প্রণয়ের সুর পর্ব-৯+১০

0
15

#প্রণয়ের_সুরপ্রণয়ের_সুর
#পর্ব৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে রাতের পরিবেশ, হসপিটালের করিডরে বসে আছে শহিদুল চৌধুরী আর নিখিল বাকিদের বহু কষ্টে বাড়িতে পাঠিয়েছে দুজন,তাহমিদা বেগম নিজেও অসুস্থ তাই তাকে বুঝিয়ে নিয়ে গেছেন হামিদা বেগম।
নিখিল দাঁড়িয়ে আছে আইসি’ইউর দরজার সামনে , কাঁচ বেধ করে দেখা যাচ্ছে নেহার নিস্তেজ দেহটা।মেয়েটার জ্ঞান এখনো ফিরেনি,ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছেন বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে তাদের আর কিছু করার থাকবে না।নেহার কোমায় যাওয়ার সম্ভবনা বেশি!
শহিদুল চৌধুরী আজ নিরুপায় বাবা হয়েও পারছেনা মেয়ের কষ্ট কমাতে, তাকে সুস্থ করে তোলার কোনো উপায় নেই।চেয়েও নিতে পারছেন না মেয়ের কষ্টের ভাগ।

বাড়িতে আসার পর কেউই তেমন কথা বলেনি সেতারা বেগমের সাথে,জেরিন শুধু ছোট করে জানিয়ে
,,জ্ঞান ফিরেনি।
সেতারা চুপ রইলেন কথা বলার মতো মুখ নেই,বাড়িটা প্রাণ শূন্য হয়ে পড়েছে।খাবার টেবিলে আজ কেউ নেই,খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই,হাসিখুশি সেই পরিবেশ নেই।সবাইকে পাল্লা দিয়ে ঘিরে নিয়েছে বিষন্নতা।

ভোরের আলো ফুটলেও ঠায় একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে নিখিল,তার মাঝে কোনো ক্লান্তি নেই। পা ব্যাথা করছে না তার,শুধু দেখতে ব্যস্ত নেহাকে।
সকালে ডাক্তার আসলেও নিখিল ভিতরে প্রবেশ করেনি,সবাই দেখে আসলেও সে যায় নি।তার মনের কোথাও একটা বিশ্বাস জন্মেছে, সে ছুঁয়ে দিলে নেহা ব্যাথা পাবে,তার কাছে যাওয়াতে মেয়েটা কষ্ট পাবে, ঘৃ’ণায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটাও স্বাভাবিক মনে করে নিখিল!যদি তার থেকে দূরে থেকে মেয়েটা ভালো থাকে,কোনো দুঃখ তাকে ছুঁতে না পারে তো নিখিল দূরে থাকবে,একই বাড়িতে থাকবে তবুও সর্বোচ্চ দুরত্ব বজায় রাখবে,ভালোবাসার মানুষের সুখ বড় সুখ।নেহা না চাইলে কোনো দিন সে আশেপাশেও ঘেঁষবে না।
নিদারুণ য’ন্ত্রণা পুষবে তবুও না!
নিখিল ভয়ে কাছে যায় না যদি নেহার জ্ঞান ফিরে আসে আর সে নিখিল কে দেখে রিয়েক্ট করে আবার অসুস্থ হয়ে যায়!তখন নিখিল নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
হারিয়ে ফেলার ভয় টা প্রতি মুহুর্ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে।

ব্যস্ত শহরে গুমোট আবহাওয়া, তবুও এক ফোঁটা বৃষ্টির দেখা নেই,দুইদিন হতে চললো,নেহার জ্ঞান ফিরেনি।নিখিল সব সময় চুপচাপ থাকে,একজন সুন্দর পরিপাটি ছেলে,আয়রন বিহীন শার্ট কোনো দিন গায়ে দেয় নি,চুলগুলো অলস ভঙ্গিমায় ছড়ানো,হামিদা বেগমের ভেতর থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসে, তার ছেলেটার এই রূপ সে মা হয়ে মেনে নিতে পারছে না।নেহাকে কতোটা ভালোবাসে প্রতিটা মানুষ তা কোনো দিন স্বীকার করা হয়নি কারো,তবে এই দুই দিনের চোখের পানি যেনো তা প্রমান করতে ব্যস্ত।
তাহমিদা বেগমকে সাহস করে দেখতে গিয়েছিলেন সেতারা বেগম,তাহমিদা কিছু বলেনি,চুপচাপ হয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসে ছিলো শুধু।
সেতারা বেগম নিজের সুন্দর পরিবার নিজের হাতে নষ্ট করে দিয়েছেন বেশ বুঝতে পেরেছেন তিনি।

দুইদিনে সর্বোচ্চ বিশ মিনিটের জন্য নিখিল বাড়ি এসেছিলো,তার বেশি তাকে বাড়িতে রাখা যায় নি।
আজ এসেছে সবে সেতারা বেগম ডাকলেন তাকে
নিখিল চুপচাপ ঢুকলো সেতারা বেগমের রুমে।
নিখিলের দৃষ্টি মেঝেতে।সেতারা বেগমের সাথে নিখিলের সম্পর্ক টা সবচেয়ে ভালো,প্রতিদিন নিয়ম করে একবার হলেও ফোন দিতো সব খবর নিতো বাড়ি এসে।কিন্তু এখন!নাতিটা তার দিকে ফিরেও তাকালো না।
সেতারা বেগমের শান্ত কন্ঠ –, নেহা কেমন আছে দাদু ভাই?
,,,ম’রে গেলে খুশি হতে তুমি?
সেতারা বেগমের ভিতরটা কেঁপে উঠলো,নিখিলের কন্ঠস্বর ভেজা,বার বার ঠোঁট ভেজাচ্ছে জিব দিয়ে।তিনি তো কখনো এমনটা চায়নি।
নিখিলের হতাশ কন্ঠ
,,কেনো এমনটা করলে তুমি দাদী?আমার মুখের হাসিটুকু কেঁড়ে নিলে কেনো?আমার জীবনের শান্তি কে তুমি ধ্বং স করে দিয়েছো দাদী!
তুমি না চাইতে সব সময় যেনো তোমার নাতী সুখে থাকে,তুমি আমার এমন সুখ চাইলে যার জন্য আজ আমি নিঃস্ব!তুমি আমাকে পুরোপুরি নিঃশেষ করে দিয়েছো।
তুমি জানো নেহা আর কোনো দিন আমার সাথে কথা বলবে না,দুরত্ব চেয়েছে আমার থেকে,আমাকে মুক্তি দিয়েছে!
তুমি আমার ভালো চাইতে গিয়ে আমার এতো বড় ক্ষ’তি কেনো করলে?নেহা, আমার নেহা দাদী! আদুরে বাচ্চাটা নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে,আমি নির্বোধ আহাম্মক কিছুই করতে পারছি না।
নে,,হা না থাকলে শ্বাস আটকে আমি ম’রে যাবো।তুমি আমার কেনো এমন সুখ চাইলে,রূপবতী গুনবতী নারী দিয়ে কি করবো আমি।নেহা যেমনই হোক তাকে আমি ভালোবাসি।
ভালোবাসা তো এতো কিছু দেখে হয় না।তোমার দোষ দিচ্ছি কেনো আমি,ভুল তো আমার, তুমি এতো কিছু বলার সাহস তো আমার জন্যই পেয়েছো!আমি তোমাকে বাঁধা দেই নি তাই বলতে পেরেছো,তোমাকে আমি সুযোগ করে দিয়েছি তাই বলতে পেরেছো।ভালোই করেছো আমার মতো মানুষের সুখে থাকার কোনো অধিকার নেই। তোমার কোনো দোষ নেই, নেহার অবস্থার জন্য দায়ী আমি,শুধু একটাই অনুরোধ তুমি আর কোনো দিন নেহার বিষয়ে কোনো কথা বলবে না,ওর নামও মুখে নিবে না,নয়তো দ্বিতীয় বার আমি ভুলে তোমার আমার সম্পর্ক!
—-
তিন দিন পর নেহা চোখ খুলেছে। ডাক্তার কড়া কড়ি ভাবে শাহআলম চৌধুরী আর শহিদুল চৌধুরী কে জানিয়েছেন,পরবর্তী তে বড় কোনো শক পেলে নেহা স্ট্র’ক করতে পারে,খেয়াল রাখতে হবে যেনো বেশি উত্তে”জিত হয়ে না পড়ে।রেগে না যায়,রেগে যাওয়াটা ওর জন্য বিপদ’জনক, এখন যাতে ফুলটাইম রেস্টে রাখা হয়।
নেহা চোখ মেলতেই বাড়ির সবাই হুমড়ি খেয়ে ঢুকেছে কেবিনে,নেহা তো উঠেই বালিশে হেলান দিয়ে বসেছে,
মুখ ভর্তি হাসি যেনো কিছুই ঘটেনি!

,,আরে তোমরা সবাই এখানে কেনো?আমি হসপিটালে এসেছি কেনো বলোতো বাড়িতে কি রাখতে পারলে না আমাকে,তোমরা জানো না হসপিটাল আমার কতোটা অপছন্দের!
শাহআলম চৌধুরী ঢুকতেই নেহা মুখ কুঁচকালো
,,বড় আব্বু বাড়ি নিয়ে চলো,বাড়ি যাবো।বাকি সবাই আমার কথা শুনবে না আমি জানি!
শহিদুল চৌধুরী কেবিনে ঢুকলেন চোখ চিকচিক করছে ভদ্রলোকের,তবুও ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললো

,,অবশ্যই আমার মা যখন বলেছে আজকেই বাড়ি নিয়ে যাবো!
তাহমিদা বেগমের শরীর দুর্বল তিনি আসেনি হাসপাতালে, মহিলা জানলে হয়তো উড়ে আসতো, সাহারাও আসেনি সে একা হাতে রান্না করছে,কতোদিন বাড়ির মানুষ গুলো খায় না,সাব্বির ফোন দিয়ে জানাতেই আল্লাহর শুকরিয়া করলেন তিনি,চোখে জল নিয়ে খুশি মনে একা হাতে সবার জন্য রান্না করতে লাগলেন,মনে কোনো হিং”সে নেই কেনো তিনি খেটে মর’বেন এরকম কোনো ভাবনা নেই।কয়েকদিন যাবৎ উনিই তো সামলাচ্ছ সব।শাশুড়ীর উপর মনঃক্ষুণ্ণ হলেও ঔষধ খাবার দিতে ভুলেনি।দায়িত্ব পালনে অবহেলা নেই!
নেহার অবাধ্য চোখ নিখিল কে খুঁজতে ব্যস্ত মানুষটি আসেনি!তাকে দেখতে একবারও আসলো না,সাব্বির
বেডের এক কোনায় অলস ভঙ্গিতে বসে বললো

,,নেহা বইন কসম মাইরি তুই তিন দিন ধরে যা টেনশন দিয়েছিস, এতোবছরের জমানো পেটের চর্বি তিন দিন না খেয়ে সব উবে গেছে।ডায়েট ফায়েট করা লাগেনি!এরকম মাঝেমধ্যে অসুস্থ হলেও পারিস বইন ফ্রিতে ডায়েট হয়ে যায়।
জেরিন ধুম করে ওর পিঠে বসায় একটা।
,,তোর কি মুখ বন্ধ থাকে না কয়েকমিনিট,ভালোই ছিলো এতোদিন তোর বকবক থেকে রেহাই পেয়েছিলাম।

নেহা অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় সবার দিকে মুখে জোরেই বলে—,তিন দিন!
নেহার মনে হলো সে ঘুম থেকে উঠেছে,তেমন কোনো ক্লান্তি নেই শরীরে,নিজেকে প্রথমে অসুস্থই মনে হয়নি তার!ভেবেছে হয়তো কিছুক্ষণ সে অজ্ঞান ছিলো,কিন্তু তিন তিনটা দিন কেটে গেছে ইতিমধ্যে!

মিহির ঘেমে-নেয়ে কেবিনে ঢুকলো,তিন দিন ধরে অফিসের সব দায়িত্ব তার উপর দিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য ভাবে সবাই!বলে না আসলেও সব কিছু সামলাতে হচ্ছে তাকে।পরিবারের একজনও কাজ করার পরিস্থিতিতেই ছিলো না।নিখিলের কথা সে বাঁধই দিলো,ছেলেটা কে এতোটা গুমোট ভাবে থাকতে কখনো দেখেনি,তার কাছে এই নিখিল ভিন্ন অন্য এক স্বত্বা যে ভীষণ উদাসিন যার কাজে কোনো মন নেই।পৃথিবীতে যে নিখিল বলে কারো অস্তিত্ব আছে সেটাই ভুলতে বসেছিলো!

মিহির কে দেখেই নেহা হাসিমুখে বললো–,কেমন আছেন মিহির ভাইয়া!
মিহির চমকালো তার নিজের এ কথাটা জিজ্ঞেস করার কথা আর মেয়েটা উল্টো তাকে জিজ্ঞেস করছে।

,,তুমি যেমন রেখেছো আমাদের তেমনই আছি!

,,এতো টেনশনে রেখেছি আপনাদের, সরি ভাইয়া ভর পাই হিসাবে চকলেট খাইয়ে দিবো সবাইকে!
সবাই একটু হলেও হাসলো নেহার কথায়।
কেবিনের বাহিরে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে নিখিল,হামিদা বেগম ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন
নিখিল চোখ তুলে স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
,,কিছু বলবে মা?
নিখিলের চোখ অসম্ভব লাল।দাঁড়ি গুলো বেড়েছে অনেকটা, চুল গুলো কুঁকড়ানো কপালে ভাজ পড়েছে দুটো,ফর্সা ত্বকে মলিনতার ছাপ স্পষ্ট!

,,নেহার সাথে দেখা করে আয় যা!

নিখিল জবাব দিলো না,উল্টো সেখান থেকে বেরিয়ে চলে গেলো,মিহির পিছু নিলো তার ছেলেটা তিন দিন ধরে তার সাথেও ঠিক মতো কথা বলেনি।

নেহার অশান্ত চোখ বুঝে নিলো,সে জানে মানুষটি আসবে না!তার জন্য নিজের মূল্যবান সময় কেনো নষ্ট করবে নিখিল?নেহার কোনো অস্তিত্বই নেই নিখিলের জীবনে!আশা টাও ছেড়ে দিয়েছে নেহা,যে যেমন থাকতে চায় তাকে তেমনই থাকতে দেওয়া উচিত,
জোরজ’বরদস্তি কোনো দিনই ভালো কিছু বয়ে আনে না।
,,,
বিকালে নেহাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।তাহমিদা বেগম ফের মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদলেন কেউ থামাতে পারেনি তাকে।
পরীক্ষা মাথার উপর তার মধ্যে নেহা অসুস্থ, যদিও নেহা বলেছে তার কিছু হয়নি সে সুস্থ আছে!তাহমিদা বেগম বলেছে দরকার পরলে পরীক্ষা পরের বছর দিবে।নেহা এবার বিরক্ত সামান্য জিনিস নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে তার মা।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই বসেছে,নেহাকে শত মানা করেও লাভ হয় নি লাফাতে লাফাতে চলে এসেছে নিচে।নেহা টেবিলে নিখিল কে না দেখে মন খারাপ করলো,মনে হচ্ছে কতো বছর দেখতে পায়নি মানুষটিকে।কিন্তু মানুষটি তো তার খবর একবারও নিলো না, নিখিল মেহমেত চৌধুরীর একজন সামান্য মেয়ের জন্য সময় কেনই বা হবে!
——–
নেহা, বৃষ্টির সাথে পড়তে বসেছে,নেহা কথা বলে না বেশি,চুপচাপ থাকে।বাড়ির সবার মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে,শুধু অনিয়ম দুজন মানুষ নেহা, নিখিল,নেহার প্রাণবন্ত সেই রূপ আর নেই,সবাই ভেবেছে পরীক্ষা তাই হয়তো আর ওইদিন যা হলো,তার পর থেকেই মেয়েটা চুপচাপ থাকে।আগের কথা মনে হলে নেহা যদি অসুস্থ হয়ে যায়,সেই ভয়ে কেউ কিছু বলে না,সেতারা বেগম ঘর বন্দী করেছে নিজেকে,সবার সামনে আসলেও নিজেকে ছোট মনে হয় তার।নেহা,তাহমিদা,নিখিল তার সাথে একদমই কথা বলে না।নেহা একবারের জন্য ও চোখ তুলে তাকায়নি তার দিকে।
,,,,,,,,,
নেহা ঘুমের ঘোরে প্রায় সময়ও নিখিল কে দেখতে পায়,নিখিল কেনো প্রতিদিন নিয়ম করে স্বপ্নে আসে কিন্তু সামনে আসে না?নেহা নিজের মনের প্রশ্নের জবাব পায় না।

খাটের পাশে ঝুঁকে নেহার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে নিখিল,এই এতোদিন হলো এতো এতো সময় পার হলো নিখিল নেহার সামনে পড়েনি,আসেনি!ইচ্ছে করে দুরত্ব বাড়িয়েছে।নেহার মুখের এক পাশে আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো, এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো টুপ করে।

,,নীহারিকা!এই সম্বোধন টা আমি আর করতে চাই না জানো তুমি?
আমি চাই তুমি নক্ষত্র হয়ে ফুটো!
নীহারিকা মানে যে কুয়াশার ন্যায় আবছা ঝাপসা কিছু যে রং চকচকা তবুও তাকে ধরার সাধ্য নেই কারোর,সে থেকে যায় অধরা!
আমি তোমাকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে চাই,নিজের অস্তিত্বে মিশিয়ে নিতে চাই,সব টুকু ভালোবাসা দিতে চাই,আমি আমাকে তোমার নিকট খোলা বইয়ের মতো প্রকাশ করতে চাই।তুমি কি পড়তে ইচ্ছুক হবে নক্ষত্রের রাত!
নীহারিকা থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে একটা নক্ষত্র ভরা রাত উপহার কবে দিবে অবুঝ পাখি?
,,তুমি কি কোনো দিন আমাকে চাইবে না?এতোটা খারাপ মনে হয় নিখিল কে?একবার ও ডাকলে না কেনো?তুমি ডাকলে আমি সব কিছু ছেড়ে চলে আসবো সব!
“তুমি একবার ডাকোনা লক্ষীটি” ডাকবেনা বলো?
এতো অভিমান জমাতেই নেই তো জান,তুমি জানো না অভিমান বাড়ায় দুরত্বের সীমারেখা!”

নিখিল উঠে দাঁড়ায় চুপচাপ, তার নির্ঘুম রাতের সাক্ষী এই অন্ধকার রুমের দেয়াল,নেহার নিশ্বাস, নিস্তব্ধ চাঁদ জোছনা বিহীন কোনো কোনো রাত!নেহাকে রোজ রাতে নিয়ম করে দেখে,সারাদিনের দুরত্ব সবটুকু গুটিয়ে এসে বসে পড়ে মেয়েটার সামনে মেয়েটার অজান্তে খুব সন্তর্পণে।
নিখিল পা বাড়াতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়,তার এক হাত টেনে ধরেছে নেহা!নিখিল চমকে উঠলো নেহা ঘুমায়নি এখনো?জেগে আছে!

নিখিল তাকালো পিছনে নেহার চোখ বন্ধ, নিশ্বাস ভারি তার মানে ঘুমাচ্ছে,তাহলে হাত টানলো কি করে?নিখিল তাকালো নিজের হাতের দিকে বাঁধন খুবই আলগা,তার মানে ঘুমের ঘোরে ধরেছে।
নিখিল কান পেতে শুনলো নেহা বিরবির করে কিছু একটা বলছে,চোখ পিটপিট করছে,স্বপ্ন দেখছে হয়তো।
নিখিলের আগ্রহ জাগলো কথা শোনার,মেয়েটার কন্ঠ কতো দিন শুনে না!

“আপ,,নি প্রতিদিন স্বপ্নে কেনো আসেন নিখিল?আমার মনে হয় আপনি এত্তো কাছে আমি আপনার নিশ্বাস শুনতে পাই,কিন্তু আপনাকে ছুঁতে পারি না, এভাবে দৌড়ে ছুটে পালিয়ে যান কেনো?আমি কি রাক্ষ’সী আপনাকে খেয়ে ফেলবো নাকি?আর আসবেন না বলছি,আমি রাগ করছি আপনার উপর!
বিরবির করে কথা গুলো বললো কন্ঠ অস্পষ্ট তবুও নিখিলের মনে হলো সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সব।
নেহার ঘুমের মাঝেই নাকের ডগা তিরতির করে কাঁপলো, ঠোঁট কাঁপলো কিছুটা।

,,আ,,পনি আ,,সুন একবার,শুধু একবার, আমি আপনাকে একটু দেখতে চাই নিখিল ভাই!
কতোটা আকুল এই আবেদন, নিখিল আবার বসে পড়লো, নেহার দুগালে নিজের শক্ত হাত রাখলো খুব আদুরে ভঙ্গিতে।
কপালে কপাল ঠেকিয়ে দিলো নিখিল,নেহা নড়েচড়ে উঠলো এবার,নিখিল সরলো না,আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো নাকে, মেয়েটা কেঁপে উঠলো রীতিমতো।

হুট করে নিখিল নেহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,ঘুমের ঘোরে এভাবে নেশাধরা কন্ঠে ডাকিস না নেহা,,
আমি এক তৃষ্ণায় কাতর পথিক,তুই এক গভীর কুয়া।আমি ঝাপ দেওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারবো না।নিজের সর্বনা’শ এভাবে ডেকে আনতে নেই অবুঝ পাখি!

সাব্বির পানি বের করছে ফ্রিজ থেকে নিখিল কে স্পষ্ট দেখেছে নেহার রুম থেকে বের হতে।জেরিন ওই সময় সিঁড়ি বেয়ে নামছে।

সাব্বির জেরিন কে দেখে বললো–,,,রাতের বেলা তুই এখানে কি করস জেরিন বইন?
,,তোর আর তোর বউয়ের রোমান্স করাতে বা হাত ঢুকাতে এসেছি!

,,ভুল মানে বড় একটা মিস্টেক করলি তুই বড় আফা!
কথাটা তুই নিখিল ভাই কে বললেও পারতি।

ভাইরে কি দিয়া বানাইছে খোদা,আমাগো নেহা বইন কতো সুন্দর সুইট আর নিখিল ভাইরে দেখ,বউ রে রাইখা আলাদা থাকে!আহ্! কষ্ট এদিকে আমি সিঙ্গেল বউ থাকলে তো বউ রেখে রুম থেকে বের হতাম না আমি,নিজের বউরে দেখতে ভাই আমার রাতের বেলা চোরের মতো ঢুকে কি কপাল কি কপাল!

জেরিন সাব্বিরের হাত থেকে পানির বোতল ছিনিয়ে নিয়ে বললো
,,যা যা সাহস থাকলে ভাইয়াকে গিয়ে বল।যত্তসব আজাইরা কথা!
,,,,,,,,,,,
নেহা ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি সাবার করেছে,নিখিল ওর মুখ দুহাতে ধরার পরই ঘুম ছুটে গেছে,অবিশ্বাস্য ঘটনা বুঝতে পেরে চোখ খোলার সাহস হয়নি, নিখিল ভাই ওকে চুমু দিয়েছে,কথা ভাবতেই কেঁপে উঠলো সর্বাঙ্গ!কানের কাছে কি বললো এসব?নিখিল ভাই কে নেহা ডেকেছে,স্বজ্ঞানে তো এটা করেনি নিশ্চিত। নেহা বুদ্ধি শূন্যের মতো বসে রইলো সারাদিন যে মানুষ একবার সামনে আসে না সে রাতে এসে চুমু দিচ্ছে!

নেহার রাগ লাগলো নিখিলের উপর,মনে মনে একবার বললো বিরক্তিকর পুরুষ! বিশ দিনে একবারও সামনে আসলি না এখন এসে কি প্রমান করতে চাস?তোর চুমু তুই রাখ খচ্চর ব্যাটা,একবার পাই সামনে আমাকে এরিয়ে চলার সাধ একদম মিটিয়ে দিবো, কিছু বলি না দেখে কি পেয়ে বসেছে,চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি তোর।বিয়ে করে তামশা শুরু করেছে,সব কিছু তে আগে আগে নেহা কেনো বলবে তোর মুখ নেই এসে বলতে পারোস না নেহা তোকে দেখতে ইচ্ছে করছে আমার।তা পারবে কেনো?ভোঁতা আলু একটা,পরীক্ষা টা শেষ হোক শুধু নেহা হারে হারে তার অধিকার বুঝে নিবে!

***
মেঘবালিকা,আপনার পড়াশোনাকে আমার এখন হিং’সে হচ্ছে!
আমাকে পাঁচ মিনিট ও সময় দিচ্ছেন না আপনি,কেনো এতো অবিচার এই প্রেমিক পুরুষটার উপর?
আপনি দিন দিন পাষা’ণ রমনীতে পরিনত হচ্ছেন কেনো?
,,মিহির তুমি থামবে!

,,না,,পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি তোমাকে ছাড়বো না একদম বলে দিলাম,জোর করে হলেও তুলে নিয়ে আসবো,কবে আসবে বৃষ্টি আমি কিন্তু বড্ড অধৈর্য!

,,কোনো দিন আসবো না!

,,মে’রে ফেলবো আমি তোমাকে?আসবো না বললেই হবে নাকি,এখন আসো এখন মানে এখন!

,,ওফ্!মিহির তুমি কি বাচ্চা?

,,হ্যাঁ বাচ্চা।এখন বারান্দায় আসো আমি দেখবো তোমাকে কতোদিন ধরে আমার চোখ গুলো অভুক্ত তুমি জানো?

,,পারবো না!

,,প্লিজ না জান।কেঁদে ফেলবো এবার আমি!আমি ধ’ম আটকে মরে যাই এটা চাও তুমি?

বৃষ্টি ততক্ষণে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে মিহির দাড়িয়ে আছে ফোন হাতে নিয়ে জোছনার আলোতে আলোকিত চারপাশ,মিহির কে দেখে হাসলো বৃষ্টি।
,,পাগ’ল!

তোমরা দুই বান্ধবী মিলে আমাদের দুই বন্ধুকে ওটাই তো বানাতে চাচ্ছো,মানে বদ্ধ উ’ন্মাদ!

,,প্রেমিকার জন্য হলেই না হয় লোকচক্ষু তে তুমি বদ্ধ উ’ন্মাদ!
“প্রেমিক তুমি ঝড়ো হাওয়ার ন্যায় উন্মা”দ হও।আমি শান্তির পরশ হয়ে নামবো তোমার বুকে”!
——-
পরীক্ষার দিনটা অবশেষে আসলোই,বৃষ্টি, নেহাকে সবাই মিলে দোয়া করেছে।বৃষ্টি গিয়ে সেতারা বেগমের থেকে দোয়া নিলো,সবাই জানে নেহা যাবে না,মেয়েটা এই কদিনে একবারও সেতারা বেগমের সাথে কথা বলেনি।নিখিল নেমেছে সিঁড়ি বেয়ে,সেদিনের পর এই প্রথম নেহার সামনে এসেছে স্বেচ্ছায়!
নেহা একবারও তাকালো না,বৃষ্টি গিয়ে ভাইয়ের থেকে দোয়া নিলো,বাড়ির সবাই আচ করতে পেরেছে নেহা নিখিলের নিরব যুদ্ধ!

সেতারা বেগম পা বাড়ালেন রুমে যাওয়ার জন্য, পেছন থেকে ডেকে উঠলো নেহা–,আমাকে দোয়া করবে না দাদী?চলে যাচ্ছো কেনো?

বাড়ির সবাই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, নেহা নিজ থেকে গিয়েই পা ছুঁয়ে ফেললো,এ মেয়েকে দিয়ে এ কাজটা কখনো করানো যায়নি,আজ নিজ থেকে পা ছুঁয়েছে!
সেতারা বেগমের চোখ ছলছল করে উঠলো কেঁদে দিলেন বৃদ্ধা।নেহা হাসলো শুধু,সেতারা বেগম কে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো
,,কাঁদছো কেনো তুমি,তুমি তো দেখছি বেশ দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো বুড়ি!পরীক্ষার আগে কেঁদে কেটে সাগর বানিয়ে দিয়ে আমার পরীক্ষার খাতা যাতে ভেসে যায় সে তাল করছো?

সেতারা নিজে নেহাকে জড়িয়ে ধরে বললেন–,আমারে মাফ কইরা দেইছ বইন আমি ভুল করছি!সবাইরে কতো কষ্ট দিছি আমি,আমি আসলেই ভালো দাদী, ভালো শাশুড়ী হতে পারি নাই।তোদের সবাই কে কতো কথা শোনাই আমি!

সেতারা বেগম ভুল হলেও আগে ক্ষমা চাইতে পারতেন না,আজ একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইলো?
নেহা সুন্দর করে হেসে বললো–,বোনের থেকে ক্ষমা চাইতে হয় না বুঝলে,এতো কিছু মনে রাখতে নেই।এখন চটপট দোয়া টা করো আমরা যাই!

সেতারা বেগম দোয়া করলেন মন থেকে,এক মাসে নিজেকে আলাদা রেখে কম কষ্ট পাননি তিনি।একাকিত্বের মতো বড় শাস্তি আর কি হতে পারে!
সবাইকে বিদায় দিয়ে বের হওয়ার আগে বৃষ্টি নেহাকে বললো
,,সত্যি দাদীর প্রতি তোর আর কোনো রাগ নেই?

,,প্রথমেও ছিলো না এখনো নেই।
আর জানিস না রাগ,দুঃখ, অভিমান,ভালোবাসা বেশিদিন নিজের কাছে পুষে রাখতে নেই!
“এগুলো সময়ের সাথে সাথেই হারিয়ে যায় অবহেলায় অযত্নে”!

নিখিল পুরোটা সময় তাকিয়ে ছিলো নেহার দিকে, কথাটা নিখিল কে উদ্দেশ্য করে কেনো বললো নেহা?কি বুঝাতে চাইলো মেয়েটা ভালোবাসা রাও হারিয়ে যায় অবহেলায়! তবে কি নেহা হারিয়ে যাবে নিখিলের জীবন থেকে?
চলবে?

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিখিলের রুমের দরজায় কান পেতেছে সাব্বির,বৃষ্টি, মিহির,জেরিন দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
সাব্বির কান খাঁড়া করে শোনার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু না ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না।এতো সময় ধরে কি কথা বলছে নিখিল?

সাব্বিরে অধৈর্য কন্ঠ–,,পুলিশ কে কল লাগা জেরিন বইন!নেহা কে নিশ্চিত খু*ন করে গু’ম করে দিয়েছে নিখিল ভাই।

জেরিন সহসা একটা মেরে দিয়েছে সাব্বিরের মাথায় ছেলেটা এতো আজগুবি কথা বলে না মাঝেমধ্যে।

মিহির দরজায় ধাক্কা দিতে থাকলো এবার,শা’লা একা একা প্রেম করছিস আমরা সবাই সিঙ্গেল ভুলে যাবি না একদম।আমরা যেহেতু পারছি না তোর ও কোনো রাইট নাই বউ নিয়ে দরজা বন্ধ করে থাকার বের হ বলছি!

মিহিরের দরজা ধাক্কানোর মাঝেই দরজা খুলে গেলো,নিখিল দরজা খুলতেই নেহা নিখিলের হাতের নিচ দিয়ে বের হয়ে এক দৌড় লাগিয়েছে।

সাব্বির জেরিন বৃষ্টি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো,মিহির দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো সাথে গেলো নিখিল।

সাব্বির,বৃষ্টি, জেরিন ছুটলো নেহার কাছে, ভাইয়ের থেকে জানার মতো দুঃসাহস এখনো একটারও জন্মায়নি।
একদম হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নেহার রুমে তিন জন।জেরিন দুহাত বুকে গুঁজে নেহাকে পুরোপুরি স্ক্যান করছে।বৃষ্টি পাশে গিয়ে বসলো,সাব্বির আয়েশি ভঙ্গিতে বসলো চেয়ারে।

বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো—,,কি করছিলি ভাইয়ার রুমে?ভাইয়া তোকে নিয়ে গিয়ে মাই’র টাইর দেয়নি তো আবার!

নেহা সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো
,,মার’বে কেনো?এমনি কথা বলতে ডেকেছিলো!

জেরিন নেহার মুখ উঁচিয়ে নিজের দিক করে বললো
,,এই আমি তোর বড় না?মিথ্যা বইলা যে ধরাত পড়বি জেনেও বলিস কেন?

নেহা এবার বিরক্ত হয়ে বললো—,,রো’মান্স করছিলাম!এবার শেষ হয়েছে তোমাদের প্রশ্ন করা?
সাব্বির, জেরিন চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সাব্বির অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো
,,নিখিল ভাই আর রোমান্স প্লিজ নেহা বইন সত্যি কথা টা বল কয়টা চ’ড় খেয়েছিস!আমি তোর চ’ড় খাওয়ার লিস্ট বানাচ্ছি গিনিস বুকে নাম লিখাবো বলে এই এখনই রোমান্স টোমান্স করলে কেমনে হবে? আমার চ’ড়ের রেকর্ড করা হবে না তাইলে!

নেহা কপাল চাপড়ালো মিথ্যা টাও বিশ্বাস করলো না এখন সত্যি টাও না কি মসিবত!
জেরিন সাব্বিরের সাথে তাল মিলিয়ে বললো

,,হ্যাঁ হ্যাঁ আমার ভাই যা নিরামিষ ওসব এর দ্বারা হবে না।তুই ঝেড়ে কাশ তো বাপু সত্যি কাহিনি ক!

বৃষ্টি চুপচাপ নেহাকে পর্যবেক্ষন করছিলো,কিছুক্ষণ পর মিটমিটিয়ে হাসা শুরু করেছে,তা দেখে জেরিন,সাব্বির দুজন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো।

সাব্বির বললো–,, এই তোর আবার কি হলো রে বৃষ্টি?

,,নেহা সত্যি কথাই বলেছে!

,,তুই কিভাবে বুঝলি?

,,চিহ্ন সাথে করে নিয়ে এসেছে তো!
জেরিন হঠাৎ করে তাকালো নেহার গলার দিকে ফর্সা ত্বকে লাল দাগটা স্পষ্ট, নেহার ওড়নাটা জড়ানো হলেও গলার উপরের অংশের দিকটা ঢাকতে পারেনি!

জেরিন তো চিৎকার করে বললো—,,এই সাব্বির আমারে চিমটি কাট জলদি ইয়া মাবুদ কতো কিছু যে আরো দেখতে হবে!

সাব্বির বললো —-,, নেহা বইন তুই এটা কোনো কাজ করলি তোর এক মাত্র বড় ভাই এখনো সিঙ্গেল। আর তুই মানা যায় না এসব! আহ্ কি কষ্ট পুরাই কষ্টের কাঁথা বালিশ!

কিন্তু তুই আমাদের কে আসবি বলে গিয়ে প্রেম করা শুরু করে দিলি, প্ল্যানটা অর্ধেক রাস্তায় পড়ে আছে,বড় আব্বুর কাছে যেতে হবে, মিহির ভাইয়া নিখিল ভাইয়া কে আটকে রাখবে এ সুযোগে আমাদের কাজটা আমাদের করে ফেলতে হবে!
নেহাকে টেনে নিয়ে গেলো ওরা।শাহআলম চৌধুরীর রুমের বাহিরে পায়চারি করছে কিন্তু ভিতরে ঢুকছে না কেউ।শাহআলম চৌধুরী নরম মানুষ তার সাথে সবারই ভাব আছে কিন্তু আজকের টপিকটাই কেমন কেমন টাইপের তার উপর উনার নিজের ছেলের বিপক্ষে তাকে মানাতে এসেছে।
বৃষ্টি নেহাকে ঠেলে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়,শাহআলম চৌধুরী চমকায় হঠাৎ
নেহা গড়িমসি করে বলে—,, বড় আব্বু আসসালামু আলাইকুম!
সাব্বির বাহির থেকে মিন মিন করে বললো–,,ওরে ভদ্রলোক,সালাম দিচ্ছে দেখো!শ্বশুর পটানোর নিনজা টেকনিক কেউ এর থেকে শিখ।

জেরিন সাব্বিরের মুখ চেপে ধরেছে।বৃষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,কি শুরু করলে তোমরা, মা বা ছোট মা কেউ আসলে এদিকে সব একদম ঘেটে ঘ হয়ে যাবে সাবধান!

শাহআলম চৌধুরী দেখলেন নেহা বার বার হাত কচলাচ্ছে। কিনি অভয় নিয়ে বললেন–,,কিছু বলবি তুই মা?
নেহা অধৈর্য কন্ঠে বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ বড় আব্বু কিন্তু আগে তুমি কথা দাও আমাদের কথা শুনে রাগ করবে না!

,,আমাদের মানে সব গুলা বাদর আছে নাকি সাথে?

দাঁত কেলিয়ে ভেতরে ঢুকলো তিনজন।সাব্বির পুরো কাহিনি বুঝিয়ে বললো শাহআলম চৌধুরী কে,শাহআলম চৌধুরী এসব ছেলেমানুষী তে যোগ দিতে চাইলো না কিন্তু তেঁদড় ছেলেটাকে একটা শিক্ষা দিতে এসব বাচ্চামিতে সায় দিবে ভাবলো!
শাহআলম চৌধুরীর গম্ভীর কন্ঠ শুনে চারজনই চিন্তায় পড়লো যদি রাজি না হয়!

শাহআলম চৌধুরী হেসে বললেন–,, রাজি আমি!কাল থেকেই মিশন শুরু তাহলে এই বলে হাত বাড়ালেন তিনি।
চারজন খুশিতে গদগদ হয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো,শেষে হাত মিলিয়ে নিলো।যেভাবেই হোক নিখিলের মুখ থেকে বের করতে হবে সে নেহাকে ভালোবাসে!প্রোপোজ না করা পর্যন্ত নেহা নিখিল কে পাত্তা দিবে না,কঠোর হতে হবে! এটাই সবার নির্দেশ।
————-
সকাল বেলা তে বাহিরে হাঁটতে যান শাহআলম চৌধুরী, আজও ব্যতিক্রম হয়নি,তবে আজ তিনি ফিরেছেন বেশ দেরি করে।
টেবিলে বসে একটু একটু করে খাচ্ছে নেহা, বৃষ্টি, রৌফ,জেরিন এসেছে সবে সেও প্লেট উল্টে পরোটা তুলে নিলো।সাব্বির এসে ছিনিয়ে নিলো তার প্লেট খেতে খেতে বললো–,,তোর হাতের ছোঁয়া লেগে জেরিন বইন কি বলবো পরোটার টেস্ট ছয়গুন বৃদ্ধি পেয়েছে!
আহ্!তোর জামাই তো তোকে মাথায় তুলে আছাড় দিবে খুশিতে।

কথা শুনে হু হা করে হাসি দিলো বাকিরা।নিখিল বসে আছে সোফায়।অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নেমেছে সে।শহিদুল চৌধুরী, মাহফুজ চৌধুরী আসলেই সে টেবিলে আসবে।সেতারা বেগমের খাবার রুমে দিতে গেলেন সাহারা বেগম।সবগুলাকে হাসতে দেখে কড়া আদেশ ছুঁড়ে গেলেন

,,এই খাওয়ার সময় এতো কথা কিসের তোদের, গলায় খাবার আটকে যাবে। কথা কম বল খাবার শেষ কর সবগুলাতে!

শাহআলম চৌধুরী বাসায় ঢুকলেন থমথমে মুখ নিয়ে।সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো,তাদের প্ল্যান শুরু করার কথা আজকে খাবার টেবিল থেকেই।

শাহআলম চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো–,,রাস্তাঘাটে আজকাল মা’স্তানিও শুরু করে দিয়েছো দেখছি!

তখন ড্রয়িং রুমে আসলো শহিদুল চৌধুরী আর মাহফুজ চৌধুরী বড় ভাইয়ের কথা শুনে এগোলেন সেদিকে।
নিখিলের মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই,সে এক মনে এখনো খবরের কাগজের দিকে তাকিয়ে।বিরক্তির সীমা এবার বাড়লো শাহআলম চৌধুরীর ছেলে তাকে পাত্তা দিচ্ছে না একদম!

শাহআলম চেঁচিয়ে বললেন –,,কি হলো কথা শুনতে পাচ্ছো না তুমি?

নিখিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো এবার।শহিদুল ভাইকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে,সকাল সকাল এতো রেগেছেন কেনো তিনি?শাহআলমের রাগী কন্ঠ

,, তোর আদরের ভাই পো মেয়রের ছেলের হাত ভেঙ্গে তাকে হসপিটালে এডমিট করে দিয়ে এসেছে নিজ দায়িত্বে!কমিশনার সাহেবের কাছে কথা তুলেছেন মেয়র সাহেব,তিনি আসবেন বাড়িতে,এবার বলে দিচ্ছি একে আমি বাঁচাতে পারবো না,যা খুশি হোক নিয়ে যাক ধরে পুলিশ!

নিখিল উঠে দাড়িয়ে বললো–,,আসতে দেও কমিশনার কে তিনি না আসলে আমিই যেতাম!

খাবার টেবিলে সব ভাই বোনরা হা করে কথা শুনছে,বৃষ্টি ফিসফিস করে বললো–,, ভাইয়া তো দেখছি একদম ফাটিয়ে দিয়েছে রে বন্ধু!
নেহা গুঁতো মারলো বৃষ্টি কে,নিখিলের সরু দৃষ্টি নেহার উপর নেহা দাঁত বের করে কোনো রকম পানির গ্লাস হাতে তুলে নিলো।এই ছেলের দিক এখন ভুলেও তাকানো যাবে না।আওয়াজ শুনে ছুটে এসেছে গৃহিণীরা।

মাহফুজ চৌধুরী কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,, এমনটা কেনো করেছিস নিখিল?

,,আমার বউয়ের হাত ধরেছিলো রা’স্কেল টা!ওকে যে জানে মে’রে দেইনি এটা ওর ভাগ্য।

নিখিলের কথা শেষ হওয়ার আগেই মুখে পানি নিয়ে কেশে উঠলো নেহা,বেচারির চোখ উল্টে আসার উপক্রম।হামিদা বেগম এগিয়ে এসে পিঠে হাত বুলালেন তার ব্যস্ত কন্ঠ
,,সাবধানে খাবি তো!

নেহা একবার তাকালো নিখিলের দিকে,ওর কাশির চোটে চোখে দিয়ে পানি চলে এসেছে,নাক মুখ লাল হয়ে গেছে।নিখিল নেহার দিক তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো

নেহা চোখ নামিয়ে ফেললো।আজকের মতো আর ওরকম পরিবেশ নেই নিজেদের প্ল্যান স্থগিত করেছে ওরা।নিখিল হনহন করে চলে গেলো না খেয়ে।হামিদা বেগম ডাকলেন কিন্তু শুনলো না।

বাকিরা টেবিলে বসলো এসে,ছোটরা কোনো রকম খেয়ে ভাগলো।
জেরিন,সাব্বির ভার্সিটিতে চলে গেলো।বড় আব্বুর রাগ শান্ত হলে কাল সকালে আবার নিজেদের কাজ করবে তারা!
**
বেশ অলস সময় কাটছে নেহা আর বৃষ্টির।দুজন মিলে কথা বলছে সাদের এক পাশে দাড়িয়ে ভেবেছে একটু বের হবে বাহিরে হাঁটার জন্য।

আজ আবহাওয়া ভীষণ ভালো,ফুরফুরে বাতাস ছড়িয়েছে, ছাদের একপাশে ফুলের গাছ লাগানো, গোলাপ,গন্ধরাজের গ্রাণ মিশে এক মিষ্টি সুবাস ছড়িয়েছে।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানলো নেহা।ফুরফুরে মেজাজ তার,তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে নিখিল আজ সারাদিন খেয়েছে কিনা,সকাল সকাল তো ভাব নিয়ে বেরিয়েছে এই ছেলে।
বিকেল তিনটে বাজতে চললো,বৃষ্টির ফোন বেজে উঠলো শব্দ করে।মিহির নামটা জ্বলজ্বল করে উঠলো স্ক্রিনে।বৃষ্টির মুখ জুড়ে হাসি যা মুগ্ধ নয়নে দেখলো নেহা।

দোয়া করে ফেললো, ফটাফট যাতে সারাজীবন এমন ভাবেই হাসিখুশি থাকে মেয়েটা,মিহির ভাই সত্যি অমায়িক মানুষ!

হঠাৎ নেহার মন খারাপ হলো,নিখিল ভাই কেনো তাকে একবার ফোন করে না,কাজের ফাঁকে জানতে চায় না সে কি করছে?সারাদিন কি মানুষটার তার কথা একবারও মনে পড়ে না?এতো কাজ কাজ করা লাগবে কেনো তার?বিষন্ন মনে তাকালো লম্বা ডাল পালা ছড়িয়ে দেওয়া গাছটার দিকে,ফোন হাতে তুলে নিলো কিন্তু ফোন দেওয়া হয়ে উঠে না আর কোথায় যেনো একটা অদৃশ্য দেয়াল রয়ে গেছে তাদের মাঝে!

বৃষ্টি এসে হঠাৎ নেহার হাতে ফোন গুঁজে দিয়ে বললো
,,কথা বল!

নেহা ভ্রু কুঁচকে বললো–,,মিহির ভাইয়ার সাথে আমি কি কথা বলবো?
বৃষ্টি ফোন ধরিয়ে দিয়ে ততোক্ষনে চলে গেছে,নেহা বোকার মতো তাকিয়ে থেকে ফোন কানে ধরলো
নেহা কিছু বলার আগেই ওপাশ গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠটি ভেসে আসলো

,,ফোন টা কানে দিতে এতো সময় লাগে তোর?

নেহা চমকে উঠলো মিহির ভাইয়ার বদলে নিখিল ভাই ফোন করেছে তাকে?

,,কথা বলবি না নাকি?

,,কি কথা বলবো!
নেহার কথা শুনে হাসলো নিখিল সত্যি মেয়েটা আস্ত বোকা!শুধু মুখেই ফটফট করে।
নিখিল চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো

,,যা খুশি!

,,আপনি খেয়েছেন তো নিখিল ভাই?

,,তা জেনে তুই কি করবি?আমার খাওয়া না খাওয়ায় তোর কি আসে যায়?
নেহার রাগ লাগলো ফোন দিয়ে এগুলো কেমন কথা,সব কথার উত্তর দিতে গিয়ে প্যাচানো লাগবে কেনো এতো।

,,কিছু না।ফোন দিয়েছেন কেনো আপনি আমাকে?আমার প্রতি হঠাৎ এতো দরদ উতলে উঠলো কেনো?
ফোন দিয়েছেন তো মনে হয় ভুল করে, মিহির ভাই আপনাকে জোর করে মোবাইল ধরিয়ে দিয়েছে না হয় তো জীবনেও ফোন করতেন না আমাকে।

নেহা ফট করে কল কেটে দিয়ে হনহন করে নিচে চলে গেলো।বিরবির করে বললো–,,অসহ্য লোক!

নেহা বৃষ্টির হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হ শাড়ি পড়বি বুঝলি আজকে মন ইচ্ছা মতো ঘুরবো রিকশায় করে,তোর ভাই দিয়েছে মেজাজ টা বিগড়ে,আর কোনো দিন যদি এর হয়ে ফোন আমাকে দিতে আসিস তো বেশি ভালো হবে না বলে দিলাম!

বেচারি বৃষ্টি হা হয়ে কথা গুলো শুনে নিলো,কি থেকে কি হলো!
——–
মিহির নিখিল কে দু চারটা ঘু’ষি দিয়েছে ইতিমধ্যে এই শা’লা কে দিয়ে জীবনে প্রেম হবে না!একটুও রসকষ নেই,কি বললো মেয়েটা কে তুই জেনে কি করবি তা না সুন্দর করে বলতো খেয়েছি তুমি খেয়েছো।কপাল করে এমন বন্ধু জুটিয়েছে!নেহার জন্য দশ বস্তা আফসোস ছেড়ে রুম থেকে বেরোলো সে।

নিখিল ভাবলেশহীন ভাবে কাজে মন দিলো!

বৃষ্টি রেডি হয়ে এসে দাড়ালো নেহার রুমের সামনে,নেহা বড় হওয়ার পর শাড়ি পড়েছে কিনা সন্দেহ তবে মেয়েটার ভীষণ পছন্দ, শাড়ি কিনে রেখেছে না হয় বড়রা কেউ না কেউ গিফট করেছে,আলমারির বড় অংশ জুড়ে শুধু শাড়ি।বিয়ের দিন শাড়ি পড়িয়ে ছিলো ওকে ধরে বেঁধে ছোট মা।নিজেও পারে টুকটাক।

বৃষ্টি দরজা ঠেলে ঢুকলো ভিতরে,নেহা শাড়ির কুঁচি ধরে রেখেছে ঠিক করতে ব্যস্ত।
বৃষ্টি নিচে ঝুঁকে বসে পড়লো কুঁচিতে হাত রেখে বললো–,,দে আমি করে দিচ্ছি।
শাড়ি পড়তে গিয়ে মেয়েটা পুরো ঘেমে গেছে,নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।নেহা সাজ বলতে শুধু হালকা রঙের একটা লিপস্টিক দিয়েছে আর একটু আইলেনার।কাজল পড়তে গিয়ে কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দেয় তাই আর পড়ার ইচ্ছা জাগেনি বাদ দিয়েছে পুরোপুরি। চুল গুলো খোঁপা করে নিলো ভালো করে,গোলাপী পাড়ের আকাশি রঙা শাড়ি।

বৃষ্টি উঠে দাড়িয়েই প্রথমের মাশাআল্লাহ বলে নিয়েছে,পরে শাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো

,,কিরে এই শাড়ি কবে পেলি আমাকে দেখালি না তো, ভাইয়া দিয়েছে নাকি?

নেহা যেনো আকাশ থেকে পড়লো,বিদ্রুপের সহিত বললো–,,ছি!ছি! বৃষ্টি নিজের ভাইকে তুই চিনতে কিভাবে ভুল করলি বইন?এই ব্যাটা দিবো শাড়ি, আর মানুষ পেলি না।যদি কোনো দিন দেয় তো মনে করবি ওইদিন পৃথিবীর কোনো এক দিক দিয়া ধসে পড়ে গেছে।

বড় আব্বু এবার জন্মদিনে গিফট দিয়েছিলো আমায় পড়াশোনার চক্করে তো গিফটই খোলা হয়নি।তোর ভাইয়ের এতো টাকা দিয়ে কি করে বলতো, কিপটা ব্যাটা সবাই জন্মদিনে গিফট দিলো আর এ কোনো দিন আমাকে একটা লজেন্স ও দিলো না।হতাশ আমি হতাশ এই জামাই নিয়ে ভবিষ্যতে আমার কি হবে?মিহির ভাই তোকে প্রেমিক হয়েও কতো কিছু গিফট দিলো আর এরে দেখ আগে তো দূর বিয়ের পর ও দিলো না।আবার নাকি ভালোবাসে,তোর ভালোবাসার খেঁতায় আগু’ন বদ লোক!

বৃষ্টি শুনলো,কি বলবে এখন তার ভাইয়া টা আসলেই কেমন জানি সবাইকে এতো কিছু দেয় কিন্তু নেহার বেলায় ঘন্টা বোন হিসাবেও তো দিতে পারতো কিছু।তপ্ত শ্বাস ছাড়লো নেহার হাত টেনে রুম থেকে বের হলো

দুজন মিলে বিদায় নিয়ে রিকশায় উঠলো।ফুরফুরে বাতাসে মন ভালো হয়ে গেলো ওদের সারা বিকাল ঘুরবে আজ।

পাশাপাশি হাঁটছে দুজন,রাস্তার পাশে দাড়িয়ে চা নিলো দুকাপ,ফুটপাতের উপর অনায়াসে বসে পড়লো নেহা রাস্তার উপর পা গলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে চা কে অনুভব করলো যেনো,বৃষ্টি একপাশে দাড়িয়ে খাচ্ছে,পরিবেশ টা আজ সত্যি মুগ্ধকর।রাস্তায় গাড়ি চলছে কিছুক্ষণ পর পর ব্যস্ত শহরে আজ কোলাহল কিছুটা কম।বৃষ্টি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো বাহারি ফুলের দোকান টায়,দুইটা বেলি গাজরা কিনে নিলো,সাথে কয়েকটা গোলাপ।সাদা গোলাপির মিশ্রনে ফুটন্ত গোলাপ গুলো জলমল করছে।

নেহা খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ব্যস্ত,টানাটানা আঁখিযুগলে মুগ্ধতা, মন আজ অতিশয় ভালো এতো এতো বিষাদ মানুষের জীবনে তবুও এই ছোট ছোট মুহুর্ত গুলো যেনো থমকে দেয় সব কিছু।কখনো কখনো সব কিছুর উর্ধে গিয়ে নিজেকে সময় দেওয়া উচিত,, নিজেকে নিয়ে আমরা ভাবতেই ভুলে যাই।নিজেকে ভালোবাসা মানে স্বার্থপরতা নয়,সবাইকে ভালো রাখতে নিজেকে ভালো রাখাটা জরুরি!

নেহার ঘোর কাটলো বৃষ্টি কন্ঠে–,,আমার ভাই দেয় নি তাই আমি দিলাম।

নেহা তাকালো বৃষ্টি বাড়িয়ে দেওয়ার হাতের দিকে,গোলাপ গুলো দেখে হাসলো।হাত বাড়িয়ে নিয়ে নাকের কাছে ধরলো,দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো।গোলাপের সবটুকু সুগ্রাণ যেনো শুষে নিলো নিজের ভিতর।

বৃষ্টি নেহার খোঁপায় গাজরা গুঁজে দিতে দিতে বললো–,,
তিন মাস বিবাহিত জীবনের শুভেচ্ছা ভাবী!

নেহা জোরে হেসে ফেললো এবার।
,,তিন মাস ধরে সিঙ্গেল লাইফ বিদায় নিয়েছে আমার জীবন থেকে কিন্তু মনে হচ্ছে আমি আজীবন সিঙ্গেলই থাকবো।তোর ভাই যা মানুষ এরকম জামাই থাকলে সব মেয়েই সারাজীবন বিবাহিত সিঙ্গেল থাকবে।

সন্ধ্যা গড়াতেই দুজন বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো জেরিন, আর সাব্বির ভাই জানতে পারলে ওদের দুটোকে পঁচা নালায় চুবিয়ে দিবে,ওদের কে রেখে একা একা ঘুরতে আসায়।

বাড়ির কাছে এসে ফুচকা খাওয়ার বাহানা ধরলো বৃষ্টি, নেহা ও নামলো ওর সাথে এই গলির পরের গলিতেই ওদের বাসা আজান পড়েছে ইতিমধ্যে।
নেহা ঝাল খেতে পারে না তবুও বৃষ্টি কে সঙ্গ দিতে এক প্লেট নিলো,দোকানীকে কম ঝাল দিতে বললেও নেহার মনে হলো এখানেই কৌটার সব ঝাল দিয়ে দিয়েছে!
বৃষ্টির টকের দিক তাকিয়ে নাক কুঁচকালো নেহা টকটকে লাল হয়ে আছে মরিচের গুড়াতে।

নেহা এক পাশে দাড়িয়ে খেতে লাগলো,অনেক কষ্টে চারটা ফুচকা খেয়েছে।বাকিটা প্লেট সহ রেখে মুখ হা করে বাতাস করছে,না পাচ্ছে পানি না আছে মিষ্টি জাতীয় কিছু কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে নেহার,বৃষ্টি নিজে খাওয়া শেষ করে আসলো নেহার কাছে।
নেহা বুঝালো সে ঠিক আছে।

কিন্তু ফর্সা মুখশ্রী ইতিমধ্যে টমেটো হয়ে গেছে।নেহার ফোন বেজে উঠলো হঠাৎ নাম্বার দেখার সময় নেই যেনো তার কাছে বাসায় গিয়ে পানি খেতে পারলে বাঁচে এখন!

নেহা ফোন কানে ধরলো,ওপাশ থেকে নিখিলের রাগী কন্ঠ ভেসে আসলো–,,কোথায় তুই?

নেহার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো–,,ঝা,,,ল!

নিখিল দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো–,,তুই কোথায় ইডি’য়েট!

নেহা ফোন বৃষ্টির দিকে বাড়িয়ে দিলো কথা বলার মতো পরিস্থিতি তার নেই।

বৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে খারুস নাম লেখা দেখে ভয়ে জমে গেলো
রাত হয়ে গেছে দুজন বাসায় যায়নি নিশ্চিত খবর পেয়ে গেছে।
বৃষ্টি কাঁপা কন্ঠে বললো–,,,ভাইয়া!

,,তোরা দুজন কোথায়, রাত হয়েছে খেয়াল নেই?ঘুরা বের করবো দুইটার আমি।নেহার কি হয়েছে কথা বলতে গিয়ে ঝাল বললো কেনো?
বৃষ্টি ঢোক গিললো একসাথে এতো প্রশ্ন?

,,বাসার কাছেই ভাইয়া একমিনিট লাগবে আর।নেহা ফুচকা খেয়ে ছিলো এখন ঝাল লেগেছে!

নিখিল নিরব ধমক দিলো যেনো বৃষ্টি কে,বৃষ্টি নেহার হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো।নেহার কাঁদো কাঁদো ফেইস বেচারি মোটেও কথা বলতে চায় না এখন।

নেহা তীব্র অনিহা নিয়ে কানে ফোন ধরলো।

,,আজকে বাসায় আসি আমি,তোকে এতো ফুচকা খাওয়াবো সারাজীবনের মতো সখ ঘুচে যাবে তোর। দেখবো কতো খেতে পারিস!
চলবে?