#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩৬(প্রথম অংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাব্বির কে দেখে যেনো দেহে প্রাণ এলো জেরিনের, সাব্বিরের সাথে আর একটু মিশে গিয়ে কোমরের দিকের শার্ট চেপে ধরলো জেরিন!ভয়ে থরথর করে কাঁপছে মেয়েটা।সাব্বির ভরসার হাতে জেরিনের বাহু জড়িয়ে ধরে কানের কাছে অতি ধীর কন্ঠে বলে–,,ভয় পাচ্ছিস কেনো?আমি আছি তো!এর সামনে নিজেকে কঠোর দেখাতে হবে জেরিন,দেখিয়ে দে তোকে কেউ ভাঙ্গতে পারেনি এতো সহজে,তুই মুভ অন করেছিস ভালো আছিস!
জেরিন অপলক তাকিয়ে উজ্জ্বল শ্যামলা মুখশ্রীর পানে কতোদিন পর দেখছে এই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে!
সাব্বির কে দেখে নিরব হেসে বলে উঠলো–,,বাহ্!বেস্টফ্রেন্ডের বডিগার্ডের কাজও করছো দেখছি।নাকি ভাই হিসেবে নিজের চাচাতো বোন কে পাহারা দিচ্ছো?
সাব্বির হাসলো ঠোঁট এলিয়ে –,,যা মনে করেন তাই!
তা আপনি এখানে যে?নিজের গালফ্রেন্ডের উপর থেকে রুচি উঠে গেলো বুঝি?অবশ্য যারা এতো নিখুঁত প্রেম সংঘটিত অভিনয় করতে পারে,তারা কাউকে আদো সত্যিকারের ভালো বাসে কিনা সন্দেহ! নাকি অন্য কোথাও মুখ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তাই মুখে থু থু ছিটিয়ে চলে গেছে,যদি মেয়েটি চলে যায় তো ভাববো সত্যি তার কপাল ভালো না হয় বুদ্ধিমতি!একটা লম্প’ট ধান্ধা”বাজ মানুষের সাথে থাকার চাইতে ভালো সারা জীবন একা থাকা!
একটা কথা আছে না__”দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য”
মুখোশধারী একটা শয়”তান আপনি,শিক্ষক হয়ে মানুষ গড়ার বদলে আপনি কিনা মিথ্যা বলে প্রতার’ণা করে আমার পরিবারের সম্মানের দিক হাত বারিয়েছেন!
একটা মেয়ের সাথে এতো বড় একটা জ”ঘন্য খেলা খেলতে একবারও বিবেকে বাঁধলো না আপনার!
নিরব রাগে ফোঁস করে উঠে বললো–,,এই তোমার সাহস তো কম না,আমার ভালোবাসা নিয়ে কথা তোলো!
জরিনের দিক হাত বাড়িয়ে যেই বলতে যাবে –,,আসলে জেরিন,,,,,,,
সাব্বির ব”জ্র কন্ঠে বলে উঠলো–,,আমার ওয়াইফের থেকে দূরে থাকুন প্রফেসার!নয়তো যে হাত এদিকে বাড়িয়েছেন সে হাত আর আস্ত থাকবে না।ভেঙ্গে গলায় ঝুলিয়ে দিবো।
সাব্বিরের কথায় বিষ্মম ভরা নয়নে তাকালো নিরব।ভ্রুকুটি করে বললো–,,ওয়াইফ মানে!
সাব্বির চমৎকার হাসলো।তার মুগ্ধতায় ভরপুর হাসি যেনো নিরবের বুকে আগু’ন ধরাতে সময় নিলো না।
সাব্বির বলে উঠলো–,,উফ!প্রফেসর আপনাকে আমার কেনো যেনো থ্যাংস দিতে মনে চাচ্ছে।আপনি আপনার প্রতি”দ্বন্দি কে নিজের ভুলের মাধ্যমেই জিতিয়ে দিয়েছেন,আশা করি ওইদিনের কথা ভুলে যাননি!
নিরবের কপালে ভাজ পড়লো রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো–,,এই বোকা জেরিনের মতো মেয়ে আসলে তোকেই সুট করে আমার সাথে এর যায় না!
জেরিন ক্ষে’পা বাঘি’নীর মতো গিয়ে ঠাস করে পর পর দুইটা চ’ড় মার’লো নিরব কে!জেরিনের রাগে নাক মুখ লাল হয়ে এসেছে।আঙুল উঁচিয়ে নিরব কে শাসানোর ভঙ্গিতে বলে–,,তুই কি করে ভাবলি তোকে আমার সাথে মানাবে?একটা থার্ড ক্লাস নিচু মনমানসিকতার মানুষ, নর্দ’মার কীট ও তোর থেকে ভালো,আমার তো ভাবতেও ঘৃ’ণা হচ্ছে তোর মতো মানুষের নাম আমার নামের সাথে কখনো জড়িয়ে ছিলো।সাব্বিরের একটা নখের যোগ্য ও না তুই,তার সাথে নিজের তুলনা দিস কোন মুখে?আমার মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে তোকে গলা টি’পে খু’ন করি!আমাকে বিনা কারনে এতো এতো ক’টূ কথা শুনতে হয়েছে তোর কারনে,একটা মেয়ের সম্মান”হানি করেছিস তুই,আমার প্রতিটা দীর্ঘ শ্বাস তোর পরবর্তী জীবনের সব সুখ শান্তি কেঁ”ড়ে নিবে।আমি চাইলেই শা”স্তি দিতে পারতাম কিন্তু আমি পঁচা ডোবাতে আরেকবার হাত ডুবাতে চাই নি তাই চুপ ছিলাম।মেয়েদের দুর্বল মনে করাটা বোকামি,তারা সময়ে প্রয়োজনে নিজের জন্য লড়”তেও পারে!তোর পা”পের ফল তুই বেঁচে থাকতে না পেলেও মরা’র পর হলেও পাবি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই আমার।আমি আমার জীবন নিয়ে অনেক ভালো আছি সুখে আছি শান্তিতে আছি।এর পর কোনো দিন যদি তুই আমার সামনে আসিস তো বেশি ভালো হবে না!
সাব্বির বলে উঠলো–,,তার মানে প্রফেসর আপনি নিজেও স্বীকার করেন জেরিন কে আমার সাথেই বেশি মানায়, মানে আপনি নিজেই বললেন আপনার থেকে বেশি যোগ্য আমি।হায়,,!শ’ত্রুর মুখে নিজের প্রশংসা মোটেও মন্দ লাগেনি শুনতে।
নিরব যেনো রাগে ফেটে পড়ছে, এই মেয়েটা তাকে এভাবে অপমান করলো?সাব্বিরের এরকম ঠান্ডা মেজাজে কথা বলা সুক্ষ্ম ভাবে অপমান টা যেনো আরো বেশি জ্বা’লাচ্ছে নিরব কে।
নিরব হঠাৎ বলে উঠলো–,,ওহ তাই বুঝি জেরিন?তুমি যদি এতোই নিজেকে নিয়ে ভালো থাকো তো এখনো আমার দেওয়া চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছো কেনো?
জেরিন কিছুই বুঝলো না,হতবাক চোখে চেয়ে আছে,তা দেখে যেনো নিরব মজা পেলো সে জেরিনের হাতের দিক ইশারা করে বললো–,,আমার দেওয়া রিং টা এখনো পড়ে আছো যে?এখনো ভালোবাসো আমায়!
নিরবের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে রাগে ঘৃ”ণায় গা রি রি করে উঠলো জেরিনের, এই ছেলেটিকে একদমই চোখের সামনে আর সহ্য হচ্ছে না তার, তবে এই বোকামি টা কি করে করলো জেরিন?আংটি টা খুলতে ভুলে গেছে এতোদিনে একবারও নজরে পড়েনি তার নিজেকে কষি”য়ে এক চ’ড় মার’তে মন চাইলো এখন।
জেরিন করুন চোখে তাকালো সাব্বিরের দিকে,কিন্তু ছেলেটার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই।
নিরব আবার বললো–,,কি মিস্টার সাব্বির তোমার একমাত্র বউ তো দেখছি তোমার শত্রু”র দেওয়া রিং হাতে নিয়ে ঘুরছে এতে তোমার লাগছে না বুঝি!
সাব্বির পকেটে এক হাত রেখে অপর হাতে জেরিনের হাত টেনে ধরলো আংটি টার দিক তাকিয়ে বলে উঠলো–,,সাব্বির জায়ান চৌধুরীর বউ এর হাতে শুধু তার স্বামীর দেওয়া অলংকারই শোভা পায়।যা এখনো পাচ্ছে,কোনো ফালতু মানুষের চিহ্ন অন্তত আমার জেরিন বয়ে বেড়ায় না।আপনি তো চশমা পড়েও চোখে কম দেখেন প্রফেসর!
সাব্বির জেরিনের হাত থেকে আংটি টা খুলে নিরবের হাতে দিয়ে বললো–,,দেখুন প্রফেসর ভালো করে দেখুন এটা শুধু একটা সামান্য আংটি না!
এটার মাধ্যমে আমি নিজেকে সপে দিয়েছি জেরিনের কাছে,নিজের নামে আবদ্ধ করে নিয়েছি জেরিনের অনামিকা আঙুলের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা অসীম অধিকারবোধ কে!
সাব্বির হেসে বললো–,,কি হলো প্রফেসর মুখটা চুপসে গেলো কেনো?দেখুন ভালো করে ওই আংটির মাঝে আপনার কোনো চিহ্ন ও নেই যা আছে পুরোটাই আমার নাম আমার আধিপত্য!
হকচকিয়ে তাকালো জেরিন,এই রিংটা সাব্বির কবে দিলো?সে তো কি়ছু জানেই না।
সাব্বির আংটি টা নিয়ে জেরিনের হাত টা নিজের হাতের ভাঁজে নিলো, আলতো হাতে আংটিটা পড়িয়ে দিলো আবার জেরিনের অনামিকায়!
পর পর শুধু অবাকই হচ্ছে জেরিন,কি থেকে কি হচ্ছে!
নিরবের মুখ অপমানে থমথমে হলো,সে প্রস্থান করতে পা বাড়ালো সেখান থেকে।
সাব্বির পেছন থেকে বললো–,,আবার যদি জেরিনের আশেপাশে দেখি তো বাঁচা মুসকিল করে দিবো তোর কানা কোনখানের!
জেরিনের এবার হাসি পেয়ে গেলো।মৃদু হেসেও ফেললো সাব্বির তা দেখেও কিছু বললো না,হাতের ইশারায় একটা রিকশা থামিয়ে রাশভারি কন্ঠে বললো–,,উঠ!
জেরিন উঠে বসতেই সাব্বির চলে গেলো,জেরিন বলে উঠলো–,,তুই যাবি না সাব্বির?
সাব্বির পেছন ফিরেও তাকালো না,রিকশা ছেড়ে দিলো চালক,জেরিন তাকিয়ে পিছনের রাস্তায় ছেলেটি এভাবে চলে গেলো?এতো কিসের রাগ সাব্বিরের জেরিনের উপর!
বাড়ির কাছটায় আসতেই জেরিন মোবাইল বের করে নেহা কে কল দিলো নেহা ফোন রিসিভ করতেই বলে উঠলো–,,নেহা সাব্বির কি বাড়ি ফিরেছে?
নেহা তখনই দেখলো সদর দরজা দিয়ে সাব্বির আসছে,সাব্বির ইশারায় নেহা কে বলতে বললো যাতে জেরিন কে বলে–,,সে আসেনি!
নেহা তাই করলো।যা শুনে জেরিন ওহ বলে ফোন কেটে দিলো,নিজ মনেই ভাবতে থাকলো তবে কি একটু আগে সাব্বিরের সাথে দেখা হওয়াটা সবটাই ভুল ভ্রম!কিন্তু কি করে হতে পারে একটা জল’জ্যান্ত মানুষ কি করে মিথ্যা হতে পারে!
ততক্ষণে বাড়ির গেইটে রিকশা থামলো ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে ঢুকলো জেরিন।দেখলো নেহা,বৃষ্টি, রৌফ,সাব্বির বসে কিছু একটা নিয়ো হাসাহাসি করছে!
জেরিন যেনো ধপ করে জ্ব’লে উঠলো, এতোদিন দূরে থেকে তাকে কষ্ট দিয়ে ছেলেটার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই!দিব্যি হাসছে, হাসিটা যেনো সহ্য হলো না ওর,রাগে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দ্রুত পা ফেলে চলে গেলো রুমে।
এর মধ্যে সাব্বির পড়লো সেতারা বেগমের খপ্প”রে।একে একে বলছেন তিনি রাগ জি”দ হইলেও দূরে থাকা ভালা কথা না দাদু ভাই,কাছে থাইকা বুঝতে হয়, অভিমান ভাঙ্গাইতে হয়।রাইতে বুকে জড়াইয়া ধইরা ঘুমাইতে হয় এতে বন্ধন মজবুত হয় সম্পর্কে কোনো দিন ফাটল ধরে না!
সাব্বির চোখ বড় বড় করে তাকালো,জেরিন কে কিনা সে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে?এর থেকে ভয়া”বহ দৃশ্য আর কি হতে পারে, পরে দেখা যাবে ওরা নিজেরাই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে দু পাশে!
সাব্বির সব কথা শুনে শুধু মাথা দুলাচ্ছে,সেতারা বলে উঠলো–,,যা দেখা করে আয়,তোর উপর মেলা চেত”ছে।কি করে সামলাবি তুই জানস!
সাব্বির নেহা বৃষ্টির দিক তাকালো এই দুই বোন তাকে ফাঁসি”য়ে কেমন দাঁত কেলিয়ে হাসছে!জেরিন সত্যি সত্যি এবার না তার কি”মা বানিয়ে ফেলে।
সাব্বির রুমে গেলো জেরিন নেই,জেরিনের রুমের ভিতরেও খুঁজে এলো মেয়েটা নেই।সাব্বির হতাশ হয়ে নিজের ঘরে গেলো ভাবলো হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়বে।ঠিক তখনই বারান্দা থেকে জেরিন বেরিয়ে আসলো।দু হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে সে।
সাব্বির বুঝলো জেরিন তাকে এবার আচ্ছা মতো দিবে!
সাব্বির আমতা আমতা করে বললো–,,দেখ জেরিন আমার আসলে,,,,
কথা বলা শেষ করার আগেই আকষ্মিক কান্ডে থতমত খেয়ে গেলো সাব্বির জেরিন এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে তাকে!
সাব্বির যে নিজেকে ছাড়াবে সেটাও যেনো ভাবতে ভুলে গেছে হৃদ যন্ত্র টা কোলাহল করে কিছু একটার জানান দিচ্ছে যা ঠাহর করতে অপরাগ সাব্বির।
জেরিনের কান্নার শব্দে বিচলিত হলো সাব্বির,জেরিন কে ছাড়িয়ে মুখটা নিজের দুহাতের মধ্যে নিলো,চোখের পানি মুছে দিয়ে আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,,কাঁদছিস কেনো বোকা?
জেরিন ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আবার অগোছালো ভাবে সাব্বির কে জড়িয়ে ধরলো। পিঠের দিকের শার্ট কিছুটা আঁকড়ে ধরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো–,,আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গিয়েছিলি তুই?আর ছেড়ে যাস না প্লিজ, আমি স্যরি আর কখনো ওরকম ভাবে কথা বলবো না।আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না,অনেক কষ্ট হয় আমার!জানি তুই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি,কিন্তু আমি পারবো না।
সাব্বির হাসছে,তার পর দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো–,,তুই যেহেতু ভাবিস আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো তাহলে তো আমারও উচিত এটাই মনে করা।যেহেতু তোকে ছাড়া থাকতে পারবো তাহলে এখানে থাকবোই বা কেনো?
জেরিনের ঝটপট জবাব –,,আমি বলেছি তাই থাকবি তুই!
চলবে,,,
#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩৬(শেষ অংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাব্বির জেরিনের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়।মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ায় জেরিন কষ্ট পেলো,মনের কোনে অভিমানেরা শক্তপোক্ত ভাবে জায়গা করে নিলো।জেরিন ভেবেই নিয়েছে সাব্বির চায় তার থেকে দূরে থাকতে,জেরিন হয়তো বেশিই বিরক্ত করছে, নিজ মনে নানাবিধ প্রশ্ন উঠিয়ে নিলো জেরিন,নিজের মায়ের কথা গুলোও এখন মনে পড়ছে তার সে হয়তো সত্যি সাব্বিরের যোগ্য নয়!যদি সাব্বির দূরে থেকেই বেশি ভালো থাকে তো জেরিন ও আর তাকে বিরক্ত করবে না।থাকুক নিজের মতো।
জেরিন নিঃশব্দে বেড়িয়ে চলে যায় রুম থেকে।জেরিনের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পেছন ফিরে সাব্বির,কি হলো মেয়েটা কি চলে গেলো?এর মতো ডাকা’ত মহিলা কিছুই বললো না উল্টো কেঁদে দিলো ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে সাব্বির কে।জেরিন আবার উল্টো রাগ করে বসে নেই তো!কিন্তু জেরিন তো এমন মেয়ে না,সাব্বির কিছু করবে আর ওই মেয়ে তাকে আস্ত রাখবে কিছুই করবে না এটা সত্যি অবিশ্বাস্য!
রাতে খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত সাব্বির এতোদিন কোথায় ছিলো এটা নিয়ে প্রশ্ন করলো না কেউ।এমন ভাব সবাই জানে সাব্বির কোথায় ছিলো!জেরিন সেই আগের মতোই নিশ্চুপ ভঙ্গিতে খাচ্ছে,সাব্বির আসার পরও একবারের জন্য ও তাদের কোনো ঝ’গড়া না হওয়ায় বাড়ির লোক উল্টো চিন্তিত। কিন্তু সবার খুশি হওয়ার কথা ছিলো,মানুষ কিছু একটা দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার বিপরীত জিনিস গুলো সহজে মেনে নিতে পারে না।
খাবার টেবিলে একটুর জন্য হলেও আজ কোনো রকম ঝামে’লা হয়নি।সেতারা বেগম ভাবলেন হয়তো দুটোর আক্কেল হয়েছে, ভালো করে থাকলেই হয় এবার!
খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে গেলো,থেকে গেলো নেহা, জেরিন দুজন হাতে হাতে সাহায্য করে দিলো বড়দের।নেহা মাঝেমধ্যেই সাহায্য করে আজ জেরিন কে দেখে হামিদা বেগম অবাক হলেও কিছু বললেন না।মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে হঠাৎ, কি এমন হলো কে জানে!জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে উল্টো রাগ দেখাচ্ছে তাই তিনি ও তেমন ঘাটলেন না।
—————–
রাতে সাব্বির ভেবেছে ঘসেটিবেগম নিশ্চিত এসে হাজির হবে।এটার শান্ত থাকা মানে তীব্র ঝ’ড়ের পূর্বাভাস!কিন্তু মেয়েটা আসলো না।
জেরিন বিরক্ত হয়ে বসে আছে বারান্দায়, কেমন যেনো এক বিদঘুটে অনুভূতিতে তলিয়ে যাচ্ছে তার মন।সাব্বির তো শুধুই ওর বন্ধু ছিলো, ছোটবেলা থেকে এক সাথে বেড়ে উঠা, তাদের সম্পর্কে একটা ভালো দিক ছিলো কেউ কখনো কারোর থেকে কিছু লুকাতো না,স্বচ্ছ পানির মতো ছিলো এক জন অন্য জনের কাছে যেখানে তাকালেই ভিতরের সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়,অনেক সময় এমনও হয়েছে কিছু না বলতেও সাব্বির বুঝে যেতো জেরিন কি বলতে চায়।জেরিনের ক্ষেত্রেও এমন হতো।তাদের সম্পর্কের এরকম রং বদল হওয়াটা কি খুব বেশি জরুরি ছিলো?যার ফলে ওদের মাঝে সৃষ্টি হয়ে গেলো এক দূরত্বের দেয়াল!সাব্বির তো কোনো দিনই জেরিনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নি,যতই ঝ’গড়া হতো, মারা’মারি করতো দিন শেষে সব ভুলে যেতো।ওইদিন ওইটুকু কথা তে সাব্বির এতো বেশি কষ্ট পেলো?যার জন্য এখন জেরিনের মুখ দেখাটাও পছন্দ করে না!জেরিন নিজের পরিবর্তন কিছুতেই বুঝতে পারছে না,উত্তর পাচ্ছে না মনে এসে বারি খাওয়া কিছু প্রশ্নের।কেনো সে এতোটা উতলা হচ্ছে সাব্বিরের জন্য? কেনো মনে হলো সাব্বির কে ছাড়া থাকতে পারবে না।ওর রুমে তো সে নিজেই যেতে চায়নি কখনো তবে ইদানীং কেনো এতো বেহা’য়াপনা করছে?সাব্বিরের সব বিষয়ে নাক গলানো টা ওর অপছন্দ হবে এই সাধারণ জ্ঞান টুকু কেনো নেই জেরিনের মাথায়?কিসের জন্য কোন অধিকারে এতো কিছু করছিলো?আগের তুলনায় একটু বেশি বারাবাড়ি করে ফেললো না তো জেরিন!সাব্বিরের জন্য কি অন্য কোনো অনুভতি জন্মালো মনে?কিন্তু এটা কিভাবে হতে পারে!সাব্বির তো বলেছে বিয়ে টা শুধুই কাগজে কলেমে, লোক দেখানো,ওদের সম্পর্ক টা থাকবে আগের মতোই।তবে জেরিন কেনো বারাবাড়ি করবে?সে ও পারে নিজের আজেবাজে চিন্তা কে সাইডে রেখ নরমাল থাকতে,জেরিন চায় সাব্বির যাতে ভালো থাকে একজন ভালো বন্ধুর দায়িত্ব পালন করতে চায় জেরিন,সাব্বির ওর জন্য কতো কিছু করলো এতটুকু না করলে স্বা”র্থপরতা হয়ে যাবে!জীবনে ভালো থাকার অধিকার সবারই আছে,জেরিন তো ভালো আছে থাকবে,তবে সাব্বির কেনো নয়!
জেরিন দরজা আটকাতে ভুল গেছে,সাব্বির সেই কখন এসেছে জেরিন কে গভীর চিন্তায় ডুবে থাকতে দেখে,ডাকেনি।চুপচাপ দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে দুহাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে, পর্যবেক্ষণ করছে জেরিনের ভাবভঙ্গি নিখুঁত ভাবে দেখছে মেয়েটাকে। কিছু সময় পর পরই মুখভঙ্গি পাল্টে যাচ্ছে,কখনো ঠোঁট তো কখনো ভ্রু কুঁচকে ফেলছে,কপালে ভাজ পড়ছে।মৃদুমন্দ বাতাসে উড়ছে খোলা চুল।চেয়ারে বসে রেলিং এ পা দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে!
সাব্বির থমথমে কন্ঠে বলে উঠলো–,,কি এমন ভাবছিস? মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব মানুষের চিন্তা তুই একাই করে ফেলবি আজ!
জেরিন হঠাৎ কারো কথা শুনে পেছনে তাকায়,হালকা হেসে বললো–,,তুই এখানে?
সাব্বির পাশের চেয়ারটায় বসে বললো–,,আসতেই পারি।তোর কি হয়েছে হঠাৎ এতো চুপচাপ আছিস?কেউ কিছু বলেছে!
–,,না!কে আবার কি বলবে।
সাব্বির কিছুক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে রইলো চোখ ছোট ছোট করে। জেরিন তো কখনো কিছুই লুকায় না,আজকে এরিয়ে যেতে চাইছে কেনো?মেয়েটা কি রাগ করেছে এতো দিন ওর সাথে কথা না বলাতে!
–,তুই কি আমার উপর রাগ করে আছিস জেরিন?
জেরিন হেসে বললো—,,রাগ করার মতো আবার কি করেছিস?
রাত হয়েছে যা গিয়ে ঘুমা, আমিও ঘুমাতে গেলাম!
জেরিন কথাটা বলেই রুমে চলে গেলো,সাব্বির হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলো,এখন তো মনে হচ্ছে নেহা আর বৃষ্টির কথা শুনাই উচিত হয় নাই।এই মেয়ের মান অভিমান এখন কিভাবে ভাঙ্গাবে!
সাব্বির উঠে গিয়ে দেখলো জেরিন কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে।সাব্বির গিয়ে একবার পুরো খাটের চারপাশে চক্কর কাটলো।
জেরিনের মাথার কাছে গিয়ে সাব্বির ভাউ করে উঠলো। জেরিন ততক্ষণাৎ উঠে বসলো চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,সাব্বিরের বাচ্চা যা বলছি এখান থেকে!
সাব্বির জেরিন কে একটা ঠেলা মে’রে পাশে বসে পড়লো।হেসে বলে উঠলো–,,এইতো আমার ঘসেটিবেগম আগের মুডে চলে এসেছে!
জেরিন অ’গ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সাব্বিরের উপর।সাব্বির ভাবলেশহীন ভাবে বসে থেকে বললো–,,যাও বাবু সরে বসো আমি আজকে এখানেই থাকবো!আমার রুমে এতোদিন থেকেছো এখন আমি এখানে থাকবো বুঝতে পেরেছো শোধবোধ!
জেরিন রাগে ফোঁস করে উঠলো–,,তুই কেনো থাকবি,যা বলছি তোর রুমে আর কোনো দিন যাবো না!
সাব্বির উল্টো রাগ নিয়ে বললো–,,মামা বাড়ি আবদার পেয়েছো বুঝি,যখন খুশি যাবে যখন খুশি যাবে না এটা তো আমি মানবো না!আমার এখন তোকে ছাড়া ঘুম আসে না।চল বলছি না হয় আমাকে থাকতে দে!
জেরিন রাগে ফোঁস ফোঁস করছে,তা দেখে সাব্বির মুচকি মুচকি হাসছে, এই মেয়েকে তো আজকে যেভাবেই হোক রাগাতে হবে।এর হাতে মা”র না খেয়ে সাব্বিরের অশান্তি লাগছে!
জেরিন আচমকা সাব্বিরের গলা চেপে ধরলো।হঠাৎ করে এমন হওয়ায় সাব্বির ধাপ করে বিছানায় পড়ে গেলো জেরিন রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,তোর আমাকে ছাড়া কেনো ঘুম আসবে না?নাটক করবি না একদম আমার সাথে।তোর রুমে কয়েকদিন গেছি বলে এখন খোঁটা দিচ্ছিস।বললাম না আর যাবো না,তাও জ্বালা’তে কেনো এসেছিস, আসার পর তোকে একবার খোঁচা মেরেছি আমি?বল!পনেরো দিন তো ঠিকই শান্তিতে ঘুমিয়েছিস তখন আমাকে ছাড়াই তো ঘুমিয়েছিস,এখন এসব ফালতু কথা বলবি না!বদঅ”ভ্যেস খুবই খারা”প জিনিস বুঝেছিস।আমাকে অভ্যাস বানানো ছেড়ে দে সুখে থাকবি, আমার থেকে দূরে থাকতে চাস তাইতো চলে গিয়েছিস, আমিও চাই তুই ভালো থাক, আমি কিছু মনে করবো না তুই তোর মতো থাক যা আমি আর কোনো দিন বিরক্ত করবো না তোকে!
সাব্বিরের দৃষ্টি নিবদ্ধ জেরিনের মুখ পানে। জেরিন কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নিলো সাব্বির টাল সামলাতে না পেরে জেরিন পড়ে যায় সাব্বিরের বুকের উপর,উঠে যেতে নিলেই সাব্বির দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
জেরিন কাঁপা কন্ঠে বললো–,,ছাড়!আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
সাব্বির ফটাফট জবাব দিলো–,,হোক,এখন থেকে অভ্যাস করে নে এভাবেই থাকতে হবে তোকে।
–,,মগের মুল্লুক পেয়েছিস?ধুর ভাললাগে না,ছাড় তো যা রুম থেকে ঘুমাবো আমি!
–,,আমি কি চাইনিজ ভাষা বলেছি বুঝতে পারিস নি।
–,,ভুল করছিস তুই!
–,,তোর কোনো সমস্যা?
–,,মা বলেছে কয়েকদিন পর তোর রুমে থাকার জন্য যে পারমিশন টা পেয়েছিলাম ওইটা আর থাকবে না।তখন তুই ও আর আসতে পারবি না তাই এখন থেকেই দূরে থাক ভাই যা।শান্তি মতো ঘুমাইতে দে!
সাব্বির জেরিন কে ছেড়ে উঠে বসলো অবাক হয়ে বললো–,,কি সব বকছিস?ক্লিয়ার করে বল!
—,,তুই একটা কুমড়াই রয়ে গেছিস সাব্বির!সহজ কথা বুঝতে এতো সময় লাগে কেনো তোর।কচি খোকা নাকি তুই?যা তো ভাগ, একটা বিয়ে করে নে পরে ওই মাইয়ারে গিয়ে বিরক্ত কর।
সাব্বির এবার রেগে গেলো, তা দেখে জেরিন চোখ ছোট ছোট করে তাকালো বললো–,,কি সমস্যা?
–,,আমাকে বিয়ে দেওয়ার অনেক তাড়া দেখছি তোর!
–,,হ অনেক তাড়া। আর কিছু বলবি?
–,,তুই কি চাস এমন কিছু করি এখন, যার পর এমন কথা মুখে তো দূর মাথায় আসার সাহস করবি না তুই!
–,,থ্রে’ট দিচ্ছিস!
–,,না!তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি বিবাহিত, আমার বউকে চিনিস তুই?আমাকে রাগাবি না জেরিন বিনা নোটিশে বাসর করে ফেলবো!তখন আমাকে কোনো দোষ দিতে পারবি না।
জেরিন চোখ বড় বড় করে তাকালো,মুখ হা হয়ে গেছে।সাব্বির জেরিনের মুখ বন্ধ করে দিয়ে বললো–,,মশা ঢুকে যাবে মুখ বন্ধ রাখ।
জেরিন মিন মিন করে বললো–,,তুই রুলস ব্রে’ক করছিস সাব্বিরা!
–,,এ্যাহ এখন সব হাওয়া বের হয়ে গেলো না।শর্ত প্রথম তুই ভেঙ্গেছিস।
–,,আমি আবার কি করলাম?আশ্চর্য!
–,,একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ।তুই মানলেও তুই আমার বউ না মানলেও।যদি ভালো মতো শান্তি বজায় রেখে চলিস তো আমিও ভদ্র পোলা হয়ে থাকবো,যদি কোনো ত্যা’ড়ামি করিস তো,বুঝে নে কি কি হবে তোর সাথে!
–,,দেখ সাব্বির,আমাদের বিয়ে একটা দুর্ঘটনা!মা ও চায় না এই বিয়ে টা আর থাকুক, ডিভোর্স,,,,,,,,,
সাব্বির ধমক দিয়ে বলে–,,চুপ!একদম চুপ এই শব্দ টা আরেকবার উচ্চারণ করবি না।মেজাজ খারাপ করবি না।
–,,আমার সাথে কেনো থাকতে চাচ্ছিস?
–,,তোর সাথে ফুটবল খেলবো তাই!
জেরিন বিরক্ত হয়ে বললো–,,মজা করবি না একদম!
তুই তো আমার মুখ দেখাও পছন্দ করিস না আবার বলছিস বউ!একটা সমাধানে আয় তো।
–,,সমাধান চাই তোর?
–,,হ্যাঁ চাই।দোটানায় থাকতে পারবো না আমি,কি রকম কি রকম ফিলিংস হচ্ছে আজকাল ওইটাই তো সামাল দিতে পারছি না,আবার তুই বলিস আরেকটা!
সাব্বির হো হো করে হেসে দেয়।
–,,ভেটকিমাছের মতো হাসবি না!সমাধান দে।
–,,এতোদিন আমাকে ছাড়া থাকতে কেমন লেগেছে?
সত্যি সত্যি জবাব দে।
–,,খুবই জঘ’ন্য!তোকে সামনে পাইলে না তখনই কাঁচা খেয়ে ফেলতাম আমি,শা”লা কি এমন করেছিলাম তোকে ভাব নিয়ে চলে গেলি কেনো?
–,,নেহা আর বৃষ্টির বুদ্ধি ছিলো!
–,,কিহ্!!
সাব্বির আবার বললো–,,আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি তুই?ধর তোর কথা মতো আমি আরেকটা বিয়ে করলাম,ওই মেয়ে কি তোর সাথে আমাকে মিশতে দিবে?আমাদের বন্ধুত্ব থাকবে?যখন তখন আমার রুমে এসে আমার উপর টর্চা’র করতে পারবি?
–,,আমি তোর উপর টর্চা’র করি?
–,,চুপ।আসল প্রশ্নের উত্তর দে গা”ধী!
–,,না।তোর বউ কেনো আমি হইলেই তো দিতাম না কাউকে আমার জামাইয়ের আশেপাশে আসতে!
–,,তোমার তো বুদ্ধিতে ব্রেন ঠাসা তাই নিজের জামাই কে আরেকটা বিয়ে করাইতে চাও!এবার বল আমার সাথে বাকিটা জীবন থাকতে চাস?
–,,হুম!
সাব্বির জেরিনের মাথায় একটা মে’রে বললো–,,তাহলে মাথায় ঘুরপাক খাওয়া সব ননসে’ন্স মার্কা প্রশ্ন গুলোকে বিদায় কর!দেখ জেরিন একটা সোজাসাপটা কথা বলি
আমি আর তুই একসাথে থাকতে চাই,তোকে ছাড়া আমার চলে না,এখন সম্পর্ক যেমনই হোক আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে।সবার আগে আমরা বন্ধু যদি এর বাহিরেও কোনো ফিলিংস আসে তোর বা আমার মধ্যে তাহলে ওটা স্বীকার ও করবো আমরা। এখন যেভাবে আছি সেভাবেই থাকবো,কিন্তু তুই যদি এর মধ্যে বা হাত ঢুকাস তাহলে তোর মাথা ফাটা’বো আমি!
–,,বুঝানোর কথা বলে উল্টো ধমকাচ্ছিস!
সাব্বির জেরিনের ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করিয়ে বললো–,,বিশ্বাস কর জেরিন পনেরো দিনের একটা দিন ও ঘুমাতে পারিনি আমি।তোর প্রতি অনুভূতি নিয়ে এখনো নিশ্চিত না আমি তবে এতটুকু সত্যি তোকে ছাড়া থাকা অসম্ভব তুই আশেপাশে না থাকলে নিজেকে শূন্য শূন্য লাগে।তোর সাথে ঝ’গড়া না করলে,তোর তুলতুলা হাতের মাই”র না খেলে নিজেকে কেমন ম’রা ম’রা লাগে।আমি চাই আমার দিন শুরু হোক তোকে দেখে, রাতে ঘুম হোক তোকে দেখে দেখে।প্লিজ জেরিন এতটুকু অধিকার কেঁড়ে নিস না! আমার আর কিছু চাই না,চাই শুধু তুই থেকে যা আমার জীবনের পূর্ণতা হয়ে।তোর থেকে ভালো জীবন সঙ্গী আমি কোথাও পাবো না বিশ্বাস কর!
বল থাকবি তো আমার বেটার হাফ হয়ে?
জেরিন মুখ ভেংচি কাটলো পরে চুল গুলো সরিয়ে কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললো–,,ঠিক আছে ঠিক আছে,এতো করে বলছিস যখন, হলাম না হয় তোর বউয়ের চরিত্রের রোল মডেল!
সাব্বির ভাব নিয়ে বললো–,,নাটক”বাজ!
–,,তোর মাথা বের হ আমার রুম থেকে!
–,,নো ওয়ে!ঘুমাবো তুই ঘুমাইতে চাইলে ঘুমা না হয় তাকিয়ে থাক,কতোদিন পর নিজেকে হালকা লাগছে, জমপেশ একটা ঘুম হবে!
————–
মিহির তুমি কি আসবা?
–,,স্যরি বউ তোমার ছোট আব্বু আমাকে ছুটি দিবে না!
–,,ঠিক আছে আর কথা বলবা না আমার সাথে। ঘুরতে যখন নিয়ে যাবে না,তখন কথা দিয়েছিলে কেনো?
মিহির একটা হাসি দিয়ে বললো–,,আসেন মহারানী আমি গেইটের বাহিরে আপনার অপেক্ষায়!
–,,সত্যি তুমি এসেছো?
–,,নিজে এসে দেখো!
বৃষ্টি শাড়ির কুঁচি ধরে এক দৌড় লাগালো। মিহির গাড়ির সামনে পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে, বৃষ্টির হাসি মুখ দেখে সে নিজেও প্রসন্ন চিত্তে হাসলো।
বৃষ্টি এগিয়ে যেতেই,মিহির তার কোমর জড়িয়ে ধরলো।বৃষ্টি ফিসফিস করে বললো–,,কি করছো কি রাস্তার মধ্যে। কেউ দেখে ফেলবে।
–,,দেখুক!আমার বউকে ধরেছি তাতে অন্য লোকের কি!
–,,আচ্ছা চলো এখন এখানেই সন্ধ্যা করে ফেলবে নাকি!
–,,জান!আমার একটা জিনিস চাই।
–,,কি চাই তোমার আবার?
–,,বউয়ের ঠোঁটের একটা নরম গরম চুমু!
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,মিহির!সরো তো গাড়িতে উঠতে দাও।
মিহির হেসে গাড়িতে উঠলো পরে দুজন ঘুরতে গেলো এক পড়ন্ত বিকেলে।শহরের জ্যাম ঠেলে বিরক্তি ঠেলে কোনো এক অজানায় যেখানে থাকবে শুধু প্রণয় রাঙা সময় ভালোবাসায় মুড়ানো নতুন মিষ্টি স্মৃতি!
——-
জেরিনের পরীক্ষা শুরু হবে কয়েকদিন পর এদিকে মেয়েটার পড়াশোনার অবস্থা বেজায় বা’জে,নিরবের সাথে ঘুরে ঘুরে ক্লাস মিস দিয়েছিলো সে সময়কার নোটস নেই।তার পরও ক্লাসে তেমন মনোযোগ দেওয়া হয়নি সব মিলিয়ে পড়াশোনার সাথে এক যু”দ্ধ চলছে জেরিনের!
এখন সাব্বিরের উপর দিয়ে যাচ্ছে প্রচুর প্রেশার ছেলেটা ভার্সিটি সামলে যায় অফিসে সেখানে কাজ সব মিলিয়ে বাড়ি ফিরে রাত করে।এতো এতো ক্লান্তি মাঝেও জেরিনের খোঁজ নিতে ভুলে না যেনো,নিজের দায়িত্ব থেকে এক চুল ও নড়েনি এখন পর্যন্ত।
জেরিন পড়াশোনা করে বিরক্ত হয়ে বসেছে সোফায়। কিছুই ঢুকছে না মাথায়,খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন সাহারা বেগম।তাহমিদা বেগম রান্না ঘরে।
নিখিল, নেহা, বৃষ্টি, রৌফ নামলো নিচে,জেরিন কে আগেই বসে থাকতে দেখে নিখিল বললো–,,কিরে কি হয়েছে তোর?আবার মুখ ফুলিয়েছিস কেন?সাব্বিরের সাথে আবার লেগেছিস নাকি, অফিস থেকে কোথায় চলে গেলো ছেলেটা বাড়িতে আসলো না এখনো!
জেরিন মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,ওর সাথে লাগতে যাবো কেনো?
এর মধ্যেই বাড়িতে ঢুকলো সাব্বির।জেরিনের হাতে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে দিয়ে বললো–,,নেন মহাশয়া আপনার সব নোটস,এবার পড়ে অন্তত পাশ মার্ক উঠান।হাড় মাস জ্বা’লিয়ে খেলো ব’দ মহিলা!
আজকে জেরিন রাগলো না গদগদ হয়ে যেই না কিছু বলতে যাবে,সাব্বির বলে উঠলো–,,তোর কাজ করে দিয়েছি আমি, এবার সুন্দর মতো এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আমাকে খাওয়া!
জেরিন খুশি মনে আচ্ছা বলে রান্না ঘরে গেলো।
কিছুক্ষণ পরেই কফি নিয়ে হাজির জেরিন।সাব্বিরের দিক এগিয়ে দিয়ে বললো–,,তোর অনেক কাজ করতে হচ্ছে এখন তাই না?সব কিছু হলো আমার জন্য, না হয় তো তুই এখন শুধু পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারতি!
সাব্বির সদ্য গোসল সেরে এসেছে চুল গুলো থেকে টপ টপ করে পানি ঝরছে।জেরিন সাব্বিরের হাতে কফি কাপ দিয়ে ওকে টেনে বিছানায় বসালো,জিজ্ঞেস করলো–,,তোয়ালে টা কোথায় রেখেছিস?
সাব্বির বললো–,,জানি না!
–,,তুই বড্ড অগোছালো হয়ে যাচ্ছিস সাব্বির!
–,,তুই এসে গুছিয়ে দিলেই তো পারিস, কিন্তু তুই শুধু চলে যাওয়ার বাহানা খুঁজিস!
জেরিন নিজের ওড়না দিয়ে সাব্বিরের চুল গুলো মুছে দিয়ে পেছন থেকে সাব্বিরের গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো
–,,বেশি বুঝস কেন?দিবো গলাটা টি”পে?
যাই হোক অনেক অনেক থ্যাংস নোটস গুলা জোগাড় করে দিয়েছিস তাই!
–,,হুহ্! শুধু একটা ধন্যবাদ দিলি ঘসেটিবেগম কোনখানের!
জেরিন সাব্বিরের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিলো!
রুম থেকে বের হতে হতে বললো–,,গিফট না এটা ঘু’ষ!ঘু”ষখোর একটা নিচে আয় খেতে।
————-
সময়ের পালা বদলে কাটে মাসের পর মাস চলে যায় নিত্য নতুন দিন, ঠিক যেভাবে কেটে গেলো পুরো একটি বছর!
অফিসের বারান্দায় বসে নিখিল,তখনই নিখিলের ফোনটা বেজে উঠলো ফোনটা উঠিয়ে কানে নিতেই কেউ একজন বিচলিত কন্ঠে বললো–,,সাহিল সুস্থ হয়েই, গার্ডদের মে”রে পালিয়ে গেছে নিখিল!
নিখিল শান্ত সুরে বললো–,,জানতাম এমনই হবে!তুই চিন্তা করিস না।ও বাংলাদেশেই এসেছে এক ঘন্টা আগে,আমার কাছে খবর আছে।
–,,তুই কেনো যে এটাকে বাঁচিয়ে রাখলি বুঝলাম না!
–,,এতো বুঝে তোর কাজ নেই!
**
ভার্সিটি গেইটে দাড়িয়ে নেহা, বৃষ্টি এখনো ভিতরে।হুট করে নেহার সামনে এসে দাড়ালো কেউ।
নেহা হকচকিয়ে তাকালো এতোদিন পর রিসোটের সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো, যে ছেলেটা তার হাত ধরেছিলো সে ছেলেটা এখানে!নেহা ভয় পেলো কিছুটা,ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে!
সাহিল কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে বললো–,,কি খবর নেহা!আমাকে দেখে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
–,,আপনি আমাকে চিনেন?
–,,খুব ভালো করে!
–,,ওহ তাই বুঝি!আপনার এতো সময়?আমার সম্পর্কেও সব জানেন, মানুষজন তো এখন সমাজ সেবাও করে সোস্যাল মিডিয়া তে পোস্ট দেওয়ার জন্য, আপনি ও নিশ্চয়ই কোনো কারন ছাড়া আমার খবর রাখেননি!তো বলে ফেলুন কি মত’লব আপনার?
–,,তোমাকে পাওয়া!
নেহা হেসে ফেললো–,,স্যরি মিস্টার,আমি একজনের পুরোদস্তুর হয়ে গেছি,সে আমাকে পেয়ে গেছে আমি নিজেকে সেই ব্যক্তি কে দিয়ে দিয়েছি।আপনার আমাকে পাওয়ার আশা কোনো দিনও পূরণ হবে না।তাই এখন আসতে পারেন!
সাহিল গাল এলিয়ো হাসলো–,,তা তো দেখাই যাবে!দেখা হচ্ছে খুব শিগ্রই তৈরি থেকো কিন্তু।
নেহা বিরক্ত নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো,তবে একটা জিনিস খুব ভাবাচ্ছে ওকে ছেলেটিকে দেখতে অনেকটাই নিখিলের মতো! কিছু কিছু পার্থক্য আছে তবে খুব ভালো করে দেখলে পার্থক্য করা হয়তো মুসকিল হবে!
———–
নেহাকে নিখিল ফোন দিয়ে বলেছে আজ তৈরি থাকবি, তোকে একটা সারপ্রাইজ দিবো!
নেহা তো খুশিতে মন ভরে সেজেছে।খয়েরী রঙা শাড়িতে সাদা পাড় নেহা কে ভীষণ মানিয়েছে শাড়িটাতে!
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলেই চলে আসার কথা নিখিলের।বসার ঘর থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে,নেহা ভেবেছে নিখিল হয়তো চলে এসেছে,নিখিল কে দেখার জন্য এক প্রকার দৌড়েই সিড়ি বেয়ে নামছে।কিন্তু শেষ সিঁড়িতে এসেই নেহার পা থমকে গেলো।বসার ঘরের সোফায় সাহিল বসে সাথে মধ্যবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা!
সাহিল অপলক তাকিয়ে আছে নেহার দিকে,নেহার যেনো গা গুলিয়ে আসলো এরকম পরিবেশ দেখে সোফায় বসা শাহআলম চৌধুরী শহিদুল চৌধুরীর মুখ ও থমথমে নিখিল এখনো আসেনি।দোতলার করিডরে বৃষ্টি, জেরিন।হামিদা বেগম,তাহমিদা বেগম,সাহারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন,সেতারা বেগম বেরিয়ে আসলো নিজের ঘর থেকে!
বহু বছর পরও ইলিয়াস খানকে দেখে চিনতে ভুল করলেন না বৃদ্ধা!
ইলিয়াস খান হেসে বলে উঠলো–,,শহিদুল ভাই আজ কোনো বিজনেসের বিষয়ে কথা না, এসেছি ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে!তোমার মেয়ে নেহা কে সাহিলের বেশ পছন্দ হয়েছে।
কথাটা বিস্ফো”রণের মতো ঠেকলো বসার ঘরে।তখনই বাড়ি আসলো মিহির,সাব্বির,নিখিল।
নিখিল সাহিল কে দেখেই হেসে গিয়ে পাশে বসলো তা দেখে যেনো নেহার মাথায় আগু”ন ধরে গেলো,নেহা কে এখনো দেখেনি নিখিল।
মিহির নিখিলের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো–,,দেখ সিঁড়িতে নেহা!
নিখিল তাকাতেই নেহা কটমট দৃষ্টিতে তাকালো রাগে গজগজ করতে করতে ভিতরে চলে গেলো।নিখিলের বুঝতে বাকি নেই আজ তাকে কি কি সহ্য করতে হবে!
নেহা রাগে গিয়ে গ্লাস টা আছাড় মে”রে ভেঙে ফেললো কানের দুল গুলো টেনে খুলে ফেললো নিচে।
জেরিন, বৃষ্টি দৌড়ে গেলো। নেহা রাগে ফোঁস ফোঁস শব্দ করছে।বৃষ্টি গিয়ে বললো–,,, শান্ত হ কি করছিস!
–,,কি করছি মানে?তোর ভাই কি করলো নিজের বউকে সাজতে বলেছে যাতে পাত্র পক্ষের সামনে নিয়ে দাঁড় করাতে পারে,এটা নাকি সারপ্রাইজ। একবার আসুক আমার সামনে সারপ্রাইজ ধুয়ে যদি পানি না খাওয়াচ্ছি তো আমার নাম নেহা না!
জেরিন বলে উঠলো–,,পাখি আমার ভালো এভাবে রাগে না।ভাইয়া কে বকে দিবো পরে!
দুজন মিলে বুঝ দিতে থাকলো নেহা কে।
নিখিল আসতেই শহিদুল চৌধুরী হেসে বললো–,,ইলিয়াস ভাই বড্ড দেরি করে ফেললেন যে আমার মেয়ে নেহা তো বিবাহিত! এই যে নিখিল আমার একমাত্র মেয়ের জামাই দুবছর আগেই তো ওদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিক ভাবে!মেয়ে ছোট তাই কাউকে জানাইনি আমরা সামনের মাসেই তো ওদের রিসিপশন!কয়েকদিনের ভিতরই তো সবাইকে জানাতাম!
সাহিল যেনো রেগে ফেটে পড়ছে,নিখিল মেহমেত চৌধুরী এভাবে হাঁটে হাড়ি ভেঙে দিলো!কিছুতেই মানতে পারছে না সে,এমনকি বিজনেস ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ডিলটা ও ওরা পেয়েছে! পর পর দুইটা হার যেনো মানতে পারছে না কিছুতেই না!
চলবে……