#প্রণয়
#পর্বঃ৩২
#তানিশা সুলতানা
“ইমন ভাইয়া ফালতু কথা বাদ দিন। আমার সাথে এরকম ফ্লার্ট করবেন না আপনি। তাহলে আমি ভাইয়াকে বলে দিবো।
রাগে গজগজ করতে করতে বলে তোহা। ইমন হাসে। ছাঁদের একদম শেষ সীমানায় এসে রেলিং ধরে দাঁড়ায়। তোহাও এসে ইমনের পাশে দাঁড়ায়। এরকম করার কারণ আজকে শুনেই ছাড়বে।
” বললাম তো কারণ জানলে ঠাস করে পড়ে যাইবা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ইমন।
“পড়লে পরবো। আপনাকে ধরতে হবে না। আমি আবার একা একাই উঠে চলেও যেতে পারবো।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তোহা।
ইমন ভ্রু দুইটা আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে সরু চোখে তাকায় তোহার দিকে। কখনো মেয়েটাকে ভালো করে খেয়াল করা হয় নি। সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা হয় নি এই মেয়েটার দিকে। কিন্তু আজকে চোখ দুটো আপনাআপনিই আটকে গেছে। মেয়েটার নাক বোঁচা। কিন্তু আজকে একটু বেশিই বোঁচা মনো হচ্ছে। মনে হচ্ছে হাতির পা পড়েছিলো নাকে।
চোখ দুটো বড়বড়। কিন্তু টানা টানা না। ভ্রু গুলো ছড়ানো। হাইট পাঁচ ফিট হবে না। তার কাছাকাছি হবে। একদম গোলুমলু। এতোটাই গোলুমলু যে গলায় তিনটা ভাজ পড়েছে।
শাড়ি পড়েও একে বড়বড় দেখাচ্ছে না। একদম পিচ্চি পিচ্চিই লাগছে।
ইমন শব্দ করে হেসে চোখ ফিরিয়ে নেয়। তোহা গাল ফুলিয়ে তাকায় ইমনের দিকে।
“এখান থেকে যাও তোহা। তোমার সাথে আর ফ্লাট করবো না। দুই চার বছর পরে ডিরেক্ট বিয়ে করে নেবো।
তোহার রাগ ক্রমশ বাড়ছে। ফাজলামো পেয়েছে এই লোকটা? যখন যা খুশি তাই করবে? তা কেনো? একদম লোকটার কথায় পাত্তা দেবে না তোহা। একদম না। ধান্দা বাজ একটা।
” আপনাকে বিয়ে করবো আমি? হাহহহহহ
স্পষ্ট ভাবে বলছি শুনে রাখুন।
আমার স্কুলের ওই আবির ভাইয়াকে আমার ভালো লাগে। আর ওনাকেই বিয়ে করবো।
তোহা ভাব দেখিয়ে বলে। আবির নামটা বলার কারণ চট করে অন্য নাম মনে আসে নি। আর আবিরকে উনি চিনবেও না শিওর।
তোহার কথা শুনে ইমন ফিক করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে পড়ে যাবে এমন অবস্থা।
তোহা একটু ভয় পায়। উনি কি চিনে না কি আবিরকে?
হায় আল্লাহ কি বলে ফেললো?
“সিরিয়াসলি তোহা??
ওই আবির? একবার পরিহ্মা দেবে? চোখটা একটু বাঁকা?
ওয়াও দুজনকে একদম পারফেক্ট মানাবে।
ইমন হাসতে হাসতে বলে। তোহার এবার কান্না পাচ্ছে। আর কোনো নাম পেলো না?
” ওহহ সরি আবির না। বিজয় স্যারকে ভালো লাগে। আমরা রিলেশনশিপ এ আছি।
বলেই দুলতে দুলতে চলে যায় তোহা। ইমনের হাসি থেমে যায়।
🥀🥀
এইটা কোনো কথা?
সূচক বলেছিলো গল্প করবে। কি কি করেছে এতোদিন? কেনো করেছে সব কিছু তানহাকে বলবে। কিন্তু সেই মানুষ এখন তানহার কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাও আবার গভীর ঘুম। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে তানহার। কতোখন এভাবে বসে থাকা যায়? ঘন্টা খানিক তো হবেই মহারাজ ঘুমিয়েছে। আরে ভাই তুই ঘুমবি তো বালিশে ঘুমা না। তানহার নিষ্পাপ পা টা কেনো দখল করলি? বেচারা যদি অল্প বয়সেই হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলে তাহলে তো তুই একে ডিরেক্ট ডিভোর্স দিয়ে দিবি। সে কি আর তানহা জানে না?
তানহা মুখ বাঁকিয়ে বিরবির করে বলতে থাকে আর সূচকের চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে বিলি কাটতে থাকে।
হঠাৎ দরজায় কড়া নরে। কেঁপে ওঠে তানহা।
“তানহা বেরিয়ে আসো। লান্স করবো সবাই মিলে।
ইরিন ডেকে বলে। তানহা কাচুমাচু হচ্ছে। এবার কি করবে? লোকটাকে ডাকবেই বা কি করে? সে তো নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে। এদিকে তানহার খিধেও পেয়েছে ভীষণ। সকাল বেলা এখানে আসার খুশিতে খাওয়া দাওয়াও হয় নি ঠিক মতো।
” শুনছেন,
এই যে
উঠুন না
তানহা সূচকের গালে হালকা থাপ্পড় দিতে দিতে ডাকে। সূচক নরে চরে পিটপিট করে চোখ খুলে। চোখ খুলে তানহার মুখটা দেখে এক গাল হাসে সূচক।
“ডাকছিস কেনো?
চমকে ওঠে তানহা। চোখ দুটো বন্ধ করে শুকনো ঢোক গিলে। এই লোকটার ঘুম ঘুম কন্ঠটাতো মাদকের থেকেও বেশি নেশাক্ত।
সূচক আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে উঠে বসে। তানহার পা দুটো যেনো কোনো একটা বড় পাথরের চাপা থেকে মুক্তি পেলো।
পায়ে হাত দিয়ে চোখ খুলে পা দুটো টানটান করে তানহা। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ব্যাথায়।
” এই টুকুতেই এই অবস্থা।
সারাজীবন সামলাবি কি করে আমায় কদু?
সূচক মুচকি হেসে তানহার নাক টেনে দিয়ে বলে। তানহা গাল ফুলিয়ে ফেলে। অন্য মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড বা জামাই কি সুন্দর করে জান, সোনা,ময়না, কলিজা, লিডার আরও কতো কি নামে ডাকে। আর এই লোকটা কদু, লাউ, বুঁচি, পিচ্চি এসব বলে ডাকে।
মানে মুখেও তো মধু নেই ই সাথে একটুখানি রসকস নেই।
পুরোই হনুমান।
“বাইরে গিয়ে আমার আর তোর খাবার রুমে নিয়ে আয়।
বলেই সূচক ওয়াশরুমের দিকে তাকায়। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে।
” আমি এটা কিছুতেই পারবো না। সবাই কি ভাববে? ছি ছি ছি
তানহা চট করে বলে ওঠে। সূচক দাঁড়িয়ে যায়। পেছন ঘুরে সূচকের দিকে তাকায়।
“পারবি না? একটা চটকানি দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো। কদু কদুর মতো থাকবি। আমি যা বলবো তাই শুনবি।
ফট এখান থেকে
সূচক ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা আটকে দেয়। তানহা মাথায় হাত দিয়ে ফোঁস করে শ্বাস টানে।
এখন আবার লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে অতোগুলো মানুষের মধ্য থেকে খাবার নিয়ে রুমে আসতে হবে?
এই লোকটা সারাজীবনই হনুমান থেকে যাবে। কখনোই মানুষ হবে না।
তানহা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে একবার দেখে নেয়। আঁচল পেছন দিয়ে আবার সামনে আনে কাঁধ জড়িয়ে।
তারপর ছিটকিনি খুলে ধীর পায়ে বেরিয়ে যায়।
মানুষ জন গিজগিজ করছে এখন। ছোট বাসা তার মধ্যে মানুষ একদম মাছের বাজারের মতো মনে হচ্ছে। তোহা ইমনের মায়ের সাথে খাবার সার্ভ করছে। মহিলাটি খুব ভালো।
ফ্লোরে মাদুর পেতে লাইন ধরে বসেছে সবাই। ইরিন তোহা আর ইরিনের মা খাবার বেরে দিচ্ছে। ইমন পানি এগিয়ে দিচ্ছে।
তানহার ভীষণ লজ্জা লাগছে এখন। ও তো পারতো ওদের সাথে সাহায্য করতে? কি মনে করলো এরা? মুখ দেখাতেই অস্বস্তি হচ্ছে ওর।
তানহাকে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইমন তোহার হাত ধরে হালকা করে টান দিয়ে এক পাশে নেয়। তোহা কটমট চোখে তাকায় ইমনের দিকে।
” রিলাক্স আমি তোমার আর আবিরের বিয়ের স্বাহ্মি দেওয়ার জন্য ডাকি নি। তোমার ভাই আর ভাবি খাবে। তো তুমি একটু কষ্ট করে তাদের খাবার রুমে পৌঁছে দেবে আমার সাথে?
ওই যে তোমার ভাবি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাচ্ছে। সে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও খাবার চাইবে না।
আমাদের আবার তিনটার আগেই বের হতে হবে। দুই ব্যাচ স্টুডেন্ট পড়াতে হবে।
তোহা মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। ইমনও কিচেনে চলে যায়।
“তুই রুমে যা
আমি খাবার নিয়ে আসছি।
হঠাৎ কারোর শব্দ শুনে চমকে ওঠে তানহা। পাশাল তোহাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” সরি ইয়ার
একসাথে এসে তোর সাথে থাকতে পারছি না।
তানহা তোহার হাত ধরে বলে।
“ইটস ওকে বেবি। তুই আমার ভাইকে সামলা তাতেই হবে।
তানহা লজ্জা পায়।
” হইছে আর লজ্জা পাইতে হবে না। রুমে যা। আসছি আমি।
তোহা চলে যায়। তানহাও রুমে ঢুকে যায়।
“কি রে খাবার কই?
সূচক তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছছে। তানহাকে রুমে ঢুকতে দেখে বলে। তানহা চুপচাপ খাটে গিয়ে বসে।
” খাবার আমার মুরোদ হয় নি?
সূচক তোয়ালে তানহার মুখের ওপর ছুঁড়ে মেরে বলে।
তানহা মাথা থেকে তোয়ালে নামিয়ে বারান্দার দিকে যায়।
“তোহা আনছে।
সূচক খাটে আধশোয়া হয়ে আইসিটি বইটা খুলে তাতে চোখ রাখে। তানহা বারান্দায় তোয়ালে মেলে দিয়ে সূচকের পাশে বসে
” আপনি ইন্টারের বই কেনো পড়ছেন?
তানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“ইন্টারের স্টুডেন্ট পড়াই আমি। জানিস বারোজন স্টুডেন্ট নিয়ে কোচিং শুরু করেছিলাম। দুই মাসে এখন আমার একশত সত্তর জন স্টুডেন্ট হয়ে গেছে আমার।
তানহা অবাক হয়ে শুনছে। উনি কোচিং সেন্টার খুললো কবে? আর কেনোই বা খুললো? কাউকে বলে নি কেনো? তানহাকেই বা বললো না কেনো?
অভিমান হয় তানহার। মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন থাকলেও জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কেনো জিজ্ঞেস করবে? নিজে থেকে তো কখনো কিছু বললো না?
থাক শুনতেও হবে না তানহার।
এসব ভাবনার মাঝেই তোহা আর ইমন খাবার হাতে চলে আসে। তানহার সামনে একটা কাপড় বিছিয়ে তার ওপর খাবার নামায়। সূচক বই রেখে গোল হয়ে বসে। তোহা সূচকের ডান পাশে বসে। ইমন দাঁড়িয়ে আছে।
” দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? খাবি না তুই? বেরোতে হবে আমাদের।
সূচক প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে।
“তোহা বেরে দাও আমায়।
সূচক চেয়ার টেনে বসে বলে। তোহা হাত গুটিয়ে বসে। মানে সে দেবে না। তানহা বেরে দেয়।
ইমন তোহার দিকে মুখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করে। সূচক তোহার মুখের সামনে এক লোকমা ধরে। তোহা খেয়ে নেয়। ও এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
সূচক খাচ্ছে আর তোহাকে খাওয়াচ্ছে। ইমন নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আর তানহা হাত গুটিয়ে বসে আছে। কেউ ওকে একবার খাওয়ার কথা বলছেও না।
চলবে
#প্রণয়
#পর্বঃ৩৩
#তানিশা সুলতান
সূচকের প্লেটে এখনো অর্ধেক খাবার পড়ে আছে। সূচক অন্য ফাঁকা প্লেটে হাত ধুয়ে ফেলে।
“তানহা বাকিটা তুই খেয়ে নে।
ঢেকুর তুলে বলে সূচক। তানহা কটমট চাহনিতে তাকায়।
” এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো? বরের এঁটো খেলে ভালোবাসা বাড়ে জানিস না?
তানহার আঁচল টেনে মুখ মুছতে মুছতে বলে সূচক। ইমন আর তোহা মিটমিট করে হাসছে।
তানহা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
“গাল ফুলিয়ে না থেকে জলদি খাও। ইমন তোমাদের পৌঁছে দিয়ে কোচিং এ যাবে।
কড়া গলায় বলে সূচক। তানহা ফুসফুস করতে করতে প্লেট হাতে নেয়। ভালোবাসা না বাড়লে কিছুতেই এঁটো খেতো না। নেহাত ভালোবাসা বাড়ে। মনে মনে ভেবে নেয় এখন থেকে প্রতিদিনই এঁটো খাবে। যাতে ভালোবাসা বাড়তে বাড়তে একদম আকাশ ছুঁয়ে যায়। তখন আবার কমতে থাকলেও সমস্যা হবে না।
” গুড গার্ল
সূচক মুচকও হেসে উঠে দাঁড়ায়।
“তানহা বাসায় গিয়ে তোর বই খাতা জামা কাপড় যা যা দরকার। সব গুছিয়ে আমার রুমে চলে যাবি। বুঝলি?
কেউ কিছু বললে বলবি বাবুর হুকুম।
তানহা সবে মুখে খাবার পুরতে যাচ্ছিলো সূচকের কথায় মুখের সামনে হাত ধরে হা করেই তাকায় সূচকের দিকে।
সূচক খাটের ওপর থেকে আইসিটি বইা নিয়ে তাতে পিষ্ঠা উল্টাতে থাকে।
” না মানে বন্ধু বলছিলাম কি
এতো তাড়াতাড়ি ঝামেলা পাকানোর কি খুব দরকা
পুরোটা বলার আগেই সূচক তাকায় ইমনের দিকে। ইমন কেবলা মার্কা একটা হাসি দেয়।
“খুব দরকার। হেহে এতো তাড়াতাড়িই ঝামেলা পাকাতে হবে। শীত চলে আসলো। বউ ছাড়া থাকা যাবে না কি? ভাই আমি ভাবছি তুই এতোদিন ছিলি কি করে? আমি তো শালা একটা ঘন্টাও থাকতে পারবো না। টাকা পয়সা দিয়ে বিয়ে করেছিস কি দুরে দুরে থাকার জন্য?
হাসার চেষ্টা করে বলে ইমন। তোহা চোখ মুখ খিঁচে তাকায় ইমনের দিকে। বড় ভাইয়ের সামনে এরকম কথা শুনতে গায়ে লাগছে ওর। তানহা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। খাওয়া আর আজ হবে না ওর।
” মুখে কসটিউব লাগিয়ে দেবো আমি তোর। ইডিয়েট
সূচক দাঁত কটমট করে বলে৷
“যাচ্ছি আমি। এখনি মানে এখনি ওদের পৌঁছে দিবি বাসায়।
কড়া গলায় বলে সূচক।
“সন্ধায় তো সবাই আসবে তোদের বাসার। তখন না হয় যাবে?
ইমন আমতা আমতা করে বলে।
“একদমই না। এখনই যাবে মানে এখনই যাবে।
” আসছি
বলেই হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় সূচক। তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। তোহা ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ছোটমট একটা ঝড় হবে কি আজ?
“বুঝলে তানহা বরকে নজরে নজরে রাখবা বুঝলা?
কোচিং এ কতো কতো মেয়ে। মেয়েটা চোখ দিয়ে গিলে খায় তোমার বরকে। বলা তো যায় না কখন আবার কে কালো জাদু টাদু করে তোমার সুইট বরটাকে নিয়ে গেলো। তখন কি হবে বলো তোমার? জামাই থাকতে বিধবা
আল্লাহ
এই কষ্ট সয্য করবে কিভাবে তুমি? ভেবে ভেবেই তো আমি চাঁন্দে চলে যাচ্ছি।
ইমন মুখটাকে একদম সিরিয়াস করে বলে। তানহার মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যায়। মুখে নেওয়া খাবার চিবতে ভুলে গেছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চোখে পানি চিকচিক করছে।
” থামুন তো আপনি। খালি আজাইরা কথা। তানহা এই পাগলের কথায় কান দিস না।
তোহা রেগে বলে।
“তানহা আমার কথায় লজিক আছে কি না?
ইমন গাল ফুলিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে। তানহা একটুখানি ভাবে। সত্যিই তো সূচক দেখতে মাশাআল্লাহ। মেয়েটা তো তাকাবেই তাই না? আর ছেলে মানুষের মন। যদি বদলে যায়?
” হুম আছে।
মিনমিন করে বলে তানহা।
“কারেক্ট
আমার কথায় লজিক আছে। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো পাগল কে? যে লজিক ছাড়া কথা বলবো অবিয়েসলি সে পাগল।
দাঁত কেলিয়ে বলে ইমন। তোহা শুধু দাঁত কটমট করে। কিন্তু কিছু বলে না। কথা বললেই কথা বারবে।
তানহার চোখে পানি টলমল করছে। কোনোরকমে মুখে থাকা খাবারটা গিলে ফেলে।
” ভাইয়া এখন আমার কি করতে হবে? কি করলে আমি ওনাকে আটকে রাখতে পারবো?
তানহা নাক টেনে বলে।
“শুনবা?
” হুমম বলুন আপনি।
“তাহলে পাগল ছাগল এখান থেকে সরাও।
ভাব নিয়ে বলে ইমন।
” তানহা এই বদ লোকটার কথা শুনিস না।
তোহা কড়া গলায় বলে।
“তুই যা এখান থেকে।
তানহা ঝাঁড়ি দিয়ে বলে।
‘বিপদে পড়বি তুই। আমি ভাইয়াকে বলে দিবো।
তোহা মুখ বাঁকাতে বাঁকাতে চলে যায়। ইমন এবার আরাম করে বলে। তানহাও একটু এগিয়ে বসে ইমনের দিকে।
তোমাকে যা করতে হবে ________________
সবটা শোনার পরে তানহা চোখের পানি মুছে এক গাল হাসে। ইমন শয়তানীর হাসি দেয়।
” এবার বন্ধু আমার বুঝবে ঠেলা
🥀🥀
খাওয়া দাওয়া শেষে ইমন ওদের বাড়িতে দিয়ে আসে। বাড়ি গিয়ে আরেক দরফা চমকে ওঠে তানহা। কারণ বৃষ্টি এসেছে। আবার ফুপির দুই মেয়ে ইরা আর ইভাও এসেছে। বরাবরই বাড়িতে মেহমান আসলে তানহা তোহার বিরক্ত লাগে। কারণ হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে ঘুমতে যাবে তারা।
বৃষ্টি তানহাকে দেখে মুখ বাঁকায়। আর তোহাকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি হেসে খবর বার্তা জিজ্ঞেস করে।
মা বড়মা রান্না করছে। যদিও দাওয়াত আছে। কিন্তু মেহমান নিয়ে তো আর দাওয়াত খেতে যাওয়া যাবে না। তাই এদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা।
ইরা আর ইভা দাদিমার সাথে কথা বলছে। তানহা তোহাকে দেখে ওদের সাথেও কথা বলে।
তানহা সোজা রুমে চলে যায়। তোহা এখনো বৃষ্টির সাথে গল্পে ব্যস্ত। তানহার পেছন পেছন ইভা যায়।
“তানহা
তানহা সোজা খাটে বসে পড়ে ফ্যান ফুল পাওয়ারে ছেড়ে।
” হ্যাঁ বলো।
তানহা এক পলক ইভার দিকে তাকিয়ে বলে।
ইভা খুশিমতো গদগদ হয়ে তানহার পাশে গিয়ে বসে।
“একটা হেল্প করবা?
ইভা একদম তানহার সাথে চিপকে বসে বলে।
” কি হেল্প?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“আমি না ভেবেছি ওনাকে প্রপোজ করবো। যদি তুমি একটু সাথে থাকতে তাহলে সাহস পেতাম।
লজ্জায় লাল নীল হয়ে বলে ইভা। তানহার কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়।
” এই উনি টা কে?
“সূচক ভাই
লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে ইভা। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। ওর বরকে প্রপোজ করবে আর এটা ওর কাছেই বলছে?
নেহাত তানহা ভালো মানুষ। নাহলে এতখনে নাক ফাটিয়ে দিতো।
” ওই করবা না হেল্প?
তানহার হাত ধরল ইনোসেন্ট ফেস করে বলে ইভা। তানহা মনে মনে কিছু ভেবে একটু হাসে।
“ঠিক আছে করবো। কখন? কোথায়? প্রপোজ করবা?
ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
” রাতে ছাঁদে।
“আচ্ছা আমি পাশে আছি।
🥀🥀
বড়রা দাওয়াত খেতে চলে গেছে বিকেলেই। এখন রাত আটটা বাজে। তানহা বসার ঘরে বসে টিভি দেখছে। আর ইরা ইভা বৃষ্টি তোহা ওরা ফোন দেখছে। আজকে বিকেলে বাড়িতে ওয়াইফাই দিয়ে গেছে দুটো লোক।তারা বলেছে সূচক দিতে বলেছে। বাড়ির সামনে ইট সিমেন্ট রাখা হয়েছে। এক তালা বাড়িটা দোতালা করা হবে।
দরজায় কড়া নরে। তানহার কানে তা ঢোকে নি। ইভা শুনেছে। সে দ্রুত উঠে দরজা খুলে দেয়। সূচক হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইভা সূচককে দেখে মুচকি হাসে।
” কখন এসেছিস?
সূচক গম্ভীর গলায় বলে।
“দুপুরে
মিষ্টি করে হেসে বলে সূচক। তানহার এবার খেয়াল করে।
সূচক ইভাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সোফায় বৃষ্টি আর ইরাকে দেখে এগিয়ে যায় ওদের দিকে। তানহা চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে আছে।
” বৃষ্টি তোর সমস্যা কি? আমি তোর বিয়াই লাগি? বড় ভাই হই আমি তোর। ভুলে যাস না কি? আজেবাজে মেসেজ দেওয়ার সাহস পাস কই থেকে? থাপ্পড় গাল লাল করে দেবো আমি তোর। ইডিয়েট
ধমক দিয়ে বলে সূচক। কেঁপে ওঠে ওখানে উপস্থিত সবাই। বৃষ্টি কাচুমাচু হয়ে যায়।
“তোহা তুই এখানে কেনো? পড়তে বস যা। আমি যেনো আর কখনোই তোর হাতে ফোন না দেখি। ভাঙতে কিন্তু সময় লাগবে না আমার।
তোহার দিকে তাকিয়ে আরও একটা ধমক দিয়ে বলে সূচক। তোহা ফোনটা সোফায় রেখেই এক দৌড়ে রুমে চলে যায়।
” ইরা বোনু যা খাবার গরম কর। খাবো আমি।
ইরা একটু হেসে কিচেনে চলে যায়।
“তানহা আমার রুমে আয়।
তানহার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে বলে সূচক। তানহা আবারও ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে।
” রররররুমে কেনো? এএএএখানে ববববলুন না।
তানহা কাঁপতে কাঁপতে বলে।
“তোকে আসতে বললাম না? জলদি আয়।
এবার পুরো বিল্ডিং কাঁপিয়ে ধমক দেয় সূচক। কেঁপে ওঠে তানহা সহ বৃষ্টি আর ইভাও।
তানহা কোনোদিক না তাকিয়ে এক দৌড়ে সূচকের রুমে ঢুকে যায়। সূচক শ্বাস টেনে রুমে চলে যায়।
বৃষ্টির চোখের কোনে পানি জমে গেছে। নাহয় কয়েকটা রোমান্টিক মেসেজই দিয়েছে। তার জন্য সবার সামনে এভাবে ধমক দিতে হবে? আলাদা করেও তো বলতে পারতো।
” আপু তুমি ওনাকে মেসেজ কেনো দাও?
ইভা নাক ফুলিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে বলে। বৃষ্টি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।
“তোমাকে বলতে হবে?
🥀🥀🥀
তানহা সূচকের রুমে ঢুকে একদম খাটের নিচে চলে গেছে। হাতের কাছে পড়লে থাপ্পড়ও মারতে পারে। একটা থাপ্পড় দিলে তানহাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না সুন্দর দাঁত গুলোও আর থাকবে না মাড়িতে। তার থেকে ভালো লুকিয়ে থাকাই।
খুঁজেও পাবে না আর ধমকেও দেবে না। কি দারুণ বুদ্ধি তানহার।
সূচক রুমে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। সূচকের রুমের দরজার ছিটকিনি একদম উপরে। তানহা নাগাল পায় না।
হাতের শপিং ব্যাগ খাটের ওপর রেখে কাবাড থেকে টিশার্ট আর টাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তানহা চোখ মুখ খিঁচে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। মশা কামড়াচ্ছে। খাটের নিচে এতো মশা থাকে? যেনো এখানেই মশাদের বাড়ি।
তানহার মাগনা রক্ত পেয়ে তারা ইচ্ছে মতো খেয়ে নিচ্ছে। বেচারা তানহা ধরা খাওয়ার ভয়ে চুপচাপ মশার কামড় খাচ্ছে। এছাড়া আর উপায় আছে? নেই তো।
খানিকটা সময় নিয়ে সূচক ফ্রেশ হয়। ভেজা চুল গুলো গামছা দিয়ে মুছতে মুছতে বের হয় ওয়াশরুম থেকে।
” আর কতো মশার কামড় খাবি? এবার বেরিয়ে আয়।
দেরি করলে মশার মতো আমিও কামড়াবো তোকে।
চলবে