প্রণয়ের সুর ২ পর্ব-১০

0
1037

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
তুই আমাকে ইগ’নোর করিস?সাহস তো কম না!
নিখিলের কথা নেহা শুনেও যেনো শুনলো না।সে নিজের মতো করে হেঁটে অন্য পাশে চলে গেলো।
নিখিল নেহার হাত টেনে ধরলো।এক টানে সামনে নিয়ে এসে বললো–,,ভালোবাসি তোকে এ কথা টা কি এখন মাইক দিয়ে পুরো এলাকায় বলতে হবে?কখন বুঝবি বলতো!

নেহা চোখ পিট পিট করে তাকালো।সে কি কোনো ভুলবা’ল স্বপ্ন দেখছে দিন দুপুরে!নিখিল তাকে ভালোবাসে বলছে,কি করে বিশ্বাস করবে?

নেহা বেআ’ক্কল বনে গেলো যেনো,অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করলো–,,আমি কি স্বপ্ন দেখছি নিখিল ভাই?

নিখিল চোখ গরম করে তাকালো,এর জন্যই এই গা’ধী টাকে বলতে চায় নি,কিন্তু এই অপদা’র্থ টা কি কোনো দিন বড় হবে?বাধ্য হয়ে নিখিল কেই স্বীকার করতে হলো!এবার জানি কি হয়,যা পেট পাতলা বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলে দিবে এটা ও জানে নিখিল,তাতে অবশ্য তার কিছু যায় আসে না,একদিন না একদিন তো বলতেই হতো!

নেহা আবারো বললো–,,আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন?

নিখিল পকেটে হাত গুঁজে দিয়ে বললো–,, তোর কি মনে হয় বল?

–,,আমার মনে হয় আপনি আমাকে একটুও পছন্দ করেন না।

নিখিল তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,তোর মতো একটা বাচ্চা মেয়ে ভালোবাসার কি বুঝিস?ভালোবাসা কি শুধু মুখে একবার আই লাভ ইউ বললেই হয় নাকি?

নেহা ছোট চুল গুলোতে এক বার হাত বুলিয়ে বললো–,,কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না!

নিখিল হো হো করে হেসে বললো–,,তাই?

নেহা উপর নিচে মাথা দুলিয়ে বললো–,,হুম!

নিখিল নেহার গালে হাত রেখে বললো–,,ভালোবাসিস কিনা তা আমার থেকে ভালো আর কে জানে?
তবে শোন আমি চাই না তোর কোনো ক্ষ’তি হোক।আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি,বা অন্য কাউকে ভালোবাসি এসব ভেবে খব’রদার কষ্ট পাবি না।কারো সাথে ঝা’মেলাও করবি না।কখনো অন্যের কথা বিশ্বাস করবি না।আমি বলছি আমি শুধু তোর,নিখিল শুধু নেহাকেই ভালোবাসে।শোন এখনো তুই অনেক কিছুই বুঝিস না,তাই তোকে বলতে চাইনি।কিন্তু তুই এখন পর্যন্ত অনেক জনের সাথে ঝা’মেলায় জড়িয়েছিস, আমি কিন্তু মোটেও ভালো ছেলে না, খারা’প ছেলেদের প্রেমিক কিংবা বউ কোনো টা হওয়াই কিন্তু সহজ না।তুই পারবি তো সামলাতে সব কিছু?

নেহা তড়িৎ গতিতে বললো–,,পারবো পারবো কি করতে হবে বলো!

নিখিল মুচকি হাসলো,তার নেহার মন কতোটা পবিত্র, এতো সহজ সরল কেনো মেয়েটা!

–,,পাগ’লি আপাতত মন দিয়ে পড়াশোনা কর,এর থেকে বেশি কিছু করা লাগবে না।

–,,তুমি তো বললে বিয়ে করবে মানে বউ হতে হবে।দিদুন বলেছে বিয়ে করলে অনেক কাজ করতে হয়!

নিখিল ধম’ক দিয়ে বললো–,,এই তোর বিয়ের বয়স হয়েছে?কলেজে যা,আর যদি কারো সাথে লাগতে দেখছি তো পা ভেঙ্গে বাসায় বসিয়ে রাখবো!

নেহা ফিক করে হেসে দিলো।আবারও নিখিলের দিক তাকিয়ে বললো–,,তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি!

নিখিল চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।পর পরই গম্ভীর হয়ে বললো–,,একদম না!যা এখান থেকে।

নেহার মন খারা’প হলো কিছুটা।নিখিল তো বললো ভালোবাসে একটু জড়িয়ে ধরলে কি এমন হবে,অন্য কিছু তো করতে বলেনি!নাকি নেহাকে সান্ত্বনা দিতে, ঝা’মেলা যাতে না করে সে জন্য এসব বললো নিখিল।

নেহা চ’ট করে জিজ্ঞেস করলো–,,আপনি সত্যি সত্যি ভালোবাসেন তো।না মানে সান্ত্বনা দিতে বলছেন না তে?

নিখিল আগের মতোই গম্ভীর হয়ে বললো–,,তুই কি বড় হবি না কোনো দিন?দশ দিন ধরে তোর পিছু পিছু ঘুরছি,হাটুর বয়সী হয়েও পিছন পিছন ঘুরানোর ক্ষমতা রাখিস তাও আরো প্রমান চাস তুই?তোকে ভালোবাসি কিনা এটা এখন কিভাবে প্রমান করবো আমি!

নেহা হেসে বললো–,,আচ্ছা আর প্রমান দিতে হবে না।আজকেই বাড়ি গিয়ে বড় আব্বু কে বলবো,আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও তোমার ছেলের সাথে!

নিখিল চোখ বড় বড় করে তাকালো । কি বলে এই মেয়ে।

নিখিল চেঁচিয়ে বললো–,,কি বললি তুই?

নেহা দৌড়ে পালালো পিছু ফিরে বললো–,, যা শুনেছো তাই!
————
এতটুকু বলে থামলো জেরিন,মিলি বেগম এখনো তার মুখের দিক তাকিয়ে,রোহান হাই তুলতে তুলতে বললো–,,জেরিন আপু তুমি থেমো না বলো বলো।
নিশাত বললো–,, পরে কি বিয়ে করে ফেলেছিলো ওরা?

নিঝুম বললো–,,আরে না আরো অংশ বাকি এখনো।

মফিজুর চৌধুরী বললো–,,আরে তোরা থামবি।এই জেরিন পরে বলতে থাক।একটু শর্টকা’টে বলিস!

মিলি বেগম রেগে বললো–,,তুমি কি চুপ থাকতে পারো না।নিজে সব জানো বলে কি আমরা ও জানি নাকি?

জেরিন বললো–,,আচ্ছা বাবা ঠিক আছে,আমি তো মূল মূল জায়গা গুলোই বলছি নাকি।থামো তোমরা।

জেরিন আবার বলতে শুরু করলো।
——————–
কলেজে ঢুকতেই বৃষ্টি নেহার হাত চেপে ধরে বললো–,,কিরে ভাইয়া তোকে কি এমন কথা বললো যার জন্য আমাকে একা পাঠিয়ে দিলো তাও ওই মিহির টার সাথে,লোকটা বেশি কথা বলে!

নেহা মিটি মিটি হাসলো।বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে বললো–, আরে ভাই বলবি কি হয়েছে?

–,,তোর ভাই আমাকে প্রোপোজ করেছে!

বৃষ্টি বলে উঠলো–,,এ্যা’হ!

নেহা বললো–,,হ্যাঁ রে।ইশ! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না।

বৃষ্টি বির বির করে বললো–,,আমারও!কিন্তু হঠাৎ করে কেনো?

–,,গোয়ে”ন্দাগীরি করিস না তো বইন,বলেছে এটাই অনেক,এর থেকে বেশি কিছু চাই না আমার।

বৃষ্টি নাক ছিটকে বললো–,,প্রেমে অন্ধ মহিলা।ভাইয়া কিন্তু সুবিধার না,মনে হয় তোর পাগ’লামো বন্ধ করতে বলেছে!

নেহা এবার রাগলো বেশ বলে উঠলো–,,দেখ একদম আজে’বাজে কথা বলবি না।ভালোবাসা নিয়ে কেউ মজা করে নাকি।সত্যি সত্যি ভালোবাসে নিখিল আমাকে,কতো কেয়ার করে দেখিস না নাকি?নিজের ভাইকে বিশ্বাস করিস না কেমন বোন তুই!

বৃষ্টি নেহার মাথায় মে’রে বললো–,,চুপ ছুইট’কা।আমি এসব প্রেম ভালোবাসা বিশ্বাস করি না,এসব এই আছে তো এই নেই।সর তো ক্লাসে যাচ্ছি।

—–
নেহা খুব খুশিতে আছে কয়েকদিন যাবৎ তা দেখে সবাই ভাবছে কি হলো এর আবার।কিন্তু নেহা?সে তো সেই,আনন্দের ঠেলায় শাহআলম চৌধুরী কে বলেই ফেলেছে –,, জানো বড় আব্বু তোমার ছেলে আমাকে ভালোবাসে বলেছে!

শাহআলম চৌধুরী সবে চা মুখে পুড়’ছিলো কখা শুনে কাপ সহ মেঝেতে পড়লো সব।

সেতারা বেগম পান মুখে নিয়েই বললো–,,আমার নাতিটার কি মাথা মু’থা ন’ষ্ট হইলোনি তোরে এগুলা’ন কইছে!ছে’ড়ি দিন দুপুরে স্বপ্ন দেখছছনি।

নেহা নাক ফুলিয়ে বললো–,,তোমার নাতি কোন দেশে মহারাজা?নাতি নিয়ে এতো গর্ব করো কেনো বুড়ি?আমি কি খারা’প নাকি।

নিখিল বারান্দা থেকে সব শুনলো।যা ভেবেছিলো তাই,কি করলো এ মেয়ে,আজকে আচ্ছা মতো টাই’ট দিতে হবে,বলার পর থেকে যেনো মাথায় চ’ড়ে বসেছে।

শাহআলম চৌধুরী, ছেলেকে চিনেন,কিন্তু সে নেহা কে পছন্দ করে এটা বিশ্বাস করতে পারলেন না,তার ছেলে তো নেহাকে বাচ্চা ভেবেই ছয় বেলা অপমা’ন করে।এখন কিনা এসব বলছে।শহিদুলের সাথে কথা বলতে একবার তাকে।

নেহা গুন গুন করে উপরে উঠতেই নিখিল খপ করে তার হাত টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।

নেহা তো হেসেই চলেছে একবার তো বললো–,,কেনো নিয়ে এসেছো নিখিল,আমরা কি এখন প্রেম করবো নাকি?

নিখিল বড়সড় একটা ধ’মক দিলো, নেহা কেঁপে উঠলো কিছুটা।নিখিল রাগে বলে উঠলো–,,প্রেম আদোও বুঝিস তুই?তোর মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসাই ভুল আমার। সব কিছুতে শুধু বাচ্চামো।আব্বুকে কি করে বলে দিলি তুই?পাগ’ল ও তো নিজের বুঝ বুঝে,আর তুই?সারাদিন বাচ্চাদের মতো ঘুরিস,এতো করে না করলাম ভার্সিটি আর যাবি না।না তুই কথা কেনো শুনবি,মেয়েগুলার সাথে কি আমার কোনো সম্পর্ক আছে?কোথা থেকে ইনফরমেশন পাস তুই?কাল ও গিয়ে মেয়েটার সাথে মারা’মারি করেছিস!কেনো?তোকে আমি বলেছি?তোকে অধিকার কে দিয়েছে আমার লাইফে এতো বেশি নাক গলানোর!সব কিছুর একটা লিমিট থাকে নেহা।

নেহা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো–,,আর করবো না।তুমি আমাকে ভালোবাসো এটা যদি সত্যি হয়, তো বললে কি এমন হবে?আমি এতো কিছু ভেবে তো বলিনি।আর নাক গলাতে আসবো না ।

নেহা বেরিয়ে যেতে নিলো নিখিল রাগ সং’যত করে নেহা কে ডাকলো।নেহা বড্ড অভিমানী, নিখিল জানে কিন্তু সেই বা কি করবে,সব কিছুতে মেয়েটা বারাবাড়ি করে।

নিখিল বললো আরো একবার –,,নেহা শোন।

নেহা শুনলো না চলে গেলো,নিখিল জানে এখন কাঁদবে খুব করে কাঁদবে পা’গল টা। তবুও নিখিল নিরুপায়,নেহা এমনিতেই বারাবাড়ি করে যদি সে নিজেও আ’স্কারা দেয় তখন সমাজের মানুষ কি মনে করবে,বাড়ির লোকই বা কি বলবে।নেহা তো মেয়ে, নিখিল নিজের অসম্মানের কথা কখনো গায়ে মাখে,কিন্তু সে নেহা কে কেউ খারা’প চোখে দেখবে এটা মেনে নিতে পারবে না।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নেহার মুখটা খুশিতে ভরে গেলো,সব কিছু ভুলে গেলো এক মুহুর্তেই।

চিরকুটে মোড়ানো দুটি চকলেট।চিরকুটে লিখা–,,রাগ করে থেকো না লক্ষীটি!ভুল হয়ে গেছে আমার।

—————
নেহা আজ ফুরফুরে মেজাজে বের হয়েছে, পড়নে থ্রি পিস হাতে কাঁচের চুড়ি মন মতো সেজেছে বললে ভুল হবে,বৃষ্টি তাকে সাজিয়ে দিয়েছে, নেহা এসব সাজগোজে একদম কাঁচা।
বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে তাকে,নেহার সাজার কারন সে নিখিল কে আজ চমকে দিবে গিয়ে।আজ নিখিলের ক্লাস নেই মিহিরের থেকে জেনেছে সে।

বৃষ্টি কেও সাথে করে ধরে নিয়ে এসেছে,এর পেছনে কারন মূলত মিহির,মিহির ভাই ঘু’ষ নিয়েছে নেহার থেকে,সে নিখিলের কথা বলবে যদি সে বৃষ্টি কে সাথে আনে।

নেহারা গেইটের বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে যাবে কি যাবে না ভাবছে,নিখিল এমনিতেই না করে দিয়েছে কিছু না করার জন্য!

শিলা গাছ তলায় বসে ছিলো,একটা মেয়ে এসে তাকে জানালো নিখিলের জন্য যে মেয়েটা সব সময় পাগ’লামো করে সে এসেছে, তবে অনেক সেজেগুজে!

শিলা হেসে বললো–,,তাই চল যাই একটু মজা নিয়ে আসি!

নেহা, বৃষ্টি বসে আছে, তখনই সেখানে শিলা আসলো।
এসেই বললো—,,এই তোমরা নিখিলের বোন না?

বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।শিলা আবার বলে উঠলো–,,নিখিল কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ড!

বলতে দেরি নেহা রাগতে দেরি না,শিলা কে বসিয়ে দিলো এক চ’ড়।রেগে বললো–,,কচু তোমার।নিখিল শুধু আমাকে ভালোবাসে।

শিলা হো হা করে হেসে উঠলো তাচ্ছিল্য করে বললো–,,তোমাকে?আয়নায় নিজেকে দেখেছো?নিখিল আর তুমি,তোমার সাথে কোন দিক দিয়ে মানায় নিখিল কে,তুমি জানো না নিখিলের কেমন মেয়ে পছন্দ?নিখিল আমাকে নিজে বলেছে তার আমার মতো মেয়েকে পছন্দ, যেমন তার রূপ থাকবে গুন থাকবে, ভদ্র চুপ চাপ হবে!

একটাও তো তোমার মাঝে নাই,মেয়েদের মতো দেখতে ও লাগে না তোমাকে।নিখিলের পছন্দ লম্বা চুলের রমনী।যে শাড়ি পড়বে,রাঁধবে, সংসারী হবে!তোমাকে ভালোবাসে বিষয় টা হাস্যকর হয়ে গেলো না!

নেহা চুপসে গেলো,বৃষ্টি তাকিয়ে দেখলো শুধু।বৃষ্টি এবার বলে উঠলো–,,এই যে আপনি যান তো,আপনার থেকে জানতে চেয়েছি আমি।আমার ফ্রেন্ড কে অযথা কথা শোনানোর অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?বেশি বকবেন না।আপনি আবার কোথাকার বিশ্ব সুন্দরী?আমাদের নেহার নখের যোগ্য ও না আপনি।যান তো ভাগেন!

শিলা রাগে ফুঁসছে,বলে উঠলো–,, বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি?এখনই প্রমান হয়ে যাবে ওই দেখো নিখিল আসছে।

শিলা এক প্রকার দৌড়ে গেলো গিয়েই নিখিল জড়িয়ে ধরলো! নিখিল কথা বলার মাঝেই থমকে গেলো,কি থেকে কি হলো।রাহাত,সাহিল,মিহির হতবাক হয়ে তাকিয়ে!

নেহা চুপচাপ তাকিয়ে আছে,বৃষ্টি ভয় পাচ্ছে না জানি এখন নেহা কিছু একটা করে বসে।

মিহিরের হঠাৎ নজরে আসে কিছু দূরে দাড়িয়ে থাকা নেহা আর বৃষ্টির দিকে।নিখিল শিলার বাহু ধরলো,নেহা শুধু তাকিয়ে দেখলো,কামিজ খামচে ধরলো মেয়েটা।সহ্য করা যে খুব কঠিন!নিখিল ইচ্ছে করে তাকে কেনো এতো যন্ত্র’ণা দেয়,শুধু নেহা অবুঝ বলে?একবার ও বুঝতে চাইবে নিখিল আসলে তার নেহা কেমন!

বৃষ্টি নেহা কে আলতো ধাক্কা দিলো,নেহা নির্বাক তাকিয়ে,বৃষ্টি বলে উঠলো–,, কথা বলছিস না কেনো?

নেহা উল্টো ঘুরে গেলো।মিহির এবার বলে উঠলো–,,নিখিল!

নিখিল ততক্ষণে ধাক্কা মে’রে শিলা কে সরিয়ে দিয়েছে।নিখিল বলে উঠলো–,,কি সমস্যা শিলা,গায়ের উপর পড়ে যাও কেনো হুটহাট!

শিলা আমতা আমতা করে বললো–,,কুকুর!

নিখিল বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে নিলো।মিহির বলে উঠলো–,,নিখিল দেখ নেহা!

নিখিল চকিত নয়নে তাকালো নেহা ততক্ষণে রিকশায় উঠে বসেছে,নেহা এতো সেজেগুজে কোথায় গিয়েছিলো!তার জন্য তো কখনো সাজেনি।

নিখিল বলে উঠলো–,,ও এখানে কি করছে?

মিহির রেগে বললো–,,তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলো গা’ধা!আর তুই তো তোর মেয়ে বান্ধবী কে জড়িয়ে ধরে রাখতে ব্যস্ত।যত্তসব নিখিল তোকে কতো করে বলেছি আমি,এই মেয়েটার সাথে কথা বলিস না আর এখন দেখবি এই আপ’দ টা তোর একদিন সংসার ভেঙ্গে দিবে!

নিখিল বলে উঠলো–,,কি সব কথা বলিস।শিলা কেনো এসব করতে যাবে?ওর ভাই ও তো ভালো মানুষ!

সাহিল বেশ বিরক্ত হয়ে বললো–,,ভাই মেয়ে বান্ধবী মানে কাল নাগি”নী সাপ!আর কোনো মেয়ে তার পছন্দের মানুষ কে অন্য মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারবে?আবার যদি মেয়েটা নেহা হয় তো কথাই নেই।কিছু না বলে নেহা চলে গেছে তার মানে বুঝ তোর সাথে কি হবে!

রাহাত বলে উঠলো–,,কচু ভালোবাসো তুমি। আরে ভালোবাসলে সব কিছুতে সিরিয়াস হতে হয়,তোর মতো গা ছাড়া ভাব নিয়ে থাকলে দেখবি সব হারাবি।মেয়েরা ভালোবাসায় বেশ সেনসি”টিভ হয়!

নিখিল বলে উঠলো–,, নেহা বাচ্চা মেয়ে!তোদের মতো এতো কিছু ভাবে না সর তো সামনে থকেে।

তিন জনই বললো–,,পরে কিছু হলে বলতে আসবি না আমাদের।আবারও বলছি শিলা কে বিশ্বাস করিস না!
———
নেহা বাড়িতে এসে গোসল করলো।ফ্রেশ হয়ে গেলো খুব দ্রুত, ভালোবাসার মানুষ যেমন হয় তাকে কি তেমন ভাবে মেনে নেওয়া খুব কঠিন?ভালোবাসলে কি সত্যি অপর ব্যক্তির জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়!
নেহা যদি নিজেকে পরিবর্তন না করে তবে কি নিখিল কোনো দিন তার হবে না,সে থেকে যাবে ধোঁয়াসা,অধরা।নিখিল নামক ব্যক্তি কে পেতে হলে বুঝি নেহা কে অনেক তপস্যা করতে হবে?রূপে,গুনের কাছে কি নেহার স্বচ্ছ পবিত্র নিস্পাপ ভালোবাসা ও ফিকে পড়ে যাবে‌!ভালোবাসা পাওয়া বুঝি এতোটাই কঠিন?তাহলে নেহা কখনো কাউকে ভালোবাসতো না,যে প্রহেলিকার সমাধান করা এতোটা কঠিন সে প্রহেলিকার প্রতিযোগীতায় জেনে শুনে নাম লিখাতো না।নেহা নিজেকে সাধারন রাখতে ভালোবাসে, একটু এলোমেলো নেহাকে নিখিল কখনো গুছাতে চেয়েছে?চায়নি!শুধু দোষারোপ করলেই সব ঠিক হয়ে যায়।নেহা নিজের ভালোবাসার জন্য আরো একটু চেষ্টা না হয় করলো,সাজলো নিখিলের মন মতো হওয়ার চেষ্টা করলো যদি মানুষ টা তার হয়!
যদি এর পর ও না হয়?তখন মানুষ কি করে?হেরে যায় নাকি হারি’য়ে যায়!

নেহা কখন থেকে আয়নায় তাকিয়ে আছে,নিজেকে দেখছে,নিজের ত্রুটি গুলো দেখছে,নিজের মাঝে কমতি গুলো খুঁজে বের করছে,বার বার চোখে ভাসছে শিলা নামক সুন্দর নারীটির চেহারা। কতোটা পরিপাটি, কোমড় ছাড়িয়ে লম্বা কেশ,টানা টানা দুচোখ,গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট!

নেহা হুট করেই হো হো করে হেসে উঠলো। কি অদ্ভুত মানুষের চাওয়া,যারে আমরা চাই তারে আমরা কখনো পাই না কখনো না!
নেহা নিখিল কে বিশ্বাস করে, তবুও অভিমানে টইটম্বুর আবেগী মন টা তা মানতে নারাজ!

মেয়েটা ঘর থেকে বের হলো না সারাদিন, বৃষ্টি টেনশ’নে জেরিন কে একবার সব খুলে বলেছে।জেরিন কেনো বাড়ির প্রায় সবাই জানে নেহা নিখিল বলতে অ’জ্ঞান! তবে সবাই নেহা কে ছোট মনে করে, পাগলা’মী ছাড়া কিছুই মনে করেনি!কিন্তু তারা কি জানে?ভালোবাসা বয়স বিচার করে আসে না,
অনুভূতি স্বচ্ছ তলোয়া”রের ন্যায় কখন কার মনে রক্ত”ক্ষরণ ঘটায় তা কেউ জানে না কেউ বুঝে না।

নেহা ঘুমালো আজ তাকে ঘুমাতে হবে,নিখিলের সাথে কথাও বলতে হবে তাকে,সব কিছুতে এতোটা হেঁয়ালি করলে কি হয়!
———-
রাত প্রায় বারোটা,নেহা কে দেখতে নিখিল এসেছে,মেয়েটা কে এতো এতো ফোন করে পায়নি।বাড়ি এসেও কারো দেখা পায়নি যে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবে,পার্টি অফিসে কাজ পড়ে যাওয়ায় তখন আর বাড়ি ও আসা হয়নি তার।

নিখিল নেহার ঘরে এসেছে কয়েক মিনিট ও হয়নি তার কিছুক্ষণ পরই সেখানে আসে শাহআলম চৌধুরী।
এসেই রুমের লাইট টা অন করে দেয়,পর পর সব বড়রা আসে।নিখিল ভরকে যায় প্রথমে।আরো অবাক হয় শাহআলম চৌধুরীর কান্ডে!

শাহআলম চৌধুরী নিখিলের গালে স্ব জোড়ে একটা চ’ড় বসিয়ে দিয়েছে।

তিনি কঠিন কন্ঠে বললো–,,মধ্যে রাতে একজন অবিবাহিত মেয়ের ঘরে কেনো এসেছো তুমি নিখিল!কি উদ্দেশ্য তোমার?অতোটা অবুঝও তো নও তুমি।

শহিদুল চৌধুরী বললো– ভাইজান এখন মানুষ জন জানলে কি হবে?আমার মেয়েটাকে তো কেউ বিয়ে করবে না!

হামিদা বেগম,তাহমিদা বেগম মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন সাহারা বেগমও সবার দিক তাকালো একবার,কি থেকে কি হচ্ছে। সেতারা বেগম বললো–,, দাদু ভাই কি হচ্ছে এসব!

নিখিল বলে উঠলো–,,নেহা কে দেখতে এসেছিলাম শুধু কিন্তু তোমরা কি থেকে কি বানাচ্ছো!

শাহআলম চৌধুরী বললো–,,চুপ!মেয়েটাকে ভালোবাসার কথা বলে নিজের আঙুলের ইশারায় ঘুরাচ্ছো তুমি?রাজনীতি মনে করো নাকি সব কিছু?আমার পরিবারের ভিতর এসব কিছু মেনে নিবো না আমি,আমার পবিত্র মেয়েটার গায়ে তুমি কল”ঙ্ক ছিটাতে চাচ্ছো!

নিখিল গম্ভীর হলো শুধু একবার বললো–,,আব্বু!

–,,তুমি ভালোবাসো তা হালাল ভাবে ও তো পারো।বিয়ে বহির্ভূত কোনো সম্পর্ক মেনে নিবো না আমরা!

নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,ভালোবাসি কিনা এটার সত্যতা যাচাই করতে চাচ্ছো তাই তো?আমার সব কিছু তোমাদের খারা’প লাগলেও আমার কিছু করার নেই।তবে আমার ভালোবাসার দিক আঙুল উঠাবে না,বেশি ভালো হবে না,কাজি নিয়ে আসো এখনই বিয়ে করবো নেহা কে!যাও! নিয়ে আসো যাও,এখন মানে এখনই।

চলবে,,,,,