#প্রণয়ের_সুর২
#সূচনা_পর্ব
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
আপনার স্বামী নিখিল মেহমেত চৌধুরী দ্বিতীয় বিবাহ করছে মিসেস নেহা!
কথাটা শ্রব’ণ হওয়ার মুহূর্তে নেহার হাত থেকে পানির গ্লাস টা নিচে পড়ে ধ’প করে ভে’ঙ্গে গেলো।কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো–,,কি…কি বললেন আপনি?
ফোন কলের অপর পাশের ব্যক্তি ভনিতা ছাড়াই বললো–,,আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী নেহা,এমপি নিখিল মেহমেত চৌধুরী আজই তার মামাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে নিজের আংটিবদলের পর্ব সারবেন!
নেহা দৃঢ় কন্ঠে বললো–,,আমি আপনার কথা কেনো বিশ্বাস করবো?কে আপনি?
–,,আমি কে তা না জানলেও চলবে,আমার কথার সত্যতা কতটুকু তা জানতে নিজের মামা শ্বশুরের বাড়িতে চলে আসুন!
ফোন টা নিজস্ব শব্দে কে’টে গেলো,নেহা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে, নি…খিল!কি করে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করার কথা ভাবলো?তার কি একটা বারও মনে পড়েনি তার নেহার কথা?সে কি বেমালুম ভুলে গেছে সে একটা সময় নেহা নামক মেয়েটাকে ভালোবাসতো?ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো!নাকি তৃতীয় ব্যক্তির আগমনে সব সম্পর্কই ফিঁ”কে পড়ে যায়।চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো নেহা,যে মানুষ টা অন্যের কথায় তাকে ছেড়ে দিতে পারে তাকে অবিশ্বাস করতে পারে সে ব্যক্তিটা অন্য কারো হতেও পারে, এতোটা কষ্ট হচ্ছে কেনো নেহার?পাঁচ টা বছর ও কি কম নিজেকে শক্ত করার জন্য? অতিত নাকি স্মৃতি নাকি কোনো জ্বল”ন্ত লা’ভা যা, কখন নিভবে তা কেউ জানে না!
তাহমিদা বেগম মেয়ের ঘরে আসলেন,মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো–,,কি হয়েছে মা?
নেহা নিজেকে সামলাতে পারলো না,মায়ের থেকে কি করে লুকাবে সে?যে মানুষ টা তার জন্য পরিবার ছেড়ে দিয়েছে,মায়ের দায়িত্ব র’ক্ষা করতে গিয়ে স্বামী ত্যাগ করেছে নিজের সংসার সব কিছুর মায়া কমিয়ে নিজের সন্তানদের কথা ভেবেছে।সে মায়ের ঋ”ণ কি কখনো শো’ধ করা যাবে?নেহার কান্নায় পাশের রুম থেকে ছুটে আসলো রাহা বোনকে কান্না করতে দেখে মেয়েটার চোখেও জল আসলো।পাঁচ বছর আগে রাহার বয়স আর কতটুকু?পরিবারের মানুষ গুলো কি করে তার বোনের বিরুদ্ধে গেলো? নিজের বাবাও বললো মানিয়ে নেও?আজ রাহাও দুনিয়া চিনতে শিখে গেছে পুরুষ নামক মানুষ গুলোর প্রতি একরাশ ঘৃ’ণা জমেছে মনের কোনে।যে নিখিল ভাইকে প্রচুর পরীমান সম্মান করতো আজ তার জন্য সম্মান হয়তো তলানিতেও নেই,ওই একটা পুরুষের জন্য দুটি প্রাণ দুটি আত্না রোজ কেঁদেছে,তার বোনের চোখ থেকে ঝড়া প্রতিটি অশ্রুক”নার দাম ওই নিখিল কে দিতে হবে!
নেহা ঢুকরে কেঁদে বলে উঠলো–,,নিখিল আবার বিয়ে করছে মা!আমার কথাটা মেনে নিতে কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে বলতে পারো?যে মানুষ টা এতো সহজে আমাকে ভুলে গেছে, তাকে কেনো ভুলতে পারছি না আমি!
তাহমিদা বেগম ধম’ক দিয়ে উঠলো, শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো–,,এক চ*ড় লাগাবো নেহা।কাঁদলে আমাকে আর মা ডাকবি না!পাঁচ বছর ধরে তো কম কাঁদলি না, এবার কাঁদার পালা ওদের যারা তোকে কষ্ট দিয়েছে,আমার নেহা আজ অনেক শক্ত,আমি তৈরি করেছি আমার মেয়েকে নতুন রূপে কেউ চাইলেই ভে”ঙ্গে গুঁড়ি”য়ে দিতে পারবে না,আ”ঘাত করে বেঁচে যেতে পারবে না।বল মা পারবি না?মায়ের সম্মান ফিরিয়ে দিতে?নিজেকে সম্মানিত করতে!
নেহা চোখ মুছে নিলো,আমাকে তো পারতে হবেই মা।আমি যাবো মা নিশ্চয়ই যাবো, নিখিল মেহমেত চৌধুরীর যে এখন আমাকে খুব প্রয়োজন!নাম মাত্ররো সম্পর্কটার ইতি টানার সময় হয়েছে হয়তো।
তাহমিদা বেগম চুপ রইলেন মেয়ের মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন–,,বিজয়ী হয়ে ফিরো,তোমার পথ সহজ হোক, দোয়া করি সত্যের জয় হোক!
রাহা তে’জ ভরা কন্ঠে বললো–,,আমি ও বাড়ির কাউকে ক্ষ’মা করবো না কখনো না।
তাহমিদা বেগম বললো–,,ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে তো নাকি?বিদেশ থেকে ফিরে এসেছি আমরা সপ্তাহ খানেক হলো এখানেই তো থাকবো এখন থেকে ভালো দেখে একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে এখন।
রাহা কাচুমাচু হয়ে বললো–,,মা প্রাইভেটে ভর্তি হতে অনেক খরচ!
নেহা একটা মার’লো রাহার মাথায় কান চেপে ধরে বললো–,,এই যে মা আর আমি এতো কষ্ট করছি কার জন্য বল?এখন আল্লাহর রহমতে কম নেই আমাদের চল আমার সাথে আজই তোকে ভর্তি করিয়ে আমি যাবো আইরিন আপুর বিয়েতে!
–,,না গেলে হয় না?
–,,না হয় না।তোকে কিন্তু গুরুদায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি,আমার কলি’জার খেয়াল রাখবি, লোকে তো ঠিকই বলে মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি!
রাহা,নেহা তাহমিদা তিনজনই একত্রে হেসে উঠলো।
———
সেতারা বেগম বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে এক পাশে জেরিন,বৃষ্টি অন্য পাশে নিঝুম, নিশাত, রোহান বসে!
নিঝুম তাড়া দিয়ে বললো –,,উফ!দিদিয়া বলবে নাকি যাবো তোমাদের এই সিরিয়াস ভাব দেখে আমার কিন্তু মে’জাজ খারা’প হচ্ছে।
রোহান বলে উঠলো –,,তুমি কোন কাঁথা বালিশ ছিঁড়’তে যাবে শুনি বাপু?অফিসে গিয়ে তো শুধু মাছি তাড়াও!
জেরিন বলে উঠলো–,,রোহাইন্না তুই চুপ থাক।বৃষ্টির বাচ্চা তুই যে নেহাকে ফোন করেছিস যদি জানতে পারে না এসব কাজ আমাদের ওই মেয়ে যা বি”চ্ছু সব কটার মাথা ফাটা’বে।
শিস বাজাতে বাজাতে দরজা দিয়ে ঢুকলো সাব্বির এসেই বসলো জেরিনের পাশে।ঠে’স মে’রে বললো–,,এই যে বুড়ির নাতি নাতনিরা আমাকে রেখেই সলা’পরামর্শ সেরে ফেলেছো দেখছি!
জেরিন বিরক্তি নিয়ে বললো–,,তুই আবার কেন খে’তের মুলা।
সবচেয়ে বড় কথা তুই আমার বোনের বিয়েতে বিনা দাওয়াতে কেমনে আসলি?তুই না শ”ত্রু পক্ষ!
বৃষ্টি এবার বলে উঠলো –,,তোমরা থামবে?গুরুত্বপূর্ণ টপিকটায় কথাই হচ্ছে না।
সেতারা বেগম বললো–,,ঠিক বলেছিস বোন আমার।
নিশাত বললো–,আরে আমিও তো আছি নাকি এখানে?কিভাবে ওই শুঁটকি টাকে বিদায় করবে ভাবো!ভাইয়ার পাশে একদম মানা যাচ্ছে না নতুন কাকিয়া কি করে এমন করলো ভাবতে পারছি না।
নিশাতের মাথায় নিঝুম চা’টি মে’রে বললো–,,ছোট ছোটর মতো থাক,কাকিয়া কি হ্যাঁ?ছোট মা বল বেয়া’দব!
নিশাত কেঁদে উঠলো ফ্যাঁ’চ ফ্যাঁ’চ করে বললো –,,ভাবি আসুক এসব কিছুর শো’ধ তুলবো বলে রাখলাম!
নিঝুম তেতে বলে উঠলো—,,মাই’য়া মাইন’সের নাম নিছ না আমার সামনে।ভাইয়ার বিয়ে করা দেখেই পেট ভরে গেছে আমি আর বিয়ে করবো না গেলাম আমার কাজ আছে তোমরা থাকো তোমাদের অকাজ নিয়ে!
সাব্বির সহমত পোষণ করে বললো–,,আমিও বিয়া করুম না নিঝুম ভাই বে’ডি মানুষ সেই পেই’ন দেয়।এই যে একটা আছে তোমার বইন আমার চিরশ”ত্রু!
রোহান গালে হাত দিয়ে বললো–,,আমি ভাবছি রাহা ভুট”কি টা দেখতে এখন কেমন হবে!
নিশাত ভুল ধরার মতো করে বললো–,,ভুট”কি না তো ওটা গু’লু মু’লু হবে ভাইয়া!
সেতারা বেগম এবার ধম’ক দিয়ে উঠলো –,,তোদের মতো নাতি নাতনি পেয়ে আমি হতা’শ।কোনো কাজের না তোরা ডাকলাম বুদ্ধি দিতে তোরা নিজেদের ভিতর লেগেছিস কেনো?
সাব্বির বললো–,,আমি কিন্তু নেহা বইনের দলে।
রোহান ভাব নিয়ে বললো–,,নিখিল ভাই জানতে পারলে তোমাকে তার দল থেকে ঠু’য়া মে’রে বের করে দিবে!
নিঝুম বলে উঠলো–,,হোয়াট ইজ ঠু’য়া?
সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,চুপ হারাম'”জাদা তোরে আমি বিয়ে দিতাম না কইয়া রাখলাম যা ভাগ তুই আজ থেকে বাদ।তোর বাপ কি সবে ভর্তি করলো তোরে বিং’লিশ মিডিয়াম না কি যেনো কয়।
নিশাত বললো–,,দিদিয়া ইংলিশ মিডিয়াম।
–,,ওই একই হইলো,এখন দুই দিনের পোলা মাতৃ”ভাষা ভুইলা গেছে।আইজই মেজো বউমার কাছে নালি’শ করতাছি আমি!
নিঝুম ভয়া”র্ত কন্ঠে বলে উঠলো–,, দিদিয়া মাকে কেনো টানছো এর মধ্যে!
সাব্বির সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,যদি কেউ আমার নামে নিখিল ভাইয়ের কাছে চুগ”লি না করিস তো একটা বুদ্ধি দিতে পারি!
সেতারা বেগম বললো–,,বলে ফেল ভাই পরের বার তোর বা”পই ইলেকশনে জিতবো দোয়া দিয়া দিলাম।
জেরিন নাক ফুলিয়ে বললো–,,তোমার নাতি জানতে পারলে তোমাকে বাড়ি ছাড়া করবে,তুমি শ”ত্রু পক্ষ কে জেতাতে চাও!
সাব্বির জেরিন কর মাথায় মে’রে বললো–,,আরে আমার টা”কলা বা”প জিতলে শহর ভাই”ঙ্গা পইড়া যাইবো তুই চুপ থাক,আমি তো নিখিল ভাইয়ের দলে!
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,এ ভাই তোমরা কি থামবে বিয়ের অনুষ্ঠান রেখে এখানে বসে সব কাহিনি করছে ওই শিলা কে কেমনে তারাবা ভাবো।
সাব্বির বললো–,,নেহা বইন আসবে আমি সিউর!
নিঝুম বললো–,,আসার পর তো পুরো দুনিয়া উল্টাইয়া ফালাইবো নেহা যা উড়ন”চণ্ডী, তার উপর ভাইয়া আবার রাগী মুডে থাকে।তোমরা সামলাতে পারবে তো?আমি কিন্তু এসবে নাই ভাই।
রোহান বললো–,,ধু’রু মিয়া ভি”তু।
সাব্বির বললো–,, আগে আসুক পরে খেলা জমবে।রাখো হাতে হাত আন্টিও তো আমাদের দলে।
জেরিন বলে উঠলো–,,আমার মা কেও ব”শ করে নিয়েছিস?শা’লা মির জা’ফর!
বৃষ্টি চিন্তিত সুরে বললো–,,কিন্তু যতটুকু জানতাম নেহা তো দেশের বাহিরে আছে!
মিহির পেছন থেকে এসে বললো–,,নেহা দেশে এসেছে এক সপ্তাহ হয়েছে!
জেরিন বলে উঠলো–,,মিহির ভাইয়া নিখিল ভাইয়া জানে?
মিহির কিছু সময় চুপ করে থেকে বললো–,,না!
বৃষ্টি থমথমে মুখে বললো–,,লা’শ টা’শ ছেড়ে এখন আবার গোয়ে”ন্দা গিরিও করছে মানুষ!
মিহির গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,জেরিন তোর বোন কে বলে দে আমি লা’শ টা’শ নিয়ে থাকি না ফরে’নসিক ডক্টরদের অন্য কাজও আছে!
জেরিন কপাল চাপড়ে বললো–,,দিদিয়া সব দিকেই তো গন্ড”গোল তুমি একা কোনটা সামলাবে বলো দেখি!
সেতারা বেগম হেসে বললো–,,আগে গো”ড়া টা ঠিক হোক বাকি সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
এর মধ্যে মিলি বেগম এসে বললো–,,আম্মা আপনার নাতি কে দেখছি না যে, নিখিল কোথায়?আজকে তো ওর আর শিলার,,,!
সেতারা বেগম বিরক্ত নিয়ে বললো–,, তুমি এ বাড়ির বউ কেমনে হইছো ভুলে যাইয়ো না ছোট বউমা!আমার নাতি বিবাহিত একজন মানুষ কেনো আরো একটা বিয়ে করবে!
–,,কিন্তু মা শিলা, নিখিল ভালো বন্ধু,,,।
–,,চুপ করো কি রকম মেয়ে ছেলে তুমি?নিজের খালাতো বোনের মেয়েকে আমার বিবাহিত নাতির সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছো জো’র করে,নিখিল কি একবারও বলেছে সে এ বিয়ে করবে?
–,,নেহার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি সে তো আপনার নাতি কে ছেড়ে চলে গেছে কোন না কোন ছেলের সাথে,,,,!
সেতারা বেগম হাত তুলে ফেললো চ’ড় মা’রার জন্য সে মুহূর্তে হাত ধরে ফেললো নিঝুম।
সেতারা বেগম চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,যা জানো না তা নিয়ে কথা বলবে না বউমা।আমার নাতনির সম্পর্কে এররকম বা’জে কথা যদি কোনো দিন তুমি নিখিলের সামনে বলো তোমার জি’ব টে”নে ছিঁ”ড়ে ফেলবে!নিজের সীমার মধ্যে থাকো!
হামিদা বেগম ছুটে এসে বললো–,,কি হয়েছে আম্মা!
–,,মফিজুর কে ডাকো হামিদা, ওর বউ নিয়ে যাতে আমার চোখের সামনে থেকে যায় না হয় আমি বাড়ি ছাড়বো!কেমন ছেলে পে’টে ধরে’ছিলাম আমি কোন বংশের মেয়ে বিয়ে করে আনলো এটা।
মিলি বেগম মাথা নিচু করে বললো–,,ভুল হয়ে গেছে আম্মা,আমি তো কিছু জানতাম না শিলা নিখিলের বন্ধু তাই ভেবেছি ওর কথাই সত্যি!না জেনে বলাটা ভুল হয়েছে!
হামিদা বলে উঠলো–,,মিলি বোন আমার যাও না এখন, মেহমান হয়ে এসেছি আমরা এখানে মানুষ জন শুনলে কি ভাববে বলোতো?যাও না এসব নিয়ে বাড়ি গিয়ে কথা বলবো আমরা!
মিলি বেগম চলে গেলেন,সাব্বির হাতে বাতাস করতে করতে বললো–,, আহা বউটা আমার এভাবে করলে হয়,ওই ঘসেটি”বেগম যা গিয়া পানি আন।
নিঝুম ছুটলো অফিসের উদ্দেশ্য এসব অনুষ্ঠানে তো আসতেই চায়নি বড় মা জোড় করলো তাই না হয় কে আসতো এসবে!
———-
আইরিনের গায়ে হলুদ শুরু হয়েছে,চারদিকে সোরগোল, বড়রা সব ডালা নিয়ে স্টেজের দিক ছুটছে।এর মধ্যে গেইট থেকে গাড়ির হ”র্নের শব্দ হলো,সবার না হলেও অনেকের নজরই ওখানে গেলো।চৌধুরীর বাড়ির বড়রা সবাই সেখানে উপস্থিত শুধু শহিদুল চৌধুরী নেই!
ছোটরা সব আইরিনের পাশে তবে তাদের মনোযোগ ও গাড়ির দিকে।ঝলমলে কালো গাড়িটা থেকে কে বের হবে তা দেখার আগ্রহ সবার মাঝে ছড়ালো।
গাড়ির দরজা টা খুললো শব্দ করে, গাড়ির দরজা ঠেলে বের হওয়া ব্যক্তি কে দেখে সবার চোখে বিষ্ময় এ ও কি হওয়ার ছিলো?তাদের সেই ছোট্ট চঞ্চল নেহা!আজ কি বড় হয়ে গেলো?হামিদা বেগম কেঁদে ফেললেন কতো বড় হয়ে গেছে নাকি এতোদিন পর দেখে এতো বড় মনে হচ্ছে!
নেহার পড়নে সাদা রঙা শাড়ি,শুভ্র স্নিগ্ধ লাগছে তাকে চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া এক পাশে লাল টুকটুকু দুটো গোলাপ মুখে কোনো সাজ নেই মেয়েটার।সুন্দর করে হেঁটে সামনে চলে আসলো।আইরিন স্টেজ ছেড়ে ছুটে এসে নেহাকে সবার প্রথম জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটা কেঁদে বলে উঠলো–,,তুই এসেছিস নেহা?জানিস আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার একবার বলাতে তুই আমার বিয়েতে আসবি!
নেহা হেসে বললো–,,বোনের বিয়েতে বোন আসবে না এটা কেমন করে হয়,কাঁদছো কেনো বো’কা!
সাব্বির জেরিন কে খোঁচা মে’রে বললো–,,তোরা কোন ঘোড়ার ডিম করলি আইরিনের কথায় আসলো মানে কিছুই তো বুঝলাম না!
জেরিন বলে উঠলো–,,ছাই'”পাঁশ বকিস না তো ভাই, আমি কেমনে ক’মু আগে বুঝতে দে বিষয় টা!
হামিদা বেগম নেহাকে ধরে বললো–,,মামনি কে ভুলে গেছিস বুঝি?একবার মনে পড়েনি আমার কথা,এভাবে চলে যেতে পারলি আমাকে ছেড়ে!
নেহা হাসি মুখে জড়িয়ে ধরে বললো–,,তোমাকে অনেক বেশি মিস করেছি মামনি!
শাহআলম চৌধুরী বললো–,, আর আমাকে?
নেহা চোখে জল কেঁদে ফেললো সে শাহআলম চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,তোমাকেও মনে পড়েছে বড়আব্বু!
একে একে সবার সাথে কথা হলো নেহার সেতারা বেগম নাক ফুলিয়ে বললো–,,স’তিন দেখি আমারে ভুইলা গেলো?
নেহা উল্টো ভাব নিয়ে বললো–,,বুড়িদের মনে রাখিও না আমি!
সেতারা বেগম নেহার কান মুচ’ড়ে ধরে বললো–,,তোর বা’পের সাহস আছেনি আমারে বুড়ি কও’য়ার দুই দিনের ছেম’ড়ি!
বৃষ্টি দুই হাত কোমরে গুঁজে বললো–,,তুই দেশে আসবি একবারও বলবি না আমাকে?
জেরিন,নিশাত,সাব্বির,রোহান একসাথে বলে উঠলো –,,তার মানে তোর সাথে নেহার যোগাযোগ ছিলো?
বৃষ্টি এদিক ওদিক তাকিয়ে ভোঁ দৌড় দিলো।
মফিজুর চৌধুরী এসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো–,,নেহা?
নেহা চোখ পিট পিট করে বললো–,,মফিজ মিয়া!
অনেক দিন পর মফিজ মিয়া বলা শুনে সবাই হেসে উঠলো।
নেহা চুল গুলো খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে বললো–,,তা মফিজ মিয়া বিয়া সাদি করছো নি তুমি?নাকি এখনো সিঙ্গেল!
মফিজুর চৌধুরী তেড়ে এসে বললো–,,তবে রে বি”চ্ছু!
নেহা দুকদম পিছিয়ে গিয়ে বললো–,,ছোটআব্বু!
মফিজুর চৌধুরী কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো–,,আব্বা ডাকিস না ভাইয়ের মা’ইয়া নিজের বু’ড়া বু’ড়া ফিল হয়!তুই আর আমি তো বন্ধু!
মিলি বেগম এসে বললো–,,তোমার কি বয়স হয় নাই বুড়া তো হইছো ওই এখানে এসেও মেয়েদের সাথে টাং’কি মা’রছো? সুন্দর মেয়ে দেখেছো তো ওমনি!
মফিজুর চৌধুরী চুল গুলো পেছনে ঠেলে বললো–,,বয়স আমার বেশি না মিলি এখনো কতো মেয়ে লাইন মা’রে জানো তুমি!
নেহা হেসে বলে উঠলো–,,ছোট মা!
মিলি বেগম থমকে গেলেন এ বাড়িতে আসার পর এই প্রথম কেউ তাকে মা বলে ডেকেছে,সেতারা বেগম তো তাকে দেখতে পারে না তার উপর নাতি নাতনিদেরও না করে দিয়েছে, বাকিদের কি সুন্দর করে ডাকে আর তাকে!
মিলি বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে, নেহা জড়িয়ে ধরে বললো–,,কেমন আছো?তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা ছোটআব্বু তোমার বউ কিন্তু হে’ব্বি সুন্দরী!
মিলি বেগম কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেতারা বেগম বললো–,,তোমার বোনের মাইয়ার স’তিন আমার ও স’তিন, নেহা!
নেহা হেসে উঠলো। মিলি বেগম থমকে গেলেন, নেহার সম্পর্কে তার সব ধারনাই কি তাহলে ভুল মেয়েটা কি সত্যি ভীষণ রকম ভালো নাকি খারা’প!
নেহার হাসি টা প্রাণখোলা মেয়েটা কি সত্যি ভালো আছে?প্রশ্ন পুরো পরিবারের কিন্তু প্রশ্ন টা করার সাহস হলো না কারোর।
রং নিয়ে ছুটে আসলো তোহা।এসেই ধা’ক্কা খেলো রোহানের সাথে, রোহান সাথে সাথে নাক ছিটকে ফেললো গাঁ ঝা’ড়া মে’রে বললো–,,সাব্বির ভাইয়া তোমার এই বোন তোয়া ওরফে পোয়া মাছ টাকে বাসায় রেখে আসতে পারো না?আমাদের বাড়িতে আসা বন্ধ করলাম কোনো লাভ হলো না মহিলা পিছু পিছু এখানে এসেও হাজির!নিশাত তোর বন্ধুকে সাবধান কর যাতে আমার সাথে ধা’ক্কা টা’ক্কা কম খায়!
নেহা এগিয়ে এসে ছো মে’রে তোহার হাত থেকে থালা টা নিয়ে নিলো একে একে সবাইকে রঙ লাগিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালালো।সবার হাতে রঙ যাকে পাচ্ছে তাকে রাঙিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন রঙে।নেহার সাদা শাড়িতে ফুটে উঠেছে সকল প্রকার রঙ।
এরই মাঝে সেখানে আসে শুভ,শৈলি,টয়া,তাদের পেছনে শিলা।
টয়াকে শিলা জিজ্ঞেস করে –,,কে এই মেয়ে?যে আসা মাত্ররই সবার মধ্যমনি হয়ে উঠলো!এ অব্দি তো বেশ অনেকেই আমাকে পাত্তা দিচ্ছিলো আজ যেনো চিনছেই না!
টয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো–,,তুমি চিনো না?সিরিয়া’সলি শিলা!
শিলা অন্য মনস্ক হয়ে বললো–,,ওকে এতো রঙিন এতো সুন্দর দেখতে আমার কেনো যেনো সহ্য হচ্ছে না!
টয়া হেসে বললো–,,যার জীবনটাই ছাই রঙে রাঙিয়ে দিয়েছো তুমি,তাকে উপরে উপরে রঙিন দেখেও তোমার সহ্য হচ্ছে না শিলা?জানো তো আহত বা”ঘ কে যেমন আ”ঘাত করা উচিত না, ঠিক তেমনই আহত বাঘি”নীর আশেপাশে যাওয়াও শত্রু”র জন্য ভীষণ রকম ক্ষ”তিকারক!
গেইটের দিক নজর গেলো টয়ার নিখিল ভাইয়া আসছে?সে কি জানে তার প্রেয়সী আজ এসেছে সেজেছে সাত রঙে!যে মেয়েটার জন্য টয়ার ভালোবাসা কে পায়ে ঠেলেছে সে মেয়েটাকে ছেড়ে কি করে নিখিল ভাই পারলো শিলার হতে?টয়া চোখ বন্ধ করে নিলো,
“ভালোবাসা কি গিরগিটির মতো রঙ পাল্টায়?নাকি মানুষ গুলো ভালোবাসার মতো জিনিস টাকে কুল”সিত করে!”
নেহা হাত লাল রঙে আবৃত পিছনে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছে মেয়েটা সামনে কে আছে সেদিকে খেয়াল নেই।
হঠাৎই থমকে গেলো মেয়েটার পা বুঝতে পারলো কিছু একটার সাথে জোড়ে ধাক্কা লেগেছে তার এ মাঝ উঠোনে পিলার আসলো কোথা থেকে?নেহা পিট পিট করে তাকালো।সামনে থাকা ব্যক্তির দিক চোখ মেলে চাইলো!
চোখ জোড়া যেনো আটকে গেলো,সেই ধূসর রঙা মনির অধিকারী ফর্সা রঙা মানুষটি!আজও কতো টা সুদর্শন এই পুরুষ, আবারও কি প্রেমে পড়লো নেহা?সে তো আজ অন্য কারো,নেহা চোখ নামিয়ে নিলো মানুষটি একবারের জন্য ও তাকালো না তার দিকে,তার অস্তিত্ব বুঝতেই পারলো না নিখিল!
মিহির,ইরফান,সাহিল,রাহাত অবাক হয়ে তাকিয়ে।তাদের সবার ভুত দেখার মতো অবস্থা!
সাহিল অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,,তুমি?সত্যি তুমি!
নিখিল তখন তাকালো এক ঝলক দেখলো নেহাকে, নেহা ততক্ষণে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সামনে।তার চোখ বিশ্বাস করতে পারছে না, সে কি বরাবরের মতোই কল্পনায় দেখলো নাকি মেয়েটা সত্যি এসেছে!নিখিল কথা বলতে ভুলে গেলো,শিলা এসে বললো–,,কিরে নিখিল,সাহিল তোরা কোথায় ছিলি এতোক্ষণ? আর এভাবে তব্দা খেয়ে গেছিস কেনো?মনে হয় ভুত দেখেছিস চল ভিতরে অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে গেছে!
নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,সাব্বির!নেহা কি,,,,!
শিলা বলে উঠলো–,,নেহা আসলে তো তোর কাছেই আগে আসতো যে আসবে না তার কথা কেনো এতো মনে করিস বলতো!
–,,তুই এখানে কেনো এসেছিস?তোকে কি কেউ ইনভাইট করেছে?গায়ে পড়া স্বভাব টা যায়নি এখনো!
শিলার মুখটা অপমানে ছোট হলো নিখিল এর মধ্যে আবার বললো–,,তোর ওই মুখে আবার যদি কোনো দিন নেহার নাম শুনেছি তো বেশি ভালো হবে না!
নেহা পেছন থেকে সব শুনলো!তাচ্ছিল্যে হাসলো নেহা মনে মনে বললো–,,আমার নাম শুনতেও আপনার এতো সমস্যা নিখিল?এতোটাই ঘৃ’ণা আমার প্রতি?জানেন তো বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে জিজ্ঞেস করতে কখনো ভালোবেসেছিলেন তো আমাকে!
————
ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছিলো রাহা ভুল ক্রমে কারো পায়ে লেগে পড়তে নিলো মনে হলো কারো শক্ত পোক্ত হাত তার হাত টেনে ধরেছে।রাহা উঠে তাকালো, গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়ানো একটি যুবক চোখে কালো সাদা ফ্রেমের চশমা।ফর্মাল পোশাক,রাহা নিজের হাতটা এক প্রকার ঝেড়ে ছাড়িয়ে নিলো।
ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে হাতটা ধুয়ে ফেললো।
সাথে সাথেই একটা গম্ভীর কন্ঠ শোনা গেলো–,,এই মেয়ে এটা কি করলে!
রাহা হাত টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বললো–,,চার চোখ দিয়ে ও দেখতে পেলেন না কি করলাম!
–,,আমার ধরা অংশটুকু পানি দিয়ে মুছা’র কারন?
–,,ময়লা পরিষ্কার করলাম!
–,,তোমার কি মনে হয় আমি নোং’রা?
–,,পুরুষ মানুষ মানেই নোং’রা প্রকৃতির,আই জাস্ট হেইট অল অফ ম্যান!
যুবকটি কিছুটা এগিয়ে এসে ধম’কের সুরে বললো–,,তোমার বাবাও পুরুষ মেয়ে!
–,,সবার আগে আমি তাকে ঘৃ’ণা করি মিস্টার!আর আমি কি করবো না করবো তার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে?হো আর ইয়!
–,,রৌফ রিয়াদ শেখের সাথে লাগতে আসবে না পুঁচকে!
–,,আজাইরা সময় আমার নেই যার তার সাথে লা’গি না আমি!এক্সকিউজ মি!
–,,আমাকে অ্যাটি”টিউড দেখাবে না, একদম পছন্দ নয় আমার!
–,,আপনিও রাস্তায় এমন সং সেজে দাড়িয়ে থাকবেন না,সাহায্য করার নামে মেয়েদের হাত ছুঁয়ে দিবেন না!
–,,মুখ সামলে কথা বলো!হাত ছোঁয়াতে এতো কিসের সমস্যা তোমার?পুরুষ মানুষে এতো কিসের সমস্যা!
রৌফ রাহার হাত মুচ’ড়ে ধরে রাগী কন্ঠে আবার বললো–,,তোকে পুরোপুরি ছুঁয়ে দিবে এই পুরুষ পারলে ঠেকি’য়ে দেখাস!
(আপনাদের অনুরোধে আবার চলেই আসলো নতুন রূপে নিখিল-নেহা।নতুন গল্প কেমন লাগলো জানাবেন)
প্রণয়ের সুর সিজন-০১ গল্পটি পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন।
চলবে?