প্রণয়ের সুর পর্ব-৪০

0
16

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৪০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
হঠাৎ করে এরকম রাশভারি কন্ঠে ধম’ক খেয়ে আগত মেয়েটি চুপসে গেলো।
পরমুহূর্তেই কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললো–,,স্যার আমি আসলে,,,,,

সাহিল আবার ধ’মকের সুরে বললো–,,তুমি কি আসলে নকলে শুরু করেছো?তোমার কি একটা কথা কানে যায় না নাকি।আমি তো বললাম দুইদিন পর অফিসে এসে সব কাজ করবো তুমি এক সপ্তাহ ধরে ফোনের উপর ফোন করেই যাচ্ছো!এই মেয়ে বস কি তুমি না আমি?

মেয়েটি মাথা নত করে ফেললো,সে জানতো সাহিল নামক মানুষটি বড্ড কঠিন ধাঁচের কিন্তু এতোটা তা সে বুঝেনি।চাকরি টা দেওয়ায় লোকটাকে এতোটাও খারা’প মনে হয়নি সোহানার।তার পরও বড়লোক মানুষ তার উপর দয়া করেছে এটাই অনেক!তাদের কথা ব্যবহারে দাম্ভি”কতা থাকবে এটাইতো স্বাভাবিক।

সোহানা ধীর কন্ঠে বললো–,,দুঃখীত স্যার আমি আসতাম না আর না আপনাকে এতোবার কল করে বিরক্ত করতাম।আমাদের কোম্পানি এমনিতেই লসের মধ্যে আছে তার উপর এখন একটা বড় অর্ডার আটকে আছে শুধু আপনার সাইন না দেওয়াতে তাই এসেছি।একজন কর্মচারী হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব ছিলো!যে প্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করি তার কোনো ক্ষ”তি আমি চাই না,আজকেই লাস্ট ডেইট ছিলো এর মধ্যেই ডকুমেন্টস আমাকে জমা দিতে হতো তাই বাধ্য হয়েই আপনার বাসায় এসেছি।যদি একটু সাইন করে দিতেন তো ভালো হয়!

সাহিল সহ বাকিরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে।মেয়েটা তাদের কাজের জন্য আসলো?একটা ওয়া”র্কার কতোটা নিষ্ঠাবান হলে এমন টা করতে পারে!

জেরিন,সাব্বির সহ ছোট রা ক্ষে”পেছে ভাইয়ের উপর এরকম একটা মিষ্টি মেয়েকে কিনা এভাবে কথা শোনালো!ইশ মেয়েটার এতো সুন্দর মুখটা কেমন কালো হয়ে গেলো, মন খারা’পটা যেনো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে মুখে।ভালো করেও তো বলতে পারতো।মেয়েদের পছন্দ করে না দেখে কি এভাবে বলতে হবে?

তাহমিদা বেগম এগিয়ে এসে বললো–,,মা তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?এসো বসো কাজই তো একটু পরই করতে পারবে,তুমি এতো ভালো সময় আমাদের বাড়িতে এসেছো, আর ছেলেটাকে দেখো কোনো আ”ক্কেল জ্ঞান নাই তোমাকে কেমন ব’কা দিলো, এর কান মলে দিবো আমি।কাজে অমনোযোগী হয়ে গেছে,একদম মন খারা”প করবে না ঠিক আছে।

হামিদা বেগম রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন প্লেটে করে মিষ্টি ফল সাজিয়ে এনেছেন।তাহমিদা ততক্ষণে সোহানাকে সোফায় বসিয়ে দিয়েছে।মেয়েটা শান্তশিষ্ট দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

হামিদা বেগম হেসে জিজ্ঞেস করলো–,,তা মা তোমার নাম কি?বাড়ি কোথায়?বাসায় কে কে আছে!

–,,আমার নাম সোহানা জাহান আন্টি।অফিসের থেকে কিছু দূর একটা বাসায় ভাড়া থাকি গ্রামের বাড়ি রাজশাহী তে,বাসায় শুধু আমার একটা ছোট বোন আছে!

সাহারা বলে উঠলো–,,তোমার বাবা মা?
সোহানার মুখটা মলিন হয়ে গেলো চোখে অশ্রুরা ভর করলো যেনো তবুও গড়িয়ে পড়লো না।ছোট করে বললো–,,মা’রা গেছে!

সাহারা, তাহমিদা,হামিদা তিনজনেরই খারা’প লাগলো মেয়েটার এইটুকু বয়সে বাবা মা হারিয়ে বোন কে নিয়ে একা একা থাকছে!
হামিদা বেগম আলতো হাতে সোহানা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,মন খারা”প করছো কেনো। এই দেখো আমরা সবাই তো আছি যখনই মন কেমন করবে আমাদের কাছে চলে আসবে কেমন,বোনকেও সাথে নিয়ে আসবে,এই তিনটা মা কে তোমার পছন্দ হয়নি বলো?

সোহানা মাথা নাড়লো তার পছন্দ হয়েছে,বৃষ্টি এসে পাশে বসে বললো–,,আমাদেরও কিন্তু তোমাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে ভা,,,!

জেরিন বৃষ্টির মুখ চেপে ধরে বললো–,,কোন ক্লাসে পড়ছো?নাকি শুধু জব করছো!

সোহানা বলে উঠলো–,,অনার্স ফাইনাল ইয়ার,সাথে জব করছি!

সাব্বির বলে উঠলো–,,ঘসেটিবেগম তোর ক্লাসমেট যা বন্ধুত্ব করে নে।

বৃষ্টি বললো–,,আমরা কি ভেসে এসেছি?আপু আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে না তুমি।

সোহানা দ্বি’ধা দ্ব’ন্দ্বে ভুগলো এতো সহজে মানুষ গুলো তার সাথে মিশে যাবে একটুও বুঝতে পারেনি, সে তো ভেবেছিলো এতো বড়লোক পরিবারের মানুষ তাকে হয়তো পছন্দ করবেই না,উল্টো এভাবে চলে আসায় অপমা’ন করে দিবে!সোহানা কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বললো–,,করবো।

নেহা সিঁড়ি দিয়ে এসে বললো–,,আমাকে রেখেই সবাই ভাবির সাথে পরিচিত হয়ে গেলে!

নেহার কথায় সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।সাব্বির
আমতা আমতা করে বললো–,,না মানে সোহানা হয়েছে কি আজকে আমাদের এক ভাইয়ের বউ আসার কথা ছিলো তাই নেহা বইন ভেবেছে তুমিই সে মেয়ে!

হামিদা বেগম বুঝলো না ছেলেমেয়ে গুলার মাথায় যে কখন কি চলে!কোন ভাবি আসার কথা আবার!

তিনি ওদের কথায় পাত্তা না দিয়ে সোহানা কে বলে উঠলো–,,সোহানা এই নাও মিষ্টি খাও মা জানোতো আমার বড় ছেলে সাহিলের ভাই বাবা হচ্ছে আর আমরা দাদি হবো সাথে নানু ও বুঝলে।তুমি একদম সুন্দর একটা সময় এসেছো আমরা ভীষণ খুশি হয়েছি।সোহানাকে সাহারা হামিদা,তাহমিদা মিলে এটা ওটা খাওয়াচ্ছে তাদের আচরনে বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটাকে তাদের মনে ধরেছে!সোহানার প্রথম প্রথম অ”স্বস্তি লাগলেও এখন সে নিজেও তাদের সাথে মিশতে পারছে মানুষ গুলো এতো ভালো সহজেই কতো আপন মনে হচ্ছে।

সাব্বির সিঁড়ি দিয়ে উঠে গিয়ে সাহিল কে ঠেস মে’রে বললো–,,ভাইয়া,,,,!ভাবি কিন্তু সেই দেখতে মাশাআল্লাহ!একদম পার্ফেক্ট পছন্দ হয়ে গেছে এবার তুমি রাজি হলেও বিয়ে করতে হবে না হলেও।
বলেই হাই তুলে চলে গেলো।জেরিন,বৃষ্টি, নেহা ও আঙুল উচিয়ে বুঝালো তাদেরও পছন্দ হয়েছে।

সাহিল বিরক্ত হলো এই মেয়ে কিনা তার বউ!অসম্ভব সারাদিন বক বক করবে ভাবতেই নিজেকে পাগ’ল পাগ’ল লাগছে সাহিলের।

কখন না জানি তার মা গুলো তার উপর তেড়ে আসে মানে মানে কে’টে পড়লো।

সোহানা কে পেয়ে তিন জা তে গল্প জুড়ে দিয়েছে।
এ দিকে নেহা,বৃষ্টি, জেরিন,মিহির,সাব্বির বসে কিছু সময় পর আসলো নিখিল এলাকায় মিষ্টি বিলিয়ে এসেছে সে।নিজের রুমে ভাই বোনদের মি”টিং বসেছে দেখে জিজ্ঞেস করলো–,, কোথায় বো’মা ব্লা’স্টের পরিকল্পনা করছিস তোরা?

–,,সাহিল ভাইয়ার জীবনে!

সাব্বিরের কথা নিখিল বলে উঠলো–,,সোহানার সাথে সাহিল!

নিখিলের কথায় মিহির এসে বললো–,,বন্ধু বাবা হওয়ার সাথে সাথে তোমার ব্রেনের দরজাটা ও যে একটু খুলেছে তাহা দেখে আমি একটু শান্তি পেলুম!

নিখিল বলে উঠলো–,,এসব কথা রাখ সাহিল এসবে রাজি হবে না,সোহানাকে তো স’হ্যই করতে পারে না, মেয়েটা ভালো সৎ পরিশ্রমী তাই জব টা দিয়েছে সাহিল কিন্তু এর বাহিরে ভাববে বলে মনে হয় না!

নেহা তেতে উঠে বললো–,,এই সাব্বির ভাইয়া এটাকে এখান থেকে সরাও তো সব সময় নেগে”টিভ চিন্তা, একটু ভালো কথা চিন্তা করতে পারে না নাকি!

নিখিল ভ্রু কুঁচকে বললো–,,কার রুমে বসে আছিস তোরা সবাই?আমাকে যেতে বলছিস কোন সাহসে তোরা সব গুলো বিদায় হ,যা পারলে সাহিলের বিয়ে দে, দিতে পারলে তো ভালোই আমিও চাই ওর জীবনে ভালো কেউ আসুক!

সাব্বির ভাব নিয়ে বললো–,,এবার তো সাহিল ভাইয়াকে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার এই চল সবাই গিয়ে প্রেম টা ঘটাই এদের মধ্যে!

নেহাও ওদের পেছনে যেতে নিলে নিখিল দরজার কাছে এসে নেহার হাত ধরে আটকে দেয়।ওরা সবাই বেরিয়েছে আগে, দরজা টা আটকে দেয় তা দেখে নেহা মুখ উল্টে বললো–,,আমাকে যেতে দিন ওরা সবাই চলে গেছে।

নিখিল নেহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,জান আমার ভীষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে!

–,,এটা নতুন কি,আপনার তো সব সময়ই প্রেম প্রেম পায়!

–,,তোর কোনো সমস্যা? তুই তো একটা কি’প্টে মহিলা জামাইকে একটুও আদর সোহাগ করিস না!

–,,এতো পারবো না!

–,,আমি তো পারবো। চলো আমার বাবুর আম্মু তোমাকে একটু আদর করি।

–,,না,,,,!

নিখিল নেহার ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে–,,হুস!কথা বলবি না,কখন থেকে তোকে কাছে পাই না আমি,,সারাদিন শুধু পালিয়ে বেড়াস,একদম বিরক্ত করবি না আমাকে,বেশি না শুধু একটু আদর করবো!

নেহা গাল ফুলিয়ে রাখলো,তা দেখে নিখিল হেসে শব্দ করে চুমু খেলো নেহার গালে।
ঠোঁট কপালে আলতো চুমু খেয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে চুমু দিয়ে বললো–,,পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার টা এই অধম কে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ মিসেস চৌধুরী!
নেহা নিখিল কে দু হাতে জড়িয়ে ধরে বললো–,,ভালোবাসি আমার তুলতুলে কিউট বেবির আব্বু!

নিখিল এবার না চাইতেও হেসে ফেললো,তার বউটা তার সামনে আসলে একদম বাচ্চা হয়ে যায়।
—–
উ’ৎ পেতে বসে আছে সাব্বিরের দল।কখন সোহানা আসবে আর তারা তাকে সাহিলের ঘরে পাঠাবে।এদের যদি এক সাথে না করতে পারে প্রেম টা হবে কি করে!

জেরিন বলে উঠলো–,,দেখিস যদি প্ল্যা”ন টা না ফলে না তোকে দশদিন মেজেতে ঘুমাতে দিবো!

সাব্বির মুখ ফুলিয়ে বললো–,,তা তো পারবিই আমি এখন ভালোবাসি তো জেনে গেছিস ইগনোর তো করবিই!হুহ্!

জেরিন ধাম করে একটা বসিয়েছে সাব্বিরের পিঠে।বৃষ্টি বলে উঠলো–,,থামো তোমরা ওই দেখো সোহানা আপু আসছে।

জেরিন সাব্বির কে ধাক্কা দিয়ে বললো–,,যাও যাও পরাণের সোয়ামী নিজের কাজ টা সেরে ফেলো!

সাব্বির কোনো রকম ব্যালেন্স ঠিক রেখে পড়তে পড়তে বেঁচেছে, সোহানা চলে আসায় জেরিন কে ইশারা করে বললো–,,তোকে কাঁচা খে”য়ে ফেলবো আমি!

সোহানা আলতো হেসে বললো–,,ভাইয়া! স্যারের রুম টা কোথায়?যদি একটা সাহায্য করতেন তো ভালো হতো।

সাব্বির বললো–,,সোহানা বইন আমার কি সাহায্য লাগবে বলো ভাই কে!আজ থেকে আমি তোমার একদম খাঁটি ভাই।

জেরিন আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বললো–,,তুই ভাই ছাড়া অন্য কিছু হতে পারবি আদো ও!

সাব্বির গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,আমি এক নারী তে আবদ্ধ নিবদ্ধ ঘসেটিবেগম। অন্য মেয়েরা আমার বইন না হয় খালা লাগে।তুই বুঝবি না এসব, আমি বিবাহিত বুঝলি বউ ছাড়া কারো দিক তাকাই না!

–,,তাকালেও পারিস!

–,,তুই অনুমতি দে তাকাবো, মাথা থেকে পা পর্যন্ত!

জেরিন গাল ফুলিয়ে বললো–,,লজ্জা করে না, এরকম অশ্লী”ল কথা বার্তা বলতে?

ওদের কথার মধ্যেই সোহানা বললো –,,ভাইয়া আপনি বিবাহিত?

জেরিন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো–,,কেনো ওরে দেখে কি অবিবাহিত মনে হয়!

সাব্বিরের পেট ফেটে হাসি আসছে ঘসেটিবেগম একটা সামান্য কথায় জে’লাস ফিল করছে।

সাব্বির নিজ থেকে বললো–,,হুম সোহানা বইন আমি বিবাহিত। জেরিনের হাত টেনে নিজের দিক এনে আবার বললো–,,এই তো আমার বউ!একদম টক ঝাল মিষ্টি।

জেরিন রাগ দেখিয়ে বললো–,,ছাড় ছাড় ধরবি না একদম!

সোহানা হেসে বললো–,,আপনাদের এক সাথে অনেক মানিয়েছে।

সোহানা আমতা আমতা করে আবার বললো–,,ভাইয়া স্যারের কাছ থেকে একটু ফাইল টা সাইন করিয়ে এনে দিবেন প্লিজ!

জেরিন বললো–,,তুমি যাও!

সোহানা মিন মিন করে বলে–,,যদি ধ’মক দেয় আবার।এমনিতেই আমাকে দেখলে রেগে যায়।

সাব্বির বলে উঠলো–,,কিচ্ছু হবে না।ভাইয়া একটু রাগী তবে মন টা ভালো,তোমাকে তো যেতে বললো ভিতরে।তুমি আসলেই পাঠাতে বলেছে!

–,,সত্যি!না মানে স্যার কে ভয় পাই আমি,অনেক দরকার তাই জব টাও ছাড়তে পারছি না।না হয় চাকরিটা প্রথম দিনই ছেড়ে দিতাম!

মিহির বৃষ্টি এতোক্ষণ পেছনে লুকিয়ে থাকলেও এবার সামনে আসলো।মিহির কে দেখেই সোহানা বললো–,,স্যার আপনি এখানে!

মিহির হেসে বললো–,,ভয় পাচ্ছে কেনো এখন আমি তোমার স্যার নই বুঝলে।আর এটা তো আমার শ্বশুর বাড়ি!

সোহানার মাথার উপর দিয়ে গেলো যেনো সব, সাব্বির বললো জেরিন তার বউ কিন্তু দুজনের ভাব দেখে মনে হয় চির”শত্রু আবার তো তুইতো”কারি সম্পর্ক!মিহির আসতো মাঝেমধ্যে অফিসে সাহিলের অনুপস্থিতে এখন শুনছে সেও এ বাড়ির জামাই।

মিহির ভরসা দিয়ে বললো–,,যাও ওটা সাহিলের রুম।ভয় পাবে না সুন্দর মতো যাবে সাইন নিবে চলে আসবে!

সোহানা মাথা নাড়ালেও তার কলি’জার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে যেনো ছোট বেলা থেকেই একটু ভীতু সোহানা।তার উপরও যে এই শহরে নিজের জায়গা করতে পেরেছে এতেই খুশি সে বোনটা আবার তার বিপরীত এবার কলেজে পড়ছে।তবুও মেয়েটার বয়সের তুলনায় যেনো অগাধ সাহস নিয়ে ঘুরে!

সোহানা দরজায় নক করলো কয়েক বার!ভিতর থেকে শব্দ আসলো না সোহানা ডাকলো–,,স্যার আপনি কি ভিতরে আছেন? আমি কি আসবো?

উত্তর না পেয়ে সং’শয় নিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো সোহানা।ভিতরে ঢুকতেই বিপ’ত্তি ঘটলো সাহিল ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বেরিয়েছে পড়নে পোশাক খুবই সামান্য,সোহানার থেকে কয়েক কদমের দুরত্বে সাহিল, বেচারি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছে।উল্টো ঘুরে রুম থেকে বের হতে নিলেই কার্পেটে পা হড়কে পড়ে যেতে নেয়।সাহিল আকষ্মিক ঘটনায় থ হয়ে গেছে এ মেয়েটা না বলে কয়ে সোজা রুমে!তাও কেনো যেনো মেয়েটার পড়ে যাওয়া তার মস্তিষ্কে কিছু একটা জানান দিলো মেয়েটাকে ধর পড়ে যাচ্ছে!

সাহিল ছুটে এসে সোহানা কে ধরলো।সাহিলের চুল থেকে টুপ টাপ পানি এসে সোহানার মুখে পড়তেই মেয়েটা চোখ পিট পিট করে তাকালো পরক্ষণেই বন্ধ করে বললো–,,আমাকে ছাড়ুন প্লিজ আমি বাহিরে যাবো!

ভয়ে থর থর করে কাঁপছে সোহানা,চোখের পাতা বারং বার অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে, সাহিল অপলক তাকিয়ে ভীতু মুখশ্রির দিকে।ঠোঁটের পাশে লাল রঙা তিল টা যেনো মেয়েটার সৌন্দর্য বহু গুন বাড়িয়েছে!উজ্জ্বল হলদেটে গায়ের রঙ। সাহিল কেনো তাকিয়ে আছে জানে না তবে হৃদয় জানান দিলো মুহুর্তে মেয়েটা কে সে সারাজীবন দেখতে চায়, কেনো যেনো মনে হচ্ছে এই মেয়েকে দেখে হৃদয় তৃষ্ণার্থ হয়েছে।বুকে এক সমুদ্র জল থাকা স্বত্বেও কেমন মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করছে সব কিছু!
এ কেমন অদ্ভুত নাম না জানা অনুভূতি।

সোহানা ডেকে উঠলো–,,স্যার!ছা…ড়ুন।

সাহিল অধর বাঁকিয়ে হাসলো, কিছুটা ঝুঁ’কে সোহানার কানের কাছে বললো–,,সাহিল ইসরাক চৌধুরীর ইজ্জ’ত হরণ করেছো তুমি রমনী!তোমার শা”স্তি স্বরূপ তুমি আমার হও,তোমার ইজ্জতভ্র”ষ্ট হোক আমার হাতে পবিত্র ভাবে!

সোহানার অন্তর আ”ত্মা কেঁ”পে উঠলো যেনো!কি সব বললো লোকটা? সোহানা এক ছুটে রুম থেকে বের হতে গিয়েও পারলো না সাহিল এক ধম’ক দিয়ে বললো–,,দাঁড়াও বলছি!যেতে বলেছি আমি?অনুমতি নিয়ে তো আসোনি,তবে যাওয়ার এতো কিসের তাড়া!আমি না বলা পর্যন্ত এক পাও নড়বে না।

সোহানা দাড়িয়ে পড়লো,মাথা নিচের দিক দিয়ে রেখেছে,বলে উঠলো–,,আপনি তো বলেছেন আসার জন্য মিহির স্যার বললো।আমি আসতে চাইনি বিশ্বাস করুন।নক ও করেছিলাম সাড়া শব্দ না পেয়ে ঢুকে পড়েছি স্যরি স্যার!

–,,কৈফিয়ৎ দিচ্ছো কেনো?কিছু বলেছি আমি তোমাকে?আর এতো ভয় পাও কেনো?আমি বাঘ না ভাল্লুক!তাকাও আমার দিকে।

সোহানা মাথা দু দিক নাড়ালো যার অর্থ সে তাকাবে না।
সাহিলের হাসি পেলো মেয়েটা ভেবেছে সে এখনো শার্ট ছাড়া আছে!আস্বস্ত করে বললো–,,তাকাও আমি শার্ট পড়েছি আর ফাইল টা দাও।

সোহানা তাকালো হাতের ফাইল টা এগিয়ে দিলো সাহিল কে,ভুল ক্রমে হাত কিছুটা ছোঁয়া লাগতেই সোহানা হাত ছাড়িয়ে এনে যেই না কিছু বলতে যাবে সাহিল বলে উঠলো–,,ফাইলের কপি আমি রেখে দিচ্ছি আমিই জমা দিয়ে দিবো তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।

সোহানা মাথা নাড়লো।সোহানা কে দেখে সাহিলের আবার হাসি পেলো মেয়েটা এতো পরিমান ভয় পায় তাকে,কারন টা জানতে বড্ড ইচ্ছে হলো তবুও দ’মে গেলো।

সোহানা বললো–,,এবার আমি যাই!

সাহিল উঠে এসে সোহানার দিক এগোতেই সোহানা পুরো দমে পেছনে পেছাচ্ছে।

সাহিল জিজ্ঞেস করলো –,,পিছনে যাচ্ছো কেনো?অদ্ভুত মেয়ে তো তুমি!

–,,আপনি এগিয়ে আসছেন কেনো?

সাহিল এক ছুটে সোনার সামনে চলে এসেছে,সোহানা দেয়ালের সাথে চেপে গেছে কেঁদে দিবে প্রায় অবস্থা। চোখে পানি টলমল করছে।

সোহানা এবার কেঁদে ফেললো বলে উঠলো–,,আমি আর কোনো দিন আসবো না, সত্যি বলছি এবারের মতো যেতে দিন চাকরিও ছেড়ে দিবো!

সাহিল ঠোঁট কা’মরে ধরলো নিজের দুহাত পকেটে ভরে বললো–,,চাকরি ছেড়ে, দুনিয়ার যেই কোনায় গিয়েই বসে থাকো না কেনো?একবার যখন এসেছো তখন ফেঁসে”ছো, সাহিলের যা চাই তা সে নিজের করে নেয়, যে কোনো উপায়ে!ইউ নো না,তোমার ভীতু মুখশ্রী,কাঁদো কাঁদো মায়াবী চোখ বিশেষ করে ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠা রক্তিম মায়টার নে’শায় আমি পড়েছি,তুমি যা খুশি বলো ওটাকে সারাজীবন ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য হলেও আমার তোমাকে চাই!

আমি অন্ধকারের ডুবন্ত অমাবস্যা তুমি আমার সেই অমাবস্যায় ভেসে উঠা চাঁদ! হরিণ হয়ে বাঘের খাঁচায় আসতে নেই সোনা এবার শিকা’রীর হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও!

সোহানা কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো–,,ককখনো না!
পর মুহূর্তেই ছুটে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
———
রিসোটে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো আজ বাড়ির সবার বিশেষ করে ছোটদের।সাব্বিরের সাথে জেরিন রাগ করেছে।দুজন দুদিন ধরে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।বৃষ্টি এসে জেরিন কে একটা শাড়ি ধরিয়ে বললো–,,এটা পড়ে নাও আপু আমরা আজ সবাই শাড়ি পড়বো।মেজো মা এটা তোমাকে দিতে বলেছে তারাও কিন্তু আমাদের সাথে যাবে তাই মনে করে পড়ো!

জেরিনের মেজা’জ খারা’প সাব্বির টার সাথে কোনো কথা বলবে না তাই যেতে চায়নি কিন্তু বাড়ির সবার মুখের দিক তাকিয়ে যেতে হচ্ছে এখন!শাড়িটার দিক তাকিয়ে মুগ্ধ হলো লাল রঙা একটা শাড়ি,কারুকাজ টা ভীষণ নজর কাড়া মনে মনে মেজো মা কে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিলো!

কিছু সময় না যেতেই রৌফ ছুটে এসে বললো–,,আপু জানো কি হয়েছে রিসোর্টে তো ভাইয়ারা আগে গেলো ওখানে নাকি সাব্বির ভাইয়ার একটা এক্সি”ডেন্ট হয়ে গেছে,সবাই যাচ্ছি তুমি কি যাবে!

জেরিনের হাতে থাকা চিরুনি টা ধ’প করে পড়ে গেলো নিচে শাড়িটা শুধু পড়েছিলো চুল গুলোও বাঁধলো না আর এভাবেই দৌড় লাগালো নিচে।বৃষ্টি এসে বললো-,,তুমি কোথায় যাচ্ছো?

–,,সাব্বিরের কাছে!

–,,কেনো যাবে?

–,,কেনো যাবো মানে? এখন কি ওর কাছে যেতে হলেও তোদের পারমিশন নিতে হবে?তোরা যাচ্ছিস তাই এসেছিলাম না নিলে আমি একাই যেতে পারি!

মিহির বললো–,,আয় জেরিন গাড়িতে উঠে বস।

সবাই আড়চোখে জেরিন কে দেখছে,জেরিন কেমন অস্থি”র হচ্ছে চোখ মুখে কতো ভয় মেয়েটার, আজকে জেরিনের দিক তাকিয়ে সবাই মিটি মিটি হাসছে,রাগ করে থাকা না দুইটাকে আজ একদম টাইট দিয়ে সারবে ওরা!
চলবে,,,