প্রণয়ের সুর পর্ব-২৪

0
18

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বুকে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি।দৃষ্টি তে কি যেনো খেলা করছে,গাছের আড়াল থেকে কি হবে তা দেখার জন্য উত্তে”জনায় ফেটে পড়ছে তিন বোন।
সাব্বির এখনও আগের মতোই ফুল হাত দাঁড়িয়ে,

দূর থেকে কেউ একজন কেঁদে উঠলো সে শব্দ পৌঁছালো এখানে থাকা মানুষ গুলোর কাছে!নিজের পছন্দের মানুষ কে অন্যের হতে দেখার মতো নিদারুণ যন্ত্র’ণা আর কি হতে পারে,কথায় বলে ভালোবাসার মানুষের সুখই বড় সুখ।যদি মানুষটি অন্য কারো সাথে ভালো থাকে তবে তাই হোক।নিজের অনুভূতি কে সে নিজ হাতেই না হয় কবর দিবে!
সাব্বিরের সামনে থাকা মেয়েটি ক্রো’ধ মিশ্রিত কন্ঠে বললো–,,একটা সামান্য বিশ টাকার গোলাপে প্রেম নিবেদন করতে চাচ্ছেন মিস্টার?আপনার ভালোবাসা তো এই ফুলের মতোই সস্তা!

মেয়েটির কথায় অবাকের চরম সীমানায় সাব্বির।এতো সুন্দর একটা মেয়ে আর কথা গুলো কেমন তিমিরে ঢাকা! তবে কি সাব্বির সৌন্দর্যের মোহে পড়ে মানুষ চিনতে ভুল করলো!

সাব্বির ফুলসহ হাত টা গুটিয়ে নিয়ে দাঁড়ালো,পকেটে পুড়ে ফেললো টকটকে লাল গোলাপ টা।মেয়েটা ভ্রু কুঁচকালো!সাব্বির মৃদু হেসে বললো–,,ফুলের মূল্য কি টাকা দিয়ে বিচার করা যায় মিস?ফুল ভালোবাসার প্রতীক জানেন না বুঝি?

মেয়েটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো–,,যাদের মন ছোট কিছু দেওয়ার যোগ্যতা নেই তারা এসব বলেই অন্যকে বুঝ দেয়!সামর্থ্য থাকলে একটা ডায়মন্ডের রিং দিয়ে তো প্রোপোজ করতে পারতেন!আমার মতো সুন্দর মেয়ের জন্য কতো ছেলে লাইন ধরেছে জানেন?কতো কতো দামি দামি গিফট দেয় তারা আর আপনি কিনা সামান্য ফুল হাতে চলে এসেছেন?ভাবলেন কি করে আপনার মতো ছেলের সাথে আমি প্রেম করবো!আপনাকে কোনো ফকিন্নি ও পাত্তা দিবে না!

কপালে ভাজ পড়লো সাব্বিরের, তবে সে খুশি হলো এই মেয়ে তার প্রস্তাব গ্রহণ করেনি!উপর যেমন চকচকে ভেতর টা তেমনই কুৎসিত এই মেয়ের।

নেহা রাগে ফেটো পড়লো,এই মেয়ে রাজি হবে না ভালো কথা তা বলে ওর ভাইকে অপমান করবে?কোন লাট সাহেবের বেটি! তার ভাইয়ের নখের যোগ্য ও তো না!
জেরিন নেহার হাত চেপে ধরে বললো–,,আগে সবটা দেখতে দে!
নিখিল এগিয়ে আসছে এদিকে!সাব্বির কোন মেয়েকে পছন্দ করলো দেখার ইচ্ছা তারও জেগেছে।

সাব্বির চুপচাপ পকেটে হাত গুঁজে মেয়েটার কথা শুনছে,তার ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসি!প্রথম বার কোনো মেয়েকে পছন্দ করেছে সে আর তাও ভুল মানুষ।সত্যি মেয়ে চেনার ক্ষমতা আসলেই তার নেই।এর থেকে ভালো ছিলো চিরকুমার থেকে যাওয়া!

মেয়েটা আবার বললো–,,গালফ্রেন্ড চালাতে হলে পকেটে লাখ লাখ টাকা লাগে!

সাব্বির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো–,,আমার পুরো পরিবারের মানুষের মাসের বাজারে ও তো এতো টাকা লাগে না!আপনি দেখতে তো হ্যাংলা পাতলা কোন ব্রেন্ডের চাল খান মিস যার দাম এতো টাকা!

মেয়েটা হকচকিয়ে গেলো ছেলেটা তাকে অপমান করছে বুঝতে পেরেই রাগে রি রি করে উঠে বললো–,,আপনার সাহস তো কম না আমার খাওয়া নিয়ে কথা বলেন!ভালো কিছু দেওয়ার মুরোদ নেই আবার আসছেন প্রেম করতে আর কি বললেন আপনার পরিবারের মাসে লাখ টাকা লাগে না?কি ছোটলোক পরিবার আপনার!
মেয়েটা হাত উঁচিয়ে নিখিলের দিক দেখিয়ে বললো–,,উনাকে দেখছেন কতো বড়লোক!উনার পরিবারের কেউ হলেও মেনে নিতাম,কোথা থেকে এসেছেন আপনি, বামুন হয়ে চান্দে হাত বাড়ান!

নেহা এবার জেরিনের হাত ছেড়ে বললো–,,বেয়াদব মেয়ে মানুষ আমার জামাইয়ের দিক নজর দিছে।আবার আমার পরিবার কে অপমান, কি অহং”কারী নিচু মনের মেয়ে!

নেহা এসে ঠা’স করে একটা চ’ড় বসিয়ে দিলো মেয়েটার গালে!ঘটনার আকষ্মিকতায় জেরিন,বৃষ্টি ছুটে আসলো।

নেহা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো–,,অভদ্র মেয়ে বাবা মা ভদ্রতা শেখায়নি?তোমাকে একজন পছন্দ করতেই পারে তাই বলে তার সাথে এরকম আচরণ করবে তুমি?আমার ভাইকে খারাপ কথা বলার সাহস কই পাও তুমি?মুখ ভেঙ্গে দিবো বেয়াদব মেয়ে!পছন্দ হয়নি বলে দিলেই পারতে এতো এতো নাটক করার কি দরকার ছিলো,আবার আমার পরিবার টেনে এনেছো!

মেয়েটা থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে,বারাবাড়ি করেছে বুঝতেও পারলো,তাও বলবে না মেয়েটি!এতো জোরে চ’ড় এর আগে হয়তো খায়নি মেয়েটি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ননির পুতুল বানিয়ে রেখেছিলো, মানুষ কে মানুষ মনে করতে শিখেনি!

সাব্বির নেহা কে আটকে দিয়ে বললো–,,কি করছিস নেহা থাম এবার!
নেহা বিরোধীতা করে বলল–,,কেনো ভাইয়া কেনো থামবো এখনই এই মেয়ে তোমাকে সরি বলবে না হয় দেখো এর কি অবস্থা করি আমি!

তর্ক বিতর্ক থামছে না,নেহা কে সামলানো দায়!নিখিল এসে নেহা টেনে এনে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ, কানের কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে চাপা ধমকের সুরে বললো–,,শান্ত হ নেহা!

নেহা থেমে গেলো,মেয়েটা নিখিল কে দেখছে তাকিয়ে, এরা কি তবে এই ছেলেটার পরিচিত?মেয়েটার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে নিখিল বলে উঠলো—,,এই মেয়ে কেউ তোমাকে পছন্দ করে তার মানে এই না তাকে তুমি অপমান করবে,সুন্দর করে বললেও তো পারতে, তুমি পছন্দ না করলে কি আমার ভাই তোমাকে জোর করতো?পরের বার কারো সাথে এমন অভদ্র আচরণ করতে যেনো না দেখি!যাও এখান থেকে।

মেয়েটা চকিত নয়নে তাকালো,সাব্বিরের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি!মেয়েটার চোখে মুখে তীব্র আফসোস, সে না বুঝে সোনার ডিম পাড়া হাস হারিয়ে ফেললো!

জেরিন গুঁতো মেরে বললো–,,শা’লা ছেকা খেয়ে কি পাগ’ল হয়েছিস?এভাবে হাসছিস কেনো?

—,,মেয়েটা কি বললো শুনলি না তখন নিখিল ভাইয়ের পরিচিত হলে বা ওদের পরিবারের কেউ হলে প্রেম করতো, এখন যখন দেখলো আমি নিখিল ভাইয়ার ভাই তখন মুখটা দেখেছিলি একদম ঠাস করে ফাটা বেলুনের মতো হয়েছিলো।আমি তো অনেক খুশি বইন এমন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালে লাইফ পুরা হেল হয়ে যেতো।আমার আর প্রেম করা ইচ্ছা নাই যা কারিসমা দেখালো এই মেয়ে!আর জীবনে কাউরে প্রোপেজ তো দূর মেয়েদের দিকে তাকাবোও না।আল্লাহ আমার জন্মের শিক্ষা হইছে,আমার মিথ্যা মিথ্যা ডজন খানেক প্রেমিকা এর থেকে ডের ভালো!

নিখিল নেহা কে ছাড়লো এবার।নেহা সাব্বিরের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো–,,তুমি কি বেশি কষ্ট পেয়েছো ভাইয়া?
নেহার চোখ ছলছল করে উঠলো,নেহার সরল মন বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি।
সাব্বির বুঝলো তার ছোট বোনটি এবার বেশ ইমোশনাল হয়ে গেছে,এদিকে কষ্ট পাওয়ার কথা সাব্বিরের কিন্তু পাচ্ছে এই মেয়ে!
সাব্বির হেসে বললো–,,তোর মতো বোন যার আছে সে কি ভাবে কষ্টে থাকতে পারে?
নেহার কখনো মনে হয়নি ওর নিজের মায়ের পেটের কোনো ভাই নেই।সাব্বির ছোট বেলা থেকেই নেহাকে বেশি আদর করতো, কোলে চড়িয়ে ঘুরাতো আর সাহারা কে বলতো মা নেহা শুধু আমার বোন বুঝলে।বাকিদের প্রতি টান থাকলেও নেহা কে বেশি ভালোবাসতো স্নেহ করতো।নেহাও সারাদিন ভাইয়া ভাইয়া করে ঘুরতো কতো শতো আবদার এদের।
নেহা আবেগে আপ্লূত হয়ে একপাশ থেকে সাব্বির কে জড়িয়ে ধরে বললো

—,,তুমি বেশি কষ্ট পেয়ো না ভাইয়া।তোমার জন্য সুন্দর দেখে বউ এনে দিতে বলবো নিখিল কে!

সাব্বির নেহার মাথায় হাত রেখে বললো–,,নেহা বইন আমি কিন্তু ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি,কান্না করতে কোনো মেয়ের বাপ দেখে ফেললে পরে আর বিয়ে হবে না আমার!
তুই তো আমার একমাত্র বইন, সত্যি আমি কষ্ট পাইনি তো নেহা বোন ভালো আমার মন খারাপ করে না!
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো।
বৃষ্টি মুখ ফুলিয়ে বললো—,,ভালো তো নেহাই একা তোমার বোন আমাকে তো চোখে পড়ে না গেলাম গা থাকো বইন নিয়া!
জেরিন তাকিয়ে আছে এদের দিকে কি শুরু করলো ভাই,নেহা টা যে কবে থেকে এমনে কান্নাকাটি করা শুরু করছে কে জানে।সাব্বির আরেক হাতে বৃষ্টি কে আলতো জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুই ও তো আমার ভালা বইন!

জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললো–,,জেরিন হইতাছে ঘসেটিবেগম!
জেরিন তেড়েফুঁড়ে এসে বললো–,,ব্যাটা ঝিমাইন্না মোরগ!তোর বইন হওয়ার এতো সখ নাই আমার,দূরে গিয়া ম’র, আমি যাই তোর নিক নেইম টা পরিবর্তন করে আসি,ততোক্ষণে তোরা তিনটায় শোক পালন কর।বেশি কান্না কাটি করলে টিস্যু অফিসে ফোন দিস!

নিখিল মুগ্ধ চোখে দেখলো চারজনকে,সত্যি ভাই-বোনের সম্পর্ক গুলো ভীষণ রকম সুন্দর হয়।হাজার হাজার ঝ’গড়া হয়,সারাদিন মারা’মারি হয় কেউ কাউকে দু’চোখে দেখতে পারে না কিন্তু নিজেদের বিপদে,পরিবার কে আগলে রাখা সময় তারাই একেক জনের ঢাল হয়ে দাঁড়ায় হাতে হাত রেখে পরিবার কে জুড়ে রাখে একই সুতায়!
—————–
ভাই বোনদের আড্ডায় যেনো বিষন্নতা কেটে যায় খুব দ্রুত!তেমনই একটু আগের হওয়া ঘটনাও প্রভাব ফেলতে পারেনি সাব্বিরের মনে, উল্টো এদিকে একের পর এক হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে সাব্বির,বৃষ্টি, নেহা।
কিন্তু হাসার কথা ছিলো জেরিনের।
জেরিন সাব্বিরের নিক নেইম দিয়েছে “ছ্যাকা খাওয়া মুরগি”!
সাব্বির ততক্ষণাৎ জেরিনের নিক নেইম দিছে
” চশমাওলার মোরগ”!
সাথে আবার একটা স্ক্রিনশট নিয়ে ফেইসবুকে জেরিন কে ট্যাগ করে পোস্ট দিয়েছে,আমাদের বাসার ঘসেটিবেগম চশমাওয়ালার প্রেমে পইড়া জেন্ডার চেইঞ্জ কইরা ফেলছে!কি আর করার কানা”কোনারা তো চোখে কম দেখে কেউ চাইলে একে সহমর্মিতা দেখাতে পারেন!যাতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

এই পোস্ট নিয়ে জেরিন গাল ফুলিয়ে বসে আছে!
তা দেখে সাব্বির বলে উঠলো–,,গাল ফুলাইস না জেরিন বইন লজেন্স কিন্না দিমুনে পুরা আটানা দামের।

আরেক দফা হাসির রোল পড়লো!ফারহান, জেবা তো হাসতে হাসতে শেষ,চোখের কোনো পানি চলে এসেছে।

জেরিন নাক ফুলিয়ে বললো–,,তুই কাম ডা ভালা করলি না সাব্বিরা তোর সিক্রেট ও ফাঁ স কইরা দিমু এখন আমি!

সাব্বির ভাবলেশহীন ভাবে বলে –,,কি জানোস আমার ব্যাপারে?ফাঁপর কম মার!

জেরিন চুল গুলো কানের কাছে গুঁজতে গুঁজতে বললো ক্লাস এইটে কে জানি ফেইল করছিলো!জানিস সাব্বির ছেলেটা না আমার ক্লাসমেট ছিলো আহা বেচারা এখন আমার নিচের ক্লাসে পড়ে কিন্তু বয়সে আমার থেকে গুনে গুনে বিশ দিনের বড়।

সাব্বির কাচুমাচু হয়ে বললো–,,এটা তুই করতে পারিস না জেরিন বইন!আমি পোস্ট ডিলিট করে দিচ্ছি।

জেরিন বলে উঠলো –,,এখন বলে আর লাভ নাই!

নেহা,বৃষ্টি চোখ ছোট করে তাকালো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সাব্বিরের উপর।নেহা বলে উঠলো

—,,তাড়াতাড়ি সত্যি কথাটা বলো।আমি তোমাদের ভাবি হই বুঝছো আদেশ করতাছি বড়দের কথা শুনতে হয় মানে সম্পর্কে বড় ভাবির কথা!
জেরিন বলে উঠলো –,,যথাআজ্ঞা ভাবি সাহেবা!

সবাই খুব মনোযোগী হলো,সাব্বির চুপসে যাওয়া মুখ নিয়ে বসে রইলো!
জেরিন গলা খাঁকারি দিয়ে বললো–,,শোন তবে।সাব্বির আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম।সব সময় ও পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ করতো।আমি মোটামুটি নাম্বার পেতাম কিন্তু ফেইল করিনি কখনো কিন্তু জেএসসি পরীক্ষায় সাব্বির ফেইল করে এক বিষয়ে, পরে ও এর ভাব কমেনি একই স্কুলে সবাই জানতো আমরা একই পরিবারের সম্পর্কে ভাই বোন,সুযোগ পেলেই সাব্বির কে সবাই পঁচানি দিতো।বেচারা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ক্লাস নাইনে উঠেই স্কুল পরিবর্তন করে ফেললো,তারপর থেকে সবাইকে বলে বেড়াতো ও আমার একবছরের ছোট আর আমি ওর সিনিয়র, আমিও সুযোগে ওকে দিয়ে আপু ডাকাইতাম!কলেজে ও সাব্বির আমার জুনিয়র সবাই তার পর থেকে ভাবতে লাগলো সাব্বির আমার ছোট ভাই।এমনকি ফেইলটু বলে ডাকবি দেখে তোদের কেও একই কথা বলেছে!বিশ্বাস না হলে নিখিল ভাইয়াকে জিজ্ঞেস কর।

নেহা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো–,,এতো বড় ধোঁকা!আল্লাহ সাব্বির ভাইয়া তোমাকে মেজো মা ঝাঁ”টা পিটা করেনি ফেইল করে আসার পর!

সাব্বির রাগ দেখিয়ে উঠে দাঁড়ালো জেরিন কে বললো–,,তোন সাথে আমার কোনো কথা নাই!

–,,যা তো যা তোর সাথে কে কথা বলতে চায়।

বৃষ্টি সিরিয়াস হয়ে বললো–,,আপু ভাইয়া কি সত্যি রাগ করলো নাকি?

জেরিন গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো—,,বাদ দে তো ওর কথা চল হলুদ লাগিয়ে আসি!

—————
হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে এ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে ওদের কে যেতে দেয়নি নিখিল।কিন্তু নিজে ঠিকই গেছে,তা নিয়ে নেহা নিখিল কে মনে মনে কতোগুলো গা’লি দিয়েছে!
শুভ কে সবাই হলুদ লাগিয়ে চলে গেছে ছোটরা যার যার মতো আনন্দ করছে।

নেহা হেঁটে রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ কেউ গাছের আড়াল থেকে তার কোমর টেনে ধরে।
নেহা অন্ধকারে ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে,নেহার ঠোঁট জোড়া তখনই কেউ বন্ধ করে দেয় তার নিজস্ব পদ্ধতিতে।
নিখিল নেহার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ মারলো কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো–,,আমাকে কি মিস করছিলে বউজান?

নেহা নাকের ডগায় রাগ ঝুলিয়ে বললো–,,ছাড়ুন তো আমাকে,তখন বকা দিয়ে এখন আবার প্রেম দেখাতে এসেছে।

নেহা পেটে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে।
নিখিল ফিসফিস করে বলে–,,হলুদের ছোঁয়া দিয়ে দিলাম আমার লজ্জাবতী কে।

নেহা নাক মুখ কুঁচকে ফেলে বলে–,,তাই বলে আমার পেটে!এখন কিভাবে উঠাবো?রাতের বেলা আবার গোসল করতে হবে আমাকে?

নিখিল নেহাকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রেখে দাঁড়ায়–,,এখন গোসল করতে হবে না,একবারে সকালে যাতে করতে পারিস সে ব্যবস্থা করতে আসছি আমি!

নেহা কনুই দিয়ে নিখিলকে হাল্কা ধাক্কা মেরে বলে–,,ধুর আপনি একটা যা তা!

দূর থেকে কারো চোখে ওদের এই সুন্দর প্রেম কে বি’ষের মতো লাগে!
নিখিল নেহা ছেড়ে বলে–,,সোজা রুমে যাবি,রাত হয়েছে আমি আসছি একটু পর! বাকিরা কোথায় বৃষ্টি, জেরিন কেও রুমে যেতে বলে দিবি।

নেহা মাথা নেড়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো,পথে এসে আটকে দিলো রূপা।

নেহা হেসে বললো–,,কিছু বলবে রূপা?

–,,হ্যাঁ আপু নিখিল ভাইয়া সবার জন্য চুড়ি এনেছে, আপুদের সবাই কে দিয়েছি তোমার টা বাকি!এই নেও তোমার ভাগের টা।

নেহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিখিল কিছু আনলে তাকে না দিয়ে অন্যের হাতে কেনো পাঠাবে?

রূপা বলে উঠলো–,,আরে আপু এতো কি ভাবছো ভাইয়াই তোমাকে দিতো,একটু ব্যস্ত তাই আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে।
নেহা আলতো হেসে ব্যাগটা নিলো।নেহা চলে যেতেই টয়া আসলো মনে মনে বললো–,,কাল হবে আসল মজা!

নিখিল রুমে এসে দেখলো নেহা ঘুমিয়ে পড়েছে,ঘুম কাতুরে টা শাড়িটাও পাল্টায়নি!
———–
ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা করে সবাই রেডি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মেয়েগুলা সব এগারোটায়ই পার্লারে দৌড় লাগিয়েছে যায়নি নেহা,বৃষ্টি আর জেরিন।
নেহার মন টা তখন থেকেই খুশিতে আকুপাকু করছে নিখিল তার জন্য যে শাড়িটা এনেছে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।গোলাপি আর আকাশী রঙ মিশিয়ে সিকু’য়েন্সের কাজ করা শাড়িটা।নিখিলের পছন্দ সত্যি অসাধারণ।
নেহা খুশিতে নিখিল কে দু দুটো চুমু দিয়েছে।বউকে এতো খুশি হতে দেখে নিখিল ও ভীষণ খুশি।মেয়েটা অল্পতেই নাচানাচি শুরু করে দেয়।

বৃষ্টি, নেহা,জেরিন মিলে ওদের ঘরটায় রেডি হতে বসেছে।
নেহা সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,এই বৃষ্টি তোকে কি তোর ভাইয়া চুড়ি দিয়েছে?রূপা বলছিলো সবাই কে দিয়েছে!

–,,হ্যাঁ আমাদের ও তো দিলো বললো ভাইয়া দিয়েছে।তোর গুলা কোথায় রে দেখি দেখা।
নেহা হাত উঁচিয়ে টেবিলের উপর রাখা প্যাকেট টা দেখালো!

বৃষ্টি বের করে মুখ তেঁতো করে বলে–,,এটা ভাইয়া কিনেছে?ছি!কি রকম দেখতে,পুরনো রঙচটা!
নেহা দেখলো তার পর হাতে নিয়ে বললো–,,সমস্যা নেই তোর ভাইয়া দিয়েছে না পড়লে মন খারাপ করবে আবার একদিনেরই তো ব্যপার!

জেরিন বলে উঠলো–,,ভাইয়া কিছু মনে করবে না সুন্দর শাড়িটার সাথে ম্যাচিং চুড়ি আমার কাছে আছে তুই ওইটা পড়িস তোর আর আমার হাতের সাইজ তো প্রায় এক হয়ে যাবে!

নেহা জোর করে বললো–,,না সে নিখিলের দেওয়াটাই পড়বে,অগত্যা ওরা মানলো!

বৃষ্টি লেহেঙ্গা পড়লো খয়েরী রঙা সাদা পাড়ের!জেরিন পড়লো থ্রি পিস!
নেহা কে শাড়ি পড়তে হেল্প করলো দুবোন।নেহাকে চুল গুলো সুন্দর করে বেনি করে দিলো জেরিন সাদা ডায়মন্ড কাটের জুয়েলারি পড়ার পর নেহাকে দেখে দুজন একসাথে বলে উঠলো মাশাআল্লাহ!

বৃষ্টি নেহাকে দু দিকে ঝাকিয়ে বললো–,,নেহা রে তোকে তো আজকে একটা চকচকে সাদা পরী লাগছে।আমার ভাইয়াটা ঠিক থাকলে হয় আজকে!

নেহা বেশ লজ্জা পেলো। এর মধ্যেই বাকিরা এসে পড়লো,রূপা এসে ইচ্ছে করে নেহা কে বললো

–,,ছি! তোমাকে এমন এক জোড়া চুড়ি দিতে পারলো নিখিল ভাই।টয়া আপুকে তো নিজ হাতে সুন্দর চুড়ি গুলা দিয়েছে কি সুন্দর কারুকাজ করা তাতে!আর তোমাকে কিনা এগুলা দিলো আমাদের গুলাও তো সুন্দর।

টয়ার কথা শুনেই নেহার মাথা খারাপ হয়ে গেলো।নিখিল টয়াকে হয়তো এমনিতেই চুড়ি গুলা দিয়েছে তাই বলে নিজ হাতে দিতে হবে?তাকে তো অন্যের হাত দিয়ে দিয়েছে!নেহা রাগে দুহাত এক সাথে করে জোরে ঘর্ষণ লাগাতেই ঝনঝন শব্দ করে ভেঙ্গে গেলো চুড়ি গুলো কিছু চুড়ির টুকরো ঢুকে গেলো চামড়া বেধ করে।সাদা চামড়ায় রক্তের দাগ স্পষ্ট!রাগে নেহা বিছানায় বসে মাথা চেপে ধরলো জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে,এদিকে সবাই বের হবে কনের বাড়ির উদ্দেশ্য নেহার বেগতিক অবস্থা দেখে কুটিল হাসলো টয়া।হাসি ঝুলিয়ে বেরিয়ে গেলো উঠোনে। আইরিন এক ছুটে গিয়ে ডাকলো সাব্বির কে, নিখিল কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বাড়িতে ঢুকলো গাড়ি ঠিক করে এসেছে মাত্ররো
তাহমিদা বেগম,হামিদা বেগম, সাহারা দৌড়ে আসলেন।শাহআলম চৌধুরী, শহিদুল চৌধুরী, মাহফুজ বাড়িতে নেই সবাই গাড়িতে চড়েছেন ইতিমধ্যে। পুরুষ মানুষ বলতে ছেলেরা আছে কয়েকজন বাকিরা বেরিয়েছে কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে!সাব্বির কে ছুটতে দেখেই নিখিল পিছু ডাকলো।
সাব্বির কি হয়েছে দৌড়াচ্ছিস কেনো?

–,,ভাইয়া নেহা অসুস্থ হয়ে পড়েছে!

নিখিলের পা যেনো থেমে গেলো কিছুক্ষণ আগেও হাসিখুশি মেয়েটাকে রেখে গেলো এইটুকু সময়ে অসুস্থ হলো কি করে!

নিখিল কাঁপা কাঁপা পায়ে যত দ্রুত সম্ভব উপরে উঠলো!

তাহমিদা বেগমের কোলে ঢলে পড়লো নেহা হামিদা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বললো–,,কোথায় কষ্ট হচ্ছে মা?আমাকে বল।

নিখিলের বড় মামি মাহমুদা বেগম ছুটে আসলেন ছেলে বিদায় করে।নিখিলের বড় খালা,মেজো মামি,ছোট মামি দাঁড়িয়ে।

এক পাশে সাব্বির, জেরিন,বৃষ্টি, রূপা,আইরিন!

নেহা অস্পষ্ট সুরে বললো–,,মাথায় ভীষণ য”ন্ত্রণা হচ্ছে মা!
নিখিল উদ”ভ্রান্তের মতো ছুটে এসে নেহাকে জড়িয়ে গালে হাত রাখলো।
হামিদা বেগম ছেলে কে দেখে আরো ভয় পেলেন।তার পা’গল ছেলেটা কে কিভাবে সামলাবে এখন!

নিখিল চেঁচিয়ে উঠে বলে—,,মা ও কথা বলছে না কেনো?আমার নেহার কি হয়েছে বলছো না কেনো? নেহার হাতের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো নিখিল পুরো হাতে লাল লাল রেশ পড়ে গেছে,কিছু কিছু জায়গায় রক্ত শুকিয়ে গেছে।

নিখিলের মেজো মামি মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,ছি!ছি! নিখিল মানলাম নেহা তোমার চাচাতো বোন তাই বলে এভাবে সবার সামনে রঙ্গ লীলা করবে!আসার পর থেকে দেখছি মেয়েটার সাথে চিপকে আছো অ’বৈধ সম্পর্ক আছে তোমাদের মাঝে!
তাহমিদা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো–,,মেয়েটাকে কোনো শিক্ষা দিতে পারেন নি নাকি!

নিখিলের মাথা বিগরে গেলে হুং কার ছুঁড়ে বললো–,,আর একটা কথা বললে জি’ব টেনে ছিড়ে ফেলবো আপনার!
নিখিল তার বড় মামির দিকে তাকিয়ে বললো–,, মামি আপনাকে তো বলেছিলাম সব কিছু সবাই কে বলেন নি!
মাহমুদ বেগম বলেন–,,বলেছিলাম তো বাবা তোর ছোট মামিকে, রুবি তো তখন বাড়ি ছিলো না বিয়ের ব্যস্ততায় বলতে পারিনি!

রুবি বেগম আবার তেতে উঠে বললো–,,এসব নোং’রামি করে বেড়াও আবার কিছু বললে তেজ দেখাও নিখিল কি এমন ভালো কাজ করছো যে আমাকে জানাতে হবে।

নিখিল নিজের মায়ের দিক তাকিয়ে বললো–,,এই অভদ্র মহিলা কে এখান থেকে সরাও।আর সাব্বির তোরা যা সবাই অপেক্ষা করছে, যাওয়ার আগে ডাক্তার কে কল করবি!

আইরিন ছুটে এসে বললো –,,ডাক্তার আংকেল আসছে ভাইয়া!

সাব্বির বলে উঠে–,,আমরা যাবো না ভাইয়া!
নিখিল রেগে গিয়ে বললো–,,যা বলেছি কর, বের হ রুম থেকে!

রুবি বেগম বলে আবার বলে উঠলো–,,হ্যাঁ আমরা বেরিয়ে গেলেই তোমার সুবিধা হয়।
কথা বলার মাঝেই মাহমুদা বেগম এক চ’ড় বসালো রুবি বেগমের গালে।
মাহমুদা রেগে বললো–,,কখন থেকে বলেই যাচ্ছিস কাউকে কিছু বলতে তো দিবি নাকি?কার সম্পর্কে কি বলছিস?নেহা নিখিলের বিয়ে করা বউ, এ কথা এখানে আসার আগেই জানিয়েছে আমায় তোদের কেও বলতে বলেছে!নিখিলের ছোট মামিও সায় জানায়।

মহিলা যেনো দমবার পাত্রি নন নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে না পারার ক্ষু’ব প্রকাশ করে বসলো–,,নিশ্চিত কিছু করেছে না হয় লুকিয়ে বিয়ে দিবে কেনো?

নিখিল ধৈর্য হারা হলো—,,একদম চুপ করুন বলছি,না হয় ভুলে যাবো আপনি আমার সম্পর্কে মামি হন।আপনার মেয়েতো পাড়ার ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়েছে সে বাচ্চাকে গোপনে হসপিটালে গিয়ে ন”ষ্ট করেছেন কি ভেবেছেন কেউ জানবে না?এতটুকু বয়সে মেয়ে হয়েছে ইঁচড়েপাকা আবার অন্যের মেয়ের সম্পর্কে কথা বলেন কোন মুখে!বড় মানুষ দেখে ছেড়ে দিলাম না হয় আমার স্ত্রীর ব্যপারে একটাও বা’জে কথা বললে আপনাকে জ্যা”ন্ত পুতে ফেলতাম এখানে!

হামিদা বেগম বলে উঠলো –,,হিতাহীত জ্ঞান কি হারিয়ে ফেলেছো ভাবি আমার মেয়েটা এখানে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে আর তুমি যা নয় তাই বলে যাচ্ছো আজ আসুক ভাইজান,এর একটা বিহিত করেই ছাড়বো আমি।আর কোনো দিন আসবো না তোমাদের বাড়ি।

মাহমুদা বেগম বললো–,,হামিদা আর কথা বাড়াস না বোন এদের বিচার পরে হবে,এতো বড় কান্ড ঘটিয়েছে শাস্তি পেতেই হবে!

তর্ক বিতর্কের মাঝেই ডাক্তার আসলেন।নিখিল সরে উঠতে চাইলেই নেহা শার্টের গলার অংশে অগোছালো হাতে টেনে ধরলো!সাদা শার্টে লেগেছে র ক্তের দাগ

নিখিল আলতো হাতে ছাড়িয়ে পাশে বসলো,ডাক্তার এসে বললো–,,কিভাবে কি হলো?

এতো বলে কয়েও সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি কে সরানো যায় নি।বৃষ্টি সব খুলে বলতেই নিখিলের রাগে কপালে দুপাশ ফুলে উঠলো!
টয়া তার কলিজায় আবার হাত দিয়েছে!এবার এমন শা”স্তি দিবে যা দেখলে বাকিগুলারও রু”হ কেঁপে উঠবে।

ডাক্তার বললো–,,অতিরিক্ত রাগ আর চিন্তার ফলে এমন হয়েছে,জ্ঞা ন হারিয়েছে ঔষধ দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে!
ডাক্তার নেহার হাত ধরে বলে–,,হাতে কোনো রাসায়নিক লেগেছে মনে হয়?বি”ষাক্ত কিছু হাতে কিভাবে লাগলো!
নিখিল চমকে তাকালো আশেপাশে পায়ের কাছে ভাঙা চুড়ির টুকরো উঠিয়ে দিলো ডাক্তারের কাছে।ডাক্তার হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে বললো–,,হ্যাঁ এটাতেই তো ওই রাসায়নিক ছিলো।ডাক্তার দ্রুত হাত পরিষ্কার করে বেন্ডেজ করে দিলো!

সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি বেরিয়ে যাওয়ার আগেই নিখিল তিন জনকে ডাকলো।

–,,এই তোরা দাঁড়া আমার কথা আছে তোদের সাথে!
তিন জন বসলো খাটের এক পাশে নিখিল ওদের কে বললো টয়ার উপর নজর রাখতে এতটুকু তে থামার মেয়ে না। চারজন মিলে টয়া কে হাতে নাতে ধরার জন্য সব রকম পরিকল্পনা করলো!

নিখিল কে নেহা ঘুমের ঘোরেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো।
নিখিল চোখ বন্ধ করে রাগে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো
মনে মনে বললো–,,আমার আদুরে, নরম পাখিটার ক্ষ’তি করে তুই ঠিক করলি না টয়া।এর শা’স্তি তো তোকে পেতেই হবে, তিলে তিলে মা”রবো তোকে!
চলবে?