প্রণয় রেখা পর্ব-১৫+১৬

0
350

#প্রণয়_রখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৫.

একসঙ্গে সবাই দুপুরের খাওয়া দাওয়া করেছে। সকাল থেকে দুপুর এই পুরোটা মোহনা বেশ বিস্ময় নিয়ে লরিন কে দেখছিল। লরিনের ব্যবহারে যেন সে ক্রমে ক্রমে কেবল মুগ্ধই হচ্ছিল। ছেলেটা কী সুন্দর ভাবে সবার সাথে মিশে গিয়েছে। যেন এটা তারই পরিবার। মাহিয়ার সাথে সেকি তার দুষ্টুমি। তার গম্ভীর আর রাগী বাবাটাও যেন লরিনকে বেশ পছন্দ করলেন। এত সহজে আজ অবধি কেউ উনার পছন্দের পাত্র হতে পারেনি। তবে লরিন ক্ষণিকের মাঝেই তার সুহৃদ হয়ে উঠল।

খাওয়া দাওয়া শেষ ড্রয়িং রুমে গিয়ে আবার সবাই বসল। মোহনা তখন ড্রয়িং রুমের দরজার সামনে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে লরিন কী করছে। দেখল, তাদের আড্ডা আবারও জমে উঠেছে। মোহনা লরিনকে ইশারা দিতে চাইল। কিন্তু লরিন তার খোশগল্পে এত ব্যস্ত যে মোহনা কে দেখার সময় কই তার। বাবার সামনে জোরে যে ডাকবে সেই সুযোগও পাচ্ছে না। পেছন থেকে এশা এসে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘কিরে, বেটা তো তার শ্বশুর মশাইকে ভালোই হাত করে নিচ্ছে।’

মোহনা চোখ রাঙিয়ে বলে,

‘বাজে বকিস না না তো। এই রাফাতকে মেসেজ দিয়ে আমার রুমে আসতে বল।’

‘উমা, এখান থেকে ডাকলেই তো হয়।’

‘না, বাবার সামনে এখন ডাকা যাবে না। তুই ওকে মেসেজ দে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে, দিচ্ছি।’

এশা রাফাতকে মেসেজ দিলেও রাফাত সেটা সিন করল না। ফোন তো তার হাতে নেই, পকেটে। সেও এখন বেশ আড্ডায় মেতেছে। ছেলে মানুষ, খেলা বিষয়ক আলোচনা বেশ পছন্দ করে।

মোহনাও দরজার সামনে থেকে নড়ছে না। আড়াল থেকে তাদের সব কথা বার্তা শোনার চেষ্টা করছে। কথা তালে তালেই মোহনার বাবা হঠাৎ লরিন কে জিজ্ঞেস করলেন,

‘তোমাদের দেশে এত ইউনিভার্সিটি থাকতে তুমি এখানে এসে কেন ভর্তি হলে? আমি তো আরো ভাবছিলাম মোহনাকে মাস্টার্স এর জন্য লন্ডন পাঠাব। তোমাদের এখানের “ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন” তো বেশ ভালো পড়াশোনার জন্য। আমার তো খুব ইচ্ছা মোহনাকে এটাতেই ভর্তি করব। অনার্সেই ইচ্ছে ছিল তবে কোনো কারণবশত হয়ে উঠেনি। তা তুমি এত ভালো ভালো ইউনিভার্সিটি ছেড়ে এখানে এলে যে? তোমার মা বাবা কেউ কি বাংলাদেশি?’

বাবার প্রশ্ন শুনে মোহনার পিলে চমকে উঠে। এখনই সব সত্য বেরিয়ে যাবে। এই হাঁদারাম সব সত্যি বলে দিবে নিশ্চিত। এখনই একে না সরালে কেল্লা ফতে। মোহনা আর দেরি না করে এক ছুটে রুমে ঢুকে পড়ে। কী বলবে কী বলবে ভাবতে ভাবতে বলে,

‘লরিন…লরিন ভাইয়া, আপনার না চারটার দিকে একটা ক্লাস আছে? ঐ দেখুন চারটা বাজতে চলল, আপনার এখনই যাওয়া উচিত। নাহলে ক্লাস মিস হয়ে যাবে।’

লরিন হতভম্ব। সে ঠিক শুনছে তো? মোহনা তাকে ভাইয়া বলেছে? সিরিয়াসলি? লরিনের চোখে মুখে আষাঢ়ের মেঘ জমতে শুরু করে। এত বিষন্ন তাকে আগে কখনো দেখা যায়নি। সে যেন এটা হজম করতে পারছে না। মোহনা তাকে বাসা থেকে বের করার জন্য শেষ পর্যন্ত ভাইও ডাকল। ব্যাপারটাই লরিনের খুবই মনক্ষুন্ন হলো। সে সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ওহ হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আংকেল, আমার এখন একটা ক্লাস আছে, আমার তাই যেতে হবে। আপনি আপনার খেয়াল রাখবেন। আসি। আসসালামু আলাইকুম।’

তারপর সে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মোহনার দিকে একবার চেয়ে বলল,

‘আন্টিকেও আমার সালাম দিও।’

তারপর সে আর দ্বিতীয় কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেল। আশ্চর্য! মোহনা বোকার মতো চেয়ে রইল কেবল। কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে তার বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগল। ছেলেটা তার উপর আবারও ক্ষেপেছে। কিন্তু এখানে তার কী দোষ। সে তাকে এভাবে বিদায় না করলে তো এক্ষুণি সব ফাঁস হয়ে যেত। তবে ভাইয়া ডাকটা সত্যিই বেচারার একেবারে কলিজায় গিয়ে লেগেছে। সেও তো কম হাঁদারাম না, একবার বুঝল না বাবা সামনে বলে ভাইয়া ডেকেছে।

মোহনা জোরে নিশ্বাস ছাড়ে। যাকগে, ও যা খুশি ভাবুক তাতে তার কী।

মোহনা চলে আসতে নিলে মাহবুব সাহেব তাকে ডাকলেন। মোহনা ফিরে বলল,

‘বাবা, কিছু বলবে?’

মাহবুব সাহেব গম্ভীর সুরে বললেন,

‘ছেলেটা কে তো এক কাপ চাও খেতে দিলে না, এত তাড়া দিয়ে বের করে দিলে কেন?’

মোহনা ইতস্তত কন্ঠে বলল,

‘বাবা, আমি উনাকে তাড়া দেইনি তো। উনার এখন ক্লাস আছে, সেটাই বলেছি শুধু। ক্লাসটা বোধ হয় খুব জরুরি ছিল, তাই হয়তো নিজেই এত তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছেন। সমস্যা নেই, আবার অন্য একদিন আসতে বলবনি।’

‘ঠিক আছে।’

রুমে ফিরে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মোহনা। উফ, বাবাও যেভাবে প্রশ্ন করে তার তো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সে বিছানায় গিয়ে এশার পাশে বসল। তখনই মাহিয়া বেলকনি থেকে ছুটে এসে রাগ দেখিয়ে বলতে লাগল,

‘ভাইয়া আরেকটু থাকলে কী হতো, হে?’

মোহনা ধমক দিয়ে বলল,

‘এত ভাইয়া ভাইয়া করছিস কেন? মনে হচ্ছে যেন ও তোর মায়ের পেটের ভাই।’

মাহিয়া নাক মুখ ফুলিয়ে অভিমানের সুরে বলল,

‘মায়ের পেটের ভাই হলে ভালোই হতো। ভাইয়া খুব ভালো। তোমার মতো এত ঝগড়াটে না। কী সুন্দর করে কথা বলে। একটুও রাগ নেই।’

‘আহা, প্রথম দেখাতেই এত কিছু বুঝে গেলি? শোন, অপরিচিত মানুষের সাথে সবাই এমন সুন্দর করে কথা বলে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো তুই যদি ওর বোন হতি তাহলে তুই জীবনেও ওর এত প্রশংসা করতে পারতি না। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের নিজের ভাই বোন ব্যতিত পৃথিবীর অন্য সব ভাই বোনকে পছন্দ করে। আর কী, ওর রাগ নেই বলছিলি? বেটা নিমচা শয়তান। যত শয়তানি পেটে পেটে। মানুষের সামনে একেবারে দুধে ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে যায়।’

মাহিয়া খুব রাগ দেখিয়ে বিছানার অপর প্রান্তে গিয়ে বসল। ফ্যাচফ্যাচ করতে করতে বলল,

‘হ্যাঁ, যেন উনিই খুব ভালো। পৃথিবীতে আর কোনো ভালো মানুষ নেই। বেচারা ভাইয়ার মুখটা কী চুপসে ছিল। জানো, নিচ থেকে আমাকে হাত নাড়িয়ে বাই বলেছে। হাসি আসছিল না তাও আমাকে দেখে জোর করে হেসেছে। তুমি নিশ্চয়ই ভাইয়াকে খুব কষ্ট দিয়েছ তাই ভাইয়ার মুখটা অমন হয়ে গিয়েছে।’

বোনের ক্যাচাল শুনতে শুনতে মোহনা বিরক্ত হয়ে কানে হাত দিয়ে বসে। উফ, মেয়েটার মায়া যেন উপচে পড়ছে। কই এত মায়া তো কোনোদিন তার জন্যও দেখায়নি। আজ লরিনের জন্য যেন বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে তার। যতসব অদ্ভুত বিষয়!

.

বিকেলের দিকে এশা আর রাফাতও তাদের বাড়িতে ফিয়ে যায়। ওরা চলে যাওয়ার পর মোহনা আর মাহিয়া ঘুমিয়ে পড়ে। বেশ অনেকটা সময় দুজনে ঘুমায়। প্রায় রাত আটটার দিকে তাদের ঘুমের ইতি ঘটে। মাহিয়া একটু আগেই উঠে যায়। সে ঘুম থেকে উঠেই মোহনার ফোনটা আস্তে করে হাতে নেয়। গোপনে ভাবে কিছু একটা করবে। কিন্তু তার সেই উদ্দেশ্য সফল হবার আগেই মোহনার ঘুম ভেঙে যায়। তাকে দেখেই মাহিয়া দ্রুত ফোনটা রেখে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মোহনাও আর ঘুমের ঘোরে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি।

_______________

রাতের খাবার শেষ করে মাহবুব সাহেব সকলকে তার রুমে যেতে বললেন। কী যেন জরুরি কথা বলবেন। তার আদেশ মতো সবাই তার রুমে গেল। মাহবুব সাহেব বিছানায় হেলান দিয়ে বসলেন। তার হাত পায়ের ব্যান্ডেজ খোলা হলেও মাথার টা এখনো খোলা হয়নি। মাহিয়া আর মোহনা বাবার পায়ের নিচে বসল। তাদের মা আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে কাপড় ভাঁজ করছিলেন। মাহবুব সাহেব কিছুক্ষণ ভাবুক মনে বসে থেকে অতঃপর বললেন,

‘মোহনা, কাল কি তোমার ক্লাস আছে?’

‘জি বাবা, আছে তো।’

‘কালকে তোমার ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই।’

মোহনা বেশ অবাক হলো। বাবা তাকে ভার্সিটিতে যেতে বারণ করছে? সে বিস্ময় নিয়ে বলল,

‘কেন বাবা? কাল কি কিছু আছে?’

‘হ্যাঁ, কাল আমাদের বাসায় মেহমান আসবেন। তুমি কাল বাসায়ই থেকো, মা’কে কাজে সাহায্য করতে পারবে।’

মাহিয়া ভীষণ উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

‘কারা আসবেন বাবা?’

‘তোমার অরূপ ভাইয়া আর তার মা বাবা।’

মাহিয়া খুব খুশি হলো। অরূপ ভাইয়া তাকে ভীষণ ভালোবাসে। বিদেশ থেকে আসার সময় নিশ্চয়ই তার জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছে। সে তো সেই খুশিতে আজ রাতে আর ঘুমাতে পারবে না।

চলবে…

#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৬.

সকাল থেকেই মোহনা কাজ করে যাচ্ছে। পুরো বাসা পরিষ্কার করে একেবারে চকচকে করে ফেলেছে। এখন গিয়েছে রান্নাঘরে। লায়লা বেগমের রান্নাও প্রায় শেষের দিকেই। মোহনা একটা ছু রি সাথে শসা, টমেটো, পেঁয়াজ আর মরিচ নিয়ে কাটতে বসেছে। সে খুব ভালো সালাত বানাতে পারে। লায়লা বেগম মোহনাকে তাড়া দিয়ে বললেন,

‘তাড়াতাড়ি এসব কাজ সেরে গোসলে যা। ওরা কিন্তু কাছাকাছি চলে এসেছে। আর বেশিক্ষণ লাগবে না।’

মা’র কথা মতো মোহনা তাড়াতাড়ি হাত চালাল। কাজ সব শেষ করে গোসলে ঢুকে পড়ল সে। মাহিয়া আগে আগে গোসল করে একেবারে তৈরি। গোলাপী রঙের একটা টপস পরেছে। তার কাঁধ পর্যন্ত ছোট ছোট চুলগুলো এখনো আধভেজা। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে অপেক্ষা করছে। গোলাপ গাছের গোলাপী গোলাপটার মতোই তাকে মিষ্টি লাগছে। যেন কিশোরী বয়সের এক ফুটন্ত গোলাপ।

মোহনা গোসল শেষ করে এসে দেখল তার মা আলামারি খুলে কী যেন খুঁজছে। মোহনা মা’র কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কী খুঁজছো, আম্মু?’

লায়লা বেগম ঘুরে তাকালেন মোহনার দিকে। তার আপাদমস্তক একবার পরখ করে বললেন,

‘এটা কী পরেছিস? এই লাল জামাটা পর। এটাতে তোকে খুব মানায়।’

‘কিন্তু মা, এটা তো আমি বাইরে গেলে পরি। এটা এখন ঘরে পরার কী দরকার। আর তাছাড়া জামাটা খুব ভারী।’

‘আমি যেটা বলেছি সেটাই কর। বাড়িতে মেহমান আসছেন, এসব পরে যাবি নাকি? যা তাড়াতাড়ি গিয়ে চেঞ্জ করে আয়।’

মোহনা আর দ্বিমত পোষণ না করেই জামা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে গেল।

সবকিছু গোছগাছ শেষ। মাহবুব সাহেব বললেন, উনারা চলে এসেছেন। আর হয়তো পাঁচ মিনিট লাগবে। উনি মোহনা আর মাহিয়া কে গেইটের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বললেন। মোহনা বাবার কথা মতো মাথায় ওড়না দিয়ে বের হতে নিলেই লায়লা বেগম তার কাছে ছুটে গেলেন। বললেন,

‘আরে মেয়ে, একটু লিপস্টিক দিতে পারছিস না? কেমন যেন মরা মরা লাগছে।’

মোহনা মায়ের কথা শুনে একটু বিরক্ত হলো। মুখ কুঁচকে বলল,

‘উফফ আম্মু, আবার লিপস্টিক কেন? জামাটা পরেই অস্বস্তি লাগছে তুমি আবার বলছো লিপস্টিকের কথা। আমি এমনিতেই ঠিক আছি।’

লায়লা বেগম শক্ত গলায় বললেন,

‘তোমাকে কিছু বলাও দায়। যাও এভাবেই যাও।’

মোহনা এভাবেই গেল। মাহিয়াও তার পেছন পেছন নাচতে নাচতে বাইরে গিয়ে দাঁড়াল। বেশ অনেকক্ষণ দুই বোন অপেক্ষা করল। কিন্তু মেহমানের কোনো নাম গন্ধ নেই। এক পর্যায়ে মোহনা খুব বিরক্ত হয়ে উঠে। পাঁচ মিনিটের কথা বলে পাঁচ ঘন্টা লাগাচ্ছে। মাহিয়া কে থাকতে বলে সে চলে আসতে নিচ্ছিল ঠিক সেই সময়ই পেছন থেকে গাড়ির শব্দ পায় সে। সঙ্গে সঙ্গেই মাহিয়া লাফিয়ে উঠে বলে,

‘আপু, চলে এসেছে।’

মোহনা তাকিয়ে দেখে একটা কালো প্রাইভেট কার, ঠিক তাদের সামনে এসে থেমেছে। তারপর গাড়ির ড্রাইভিং সিটের দরজাটা খুলে একজন সুদর্শন পুরুষ নেমে আসে। যাকে দেখেই মাহিয়া “অরূপ ভাইয়া” বলে চিৎকার দেয়। পেছনের দরজা খুলে অরূপের মা বাবা বেরিয়ে আসেন। এবার মোহনা তাদের কাছে এগিয়ে যায়। অরূপের মা বাবাকে সালাম দিয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের পর্ব মিটায়। অরূপের মা-বাবা, মোহনা আর মাহিয়াকে দেখে ভীষণ খুশি হোন। অনেকদিন পর মেয়েগুলোকে তারা দেখেছেন। মোহনা তাদের নিয়ে বাসার ভেতরে আসে। আর মাহিয়া ইতিমধ্যেই অরূপের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। বাসার ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই লায়লা বেগম সাদরে তাদের গ্রহণ করে নেন। মাহবুব সাহেবও আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। উনার বাল্যকালের বন্ধু আব্দুল্লাহ গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। আহ, কতদিন পর তাদের দেখা। ব্যস্ততার চাপে যেন এই সম্পর্কের অস্তিত্ব বিলিন হতে চলছিল। দুই বন্ধুর আলিঙ্গনে যেন পুরোনো সেই প্রশান্তি আবার ফিরে আসে। সবাইকে নিয়ে তিনি ড্রয়িং রুমে বসালেন। লায়লা বেগম রান্নাঘরে গেলেন শরবত আর হালকা নাস্তার আয়োজন করতে। মোহনা মায়ের পেছন পেছন রান্নাঘরে আসে। লায়লা বেগম সব নাস্তা একটা স্ট্রে তে সাজিয়ে দিয়ে মোহনা কে বললেন ভেতরে গিয়ে দিয়ে আসতে। মোহনা মায়ের কথা মতো স্ট্রে নিয়ে আবার ড্রয়িং রুমে গেল। টি টেবিলের উপর নাস্তাগুলো রেখে চলে আসতে নিলেই অরূপের মা তার হাত ধরে বললেন,

‘তুমি কোথায় যাচ্ছ, মা? বসো, আমাদের সাথে বসে নাস্তা করো।’

মোহনা স্মিত হেসে মহিলাটার পাশে বসল। যদিও তার খুব অস্বস্তি লাগছিল তাও খুব স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকার চেষ্টা করল। অন্যদিকে তার বোন মাহিয়া অরূপের সাথে বকবক করেই চলছে। যেন তাদের কতদিনের চেনা পরিচয়। তার মধ্যে কোনো জড়তা নেই, কত ফ্রিলি সে কথা বলতে পারছে। এই এক সুবিধা Extrovert হওয়ার, কিছু করতে গেলে এত অস্বস্তি লাগে না।

বড়ো’রা সবাই কথা বলছে। মোহনা তাদের মাঝে বসে বসে খুব বোর হচ্ছিল। মোহনার মা তখন মোহনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘মোহনা, যাও অরূপ কে নিয়ে তোমার রুমে যাও।’

মাহিয়া অরূপের পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ভাইয়া চলো। আমাদের রুমে চলো।’

তারা সবাই মোহনার রুমে গেল। অরূপ রুমের আশ পাশ একবার দেখে বিছানায় গিয়ে বসল। এতক্ষণে সে মোহনার দিকে তাকিয়েছে। প্রসন্ন হেসে মোহনাকে জিজ্ঞেস করল,

‘কেমন আছো, মোহনা?’

মোহনা তার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘জি ভালো। আপনি কেমন আছেন?’

‘আমিও ভালো আছি।’

‘তা তোমার পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে? কোন ইয়ারে আছো এখন?’

‘থার্ড ইয়ার।’

‘ওহ, প্রায় তো শেষের দিকে। তারপর কী প্ল্যান? মাস্টার্স করবে নাকি চাকরির জন্য এপ্লাই করবে?’

‘আমার ইচ্ছে মাস্টার্স এর জন্য দেশের বাইরে যাব। বাবার ও তাই ইচ্ছে। এখন দেখা যাক কী হয়।’

‘হুম, ভালোভাবে প্রিপারেশন নাও।’

মোহনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

‘আপনি কি একেবারের জন্য চলে এসেছেন?’

‘আপাতত এখানেই আছি। বাবার ব্যবসা দেখতে হবে। পরে যদি মনে হয় তখন আবার যাব।’

‘ওহহ আচ্ছা।’

মোহনা তারপর আর কোনো কথা খুঁজে পেল না। আর মাহিয়া, তার মুখ তো থামছেই না। সে যে কত কিছু বলছে, কত কিছু দেখাচ্ছে। অন্যদিকে মোহনা কেবল বসে বসে তার বোনের চঞ্চলতা দেখছে।

__________________

দুপুরের খাওয়া শেষ করে মাহিয়া, অরূপ আর মোহনা ছাদে গেল। মাহবুব সাহেব তার বন্ধু আব্দুল্লাহ কে নিয়ে বসার ঘরে বসলেন। আব্দুল্লাহ সাহেব সোফায় দুই হাত ছড়িয়ে আরাম করে বসলেন। পান খাওয়া লালচে মুখে প্রশস্ত হাসলেন। অতঃপর গলা ঝেড়ে বললেন,

‘তা বন্ধু, সম্পর্কের নতুন নাম কবে দিবি? এবার তো উপযুক্ত সময় চলে এসেছে। আর কত অপেক্ষা করতে হবে?’

মাহবুব সাহেব হাসলেন। বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে উচ্ছাসে বললেন,

‘না না দোস্ত, আর অপেক্ষা করাবো না। এবার দিন ক্ষণ দেখে ডিরেক্ট চার হাত এক করে দিয়ে তবেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলব।’

চলবে…