প্রণয়ের সুর ২ পর্ব-১৭+১৮

0
1187

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১৭
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
তাহমিদা বেগমের সামনে বসে আছে শহিদুল চৌধুরী, শহিদুল চৌধুরী আবেগী হলেন তবুও স্ত্রীর মন গলাতে পারলেন না তিনি। তার সহধর্মিণী যে বেশ অভিমানী তা তিনি ভালো করেই জানেন, না হয় কি এভাবে চলে আসতে পারতো তাকে ছেড়ে!

শহিদুল চৌধুরী আবার বলে উঠলো–,,ফিরে চলো তাহমিদা,বলতে পারো আমি স্বার্থ”পর হচ্ছি, হ্যাঁ আমি তোমাকে ছাড়া আমার মেয়েদের কে ছাড়া ভালো নেই।তোমাদের ছাড়া একটা দিনও আমার ভালো কাটেনি।আমি নিজের ভালোর জন্য হলেও চাই তুমি ফিরে চলো।আমাকে বাঁ’চাতে ফিরে চলো,ওই বাড়িতে আমার কেমন দ”ম বন্ধ লাগে তোমাদের ছাড়া!

তাহমিদা বেগম এবার হেসে উঠলেন–,,সত্যি তুমি আমাদের ছাড়া ভালো নেই?যদি ভালো নাই থাকতে, আমাদের খোঁজ করতে,কিন্তু তুমি তা করোনি মাঝরাতে তোমার স্ত্রী সন্তান কোথায় গিয়েছে বেঁচে ছিলো নাকি ম’রে গেছিলো তা নিয়ে তোমার কোনো মাথা ব্যাথা ছিলো না, তোমার কাছে তোমার ই’গো তোমার পরিবার বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমরা কেউই না তোমার জীবনে আমাদের কোনো অস্তিত্বই নেই,আজ এসে বলছো তুমি ভালো নেই?বিষয়টা কেমন হাস্যকর হয়ে গেলো না!

শহিদুল চৌধুরী লজ্জায় মাথা নত করলো তার আসলেই ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই।সে কাপুরু”ষের মতো নিজের স্ত্রী সন্তান কে একা ছেড়ে দিয়েছিলো,সমাজের বেড়া’জালে আঁটকে সম্মানের কথা চিন্তা করে মেয়েকে মানিয়ে নিতে বলে ছিলো।আজ কি করে তিনি চাইছেন তাকে তার স্ত্রী হাসি মুখে মেনে নিক!
বাড়িতে আসলো রাহা,শহিদুল চৌধুরীকে বসে থাকতে দেখেও কিছু বললো না।সে নিজের মতো করে রুমে চলে গেলো যেনো বসার ঘরে কেউই উপস্থিত ছিলো না।
রাহার প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে কষ্ট হলো শহিদুল চৌধুরীর,ভার্সিটিতে মেয়েটার সাথে রোজ দেখা হয় তবুও দুজন অচেনা ব্যক্তির মতো থাকে।রাহা তাকে শুধু স্যারই সম্বোধন করে,মেয়েটার মুখে কতোদিন বাবা ডাক শোনা হয় না!আর নেহা?নেহা শহিদুল চৌধুরীর সবচেয়ে আদরের তার প্রথম সন্তান,তার কাছেই তিনি প্রথম অপরাধী তার পর সবার কাছে,মেয়েটা তার দিকে ফিরেও তাকায় না অভিমানে,বাবা হয়ে এসব মেনে নেওয়া সত্যি বড় কষ্টের!

তাহমিদা বেগম ভনিতা ছাড়াই বললেন–,,তুমি চাও তোমার পরিবারে আমি আবার ফিরে যাই তাই তো?যাবো যেদিন আমার মেয়েরা নিজ ইচ্ছেতে তোমার বাড়িতে ফিরে যাবে তোমাকে আবার বাবা বলে ডাকবে সেদিন যাবো,তার আগে তুমি আমাকে বার বার অনুরোধ করে লজ্জিত করো না,আমার তোমাকে ফেরাতে কষ্ট হবে জানি,তার পরও আমার মেয়েদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কিছু করবো না, নিজে ভালো থাকার চেয়ে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার সন্তানের ভালো থাকা!

শহিদুল চৌধুরী বললো–,,তার মানে তোমরা যাবে না?না যাও সমস্যা নেই আমিও এখানেই থাকবো!

রাহা তড়িৎ গতিতে রুমে থেকে বের হয়ে বললো–,,না তুমি এখানে থাকবে না, তুমি তোমার বাড়ি গিয়ে থাকো!

শহিদুল চৌধুরী সোফায় আরাম করে বসে বললেন–,,রাহা ভুলে যাস না আমি ও তোর বাপ।তুই যদি ত্যা’ড়া হোস আমি তোর থেকে ও বেশি ত্যাড়া!

তাহমিদা বেগম হতাশ শ্বাস ছাড়লেন এই বংশের আসলে র’ক্তে দোষ আছে, বাপ পোলা সব হয়েছে এক ধরনের, তার শ্বশুর মশাই ও তো কম ঘাড়’ত্যাড়া ছিলো না।

রাহা রেগে বললো–,,মা চৌধুরী বাড়ির সুপুরুষ কে তার বাড়িতে গিয়ে এসব ভাব দেখাতে বলো,আমি কিন্তু এখানে তাকে তার দু মিনিটও স’হ্য করবো না!

তাহমিদা বেগম বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই থামবি তোরা, উ’ফ সব জ্বা’লা যেন একা আমার,তুই তাকাস না তুই তোর মতো থাক,এই লোক যা খুশি করুক আমি গেলাম এখান থেকে,আমার মেয়েটা গেলো আবার রেগে, না জানি ওখানে গিয়ে কি বাঁধিয়েছে। তোদের বংশসুদ্ধ সব পা”গল!

শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,,দেখো দেখে তাহমিদা বংশ তুলে বলবে না একদম!

তাহমিদা বেগম তেড়ে এসে বললো–,,ওমনি না? গায়ে লেগে গেলো যেনো?একশো বার বলবো হাজার বার বলবো,তোমার বংশের সব পাগ’ল,ঘাড়”ত্যাড়া!

শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,, এই মহিলা ভালো হবে না বলছি!

রাহা বোকার মতো তাকিয়ে আছে,কি থেকে কি হলো ঝ’গড়া থামাতে গিয়ে এরা নিজেরাই লেগে গেছে।
অদ্ভুত সব মানুষ!
রাহা নিজেই ধ”মকে বলে উঠলো–,, থামবে তোমরা!যত্তসব পাগ’লের কারখানা।

রাহা বিরক্তি নিয়ে ছাদে চলে গেলো।

ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফোন টিপছে রাহা,হুট করেই তার চোখে পড়লো সামনে দাড়িয়ে থাকা একটা পরিচিত মুখ।

রাহা মনোযোগী হলো রেলিং থেকে কিছুটা ঝুঁকে দেখলো মানুষটির পাশে থাকা মেয়েটিকে,হাতের মোবাইলটা তখনই কাজে লাগালো,টুপ করে একটা ছবি তুলে নিলো।

রাহার তাকিয়ে থাকার সেই মুহুর্তেই সেদিকে তাকালো রৌফ,পাশে তার মেহেরিন।মেহরিন কে পঁ’চানি দিচ্ছিলো রৌফ।কারন মেহেরিন তরতাজা একটা ছে”কা খেয়েছে, তার পরে আবার পরের দিনই সং সেজে পাত্র পক্ষের সামনে দাড়াতে হবে তাকে।দুই ভাই বোন হাসি মজায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।
রাহা রৌফের তাকানো দেখে সেখান থেকে সরে পড়লো।
মেহেরিন ও তাকিয়েছিলো তার দৃষ্টি অনুসরণ করে।

মেহেরিন রৌফ কে খোঁচা মে’রে বললো–,,বাহ্!বড় ভাই তুমি তো কোনো মেয়ের দিক তাকানো তো দূর মেয়েতে নাকি তোমার এলার্জি,জ্বর,সর্দি সব হয় এখন দেখছি ঘাড় ঘুরিয়ে উঁচিয়ে যেভাবে পারছো দেখছো?কি খবর!

রৌফ মেহেরিনের দিক তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো–,, আমার স্টুডেন্ট!

মেহেরিন রসিকতা করে বললো–,,কম বয়সে শিক্ষকতা করলে তো বউ ছাত্রীই হবে,এটা আহামরি কোনো বিষয় না!

রৌফ মেহেরিনের মাথায় চাপড় মে’রে বললো–,,আজাইরা কথা বলবি না মেহেরিন।

মেহেরিন নিজের মাথায় ঘষে বললো–,,হুহ্ দেখবো তো, আমি নিশ্চিত তুমি এই মেয়েরে গোপ’নে লাইন মা’রো,দেখো ভাই তোমার বড় ভাইয়ের মতো মামি রে ছেঁ’কা না দিয়ে আগে ভাগে বলে দিয়ো,মহিলার হার্টের যা কন্ডিশন তুমি ও যদি এসব কান্ড ঘটাও না যানি কি করে বসেন!

রৌফ বিরক্তি নিয়ে বললো–,,তুই আস্ত একটা কু”ফা নিঝুম ভাইয়ার জন্য এখনই আমার কষ্ট হচ্ছে!

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বললো–,,নিঝুম ফিঝুম কে আবার ভাই?

রৌফ অবাক হয়ে বললো–,,তুই কেমন মেয়ে মানুষ রে,ন্যা’কার ষষ্ঠী মেয়ে গুলা তো বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনলেই শুধু জামাই না তার এ’ক্সের ও চৌদ্দ গোষ্ঠীর খবর বের করে ছাড়ে আর তুই কিনা হবু বরের নাম টুকুও জানিস না!

মেহেরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা গাড়ি এসে রাস্তার সব কাঁদা ওর গায়ের উপর মার’লো।মেহেরিনের মেজা’জ মুহুর্তেই বিগড়ে গেলো।কি অভদ্র চালক, দেখে গাড়ি চালাবে না নাকি?মেইন রোড ছেড়ে তাকে ফুটপাতের এতো কাছে এসে গাড়ি চালাতে কে বলেছে!

মেহেরিন ফিরে তাকাতেই গাড়ি চালক গাড়ি থামালো।
গাড়ির কাঁচ সরাতেই নিঝুম কে দেখে রৌফ কে’টে পড়লো।সে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো গাছের আড়ালে, মেহেরিন শান্ত গোছের মেয়ে কিন্তু রেগে গেলে থামাতে বেশ বেগ পেতে হয়।

নিঝুম গাড়ির কাঁচ নামিয়ে যেই না স্যরি বলতে যাবে তখনই মেহেরিনের তোপের মুখে পড়লো।
মেহেরিন আঙুল উঁচিয়ে ধম’কে বলে উঠলো–,,এই নিজেকে কি মনে করুন বলেন তো, রাস্তা কে কি নিজের প্রাইভেট সম্পত্তি মনে করেন?যেমন খুশি শুধু চালাতে পারলেই হয়,আশেপাশে কেউ আছে কিনা খেয়াল করবেন না?অদ্ভুত মানুষ, বিরক্তকর একেবারে কি হাল করেছেন আমার,আপনারা তো ভাই গাড়ি কিনে নিজেকে কি না কি মনে করেন।ম্যানার”লেস কোথাকার!

নিঝুম বেআ”ক্কেলের মতো শুনলো,মেয়েটা অযথা তাকে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিচ্ছে আর সে ও কিনা শুনেই যাচ্ছে!সে তো আর ইচ্ছে করে দেয়নি,রাস্তায় পানি জমেছে খেয়ালই করেনি।
মেহেরিন কথা গুলো শুনিয়ে জামা ঝাড়তে ঝাড়তে সেখান থেকে সরে আসলো।নিঝুম হতাশ হয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

মেহেরিন আসতেই রৌফ হো হা করে হেসে বললো–,,ছোট বইন তোমার জন্য কাল একটা বড় সড় সারপ্রাইজ আছে!

মেহেরিন গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো–,,দেখো ভাইয়া এমনিতেই পাত্র পক্ষ দেখতে আসা সারপ্রাইজের থেকে কোনো অংশে কম না!
———
আরুশি বসে আছে ডক্টর শেলির সামনে, শেলির সাথেই অন্য একটি মেয়ে।
আরুশি আশেপাশে রনি কে দেখলো না,ছেলেটাকে কোথায় নিয়ে গেছে কে জানে,তার মনটা কেমন কু ডাকছে, এই একজন মানুষই ছিলো যাকে আরুশি আপন মনে করতো নিজের ভাইয়ের মতো ছিলো ছেলেটা,এই নি”র্মম পৃথিবী আজ হয়তো এ মানুষটিকেও তার থেকে কে’ড়ে নিলো।
আরুশি কে চুপচাপ দেখে শেলি ধ’মকের সুরে বললো–,,এই মেয়ে কথা কানে যায় না তোর?বল কার কাছে আছে ওই সকল রিপোর্ট!

ডক্টর শেলির উদ্দেশ্য পাশে থাকা মেয়েটি বলে উঠলো–,,দেখুন শেলি আপনি যা করার দ্রুত করেন।ভাইয়া আপনাকে ওয়া”র্নিং দিয়েছে,যদি আপনার জন্য তার কোনো ল’স হয় আপনাকে ছেড়ে দিবে না একদম!

শেলি বিরক্ত হলেন, এই ভাই বোন দুইটাই শয়’তান!বোনটা তো দুশ্চ”রিত্র আর ভাইটা অমা”নুষ।

শেলি বলে উঠলেন–,,দেখো শিলা তোমার ভাই কে বলে দাও যদি বিশ্বাস না থাকে আমার সাথে কাজ না করতে।বেই’মানি ডক্টর শেলি করে না!

শিলা বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো–,,দেখুন ডায়লগ অন্য কোথায় গিয়ে মার’বেন আমাদের কাজ নিজেদের কে সেই’ফ করা আপনার জন্য নিজেদের কে বিপ’দে ফেলতে তো পারবো না আমরা!

এর মধ্যে আরুশি হেসে বললো– ছি!তোদের থেকে ভালো বিশ্বাস মুরগি শেয়াল কে করে।

শিলা আরুশির মুখ চেপে ধরে বললো–,,এই বেশি পক পক করবি না এখনই উপরে পাঠিয়ে দিবো!

আরুশি হেসে বললো–,,তুই একটা পোলার জন্য পাগ”ল ছিলি না?জানোস সেই পোলা এখন বউ সন্তান নিয়া সেই সুখে আছে!

শিলার হাত আপনাআপনি থেমে গেলো সে বলে উঠলো–,,নিখিলের সন্তান আছে?

আরুশি আর কিছু বললো না।ডক্টর শেলি আরুশির থেকে কোনো কথা বের করতে পারলো না।রাগে সে আরুশিকে পানির ট্যাংকের ভিতর চুবি”য়ে দিলো!আরুশি হাসতে হাসতে বললো–,,মে’রে ফেলার হলে একবারে মে’রে ফেল এতো নাটক করছিস কেনো?যত যাই করিস না কেনো কিছুতেই সেই ফাইলের কথা বলবো না আমি।মানুষের জীবন বাঁচানোর বদলে যে ডক্টর মানুষের জীবন কে’ড়ে নিতে উঠে পড়ে লাগে, তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই,আমি যদি ম’রেও যাই অন্য কেউ হলেও তোকে শা’স্তি দিবে তুই যার কথায় এসব করেছিস ওর মৃ”ত্যু হবে সবচেয়ে ভয়ং”কর!যত গুলো মানুষ কে কাঁদিয়েছিস তোরা সবার অভিশা”পে ধ্বং”স হয়ে যাবি তোরা!

শিলা রাগে দুঃখে ইচ্ছেমতো চ”ড় থা”প্পড় মা’রে আরুশির মুখে,মেয়েটার রোগা পাতলা শরীরটা নেতিয়ে পড়ে ট্যাংকের মুখে।কোঁকড়া চুল গুল ভিজে চুপসে যায় সেখানেই,তবুও মলিন মুখে হাসিটা লেগেই থাকে!
————
নিখিলের সাথে ত’র্ক করছে মিহির,সে আজ বেশ চ”টে আছে,না মানে কোনো কথা ওর বোনের জন্য সে এখনো বিয়ে করতে পারছে না, আর এদিকে নিখিল তার ছোট ভাইয়ের বিয়ের খুশিতে তাকে মুড়ি খাওয়াতে নিয়ে যেতে চাইছে,এসব অবিচার কি মেনে নেওয়া যায়!

নিখিল হাই তুলে বললো–,,তুই বৃষ্টি কে রাজি করা আমি তো বিয়েতে অমত করছি না!

মিহির রেগে বললো–,, চুপ হারা”মজাদা! তোর দোষে এখন তোর বোন বিয়ে প্রেম এসবে বিশ্বাস করে না আমি আছি মহা জ্বা’লায়,প্রেম তো না একদম বি”ষ কাটা হয়ে গলায় আটকে আছে!

নিখিল বলে উঠলো–,,আচ্ছা নেহা কে বলছি বৃষ্টিকে বুঝাতে!

মিহির কপাল দেয়ালে ঠু’কে বললো–,,আর কোনো মানুষ পেলি না,নেহা শুনবে তোর কথা?এ ও সম্ভব!

নিখিল ভাব নিয়ে বললো–,,মা শুনবে না মানে আমার মেয়ে আছে না মাকে টাইট দেওয়ার জন্য মেয়েই যথেষ্ট!

মিহির হতাশ হয়ে বললো–,,কি কপাল আমার,বন্ধু বিয়ে করে বাপ হয়ে গেলো আমার কপালে শা’লা বউই জুট”লো না।তার উপরে আরেক বন্ধু ইউনিক স্টাইলে বিয়া সাদি কইরা ফেললো।হায় হায় আমার কপালে কি বিয়ার ফুল আর ফুটবে না!

বৃষ্টি আর জেরিন আসলো তখনই,বৃষ্টি বলে উঠলো–,,ভাইয়া তুমি যাও তো নেহা তোমাকে ডাকছে, রেগে আছে দেখলাম।

জেরিন বললো–,,মিহির ভাই তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো,যাও তো নিঝুম ভাইয়া কে একটু রেডি করিয়ে দাও!

মিহির বৃষ্টির দিক তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–,,জেরিন তোর বোনকে বলে দে এটাই লাস্ট ওয়া”র্নিং,পরের বার না তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো আমি,কপাল পো’ড়া তো তাই ছোট ভাইকে বিয়ের জন্য রেডি করাতে হচ্ছে!

সাব্বির হুড়োহুড়ি করে এসে বললো–,,ইশ!মিহির ভাই আমার ভাইটাও যদি তোমার মতো করে তার ছোট ভাইটাকে বিয়ের জন্য রেডি করে দিতো তাহলে কতো ভালোই না হতো!

জেরিন নাক ছিটকে বললো–,,আন্টি যদি শুনে না তুই বিয়ে করার জন্য এমন ছেছ”ড়ামি করছিস তোর সারাজীবনের জন্য বিয়ে করা বন্ধ করে দিবে!

সাব্বির বললো–,, তোর মুখ দিয়ে কি একটু ভালো কথা বের হয় না বইন?এতো শত্রু”তা কেন তোর আমার সাথে?নাকি তুই মনে মনে আমার মতো চা”র্মিং কিউট ছেলেটার উপর ক্রাশ খেয়েছিস।যার জন্য অন্য কারো হতে দিতে চাস না!

জেরিন তওবা কে’টে বললো–,,আল্লাহ মাফ করুক,তুই আবার ক্রাশ?বাঁশ খাওয়ার সখ জাগে নাই আমার, দূরে গিয়া ম”র!

সাব্বির বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বললো–,,হায় কি কষ্ট, বুকে লাগে রে!

রোহান এসে বললো–,,এই যে সব ড্রামাবা”জের দল দ্রুত নিচে চলো,ওইদিকে বড়সড় সিনেমা চলছে,নিখিল ভাই আর তার শ্বশুর তো স্টুডিও খুলে বসবে দুদিন পর।

সাব্বির দ্রুত ভঙ্গিতে বললো–,,কি হয়েছে বল তাড়াতাড়ি!

নিশাত সিড়ি বেয়ে এসে বললো–,,আরে সিনেমা তো শেষ হয়ে যাচ্ছে!
সবাই মিলে ছুটলো নিচে নিশ্চিত মজার কিছুই দেখার আছে!
চলবে?

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১৮
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিখিল ভরা লিভিং রুমে এক পায়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে,তার সামনে দু হাতে কোমর জড়িয়ে নামিরা খিলখিলিয়ে হাসছে।নেহা বিরক্ত হয়ে দুজনের দিক তাকিয়ে। বাড়ির বাকি বড়রা সেই কান্ড দেখে হেসেই চলেছে।
ছোটরা সব তখনই সিঁড়ি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে নামলো,একজন অন্যজনের উপর পড়ে যাওয়ার উপক্রম।

সাব্বির তো এসেই নামিরার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,,সাব্বাশ!এই না হলে আমার মেয়ে,একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে এমপি মশাইয়ের।একটা স্টরি তো বান’তাহে,কি বলো বাকিরা!

ছোটরা সব মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো ঠিকই,কিন্তু নিখিলের তাকানো দেখে চুপসেও গেলো।নেহা তো শাসিয়ে বলে উঠলো–,,এই ওদের চোখ রাঙা’চ্ছেন কেনো?দুই বাপ মেয়ে মিলে রুমের বারোটা বাজানোর সময় মনে ছিলো না?আমার কাছে পি’য়ার আসা সব প্রো’ডাক্ট দুজন মিলে নষ্ট কেনো করেছেন?

নিখিল কিছুটা জোর গলায় বললো–,,তোর জামাইয়ের কি টাকা পয়সা কম পড়ে গেছে?তিন বেলা খেয়ে পড়ে থাকতে পারবি না তার টাকায়,তোকে ভালো করে বললাম, না তুই উল্টো ভাব নিয়েছিস,আমার মেয়েকে সময় না দিয়ে কাজ করা, বন্ধ তোর।তাই ন’ষ্ট করেছি।

নামিরা পাশ থেকে বলে উঠলো–,,আমিও পাপা কে হেল্প করেছি মাম্মা!

নেহা রেগে বললো–,,তাহলে তোমার ও শা’স্তি পেতে হবে এখন!

নিখিল চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,খব”রদার নেহা আমার মেয়ে কে যদি কিছু বলেছিস তুই।

নেহা তেড়ে এসে বললো–,,কি করবেন আপনি?হ্যাঁ আমার মেয়ে আমি যা খুশি বলবো!
নিখিল নামিরা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো–,,আমার মেয়েকে একদম ব”কা দিবি না!

নেহা রেগে তেড়ে গেলো,তাকে পেছন থেকে আটকে দিলো সাহারা বেগম,তিনি নেহা কে শান্ত করে বললো–,, আহা মা রাগ করছিস কেনো।তুই একটু শান্ত হয়ে বস তো এখানে।

সাব্বির ততক্ষণে নিখিলের কান ধরা ছবি, বাবা মেয়ের আর একটি সুন্দর ছবি তুলে পোস্ট করে দিলো ফেইসবুকে,ট্যাগ করলো নিখিল কে।

মুহুর্তেই নোটিফিকেশনের টু টাং আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো।আর নিখিল সে তো রেগে সাব্বির কে তাড়া করছে।মুগ্ধ চোখে সব দেখে চলেছে বাড়ির বড়রা কতোদিন পর বাড়িতে আনন্দ উল্লাসে ভড়ে উঠেছে, তাহমিদা,রাহা চলে আসলেই পরিবার টা আগের মতো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাবে আবার!

———
ইরফান পৌঁছেছে একটা পুরনো পরিত্য”ক্ত বাড়ির সামনে,এখানেই সেই গাড়িটি এসে থেমেছে, যে গাড়িতে আরুশি কে দেখা গিয়েছিলো।তাও সিসি”টিভি ফুটে’জ টা চার দিনের পুরনো,চারদিনে ওই অমা’নুষ গুলো মেয়েটার কি হাল করেছে ভেবেই ইরফানের কপাল ঘেমে উঠছে বার বার,এতোদিন তো কম কেইস সলভ করেনি কিন্তু আজ কিনা একটা অপরিচিত মেয়ের জন্য সে ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে,মনটা কেমন যেনো করছে,নিজেকে যথাসম্ভব ঠিক রাখলো সে,অপরা’ধীদের কাছে হোক বা অন্য যে কেউ, কারো সামনেই দুর্বলতা প্রকাশ করা উচিত না!

আশেপাশে সব জায়গা পুলিশ দ্বারা আবৃত,ইরফান সাথে সহকারী এক অফিসার ঢুকলো ভিতরে,ইরফানের মনের ভিতরটা অস্থির হয়ে উঠলো, ভিতরের গা ছমছমে পরিবেশ দেখে।ভেতরে ঢুকতেই একটা রুম থেকে ভেসে আসলো কারো গোঙা”নির শব্দ,তীব্র ব্যাথায় কেউ ছ’টফট করছে!

ইরফান দেরি না করে সেদিকে দৌড়ে গেলো,দরজা ধাক্কা দিলো খুললো না,আশেপাশে খুঁজে বড় পাথরের টুকরো নিয়ে এলো দরজায় বার বার আঘা”ত করার পর খুলে গেলো।
ভাঙ্গা দরজার ফাঁ’কে এ’প্রোন পরিহিত কাউকে দেখতে পেলো ইরফান দ্রুত ভিতরে গেলো দুই তিন জন পুলিশ।

ডক্টর শেলি ঘাব”ড়ে গেলো,পুলিশ কে কে খবর দিলো, এই মেয়েটা পুলিশ কে আবার সব ইনফরমেশন দিয়ে দেয় নি তো?ভয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো শেলির কপালে, পালানোর পথ খুঁজলো সে কিন্তু পেলো না।

ইরফান কয়েক মুহুর্ত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আরুশি কে দেখে,মেয়েটার মুখ নীল বর্ণ ধারন করছে,মুখের বিভিন্ন অংশ কে’টে রক্ত শুকিয়ে গেছে।চোখ জোড়া বন্ধ তার,চারপাশে অধিক পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ খোলার চেষ্টা করলো, ঝাপসা দেখলো সবকিছু তার মনে হলো সে পুলিশ দেখছে,তার মানে কি ইরফান তার কথা বিশ্বাস করে এই অব্দি এসেছে?অজান্তেই মলিন হাসলো মেয়েটা হাত ছেড়ে দিয়ে ডুবে গেলো ট্যাংকের ভিতর!

ইরফান আঁতকে উঠলো, চেঁচিয়ে বলে উঠলো ট্যাংকের ভিতর থেকে ওকে নামাও কেউ!
সে নিজেও উঠে গেলো সেখানে,শেলির পালানোর পথ নেই,তাকে এরে’স্ট করা হয়।

আরুশির দেহ টা পানি থেকে বের করেই আকষ্মিকভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইরফান।মনে হচ্ছিলো কিছু সময়ের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তার!

ইরফান আরুশির নাক গলায় চেক করে দেখলো এখনো বেঁচে আছে,সে মেজেতে বসেই বড় বড় শ্বাস নিলো!
ইরফানের বেহা’ল দশা দেখে তার সহকারী কি বলবে বুঝতে পারলো না,মেয়েটা কি স্যারের কিছু হয়?জিজ্ঞেস করার সাহস ও করতে পারছে না।

ইরফান ক্লান্ত শরীলে আরুশি কে কোলে তুলে নেয়,এক প্রকার ছুটে যায় গাড়ির কাছে মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে, ফিরবে কখন সে চিন্তায় চিন্তায় ইরফান ভিতরে ভিতরে উত”লা হয়ে উঠছে!

আরুশি কে নিয়েই হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।মেয়েটার জ্ঞান ফেরা”র পর যখন জানবে রনির লা”শ পাওয়া গেছে তখন না জানি তার কি অবস্থা হয়।ইরফানের ধারনা রনি আরুশির ভালো বন্ধু ছিলো।

ইরফান হসপিটাল থেকে ছুটলো থানায়,সেখানে গিয়ে তাকে শেলি কে জিজ্ঞাসা বাদ ও করতে হবে,কার হয়ে কাজ করতো এই মহিলা তাদের যথা দ্রুত সম্ভব জানতেই হবে!
————-
নেহা রাগ করে বসে আছে,এই লোকটা কি পেয়েছে কি।আগে তো যখন খুশি প্রেম দেখাতো যখন খুশি অবহেলা করতো।আর এখন এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে যেনো সে দিন দুনিয়া ভুলে গেছে তার একটাই কাজ সেটা হলো নেহা কে বিরক্ত করা।নেহা মানছে তাদের দুজনের মধ্যেই ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে কয়েকবার,ভুল যেমন নিখিলের ঠিক তেমনি তার ও ভুল আছে,তবে নিখিল?সে তো ওই শিলা কে সব সময় বেশি গুরুত্ব দিয়েছে,তার জন্যই ওই মেয়েটা তাদের মাঝে আসতে পেরেছে।নিখিল ও বললো তারা ভালো বন্ধু তার বন্ধুর কোনো দোষ নেই সব দোষ নেহার, নেহা কি রাগ করা উচিত না?নাকি শুধু নিখিলই রাগ করতে পারবে অন্য কেউ পারবে না,মেয়েটার সাথে তার কতো গুলো ছবি, সে সম্পর্কে সামান্য প্রশ্ন টুকু করার অধিকার নিখিল নেহা কে দেয়নি।আর এখন এমন ভাব করছে সে খুব অনুতপ্ত, তার শিক্ষা হয়েছে নেহা যতদিন মাফ না করবে তাকে মেনে না নিবে ততদিন সে নেহার সাথেই বসে থাকবে!
দরকার পড়লে সব ছেড়ে দিবে,কেনো ভাই?আগে তোমার এতো দরদ কোথায় ছিলো?এখন এসব গ্রহন করবে না নেহা।

নেহা রুমের ভিতর বসে মোবাইলে নিখিল আর নামিরার ছবি দেখছে,তখনই নোটিফিকেশন আসলো,নেহা দেখলো নিখিল কিছু একটা পাঠিয়েছে।

নেহা নিখিলের প্রোফাইলে ঢুকতেই পর পর ছবি গুলো তার সামনে ভেসে উঠলো তার সাথে আরো একটা দুই মিনিটের ভিডিও।

নেহা সব কিছু দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।শিলা মেয়েটা এতো বা’জে কাজ করতে পারলো কি করে?

শিলার সাথে অন্য একটি ছেলে যার সাথে সে অন্ত’রঙ্গ মুহুর্ত পার করছে।সে সময়কার তোলা ছবি গুলোতেই নিখিলের ফেইস বসিয়ে দিয়েছিলো!
নেহা ফোন হাতে নিয়েই চুপচাপ বসে তখনই দরজা লাগানোর শব্দ হলো নেহা পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিখিল।

নেহা কিছু বললো না,নিখিল এসে নেহার পাশে বসলো,ওর হাত দুটি নিজের দু হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো–,,সেদিন যদি আর একটু থেকে যেতি আজ আমাদের মাঝে এতোটা দুরত্ব থাকতো না।

তুই তো জানিস তোর ভালোবাসার মানুষ টা কেমন,সে রাগের মাথায় কি থেকে কি বলেছে সেটা গায়ে মেখে এভাবে চলে যেতে পারলি তুই?এতটুকুও বিশ্বাস ছিলো না আমার উপর?মানছি আমি কথায় কথায় তোকে অবিশ্বাস করতাম,এর পেছনেও কারন ছিলো আমার সব সময় মনে হতো তোকে হারিয়ে ফেলবো,তুই অন্য কারো হয়ে গেলে আমি কখনো সেটা মেনে নিতে পারবো না।তাই তো কারো সাথে দেখলেই আর মাথা কাজ করতো না আমার।
ওইদিন রেগে থাকার পেছনে মূল কারন ও কিন্তু শিলা আর ওর ভাই।ওইদিন ওর ভাইয়ের সাথে আমার ঝা”মেলা হয়, আমি রাজনীতি ত্যাগ করি।বাড়ি আসার পর তুই আবার সেই শিলার সাথে ছবি গুলো দেখালি,বল ওই সময় টাতে তোর মাথা কাজ করতো?আমি জানি ভুল করেছি,বুঝতে পেরে তো তোর কাছেই ছুটে এসেছিলাম, জানিস তোকে যখন খুঁজে পাইনি তখন নিজের ভেতরটা কেমন করছিলো,সারারাত প্রতিটা রাস্তায় তোদের খুঁজেছি পাইনি।আমি তোকে হারানোর ভয়ে থাকতাম সেই তুই আমাকে একা রেখে হারিয়ে গেলি, বল দোষ টা কি একার আমার?তোর কোনো দোষ নেই!

নেহার চোখে জল,নিখিলেরও তাই ছেলেটার চোখ লাল হয়ে এসেছে।
নেহা এবার শব্দ করে কেঁদে ফেললো বলে উঠলো–,, শুধু নিজের টাই তো বলবেন আপনি। আমার পাশে যেমন অন্য কাউকে আপনার সহ্য হয় না,আপনি কি করে ভাবলেন আপনার সাথে কাউকে দেখে আমি ঠিক থাকতে পারবো?আর ওই দিন,আমি কতোটা খুশি ছিলাম আপনি জানেন?ওইদিন আমি জেনেছিলাম আমার নামিরা আমার কাছে আসবে,আমরা বাবা মা হবো নিখিল,আপনাকে কথাটা বলার জন্য কতোটা অপেক্ষায় ছিলাম আমি।আর সেই মুহুর্তে যদি আমি আপনাকে কারো সাথে ওই রকম অবস্থায় দেখি কিভাবে সহ্য করতাম কিভাবে আমি বিশ্বাস করতাম,আমার বিবেক বুদ্ধি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।তার উপর আমি ভেবেছিলাম আপনি এসে বলবেন সব কিছু মিথ্যা, আমার বিশ্বাসই ঠিক আমার নিখিল কখনো আমার ছাড়া অন্য কারো হতে পারে না।কিন্তু আপনি তা করেননি আপনি আমার দুঃ”স্বপ্ন কে বাস্তবতায় রুপান্তর করে দিলেন।এসে বললেন এসব সত্যি, তার পরও কি করে আমি আমার সন্তান কে নিয়ে আপনার সাথে থাকতাম বলুন তো?যেখানে পুরোপুরি আপনি অন্য কারো হয়ে গেছেন,আমাকে আর আমার মেয়েকে তো কখনো মেনেই নিতেন না আপনি,তাই চলে গিয়েছিলাম,বেশি করেছি গিয়েছি আবার চলে যাবো,থাকবো না আপনার সাথে!

নিখিল নেহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,ভালোবাসি তো,প্লিজ থেকে যা না প্রাণপাখি!তোকে ছাড়া কি করে থাকবো বল তো,তুই ও তো থাকতে পারবি না।এই বোকা টাকে ছেড়ে যদি এবারও চলে যেতে চাস তাকে একেবারে মে’রে ফেলে যাবি।না হয় তোকে থাকতে হবে,তুই চলে গেলে সে এমনিতেই ম’রে যাবে।যদি চাস আমি ম’রে যাই,আমার মৃ”ত্যুতে তোর কিছু যায় আসে না তাহলে চলে যা আটকাবো না!

নেহা নিখিল কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,এই একদম আজে”বাজে কথা বলবেন না!

নিখিল নেহার মুখ দু হাতে জড়িয়ে বললো–,, বল আরেকটা সুযোগ দিবি?ভালোবাসবি আমায়?আবদার টুকু রাখবি না বল!

নেহা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বললো–,, দেখুন একদম ইমোশনাল ব্লা’কমেইল করবেন না।আমি মোটেও আপনার কথায় গলবো না।

নিখিল নেহার গালে চুমু খেয়ে বললো–,,তাই?মেয়ের মা হয়ে গেছিস এখনো মিথ্যা বলা শিখতে পারিস নি!

নেহা নিখিলের দিক বাঁকা চোখে তাকালো। নিখিল বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো–,,এবাবে তাকিয়ো না বউ আমার ভীষণ প্রেম প্রেম পায়!

নেহা কিছু বলছে না দেখে নিখিল হেসে উঠলো, নেহার কপালে গভীর চুম্বন একে দিয়ে বললো–,,ভালোবাসি অভিমানী, অভিমান ভাঙ্গলে এই অধম কে একটু ভালোও তো বাসতে পারেন কথা দিচ্ছি আর কখনো কষ্ট দিবো না!

নেহা তাকিয়ে আছে নিখিলের দিক, এবার নিজ থেকেই জড়িয়ে ধরে বললো–,,আর যদি আমার সাথে ভাব মারা’স তুই নিখিল তোরে আমি মে”রে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো।আমারে কষ্ট দিয়ে তো তুমি সুখ পাও শান্তি তে থাকো তাই এরকম করো বুঝি না মনে করছো!

নিখিল নেহা কে জড়িয়ে রেখেই বললো–,,জামাই কে তুই তোকারি করছিস কেনো?আমি তোর বড় না।

নেহাও বললো–,,বউ কে তুই তোকারি করছেন কেনো?সে ভালোবাসার জিনিস না?

নিখিল দুষ্টুমি করে বললো–,,আদর করার জিনিস, আদর নিবি?

নেহা নিখিলের পিঠে মার’লো কয়েটা নির্লজ্জ ছেলে একটা।

তখনই দরজায় নক পড়লো–,,এই তোরা কি যাবি না নাকি?নেহা নামিরা টাকে তো রেডি করে দে।মেয়েটা চাচ্চুর বউ দেখতে যাবে বলে বলে পা”গল করে দিচ্ছে!

নিখিল বলে উঠলো–,,আহা মা,বউয়ের রাগ টা তো অন্তত ভাঙ্গাতে দিবে নাকি,তোমাদের জ্বালা”য় যদি আমার বউটা আবার চলে যায় তখন আমার মতো মিসকিনের কি হবে!

হামিদা বেগম দরজার ওপার থেকে বললো–,,চুপ বদমা”ইশ!মাকে ও ছাড় দেয় না বের হ রেডি হয়ে সাহিলদের বাড়িতে যেতে হবে।মেহেরিনের সাথে সাথে সাহিলের বউ কেও দেখে আসবো!

নেহা এসে দরজা খুলে দিলো,হামিদা বেগম কে বলে উঠলো–,,বড় মা তোমার এই ছেলের মুখে ক”স্টিপ লাগিয়ে নিয়ো, না হয় মানুষের বাড়িতে গিয়ে কখন কি বলবে আল্লাহ মালুম!

নিখিল তেড়ে এসে বললো–,,এই দেখ নেহা,আমার মুখ নিয়ে কোনো কথা বলবি না।

নামিরা এসে বললো–,,পাপা আমি রেডি হবো,সাজিয়ে দাও।

নেহা বললো–,, আসো মাম্মা করে দিচ্ছি।

নামিরা দু দিকে মাথা নেড়ে বললো–,,না না পাপার কাছে সাজবো!

নেহা বাবা মেয়েকে ছেড়ে নিচে চলে গেলো।
——-
আগে ভাগে রেডি হয়ে চলে এসেছে সাব্বির এসেই সোফায় বসে গুন গুন করে গান গাইছে,জেরিন এসে বললো–,,শা”লার একটা জামাও পছন্দ হইতাছে না!

সাব্বির ভ্রু কুঁচকে বললো–,,পছন্দ দিয়ে কি করবি,একটা পড়লেই হয়।তোরে তো আর বিয়ে দিতে নিতাছি না।

জেরিন বিরক্ত নিয়ো বললো–,,চুপ থাক তো বিয়ে করার জন্য কি মেয়েরা সাজে নাকি!

সাব্বির মোবাইলে মনোযোগ দিয়েই বললো–,,শাড়ি পড় তাইলে!
জেরিন খুশি হয়ে বললো–,,বন্ধু তুই সত্যি আমার ভালো বন্ধু থাং”কু থাং”কু।যাই রেডি হয়ে আসি।

জেরিন চলে যেতেই সাব্বির মুচকি হাসলো।

ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে রোহান আর তোহার ঝগ’ড়া দেখছে বৃষ্টি। সে তৈরি হয়েই বসে ছিলো।

তোহা ঝগ”ড়া করে নিজেদের গেইটের ভিতরে ঢুকে পড়লো।রোহান ও মুখ ঝা’মটা মে”রে বাড়িতে ঢুকলো।
বৃষ্টির ধ্যা’ন ভাঙ্গলো মিহিরের কন্ঠস্বরে,মিহির বৃষ্টির কানের নিচে এসে ভাও করে উঠলো।

বৃষ্টি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মিহির বলে উঠলো–,, ভালোবাসবি আমায়?

বৃষ্টি মলিন মুখে বলে উঠলো–,,আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে মিহির ভাই কেনো আমার পিছে পড়ে আছেন বলুন তো?মামি বললো আপনার জন্য ভালো পাত্রী পেয়েছে,নিঝুম ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে গেলেই আপনার টার কথা তুলবেন।বাবা মা বলছিলো তখনই শুনলাম,যাক ভালোই হয়েছে আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

মিহির যেনো আকাশ থেকে পড়লো তার বিয়ে মানে সে তো কিছুই জানে না!

বৃষ্টি কথাটা বলেই সেখান থেকে ঘুরে মুচকি হাসলো ব্যাটা এবার বসে বসে কাঁদো। কথায় আছে না হাসির পর কান্না আর কান্নার পর হাসি!আপনি ও না হয় হাসবেন পূর্ণতার হাসি এখন একটু কাঁদলে ও ক্ষ’তি নেই!

বাড়ির সবাই তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হলো নিঝুম নিজেকে কোর”বানির গরু মনে করছে,তাকে যেভাবে ট্রি’ট করছে সেতারা বেগম এটা না ভেবে তো উপায় নেই,যেনো বিয়ে করাতে না বিয়ে দিতে নিয়ে যাচ্ছে নিঝুম কে।বেচারা নিঝুম কে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে সাব্বির!

সাহারা বেগম তাহমিদা বেগম কে ফোন দিয়ে বললো–,,
তুই কি আসবি ছোটো?আমি কিন্তু ছেলের বিয়ে বন্ধ করে দিবো বলে দিচ্ছি।রাহা টা বড় হয়ে গেছে না ওকে বল ওর মেজো মা কথা বলবে।
সাহারা বেগমের জোড়াজুড়ি তে তাহমিদা বেগম আর রাহা আসতে রাজি হলো,মোবাইলের অপর পাশ থেকে শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,,বউ আর মেয়ে আসবে আমি কি না এসে থাকতে পারি!

সেতারা বেগম কপাল চাপড়ালো ছেলেটা তার মানুষ হলো না!
চলবে…