#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
জীবনের গতিধারা বহমান। সময়ের সীমারেখায় মানুষ বরাবরই পরাজিত হয়,সময়ের সাথে পেড়ে উঠা সাধারণ মানুষের সাধ্য কেথায়!
অনেক গুলো দিন পাড় হয়েছে ইতিমধ্যে, সম্পর্কে নিস্তব্ধ ফাটল ধরেছে,মন থেকে মনের দুরত্ব বেড়েছে।সম্পর্ক গুলো নতুন রূপে সেজেছে,এক ডাকবাক্স ছেড়ে অন্য ডাকবাক্সে চিঠি ফেলার মতো ভুল করেছে!তবুও জীবন থেমে নেই চলছে আপন গতিতে।
রোজকার মতো আজ ভার্সিটি যাচ্ছে সাব্বির সাথে নেই তার চিরপরিচিত সেই মানুষটি।সাব্বির ইচ্ছে করেই মানুষটিকে এরিয়ে চলছে।যে পাখি যাওয়ার সে তো যাবেই,তবে কেমন এক শূন্যতা কাজ করে কি এক অদ্ভুত রকম অনুভূতির জালে ফেঁ’সে যায় রোজ।এই অনুভূতি কেনো এতো অচেনা?কেনো এরকম বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো তার মন?এতো এতো প্রশ্ন জাগে মনে উত্তর তো মিলে না,এই তিক্ত নিদারুণ বিরক্তির কারন কি কোনো দিন জানতে পারবে সাব্বির?নাকি সব কিছুই থেকে যাবে অজানা কোনো এক প্রহেলিকা হয়ে!বন্ধু হারিয়ে গেলেও বুঝি মানুষ এতোটা হৃদ’য় যন্ত্র”ণায় ভুগে?চিন চিনে এক ব্যাথা অনুভব হয় বুকে?সব কিছু জুড়ে হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে একটা মানুষের শূন্যতায়?
কেনো নিজেকে এতো শূন্য লাগে হাজারো ভীড়ে একলা লাগে!
কতো শতো চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে আছে সাব্বির,একজন যে তাকে গলা ফাটিয়ে তাকে ডাকছে সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ যেনো নেই।
জেরিন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সাব্বির হাত ধরে টেনে ওকে দাঁড় করালো।
সাব্বির হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নেয় সহসা!সাব্বিরের চঞ্চলতা দিন দিন কমে গেছে,সব সময় হাসতে থাকা অন্যকে হাসাতে থাকা ছেলেটা চুপসে গেছে যেনো সবার চোখের আড়ালে।নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার মতো যেনো কাউকে পাচ্ছেই না!
–,,কিরে কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাস না নাকি?মনোযোগ কই থাকে তোর?
–,,তুই এখানে?স্যার আসেনি তোকে নিতে?
জেরিনের মুখটা চুপসে গেলো তা দেখে সাব্বির বলে উঠলো–,,ঝ’গড়া করেছিস?
–,,না!তেমন কিছু না,কয়েক দিন হলো বুঝতে পারছি নিরব কেমন এরিয়ে চলছে আমাকে,কথায় কথায় রেগে যায়।নিতে আসলে নাকি তার সময় বেশি ব্যয় হয়,সে তো একটা কাজ করে তা রেখে আসতে পারবে না!একা একাই যেতে বলেছে।তিন দিন ধরেই তো আসে না।
সাব্বির ছোট করে বললো–,,ওহ!
কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে–,,তাই বুঝি আমার কথা মনে পড়লো?এখন একা যেতে হবে দেখে আমাকে সঙ্গী বানাচ্ছিস?
–,,আমার উপর রেগে আছিস তুই?
–,,রাগ করবো কেনো?তা আমার সাথে দেখলে নিরব বুঝি রাগ করবে না?তোদের সম্পর্কে এর প্রভাব পড়তে পারে তার থেকে ভালো তোকে রিকশা করে দেই তুই চলে যা!
–,,আমার সাথে যেতে তোর সমস্যা বলতেই পারিস!তোরা সবাই আমাকে এরিয়ে চলিস এখন,আমার খারাপ লাগে না নাকি?শুধু অনুভূতি, রাগ, অভিমান তো তোদেরই আছে!নিরব টার সাথে বিয়ে ঠিক না হলেই ভালো ছিলো,ছেলেটা অভ্যাস বানিয়ে দিয়ে এখন ইগনোর করছে।
–,,স্যার তৈরি করলো সামান্য কয়েকদিনের অভ্যাস,আর কেউ একজন তেইশ বছরের অভ্যাসে অভ্যস্ত করে মাঝপথে ছেড়ে চলে গেছে!ভাব একবার তোর বেশি কষ্ট নাকি সে মানুষটার?
–,,কয়েকদিন পর তো চলেই যাবো এখন তোরা ও আমাকে এভাবে পর করে দিবি?আগের মতো কথা বলবি না আমার সাথে?নিরব না হয় বাহিরের মানুষ কিন্তু তোরা?
সাব্বির জেরিনের মাথায় একটা মেরে বললো–,,গা’ভীদের মাথায় বুদ্ধি একটু কমই থাকে!নিরব কে তুই পাত্তা দিতি তাই তোর সাথে এমন করার সাহস পেয়েছে,প্রথম থেকে যদি একটু ভাব নিয়ে চলতি,নিজেকে একটু বেশি প্রাধান্য দিতি তো তোর সাথে এরকম করার আগে কয়েকবার ভাবতো নিরব।মনে রাখবি দুনিয়া উল্টে গেলেও নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কিছু পাওয়ার চেষ্টা করবি না।যা তোর তা তুই যেকোনো মূল্য পাবি,কিন্তু যা তোর নয় তা হাজার চেষ্টা করেও পাবি না!নিরব তোকে পেয়ে বসেছে,নিজেকে ওর সামনে দুর্বল বানিয়েছিস তুই তাই এখন তোকে ভাঙ্গতে চাইছে।
বিয়ে বা অন্য যেকোনো সম্পর্ক দুজন মানুষের সমান গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে টিকে থাকে।একজন শুধু দিয়েই যাবে অন্য জন শুধু ভোগ করে যাবে এরকমটা হওয়া কখনো উচিত না।তোরা দুজন পরবর্তীতে সারাজীবন এক সাথে থাকবি,যদি তুই নিজেকে নিজে সম্মান না দিস সম্মানস পাওয়ার যোগ্য না করিস তো অন্য জন ও দিবে না।নিরব কে ও বুঝা তুই ও কম গুরুত্বপূর্ণ না।না বুঝলে বুঝিয়ে বলবি,এখন ও সময় আছে।বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিবি আমরা আগেও তোর পাশে ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকবো নিজেকে একা ভাবনি না কখনো!
জেরিন খুশিতে সাব্বিরের হাত চেপে ধরে বলে –,,তুই কতো ভালো সাব্বিরা কিন্তু বুঝলাম না ওই শা’লা নিরবের তোকে নিয়ে এতো কি সমস্যা, মন টা চায় মাথা ফা’টিয়ে দেই,এতোদিন কি সাধে কথা বলেছি এটার সাথে,এখন তো মনে হচ্ছে কি কি কথা হয়েছে তোদের কেও শুনালে ভালো হতো,কথায় কথায় ইমোশনাল ব্লাক’মেইল করতো।এমন ভাবে কথা বলতো যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না!বলতো তুমি তো সব শেয়ার কতো ভাই বোনদের, আমাদের ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করবা?এটা কেমন নিচু মানের কাজ!
–,,তুই কি চাস আমাদের সাথে আবার বন্ধুত্ব করতে?তুই নিশ্চিত তো?মনে রাখিস একবার আসলে কিন্তু সারাজীবন থাকতে হবে!
–,,কতোগুলো দিন খুবই বিরক্তিতে কেটেছে আমার।বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত একটু শান্তি পেতে চাই,প্রাণ খুলে আগের মতো হাসতে চাই।জানিস কোথাও যেনো কিছু একটা নেই জীবনে, খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা নেই মনে হয়!নিরবের সাথে এতো দিন কথা বলতাম ও আমাকে স্পেশাল ফিল করাতে চাইতো,সবচেয়ে উপরে রাখতো প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও দিন শেষে কেনো জানি আমি মন থেকে হাসতে পারিনি,তোদের ছাড়া দূরে কোথাও গিয়ে কি আমি আদো ভালো থাকবো?এরকম প্রশ্নই শুধু মনে আসে বার বার!
–,,এ্যাহ আসছে,বিয়ের পর কি তোর ওই কানা জামাই কে ঘর জামাই রাখবো নাকি আমরা।তবে আমরা তোর মন ভালো করতে যেতেই পারি কিন্তু তোর জামাই তো আর আমাকে দু চক্ষে দেখতে পারে না!
–,,বাদ দে তো বিয়ের আগে আর এটাকে মাঝে আনিস না এখন সব বিরক্ত লাগছে আমার!
–,,নাক কম ফুলা তুই দেখতে এমনিতেই পে’ত্নীর মতো,এখন পুরা শাঁক”চুন্নি লাগতাছে!
জেরিন রেগে সাব্বির কে রেখে জোরে হাঁটতে থাকে।সাব্বির দূর থেকে বলে উঠে–,,জেরিন দেখ দেখ সামনে কালা কু’ত্তা!
জেরিন চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে যেভাবে পেরেছে দৌড়ে সাব্বিরের কাছে চলে আছে পেছনে লুকিয়ে গিয়ে বলে–,,ক…কই কুকুর!
সাব্বির হু হা করে হেসে দেয়–,,জেরিন তুই কি কোনো কিছু না দেখেই এভাবে চিৎকার করেছিস?যদি সত্যি সত্যি থাকতো তখন তো বেহুঁ”শ হইয়া মাঝরাস্তায় পইড়া থাকতি!আজকে বাসায় গিয়েই নেহা আর বৃষ্টি কে বলতে হবে তুই অদৃশ্য কু’ত্তার দৌড়ানি খেয়েছিস!
জেরিন সাব্বিরের সাথে মারা’মারি করছে,দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ভার্সিটি গিয়ে পৌঁছালো দুজন।বেশ অনেক দিন পর দুজন কে একসাথে দেখে তাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই বলে উঠলো–,,কিরে জোড়া শালিক তাহলে আবার একসাথে?এতোদিন কি হয়েছিলো?
জেরিন রেগে বলে উঠলো–,,তোদের মাথায় সমস্যা হয়ে ছিলো!কেমনে অন্যের পিছনে লাগবি এটা ছাড়া কিছু পারিস নাকি।
তিন্নি নামক মেয়েটি এসে বললো–,,বাপরে তুই তো দেখছি আবার আগের রূপে ফিরে এসেছিস?নাকি সাব্বিরের সাথে থাকলে তোর সাহস বেড়ে আকাশে পৌঁছে যায়!কতো কিছু দেখতে হবে জীবনে।
সাব্বিরের মেজাজ খারাপ হলো বলে উঠলো –,,এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার?ওর পিছনে লাগছো কেনো,নিজের কাজ করো গিয়ে!
মেয়েটা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,ছেলেদের এতো ভাব নিয়ে থাকলে চলে না,এখন সবাই তোমাকে পাত্তা দিতে চাইছে আর তুমি তো কোনো মেয়েকে পাত্তাই দেও না।বুঝলে সময় থাকতে কোনো একজনকে পছন্দ করো না হয় কিছুই পাবে না শেষে!
–,,না পেলে নাই!জীবনে বিয়ে করবো না ঠিক করেছি।তোমার সাজেশন নিতে চাই না আমি কারন মেয়েদের বিরক্ত লাগে আমার,সবাই শুধু চকচকে জিনিসই খুঁজে পকেট ফাঁকা, বেকার ছেলের প্রেমিকা সবাই হতে চায় না আবার যারা হতে চায় তারা বউ হওয়ার সময় আসলেই হাত ছেড়ে দেয়।তার থেকে ভালো একাই থাকবো কাউকে দরকার নেই আমার!
———–
নিরব তুই নিখিলের সাথে বিশ্বাসঘা”তকতা কেনো করলি?তোর তো ভালো বন্ধু ছিলো!
নিরব তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো–,,কিসের ভালো বন্ধু? ওর জন্য ভার্সিটিতে কতো অপমা’ন অপদ’স্ত হতে হয়েছিলো আমাকে কিছুই ভুলিনি আমি।অপ’মানের বদলা তো নিবোই আমি!
সাহিল হেসে বললো–,,তাই তো তোকে কাজে নিয়েছি! তা কতদূর কাজ?
নিরব হেসে বললো–,,মেয়েটা ভীষণ রকম বোকা,এতো সহজে ফাঁ”দে পা দিয়ে দিলো।প্ল্যান মতো এখন থেকেই এরিয়ে চলছি। তোর কথা শুনতে গিয়ে এদিকে আমার গালফ্রেন্ড ভেগে যাওয়ার উপক্রম!
–,,মনে আছে তো পরে কি করতে হবে?বিয়ের কিন্তু আর পাঁচদিন বাকি!
–,,কিসের বিয়ে আমি তো বিয়ে করতে যাবোই না।নিখিল আর তার পরিবার কে অপমানিত হতে দেখবো এর থেকে শান্তির আর কি আছে!
সাহিল বক্র হেসে বললো–,,ওই শাহআলম চৌধুরী আমার মাকে সবার সামনে অপমা”নিত করেছে,বিয়ে করে ফেলে চলে গেছে,কোনো দিন আমার খোঁজ নেয়নি আমার মায়ের খোঁজ নেয়নি, ওর সম্মান যদি আমি সবার সামনে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে না মিশিয়ে দেই তো আমার নাম সাহিল না!
পেছন থেকে ইলিয়াস খান বলে উঠলো–,,সাব্বাশ!এই না হলে আমার ভাগনে!
–,,মামা তোমায় কথা দিয়েছিলাম।কথা রেখেছি আমি, এবার শুধু পরিণাম দেখার পালা তুমি খুশি তো?
–,,অনেক খুশি। আজ আমার বোনের আ”ত্নাও শান্তি পাবে!
————–
বাড়িতে ফিরে এসে জেরিনের কান্ড নেহা, বৃষ্টি, রৌফের সামনে বলতেই তার পর থেকে সবাই মিলে জেরিন কে পচানি দিচ্ছে।কতোদিন পর তারা একসাথে আবার হয়েছে কিন্তু মনেই হচ্ছে না এদের মধ্যে এক ঘন্টা আগেও কতো অভিমান জমা ছিলো,একে অন্যের প্রতি একরাশ অভিযোগ পুষে রেখেছিলো,কিন্তু এই তো মুহুর্তেই যেনো সব ধোঁয়াসা কেটে গেছে,ঝলমলে রোদের ন্যায় সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে!
ছেলেমেয়েদের আবার আগের মতো হাসতে দেখে যেনো বাবা মায়েরাও খুশি।
———–
চৌধুরী বাড়ি আজ সেজেছে রঙিন সব লাল নিল বাতিতে।আত্নীয় স্বজনে ভরে উঠেছে সব গুলো ঘর!
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছে ছোটরা।ছাদের উপর সবাই হাসি আড্ডায় মজেছে।জেরিনের পাশে বসে ফোন চালাচ্ছে সাব্বির।নেহা, বৃষ্টি সেজেগুজে হাজির।বিরস মুখে জেরিন বসে।
তাকে হাসানোর চেষ্টায় ব্যর্থ নেহা আর বৃষ্টি।বড়রা আসলো হলুদ ছোঁয়াতে সেই যে জেরিনের কান্না শুরু হলো এখন পর্যন্ত ফুপিয়েই চলেছে, একের পর এক টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছে সাব্বির আর বলছে–,,ভালো করে কেঁদে নে বইন!টিস্যুর চিন্তা করবিই না অনেক গুলো প্যাকেট অর্ডার দিয়েছি এটা আমার পক্ষ থেকে তোর বিয়ের গিফট। এমনিতেই জেরিন কাঁদছে তার উপর সাব্বিরের এমন কথায় কান্না যেনো বাড়ছে মেয়েটার।
নেহা,বৃষ্টি ধ’মকে বললো–,,থামবে ভাইয়া!কি শুরু করেছো হ্যাঁ।
নিখিল,মিহিরের ঘাড়ে পড়েছে সব কাজের ভার।তাদের তো ফুরসৎই মিলছে না একটু দেখা দেওয়ার।
সাব্বির বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই পে”ত্নী থামবি তুই?মনে হচ্ছে তোকে একবারে তাড়িয়ে দিচ্ছি কাল তো তোর সাথে আমরাও যাবো তাও ফ্যাচ ফ্যাচ লাগিয়ে রেখেছিস!বড় মা,মা,ছোট মা ও কাঁদছে সমান তালে। চারজনের কান্নায় তো বন্যা হয়ে যাবে এখন!
জেরিন সাব্বির কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললো–,,আমি বিয়ে করবো না।তোদের কে ছেড়ে যাবো না।ওখানে থাকতে পারবো না আমি!
নেহা, বৃষ্টি, রৌফ এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো জেরিন কে।অশ্রুসিক্ত হলো সবার আঁখি!
জেরিন ফুপিয়ে উঠে বললো–,,আমি তোদের কে অনেক মিস করবো!অনেক অনেক বেশি।
সাব্বির জেরিনের মাথায় হাত রেখে বলে–,,বড় হয়ে এভাবে কাঁদছিস জেরিন সবাই তাকিয়ে আছে দেখ।যখন আমাদের মনে পড়বে তখনই ডাকবি আমরা চলে যাবো না হয় তুই চলে আসবি।নিরব টা মাঝে আসলে ওটাকে ও বেঁধে নিয়ে আসবো!
জেরিন হেসে ফেললো বলে উঠলো–,,, তোকে তখন তোকে ছেলেধরা ভেবে জে’লে ভরে দিবে মানুষ!
–,,দিলে দিবে।তবুও আমি আমার জেরিনের চোখে পানি দেখতে চাই না।তার মুখে হাসি ফুটাতে আমরা সব করতে পারি!
নেহা, বৃষ্টি, রৌফ ও মাথা নাড়লো তারা তাদের জেরিন আপুর জন্য সব করতে পারে!
————–
সকাল থেকে ব্যস্ততায় কাটছে সবার।হামিদা বেগম মেয়ের সাথে ছিলেন এতোক্ষণ, মেয়েটাকে আজ বিদায় দিতে হবে ভেবেই তার হৃদ”য়টা ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে শক্ত করে রেখেছেন।না হয় মেয়েটা কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিবে!রাত থেকে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
জেরিনের নানা বাড়ি থেকে তার মামারা এসেছে। ছোটরা এসেছে শুধু,বাকিরা আসেনি।আশেপাশের প্রতিবেশিদের দাওয়াত করেছেন শাহআলম চৌধুরী সবাই ইতিমধ্যে চলে এসেছে।
খুশি মনে জেরিন কে সাজাতে ব্যস্ত বোনেরা।লাল কমলার মিশ্রনে লেহেঙ্গাটায় ভীষণ মানিয়েছে মেয়েটা কে।কানে সজ্জিত সোনালী ঝুমকা গুলো ঝকঝক করছে। বউ রূপে অসাধারণ লাগছে জেরিন কে,মুগ্ধ চোখে দেখলো নিখিল নিজের বোনকে,আজ ছোট জেরিন টার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! পরের বাড়িতে চলে যাবে তার আদরের মনিটা।নিখিল দরজা থেকে সরে যেতেই নেহা রুম থেকে বেড়িয়ে তার পেছনে গেলো।
নিখিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,নেহা গিয়ে কাঁধে হাত রাখতেই পেছন ফিরলো না মানুষ টা, নেহা হাতের ফাঁক দিয়ে ঢুকে সামনে গেলো নিখিলের চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে।
নেহা ডাকলো–,,নিখিল আপনার কি মন খারাপ?আপু চলে যাবে তাই কষ্ট পাচ্ছেন আপনি?
নিখিল কথা বললো না নেহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে।নেহা দু হাতে আগলে নিলো তাকে,শক্ত মানুষ গুলোও কখনো কখনো খুব বা’জে ভাবে ভেঙ্গে পড়ে নিজেদের শক্ত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে নরম কোনো স্বত্তায়!
——-
জেরিনের রুমে আসলো একে একে তাহমিদা,সাহারা, হামিদা বেগম।মেয়ে কে দেখলেন মুগ্ধ চোখে!চোখ ভরে আসলো সবার।
সাব্বির এসে বললো–,,তোমরা কি এখানেই থাকবে নাকি?বর আসার সময় হয়ে এসেছে বড় আব্বু তোমাদের ডাকছে নিচে।
ওনারা যেতেই সাব্বির বলে উঠলো–,,বাহ্ বাহ্ জেরিন বইন আজকে তো তোকে পে”ত্নীর রানী লাগছে।
জেরিন মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিক তাকালো সাব্বির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,সদ্য ফোঁটা শিশির ভেজা স্নিগ্ধ এক টকটকে লাল গোলাপের মতো লাগছে তোকে! মাশা-আল্লাহ কারো নজর না লাগুক এই ফুলে,কেউ ক”লঙ্ক না ছিটাক এই পবিত্র কায়ায়!সব সময় সুখে থাক যেখানেই থাকিস খুব খুব ভালো থাক।যদি সাধ্য থাকতো তো নিজের জীবন দিয়ে তোর নামে পৃথিবীর সব সুখ কিনে এনে দিতাম!
জেরিন কিছু বলার আগেই বাহির থেকে সাব্বির কে ডাকলো মিহির।সাব্বির বেরিয়ে গেলো। রেখে গেলো
একজন সদ্য বধূ সাজা বিমুঢ় রমনীকে, যার কানে এখনো বাজছে নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোর নামে পৃথিবীর সব সুখ কিনে এনে দিতাম!
আত্মীয় স্বজন খেয়ে বিদায় নিয়েছে কয়েকজন রয়ে গেছেন বিকেল চারটা বেজে গেলো কিন্তু এখনো বরের দেখা নেই।চিন্তিত বাড়ির প্রতিটি মানুষ এর মধ্যেই লোক মুখে নানা কথা শোনা যাচ্ছে।বৃষ্টি, নেহা জেরিন কে সামলাতে ব্যস্ত।মেয়েটার মুখ চুপসে গেছে ইতিমধ্যে কয়েকজন বলে ও গেছে মেয়ের কি কোনো সমস্যা আছে নাকি?যার জন্য ছেলে বিয়ে করতেই আসলো না!
বিকেল গড়িয়ে এবার সন্ধ্যা নামার পালা ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে জেরিনের হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
জেরিন চিরকুট হাতে বসে খোলার শক্তি টুকু যেনো অবশিষ্ট নেই! নেহা, বৃষ্টি ও ভাবছে কি করবে।তার মধ্যে দরজার বাহিরে উপস্থিত হলো নিখিল, সাব্বির।সাব্বির রুমে ঢুকেই নেহা, বৃষ্টি কে কিছু নিয়ে কথা বলতে দেখে, জেরিনের হাত কাঁপছে অনবরত, হাত থেকে কাগজ টা খসে পড়ার আগেই ওটা নিয়ে নেয় সাব্বির!
চিরকুট টা পড়ে রাগে মাথায় আগু”ন ধরে গেলো ওর।
চেঁচিয়ে বলে উঠলো—,,আই উইল কি’ল ইউ প্রেফেসর!
চলবে?
#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
হাসিখুশি বাড়িটায় নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।প্রতিবেশি সহ দূর সম্পর্কের আত্নীয় নিজেদের আপন মানুষের মুখ থেকেও রটছে নানা কুৎ’সিত সমালোচনা!
আদো কি মানুষের মুখ বন্ধ করা সম্ভব? মুখে মধু অন্তরে বি’ষ নিয়ে চলা মানুষ গুলো কে যে চেনা বড় দায়!আজ সবার মুখোশ কেমন উন্মোচিত হচ্ছে।
শাহআলম চৌধুরী মুষড়ে পড়েছেন।তার পবিত্র মেয়েটার চরি’ত্র নিয়ে কথা বলা থামছে না।
হামিদা বেগমের সামনে গিয়ে দলে দলে প্রতিবেশি মহিলারা এসে বলছেন “ভাবি মেয়ের আর বিয়ে হইবো নি?” কে বিয়ে করবো এমন মেয়েকে।মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে হয় জানেন না বয়স বাড়াইছেন এতো পড়াইয়া কি লাভ হইলো,আপনাগো টাকা পয়সার অভাব নাই কিন্তু আজ আপনাগো বাড়ির মেয়েরে একজন বিয়ের আসরে ফেলে আসলোই না?মেয়ের কি কোনো গোপ’ন চক্কর ছিলো ভাবি?যা জানার পর ছেলে পক্ষ আসলোই না!
কেউ তো বলছেই মেয়েটার মধ্যেই সব সমস্যা।সব শুনে মুখে আঁচল চেপে কেঁদে উঠলেন হামিদা বেগম।তাহমিদা সাহারা বেগমের চোখেও জল, হামিদা বেগমকে সামলাতে ব্যস্ত তারা।সেতারা বেগম ঘরে বসে আছেন বৃদ্ধা ভীষণ চিন্তিত,এই সমাজ যে কতোটা নি”কৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন তা আর বলার দরকার পড়ে না।তিনি জানেন তার নাতনির কোনো দোষ নেই।তবুও আজ বিয়ে না হলে মেয়েটাকে এই সমাজ আশেপাশের মানুষ বাঁচতে দিবে না।তিলে তিলে ভিতরে ভিতরে গুমরে গুমরে নাতনিকে মর’তে দিতে তিনি কিছুতেই চান না!
এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন মনে মনে,নিজের ঘরে ডাকলেন বাড়ির প্রতিটি সদস্য কে।
———
সাব্বিরের হাত থেকে নিয়ে নিখিল চিঠিটা পড়তে শুরু করলো
–,,জেরিন,আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমাকে কোনো দিন পছন্দ করিই নি,আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি তাকে ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব না।আমি বাধ্য হয়ে তোমার সাথে এতোদিন নাটক করেছিলাম।তবে তোমার এখানে দোষ নেই, তোমার সাথে এমন করা উচিত হয়নি আমার এটা আমি মানি। তোমাদের পরিবারের অন্য একজনের শা’স্তি তুমি ভোগ করছো!এটা হওয়ারই ছিলো,তবে তোমার জীবন নষ্ট করার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না।
ইতি—নিরব!
নিখিল রাগে কাঁপছে, ও তো ভুলেই গিয়েছিলো কে এই নিবর,সব কিছু ভুলে এতো সহজে ছেলেটাকে বিশ্বাস করাই ছিলো তার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল।
আগেই বুঝা উচিত ছিলো কয়লা ধুইলেও ময়লা যায় না!যে ছেলেটা নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধুর বিরুদ্ধে যেতে পারে, তাদের ক্ষ”তি করতে পারে, সে মানুষটিকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিয়ে ভুল তো তিন বছর আগেই করেছে,সবার সামনে ভালো সাজার নাটক করে পিছন থেকে ছু”রি বসিয়েছে নিরব!
নিখিল হাতে থাকা কাগজ টা মুচড়ে দলা পাকিয়ে ফেললো।মিহির এসে বললো–,,নিরব কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি নিখিল ওর বাবা মাকে ও। রা”স্কেল টা কোথাও গিয়ে ঘাপটি মেরেছে।
নিখিল রাগে হিসহিসিয়ে বলে–,,এটা নিরবের একার কাজ কখনো হতে পারে না,ওর মতো চুনোপুঁটির দ্বারা এতো বড় কাজ করার সাহস কোনো দিনই হবে না।যে ওকে দিয়ে এসব কাজ করিয়েছে সেই নিরব কে লুকাতে সাহায্য করেছে!যেই হোক তাকে খুঁজে তো বের করবোই আমি।আমার পরিবারের দিক যে হাত বাড়িয়েছে তার কলি’জা কতো বড় সেটা তো আমাকেও দেখতে হবে।এবার খেলা হবে সামনাসামনি, অনেক তো লুকোচুরি হলো!
এর মধ্যে রৌফ ছুটে আসলো জানালো দাদী তাদের নিজের ঘরে ডেকেছেন!
বিধ্ব’স্ত জেরিন একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।মেয়েটার চোখের কাজল লেপ্টে গেছে চোখের জলে,মাথার ঘোমটা দেওয়া ওড়নাটা পড়ে আছে খাটের এক পাশে।চুলের খোঁপাটা এলোমেলো মাথায় লাগানো তাজা গোলাপের পাপড়ি গুলো ঝড়ে পড়েছে অবলীলায়।যত্ন না পেয়ে কুঁকড়ে কালসিটে পড়া নেতিয়ে যাওয়া এক ফুল যেনো জেরিন,যার মন মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে!মেয়েটা কাঁদতে ভুলে গেছে।
নেহা, বৃষ্টি দুপাশ থেকে জেরিনের দুহাত আঁকড়ে ধরে নিচে নামতে ব্যস্ত।
সবাই সেতারা বেগমের রুমে উপস্থিত।নিখিলের ফুফু ফুফা জেবা,ফারহানও উপস্থিত সেখানে।
সেতারা বেগম নাতনির এমন রূপ দেখে ভিতরে ভিতরে কষ্টে ফে”টে পড়লেন তবুও নিজেকে কঠিন রাখার চেষ্টা করলেন।খাটের এক পাশে নতমস্তকে বসে আছেন একজন ব্যর্থ বাবা,যে আজ চেয়েও সবার বিষা”ক্ত ছো’বল থেকে মেয়েটিকে বাঁচাতে পারছেন না।
সন্ধ্যা নেমেছে ধরনিতে,শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে ঘরে।সবাই উৎসুক সেতারা কি বলবেন তা শোনার জন্য।
নিরবতা ভেঙে তিনি বললেন–,,নাহার তোর কাছে কিছু চাইনি আমি কখনো,আজ চাইছি এই বুড়ো মায়ের পরিবারের সম্মান টা আজ বাঁচিয়ে দে মা।আমার ফুলের মতো বোনটাকে সমাজের তিক্ত করা’ঘাত থেকে বাঁচিয়ে আগলে নে নিজের কাছে!
নাহার বেগম চমকে উঠে বললেন—,,বিদেশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলছো তুমি মা?
থমথমে মুখে সেতারা বেগম বললেন–,,না!আমি চাই তুই তোর ঘরের পুত্র বধূ কর জেরিন কে!
সবাই বিস্ফো”রিত নয়নে তাকালো।তার পরও প্রস্তাব টা মন্দ লাগলো না কারো,ফারহান ভালো ছেলে নিজেদের ছেলে জেরিন কে ভালো রাখার মতো সব কিছুই আছে তার!
নাহার বেগম বুঝলেন না কি বলবেন স্বামীর পানে চাইলেন তিনি ভদ্রলোক নিশ্চুপ।এর মধ্যে ফারহান বিরক্তি মাথা কন্ঠে বললো–,,আমি জেরিন কে বিয়ে করতে পারবো না!আমার ও পছন্দ অপছন্দ আছে,জেরিন কে সারাজীবন বোনই ভেবেছি আমি!এখন এসে তোমরা বিয়ে করতে বলছো?নিজেরা দায় মুক্ত হতে আমার ঘাড়ে তুলতে চাইছো?আমি জেরিন থেকে ভালো মেয়ে প্রত্যাশা করি,আমি বিদেশি কালচারে বড় হওয়া ছেলে, জেরিনের সাথে মানিয়ে নিবো কি করে!আমাকে ক্ষমা করো আমি বিয়ে করবো না।
জেরিন ফ্যাল ফ্যাল নয়নে তাকালো!এমন নয় সে ফারহান কে বিয়ে করতে চায়,তবে পরিস্থিতি তাকে আজ কোথায় এনে দাঁড় করালো তাই ভাবছে,ভালো করেও ফারহান তাকে রিজেক্ট করতে পারতো তাই বলে এতোটা অযোগ্যের কাতারে ফেললো! চারপাশের পরিবেশ, মানুষ, অক্সিজেন কেমন বি’ষে টইটম্বুর লাগলো জেরিনের কাছে,টলমল পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে।নেহা, বৃষ্টি বোনের হাত ছাড়েনি আজ নিজেরাও তার পেছনে গেলো!কি এক অদ্ভুত তিক্ততা ছড়িয়ে পড়লো ঘরময়।ফারহানের দোষ দিয়েই বা কি লাভ?ওর কথায় ও তো ভুল নেই না আছে জেরিনের কোনো ভুল।বিনা ভুলে মাশুল পাওয়ার মতো যন্ত্র”ণা ফারহান কেনো পেতে চাইবে?বিয়ে টা সারাজীবনের বন্ধন এইরকম তো না এই জুড়ে দিলাম তো এই ভেঙ্গে দিলাম!
সেতারা বেগমের চোখ ছলছল করে উঠলো শেষ ভরসাটুকু ও তিনি হারিয়েছেন। কষ্টে গড়ে তোলা নিজের পরিবারের সম্মানের ভিত আজ নড়ে উঠলো।নাহার বেগম ছেলের কথার প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারলেন না,জোর করে কি আর সংসার করা যায়?বিয়ে না হয় দিলেন কিন্তু পরে!
নিজের বোন কে এরকম অপদস্ত হতে দেখতে পারছে না নিখিল।কড়া ভাষায় সবাই কে কথা শুনাতেও পারতো সে,নিজের বাবা কে এতোটা ভেঙ্গে পড়তে কোনো দিন দেখেনি সে, কিন্তু আজ এই বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের বাবাকে কষ্টে দগ্ধ হতে দেখে নিখিলের ভিতর টা কেঁপে উঠলো! যতই মতো বিরোধ থাকুক দিন শেষে তাদের সম্পর্ক টা বাবা ছেলের।
থমথমে পরিবেশ, শহিদুল চৌধুরী, মাহফুজ চৌধুরী ও দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে।মেয়েটা হোক ভাইয়ের নিজেরা ও মেয়ে ছাড়া কিছু ভাবেনি।বাড়িতে প্রথম কন্যা সন্তান হয়ে এসেছিলো জেরিন আদর স্নেহ ভালোবাসাটা তার প্রতি যেনো সবার একটু বেশিই।
সবাই তখনও ভেবে চলছে কি করবে,মিহির ভেবেছে এবার বলবে আত্মীয় আর প্রতিবেশি গুলোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করার কথা বলবে।
ঠিক তখনই সাব্বির গম্ভীর রাশভারি কন্ঠে বলে উঠলো–,,আমি একটা কথা বলতে চাচ্ছি!
সবার দৃষ্টি পড়লো সাব্বিরের উপর।সেতারা বেগম বললো–,,বল ভাই কি বলতে চাস!
সাব্বিরের কন্ঠ অতি শান্ত,অতি স্বাভাবিক –,,আমি জেরিন কে বিয়ে করতে চাই!
পর পর সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,কেউ তো সাব্বিরের কথা ভাবেও নি। সেতারা বেগমের মুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো,বেখেয়ালি ছেলেটা কবে এতো বড় হয়ে গেলো? পরিবারের এমন সময় সে পরিবারের পাশে দাড়িয়ে পড়লো ঢাল হয়ে!
নিখিল চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে সাব্বির কে, সাব্বির আবার বলে উঠলো–,,আমি জেরিনের জন্য অযোগ্য তা আমি জানি,আমি সিদ্ধান্ত টা ভেবে চিন্তেই নিয়েছি।এটা নিয়ে ভবিষ্যতে ও আমার কোনো আফসোস থাকবে না,কেউ মনে করবে না আমি দয়া করছি জেরিনের উপর!জেরিনের সম্মান টা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ও নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট, যেহেতু এখন বিয়ে টা না হলে জেরিনের অসম্মান হবে সে সব কিছু ভেবে আমি বিয়ের কথা টা বলছি।তবে কথা দিচ্ছি বিয়ে করার পর জেরিনের সব দায়িত্ব আমি নিবো!পড়াশোনার পাশাপাশি অফিসেও জয়েন করবো,
আমার ও আত্নসম্মান আছে বাবার টাকায় বউ পালবো না!তবে বিয়েটা একা আমার হবে না যদি তোমাদের কোনো অসুবিধা না থাকে তো আমি জেরিনের মতামত জানবো যদি ওর মত থাকে তবেই এই বিয়ে হবে!
মাহফুজ চৌধুরীর গর্বে চোখ চিক চিক করে উঠলো।সাহারা নিজেও ছেলের এমন সিদ্ধান্তে খুশি।
সাব্বির চোখ তুলে তাকাতেই নিখিল এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো তাকে!দুই ভাইয়ের চোখে পানি।কেনো যেনো মনে হচ্ছে জেরিনের জীবন সঙ্গী হিসবে সাব্বিরের থেকে ভালো কেউ হতেই পারে না!
শাহআলম চৌধুরী মুখ তুলে তাকালেন,হামিদা বেগম কে জড়িয়ে ধরলেন দুই জা। পরিবারের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠলো।
সেতারা বেগম কান্নাভেজা কন্ঠে হেসে বলে উঠলো–,,এই না হলে চৌধুরী বংশের পোলা!
————-
সাব্বির এসে ঢুকলো জেরিনের রুমে।জেরিন বিছানায় হেলান দিয়ে বসে,খাটের অপর পাশে বসে আছে নেহা, চেয়ারে বৃষ্টি!
সাব্বির গিয়ে দাঁড়ালো জেরিনের সামনে।থমথমে কন্ঠে বললো–,,এরকম ঝিমাইন্না মুরগীর মতো হয়ে আছিস কেন?
জেরিন চোখ ছোট ছোট করে তাকালো বললো–,,তো কি এখন নাচবো?
সাব্বির ভনিতা না করে বললো
–,,বিয়ে করবি আমায়!
চোখ বড় বড় করে তাকালো নেহা,বৃষ্টি।দুজন সমানে বলে উঠলো–,,কিহ্!
দরজায় আঁড়ি পেতেছে বাড়ির বড়রা,এই দুই যো”দ্ধা আবার কোন বিশ্বযুদ্ধের আয়োজন করছে কে জানে?
জেরিন ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো–,,মজা করছিস আমার সাথে?
সাব্বির শার্টের হাতা ফোল্ড করে বসতে বসতে বললো–,,তোর কি মনে হয়?এখস সময়টা মজা করার মতো?কিভাবে বললে মনে করবি সত্যি সত্যি জিজ্ঞেস করছি?
–,,পা’গল হয়েছিস সাব্বির?আমার জন্য নিজের জীবন কেনো নষ্ট করবি তুই!বিয়ের ভুত কে চাপালো তোর মাথায়?দাদী?
–,,না, আমি নিজে থেকে বলছি।করবি কি না বল?আমার জীবন নষ্ট হবে একবারও বলেছি আমি?তোর জীবন ও নষ্ট হবে না!
–,,এরকম ছেলেমানুষী করার কি মানে?দেখ বিয়ে করতে চাই না আমি, কাউকেই করতে চাই না।বিয়ে ছাড়াও জীবন চলে!অযথা তুই আমার সাথে কেনো জড়াবি?এসব সকাল হলেই থেমে যাবে।
সাব্বির একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো–,,আমিও জানি বিয়ে ছাড়া তুই চলতে পারবি।এখানে কথাটা শুধু তোর বিয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই জেরিন।আমাদের পরিবারের সম্মান তোর সম্মান এখানে জড়িত।তোকে দয়া করতেছি এরকম ভুল ধারনা মনেও আনবি না।এটা মানিস তো আমি আর তুই অনেক ভালো বন্ধু? আমাকে বিশ্বাস করিস তো জেরিন?
–,,তোকে বিশ্বাস করি কিন্তু!
–,,আগে পুরো কথাটা শোন।
–,,হুম বল!
–,,বড় আব্বুর কথা ভাববি না তুই?কতোটা কষ্ট পেয়েছে জানিস?কতোটা আত্মগ্লানিতে ভুগছেন?বড় মা, ছোট মা,ভাইয়া সবাই কতোটা কষ্টে আছে?শুধু তোর কথা ভেবে তুই দুঃখ পাচ্ছিস তাই সবাই কষ্ট পাচ্ছে!
এবার আসি বিয়েতে,আমরা শুধু কাগজে কলমে, সবার সামনে নাম মাত্ররো বিবাহিত থাকবো!তুই যেদিন ইচ্ছে সেদিনই মুক্ত হতে পারবি কথা দিচ্ছি কোনো দিন জোর করবো না।কোনো রকম অধিকার বোধ নিয়ে আসবো না তোর সামনে,কোনো দিন তোর এরকম মনে হবে না আমাদের সম্পর্কটা জোর করে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।তুই আগে যেভাবে বাড়িতে থাকতি সেভাবেই থাকবি,এ বাড়ির বড় মেয়ের মতো।ছেলের বউয়ের ট্যাগ তুই না চাইলে কোনো দিন তোর উপর লাগবে না!আমাদের সম্পর্ক ও আগের মতোই থাকবে এখানে সংকোচ করার মতো কিছু নেই,কোনো কিছুতে তোকে কেউ জোর করবে না।আমি বলছি তুই পুরোপুরি স্বাধীন! বিয়েটা শুধু সমাজের মানুষকে দেখানোর জন্য পরিবারের সম্মান বাঁচাতে!এবার বল তুই কি বিয়ে করবি আমাকে?
বৃষ্টি, নেহা হা হয়ে কথা গিলছে,বাহিরের উৎসুক জনতা জেরিনের মত জানতে আগ্রহী।সেতারা বেগম মনে মনে হাসলেন,তিনি জানেন বিয়ের বন্ধন কতোটা দৃঢ়,এই একটা সম্পর্ক মানুষের জীবন কতোটা সুন্দর ভাবে পাল্টে দেয় তিনি তা জানেন,বয়স হয়েছে চুল পেকেছে এতটুকু তো নিশ্চিত হতেই পারেন,বিয়েটা হলেই হয়!
জেরিন তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,ভেবে বলছিস তো সাব্বির?
–,,একদম একশো পার্সেন্ট সিউর আমি!তুই নিশ্চিত হয়ে জানা আমাকে!
জেরিন চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছাড়লো,হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো–,,আমি রাজি!
সেতারা বেগম দরজা ঠেলে ভিতরে চলে আসলো যার ফলে পর পর পরিবারের সবাই নিচে পড়তে পড়তে নিজেদের সামলেছে সবাই কে এখানে দেখে ভ্রু কুঁচকালো জেরিন।তার পরিবারটা আসলেই সার্কাসে যোগ দেওয়ার যোগ্য!এতো কিছুর মাঝেও এরকম আচরণ মানা যায় না।
জেরিন কে আবার ওড়না টা মাথায় দিয়ে দিলো বৃষ্টি। মনের কোনে এক অজানা খুশি উঁকি দিচ্ছে নেহার,কেনো সে জানে না হয়তো জেরিন দূরে যাবে না সে খুশিতে!
মিহির সাব্বির কে চেপে ধরে বললো–,,তুই কি এভাবেই বিয়ে করবি নাকি?পাঞ্জাবি অন্তত পড়!
সাব্বির ভ্রুকুটি করে বললো–,,কেনো এভাবে বিয়ে করলে কি সমস্যা? বিয়েতে বউ ছাড়া অন্য কারো দিক কেউ তাকায় নাকি?
–,,তাই বলে একটা সাদা রঙের শার্ট পড়ে বিয়ে করবি?তুই তো বিয়ের আগেই বিধবা বিধবা ভাইব নিয়ে ঘুরছিস!
সাব্বির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে–,,মিহির ভাই!
–,,আচ্ছা ভাই বুঝছি, চল এভাবেই কর বিয়ে তোদের মতো ঝগ”ড়ুটে এলিয়েন মার্কা কা’পলের বিয়ে আবার স্বাভাবিক ভাবে হবে এটা ভেবেই আমার অস্বাভাবিক লাগছে!
সোফায় গিয়ে বসে পড়লো সাব্বির,তার মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই! জেরিন তো তৈরিই ছিলো তাহলে আসতে এতো সময় নিচ্ছে কেনো মেয়েটা?
এখনো প্রতিবেশিরা,আত্নীয়রা উপস্থিত রাত হয়েছে তাও যাওয়ার নাম নেই,যেনো কোনো সিনেমা চলছে যার শেষ না দেখা পর্যন্ত তারা স্বস্তি পাবে না!
কিছুক্ষণ পর আসলো জেরিন সিঁড়ির উপরে দাড়ালো এবার নামার পালা।জেরিন কে দেখে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকালো।মুখে প্রসাধনীর ছিটে ফোটাও নেই,ধপধপে সাদা স্টোন বসানো একটা শাড়ি পড়ে নামছে নিচে!বাতির আলোতে চকচক করছে শাড়ির উপরে বসানো পাথর গুলো।কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে, আত্নীয়দের গাঁ জ্বা’লানোর জন্য তার মুখের সুক্ষ্ম হাসিটাই যেনো যথেষ্ট হলো।চুল গুলো নুতন করে বাঁধার সময় হয়নি হালকা কালসিটে পড়া লাল গোলাপ গুলো যেনো সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে!
একটু আগে নেতিয়ে পড়া ফুলটাকে কেউ যেনো যত্ন সহকারে পানি ছিটিয়ে সতেজ করে তুলেছে,তবুও মলিনতার ছাপ যেনো থেকেই যায়!
কথায় আছে ____চাঁদের ও ক’লঙ্ক থাকে!
সাব্বিরের চোখটা হঠাৎ পড়লো জেরিনের উপর,তার মুখের হাসি চওড়া হলো যাক অবশেষে ঘসেটিবেগম নিজের মুডে ফিরে এসেছে!
জেরিন এসে বসলো সাব্বিরের পাশে!
এক আন্টি খোঁচা মেরে বললো –,,এই মেয়ের তো লজ্জা শরম অনেক কম, একটু আগেই বিয়ে টা ভাঙলো,বর আসলো না এখনই দাঁত কেলিয়ে এসে অন্য জনকে বিয়ে করতে বসে পড়েছে!তাই তো বলি মেয়েরই কোনো সমস্যা ছিলো,এই ছেলের সাথে নিশ্চিত কোনো সম্পর্ক ছিলো না হয় কোন ছেলে জেনে বুঝে এইরকম মেয়েকে বিয়ে করবে!
জেরিনের মুখটা চুপসে গেলো,কিন্তু সাব্বির সে গ’র্জে উঠে বললো–,,আর একটা কথা যদি আপনার মুখ থেকে বের হয় তো জি’ব টেনে ছিঁ”ড়ে ফেলবো আপনার।
এতোক্ষণ বিয়ে হচ্ছিলো না বলে কতো কথা বললেন, এখন আবার বিয়ে হচ্ছে এটা নিয়েও সমস্যা? মাথায় সমস্যা আছে নাকি কোনো? এরকম দুমুখো সা”পের মতো কেনো আপনারা?অস’ভ্য অ’ভদ্র মহিলা!আপনার মেয়ের সাথে যদি আজ এমন হতো তখন?বের হন বলছি আমাদের বাড়ি থেকে, আপনাকে কে ডেকেছে এখানে?বেহা’য়ার মতো অন্যের বাড়িতে এসে এতো কথা বলতে মুখে বাঁধে না?এতো নিচ কেনো আপনারা?নিজের বাড়িতে কি সমস্যার অভাব পড়েছে আপনাদের অন্যের টা নিয়ে এতো নাক গলাতে কে বলেছে?আর কোনো দিন যদি আপনাদের দেখেছি আমাদের বাড়ির আশে পাশে তো বেশি ভালো হবে না।
ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের না করতে, নিজে নিজে বেরিয়ে যান!
মহিলা রাগে ফুঁসে উঠলো গজগজ করতে করতে বেড়িয়ে গেলো সদর দরজা দিয়ে!
বাড়ির সবাই মনে মনে ভীষণ খুশি!রৌফ খোঁচা মেরে বললো–,,আমার ভাইরে কি আজ বি’ষ পিঁপড়ায় কামড় দিলো নাকি গো বৃষ্টি আপু?এমন ফোঁস ফোঁস করে বি’ষ ছড়াচ্ছে কেনো?
–,,বিয়ে করলে এমনই হয় রে ভাই!
–,কি রকম লজিক, কোনো দিক দিয়াইতো মিলাইতে পারছি না!
নেহা এসে বললো–,,আজকে লজিক সাইডে রাখ ভাই বিয়েটা দেখ!
কাজি সাহেব কে শহিদুল চৌধুরী বললো কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন!
সাব্বির একবার তাকালো জেরিনের দিক খোঁচা মেরে বললো–,,কিরে ঘসেটিবেগম এরকম ভেটকি দেওয়া সাজ দিয়ে কেনো এসেছিস?
জেরিন কন্ঠ খাদে নামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,তোর কি মনে হয়,ওই ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার জন্য যে সাজ সেজেছিলাম তা নিয়ে এখনো রঙ্গ করে বেড়াবো?নাচতে নাচতে লাল শাড়ি পড়ে বিয়ে করার সখ জন্মের মতো শেষ হয়ে গেছে,তাই সাদা শাড়ি পড়েছি, ওই ইবলি”শের বীজ টা জীবন থেকে গেছে এতোদিন যা পাপ করেছিলাম তার জন্য তওবা পড়ে নাউজুবিল্লাহ বলে নিজেকে পবিত্র করে এসেছি,সাদা মানে পবিত্রতা শুভ্রতা বুঝছিস,এখন নিজেকে অনেক হালকা হালকা লাগছে!আহ কি বোকাটাই না ছিলাম আমি!
সাব্বির কিছু বলার আগেই কাজি সাহেব বলে উঠলো–,, বিবাহে আপনার সম্মতি থাকলে বলুন মা কবুল!
জেরিন একবার সাব্বিরের দিকে তাকালো,তার পর নিজের বাবা মায়ের দিকে,বাবা মায়ের মুখে খুশি দেখে সুপ্ত হাসলো জেরিন।
ধীর কন্ঠে পর পর তিনবার কবল বলে উঠলো!
এবার পালা সাব্বিরের,সাব্বির বলার পর মুহুর্তেই কবুল বললো!
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। কাজি সাহেব কাবিননামা টা দিয়ে বললো সাইন করতে,দুজন পর পর সাইন করলো।কাজি সাহেব হাসি মুখে বললো আপনারা আজ থেকে শরিয়ত মোতাবেক স্বামী স্ত্রী!
★
কাছের আত্মীয়রা ছাড়া সবাই বিদায় নিলো, ভীষণ রকম ক্লান্ত বাড়ির প্রতিটি মানুষ। রাতের খাবার যেনো গলা দিয়ে নামবে না কারো।আত্মীয়দের খাইয়ে দিলো কোনো রকম।বাড়ির সবাই যে যার রুমে চলে গেলো ঘড়ির কাটায় রাত এগারোটা বাজে।
আত্মীয়দের মধ্যে অনেকে বর বউকে আলাদা ঘরে দেখে কথা বলা শুরু করেছেন,তা দেখে কপালে ভাজ পড়লো তাহমিদা বেগমের তিনি গেলো জেরিনের ঘরে।
জেরিনকে বুঝিয়ে নিয়ে আসলো সাব্বিরের ঘরে!সাব্বির সবে ফ্রেশ হয়ে এসেছে,জেরিন গিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।
তাহমিদা বললো–,,জেরিন এখানেই থাকবে এখন কিছু করার নেই,আল্লাহ কি কি যে গেলো আজকে।মানুষ গুলো বিদায় হলে বাঁচি যেনো!
তিনি বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।সাব্বির জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললো–,,কিরে ফ্রেস হস নাই এখনো?
–,,আর ফ্রেস হওয়া, রুমের ভিতর সব গুলো মেয়ে মিলে বিক্ষো”ভ চালাচ্ছে!মাথায় ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে আমার ঘুমাতে হবে।
–,,এখানে থাকতে তোর কোনো অসুবিধা হবে না তো?
–,,অসুবিধা হবে কেনো?এর আগে কি তোর রুমে আসি নাই নাকি আমি!তুই ঘুমাইলে ঘুমা না ঘুমাইলে বসে বসে হাওয়া খা,চাইলে আমার একটু সেবা যত্ন ও করতে পারিস!
–,,এ্যাহ মহিলার সখ কতো আমি কেনো তোকে সেবা যত্ন করবো, দূরে গিয়ে ম’র!
–,,লাইট অফ করে তুই জাহা’ন্নামে যা, আমার মাথা খাবি না বক বক করে!
নেহা, বৃষ্টি রুমে ধাম করে ঢুকে পড়লো,দুজন কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে–,,আরে ভাই নিজেরা ঘুমাও আশে পাশের রুমের মানুষ কেও ঘুমাতে দেও!সারা রাত কি চিৎকার চেঁচামেচিই করবে তোমরা?
সাব্বির অবাক হওয়ার ভান ধরে বললো–,,আমি কি করলাম?আমার রুমে এসে খাট দখল করে ঘুমাচ্ছে ঘসেটিবেগম, আবার কথাও শুনাচ্ছে আমাকে, আর তোরাও দোষ দিচ্ছিস আমার।আহ্! পুরুষ সমাজ আজ অসহায় বড় অসহায়।
মিহির এসে বললো–,,আমার বউ কই গো?
বৃষ্টি দাঁতে দাঁত চেপে বলে–,,এতো রস লাগাচ্ছো কেনো গো?
মিহির বলে উঠলো –,,বুঝলি ভাই সাব্বির বিয়ে হতে না হতেই মেয়ে গুলা রং পাল্টায়,নরম থেকে পুরা গরম গরম সমুচা হয়ে যায়!
সাব্বির দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,, গরম সমুচা খাও টেস্ট ভালো লাগবে!
জেরিন বলে উঠলো–,,কিরে ব্যাটা তোর তো দেখছি এক্সপেরিয়েন্স ভালা!তুই না মাইয়া দেখলে নেং”টী ইন্দু’রের মতো লেজ গুটাইয়া পালাস আবার এগুলাও জানস?
সাব্বির বলে উঠলো–,,কিসব জানি?
–,,এই যে কোন মেয়ে ভালো সমুচা বানাতে পারে!
মিহির হেসে বলে উঠলো–,,এই নেহা যাও তো নিখিল তোমাকে ডাকছে।এই সাব্বির ঘুমা তাও ভালো আমাদের ভাগ্য সমুচা জুটেছে তোর টা করলার জুস!
সাব্বির ভুল ধরিয়ে দেওয়ার মতো করে বললো–,,না না ওটা বিরিয়ানি হবে!
মিহির হেসে বেরিয়ে গেলো।
——–
জেরিন চোখ বন্ধ করে ফেললো।কিছুক্ষণ পর নিজের কপালে শীতল কিছু অনুভব করে চোখ বড় বড় করে তাকালো
সাব্বির স্বাভাবিক ভাবে বসে বললো–,,মাথা ব্যাথার বাম লাগিয়ে দিচ্ছি ঘুম ভালো হবে,চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রাখ।
জেরিন চোখ বন্ধ করে বললো–,,তুই মিরজাফর হতে পারিস!কিন্তু একটু একটু ভালা গুন আছে।সেবা যেহেতু করবি ভালো করে কর ভাই!
সাব্বির ভ্রু কুঁচকে বললো–,,কি হলো উঠে পড়লি কেন?
জেরিন চুল গুলো খোঁপা করতে করতে বললো–,,বিছানায় উঠে বস!
সাব্বি চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,কেনো?
–,,তোরে আবার লা’থি মে’রে নিচে ফেলবো তাই!
সাব্বির চোখ মুখ শক্ত করে খাটে উঠে বসলো বলে উঠলো–,,তুই কালকে থেকে আমার রুমে আসিস আবার ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ঝুলিয়ে দিবো ব’দ মহিলা আমার রুমে এসে আমার খাট দখল করে আমাকে অর্ডার করা!
–,,আচ্ছা যা আর আসবো না,সুযোগ কি বার বার আসে বল তাই আজকে একটু তোকে খাঁটিয়ে নিচ্ছি!
সাব্বির বিছানায় উঠে বসতেই জেরিন ওর পায়ের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো!
সাব্বির চিৎকার দিয়ে বললো–,,কি করছিস!
জেরিন ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো মিন মিন করে বললো–,,শা’লা পাড়া প্রতিবেশি ডেকে আনবি নাকি রাতের বেলা?মাথা টিপে দিতে চাইলি তাই এমন করেছি।সেবা করে দে ভাই আজকেই শেষ,ঘুমামু এখন!
–,,জেরিনের বাচ্চা নাম বলছি নাম,সরকারি পেয়েছিস?
–,,আর একটা কথা বললে তোর মুখে কস্টিপ মেরে দিবো!যা গিয়ে বারান্দায় ঘুমা, তাও চুপ থাক।
সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে কপালে হাত দিলো মলম লাগিয়ে দিয়ে মাথা টিপে দিতে লাগলো।মিন মিন করে বললো–,,এক মাঘে শীত যায় না! আমার ও সুযোগ আসবে আমাকে দিয়ে কামলা খাটানো?
জেরিন সে তো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে,মেয়েটার উপর দিয়ে আজকে যা যা গেলো,তাই সাব্বির ও আর বেশি ঘাটলো না।লোক চক্ষুতে হয়তো তাদের সম্পর্কটা অন্য রকম কিন্তু তারা তো জানে তারা কেমন,অন্যের চিন্তা ভাবনায় কিছুই যায় আসে না!
প্রেম ভালোবাসা ছাড়া ও সম্পর্ক হয় একসাথে থাকা যায় বাঁচা যায় একে অপরের পাশে থেকে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় বিনা স্বার্থে,সাব্বিরও চায় তাদের সম্পর্কটা ও যেনো সেরকম হয়!জেরিনের সারাজীবন খেয়াল রাখবে সে,নাম মাত্র বিয়ে হোক বা যাই হোক ওটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ না জেরিন ভালো থাকবে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ! জেরিন যাতে ভালো থাকে সে চেষ্টাই করবে সব সময়।মেয়েটার মুখে হাসিই বেশি মানায়।বন্ধুত্বের মতো সম্পর্ক আরো কোনোটা হতেই পারে না!সব সম্পর্কের মাঝেই বন্ধুত্ব থাকা টা বেশি জরুরি। একে অপরকে তখনই ভালো বুঝতে পারা যায় যখন তারা পরস্পরের ভালো বন্ধু হয়!
জেরিন আর সাব্বির আগে থেকেই,দুজন যতই ঝগ’ড়া করুক দিন শেষে দুজন দুজনকে না দেখলে কথা না বলতে পারলে যেনো ভালো লাগতো না,একটা অবাধ্য অভ্যাস হয়ে উঠেছে দুজন দুজনের!সব সম্পর্কের সমীকরন ভালোবাসায় গিয়ে শেষ হতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই,কিছু বন্ধন থাকুক অটুট একটু অন্য রকম!
সাব্বির মুগ্ধ হয়ে হাসে, মেয়েটা তাকে কতো বিশ্বাস করে এক কথায় বিয়ের মতো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো,জীবন দিয়ে হলেও এই বিশ্বাসের মান রাখবে সাব্বির!
—————–
আজকের ভোর টা যেনো একটু বেশি স্নিগ্ধ,অনেকটা শান্তির তৃপ্তির ঘুম হয়েছে কিছু কিছু মস্তিষ্কের!
তাহমিদা বেগম, হামিদা বেগম,সাহারা ঘুম থেকে উঠেই আসলেন জেরিন আর সাব্বির ঠিক আছে কিনা দেখতে,তিন জা তে এসে মিলেছে একত্রে তিনজনই বুঝলো তাদের চিন্তা মিলে গেছে,এরা যা ঝগ’ড়া করে সারাদিন না জানি রাতে কি ল’ঙ্কা কান্ড ঘটিয়েছে।
দরজা নক করবে ভেবে দরজার হাতলে হাত রাখতেই দরজা খুলে গেলো!সাহারা কপাল চাপড়ালো এই দুইটা ছোটই রয়ে গেলো–,,বিয়ে করেছে ঠিকই এখনও কান্ডক জ্ঞান হয়নি,দরজা খুলে কোন মানুষ ঘুমায়!দুটো আদো আস্ত আছে তো আপা!
তাহমিদা ছিলেন সামনে তিনি যেনো চোখে ভুল কিছু দেখছে হামিদা বেগম বললো–,কিরে তব্দা খেয়ে গেলি কেন ছোট?সর তো দেখি,সাহারা ও আসলেন।তিন জন চোখ চাওয়াচাওয়ি করলো পরক্ষণেই হেসে ফেললো!
সাব্বিরের কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে জেরিন,তার চুলে কপালে এক হাত সাব্বিরের,সাব্বির বালিশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আসে বসা অবস্থায়!
তিন জন মা ছেলে মেয়ে কে দেখলো মন ভরে দোয়া করলো তাদের যেনো সারাজীবন এভাবেই মিলেমিশে থাকতে পারে।তারা পারলে বাড়ির সবাইকে তুলে এনে এই দা কুমড়োর মিলন মেলা দেখায়!কিন্তু তা তো সম্ভব না।ছেলে মেয়ে যাতে ভালো থাকে সেই দোয়াই করলেন কোনো বিষাদ যেনো আর ছুঁতে না পারে তাদের!
চলবে?