#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাহিল,চৌধুরী বাড়িতে থাকা শুরু করেছে কয়েক দিন হতে চললো সবার সাথে তার সম্পর্ক বেশ ভালো হয়েছে।নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে, খুব একটা কঠিন হয়নি তার জন্য, সবাই ভীষণ রকম সাপোর্টিভ ছিলো।
সাহিল মানা করা সত্ত্বেও নিখিল আর বাকিরা মিলে ওকে রাজি করিয়েছে খানদের থেকে কিনে নেওয়া কোম্পানি টা সমালাতে।ও এটা ভালো পারবে,শুরু থেকেই এর সাথে যুক্ত সে।সাহিল শেষে না পেরে রাজি হয়েছে অফিসে যাবে ভেবেছে দুইদিন পর।কিন্তু এর এসিসট্যান্টের রূপে যে আছে সে ভীষণ নাছোড়বান্দা, ফোন দিয়ে দিয়ে মাথা খারা”প করে দিচ্ছে সাহিলের!
এসব কিছু ভাবছিলো সাহিল তার মধ্যে ওর রুমে হুড়োহুড়ি করে ঢুকলো সব ভাই বোন।একেক জনের মুখভঙ্গি দেখার মতো হয়েছে।সাব্বির এসেই বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।সাব্বির সহ বাকিরা সাহিল কে আগেই জানিয়েছে যারা সিঙ্গেল তাদের রুমে কোনো পারমিশন নিয়ে ঢুকি না আমরা।অভ্যাস করে নাও তুমি!
সাহিলের প্রথম দিন একটু অসুবিধে হলেও এখন সে সব মানিয়ে নিয়েছে।ভাই বোনদের সাথে আড্ডা দিতে তার ও ভালো লাগে,নিজেকে এখন আর একা লাগে না।নিজেকে প্রাণবন্ত মনে হয়।
সাব্বির মুখ ফুলিয়ে বললো–,,বিচার করো ভাইয়া, এসব অনা’চার মানা যায় না!ঘসেটিবেগম আমাকে রেখে অন্য ছেলেদের কমেন্টের রিপ্লাই করেছে!
সাব্বিরের কথা বলার পরই হো হো করে হেসে উঠলো নেহা,বৃষ্টি, জেরিন।রৌফ টা আজ কলেজে গেছে সে আবার ক্যাডেটের স্টুডেন্ট বেচারা নাওয়া খাওয়ার সময় পায় না যেনো, বাকিরা গেছে অফিসে।
নিখিল,মিহিরের বিয়ের রিসিপশন করা হবে পরের মাসের শুরু তে।আত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেছে ইতিমধ্যে। এবার বাড়ির বড়রা সাহিল কেও একটা বিয়ে দিতে চায় ছেলেটা এতো মেয়ে বি”রোধী কেনো বুঝে আসে না হামিদা বেগমের, সাব্বির তো ছিলো একটা তাও তো এখন বিয়ে করে বউ ছাড়া চোখে দেখে না।সাহিল টার একটা গতি হলে হয়, বাড়ি ভর্তি নাতি নাতনি না থাকলে কি জমে নাকি?তিন জা মিলে কতো শতো প্ল্যান করে রেখেছে এ দিকে বাড়ির ছেলে বিয়ে করতে চায় না!
সাহিল হাসতে হাসতে বললো–,,তোমার পক্ষ আমি নিবো না সাব্বির।আমার বোনের পক্ষে আমি!
সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে উঠে বললো–,,সবাই চল তো এখানের মানুষ টার সাথে আমাদের কোনে কথা নেই,আমাদের তো উনি পর ভাবে দেখছিস না কেমন আপনি আজ্ঞে করছে!অপরিচিত কিনা চল চল মনে হয় আমরা বিরক্ত করছি।
সাব্বিরের কথা শুনে সাহিলের মনে হলো আগের দিনের শাসা”নোর কথা।সাব্বির সহ বাকিরা বলছিলো–,,শুনো ভাইয়া রুলস ইজ রুলস আমাদের বাড়িতে ছোটদের সবাই তুই করে বলে,কারন আমাদের এতো সম্মান হজম হয় না!তা ছাড়াও তুই করে না বললে কেমন পর পর লাগে একদম বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার বর্ডা”রের মতো সম্পর্ক মনে হয়।তাই তুমি তুই করে বলবা বুঝছো,এমনিতেই আমাদের ভাই হয়ে অন্যের বাড়িতে থেকে বয়স গুলো ন’ষ্ট করেছো এখন কিন্তু আমরা একদম এসব প্রতিবেশী মার্কা ব্যবহার মেনে নিবো না!
সাব্বিরের পেছন পেছন লেজ গুটিয়ে সব গুলো বের হচ্ছে যে কেউ বলে দিবে প্রথম জন গুরু বাকিরা তার শিষ্য!
সাহিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,এই মাথা মোটা দাঁড়া বলছি,সাহস তো কম না তোদের যেতে বলেছি আমি?এমনিতেও তোদের দিয়ে একটা কাজ করানোর আছে আমার!
সাব্বির তো লাফিয়ে খাটে উঠে সাহিল কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,পেয়ারের ভাই আমার!
সাহিল নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,জেরিন তোর জামাই কে সামলা,বউ রেখে একটা পুরুষ মানুষকে কেমনে জড়িয়ে ধরেছে দেখ,আমার তো সন্দেহ হচ্ছে এখন!
সাব্বির তড়িৎ গতিতে সাহিল কে ছেড়ে দিলো বলে উঠলো–,,তোমাকে ভালো মনে করেছিলাম তুমি তো দেখছি নিখিল ভাইয়ের মতোই।কেউ একটু সম্মান দিলো না আমাকে!
সাহিল টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো–,,তোদের ভাই হয়ে ভালো হলে সমাজে কোনো মান সম্মান থাকবে নাকি আমার!এখন দুঃখে তুই কান্না কাটি করে নে চোখ মুছে ফেল!
সাব্বির বলে উঠলো–,,এ অপ’মান মেনে নেওয়া যায় না বলে দিচ্ছি দেখবে তোমার বউ তোমাকে তিন বেলা নাকানি”চুবানি খাওয়াবে!
সাহিল বলে উঠলো–,,বৃষ্টি বোন আমার এটা কে সরা বোন, বিয়ে না করতেই তোর ভাইকে মে’রে তোর ভাবিকে বিধবা করার তাল করছে এই হত”চ্ছাড়া!
নেহা বলে উঠলো–,,আমার ভাইকে একা পেয়েছো নাকি তোমরা?যা তা করছো তার সাথে চলো চলো ভাইয়া আমি আছি তোমার সাথে!
সাব্বির বলে উঠলো–,,নেহা বইন আমার, তোর গুলুমুলু চার পাঁচটা বাচ্চা হোক ওই গুলো সব তোর মতো হোক দোয়া করি তাহলে আমার দল ভারি হবে।আমার নিজের বাচ্চার প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নাই বোন সব গুলা হবে তো ঘসেটিবেগমের মতো!
জেরিন এসে সাব্বির কে দিয়েছে এক ঘু”ষি।
সাব্বির আহ্! করে উঠলো, পর পর হাত ঢলে বললো–,,তোর মতো বউ কপালে জুটলে আর জীবনে প্রেম ভালোবাসা কিচ্ছু থাকবে না!
জেরিন ঠোঁট উল্টে বললো–,,আমি তোকে জ্বা’লাই?টর্চা’র করি এভাবে বলতে পারলি থাকবো না আর তোর সাথে।
সাব্বির জেরিনের পিছনে ছুটে গিয়ে বললো–,,ঘসেটিবেগম আমার ভালো বউ মনা বউ আমি এসব কখন বললাম?তুই তো সুইট একদম রসমালাই!
সাহিল বলে উঠলো–,,আরে তোরা নিজেদের মধ্যে আবার লেগেছিস আমার কথা টা তো শোন এটা বেশি গুরুতর!
একটা মেয়ে,,,
কথা সম্পূর্ণ করার আগেই হুড়মুড়িয়ে খাটে বসলো সবাই।চো”রা চোখে চেয়ে বললো–,,মেয়ে!
সাব্বির গদগদ হয়ে বললো–,,আমাদের ভাবি?
সাহিল বিরক্তি নিয়ে বললো–,,না আমার পিএ!উ’ফ মেয়েটা আমার জীবনটা নাই নাই করে দিচ্ছে!
জেরিন বলে উঠলো–,,ভাইয়া সামথিং সামথিং তাই না?
সাহিল বলে উঠলো–,,দিবো একটা ধরে,কিসের সামথিং?বল নাথিং মেয়ে মানুষ রে দেখতেই ভালো লাগে না তার উপর যদি পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হয় মেয়ে জীবনে কতো প্যা’রা ভাব একবার?এখন তোরা ওটাকে যেভাবে হোক সরিয়ে অন্য কোথাও জব দিবি আর আমাকে ছেলে এসিস্ট্যান্ট এনে দিবি!
সাব্বির বলে উঠলো-,,আমার এসিস্ট্যান্ট মেয়ে হলে তো আমি নাচতে,,,
জেরিন ব্যা”ঙ্গ করে বললো–,,তুই! যার মেয়ে দেখে হাঁটু কাঁপে? হাস্যকর কথা বার্তা বলবি না।
আর ভাইয়া শোনো এসব অফিসিয়াল বিষয় তুমি ভালো সামলাতে পারবে।কিন্তু যদি মেয়েটাকে আমাদের পছন্দ হয়ে যায় তো তোমাকে বাসর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব!
সাহিল চোখ বড় বড় করে তাকালো।বৃষ্টি নেহা বলে উঠলো –,,ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই বুঝলে,এবার মিশ”ন একটাই ভাবি চাই ভাবি চাই তাও আবার দুই মাসের ভিতরই!
সাহিল চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,অসম্ভব!আমি বিয়ে করবো না।
সাব্বির বলে উঠলো–,,তুমি করবে সাথে তোমার চাচাও করবে!
জেরিন সাব্বিরের মাথায় মে’রে বললো–,,ভাইয়ার চাচা তোর বাপ লাগে!
সাব্বির ভাব নিয়ে বললো–,,হুহ্!আমার বাপ কি দেখতে কম হ্যান্ডসাম?এখনো দুই তিন টা মেয়ে ইজিলি হাতের মুঠোয় রাখতে পারবে!
জেরিন ডেকে উঠলো–,,মেজো মা ও মেজো মা শুনছো? তোমার ছেলে আমার ভোলা ভালা শ্বশুর টাকে আবার বিয়ে করাতে চায়!
সাব্বির জেরিনের মুখ চে’পে ধরে বলে–,,তোকে প্রোপোজ করলাম কার জবাব দিলি না আমার সংসার টা হলো না এর মধ্যে তুই আমার বাপের সংসারে পেট্র’ল ঢালছিস?
নেহা,বৃষ্টি তেড়ে এসে বললো–,,তুমি আমাদের না জানিয়ে প্রোপোজ করে ফেললে?এসব প্রস্তাব গ্রহণ যোগ্য না মানি না মানবো না!
সাহিল বলে উঠলো–,,এই বোকার দল তোরা কি এখন এসবেও আড়ি পেতে দেখবি?
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,দেখবি মানে?কতোবার দেখেছি বলো!কার কার টা বাকি রেখেছি তা জিজ্ঞেস করো।শুধু ভদ্রলোক বলে কারো বাসর ঘরে উঁকি দেইনি!
সাহিল অবাক হয়ে তাকিয়ে কি বি”চ্ছু বাহিনি রে বাবা!
নেহা বলে উঠলো–,,চিল তুমি ও আমাদের মতো হয়ে যাবে অপেক্ষা করো, আরে তোমার মা আমার মা সবাই তো এ দলের সদস্য!
সাহিল চেচিয়ে উঠে বললো–,,কিহ্!আমার মাথায় কেউ পানি দে।
সাব্বির বললো–,,শুধু পানি না বরফ ও দিবো।আগে তোমার বোন কে বলো আমার প্রেম নিবেদন সাদরে গ্রহণ করতে!
জেরিন সাব্বিরের চে’পে ধরা হাতে কাম”র বসিয়ে বলে উঠলো–,,এসব শুকনো প্রোপোজাল আমি নিবো না ইউনিক কিছু কর!
সাব্বির হাত সরিয়ে নিয়ে বললো–,,অস”ভ্য মহিলা তোর প্রোপোজালের কাঁ”থায় আগু’ন কোথায় জামাই কে চুমু টুমু দিবি না তুই রা”ক্ষসী পনা করছিস?
সাহিল কপাল চাপড়া’লো এদের বলে কি লাভ হবে,মাঝখান থেকে ওই সোহানা টা ওর মাথা চি’বিয়ে খাবে মেয়েটা এতো বক বক করতো পারে আল্লাহ!কেনো মর”তে যে একে চাকরি টা দিয়েছিলো।
ভাই বোন রা মিলে বক বক করে পাড় করলো অনেক টা সময়,তবুও কথা যেনো শেষ হবার নয়,কোনো না কোনো নতুন টপিক এসেই পড়ে।সাহিলও এদের সাথে থেকে নিজেকে বাঁচাল উপাধি দিতে ভুললো না।শেষ চার বছরে মিলিয়েও হয়তো সাহিল এতো কথা বলেনি যতোটা কথা গত কয়েকটা দিনে বলেছে!হাসি খুশি থাকতে হলে পরিবারের সাথে মিশতে হয় তাদের সাথে সব শেয়ার করতে হয়,প্রাণ খুলে ভালোবাসা দিয়ে পরস্পরের সাথে মিলেমিশে থাকার নামই পরিবার শান্তি,সুখ তো পরিবারের মায়ায়,ভালোবাসায় নিহিত!
———
সকাল সাতটা চিন্তিত ভঙ্গিতে নেহা পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে,হাতে তার প্রেগ”নেন্সি কী’ট ভয়ে ভয়ে আছে ভীষণ কাউকে বলেও নি,জানে এর জন্য একশোটা বকা খাবে মায়েদের কাছে,তার পরও নেহা চায় যদি সত্যি সত্যি ওর বেবি আসে তো সবাই কে সারপ্রাইজ দিবে!কী’ট টাও কিনিয়েছে বৃষ্টি কে দিয়ে যতই হোক তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু আগে পরে বোন,ননদ!
কিছু সময় অপেক্ষা করার পর নেহার পা থমকে গেলো,পজিটিভ দেখেই চোখের কোনে অশ্রুরা ভীড় করলো।মুখে ভুবন ভুলানো হাসি!খুশিতে লাফিয়ে ও উঠেছিল মেয়েটা।পেটে হাত দিতেই নিশ্বাস ভারি হয়ে আসলো ওর,কেঁদে ফেললো এবার কাঁপা কন্ঠে বললো–,, বেবি সোনা মায়ের কাছে অবশেষে চলেই এসেছো!মা ভীষণ ভীষণ খুশি তোমাকে পেয়ে!
নেহা চোখ মুছে ফেললো এবার আরো একটা চিন্তা নিখিল কে কিভাবে বলবে?কেমন এক অনুভূতি হচ্ছে তার লজ্জা ও পাচ্ছে আবার আনন্দে গা ভাসাতে মন চাচ্ছে।নিখিল কেমন প্রতিক্রিয়া দিবে?দেখার জন্য অধিক আগ্রহী নেহা।
নিখিল রুম থেকে বেরিয়ে একটু বসার ঘরে গেছে বিয়ের অনুষ্ঠান করা নিয়ে আলোচনা চলছে।
নেহা এখনো বসে আছে আগের মতো, বেশ সময় পর নিখিল আসলো,নেহা কে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে তোর?
নেহা এক পলক দেখলো নিখিল কে তার হৃদ’পিণ্ড লাফাচ্ছে যেনো।নেহা নিখিলের দিক দিক নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো–,,পা”ঞ্চ মারু’ন আপনার জন্য গিফট আছে!
নিখিল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বললো–,,আমার মতো এতো মানুষটার জন্য তোর বিলা”ই মার্কা ছোট হাতে কি গিফট এনেছিস নেহা?তোর ঠোঁট দিয়ে দুই তিনটা চুমু টুমু দিতে পারতি বেস্ট গিফট হতো আমার জন্য!
নেহা এবার বিরক্ত হলো,ব’দের হাড্ডি বেশি কথা বলে!এমনিতেই না”র্ভাস নেহা আর ইনি দেখো কাহিনি করছে!
নেহা মিন মিন করে বললো–,,চুমু কেনো এখন পর্যন্ত দেওয়া সব কিছুর থেকেও বেশি মূল্যবান এই বি”লাই মার্কা হাতের মুঠোয় রাখা জিনিস টা!
নিখিল পকেটে দুহাত গুঁজে বললো–,,বলছিস?তার পর ও নিবো না যা ভাগ!
নেহার মন খারা’প হতে শুরু করলো।নিখিল বুঝে ঠোঁট কাম’রে হাসলো তাও ভাব নিয়ে সরে পড়লো।
নেহা চেঁচিয়ে বললো–,,সত্যি নিবেন না আপনি?
নিখিল আগের মতো করেই বললো–,,না!দেখা গেলো তুই আগের বারের মতো তেলাপোকা ধরিয়ে দিলি আমায়!
নেহার রাগ উঠলো,সব সময় কি সে দুষ্টুমি করে নাকি?লাগবে না ভদ্র ভাবে বলা এর মতো লোক এসব সহজ সরল জিনিস নিতেই পারবে না।নেহা রাগে ফুঁসছে নিখিল নিজের হাসি আড়াল করতে ব্যস্ত।নেহার হাতের মুঠোয় রাখা জিনিসটা ছুঁ”ড়ে মার’লো নিখিলের উপর, পরে ধুপধাপ পা ফেলে রুমের বাহিরে চলে গেলো।
নিখিল হাতে ক্যাচ ধরা কী’ট টা দেখা মাত্ররোই চোখ বড় বড় করে ফেললো,কি বলবে যেনো বুঝতেই পারলো না।নেহা কি অভিমান করলো এক দৌড় লাগালো নিখিল রুম থেকে বের হতেই নেহাকে পেয়ে গেলো বেশি দূর যেতে পারেনি মহারাণী!নিখিল আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো নেহাকে।নেহা থমকালো হঠাৎ এমন হওয়ায় পরক্ষণেই নিখিল কে ছাড়াতে ব্যস্ত হলো।
নিখিল নেহাকে বুকের সাথে মিশিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো–,, আই লাভ ইউ বউজান!
নেহা বুঝে গেলো ছেলেটা কেঁদে দিয়েছে।নেহার চোখও অশ্রু সিক্ত হলো দুজনের চোখেই আনন্দে পানি চলে এসেছে,বাবা মা হওয়ার খুশিতে আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়েছে!
নেহা বলে উঠলো-,,এবার তো ছাড়ুন এভাবে কেউ ধরে নাকি?
নিখিল খুশিতে পা’গল প্রায় যেনো।নেহাকে রুমের কাছে নিয়ে গিয়ে দুহাতে বাহু জড়িয়ে ধরে অনেকটা জোরেই খুশিতে চিৎ”কার দিয়ে উঠলো!নেহাকে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো–,,নেহা বিশ্বাস কর আমি আজ কতোটা খুশি তোকে বলে বুঝাতে পারবো না,আমার যে কি করতে ইচ্ছে করছে এখন।ইশ!আমার নেহা পাখিটা আমাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার টা দিয়েছিস আজ তুই।আবার নেহাকে জড়িয়ে ধরলো, নেহা মুগ্ধ চোখে নিখিলের চঞ্চলতা দেখছে পাগ’লামো দেখছে,গম্ভীর মানুষ টা প্রাণ খুলে হাসছে!
এদিকে নিখিলের চিৎ”কার শুনে সবাই ভয়ে জুবুথুবু হয়ে ছুটে আসছে নেহার কিছু হলো না তো আবার?
সবাই এসে দেখলো দরজা হা’ট করে খোলা।নিখিল নেহাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে,বড়রা থতমত খেয়ে আশেপাশে তাকালো।
নিখিল নেহা দু গালে হাত রেখে যেই না চুমু দিতে যাবে তখনই সাব্বির চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,ভাইয়া সাবধান আমরা সবাই কিন্তু এখানে আছি!
নিখিল যেনো তোয়াক্কা করলো না সে বললো–,,দুই মিনিটের জন্য সবাই চোখ বন্ধ করে রাখো প্লিজ,আমার বাবুর আম্মুকে আমি একটু আদর করে নেই!
নেহার চোখ কোট’র থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।এ ছেলের তো পুরো মাথা গেছে,এখানে বড় আব্বু আছে মেজো আব্বু আর তার বাবাও!এ কেমন নির্ল”জ্জের পাল্লায় পড়লো।
নেহা কিছু বলার আগেই নিখিল নেহার মুখে চুমুতে ভরিয়ে ফেললো!
নেহা নড়েচড়ে যেতেই নিখিল আত”ঙ্কিত হয়ে বললো–,,নেহা একদম নড়াচড়া করবি না বেবিটা ব্যাথা পাবে তো!
নেহা ঠোঁট উল্টে ফেললো কাঁদো কাঁদো মুখ করে এগিয়ে গেলো হামিদা বেগমের দিকে বলে উঠলো–,,বড় মা তোমার ছেলে আমাকে একটুও ভালোবাসে না।দেখো বাবু না আসতেই ওকে ভালোবাসা দিচ্ছে।তোমার ছেলের বিচার করো বলছি!
সবাই চোখ বড় বড় তাকিয়ে হতবাক কি হলো কিসের বাবু?কি নিয়ে কথা হচ্ছে!
সাহিল বলে উঠলো–,,আহ কেউ কি বলবে কি হচ্ছে এখানে?নিখিল আগে বল নেহা কি নিয়ে কথা বলছে!
নিখিল সাহিল কে জড়িয়ে ধরে লাফিয়ে বলে উঠলো–,,আমি বাবা হচ্ছি ভাই!
সাব্বির, জেরিন,বৃষ্টি রৌফ একত্রে খুশিতে চিৎকা”র দিয়ে উঠলো।একে অপর কে জড়িয়েও ধরলো।
হামিদা বেগম নেহাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,বেঁচে থাক মা।অনেকে অনেক সুখে থাক।
একে একে সাহারা তাহমিদা জড়িয়ে ধরলো।তাহমিদা বেগম খুশিতে কেঁদে ফেললেন তার বাচ্চা মেয়েটা মা হবে!
শাহআলম চৌধুরী খুশিতে শহিদুল চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,শহিদুল আমি দাদু হবো।ভাবতে পারছিস চল চল মিষ্টি কিনতে হবে তো।
বাড়িতে খুশির আমেজ যেনো চারগুণ বেড়ে গেলো।নেহাকে যেনো সবাই আদরে আদরে মুড়িয়ে রাখছে তার উপর সাহিল নিখিলের মিল দেখে সবাই আরো ভীষণ খুশি।
সাব্বির নাচতেছে আর বলতেছে –,,আল্লাহ আমি চাচ্চু প্লাস মামা হবো,ঘসেটিবেগম রে আমার তো খুশিতে ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে!
নিখিল নেহা মাঝেমধ্যেই টুকটাক ঝ’গড়া করছে এইতো নেহা কে নিখিল বললো–,,হিং’সা করিস কেনো এতো আমার বেবি ওটা একদম নজর দিবি না।
নেহা ঠোঁট উল্টে বলেছে তো নিজের পেটে রাখো আমার পেটে থাকবে তো আমার বেবি বুঝছো,তুমি নজর দিবা না!
কিছু না হলেই বড় মা বলে কেঁদে দেয়।নিখিল পড়েছে ফা সা দে কি একখান বউ আগে তো ছিলো বাচ্চা এখন মা হবে শোনার পর থেকে যেনো বাচ্চামো বেড়েছে আহ্লাদী হয়ে উঠেছে একদম!
নিখিল বউকে একবারের জন্য ও কাছে পাচ্ছে না বউটাকে একটু মন মতো আদর ও করতে পারছে না।মা গুলা ভাই বোন গুলা তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না একদম যেনো একা নেহাই মা হচ্ছে বাবার কোনো কাজ নেই!
ড্রয়িং রুমে বসে আনন্দে মেতেছে সবাই।তখনই সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো এক রমনী পড়নে জলপাই রঙা কুর্তি,জিন্স আর স্কার্ফ দিয়ে ঘোমটা টানা! হাতে একটা ফাইল।ভীষণ মায়াবতী মেয়েটা প্রথম দেখাতেই যে কারো নজর কাড়ার মতো।সাহারা তো উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,কে মা তুমি?কি দরকারে আসলে আমরা কি তোমাকে চিনি? এসো বসো!
মেয়টা ইতস্তত বোধ করলো।এলোমেলো কন্ঠে শব্দ খুঁজলো যেনো মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠলো–,,না মানে আন্টি এটা কি সাহিল স্যারের বাসা?উনার সাথে কিছু দরকার ছিলো!
সাহিল সিঁড়ির শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে ধম’ক দিয়ে বললো–,,এই মেয়ে তুমি এখানে?খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি অব্দি চলে এসেছো? সাহস তো ম”ন্দ না!
চলবে,,,,,,