প্রণয়ের সুর পর্ব-২৫+২৬

0
16

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
রুমে আবছা আলো,পিট পিট করে চোখ খুললো নেহা।কেউ একজন তাকে খুব যত্ন সহকারে আগলে রেখেছে।নেহা মাথা উঁচু করে একবার দেখলো নিখিলের চোখ বন্ধ। নেহা আর একটু গা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো।

হঠাৎই নিখিলের কন্ঠ কানে এলো–,,আমার মিষ্টি পাখিটার কি ঘুম ভেঙেছে?
নেহা উত্তর দিলো না।নিখিল কন্ঠে আদর মিশিয়ে ডাকলো—,,আমার বউটা কি রাগ করেছে?জানপাখির কি অভিমান হয়েছে?তাহলে আমার চুল টেনে দিতে পারে আমি আজকে বাঁধা দিবো না।

নেহা চট করে সরে দূরে গিয়ে উঠে বসলো,মুখ ঘুরিয়ে নিলো।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে এখনই বাঁধতে হবে।নেহা হাত উঠিয়েছে ঠিকই বেশিক্ষণ উঁচু করে রাখতে পারলো না,হাতে অসহ্য যন্ত্র”ণা নিজের হাত দুটি দেখে নেহা নিজেই চমকালো টকটকে লাল হয়ে আছে।

নিখিল নেহার পেছনে বসে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো,কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো–,,এই বুদ্দু একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করবি না ওই গুলা আমি এনেছিলাম কিনা?কে না কে দিলো আর নিয়ে নিলি?আমার কি হাত বিদেশ রেখে এসেছিলাম নাকি যে বউকে নিজ হাতে দিতে পারবো না!বোকামির সুযোগ টা যে নিলো অন্যজন।পরের বার থেকে কিছু হলে আগে আমাকে বলবি বুঝতে পেরেছিস?কি অবস্থা টা হলো হাতটার। তুই তো খুশিই হবি আমাকে কষ্ট দিতে তো তোর অনেক ভালো লাগে।

নেহা নিখিলের দিক মুখ করে বসলো।ঠোঁট উল্টে বললো–,,আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম তো সুযোগ টা পেলাম কই?রাতে আসলেন দেরি করে।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আপনি নাই সারাদিন সামনে আসলেন কখন,শাড়ি দেওয়ার সময় তো ভুলেই গেছিলাম বলতে!

নিখিল টেনে নেহাকে নিজের কাছে আনলো বুকের উপর নেহার মাথা টা রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো–,,বেশি খারাপ লাগছে এখন?

–,,না।শুধু একটু মাথা ব্যাথা করছে।

উল্টো হয়ে বস তো চুল গুলো আঁচড়ে দেই আমি।নেহা বাধ্য মেয়ের মতো বসলো।নিখিল একে একে চুল থেকে ক্লিপ গুলো খুললো, উঠে গিয়ে চিরনি টা এনে চুলগুলো আঁচড়ে দিলো।
চুল গুলো ছাড়া রেখেই ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা করলো।নেহা অধৈর্য হয়ে বললো–,,কি করছেন এবার বেঁধে দিন।

–,,একটু অপেক্ষা কর।

–,,পারবো না।আমিই বেঁধে ফেলছি।

নিখিল নেহার হাত দুটি নিজের হাতের আয়ত্তে এনে বললো–,,এবার করে দেখা।
নেহা চোখ পাকিয়ে তাকালো,নিখিল হেসে গালে একটা চুমু দিলো।নেহা এতে আরো রাগলো,নিখিল যেখানটায় চুমু খেয়েছে তা জামার উপর মুছলো।হঠাৎ ই মনে হলো সে তো শাড়ি পড়েছিলো জামা টা আসলো কখন!

নেহা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো–,,আমার শাড়ি কে পাল্টে দিয়েছে?

নিখিল নেহার গালে এবার একসাথে দশটা চুমু দিলো।
–,,যতবার মুছবি ততবার দিবো।সাহস কতো বড় মুছে ফেলে।
নেহা মুখ বাঁকিয়ে বলে–,,অসহ্য!এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।
নিখিল ভাবলেশহীন ভাবে বললো–,,তোর জামাই চেঞ্জ করে দিয়েছে।তোর কোনো সমস্যা?

–,,নির্লজ্জ লোক!

এর মধ্যে দরজায় নক পড়লো–,,ভাইয়া আসবো?

–,,হ্যাঁ আয়।
জেরিন ঢুকলো হাতে তেলের বাটি।নেহা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,লাগাবো না আমি,কেমন কপালে ঘাড়ে লেপ্টে থাকে।

নিখিল ধমক দিয়ে বললো–,,চুপ!এই জেরিন এটা এখানে রাখ আর মাকে গিয়ে বলবি এই ইব”লিশটার জন্য খাবার নিয়ে আসতে।

জেরিন চলে যেতেই নিখিলে নেহার হাত ছেড়ে দিলো তেল হাতে নেওয়ার জন্য সুযোগ বুঝে নেহা পালাতে চাইলো।নিখিল এক হাতে হেঁচকা টান মারলো নেহা গিয়ে পড়লো বিছানায়।

নিখিল নেহার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বললো–,,তেল দিবি নাকি রাতে আর সকালে দুই দুইবার গোসল করা পছন্দ করবি?

নেহা কাঁদো কাঁদো মুখ করলো বিরস মুখে বললো–,,তেল দিবো।
নিখিল হেসে ফেলে।নেহাকে উঠিয়ে মাথায় তেল দিয়ে দেয়, নেহার চুল গুলো বেনি করছে নিখিল আর নেহা মুখ লটকিয়ে বসে আছে।

নিখিল বলে উঠলো–,,মাথা ব্যাথা কমবে তাই দিয়েছি।এমন করে মুখ করে লাভ নেই।মাথা ঘুরে পড়ার সময় মনে ছিলো না।
তাহমিদা বেগম আসলেন রুমে হাতে খাবার নিয়ে।
নিখিলের তখন চুল বাঁধা শেষ।তাহমিদা বেগম এসে নেহাকে খাওয়াতে লাগলেন!
এর মধ্যে রুমে আসলো সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি। জেবা, ফারহান বিয়ে তে গিয়েছে ঠিকই জামাইয়ের আগেই আবার ফিরে এসেছে নেহার কথা শুনে।

পাঁচ জন মিলে গোল হয়ে বসলো বিছানায়।
সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে বললো—,,নেহা বইন তুই কাজ টা ঠিক করলি?ছেঁকা খাওয়ার ট্রিট দেইনি দেখে তুই আমার রোস্ট খাওয়ায় এভাবে ব্যাঘাত ঘটালি!এটা করতে পারলি তুই আমি না তোর এক মাত্ররো ভাই,রোস্টটা হয়তো বলতেছে সাব্বির তুই কই তোকে আমি মিস করছি!

জেরিন কপাল চাপড়ালো এই ছেলে টা কি আজগুবি কথা বলা বন্ধ করবে না জীবনে?এর বউ তো একে রেখে বাসর রাতেই পালাবে।

এক নাগাড়ে সব গুলো মিলে বক বক করছে নেহা বৃষ্টি হেঁসে ফেটে পড়ছে।এর মধ্যে নিখিল এসে বললো
–,,এই তোরা কি করছিস এখানে?আমার বউয়ের মাথা ব্যাথা করবে যা বলছি!

পাঁচ জন একসাথে বলে উঠে–,,তোমার বউয়ের আগে আমাদের বোন।তুমি ভাগো এখান থেকে।
দরজা ঠেলে শাহআলম চৌধুরী এসে বলে উঠলো–,,তোদের বোন হওয়ার আগে আমার মেয়ে!

পেছন পেছন আসলো শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,,ভাইজান আমার একটা মাত্ররো মেয়ে আপনার তো আরো দুজন আছে আমার টাকে কেনো নিয়ে যাচ্ছেন!

শাহআলম চৌধুরী বলে উঠলো–,,তুই আমার দুইটাকে নিয়ে যা আমার নেহা মা হলেই হবে!

জেরিন, বৃষ্টি বলে উঠলো–,,আব্বু…!

মাহফুজ চৌধুরী এসে বললো—,,নেহা,জেরিন, বৃষ্টি শুধু আমার মেয়ে।বাকিদের কে চিনি না!

তিন জন একত্রে বলে উঠলো –,,হ্যাঁ হ্যাঁ মেজো আব্বু!
শাহআলম চৌধুরী বলে উঠলো–,,তবে রে পল্টি বাজের দল!
নিখিল বলে উঠলো–,,এই এই তোমরা তিন জন আমার বউ নিয়ে টানাটানি করছো কেনো?আমার বউ শুধু আমার কাউকে দিবো না বলে রাখলাম!

হামিদা বেগম রুমে এসে বললো–,,নির্লজ্জতায় পিএইচডি করেছিস?সারাদিন শুধু বউ বউ করা বড়দের সামনে!
নিখিল গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো–,,বউ লাগে তো কি খালা বলবো!
হামিদা বেগম কান ধরে টানলেন–,,তবে রে।

তাহমিদা এসে বললো–,,আমার ছেলেকে মার’ছো কেনো আপা!

সাহারা এসে বললো–,,হ্যাঁ আপা তুমি কান টানলে কেনো আমার ছেলের!

সাব্বির বলে উঠলো–,,হ হ আমরা তো ভেসে এসেছি।চোখে পড়ে না কারো।
রৌফ পেছন থেকে এসে বললো–,,ভাইয়ার সাথে আজ আমি সহমত।
সাব্বির উঠে এসে বললো–,,আয় ভাই বুকে আয়।তুই আমার কলি”জার ভাই!

সাব্বিরের কান্ড দেখে সবাই হেসে ফেললো!রুম জুড়ে বয়ে গেলো এক সুখের মুহুর্ত। পরিবারের সবাই একসাথে সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মতো শান্তির আর কিছু নেই!

বড়রা উঠে যেতেই নেহা বললো–,,বউ চলে এসেছে চলো যাই দেখবো!

নিখিল বলে উঠলো–,,একদম না।এখানে বসে থাক।

নেহা বাচ্চাদের মতো করে বললো–,,একটু শুধু আপনিও চলুন সাথে।আপনাকে আমি চকলেট খেতে দিবো যেতে দিলে!

নিখিল ভ্রু কুঁচকে বললো–,,ঘু”ষ দিতে চাইছিস আমাকে?ভেবে বলছিস তো পরে আবার না করতে পারবি না।

নেহা ভাব নিয়ে বললো–,,কথা দিয়ে কথা রাখি আমি।

নিখিল শান্ত তবে কঠিন কন্ঠে বললো–,,লাফাবি না বেশি,একটু শান্ত থাকিস!
নিখিলের কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই নেহা দৌড় লাগিয়েছে পেছনে বাকিরা।
নিখিল তপ্ত শ্বাস ছাড়লো কবে যে বড় হবে কে জানে!

হুড়মুড় করে সব ভাই বোন মিলে ঢুকলো সৌরভের রুমে।রাত প্রায় দশটা,বউয়ের সাথে তার দাদী এসেছেন।বৃদ্ধা পান চিবুচ্ছে, নতুন বউ ঘোমটা টেনে বসে, পাশে আইরিন।

সাব্বির,ফারহান বলে উঠলো–,,ওগো নতুন ভাবি ঘোমটা টা একটু সরান না আমাদের সৌরভ ভাইয়ের ঘরে উঠা চাঁদ খানি একটু দেখি!

মেয়েটা লজ্জায় আরো একটু মাথা নুইয়ে ফেললো।পাশে থেকে পান চিবুতে চিবুতে বৃদ্ধা বললো

–,,ওই ছো”করা আমারে কি চোখে পড়ে না তোর?বয়স কিন্তু বেশি না আমার।

নেহা বৃষ্টি বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে জেরিন তো কিছুটা শব্দ করেই হাসলো।
সাব্বির ফিসফিস করে বললো–,,ফারহান ভাই তোমাকে বলছে মনে হয় তোমার সাথে এই বুড়ির চেহারা কিছু কিছু মিলে।

ফারহান ভুত দেখার মতো চমকে উঠে বললো–,,না ভাই তুই বেশি সুন্দর ভাই আমি এসবে নাই।

জেরিন বলে উঠলো–,,ও দাদী কোনটা রে বেশি ভালা লাগছে?সাদা টা নাকি কালাটা।
সাব্বির নিজের দিকে তাকালো আজকে পড়েছে কালো রঙের শার্ট।সাব্বির দাঁত কেলিয়ে বললো–,,কালো তো কেউই পছন্দ করে না দাদীর মনে হয় সাদা টা পছন্দ!

বৃদ্ধ মহিলা লাল ঠোঁট হাতের পিঠে মুছে বললো–,,কে তোমার দাদী,বয়সে তো তোমার বউ বউ লাগে আমারে।আমার তো তোমারেই বেশি ভালা লাগছে!

সাব্বির জোরে বলে উঠলো–,,নাউজুবিল্লাহ!দুনিয়ায় কি ইনসাফ উইঠা গেলো নি শেষ মেষ এক বুড়ি জামাই বানাইতে চাইলো!ইয়া মাবুদ উঠাইয়া নেও।

জেরিন বলে উঠলো–,,আমার ও তো একই কথা দাদী চিন্তা কইরো না আমার ভাই পিউর সিঙ্গেল তোমার সাথে মানাইবো ভালা!

সাব্বির নেহা আর বৃষ্টির দিকে অসহায় দৃষ্টি রেখে বললো–,,এই রিনা খান আর ঘসেটিবেগমের হাত থেকে বাঁচা আমারে!
সাব্বির বের হতে নিলে মহিলা হাত টেনে বলে–,,ওগো জামাই কই যাও এখনও তো বাসর রাইত পইড়াই রইছে!

–,,ওয়াশরুমে যাবো, জোর চাপ লেগেছে।

সাব্বির কোনো রকম ভাগলো যাওয়ার সময় জেরিন কে বলে গেলো –,,তোকে দেখে নিবো আমি।

———
হাসি আড্ডা শেষে যে যার রুমে যাবে ভেবেছে সাব্বির কে এখনো পঁচানি দিচ্ছে বৃষ্টি!
–,,ভাইয়া মেয়েদের তুমি এতো ভয় পাও কেনো?

–,, তুই বুঝবি না।চুপ থাক আল্লাহ হাত টা ছয়বার সেনেটাইজ করেছি সাবান,সোডা, শ্যাম্পু কিচ্ছু বাদ রাখিনি, আমার বউয়ের সম্পদ কিনা সৌরভ ভাইয়ার বিবাহিত দাদী শাশুড়ী লু”টে নিচ্ছিলো!

জেরিন আশপাশ একবার দেখে বললো–,,চুপ কর সাব্বির!
–,, কেন বইন আমি কথা বলার সময় তুই এতো না না করিস কেন।
জেরিন সাব্বিরের মুখ চেপে ধরে বললো–,,ওই দেখ রূপা আর ওর মা টয়ার ঘরে যাচ্ছে চল এবার দেখি কি প্ল্যান করে!

বৃষ্টি বললো–,,তোমরা যাও মিহির ভাই কল দিচ্ছে কথা বলে আসি!

জেরিন বললো–,,চুপ ছেম”রি পিরিত পরে করিস এখন চল।

চারজন মিলে দরজায় আড়ি পাতলো।কে দেখে কে দেখবে পুরোধমে ঠেলাঠেলি। জেরিন চাপা ধমক দিলো সিরিয়াল অনুযায়ী দাড়ালো সবাই প্রথমে নেহা পরে বৃষ্টি পরে জেরিন পরে সাব্বির।সাব্বির ফিসফিস করে বললো–,,আজ লম্বা বলে পেছনে ফেলে দিলি!ঘোর অন্যায়!

রুবি বেগমের কথা শুনে রাগে ফোঁস করে উঠলো ওরা

–,,ওদের জন্য সবার সামনে চ’ড় খেতে হয়েছে ওই নিখিল কে তো ছাড়বো না আমি।যা করা লাগবে তাই করবো!
টয়া বলে উঠলো–,,ছাড়বো না তো মামি, ওই নিখিল কে সবার সামনে এভাবে ফাঁ’সাবো দেখবে কেঁদে ও কুল পাবে না!
নেহা বলে উঠলো–,,শাঁক”চুন্নি আমার জামাইয়ের দিক নজর!
বৃষ্টি পেছন থেকে মুখ চেপে ধরলো।ওদের সব প্ল্যান শুনে নিয়ে নিখিলের কাছে গেলো ওরা।

নিখিল শুয়েছে মাত্ররো চোখ লেগেছে।এর মধ্যে সাব্বির গিয়ে টেনে টুনে তুললো।

নিখিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো–,, কি ভাই কি সমস্যা?তোর বইন ভালো করে ঘুমাতে দেয় না এখন তরাও শুরু করেছিস এই বাঁদ’র টার সাথে থেকে সব গুলার মাথাও কি খারাপ হয়েছে নাকি?

সাব্বির বলে উঠলো–,,পরে বকা দিয়ো।আগে কাহিনি শুনো!

সব কিছু শুনে নিখিলের মাথা গরম হয়ে গেলো। জেরিন, বৃষ্টি একটা আইডিয়া দিলো এটা সবার পছন্দ হলেও নেহা মুখ বাঁকালো।

মিন মিন করে বলে–,,ওই ডাই’নি যদি সত্যি সত্যি আমার জামাইরে ছুঁয়ে দেয় তখন। আমি এই প্ল্যান মানি না!

সাব্বির বলে উঠলো–,,আরে আমি তো এখানেই থাকবো যা গিয়ে ঘুমা তিনটায়,ওরা এখনই আসবে!

নেহা নিখিলের দিকে আঙুল উঁচিয়ে শাসানোর ভঙ্গিতে বললো–,,যদি ভুলেও ওই মেয়ে ছুুঁয়েছে তো আপনারে আমি পঁচা পানির নালায় ফেলে দিয়ে আসবো!

নিখিল মুচকি মুচকি হাসলো বলে উঠলো–,,একটু আকটু হাত লাগতেই পারে।

নেহা তেড়ে এসে বললো–,,কি?

বৃষ্টি জেরিন টেনে নিয়ে গেলো নেহা কে।রুমে বসে নেহা ঠোঁট কামড়ে ধরে বসে আছে।টয়া কে কোনো বিশ্বাস নেই!
————
সকালে কান্না”কাটির শব্দে ঘুম ভাঙলো সবার।
নেহা এখনো ঘুমাচ্ছে বৃষ্টি টেনে তুললো ওকে।

–,,আরে ভাই উঠ তোর জামাই নিয়া গেলো ওই দিকে!

নেহা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো!
জেরিন বললো–,,তাড়াতাড়ি চল ড্রামা শুরু হয়ে গেছে। না গেলে শুরুতেই মিস হয়ে যাবে!

তিন জন কোনো রকম দৌড় লাগালো এদিকে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুখে একটু পানি দিতেও ভুলে গেছে নেহা।সাব্বির একপাশে দাড়িয়ে হাই তুলছে জেরিন গিয়ে গুঁতো মারলো–,,এই তাড়াতাড়ি কাহিনি বল।

–,,বইন কদ্দুর রেহাই দে সারারাত খাটের নিচে পর্দার আড়ালে থাকতে থাকতে আমার হাত পা কোমরের নাই নাই অবস্থা আগে এখানের টা দেখ পরে বাকিটা বলতাছি!

টয়ার গায়ে ওড়না চেপে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে রুবি বেগম! টয়া কেঁদেই যাচ্ছে।

বাড়ির বড়রা এসে দাড়িয়েছে ওখানে।রুবি বেগম বলে উঠলো–,,আপনার আর্দশে টইটুম্বুর ছেলে একটা মেয়ের সম্মা’নহানি করেছে!ইজ্জ’তে হাত দিয়েছে,কি শিক্ষা দিয়েছেন ছেলেকে।বউ রেখে আরেক মেয়ের সাথে ছি!ছি!বলতে ও লজ্জা লাগছে।

শাহআলম চৌধুরী দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে কে দেখলো,নিখিল এক মনে ফোন চালাচ্ছে, এসবে কোনো খেয়াল নেই।

শাহআলম চৌধুরী টয়াকে জিজ্ঞেস করলো–,,এসব কি সত্যি টয়া?আমার ছেলে এরকম কিছু করেছে?
শাহআলম চৌধুরী তাকালো নেহা দিক।মেয়েটা না জানি এসব দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

টয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো–,,হ্যাঁ আংকেল।আমি নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু জোর করে,,!
বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো।
টয়ার মা নিখিলের কাছে গিয়ে বললো–,,কেনো করেছিস আমার মেয়ের সাথে এমন।তোকে তো নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতাম আমি নিখিল।কি ক্ষ”তি করেছিলাম আমরা তোর?

হামিদা বেগম মোটেও বিশ্বাস করেন না এসব কথা তবুও নিখিল কেনো কিছু বলছে না বুঝে উঠতে পারলো না!
আইরিন বলে উঠলো–,,নেহা তুই কিছু বলবি না?

নেহা বললো–,,কি বলবো!
আইরিন বললো–,নিখিল ভাই তোর হাসবেন্ড, টয়ার সাথে কি সব করেছে তাও কিছু বলবি না।

নেহা মাথা নাড়িয়ে বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ আমার তো কিছু বলা উচিত!

টয়ার মা নিখিল কে চ”ড় মারতে হাত উঠাতেই নেহা চেঁচিয়ে উঠলো–,, কি করছেন কি?

রুবি বেগম রেগে বলে উঠলো–,, কেমন মেয়ে মানুষ তুমি তোমার মতো বউ থাকতে তোমার স্বামী অন্য মেয়ের কাছে যায়!স্বামীরে কে সু’খ দিতে পারো না!

নেহা বলে উঠলো–,,আন্টি না মানে চ’ড় টা আমার মা”রা উচিত আপনি কেনো কষ্ট করছেন ভুল যেহেতু করেছে আমার স্বামী শা”স্তি ও দিবো আমি!

নিখিলের সামনে গিয়ে নেহা দাড়িয়ে বললো–,,এতো এতো মানুষের সামনে স্বামীর গায়ে হাত তুললে আল্লাহ নারাজ হবে তো আন্টি আমি বরং রুমে গিয়ে মারবো আপনারা শব্দ শুনে বুঝে নিয়েন।

ততক্ষণে বৃষ্টি গিয়ে তার মায়েদের বললো–,,তোমরা এতো ভেবো না এসব হবে আমরা আগে থেকেই জানি, শুধু দেখো কি কি হয়।

নেহা নিখিলের এক হাত টেনে রুমের ভিতর নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।

নিখিল নেহাকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো–,,তুই আমাকে মার’বি নেহা?

–,,অবশ্যই! কাছে আসেন।
নিখিল কাছে আসতেই নেহা নিখিলের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো। নিখিলের দুই গালে দুইটা চুমু দিলো!

নিখিল নেহার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,এভাবে মা’রলে তো আমি সারাজীবন শুধু মা’র খেতেই রাজি বউ!
নেহা বলে উঠলো–,,এবার জোরে দুইটা শব্দ করেন যাতে মনে হয় চ’ড় মেরে’ছি!
ওয়েট।নেহা গিয়ে লিপস্টিক এনে নিখিলের গালে মেখে আঙুলের ছাপ বানালো খিলখিল করে হেসে বললো–,,পার্ফেক্ট!
রুমের ভিতর দুইটা শব্দ হতেই রুবি বেগম হাসলো তার মানে নেহা নিখিল কে ভুল বুঝেছে চ’ড় মে’রেছে!

নিখিল নেহা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বললো–,,এবার আমার পাওনা দিয়ে পরে বাহিরে যা।

নেহা বলে উঠলো–,,দেরি হলে সন্দেহ করবে বের হই চলুন।

নিখিল বললো–,,না।এসবের জন্য রাতে বউ ছাড়া থাকতে হলো আমাকে চুপ করে দাঁড়া মাত্ররো পাঁচ মিনিট!
নেহা আর কিছু বলার আগেই নিখিল নেহার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো।
নেহাকে ছেড়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো–,,চল এবার!

দরজা খুলে নেহা কান্না করতে করতে বের হলো নিখিল পেছন থেকে ডেকে বললো–,,বিশ্বাস কর নেহা এমন কিছু হয়নি!

নেহা ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো সাব্বির জেরিনের সামনে তাদের এমন ভাব নেহাকে সামলাতে হবে!
টয়া,রুবি,রূপার মুখে হাসি তাদের প্ল্যান তবে কাজ করেছে।

বৃষ্টি বলে উঠলো–,,কিরে সত্যি সত্যি কান্না করলি কেমনে?

–,,আসার সময় জগ থেকে পানি দিয়ে এসেছি!

টয়া এবার সুর তুলে বললো—,,আমার এবার কি হবে মা?আমি কি সঠিক বিচার পাবো না!

বড়রা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন!নেহা বলে উঠলো –,,কেনো পাবে না টয়া আপু।
নেহা এক প্রকার দৌড়ে এসে বললো–,,এবার তুমি এমন বিচার পাবে সারাজীবন মনে রাখবে!এসব করার সাহস আর কেউ কোনো দিন পাবে না।

শাহআলম চৌধুরী বললো–,,নিখিল তুই কিছু বলছিস না কেনো?

–,,পুলিশ এসে বলবে আব্বু এই এলো বলে!

টয়া বলে উঠলো–,,পুলিশের কি দরকার?আপনি আমার এই অবস্থা করেছন এখন বিয়ে করেন!

নেহা চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ পুলিশের সাথে সাথে কাজি ও ডাকাও!এরা বিয়ে করে জেলে বসে সংসার করবে।

এবার নিখিল ঠোঁটে দাঁত কামড়ে হেসে ফেললো!তার বউটা কি অভিনয় টাই না করছে!
চলবে?

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২৬
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বসার ঘরে উপস্থিত সবাই।থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছেন বড়রা।কি থেকে কি হলো কিছুই যেনো বোধগম্য হলো না কারোর।টয়া বার বার বলছে নিখিল তার সাথে খারা’প কিছু করেছে কিন্তু নিখিল এখনো নিশ্চুপ সে বিরো”ধীতাও করছে না আবার মেনেও নিচ্ছে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় এসআই উপস্থিত হলো।নিখিলের বড় মামার পরিচিত ভদ্রলোক। এসেই কুশল বিনিময় করলো!
মধ্য বয়স্ক পুলিশ অফিসার কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো–,,আসলে আলাউদ্দিন সাহেব আপনার ভাগনে হঠাৎ ফোন দিয়ে বললো জরুরি কিছু কাজ আছে যাতে আমি নিজেই একবার আসি!
বলুন এবার কি হয়েছে!
সবাই উৎসুক দৃষ্টি রাখলো নিখিলের উপর।টয়া এবার কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।নিখিল কি তবে সব জেনে গেলো কিন্তু প্রমান করবে কি করে।কিছুতেই নিজেকে দুর্বল দেখানো যাবে না!

নিখিল বলে উঠলো–,,আমার ওয়াইফ কে মা’রার চেষ্টা আর মানহা’নীর কেইস করতে চাই আমি অফিসার!

পর পর চ’মকে উঠলো সবাই।রুবি বেগম এবার ভয় পেলেন কম কিছুতো করেননি এই পর্যন্ত তবুও রূপার বাবা আলাউদ্দিন ভাইয়ের কথায় তাকে শেষ সুযোগ দিয়েছিলো আবার মেয়ের কেলে”ঙ্কারির কথা জানলে তো বাড়ি থেকেই বের করে দিবে!

–,,কার নামে এই মাম’লা করতে চান আপনি?

নিখিল বলে উঠলো–,,টয়া ও তার দুই সহকারী রুবি বেগম আর তার মেয়ে রূপার নামে!

রুবি বেগম তেতে উঠে বললেন–,, কি যা তা বলছো নিখিল,আমরা কি করেছি উল্টো তো আমাদের তোমার নামে এসব কে”ইস করা উচিত!
টয়া আবার কেঁদে উঠলো নিখিলের খালা রুনা বেগম রেগে বলে উঠলো–,,নিখিল বারাবারি করবি না।আমার মেয়ের সাথে এতো কিছু করে এখন আমার মেয়ের নামে মা’মলা দিতে চাচ্ছিস?তোর নামে আমি ধর্ষ”নের মা’মলা দিবো!

টয়া কেঁদে কেটে এসে নিখিল কে ধরে বলে–,,নিখিল তুমি আমাকে বিয়ে করার বদলে এখন পুলিশে দিতে চাচ্ছো?
নেহার দিকে এগিয়ে এসে বললো–,,তুমি তো বলেছিলে আমার পাশে থাকবে, একটা মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের পাশো থাকবে না তুমি?

নেহা এসে ঠা’স ঠা’স করে পর পর চারটা চ’ড় মারলো!
রাগে চেঁচিয়ে বললো–,,তোকে বলেছিলাম না আমার আর আমার স্বামীর থেকে দূরে থাকবি।তুই এতো বেহা’য়া নির্লজ্জ যে একজন বিবাহিত পুরুষের দিক নজর দেস!তোকে কতো বার নিখিল না করেছে তুই তার পরেও বার বার আমাদের মাঝে চলে এসেছিস।

রুনা বেগম চেঁচিয়ে বললো–,,আমার মেয়েকে এতো কিছু বলছো কোন সাহসে?নিজের স্বামীকে ঠিক রাখতে পারোনি?

–,,ওই একদম চুপ থাকবেন বলে দিচ্ছি!এমন বেহা”য়া মেয়ে জন্ম দেওয়ার আগে আপনার ম’রে যাওয়া উচিত ছিলো আগের বার শুধু আত্মীয়তা রক্ষার্থে আপনার গুনবতী মেয়ের কার্যকলাপ আপনাকে জানানো হয়নি কিন্তু কে জানতো আপনি আর আপনার স্বামী সন্তান জন্ম ঠিকই দিয়েছেন মানুষ করতে পারেননি।একটা অমা’নুষ জন্ম দিয়েছেন।নেহা হামিদা বেগমের দিক তাকিয়ে বললো–,,বড় মা তোমার ছেলের দিক আঙুল তুলছে এ মহিলা আজও কিছু বলবে না?

হামিদা বেগম বোনের দিক তিক্ত চোখে তাকালো বিরক্তি নিয়ে বললো কয়েক মাস আগের সব ঘটনা।
টয়ার মা এবার মেয়ের দিক তাকালো সন্দেহের দৃষ্টিতে।

নেহা আবার বলে উঠলো–,,মেয়ে কেনো দিনের পর দিন অন্যের বাড়িতে গিয়ে পড়ে থাকে তা তো খেয়াল রাখেন না।আন্টি অন্যের দিক আঙুল তোলা অনেক সহজ।তবে ভুলে যাবেন না অন্যের দিক এক আঙুল তুললে বাকি চারটা আঙুল নিজের দিকে উঠে!
আপনার মেয়ের নামে এসব কথা প্রমান ছাড়া বলছি না।প্রমান আছে দেখেই বলছি,নিজের মেয়ের কু’কাজ দেখে আবার বেহুঁ”শ হয়ে যাবেন না!কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলুন।আর যদি কোনো প্রমান না ও থাকতো তাও আমি আমার স্বামী কেই বিশ্বাস করতাম।আমার স্বামী যথেষ্ট ভদ্র, মার্জিত চরিত্রবান একজন মানুষ! আপনাদের কারো কথায় আমি তার চরি’ত্র বিচার করি না।আমি তাকে চিনি বিশ্বাস করি!
একশো টা মেয়ের সামনে তাকে ছেড়ে দিলেও কোনো দিন চোখে তুলে তাকাবে না।বিশ্বাস আছে দেখেই স্বামীকে বেঁধে রাখতে হয় না!
আপনার মেয়ে কে যদি একটু বেঁধে রাখতেন, নিজের সম্মান কিভাবে বাঁচাতে হয় শিখাতেন তবে আজ এই দিন দেখা লাগতো না।

প্রশান্তি তে ছেয়ে গেলো নিখিলের মন!নেহা তাকে এতোটা বিশ্বাস করে,মেয়েটা তাকে কতোটা ভালোবাসলে কতোটা সম্মান করলে এই রকম একটা পরিস্থিতিতেও তার হয়ে সবার সাথে ল’ড়াই করতে পারে!এতোটা ও কি প্রাপ্য ছিলো নিখিলের?নেহাকে কি কখনো ওতোটা ভালোবাসতে পারতো নিখিল,এরকম পরিস্থিতিতে নেহাকে বিশ্বাস করতো বিনা বাক্যে!হয়তো নেহার মতো পারতো না।নিখিলের আজ কেনো যেনো চোখ জলে চিক চিক করে উঠলো,পুরুষ মানুষ তো লোক সম্মুখে কাঁদে না!

নিখিল সাব্বিরের আর জেরিনের কাছে ফোন চাইলো।দুজন এগিয়ে দিতেই।ভিডিও গুলো পুলিশের সামনে তুলে ধরলো নিখিল!
একে একে বাড়ির সবাই দেখলো।রাগে লজ্জায় মাথা কা’টা গেলো সবার,টয়া নিজের পোশাক নিজে টেনে ছিঁড়েছে ঘরে ঢুকা থেকে শুরু করে সব জায়গায় রুবি বেগম রূপা তার সাথে ছিলো!সব কিছু দেখে টয়ার বাবা মা লজ্জায় মাথা নিচু করলেন।কতোই না গলা বাজি করেছে এই মেয়ের জন্য একবার ও নিজের বাবা মায়ের কথা ভাবলো না?সত্যি নেহার কথাই সত্যি ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তারা সন্তান মানুষ করতে পারেনি।মাফ চাওয়ার মুখটাও যেনো রইলো না।টয়ার বাবা আনসার সাহেব বললেন

–,,ইন্সপেক্টর কঠিন থেকে কঠিন শা”স্তি দিবেন এই কুলা’ঙ্গার টাকে।যাতে পরবর্তী এসব কথা মাথায় ও না আসে।
পরিবারের সবার দিকে তাকিয়ে বললো–,,পারলে মাফ করবেনে এই অভাগা বাবা কে,নিখিল বাবা মা’ফ চাওয়ার মুখ নেই জানি তবুও!

বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক, টয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো,কি করে ফেললো এটা নিখিল তো একটা মরিচীকা তার পিছনে ছুটতে গিয়ে আজ সব হারিয়ে ফেললো! বাবা মা তাকে কোনো দিন ক্ষমা করবে না কাছে টেনে নিবে না।নিজের জীবন টা এভাবে ন’ষ্ট করে ফেললো?ভেবেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।

নিখিলের মেজো মামা মোশারফ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো–,,বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।ভাইজান আজকে আমাকে বাঁধা দিবেন না দয়া করে,এই মহিলা আমার মান সম্মান সব শেষ করেছে জীবনের সুখ শান্তি কেঁ’ড়ে নিয়েছে, একে বিয়ে করাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল মেয়েটা কে ও নিজের মতো বানিয়েছে।এরকম চরিত্র”হীনা কন্যা,স্ত্রীর দরকার নেই আমার!ওরা এই বাড়িতে থাকলে বাড়ি আমি ছেড়ে দিবো!

মহিলা কনস্টেবল এগিয়ে এসে টয়া সহ বাকিদের নিয়ে গেলো।টয়া যাওয়ার আগে একটু সময় চাইলো।

নেহার সামনে হাত জোর করে বললো–,,আমাকে ক্ষমা করে দিও নেহা সত্যি আমি অপ”রাধী।অন্যা”য় করেছি আমি জে’দে বসে ভুল করে ফেলেছি।আমার বাবা মায়ের কোনো দোষ নেই তাদের কে কথা শুনিয়ো না প্লিজ!আমি আর কোনো দিন ফিরে আসবো না,কথা দিচ্ছি নিজেকে পরিবর্তন করে নতুন ভাবে বাঁচবো! নিজের সম্মান আবার অর্জন করবো যদিও বা সম্মান দ্বিতীয় বার ফিরে পাওয়া বহু তপস্যার!
টয়া সহ বাকিদের নিয়ে বের হলেন পুলিশ অফিসার।

শাহআলম চৌধুরী বলে উঠলো–,,আমরা আজই ফিরবো,মন মেজা’জ ভালো নেই আলাউদ্দিন ভাই,ছেলের বিয়ে তো হলো এবার ফিরে যাবো আবার আসবো ছুটিতে।সৌরভ আর বউমা কে পাঠিয়ো!

আলাউদ্দিন মাহমুদা কোন মুখে থাকতে বলবেন বুঝলেন না!যা হলো পরিবারের কারোই মন স্থির নেই,তবুও ছেলের বিয়ে বউভাতের অনুষ্ঠান দিন বাদে কাল মহা আয়োজন। সব বিষন্নতা ভুলে জীবন তো এগিয়ে নিতে হবেই এটাই তো জীবনের নিয়ম।কোনো কিছুই থেমে থাকে না কারো অপেক্ষায়!
বিকেলেই বেড়িয়ে পড়লো নিখলদের পরিবার।সকাল নাগাদ পৌঁছে যাবে তারা।আপন নিড়ে!
————–
নতুন ভোর নতুন সূচনা কালো অধ্যায় গুলো আমরা ফেলে আসি ভাবি এইতো নিশ্চিন্ত। তবে কি তাই?জীবন মানেই আসবে নতুন মোড় নতুন সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা,ভালোলাগা কিংবা তীব্র বিষাদের নিদারুণ য”ন্ত্রণা!তবুও মানুষ বাঁচে খড়কুটো কে আঁকড়ে ধরে হলেও বাঁচে।জীবন মানেই নতুন সংগ্রাগ নয়া দিগন্তে ছুটে চলা বিরতিহীন!মৃত্যু ছাড়া যার থামার পথ নেই!

বাড়িতে ফিরে এসেছে তারা সেতারা বেগম সাথে যায়নি।বাড়িতে ফোন দিয়ে খোঁজ নেওয়া হলেও চোখের দেখা আর দূর থেকে খবর নেওয়ার মাঝে বিস্তর ফারাক।

পর পর নেহাকে ডেকেই যাচ্ছে নিখিল।
নেহা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো –,, আর একটু ঘুমাই না প্লিজ!

—,,রুমে গিয়ে যত খুশি ঘুমাবি এখন চল না! দেখ বাড়ি এসে গেছি আমরা।

নেহা আরো আঁকড়ে ধরলো নিখিল কে।নিখিল এবার নেহাকে ঠেলে সরিয়ে নিজে নামলো গাড়ি থেকে সবাই বাড়িতে চলে গেছে তার বউটা ও হয়েছে একটা নড়তে চড়তে বারো মাস লাগে মহিলার।

নেহা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,ওই ব্যাটা বউ রেখে কই যাস!মায়া দয়া কি কিছু নাই নাকি?

নিখিল গাড়ির দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললো–,,তার মানে এতোক্ষণ ইচ্ছে করে ঘুমের ভান ধরছিলি?

নেহা ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়লো।
নেহা দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো–,,কোলে নে না চাচাতো ভাই!

–,,কিহ্! আমি তোর কতো বড় আর তুই, তুই করে বলছিস?আবার কি বললি চাচাতো ভাই কানের গোড়ায় দিবো একটা?

–,,সবার সামনে তো বলিনি আচ্ছা কয়েক মিনিট পর আবার বলবো।আপনি বলতে পারলে আমি কেনো পারবো না নিজে আগে তুমি করে বলেন পরে আমিও আপনি করে বলবো।

নিখিল চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,তোকে এখন তুমি করে বলতে হবে।এ্যাহ কি সখ জাগছে মহারানীর!

নেহা নাক ফুলিয়ে বলে উঠলো–,,ডাকতে হবে না আপনার,সরুন তো সামনে থেকে।

–,,ওও বউ রাগ করেছো?আসো বেবি কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি তাও রাগ করে না জান!

–,,আপনার কোলে উঠার কোনে ইচ্ছাই আমার নাই।

নেহা রেগ মেগে চলে গেলো,সাব্বির পানি নিতে নিচে আসছিলো,নেহা কে আগে নিখিল কে পিছনে যেতে দেখেই বলে উঠলো–,,আসতে না আসতেই আবার ঝ’গড়া!

নিখিল বললো–,,বিয়ে কর বুঝবি!

নেহা রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলো।ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার সময় দেখলো নিখিল দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নেহা মুখ ভেংচি কেটে পাশ কাটাতে গেলে নিখিল এক টানে নেহাকে কোলে তুলে নিলো।কোলে তুলেই মুখ গুঁজে দিলো গলায় নিখিলের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি লাগতেই নেহা খিলখিল করে হেসে উঠলো নিখিলের পিঠে মার’তে মার’তে বললো–,,নিখিল সরুন না আমার সুরসুরি লাগছে!

–,,জান আদর করবো, নো বক বক!

–,,ছাড়ুন বলছি।আপনার আদর নিবো না আমি!

–,,তোর ইচ্ছে না হলে নিবি না।তাই বলে কি আমি দেওয়া ছেড়ে দিবো নাকি?
আজকে তোকে কোল থেকেই নামাবো না।কোলে বসিয়ে রাখবো আর চুমু খাবো!

–,,না,,,!

নিখিল নেহাকে কোলে নিয়ে গেলো বারান্দায়।বসে পড়লো দেয়ালে হেলান দিয়ে।নেহা এবার গলা জড়িয়ে বসে রইলো।
নিখিল বলে উঠলো–,,যদি টয়ার সাথে সত্যি সত্যি কিছু করতাম?এতো অন্ধ বিশ্বাস করা কি ঠিক?

–,,নিজের বউয়ের দিকই তো তাকান না আবার অন্য মেয়ে।আমি দেখে আপনাকে পাত্তা দেই অন্য কেউ তো তাকাবেই না,কি না আমার চেহারা আবার নাম রাখছে নিখিল মেহমেত চৌধুরী!

—,,নেহা শোন না দুষ্টুমি করবি না,এটা গুরুত্বপূর্ণ কথা!টয়া,,,

নেহা কানে হাত দিয়ে বললো–,,লা লা লালা,হু হা পে পে আমি কিছু শুনবো না টয়ার নাম ও নিবেন না এসব কিছু শুনতে চাই না আমি। আমাদের মাঝে কেউ আসবে না বুঝেছেন আমি আসতে দিবো না!

—,,ভালোবাসিস তবুও বলছিস না কেনো?বলনা একবার!

নেহা হেসে বলে–,,বলবো না।যা পারেন করেন!

–,,তাই না বলবি না তুই?দেখি কিভাবে না বলে থাকতে পারিস!
নিখিল নেহা কে কাতুকুতু দিতে থাকে।নেহা হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ে তার পর ও বলে–,,বলবো না বলবো না!
——————
ভার্সিটি এসেছে আজ সাব্বির জেরিন।সাব্বির হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে উঠে –,,ওই দেখ চশমাওয়ালা! এদিকেই আসছে মনে হয় তোকে অনেক মিস করছে রে জেরিন বইন।এবার প্রোপোজ টোপোজ না করে বসে।আমি তো সুপার এক্সাইটেড বইন!অবশেষে কানা দুলাভাইয়ের আগমন পঁচা গোলাপের স্বাগতম।
চলবে?