদা বেগম কে একটা চুমু দিয়ে বলে
–,,আমার ভালো মা!
নিখিল বলে উঠে –,,হুম আমি তো খারাপ তাই একটা চুমুও দিলি না আজ পর্যন্ত!
হামিদা বেগম বলে উঠে —,,,আবার!
নিখিল ছুটে চলে যায়, না হয় তার মা আজ কানটাকে ছিঁড়েই নিবে!
বৃষ্টি,জেরিন তেরি হয়ে বের হয়েছে।নেহাকে পেয়েই দুজন চেপে ধরলো–,,এই সকালের পর থেকে তুই হাওয়া হয়ে কোথায় গিয়েছিলি?সব বলবি একটা দাঁড়ি কমাও বাদ যেনো না পড়ে!
নেহা চোরা চোখে তাকিয়ে বললো–,,সব?
নেহাকে লজ্জা পেতে দেখে বৃষ্টি জেরিন মিটমিট করে হাসলো সুর তুলে বললো—,,অবশেষে!
বৃষ্টি, জেরিন মিলে সাব্বিরের প্রেমে পড়ার কাহিনি নেহা কে বললো।সাব্বির ইতিমধ্যে সেখানে আসলো।
নেহা দুহাত উঁচিয়ে বললো–,,মাশাআল্লাহ আমার ভাইকে তো আজকে অনেক সুন্দর লাগছে!মেয়ে তো হার্ট ফেই’ল করে পড়ে যাবে।
সাব্বির বলে উঠলো–,,এমনে কইস না নেহা বইন লজ্জা লজ্জা লাগে!
জেরিন বলে উঠলো–,,তুই কি মাইয়া? লজ্জা পাইতে যাবি কোন সুখে,চল তোকে ট্রেনিং দেই কি কি বললে মেয়ে পটবো, এই নেহা তুই তৈরি হয়ে আয়।আমরা কিন্তু দর্শক!
নেহা দৌড়ে গেলো রুমে!
————
নিখিল পাঞ্জাবি পড়েছে শুধু, নেহা ঢুকতেই দেখলো নিখিল কে চুল ঠিক করতে ব্যস্ত।
নেহা দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত গুঁজে তাকিয়ে দেখলো অপলক!
নিখিল চুল আঁচড়ানো শেষ করে আয়নার দিক মুখ করেই বললো—,,সামনে এসে পরে দেখ, লুকিয়ে দেখার কি আছে?
নেহা এগিয়ে গিয়ে সামনে দাড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো।তাকিয়ে থেকে বললো–,,আমার জামাই আমি দেখছি,যেভাবে খুশি দেখবো তাতে আপনার কি!
—,,বুঝেছি তো আমি আপনার, এখন বোতাম গুলো লাগিয়ে দিন!
নেহা হাত সরিয়ে বললো–,,আমি কেনো দিবো নিজের টা নিজে করেন।আমি রেডি হবো না নাকি?আমাকে রেখে যাওয়ার ধান্দা!
নিখিল আদর মাখিয়ে ডাকলো–,, ওও.. বউজান! লাগিয়ে দাও না।
নেহা হেসে ফেললো ছোট ছোট হাত দুটি নিখিলের প্রসস্ত বুকের উপর রেখে একটা একটা করে বোতাম লাগিয়ে দিলো।নিখিল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো নেহাকে বরাবরের মতোই মুগ্ধতা নিয়ে!মেয়েটা দিন দিন পুরনো হওয়ার বদলে নিখিলের কাছে নতুন হয়ে ধরা দেয়,মনে হয় মুহুর্তে মুহুর্তে নব উৎপাদিত মুগ্ধতা বিরাজ করে নেহার মাঝে!নিখিল বার বার আকুল হয় ব্যকুল হয় এই মায়াপরীর চন্দ্রকায়ায়।
নিখিল একের পর এক আবদার করছে,এবার ঘড়ি পড়িয়ে দে নেহা।হাতা টা গুটিয়ে দে।গালে একটু হাতের ছোঁয়া দে তাহলে সাজ কমপ্লিট হবে আমার!
সব কাজ শেষ করে নেহা এবার বললো–,,বের হোন তো রুম থেকে আমি শাড়ি পড়বো!
নিখিল কিছু বললো না।কিছু ভেবে আবার বলে উঠলো–,,আমি যেটা এনেছি সেটাই পড়বি!
নেহা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।ওয়াশরুমে শাড়ি পড়া যাবে না তাই নেহা বাহিরে এসে পড়বে।নিখিল কে গলা উঁচিয়ে ডেকে বললো–,,এই বের হোন আপনি রুম থেকে!
নিখিলের সোজাসাপটা জবাব —,,না! তুই যেভাবে আছিস সে ভাবেই এখন আসবি তোকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো দেখেই অপেক্ষা করছি আমি।
নেহা চেঁচিয়ে বলে উঠলো—,,না….! আমি একাই পড়তে পারবো।
–,,তোর থেকে কিছু শুনতে চাইনি আমি।তুই আসবি নাকি আমি আসবো!
নেহা কোনো রকম শাড়ি পেঁচিয়ে বের হলো।নিখিল যে নাছোড়বান্দা এটা নেহার থেকে ভালো কে জানে।
নেহা কে দেখে ভ্রু কুঁচকালো নিখিল।মাথা নিচের দিক দিয়ে দাড়িয়ে আছে,নিখিল ইচ্ছে করে লজ্জা দিতে চাইলো নিজের বউকে।
একটানে পেঁচিয়ে রাখা শাড়ি নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো, নেহা দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরতেই শব্দ করে হেসে ফেললো নিখিল।
উঠে এসে কানের কাছে ফিসফিস কন্ঠে বললো
–,,মিসেস চৌধুরী কি লজ্জা পাচ্ছেন?ভুলে যাবেন না আপনার সর্বাঙ্গ আমার ভালোবাসার চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে!
নেহা যেনো এবার মাটি ফাঁক করে ভিতরে ঢুকতে চাইলো!
নিখিল আবার বললো—,,এভাবে লজ্জা পেলে তোর আর বাহিরে যাওয়া হবে না নেহা।আমাকে কিন্তু দোষ দিতে পারবি না তোর লজ্জা মাখা মুখ দেখলেই আমি দিশেহারা হয়ে যাই।তাকা আমার দিকে!
নেহা পিটপিট করে তাকালো গাল জুড়ে রক্তিম আভা! নিখিল আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো গালে।নেহা ততক্ষণাৎ কেঁপে উঠলো।
নিখিল পরম যত্নে শাড়ি পড়াতে থাকলো।নেহা চুপচাপ দাড়িয়ে দেখলো।কুঁচি গুঁজে দেওয়ার সময় আসতে নেহা চোখ বড় বড় তাকালো,নিখিল নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওর হাতে কুঁচি ধরিয়ে দিয়ে বললো
–,,নিতান্তই ভদ্রলোক তাই তোকেই গুঁজতে দিলাম!
নেহা কুঁচি গুঁজে বললো–,,ধনেপাতা।
নিখিল নেহার পিঠের দিকে কোমরের দিক এতোগুলা সিফটিপিন আটঁকেছে শাড়ির বাপও নড়তে পারবে না।নেহা ঠোঁট উল্টে শুধু দেখে যাচ্ছে।কি পা’গল এই ছেলে।
–,,কি করছেন এসব?
–,,খবরদার নেহা ভুলেও যদি পিঠ,কাঁধ, আর পেট উন্মুক্ত হয় তোকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো আমি বলে রাখলাম!আমার আমানত কেউ যেনো না দেখে।
নেহা অদৃশ্য কপাল চাপড়ালো এমনিতেও তো সে দেখাতো না।জামাই পেয়েছে একটা কপাল জোড়ে।
নেহার চুল গুলো খোঁপা করে দিয়ে বললো—,,চুল যাতে না খোলে, তোর চুলে কেউ নজর দিক এটা আমার সহ্য হবে না একদম হৃদপিণ্ড দুমড়ে মুচড়ে যায় জান!
–,,নেহা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়লো।মানে সে সব মানবে।
নেহা লিপস্টিক লাগিয়ে নিলো শুধু গহনা বলতে কানে ঝুমকা হাতে চুড়ি।
নিখিল দুকদম এগিয়ে এসে বললো–,,ঠোঁটে শুধু একটা চুমু খাবো বেশি না!
নেহা চোখ পাকিয়ে তাকালো–,,মোটেও না।আমার লিপস্টিক ছড়িয়ে যাবে,সরুন এবার সাব্বির ভাইয়ার প্রোপোজ দেখা মিস করে ফেলবো না হয়!
নিখিল কপাল কুঁচকে বললো–,,আর লিপস্টিক পড়বি না তুই,এই লিপস্টিক না থাকলে যখন তখন চুমু খেতে পারবো বউ কে!
–,,তাহলে তো আরো বেশি করে লাগাবো!
কথা শুনেই নিখিল নেহা কে রেগে ওক টান মারলো ঠোঁটে চুমু দেওয়ার সাথে একটা কামড় ও দিলো!
নেহাকে ছেড়ে দিয়ে টিস্যু বের করে ঠোঁট নিজে পরিষ্কার করে দিয়ে বলে।লিপস্টিক পড়া বন্ধ মানে বন্ধ!
নেহার কোমর জড়িয়ে বললো—,,তোমার ঠোঁটের টেস্ট আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয়।প্লিজ কৃত্রিম কিছুর আড়ালে ওই স্বাদ লুকিয়ে ফেলো না জান!
নেহা নিখিলের কানে ফিসফিস করে বললো–,,ওকে মাই ডিয়ার হাসবেন্ড!
ছোট করে একটা চুমু দিলো নিখিলের গালে, পরে নেহাকে পায় কে এক ছুটে দরজা খুলে পালালো!
নিখিল আকষ্মিক ঘটনা বুঝতে পেরে গালে হাত দিয়ে হেসে ফেললো।তার বউ বড্ড বেশিই লাজুক,ছোঁয়ার আগেই নেতিয়ে পড়ে তারই বুকে!
———————-
সাব্বির কে ঠেলা মারছে জেরিন আর বৃষ্টি, ভয়ে মেয়ের সামনে যাচ্ছে না এই ছেলে।
জেরিন রেগে বললো–,,তুই কি গিয়ে বলবি নাকি আমি যাবো শা’লা তোর জীবনে প্রেম হইতো না!
মেয়েটা বেশ ফর্সা মোটামুটি উচ্চতার লম্বা, কনের পক্ষের লোক!আবার ছেলে পক্ষেরও পরিচিত তাই সাব্বির বাড়িতেই দেখেছিলো মেয়েটাকে।
মেয়েটা এদিকে ঘুরলো তখন তারা ছাড়া তেমন কোনো মানুষ নেই এখানে এটাই মুখ্যম সুযোগ।নেহা এসেই সাব্বির কে দিলো এক ধাক্কা সাব্বির ব্রেক কষলো মেয়েটার সামনে,বৃষ্টি, নেহা,জেরিন সরে পড়ে গাছের পিছনে দাঁড়ালো।
সাব্বির ঘামছে অনবরত এ পর্যন্ত মেয়েদের সাথে কথাই বলেনি তেমন এখন এসেছে প্রেম নিবেদন করতে! মনে হচ্ছে সাব্বিরের স্নায়ুবিক চাপ বাড়ছে শিরা উপশিরায় ঝট’লা পাকিয়ে যাচ্ছে!
সাব্বির হাতে জেরিনের ধরিয়ে দেওয়া গোলাপ টা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
—,,তুমি কি আমার সাময়িক ভালোলাগা কে স্বীকৃতি দিবে মিস?তবে আমিও কথা দিবো শ্রেষ্ঠ প্রেমিক হয়ে দেখাবো তোমায়!আমি তোমার প্রেমে পড়েছি তবে সেটা হঠাৎ এই অধরা অস্পষ্ট ভালোলাগাকে ভালোবাসা পর্যন্ত নিয়ে যেতে তুমি কি আমার সঙ্গী হবে?হাতে হাত রেখে চলবে বাকিটা পথ?
চলবে?