#প্রণয়
#পর্বঃ৪৩
#তানিশা সুলতানা
তিনটে ধমক দিয়ে সূচক তানহাকে বই নিয়ে বসিয়েছে। বেচারা পড়তে পড়তে বইয়ের ওপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। একে দিয়ে আর যাই হোক পড়ালেখাটা হবে না। আস্ত গাঁধা যাকে বলে।
সূচক নিজের বইখাতা গুছিয়ে তানহাকে ঠিক করে শুয়িয়ে দেয়। তারপর নিজেও শুয়ে পড়ে তানহার পাশে। আজকে মশারি টাঙানোর এনার্জি নেই৷
লাইট টাও অফ করে নি।
তানহার কানের কাছে মশা গান গাইতে থাকে। আবার চোখেও আলো লাগছে। বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে পিটপিট করে চোখ খুলে তানহা। নিজের পাশে সূচককে শুয়ে থাকতে দেখে। আরাম করে চোখ বুজে আছে।
কপাল কুঁচকে তাকায় তানহা। সে শুয়েছে তাও মশারী টাঙায় নি। লাইট টাও অফ করে নি?
তানহা বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে উঠে বসে৷ এইরকম শীত শীত সিজনে উঠতে মন চায়?
কম্বল সরিয়ে নেমে পড়ে। মশারী টাঙিয়ে লাইট অফ করে আবার এসে শুয়ে পড়ে।
তানহা শুতেই ইমন তানহার ওপর হাত পা তুলে দেয়।
“এটা তোর দায়িত্ব। আমি কেনো করবো?
তানহার গলায় মুখ গুঁজে বলে সূচক। তানহা সূচকের পিঠে নখ দিয়ে আঁচর দেয়।
” শয়তান বেডা
সূচক তানহার গলায় কামড় দেয়। তানহা ব্যাথা পায় খুব। রেগে গাল ফুলায়।
সূচক আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“সরুন
তানহা সরানোর চেষ্টা করে বলে।
” পারলে সরিয়ে দে
দুষ্টু হেসে বলে সূচক। তানহা কিছুখন ধাক্কা ধাক্কি করে হাল ছেড়ে দেয়। এরকম দানবের মতে মানুষকে সরানো তানহার কাম্য নয়। হলা ছেড়ে দিয়ে নিজেও জড়িয়ে ধরে।
“আই লাভ ইউ সো মাচ তানহা।
তানহার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে সূচক।
” লাভ ইউ টু সূচক।
🥀
রোজকার মতো সকাল সকাল সূচক বেরিয়ে যায় কোচিং এর উদ্দেশ্য। আজকে আবার একটা চাকরির ভাইবা পরিহ্মা আছে। তাই আরও একটু সকালে বের হয়েছে। চাকরিটা খুব প্রয়োজন সূচকের। বেসরকারি ব্যাংকের চাকরি। সেলারি অনেক৷ এভাবে কোচিং করিয়ে টাকা তো ইনকাম হয় কিন্তু এটাকে পার্মানেন্টলি নেওয়া যায় না।
কিছুদিন পর তানহা তোহার এসএসসি পরিহ্মা। আপাতত স্কুল বন্ধ বাড়িতেই পড়ছে দুজন।
আটটার দিকে ঘুম ভেঙে যায় তানহার। এমনি এমনি ঘুম ভাঙে নি।
স্বপ্নে বিশ্বকাপ দেখেছে। এখন নেইমারের জার্সি দেখে নিজেরও জার্সি কেনার শখ জেগেছে।
তার জন্যই ঘুমটা ভেঙে গেছে। বিছানায় গোল হয়ে কম্বল পেচিয়ে বসে ভাবছে তানহা। তোহার সাথে তো ঝগড়া চলছে তাহলে কাকে সাথে নিয়ে জার্সি কিনতে যাবে?
ঝগড়া হয়েছে গতকাল। আজকেও ঝগড়ার কথা মনে রাখা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। আর ইমন তো বলেছেই তানহার ছেলের সাথেই ওনার মেয়ের বিয়ে দেবে। তাহলে আর চিন্তা কি? কথা বলাই যায়।
এক গাল হেসে বিছানা থেকে নামে তানহা। ফ্রেশ না হয়েই তোহার রুমের দিকে দৌড় দেয়। তোহা বই পড়ছিলো টেবিল চেয়ারে বসে। তানহা এক ছুটে গিয়ে তোহার গলা জড়িয়ে ধরে।
তোহা প্রথমে চমকে ওঠে।
“ঢং দেখাচ্ছিস কেন? ছাড়
তোহা বিরক্ত হয়ে তানহাকে ছাড়াতে চেষ্টা করে বলে।
“জান রাগ করিস না। তোর মেয়ে আমার মেয়ে আর আমার মেয়ে তোর মেয়ে।
চল না আজকে মার্কেটে যাই। একটা জার্সি কিনা আনি।
তোহার মন গলে যায়। সত্যিই তো জার্সি কেনা প্রয়োজন।
” আচ্ছা যাবো। ব্রাশ করে আয় তুই।
তানহা তোহার গাল টেনে টুস করে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে চলে যায়।
বাবার থেকে টাকা নিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়ে। বাড়ি থেকে মার্কেট খুব বেশি দুরে না। অটোতে যেতে বিশ টাকা লাগে। দুজনের চল্লিশ টাকা। আসতে যাইতে আশি টাকা। আশি টাকার মধ্যে আরও বিশ টাকা দিলে একশত টাকা হয়ে যায়। এতো টাকা খরচ করার ইচ্ছে নেই।
তাই দুজনই হেঁটেই যাচ্ছে।
কিছুদুর যেতেই দেখা হয়ে যায় ইমনের সাথে। সে বিজয় স্যারের সাথে কথা বলছে। ইমনকে দেখে মুখ বাঁকায় তোহা। অন্য দিকে তাকায়। যেনো চিনেই না। তানহা খুশি হয় ইমনকে দেখে। এক দৌড়ে ইমনের কাছে চলে যায়।
“স্যার ভালো আছেন?
সালাম দিয়ে বলে বিজয়কে তানহা।
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমারা?
বিজয় তোহার দিকে আড়চোখে এক পলক তাকিয়ে বলে।
“ওরা তো খুব ভালো আছে। একদম ভালো যাকে বলে। এতো ভালো আছে যে এতো ভালো আছে যে এখন আরও ভালো আছে।
ওদের ভালো থাকার বর্ণনা দিয়ে শেষ করতে পারবো না।
ইমন বলে। তোহা ভেংচি কাটে। বিজয় স্যার শুকনো ঢোক গিলে। এই ছেলেটাকে জাস্ট অসয্য লাগে ওর। এতো বেয়াদব ছেলে হয়?
” আসছি
বলে বিজয় স্যার মানে মানে কেটে পড়ে।
“ভাইয়া চলো জার্সি কিনবো।
” আমি ও তো
চলো চলো
তিনজন চলে যায় জার্সি কিনতে।
জার্সির দোকানে গিয়ে তানহা তোহা আরেক ঝামেলা বাঁধিয়েছে। আর্জেন্টিনা ব্রাজিল দুটো জার্সির দামই একই।
তানহা কিছুখন নিজের জার্সিটা নেরে চেরে দেখে।
ইমন বসে বসে গেমস খেলছে। ইমনকে সূচকই পাঠিয়েছিলো ওদের জার্সি কিনতে আনার জন্য। কিন্তু ইমন পৌঁছানোর আগেই এরা চলে আসলো। ইমনকে আর কষ্ট করতে হলো না।
“আংকেল এক কাজ করেন। আর্জেন্টিনা জার্সির দাম পঞ্চাশ টাকা কম রাখেন আর ব্রাজিলের জার্সির দাম পঞ্চাশ টাকা বেশি রাখেন।
দোকান দার চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। তোহা রেগে যায়।
” এমনটা করবেন না। ব্রাজিলেরটা একশত টাকা কম রাখে। ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে বানিয়েছে এটা।
তোহা বলে।
“চল এখুনি পুকুরে যাবো। দুটো জার্সি ভিজিয়ে রাখবো। যেটার রং উঠবে সেটাই ফেলে দেওয়া কাপড়ের। তর্ক করবো না। চল
তানহা তোহার হাত ধরে বলে। ইমন শুকনো ঢোক গিলে ফোন পকেটে রেখে উঠে দাঁড়ায়। পানিতে চুবাইলে যে আর্জেন্টিনা জার্সির রং উঠবে এটা জানা ইমনের।
কাল নিজের জন্য জার্সি কিনেছিলো। ভেবেছিলো একবার পড়ে কয়েকটা পিক তুলে এটা তোহাকে গিফট করবে। তো ভালোই কয়েকটা পিক তুলেছিলো। তারপর পিচ্চিকে কোলে নিয়ে কয়েকটা পিক তুলতে যায়। তখনই পিচ্চি ভিজিয়ে দেয় জার্সি।
ইমন সেটাকে ধুয়ে স্ত্রী করে তোহাকে দেবে ভেবে বেশি করে হুইল পাউডার দিয়ে ভেজানোর সাথে সাথে রং উঠে যায়।
—
” হ্যাঁ চল ভিজিয়েই দেখাবো।
“আমার দামটা দিয়ে জান আপনারা।
দোকানদার বলে।
” রং উঠলে দাম দেবো না। আপনিও আসেন সাথে।
তানহা বলে। দোকানদার ইমনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। ইমন কিছু বলবে তার আগেই সূচক চলে আসে।
“কি হয়েছে?
সূচক বলে। তানহা তোহা দুজনই সমান উৎসাহ নিয়ে বলতে যায়।
“চুপচাপ যা এখান থেকে।
ধমক দিয়ে বলে সূচক। দুজনই চুপসে যায়। সূচক দোকানদারকে টাকা দেয়।
তোহার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। তার সাথেই বারছে দুজনের মানুষের বুকের ভেতর জ্বালাপোড়া। বিজয় স্যার আজকে এসেছিলো তোহাদের বাড়িতে। ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিলো সে পছন্দ করে তোহাকে। কিন্তু তমাল সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছে তার মেয়ের বিয়ে হয়ে তোহার।
রাস্তার পাশে বিষন্ন মন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিজয়। মনটা ভীষণ খারাপ তার। বুকের বা পাশে ব্যাথা করছে। এটা কি হওয়া খুব জরুরি ছিলো? ইমন তো ছেড়েই গেছিলো তোহাকে। তাহলে কেনো আবার সবটা ঠিক হয়ে গেলো?
চলবে