#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_১০
#write_nahida_islam
এবার শুভ্র গাড়ি থামিয়ে অহনার মুখ চেপে ধরে,
-ঐ ছেলেদের সাথে কি কথা বলতেছিলি।
শুভ্র বেশ জোরে ই চেপে ধরেছিলো। অহনার চোখ দিয়ে স্রোতের মতো পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। এটা থেকে শুভ্র ছেড়ে দেয়। চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
-সরি অহনা,আমি একটু বেশি ই রিয়েক্ট করে ফেলেছি। মাফ করে দেও প্লিজ। আর এমন করবো না।
-এমন করবেন না কেনো? মেরে ফেলুন আমাকে। আপনি নিজের চোখে ই তো দেখেছেন ছেলেগুলো ইচ্ছে করে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে। আমি তো কোনো কথা বলিনি। তারপর ও আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করেছেন।
-সরি৷ আমার বার বার ঐ দৃশ্যটা ই মনে পড়ছে তাই আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।
-কি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেননি হ্যাঁ। আপনি আমার কে যে এতো জেলাস ফিল করছেন।
-সব কথা তোমাকে বলতে হবে?
অহনা ভ্রু কুচকুচে জিজ্ঞেস করলো,
-তো কাকে বলবেন?
শুভ্র গাড়ি চালাতে চালাতে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-বিয়ে করার পর আমার বউকে বলবো।
-তাহলে বউ কোথায় নিয়ে আসুন। আপনার বউ আপনার গাড়িতে বসুক। আমাকে আপনার গাড়িতে নিয়ে ঘুরছেন কেনো?
-তা ও তোমাকে বলবো না আমার বউকে বলবো।
-আপনার বিয়ে করার এতো শখ কেনো।
-এটাও তোমাকে বলবো না আমার বউকে বলবো।
অহনা এবার বেশ রেগে গেলো। রেগে গিয়ে বললো,
-আমাকে গাড়িয়ে থেকে নামিয়ে দেন। থামান গাড়ি।
-কেনো নামিয়ে দিবো তোমাকে?
-এটা আমি আমার জামাইকে ই বলবো আপনাকে না।
-আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো।
-এটাও আমার জামাইকে ই বলবো।
শুভ্র গাড়ি থামিয়ে বললো,
-আচ্ছা বলো, এখন চলো খেয়ে আসি।
অহনা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতে ই দেখলো,
সুন্দর একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে এসে দাড়ালো। বড় বড় অক্ষরে লিখা লেক পার্ক ফুড জোন।
-এখানে কেনো এসেছি আমরা।
-খাবার না খেয়ে ই বাসায় চলে যাবে নাকি?
-আপনার না কি ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। যার কারণে দ্রুত চলে এসেছেন?
শুভ্র হেসে বললো,
-ঐখানে থাকলে ভালো হতো তাই না তুমি আরেকটু সময় ঐ ছেলেগুলোর সাথে কথা বলতে পারতে।
-হ্যাঁ, আপনি ও আরেকটুখানি সময় নয়নার সাথে কাটাতে পারতেন।
-তোমার মত বদ মেয়ে আমি আর একটা ও দেখিনি।
-নিন এখন ভালো করে দেখে নিন।
-গাড়ি থেকে নামবে নাকি কোলে তুলে নিতে হবে।
কথাটা বলার সাথে সাথে অহনা গাড়ি থেকে নেমে গেছে। রেস্টুরেন্টের ভেতরে দুইজন একসাথে ঢুকে, অহনা চারদিকে চোখাবুলিয়ে দেখে নিচ্ছে। মুলত রেস্টুরেন্টে টা লেকের উপরে করা। লেকের চারপাশে গোল্ডেন কালারে লাইট দিয়ে সাজানো। আর ভেতরে বেশ কয়েকধরনের কালারিং লাইটের কম্বিনেশনে ডেকোরেশন করা।
-অহনা।
অহনা আনমনে বললো,
-হুম
-কি দেখছো এতো।
-রেস্টুরেন্টে টা খুব সুন্দর।
-তোমার ভালো লেগেছে।
-হে অনেক ভালো লেগেছে।
শুভ্র টেবিলে গিয়ে বসতে ই অহনা বলে উঠলো,
-কয়টা বাজে দেখেন। আমার বাসায় যেতে হবে। যা অর্ডার দেওয়ার দ্রুত অর্ডার দিন প্লিজ।
-আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি, তুমি অর্ডার দেও।
অহনা মেনু কার্ডটা নিয়ে বললো,
-আমার কিছু ই খেতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন।
শুভ্র মেনু কার্ডটা হাত দেখে নিয়ে ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস অর্ডার দিলো।
অর্ডার দেওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যে ই খাবার চলে আসে। শুভ্র খাবার শেষ করে বলে,
-মনে করো রেস্টুরেন্টে টা তোমার। তখন তোমার কেমন অনুভব হবে।
-এসব মিথ্যা কথা আমি অনুভব করতে পারবো না। এটার মালিককে বলেন দিয়ে দিতে আমাকে তখন আমি অনুভব করতে পারি।
-মালিক তো তোমার সামনে ই বসা তুমি বললে সব দিয়ে দিবে।
অহনা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,
-সত্যি এতো সুন্দর রেস্টুরেন্ট আপনার।
-এমন ভাব করছো যেনো আমার রেস্টুরেন্ট থাকতে পারে না। অনেক হয়েছে। চলো উঠা যাক।
গাড়ির সামনে গিয়ে দেখলো গাড়িতে একটা লোক বসা।
অহনা কিছুটা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-উনি কে?
-ড্রাইভার। উনাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি হলো। তোমার মুখে বেশ জোর আর কোথাও কিছু নেই।
-আপনার সমস্যা কি তাতে?
-আমার সমস্যা না তো কার সমস্যা। ঝগড়া না করে গাড়িতে উঠো প্লিজ।
দুজন ই গাড়ির পেছনের সিটে বসলো। অহনা কিছুক্ষণের মধ্যে ই ঘুমিয়ে পড়লো। শুভ্র অহনার দিকে তাকাতে ই দেখলো ঘুমিয়ে পড়েছে।
শুভ্র আসতে করে অহনার মাথাটা শুভ্রের কোলের মধ্যে রাখলো।
গাড়ির জানালা একটুখানি খোলা ছিলো। হালকা বাতাসে বার বার অহনার চুল অবাধ্যগুলো মুখের মধ্যে এসে পড়ছে। শুভ্র বার বার তা ঠিক করে দিচ্ছে।
শুভ্র একদৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। অহনা যেনো তাকে টানছে। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের দিকে টানছে৷ শুভ্র বুঝতে পারে না এই মেয়েটার মুখে এতো মায়া কেন। অহনাকে দেখলে কেনো এতো সুন্দর অনুভূতি ভেতরে নাড়া দেয়।
জীবনের শুধু একমাত্র চাওয়া অহনা ই। কিন্তু কিভাবে বুঝাবে অহনাকে তার চাই ই চাই
শুভ্র ইচ্ছে করে ঘুমন্ত অহনার কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। বেশ কয়েকটা ছবি তোলার পর অহনা চোখ খুলে। দ্রুত উঠে জিজ্ঞেস করে,
-এই আপনি আমার সাথে কি করছিলেন?
-তোমার সাথে কি করবো?
-আমি আপনার এখানে ঘুমালাম কখন?
-গাড়িতে উঠে ই তো হাতির মতো নাক ডেকে ঘুমানে শুরু করছো। আমি যদি না ধরতাম নিচে পড়ে যেতে।
অহনা রেগে বললো,
-আমি হাতির মতো নাক ডেকে ঘুমাই?
-তা আবার বলার অপেক্ষা রাখে নাকি?
-আমি হাতি হলে আপনি গন্ডার।
-আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে তোমার গন্ডার মনে হয়।
-আমাকে যে এঙ্গেল থেকে হাতি মনে হয় ঠিক সেই এঙ্গেল থেকে আপনাকে গন্ডা মনে হয়।
-এখন গাড়ির দরজা খুলে বের করে দিলে ই বুঝা যাবে কে হাতি কে গন্ডার।
অহনা আর কোনো কথা বলে না চুপ করে যায়।
-কি ভয় পেলে নাকি?
অহনা মুখে হাসি টেনে বললো,
-ভয় পাওয়ার কি আছে। আমি খুব সাহসী মেয়ে।
শুভ্র আস্তে করে ফিসফিস করে বললো, গাড়ির লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাও দেখে একটা মেয়ে দেখা যাচ্ছে, এক চোখে লাল রক্ত অন্য চোখে আগুনে ঝলসে গেছে। হাতগুলো দেখে কি লম্বা এক টান দিয়ে তোমাকে গাড়ি থেকে বের করে দিতে পারবে।
অহনা ভয়ে শুভ্রকে আবার জড়িয়ে ধরে। শুভ্র অহনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও অহনা ছাড়ে না।
শুভ্র খুব কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে। অহনার দিকে তাকিয়ে আরো বেশি হাসি পাচ্ছে তার। অবশেষে জোরে হাসি দিতে ই অহনা বললো,
-আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনি খুব মজা পান।
-হ্যাঁ।
-বজ্জাত একটা।(মনে মনে বললো)
-আমাকে মনে মনে বকা দিচ্ছো কেনো।
-ইচ্ছে হয়েছে তাই।
পাড়ার মোড়ে গাড়ি থামাতো বললো শুভ্র। গাড়ি থামিয়ে অহনাকে জিজ্ঞেস করলো,
-তোমার বাসাটা কোনদিকে। চলো হেটে ই যাই। রাত প্রায় দশটার মতো বাজে তুমি একা যেতে পারবে না।
অহনা ভয় পেয়ে বললো,
-না না আমি একা যেতে পারবো।
-ভয় পাচ্ছো কেনো, তোমার বাসায় কেউ কিছু বলবে না। আমি বুঝিয়ে বলবো।
-আমার মামি শিউর আপনাকে ভুল বুঝবে।
-ভুল বুঝলে বুঝুক আমি তোমাকে এখন একা যেতে দিবো না।
শুভ এক কথা বলে বসে আছে। অহনাকে যেতে দিচ্ছে না। তাই শুভ্রকে নিয়ে ই গাড়ি থেকে নামলো। ভয়ে ভয়ে পা বাড়াতে লাগলো। মামি যদি ভুল বুঝে উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করে দেয়, তখন কি করবে।
এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় ঢুকে অহনা। বাসায় ঢুকে ই শুভ্রকে বললো,
-কেউ দেখার আগে চলে যান আপনি।
কথাটা বলার সাথে সাথে মামি জোরে জোরে বলতে শুরু করলো কে ঐখানে?শুভ্র স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো। অহনা বার বার যেতে বললে ও শুভ্র এক পা ও নড়ে না….
চলবে
[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]