#প্রণয়ের_সুর
#শেষ_পর্ব(প্রথম অংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
গাড়ি ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে তবুও জেরিনের কাছে মনে হচ্ছে গাড়িতি পিঁপড়ার গতিতে চলছে!শহর থেকে দুই ঘন্টার দুরত্বে রিসোর্ট টা প্রকৃতির নানান সাজে সজ্জিত। গাড়ি এসে থামলো সেখানে,জেরিন এক প্রকার লাফিয়ে গাড়ি থেকে নামলো রিসোর্টে আগে এসেছে সাব্বির।নিখিলের সাথে আসবে নেহা, নিখিল তার বউকে একা কিছুতেই আসতে দিবে না।সাহিলের আসার কথা থাকলেও সে বলেছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে আসবে।বড়রা আসবে দুপুরের পর। জেরিন দিক বেদিক খুঁজে বেড়ালো সাব্বির কে রৌফ কে সামনে পেয়েই জিজ্ঞেস করলো
–,,সাব্বির কোথায়?
রৌফ হাতের ইশারা করতেই একটা কটেজে দিক দৌড় লাগালো জেরিন,পেছনে গাড়িতে হেলান দিয়ে হেসে চলেছে মিহির আর বৃষ্টি। মাঝখানে একবার হাই ফাই দিয়েছে নিজেদের মধ্যে রৌফ এগিয়ে এসে বললো–,,কি হলো বুঝলাম না তোমরা হাসছো আর আপু তো ভাইয়ার সাথে যু’দ্ধ ঘোষণা করেছে তাহলে এখন এমন ভাবে খুঁজছে কেনো?
মিহির বলে উঠলো–,,বুঝলি রৌফ তোর ভাই আর বোন এবার তোর ভাই আর ভাবি হতে যাচ্ছে!মানে ওদের মাঝে প্রেম টেম হবে এবার।
রৌফ বুঝদারের মতো মাথা নাড়লো,যতই হোক একই বংশের কিনা!
জেরিন দরজা ভেজানো ঘরটার দিকে ছুটে গিয়ে দরজা টা ধাক্কা দিয়ে খুললো,সাব্বির উল্টো দিক হয়ে দাড়ানো কানে মোবাইল কারো সাথে কথা বলছে।জেরিন এক ছুটে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
আকষ্মিক ঘটনায় ভরকে গেলো সাব্বির ফোনে কথা বলা বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করলো কি হয়েছে।জেরিন এসেছে বুঝেই কিছু বললো না চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো নিজেও,সাব্বির আজকে নিজে থেকে কিছু বলবে না, আর না কিছু করবে জেরিন যদি আদো তার জন্য কিছু অনুভব করে তো সে নিজ মুখে বলুক।কিন্তু মেয়েটা এভাবে ছুটে আসলো কেনো?কি হয়েছে ওর!
জেরিন নিজ থেকে সামনে চলে আসলো সাব্বিরের হাতে মুখে হাত বুলিয়ে দেখলো কোথাও কোনো আঘা’ত লেগেছে কিনা!জেরিনের অশ্রু সিক্ত ভেজা চোখ দেখলো সাব্বির,মেয়েটা ভীষণ রকম ভয় পেয়েছে।
জেরিন কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,, তোর কোথাও লাগেনি তো?রৌফ বললো তোর নাকি এক্সি”ডেন্ট হয়েছে!
সাব্বির বুঝে গেলো ভালো করেই এসব কিছু তার ভাই বোনদেরই চাল কিন্তু বোকা জেরিন টা বুঝলোই না!এতোটা উতলা কেনো হলো মেয়েটা?তবে কি সত্যি জেরিন ভালোবাসে সাব্বির কে?এক অজানা ভালোলাগায় পুলকিত হলো সাব্বিরের মন।
নিজেকে যথাসম্ভব কঠোর রেখে বললো–,,আমার যা খুশি হোক,ম’রি বাঁচি তাতে তোর কি?আমার কোনো কিছুতেই তো তোর কিছু যায় আসে না।আমি ম’রে গেলে তুই বেঁচে যাবি,মুক্তি পেয়ে যাবি শান্তি পাবি!
জেরিন চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো–,,সাব্বির!
সাব্বির বলে উঠলো–,,চেঁচাচ্ছিস কেনো?সত্যি কথা শুনতে পারছিস না কেনো।
জেরিন ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো।কোনো কথা না বলে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে মেয়েটি।জেরিন ছুটে চলে যেতে চাইলো সাব্বির এভাবে বলতে পারলো?সে তার মৃ’ত্যু কামনা করে!
সাব্বির জেরিনের হাত ধরে ফেললো পেছন থেকে জেরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঁদছে। জেরিন কে টেনে নিলো সাব্বির শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই জেরিন আবার কেঁদে উঠলো।
সাব্বির জড়িয়ে ধরে রেখেই মাথায় থুঁতনি ঠেকিয়ে বললো–,,কি ব্যপার মহারানী আমার জন্য হঠাৎ এতো দরদ, এতোটা অস্থি’রতা প্রেমে টেমে পড়ে গেছো নাকি?
জেরিনের কান্না বন্ধ হলেও কোনো কথা বললো না,সাব্বিরের বুকে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে রইলো।সাব্বিরের কিছু হলে সে এলোমেলো হয়ে যাবে, তার সুন্দর গোছানো জীবনের কর্ণ’ধার তো সাব্বির নিজেই জেরিন যে বড্ড অগোছালো সাব্বির ছাড়া তাকে গুছানোর মতো কেউ নেই।জেরিনের কেমন দ’ম বন্ধ লাগে এই ছেলেটাকে ছাড়া!ছেলেটার কিছু হলে তার কি হবে?কিভাবে থাকবে ভেবেই নিজের ভিতরটা ধুম’রে মুচ’ড়ে উঠে জেরিনের।
সাব্বির নিঃশব্দে হাসলো জেরিন কে রাগাতে বললো–,,ওইদিন তো বললি আমার মতো মানুষ কে চাই না তোর, আমাকে নাকি ভালো লাগে না আর, আমি নাকি বেশি জ্বা’লাই তোকে!এখন আমাকে জড়িয়ে আছিস কেনো ছাড়।তুই তো বললি যাতে বুকের মধ্যে জড়িয়ে অন্য কাউকে রাখি তুই থাকতে চাস না এখানে,তবে কেনো এসেছিস জেরিন?কিসের টানে কোন অধিকারে!
জেরিন জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে, কি বলবে বুঝতে পারছে না।দু রাত ধরে এক ফোঁটা ও ঘুমাতে পারেনি,এক মুহুর্তের জন্য ও শান্তিতে ছিলো না, সাব্বির তার সবচেয়ে প্রিয় ব’দ অভ্যাস!যেটা সে কিছুতেই ছাড়তে চায় না,সাব্বির কে অভ্যস্ত হতে না করে সে নিজেই জড়িয়ে গেছে সাব্বিরের সাথে।এখন যে পিছু ফেরার কোনো পথ নেই।
সাব্বির বলে উঠলো–,,ঘসেটিবেগম! ডু ইউ লাভ মি?
জেরিন এক হাতে নিজের শাড়ি খামচে ধরে দাড়িয়ে, আজ উত্তর দেওয়া দরকার সে জানে তবুও কণ্ঠনালি ভেদ করে কোনো শব্দ বের হতে চাচ্ছে না।
সাব্বির অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত কথাটা শোনার কিন্তু জেরিন চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে।কিছু বলতে পারছে না।বেশ কিছু সময় পর সাব্বির চলে যেতে নিলেই জেরিন চেপে ধরে সাব্বিরের শার্ট, সাব্বির পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় জেরিনের দিকে মেয়েটার চোখের পাতা অনবরত কাঁপছে, ঠোঁট বার বার ভেজাচ্ছে। এদিক সেদিন দেখছে,সাব্বিরের ঠোঁটের কোনো হাসি।জেরিন সাব্বিরের দু গালে হাত রেখে একটানে তার মাথাটা নিজের মুখ বরাবর আনলো কপালে গভীর চুম্বন আঁকলো।গলা জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো–,,ভালোবাসি মির’জাফর!
সাব্বির দু হাতে আগলে নিলো তাকে।কানের পাশটায় চুমু খেয়ে বলে উঠলো–,,ভালোবাসি!
জেরিন কে সাব্বির কোলে তুলে নিতেই জেরিন তার গলা জড়িয়ে ধরে আবার মুখ গুঁজলো ঘাড়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো–,,দুই দিন ধরে ঘুমাতে পারিনি আমি তুই বড্ড পাষা’ণ সাব্বির,আমাকে দিয়ে ভালোবাসি বলানোর জন্য দূরে গিয়ে বসে রইলি?তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমার চলে না।খাওয়া ঘুম থেকে শুরু করে সব কিছুতে আমার তোকে চাই।ভালোবাসি মুখেই বলতে হলো আমাকে, কেনো তুই কি বাচ্চা বুঝে নিতে পারিসনি তোর ঘসেটিবেগমের শুধু তোকে চাই।তার সব কিছু তোকে ঘিরে,তার সকল অনুভূতি তে মিশে তুই আছিস।তোর বুকে মাথা রাখার অধিকার শুধু তার।শুধু মুখের কথা শুনে তুই আমাকে ছেড়ে যেতে চাইবি!একটু ঘুমিয়ে শক্তি করে নেই পরে এটা নিয়ে তোর সাথে আমি আবার ঝ’গড়া করবো বলে দিলাম!
সাব্বির হেসে উঠলো বললো–,,কিছু কিছু জিনিস বুঝে নিয়েও না বুঝার ভান ধরতে হয় জানিস না।তোর মুখ থেকে শুনতে পাওয়ার মতো শান্তি আর কি আছে বলতো?
–,,ঢং করবি না একদম!
–,,বউ কার জন্য সাজা হয়েছে মেডাম?
জেরিন তো বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সে শাড়ি পড়েছে।
–,,আমার জামাইয়ের জন্য, মোটেও তোর জন্য না!
সাব্বির হাসলো কন্ঠে আদর মিশিয়ে বললো–,,শুনছিস?ঘসেটিবেগম!
–,,হুম!
–,,আমার এখনো বাসর করা হয়নি জানিস?
–,,হুম।এখন কি তোর বউকে রাজি করাতে হবে?
–,,না!
–,, তাহলে বলছিস কেনো?
–,,তুই রাজি হ,আমি বাসর করবো, এতো সুন্দর লাল টুকটুক বউ সেজে এসেছিস আমার ভীষণ রকম আদর আদর পাচ্ছে!
জেরিন মুখ উঠিয়ে সাব্বির কে চোখ রাঙানি দিলো।সাব্বির জেরিনের মুখে ফু দিয়ে বললো–,,কি? এমন ভাবে তাকাস না বউ মনের ভিতর কেমন কেমন জানি করে।
জেরিন সাব্বিরের বুকে একটা মে’রে বললো–,,ধুর!
খাটের উপর জেরিন কে নামাতেই সাব্বির কে টেনে বসালো জেরিন পরে সাব্বিরের কোলে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,ঘুমাবো একদম নড়চড় করবি না বুঝলি?
–,,হুম রাতের ঘুমটা সহ ঘুমিয়ে নে,আজকে রাতে তোকে ছাড়বো না আমি!
–,,এখন ঘুমাতে দে।
–,,দিবো, তবে আগে কথা দে রাতে আমার যা চাই তাই দিবি!
–,,তুই নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস সাব্বির!
সাব্বির হেসে বললো–,,ঘুমা!
——–
এই মেয়ে তুমি আমাকে ইগনোর করছো কেনো?
কতো গুলো ফোন করেছি দেখতে পাওনি নাকি?
সোহানা শান্ত ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো–,,আমি আপনার অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী স্যার কাজের বাহিরে কোনো কথা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।আর রইলো ইগনোর করার কথা,সেটা কখন করলাম?আপনি আপনার মতো আমি আমার মতো।অফিস টাইমে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়ার দেই এর বাহিরে আমার থেকে কিছু আশা করবেন না!
–,,আমাকে বিয়ে করবে সোহানা?
সোহানা চমকালো লোকটা কি পাগ’ল কখন কি বলে ঠিক নেই।বিয়ে!মাথা খারা’প হলো নাকি?
–,, কি সব বলছেন?
–,,যা শুনলে তাই,আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই!
–,,দয়া দেখাচ্ছেন?ভাবছেন বাবা মা নেই এতিম মেয়েটাকে বিয়ে করে সাহায্য করি,এর আগেও এরকম অনেকে করতে চেয়েছে তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু মোটেও ভালো ছিলো না, বেশির ভাগ মানুষই আমার সৌন্দর্য ভো’গ করতে চাইতো, এর থেকে বেশি কিছু না।
–,,আমি তোমাকে ভালোবাসি মেয়ে!সাহিল কাউকে দয়া দেখানোর হলে এতোটা পরিশ্রম করতো না,বার বার রিজেক্ট হওয়ার পর ও আসতাম না,আর রইলো ভো’গ করার কথা তোমাকে ভো’গ করার হলে বিয়ে করার দরকার কেনো পড়বে? আমি চাইলে যখন যা খুশি করতে পারি!ভালোবাসার উপর জোর খাটে না তাই তোমাকে সময় দিয়েছি আরো দিবো,চাইলে বিয়ের পরও সময় নিতে পারো, কিন্তু কান খুলে শুনে রাখো বিয়ে তোমাকে আমাকেই করতে হবে।সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে চামচ ব্যবহার করতে আমিও জানি!
–,,অবুঝের মতো কথা বলছেন কেনো স্যার?আমি আর আপনি!এটা কিভাবে সম্ভব আমার মতো মেয়েকে আপনি কেনো ভালোবাসতে যাবেন?
–,,একদম চুপ!কিছু বলছি না দেখে বেশ কথা ফুটেছে না মুখে?বেশি কথা বললে এই ভরা রাস্তায় টুপ করে চুমু খেয়ে ফেলবো আমি তখন দো’ষ দিতে পারবে না!আটাশ বছর ধরে সিঙ্গেল এমনি এমনি থাকি নি পুরোপুরি বউয়ের হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছি।ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে যাও না হয় আগে বাসর করবো পরে বিয়ে!
সোহানা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কি নির্ল’জ্জের মতো কথা বার্তা!এ কোন পাগ’লের পাল্লায় পড়লো শেষ মেষ!
–,,দেখুন,,!
সাহিল দুকদম এগিয়ে এসে বললো–,,বিয়ে না হওয়ার আগেই দেখাতে চাচ্ছো?
–,,নাউজুবিল্লাহ!
–,,মাশাআল্লাহ!
সোহানা অবাক হয়ে বললো–,,,এখানে মাশাআল্লাহ বলার কি আছে?
সাহিল এগিয়ে গিয়ে বললো –,,তোমাকে বলিনি আমার শালিকা কে বলেছি,ওইতো আমার বোনটা তৈরি হয়ে চলে এসেছে।
রাহা এগিয়ে এসে বললো–,,কেমন আছো ভাইয়া?
–,,অনেক ভালো তবে চলো যাওয়া যাক?
সোহানা অবাক হয়ে বললো–,,কোথায়?
রাহা বলে উঠলো–,,তুই জানিস না ভাইয়া তো আমাদের দুজন কে নিতে এসেছে ঘুরতে যাচ্ছি!
–,,তুই উনাকে আগে থেকে চিনিস?
–,,হুম!তুই বলিস নি তো কি হয়েছে ভাইয়া তো সব বলেছে আমাকে, আর আমার কিন্তু দুলাভাই অনেক পছন্দ হয়েছে।তোদের বিয়ে তো আর দশদিন পর!
সোহানা হা হয়ে তাকিয়ে, কিসের মধ্যে কি কিসের বিয়ে!
সাহিল বললো–,,রাহা যাও গাড়িতে বসো তোমার আপু কে আমি নিয়ে আসছি!
সোহানা রাগে কটমট করে তাকিয়ে বললো–,,কোন ধরনের অস’ভ্যতা এগুলো আমার বোন কে কেনো মিথ্যা বললেন আপনি?কে আপনাকে বিয়ে করবে।আপনার সাথে কোথাও যাবো না আমি।
সাহিল সোহানার হাত টেনে ধরে বললো–,,চুমু খাবে নাকি যাবে?
সাহিল মুখ এগিয়ে আনতেই ঘাব’ড়ে গেলো সোহানা,চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো–,,যাবো!কিন্তু কাজটা মোটেও ঠিক করছেন না আপনি।
–,,ঠিক বেঠিক না ভেবে, আমি ভালোবেসে যাবো এভাবে!পারলো আটকে দেখাও।
সোহানা বিরক্তি নিয়ে গাড়িতে উঠলো।এ লোকটা কেনো যে তার জীবনে আসলো,ভালোই তো ছিলো সব কিছু বিয়ে করতে চায় না সোহানা তাকে ছাড়া তার বোনটার কেউ নেই।মেয়েটা একা একা কিভাবে থাকবে?ওকে ছাড়া থেকেছে কোনো দিন?এতোটা স্বার্থ”পর হতে পারবে না সোহানা!দরকার পড়লে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাবে তবুও বিয়ে করবে না।
———
নেহা কে কোলে করে নিয়ে ঘুরছে নিখিল মাটিতে পা ফেলতে দিচ্ছে না একদম।নেহা বিরক্ত হচ্ছে এখনই এরকম করছে পরবর্তী তে কি করবে এই লোক?
রিসোর্টে সবাই এসেছে কিছু ক্ষন হলো, সাহিলের গাড়ি এসে থামলো তখনই।
সোহানা, রাহা নামলো গাড়ি থেকে সোহানা সবাইকে দেখে অস্ব”স্তি তে পড়লো না জানি কি ভাববে মানুষ গুলো,ছেঁ’চড়া ভাবলেও ভুল হবে না।মানুষ টা এমন কেনো?নিজের ফ্যামিলির মাঝখানে নিয়ে আসার কি মানে?
সোহানা ধীর কন্ঠে বললো–,,স্যার আপনার পরিবারের সবাই কি ভাববে বলুন তো?একজন অপরিচিত মানুষ কে ধরে নিয়ে আসলেন আপনি। যাকে তাকে সব জায়গায় মানায় না!
–,,যাকে তাকে মানে কি? হ্যাঁ তোমার কি ভালো থাকতে ভালো লাগে না, আমাকে রাগিয়ে দিতে এতো টা ভালো লাগে তোমার?একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, তুমি আমার হবু স্ত্রী তাই এখানে থাকার তোমার সম্পুর্ন অধিকার আছে যতোটা আছে আমার!যদি তাও কোনো অসুবিধে থাকে তো চলো কাজি অফিস বিয়ে করে আসি এক্ষুনি!
সোহানা চুপসে গেলো,রাহা ইতিমধ্যে সবার সাথে কথা বলছে, সাহিল তাকে আগেই একবার বাড়ির সবার সথে পরিচয় করিয়েছে,সাহিল ভালো করেই জানে সোহানা বোনের বাহানা দিবে তাই ঠিক বুঝে শুনে শালিকা কে আগে নিজের দলে এনেছে এবার কোথায় যায় দেখবে!
সোহানা কে দেখে বাড়ির সবাই ভীষণ খুশি, সাহিল সরাসরি বলে দিয়েছে সে মিহির আর নিখিলের রিসিপশনের দিন বিয়ে করবে তাও সোহানা কে।না হয় সব সময়ের মতো বিয়ে করা বাদ!
কথা শুনে সবাই হেসে ছিলো, বংশের বাকি গুলাও এক বিয়ে একটাও স্বাভাবিক না, হুট করে বিয়ে করে ফেললো। ছেলে মেয়ে গুলা যা হলো না একদম বাঁধিয়ে রাখার মতো!
সোহানা কথা কম বলছে মেয়েটা এমনিতেই শান্ত কিন্তু রাহা চঞ্চল। সবার সাথে ভাব হলেও রৌফের সাথে হলো না ঘটনা সূত্রে জানা গেলো তারা কলেজ কম্পিটিশনে দুজন দুজনের প্রতি’দ্বন্দি।দুজনই মেধাবী কেউ কাউকে ছাড় দেয় না।বেশির ভাগ সময় ই দুজনের স্কোর হয় সমান না হয় এক দুই নম্বরের পার্থক্য!
সামনেই ছেলেমেয়েদের অনুষ্ঠান সবাই ব্যস্ত থাকবে তাই এই একটা দিন সবাই মিলে নিজেদের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে।রাতে থেকে সকালে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাবে।
রাতে রান্না চড়িয়েছে মাহফুজ চৌধুরী, আজ ছেলে গুলো রান্না করবে,মেয়েদের ছুটি দিয়েছে, খিচুড়ি রান্না হচ্ছে এক হাঁড়িতে, এক পাশে বসেছে গানের আসর ছোট বড় সবাই গান গাচ্ছে রান্না ফাঁকে পুরুষরাও তাল মিলাচ্ছে আনন্দময় একটা পরিবেশ।রাতে আড্ডা দেওয়ার পরই বরাদ্দ কৃত ঘরগুলো তে গিয়ে ঢুকলো সবাই।
সাহিল সোহানাকে ডেকে বললো–,,তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,আশা করি কিছুটা টা সময় নিজ ইচ্ছেতে আমার নামে করবে!
সোহানা এরকম ভাবে বলতে কখনো দেখেনি সাহিল কে কি বলতে চায় মানুষ টা তার কি মন খারা’প?
সে পিছনে হাঁটা দিলো সাহিলের পুকুরের মতো ঘাট বাঁধানো অংশটায় বসলো দুজন রঙ বেরঙের বাতিতে সেজেছে আশপাশ, পানিতে ভেসে উঠেছে তার প্রতিচ্ছবি!
সাহিল বলতে শুরু করলো তার ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত সব কিছু।সাহিল বলা শেষ করতেই কারো কান্নার শব্দে থমকে গেলো।
সোহানা কেঁদেই চলেছে,সাহিল কি বলবে বুঝতে পারলো না মেয়েটা এতো নাজুক কেনো?এতো ছোঁয়ার আগেই গলে যায়!কেনো যে বলতে গেছিলো কাঁদার কথা ওর নিজের কিন্তু কাঁদছে কিনা মেয়েটা!
শান্ত করার জন্য সোহানার মাথায় হাত রাখলে সাহিল।সোহানা এসে জড়িয়ে ধরলো সাহিল কে বেচারা তো ভেবা’চেকা খেয়ে গেলো,নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম মেয়েটা এতো কাছে কেনো আসলো, সাহিল নিজেকে বহু কষ্টে সামলে বলে উঠলো–,,কি হচ্ছে কি সোহানা?এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেনো তুমি?তুমি আমান জীবন সঙ্গী হবে সব কিছু জানানো আমার উচিত ছিলো তাই বলেছি এ সব কিছুই অতীত, বর্তমান টা সুন্দর তোমাকে পেয়ে গেলে ভবিষ্যত টাও সুন্দর হবে বিশ্বাস করি!
সোহানা শান্ত হলো সাহিলের থেকে দূরে গিয়ে নাক টেনে বললো–,,স্যরি!আপনার কথা গুলো শুনে কষ্ট লাগলো তাই কেঁদে ফেলেছি।
সাহিল সোহানা কে নিজের দিক ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো–,,আমার কষ্টে কাঁদার জন্য নিজের জীবনে আনছি না তোমায়।নিজের সুখের ভাগিদার বানাতে আনছি আমার সব ভালো তোমার হোক! তোমাকে ছোঁয়ার আগেই তোমার দুঃখ,কষ্ট সব আমার হোক।সাথে তোমার ভালোবাসাও একান্তই আমার হোক!
সোহানা তাকালো সরল ভাবে,ছেলেটার কথায় কোনো মিথ্যা নেই কি অপূর্ব সুন্দর স্বীকারোক্তি, এক মিষ্টি আবদার সোহানার মতো সামান্য দুর্বল রমনী কি পারবে তা র’ক্ষা করতে?
———–
এখনো শাড়ি পাল্টানো হয়নি জেরিনের। ভেবেছে এখনই ফ্রেশ হবে, দরজায় শব্দ পেয়ে পিছন ঘুরে দেখলো সাব্বির এসেছে।
জেরিন হেসে বললো—,,তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?আড্ডা দেওয়া শেষ!
সাব্বির কথা বললো না নিঃশব্দে এগিয়ে আসলো।জেরিন বলে উঠলো–,,তুই বস আমি শাড়িটা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসি!
জেরিন এগোতেই শাড়ির আঁচলে টান পড়লো কোনো রকম পিন আপ করা না থাকায় আঁচল টা সরে গেলো সহসা,জেরিন নিজে সহ হেঁচকা টানে এসে পড়লো সাব্বিরের বুকে।জেরিন লজ্জা পেয়েছে অনেক, আঁচলের এক পাশ চেপে ধরে চোখ নিচের দিক রেখেছে,সাব্বিরের দিক তাকানোর সাহস পাচ্ছে না কেনো জানি!
কাঁপা কন্ঠে বললো-,,কি কর,,!
সাব্বির জেরিনের ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো–,,আজ রাতটা আমার জেরিন,, নো মোর এক্সকিউজ!
জেরিন কেঁপে উঠলো এরকম কথায়, এলোমেলো ছোঁয়ায়।সাব্বির জেরিনের কোমর জড়িয়ে ধরতেই জেরিন তাকালো সাব্বিরের চোখের দিকে, যে চোখে আজ শুধুই কোনো কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা!নে’শা তুর চোখ জোরা উপেক্ষা করার সাহস কি আছে জেরিনের?সে তো হারিয়ে যাচ্ছে সাব্বিরের সে গভীর চোখের চাহনিতে!
সাব্বিরের কাঁপা নেশা”ভরা কন্ঠ–,,ফিরিয়ে দিবি?
জেরিন এখনো তাকিয়ে –,,ছেলেটা আজ তার অধিকার চাইছে,নিজের প্রিয় মানুষের কাছে এতোটুকু চাওয়ার মাঝে কোনো অপরা’ধ নেই আছে শুধু একরাশ মুগ্ধতা!
–,,হবি না আমার জেরিন?পুরোপুরি আমার হয়ে যা প্লিজ!
—,,,ফিরিয়ে দিলে কি করবি?
জেরিনের চোখ হাসছে,তবে কন্ঠ গম্ভীর। সাব্বির ঠিক বুঝলো,মেয়েটাকে চেনা আছে তার,তাই বলে এমন মুহুর্তেও মজা করবে?
সাব্বির জেরিনের মাথার পেছনের খোঁপায় হাত রেখে এক টানে চুল গুলো খুলে ফেলে টেনে নিয়ে আসে জেরিনের মুখটা ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় জেরিনের গোলাপ রঙা ঠোঁটে! মৃদু একটা কা’মর বসিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলে-,,জোর করবো!তবুও আমার করবো!
জেরিন ঠোঁটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ঠোঁট উল্টে বললো–,,মজা করছিলাম তাই বলে কাম’র দিবি!সর তো তোর থেকে কিছু চাই না আমার!
–,,আমার চাই!
–,,কি?
–,,আপাদ”মস্তক পুরোটাই তোকে!বিরিয়ানি টেস্ট করার সময় এসে গেছে ঘসেটিবেগম!
জেরিনের লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা পালাতে গিয়েও পারলো না।আবদ্ধ হতেই হলো নিজ ইচ্ছেতে সাব্বির নামক খাঁচায়।পূর্ণতা পেলো তাদের ভালোবাসা, সম্পর্কটা আজ নাম পেয়ে গেলো নিজের!
চলবে,,,
#প্রণয়ের_সুর
#শেষ_পর্ব(শেষ অংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে সবাইকে বিশেষ করে সাহিল,সাব্বির,জেরিন,সোহানা।
তবে কিছু করার নেই তাদের যেতে হবে।অফিস আছে,আর গৃহিণীদের তো বাড়িই সব যতই বলুক তাদের কেউ ছুটি দেয় না সারাদিন খেটে ম’রে, এসব তো মুখের কথা নিজের সংসারের মায়া তারা কাটাতেই চায় না কোনো দিন!আবার বাড়িতে আছেন সেতারা বেগম এতো করে বলেও মানুষটিকে আনতে পারলো না তারা।সে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না আজকাল বয়স হয়েছে,সব সময়ই বলে বেড়ান মরা’র হলে নিজ বাড়িতে পড়ে যেনো মর’তে পারেন।তার স্বামীর স্মৃতি আছে এই বাড়িতে এটা ছেড়ে তিনি কোথাও যাবে না, বলা তো যায় না কবে উপরে যাওয়ার ডাক আসে!
জেরিন গাল ফুলিয়ে বসে আছে,সাব্বির কে ব’কেছে অনেক।ঠোঁট উল্টে ফের বললো-,,আমার কি হাল করেছিস সাব্বির তোকে ভালো মনে করেছিলাম!সবার কাছে তোর নামে বিচার দিয়ে দিবো বলে দিলাম, ভাললাগে না!
সাব্বির কাচুমাচু হয়ে বসে, যা বাবা ও আবার কি করলো?ঘসেটিবেগমেরই তো সব দোষ, যত যাই হোক তাই বলে কি বউকে আদর করতে পারবে না?আদর করলো এখন কথা শোনাচ্ছে?মানবতা আজ কোথায় হুহ্!
–,,আমি কি করেছি?
সাব্বিরের এমন কথা শুনে জেরিন সরু চোখে তাকালো নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ফোঁস করো উঠে বললো–,,তুই কিছু করিস নি?এই দেখ গলাতে একদম লাল হয়ে আছে এখন সব গুলাতে মিলে আমার মজা উড়াবে!
–,,বাবু,জান,ময়না রাগ করে না।কেউ তোমাকে দেখবে না আমি তোমাকে লুকিয়ে রাখবো, ওড়না দিয়ে বউ সাজিয়ে দিবো!
জেরিন দুই চারটা বসিয়েছে সাব্বিরের হাতে, পিঠে। উল্টো দিক মুখ করে বসে রইলো।সাব্বির সামনে গিয়ে বসলো,মেয়েটা দিন দিন একদম বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে,সব আহ্লাদ যেনো তার বেড়েই চলেছে সাব্বির পড়েছে মহা জ্বালা’য় বউয়ের মান ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতে বেচারার হাল বেহা’ল হয়ে গেছে!
সাব্বির জেরিনের মুখটা দু হাতের মুঠোয় নিয়ে কপালে গালে চুমু দিলো।টেনে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলো।মাথায় থুতনি ঠেকিয়ে বললো–,,স্যরি বললাম তো।আর করবো না এমন,আমার ঘসেটিবেগম কে লজ্জায় পড়তে হবে এমন কাজ আমি করবো না!
জেরিন দুহাতে সাব্বিরের কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুই একটু একটু ভালো তবে বাকি পুড়োটাই ব’দের হা’ড্ডি!
সাব্বির হাসলো মিন মিন করে বললো–,,ব’দের হা’ড্ডির একমাত্র বউ ধন্যবাদ!এখন চলেন আমাদের বাড়ি যেতে হবে।
———-
বাড়িতে জমজমাট পরিবেশ, সব আত্মীয় স্বজন তিন দিন আগেই চলে এসেছে।ছেলেমেয়েদের বিয়ের অনুষ্ঠান তার উপর সাহিলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন আবার ছেলেটা বিয়ে করবে একই দিনে।কিন্তু সে কোথায়?সোহানা মেয়েটাকে বুঝানোর পর রাজি করতে পারেনি কেউ,ছেলে বলছে বিয়ে হবে আয়োজন করো,বড়রা দ্বিধা’দ্বন্দে আছে যেখানে কনেই রাজি না সেখানে বিয়েটা আদোতেও হবে তো?
নেহা নিখিলের বাবা মা হওয়ার খবর আত্মীয়দের দিতেই নেহা কে নিয়ে মেতেছে সবাই,মেয়েটা অসুস্থ থাকে কিছুটা শুরুর দিকে এরকম হয়, ছেলেটাকে কে বুঝাতে যাবে এসব,সে তো নেহার কিছু হলেই হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে পড়ে,এদের ঝগ’ড়া তো সাথে ফ্রি তে দেখতে মিলে সবার।তবুও কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না।অফিসের কাজ করছে তো ভিডিও কল দিয়ে বসে থাকে নিখিল,ওর বউকে চব্বিশ ঘন্টাই দেখা লাগবে।নেহা কাশি দিয়েছে তো মায়েদের ফোন দিয়ে পাগ’ল করে ফেলে এই ছেলে।
নেহা বিরক্ত হয় এসব দেখে,তার পরও দিন শেষে একরাশ মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয় হৃদয়,কতো ভাগ্য করে এমন ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছে নেহা!মানুষ টা কতো বেশি যত্ন করে তাকে,সম্মান ভালোবাসায় ও কোনো কমতি নেই!এতোটা ও কি পাওয়ার ছিলো তার?নিখিলের মতো মানুষ কে ভালোবেসে সত্যি ও কোনো ভুল করেনি।জীবনের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হয়তো ছিলো নিখিল কে বিয়ে করাটা,সবচেয়ে ভালো অনুভূতি নিখিল কে ভালোবাসা তার ভালোবাসার চিহ্ন নিজের মধ্যে ধারন করা।অতি সুখে আজ নেহা কেঁদে ফেললো!
****
কাজ শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে সাহিল সোহানা কে বলেছে একটু দাঁড়াতে আজকেই ওর সাথে শেষ কথা বলবে তার পরও যদি রাজি না হয় তো সাহিল সোহানাকে বিরক্ত করবে না।এমন কথা শুনে সোহানা খুশি হবে নাকি বুঝতে পারছে না সে তো অবাকের চরম পর্যায়ে,এই তেঁ”দড় ছেলে এতো সহজে তাকে বিরক্ত করা ছেড়ে দিবে!দিলে তো ভালোই।
সাহিল আসলো কিছুক্ষণ পর।সোহানা দাড়িয়ে কিছুটা দূরে।সাহিল এগিয়ে গিয়ে সামনে দাড়ালো সোহানা একবার দেখলো ছেলেটাকে সত্যি ভীষণ সুদর্শন এই পুরুষ!ফর্মাল পোশাকে ঘামে ভেজা মুখটা দেখতেও বেশ লাগছে।তার উপর টাকা পয়সার অভাব নেই অনায়াসে যে কোনো ভালো মেয়ে পেয়ে যাবে!সোহানার থেকে হাজার গুন বেশি সুন্দর, যোগ্য কাউকে কিন্তু মানুষ টা কেনো যে তার পেছনে পড়েছে কে জানে!
সাহিলের মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে থমথমে কন্ঠে বললো–,,গাড়িতে এসে বসো।আর ভয় নেই কিছু করবো না কথা যেখানে শেষ হবে সেখানেই নামিয়ে দিবো!
সোহানা কথা বাড়ায় না গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।সিট বেল্ট লাগিয়ে বলে উঠলো–,,কি বলতে চান বলুন!
–,,বিয়ে করতে কেনো চান না মিস সোহানা?
সোহানা চমকালো প্রথম দিন থেকে তুমি করে বলে আজ আপনি!
–,,একবার তো বলেছি স্যার,,,,!
–,,আমি সত্যি টা জানতে চাই, সব কিছু বলার পর কারন পছন্দ হলেই আমি আপনাকে আর বিরক্ত করবো না।সাহিল কথা দিলে রাখে এতটুকু ভরসা করতেই পারেন তবে তবে যদি কোনো ফালতু রিজে’ন দেন তো তুলে আছাড় দিতেও দুবার ভাববো না!
সোহানা ভরকালো,সোজাসাপটা থ্রে’ট দিচ্ছে?কি অদ্ভুত লোক!
—,,আশা করি আপনার আমার বিষয়ে কোনো কিছুই অজানা নয় স্যার।আমি এতিম,আমার শুধু একটা বোন আছে,আমি ছাড়া তার কেউ নেই,আমি বিয়ে করলে নিশ্চিয়ই তাকে নিজের সাথে রাখতে পারবো না!আমি স্বার্থ’পরের মতো নিজের কথা ভাবতে পারবো না স্যার,আমার বোনকে একা ফেলে আপনার বাড়িতে গিয়ে আমি শান্তি পাবো না।আপনাকে অপছন্দ এমনটা নয় মানুষ হিসেবে আপনি যথেষ্ট ভদ্র ভালো যে কেউই বিয়ে করতে চাইবে।কিন্তু আমি করতে চাই না,আমার বোন কষ্ট পাক এমন কিছুই আমি করতে পারবো না!
গাড়ি থামতেই সোহানা ভাবলো সাহিল হয়তো তাকে নামিয়ে দিবো!সোহানা নিজ থেকেই নামতে গেলো সাহিল ধ’মক দিয়ে বললো–,,নামতে বলেছি আমি!
সোহানা চুপসে গেলো,এর মধ্যেই সেখানে আসলো রাহা!রাহাকে দেখে সোহানা অবাক হয়ে বলে তুই এখানে?
সাহিল গাড়ি থেকে নেমে গেলো সোহানাও নামলো।তিনজন দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ধারে।রাহা সোহানার মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো–,,এই তুমি আমাকে ভালোবাসো আপু!তোমার থেকে এটা আশা করিনি আমি।
সোহানা অবাক চিত্তে তাকিয়ে,সাহিল কিছুটা দূরে দাড়িয়েছে।
–,,কি সব বলছিস রাহা?
–,,তুমি গাড়িতে ভাইয়াকে যা যা বলেছো সবই শুনেছি আমি।তুমি বিয়ে করলে আমি তোমাকে স্বা’থপর ভাববো?এই চিনো তুমি তোমার বোনকে?এতটুকু বিশ্বাস নেই আমার উপর?তুমি যদি বিয়ে না করো তো বেশি কষ্ট পাবো আমি,আমি জানি তুমি আমাকে সুখে রাখতে চাও,ওইটা বিয়ে করার পরও রাখতে পারবে ভাইয়া ভীষণ ভালো মানুষ আমি ও চাই তুমি ভালো থাকো। তোমার খুশি চাওয়ার কি অধিকার নেই আমার?আমি একা থাকতে পারি তো আপু হোস্টেলে শিফট হয়ে যাবো, তোমার যখন খুশি আমার সাথে দেখা করতে পারবে,তুমিও জানো আমিও জানি আমাদের জীবনে অনেক কমপ্লি’কেশন ছিলো। জীবন কোনো দিন সরলরেখায় চলে না বাস্তবতা মেনে নিতে হয়,ঘরে আসা সুভাগ্য কে পায়ে ঠেলতে হয় না আপু!দেখবে তুমি ভীষণ সুখে থাকবে তুমি সুখে থাকলে তোমার বোন অনেক ভালো থাকবে।তুমি কি চাও না আমি খুশি থাকি?
সোহানা নিজের বোনকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বললো–,,বড়দের মতো কথা বলতে শিখে গেছিস?আমাকে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে না।
–,,আপু বলো না বিয়েটা করবে শুধু আমার জন্য প্লিজ!
–,,কিন্তু!
–,,কোনো কিন্তু নেই, বিয়েতে তুমি রাজি এ কথাটা ভাইয়াকে বলে আসো যাও!
সোহানা বোনের দিক সরু চোখে তাকালো মিন মিন করে বললো–,,তুই বলে দে,আমি এটার সাথে কোনো কথা বলবো না!
রাহা মুখ চে’পে হাসলো,ভাইয়া টাকে তার আপু কেনো যেনো এতো ভয় পায় কে জানে,যাক বিয়েটা তো করবে এতেই হবে!
গাড়িতে বসতেই সাহিল রাহা কে ডেকে বললো–,,সামনে বসতে।
সোহানা গিয়ে পেছনে বসেছে, সাহিল যে পুরো দমে সোহানা কে ইগনোর করছে তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না সোহানার।
রাহার সাথে কথা বলছে সাহিল রাহার হোস্টেল ঠিক করেছে সে বাসা থেকেও কাছে,আজকেই সাহিলের সাথে সাহিলদের বাড়িতে যাবে রাহা আর সোহানা।
রাহাকে বাড়ির কাছে নামিয়ে দিয়েই সাহিল আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো যার ফলে সোহানা নামতে গিয়ে মাথায় কিছুটা আঘা’ত পেলো পরে বসে পড়লো আগের জায়গায় কি একটা মানুষ বলে কয়ে গাড়ি চালাবে না?
কোথাও একটা যাচ্ছে তারা সাহস করে সোহানা জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না সাহিল রেগে আছে চোখে মুখে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট।
একটা ছোট বাড়ির সামনে গাড়িটা থামতেই সাহিল নেমে গাড়ির দরজা খুলে দিলো।সোহানা চুপচাপ নেমে গেলো।লোহার গেইট পেড়িয়ে একতলা বাড়িটার ভিতর ঢুকলো তারা শহর থেকে কিছুটা দূরেই বটে,বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিতেই বেরিয়ে আসলেন মধ্যে বয়স্ক মহিলা।সাহিল কে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললো–,,কেমন আছিস বাবা?
সাহিল হেসে বললো–,,ভালো আছি মামি।একজন কে তোমার সাথে দেখা করাতে আনলাম!
–,,কাকে?
–,,তোমার ছেলের বউ!
সোহানা ঘাপ’টি মে’রে সাহিলের পেছনে লুকিয়ে ছিলো
সাহিল শক্ত হাতে টেনে তাকে সামনে আসলো,সোহানা অপ্রস্তুত হেসে সালাম দিলো!
মিসেস খান তার মুখে হাত রেখে বললো–,,মাশাআল্লাহ!ছেলের আমার পছন্দ আছে,বাবা ভিতরে আয় প্রথম বার মেয়েটাকে নিয়ে এসেছিস কিছু মুখে দিতে হবে তো!
সাহিল সোহানার হাত টেনে ভিতরে নিয়ে গেলো।সাহিল ইলিয়াস খানের সাথে দেখা না করলেও সোহানা করেছে।ইলিয়াস খান দোয়া করলেন তাকে,ছেলেটা যে এতোকিছুর পর ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছে এটাও কি কম!ছেলেটার জীবনের সব সুখ তো তিনি বিন’ষ্ট করেছেন বাকি জীবন টা না হয় অনেক অনেক বেশি সুখ শান্তিতে কাটুক তার এই দোয়াই করেন!
——
সাহিল বিদায় নিয়ে সোহানা কে দিয়ে গেলো শপিং মলে,ছেলেটা কোনো কথা বলছে না তবুও ছুটিয়ে মার’ছে সোহানা কে,বেচারি এবার পারলে কেঁদে দেয়!
সাহিল শো রুমের ভিতর ঢুকে সোহানা কে রেখে চলে গেলো,একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো –,, ম্যাম কি লাগবে?
সোহানা আশপাশ চোখ বুলিয়ে সাহিল কে খুঁজলো এমন একটা জায়গায় একা ফেলে চলে গেলো?
সোহানার চোখ শান্ত হলো সাহিল কে দেখে, সাহিল এসেই শো রুমের মেয়েটার সাথে কথা বললো পরে নিজেই গিয়ে সব কেনা শুরু করেছে।এক বস্তা শপিং ব্যাগ সোহানার হাতে,সোহানার তো তাই মনে হচ্ছে এতো গুলো ব্যাগ সাহিল কিভাবে পারলো সোহানার হাতে দিতে এর কি কোনো দয়া মায়া নেই?রাস্তার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো সব কিছু হোঁচট খেয়ে নিজেও পড়লো সোহানা।সাহিল এগিয়ে এসে শপিং ব্যাগ গুলা উঠালো,সোহানা কে টেনে উঠিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
সোহানার কনুই ক’টে গেছে তবুও সে নিশ্চুপ। কোনো রকম চেপে ধরে আছে,শপিং ব্যাগ গুলো পেছনে জায়গা ভরাট করে ফেলায় সামনে বসেছে সোহানা।
একটা সময় সোহানা ঘুমিয়ে পড়লো।সাহিলে সেদিকে তাকিয়ে হাসলো আর বললো–,,একটু খানি ইগনোর করা সইতে পারছো না জান?আর তুমি কি করেছিলে?তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শোনার জন্য তোমাকে দূরে রাখতেই পারি আমি। আর একটু কষ্ট দিবো পরে কোনো রকম কষ্ট পেতে দিবো না তোমায় প্রমিজ!
সাহিল সোহানার দিক তাকালো হাত ধরার পর বুঝলো হাতে তরল কিছু আছে!আচমকা গাড়ি ব্রেক কষলো সাহিল,রক্ত!মেয়েটার হাত কাট’লো কখন?ওতো অযত্নশীল হলে চলে নাকি! হাতটা টেনে জামার হাতাটা সরাতেই আঁত”কে উঠলো সে,টিস্যু টেনে নিয়ে পরিষ্কার করলো হাত, ভাগ্য ভালো রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে ক্ষ’ত তেমন গাঢ় না।
সাহিল আশেপাশে তাকালো হাই’ওয়ের ঠিক পাশেই একটা ফার্মে’সি,এ মুহুর্তে এটারই প্রয়োজন বোধ করছিলো।গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে গেলো এক প্রকার বেন্ডে,জ করেই স্বস্তির নিশ্বাস নিলো!
গাড়ি ছুটালো আবার বাড়ির উদ্দেশ্য,মেইন গেইটের কাছে আসতেই ঘুম ছুটে গেলো সোহানার,তা দেখেও যেনো দেখলো না সাহিল।পার্কিং এরিয়াতে গিয়ে হঠাৎ সাহিল রাগে সোহানার দু গাল চে’পে ধরলো হিসহিসিয়ে বললো–,,আমাকে এতোটা নিচু মন মানসি’কতার ভাবো তুমি?তোমার বোনের কথা ভাববো না ভাবলে কি করে!তোমার সাথে বিয়ে না হলেও তোমার বোনকে হে’ল্প করতাম আমি।আর তুমি কি বললে তাকে সাথে রাখতে পারবে না আমাকে বিয়ে করলে!মানলাম তোমার মনে এসব নিয়ে চিন্তা ছিলো সরাসরি আমাকে একবার বলতে পারোনি?আমি কি তোমাকে মে’রে ফেলতাম বললে!তোমার বোনকে আর তোমাকে এ বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত কবেই নিয়েছিলো নিখিল সাথে বাবা মা ও মেজো চাচ্চুর ফ্রেন্ড ছিলো তোমার বাবা কোনো সম্পর্ক ছাড়াও রাখতো আমার পরিবার আর তুমি কিনা।যাই হোক রাহা নিজেই থাকতে রাজি হয়নি মেয়েটা বললো–,,তার এখানে থাকতে আত্নসম্মানে লাগবে তাই জোর করিনি!
সোহানা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো,ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সাহিল হাত নরম করলো তবে সরালো না, নিজের মুখ এগিয়ে আনলো সোহানার দিকে সোহানা কান্না থামিয়ে দিয়েছে ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলেছে।সাহিল তা দেখে হাসলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো–,,চুমু টা তোলা থাক সোহা!
সোহানা এখনো থ মে’রে বসে সাহিল শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে বলে উঠলো–,,গাড়িতে থাকার ইচ্ছে হলে ডোর লক করে থাকো,বলা যায় না কখন কি চলে আসে।
সোহানা এই অন্ধকারে থাকবে মানে তড়িঘড়ি করে নেমে গেলো সাহিলের পেছন পেছন বাড়িতে ঢুকলো।
ড্রয়িং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।সাহিল এগিয়ে গিয়ে সবার জন্য আনা শপিং ব্যাগ গুলো একে একে দিয়ে দিলো।চারদিন আগেই শপিং করেছে অনুষ্ঠানের জন্য তাও ছেলের দেওয়া উপহার পেয়ে খুশি বড়রা।ভাই বোনরাও খুশি হলো।বাকি শপিং ব্যাগ গুলা নিজের সাথে করে নিয়ে চলে গেলো।সোহানা কে কিছু দেয়নি দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সব ছোটরা জেরিন বলে উঠলো–,,সোহানা তোমাকে কিছু দিলো না ভাইয়া?
সাব্বির বলে উঠলো–,,ঘোর অন্যা’য় এটা মানা যায় না,এতো মিষ্টি বইনটাকে কিছু দিবে না কেনো?চল চল সবাই নতুন জামাইয়ের ক্লাস নিয়ে আসি!
হামিদা বেগম সোহানা কে টেনে নিয়ে গেলো মাহমুদা বেগমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো সাথে আরো কিছু নিকট আত্মীয় সোহানা হেসে হেসে সবার সাথে কথা বলছে,মন খারা”প তার সাহিল যদি এমন ব্যবহারই করবে তবে বিয়ে কেনো করছে!
দিন পেরিয়ে যায় চোখের পলকে সাজ সজ্জায় সজ্জিত তিন জোরা যুগল!নেহা পড়েছে গোলাপি রঙা শাড়ি নিখিল সাদা পেন্ট কোর্ট পড়েছে। মিহির গোল্ডেন কালারের স্যুট!বৃষ্টি সেজেছে লাল বেনারসি পড়ে।ওরা স্টেজে চলে এসেছে।সোহানা কে এখনো তৈরি করছে জেরিন,রাহা,নিখিলের কাজিনরা।
কিছু সময় পর পুরো উঠোন জুরে ছুট লাগালো জেরিন, সামনে সাব্বির, সাব্বিরের পড়নে নীল রঙা পাঞ্জাবি বিয়ে বাড়িতে মেয়ে গুলা দফায় দফায় ক্রাস খেয়েছিলো সিঙ্গেল ভেবে। সাব্বিরের পেছনে ছুটকে থাকা জেরিন পড়নে আকাশী আর নীল মিশ্রনের লেহেঙ্গা!এক হাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে ছুটছে আর বলছে –,,আবার লাগবি আমার পেছনে বল বল কেনো আমার চুল গুলো খুলেছিস!
সাব্বির থেমে যায় হঠাৎ একটা মেয়ে সামনে আসায় মেয়েটা হেসে গদগদ কন্ঠে বললো–,,আপনি দেখতে তো সুপার হ”ট মিস্টার সাব্বির!
জেরিন রাগে ফুঁসছে। কোমরে হাত দিয়ে আচমকা পায়ে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সাব্বির মাথা ঘুরিয়ে জেরিন কে নিচে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে এসে বললো–,, কোথায় লেগেছে বল আমায় দেখি দেখি পা টা হাঁটুর উপর রাখ।জেরিন খালি পায়ে দৌড়ে এসেছে পায়ে বালি, এখন পা উঁচু করবে মানে?
সাব্বির নিজে টেনে উঠালো পা জেরিন টাল সামলাতে না পেরে চেপে ধরলো সাব্বিরের দু কাঁধ এদিকটায় শুধু ছোটরা বড়রা বাড়ির ভিতরে অপর পাশটায় বড় স্টেজ করা হয়েছে।
জেরিনের পা দেখে হাসলো সাব্বির বউটা তার এতো জে’লাস!মেয়েগুলো চোখ রসগোল্লা করে তাকিয়ে দেখছে কাহিনি।কেউ কেউ রেগে নাক ফুলাচ্ছে।
সাব্বির পকেটে হাত দিলো একটা বের করে আনলো জেরিন পা সরাতে নিলেই সাব্বির বলে উঠলো–,,বউ!
জেরিন সরু চোখে তাকালো মেয়ে গুলো আফসোস করে বলে উঠলো–,,এই সুন্দর ছেলেটাও বিবাহিত? এই বংশের পোলা গুলা কতো সুন্দর আর সব গুলা বের হলো বিবাহিত!
জেরিনের পা গলিয়ে পড়ালো চকচকে পাথর বসানো পায়েলটি।তার পর কোলে তুলে নিলো।
জেরিন গলা জড়িয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো–,,এতো সেজেগুজে বের হয়েছিস কেনো বেদ্দ’প মেয়েগুলা কিভাবে তাকাচ্ছে দেখেছিস, আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে পরে তোকে সব সামাল দিতে হবে বলে রাখলাম,রাগ কিন্তু তোর উপর ঝাড়বো!
–,,ঘসেটিবেগম। আমার ভীষণ আদর আদর পাচ্ছে জান চল রুমে যাই একটু আদর করে ছেড়ে দিবো!
জেরিন সাব্বিরের বুকে মার’লো কয়েকটা বলে উঠলো–,, দিন দুপুরে প্রেম নির্লজ্জ পোলা।নামা আমাকে।
–,,নো ওয়ে,আই নিড আ কি’স!
জেরিন চোখ পাকিয়ে বললো–,,সবার সামনে?
সাব্বির আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে বললো–,,কেউ তো নেই আর ওই মেয়ে গুলা কে তুই কি মানুষ ভাবছিস? আমি তোকে ছাড়া এখানে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না,চুমু চাই মানে চাই,রুমে গেলে তুই আর বের হতে পারবি না পরে আবার আমাকে দোষ দিতে পারবি না!
জেরিন চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,এখন না প্লি,,,,!
কথা বলার আগেই সাব্বির জেরিনের ওড়ানা টেনে দুজনের উপর দিয়ে দিলো অধর জুড়ে চুমু খেলো নিজের ব্যক্তিগত নারীর!
জেরিনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো–,,এটা কিন্তু ঠিক না ঘসেটিবেগম রোজ রোজ আরো পাগ’ল করে দিচ্ছিস তুই আমায়!
–,,এবার ছাড় নামা কোল থেকে কেউ এসে দেখলে কি ভাববে!
জেরিন কে নামিয়ে দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরলো আবার ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে তার হাত ধরে হাঁটা দিলো।
সোহানা আর সাহিলের বিয়ে সম্পূর্ণ হবে কিছু সময় পর।সোহানার পড়নে গাঢ় মেরুন রঙা লেহেঙ্গা,কিন্তু সাহিল তো আজকে সবাই কে তাক লাগিয়ে দিয়েছে একদম।বিয়ের শেরওয়ানি বাদ দিয়ে শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি পড়ে হাজির, একদম সিম্পল সাজ তবুও যেনো চোখ ফেরানো দায়।পরিবার টা যেনো আজ কানায় কানায় পূর্ণ হামিদা বেগমের চোখ ভরে আসলো।তার পরিবারের সুখ সব সময় বজায় থাকুক সব সময় মিলেমিশে যাতে থাকতে পারে সেই প্রত্যাশাই করে!
একসময় কাজি সাহেবের বিয়ে পড়ানো শেষ হলো, আত্মীয় স্বজন রা নব দম্পতি কে দোয়া করলেন সাথে বাকি দুই জোড়া কে ও।বাড়ির হাসি খুশি পরিবেশ টা মুহুর্তেই গুমোট হয়ে আসলো, বৃষ্টির বিদায়ের সময় এখন যদিও বহু দূরে নয় তার পরও মেয়েটা এখন থেকে ওই বাড়িতে থাকবে।নিজের সংসার হবে সব কিছু সামলে কি অতো সময় হবে আসার?আগের মতো মেয়েটাকে কি পাবে সবাই!প্রতিবেশিরা হয়তো হাসা হাসিও করছে এখান থেকে এখানে বিয়ে দিয়ে এমন করে কাঁদছে যেনো মেয়ে কে দেখতে পারবে না কতোকাল!তবুও তারা কি করে বুঝবে একটা মায়ের মনের আকুতি?মায়ের কাছে সন্তান তো সেই ছোট্টটিই থাকে সব সময়।চোখের আড়াল হলেই তো দিশে’হারা হয়ে পড়েন মায়েরা।যেই মেয়েটি সারা দিন মা মা করে বাড়ি মাথায় তুলতো সে মেয়েটি আর সব সময় মা মা করে ডাকবে না!মাতৃত্বের ভাগ যে অন্য কাউকে দিতে হবে আজ,নতুন মা পাবে পরিবার পাবে ঘর পাবে,এতোই কি সহজ সব কিছু?তবুও প্রকৃতির নিষ্ঠু”রতম নিয়ম মেনে নিতে হয় সবাই কে।বিদায় দিতে হয় কলি”জার টুকরোটাকে।বাবার চোখের মনি,ভাইয়ের আদরের, বোনদের সুখ দুঃখের বন্ধু, এতোই কি সোজা এক ঝটকায় সব কিছু পর করে দিয়ে নতুনত্ব বরণ করা!
বৃষ্টির বিদায় হলো কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিলো পরিবারের প্রতিটি মানুষ। মিহিরের ও খারা’প লাগছে সে জানে বৃষ্টি চাইলেই এখানে সারা দিন থাকতে পারবে সব সময় আসতে পারবে।এ পরিবার টা তার নিজেরও পরিবার সবাই কে এমন বিধ্ব”স্ত দেখে সে নিজেকেও ঠিক রাখতে পারছে না।বৃষ্টি কে শক্ত করে বুকের সাথে আগলে ধরে নিয়ে গেলো নিজের বাড়িতে।নতুন বউ বরণ করলো মিহিরের মা, তার আত্মীয় স্বজন রা!
সোহানাকে ও বরণ করে ঘরে তোলা হলো সব নিয়ম কানুন মেনে ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো!
রাত প্রায় এগারোটা সাহিল ঘরে আসেনি, অভিমানে কষ্টে ডুকরে কেঁদে উঠলো সোহানা মানুষটার এতো রাগ তার উপর?এতোদিন এভাবে এরিয়ে চললো আর আজ বিয়ে করে প্রতিশো’ধ নিলো!শুধু মাত্ররো রাগ উগরে দেওয়ার জন্যই কি তবে এই বিয়ে কোনো ভালোবাসা নেই সবই মরিচীকা!
সোহানা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে দুঃখে সব সাজ সজ্জা টেনে খুলে ফেললো মাথায় খোঁপা ছাড়া কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই,কিছুক্ষণ পর পর নাম টানছে কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে তিড়বিড় করে কাপছে নামের পাটাতন, মেরুন রাঙা ঠোঁট! অবহেলায় সাইডে পড়ে আছে দোপাট্টা। হাতে থাকা কাঁকন টা খুলতে খুব মনোযোগী সোহানা সে খেয়ালই করে নি সদ্য বিবাহিত বউয়ের এমন রূপ দেখে কেউ একজন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে।সাহিলের বউ হবে কোমলমতি আর সে বউ কিনা অভিমানে টইটম্বুর হয়ে যে কাজ সাহিলের করার কথা সে কাজ নিজে করে ফেলেছে!
কোমরে ঠান্ডা স্পর্শ ঘাড়ে কারো অবাধ্য বিচরণে মনোযোগ হারায় সোহানা পর পর কেঁপে উঠে সোহানার ছোট্ট দেহখানা।সাহিল কোমরে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে আছে সোহানা কে।হাত থেমে গেলো সোহানার শিরশিরে অনুভূতি হলো যেনো সর্বাঙ্গে।প্রথম কোনো পুরুষ তার এতোটা কাছে এসেছে হৃদয় প্রাঙ্গনে যেনো ঝ’ড় বইছে।চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিজের হাত দিয়ে খামচে ধরলো সাহিলের হাত সাহিলের হাত থেমে গেলো, আয়নাতে তাকিয়ে নিজের স্ত্রী কে আপাদ’মস্তক দেখলো সাহিল।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,ভালোবাসি সোহারানী,ভালোবাসি অভিমানী কন্যা,ভালোবাসি ভালোবাসি আমার হৃদয় রাজ্যের মহারানী,এ অধমকে গ্রহণ করে তাহার জীবন ধন্য করো তুমি!
সোহা অবাক চোখে তাকালো, এতোদিন ইগনোর করে এখন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে?এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে সোহানা, দূরে সরতে গিয়েও বেশি দূর যেতে পারেনি সোহানা আবদ্ধ হলো সাহিলের বাহুডোরে!সোহানা এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। সাহিলের বুকে এলোপাতাড়ি মে’রে বললো-,,আমাকে কষ্ট দিয়ে বেশি শান্তি পান তাই না?কেনো এতো দিন কথা বলেননি আমার সাথে?আমার কি অনুভূতি বলতে কিচ্ছু নাই?যা আছে শুধু আপনার একার!ছাড়ুন আমাকে।
–,,আমাকে ভালোবাসো সোহারানী?
–,,তাতে আপনার কি আসে যায়?
সাহিল সোহানাকে নিজের মুখোমুখি করে চোখে চোখ রেখে বললো–,,চোখের দিক তাকিয়ে বলো!
সোহানা এলোমেলো দৃষ্টি সরালো,সাহিল হাসলো!
গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,আজও বলবে না তাই তো?
সোহানা নিশ্চুপ রইলো সাহিল সোহানাকে ছেড়ে দরজার দিকে এগোতেই সোহানা বিদ্যুতের গতিতে এসে ঝাপটে ধরে সাহিল কে,বুকের সাথে মিশে গিয়ে বললো–,, ভালো,,বাসি!
–,,শুকনো প্রোপোজাল নট একসেপ্টেবল!
–,,কিভাবে বলতে হবে তাহলে?
সোহানার বোকা প্রশ্নে হেসে দিলো সাহিল।নে’শায় তলিয়ে যাচ্ছে সে এই যে মেযেটা তার বুকের সাথে মিশে আছে এর থেকে পরম শান্তি আর কোথায় পাবে!মেয়েটার চুল থেকে ভেসে আশা মিষ্টি সুগ্রাণ মেয়েলি স্মেল টা বড্ড টানছে সাহিল কে!
–,,যা চাই তা দিবে?নিজ ইচ্ছেতে!
কন্ঠে কেমন আকুতি সাহিলের, সোহানা বুঝলো যেনো লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বললো–,,কি চাই একবার বলুন!
সাহিলের ভনিতা বিহীন আবদার–,,তোমাকে!সম্পূর্ণ রূপে যেখানে তোমার দিক তাকালেই সে চিৎ’কার করে জানান দিবে তুমি শুধু সাহিলের প্রিয়তমা!তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে মিশতে চাই, তোমার অস্তিত্বে বিলীন হতে চাই দিবে কি তার অনুমতি!
সোহানার চোখ ছলছল করে উঠলো, উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো সে হতে চায় শুধু তার সাহিলের!
সাহিল কপালে চুমু খেলো, এই মায়ার জাল বিছানো মায়াবীণির অধর জোরা নিজের আয়ত্তে নিয়ে দীর্ঘ চুমু দিলো।ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলে উঠলো–,,পাওনা পরিশোধ করে দিলাম!
সোহানা হেসে উঠলো,গাড়িতে বলা কথা টা মনে পড়তেই হেসে ফেললো আবার!সাহিল সেই হাসি দেখলো আগ্রহ নিয়ে ভালোবাসা ময় এ জোড়া মুগ্ধ চোখে!
ভালোবাসায় পূর্ণ করে রাখে যে পূর্নতার ভাগিদার ও হয় সে।
সাহিলের অপূর্ণ জীবনে সুখ দুঃখের সাথি হয়ে তাকে ভালোবেসে আগমণ ঘটলো সোহানার এবার পূর্ণতায় ভাসুক তারা,গড়ে তুলুক নিজস্ব প্রেমের জগৎ! যেখানে থাকবে শুধু তারা তাদের ভালোবাসার মিলন তিথির স্মৃতিরা!
——–
নেহা তাকিয়ে আছে অপলক নিজের হাতের দিকে, পুরনো স্মৃতিতে থাকা বিষা’দ টুকু মনে পড়লেও আজ তার মুখ জুড়ে তৃপ্তির হাসি!
সেতারা বেগম নাত বউদের উপহার দিয়েছেন আজ।উপহার দেওয়া শেষে সবাই যেতে নিলেই নেহাকে থামতে বলেন তিনি, নেহার হাত জোড়া নিজের মুঠোও নিয়ে বছর খানেক আগের নেহার খুলে দেওয়া চুড়ি জোরা পড়িয়ে দেয় নিজ হাতে।হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে বলে–,,এই হাত জোরা ছাড়া এই চুড়ির সৌন্দর্য যে বেমানান বইন!তুই বলেছিলি যোগ্য কাউকে দিতে,তোর থেকে ভালো কাউকে কোথায় পেতাম বল!আমার আজ বলতে দ্বি’ধা নেই তুই আমার দাদু ভাইয়ের যোগ্য জীবনসঙ্গী!
নিখিলের হাত টেনে নেহার হাতের মুঠোয় দিয়ে বললো–,,নে তোর যোগ্য হাতে সপে দিলাম আমার নাতিকে,আগলে রাখিস বোন!
নেহা খুশিতে সেতারা বেগম কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিলো, বাড়ির প্রতিটি মানুষের খুশিতে চোখ চক চক করে উঠেছিলো।
নিখিল নেহার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললো–,,বউজান চলো আজ জোসনা বিলাস করি তুমি আমি আর আমাদের ভালোবাসা উজ্জ্বল তাঁরা কে নিয়ে!
নেহা হেসে বললো–,,যো হুকুম আমার বাচ্চার বাপ!
নিখিল চমৎকার হাসলো,নেহাকে কোলে নিয়ে গেলো বারান্দায় যেখানে গ্রিলের ফাঁ’ক দিয়ে জোসনারা এসে ভীর করেছে ভালোবাসার এই যুগল কে ছুঁয়ে দিতে তাদের ভালোবাসার স্বাক্ষী হতে!
———
তোমাকে দেখে আমার চক্ষু আজ ধন্য মেঘবালিকা!সেই তুমি হয়েই গেলে মিহিরের লাল টুকটুকে বউ!তোমাকে আমি ভালোবেসেছি গোধূলির ওই রাঙা বিকেলে, নীলাম্বরে সেদিন ছিলো লাল রঙা মেঘেরা,সেদিনই ইচ্ছে জেগেছিলো মেঘবালিকা যেদিন আমার ঘরে আসবে সেদিন সে সাজবে আমার ভালোবাসার মুহুর্তের স্মৃতিচারণ আমার লাল রঙা মেঘ।আমার শেষ বিকেলের গোধূলি রাঙা মেঘপ্রিয়া!
সাব্বিরের কোলে মাথা রেখে আকাশ দেখছে জেরিন,জেরিনের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে সাব্বির জেরিনের চোখে চোখ রেখে বললো–,,তুই আমার জীবনের সেই শুভ্রতম ফুল যাকে আমি পেয়েছি শুভ্র রঙে মোড়ানো,তোকে পেয়ে আমি আজ পূর্ন, তোকে যেদিন পেয়েছি সেদিন থেকে দেখছি, ভাবছি আর মুগ্ধ হচ্ছি!তোকে কেনো ভালোবাসি জানি না,তোকে কেনো এতোটা আদরমাখা আস্ত মায়া মনে হয় জানি না।শুধু এতোটুকু জানি আমি ডুবছি তোর প্রেমে সাতারা জানি না তবুও চাই আমি ডুবে যাই শুধু ডুবতেই থাকি সেই প্রেমের গভীরতায় সেই গভীরতম ভালোবাসায় যেখানে কখনো বিচ্ছেদ আসে না!
আজ বেজেছে প্রণয়ের সুর প্রতিটি হৃদয়ে,প্রতিটি কোনায় কোনায়,প্রতিধ্বনিত হয়ে বার বার জানান দিচ্ছে পূর্ন হৃদয়ের মানুষগুলো তারা পেয়েছে স্বর্গ সুখ!
চাঁদ আজ তিমির অম্বরে মুখ লুকিয়ে মুচকি হেসে জানিয়ে দিলো সেও স্বাক্ষী এই পরিবারের অটুট বন্ধনের,ভালোবাসার পূর্ণতার।এ বাড়ির ইট পাথরে আজ ভেসে বেড়াচ্ছে প্রেমের প্রজাপতি ছড়িয়ে দিচ্ছে ভালোবাসা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সুর তরঙ্গে কোনো এক প্রণয়ের রাজ্যে!
~সমাপ্ত~
[এতোদিন যারা ধৈর্য সহকারে পুরোটা গল্প পড়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ, আমাকে উৎসাহ দিয়ে এতোদিন পাশে থাকার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা। সবাই ভালো থাকবেন কথা হবে নতুন কোনো গল্পে!]