#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৭.
বিয়ের পাকা কথা হয়ে গিয়েছে। সবাই মিলে ঠিক করেছেন আগামী সপ্তাহে কাবিন হবে আর মোহনার অনার্সের পর অনুষ্ঠান হবে। মোহনা আর লরিন দু’জনেই খুব খুশি মনে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। বাড়িতে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়। মাহিয়া পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রেখেছে। ওর এত এত চঞ্চলতা দেখে মোহনা বিস্মিত। কতটা খুশি একটা মানুষ হতে পারে, মাহিয়ার এত আনন্দ কোথ থেকে আসছে? মোহনা অবাক চোখে বোনকে দেখে, কত সুন্দর মেয়েটা তার বোনের সুখে সুখী হচ্ছে। কতটা ভালোবাসা তার। ইশ, এই বাড়ি থেকে চলে গেলে মেয়েটার জন্য তার খুব যন্ত্রণা হবে।
এশাও খুশিতে লাফাচ্ছে। সে সব পেয়েছে। লরিনকেও পেয়েছে, মোহনাকেও পেয়েছে। এত এত ঝামেলার পরও এই গল্পের শেষটা তো সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর।
রাফাত চট জলদি কয়েক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে আসে। বাড়ি জুড়ে মিষ্টি খাওয়ার আমেজ পড়েছে। মোহনার অত একটা মিষ্টি পছন্দ না। তাও এশা তার মুখে মিষ্টি পুরে দিয়ে চলে গিয়েছে। বেচারি মুখ ফুলিয়ে কোনোরকমে সেটা গিলছে।
__________________________
মোহনা আর লরিন ছাদে এল। সাথে এশা আর রাফাতও এসেছে। মোহনা আর লরিন ছাদের একপাশে যায় আর এশা আর রাফাত যায় অপর পাশে। লরিন আজ বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। এত এত দুশচিন্তা, এত এত অপেক্ষার অবশেষে অবসান ঘটছে। অবশেষে তার প্রেম সফলতা পেতে যাচ্ছে। মাঝখানে তো সে আশাই ছেড়ে দিয়েছিল; ভেবেছিল, মোহনা কখনোই তার হবে না। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে, যার সাথে যার প্রণয় রেখা ঠিক করা থাকে, তাকে অবশ্যই তার সাথে মিলতে হবে।
লরিন মুগ্ধ চোখে মোহনার দিকে চেয়ে বলল,
‘আমি খুব খুশি, মোহনা।’
মোহনা তার দিকে ফিরে বলল,
‘এত খুশি হওয়ার কী আছে? সবাই বিয়ে করে, আপনিও বিয়ে করছেন, এটা নরমাল ব্যাপার; এটাতে এত খুশি হওয়ার মতো কী আছে?’
মোহনার কথা শুনে লরিন হাসে। বলে,
‘তুমি খুব কঠিন মোহনা। নিজের অনুভূতিগুলো চেপে রাখতে পারো, উল্টো দিকে আমি সেটা একদমই পারিনা। অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারলে মনে হয় যেন পেট ফুলে ব্রাস্ট হয়ে যাবে। তবে এতদিন তোমার এই গম্ভীরতা আমি মেনে নিয়েছি। কিন্তু, এখন থেকে তোমার মুখ খুলতে হবে। অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে। আর..’
‘আর?’
মোহনা প্রশ্ন করলে লরিন মুচকি হেসে বলে,
‘ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে।’
‘কেন, প্রকাশ না করলে বুঝি ভালোবাসা বোঝা যায় না?’
‘হ্যাঁ, যায়। তবে আমার মন ততক্ষণ পর্যন্ত শান্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি ভালোবাসি বলছো। আর কত অপেক্ষা করব, বলো? এবার তো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, এবার তো বলতে পারো ভালোবাসি, তাই না?’
‘একদমই তাই না। এত সহজ? দুর্লভ জিনিস এটা, বুঝেছেন? এত সহজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিন।’
লরিন চোখ মুখ কুঁচকে অসহায় সুরে বলল,
‘মানে কী? আরো অপেক্ষা করতে হবে? সম্ভব না।’
‘না হলে না। আমার কী।’
‘মোহনাআআআ…’
‘কী? আমি আপনার পাশেই তো আছি, চিল্লাচ্ছেন কেন?’
লরিন মিনমিনিয়ে তখন বলল,
‘খালি পাশে থাকলেই কি হয়? কাছেও তো আসতে হবে।’
‘কিছু বললেন?’
মোহনার প্রশ্নে সে হেসে বলে,
‘না না, তেমন কিছু না। উমম, আমরা যেন কোথায় ছিলাম? ওহ হ্যাঁ, ভালোবাসি বলা নিয়ে। অনেক হয়েছে এবার বলে ফেল। এর থেকে ভালো সুযোগ কিন্তু তুমি আর পাবে না। সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে শিখো। নাও, বলো বলো।’
মোহনা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলল,
‘আজব তো, আমি না বললে আপনি কি আমাকে জোর করে বলাবেন?’
লরিন মোহনার দিকে এক কদম এগিয়ে গিয়ে শক্ত গলায় বলল,
‘অবশ্যই। এতদিন তোমার ভয়ে কিচ্ছু বলতে পারেনি। কিন্তু এখন আমি নিশ্চিন্ত। তাই আমার আর কোনো ভয় নেই। এখন থেকে তুমি আমায় ভয় পাবে, বুঝেছ?’
লরিনের কথা শুনে মোহনা বড়ো বড়ো চোখ করে তার দিকে চাইল। লরিন ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মোহনা তা দেখে তখন শব্দ করে হেসে ফেলে। মোহনার হাসির আওয়াজে লরিন খানিকটা চকিত হয়ে ফিরে তাকায়। মোহনাকে কখনো এত বেশি হাসতে দেখেনি। সবসময় তো মেয়েটা মেপে মেপে হাসে। অথচ মেয়েটা হয়তো জানেও না তার হাসির ধ্বনি কতটা মনোমুগ্ধকর।
লরিন এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে দেখে মোহনা হাসি থামিয়ে বলল,
‘কী, এভাবে কী দেখছেন?’
লরিন চোখ সরিয়ে বলল,
‘কিছু না।’
তারপর সে চুপ হয়ে যায়। মোহনাও আর কথা বাড়ায় না। কিছুক্ষণ বাদেই সেখানে মাহিয়া আসে। সবাইকে এসে বলে, নিচে যাওয়ার জন্য, বড়োরা তাদের ডাকছে। সে তার কথা শেষ করে আবার নিচে নেমে যায়। পাশের ছাদ থেকে এশা আর রাফাত মোহনাদের কাছে আসে। এশা এসে লরিনের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কী হলো, বলেছে?’
লরিন মুখ কালো করে মাথা নাড়ায়। এশা তা দেখে মোহনার কাছে যায়। কোমরে হাত দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
‘এই যে ম্যাডাম, আমার ভাইকে আর কষ্ট না দিয়ে আপনার মনের কথা তাকে বলে ফেলুন। আপনি কি দেখছেন না, বেচারা কতটা কষ্ট পাচ্ছে? এত পাষাণ কেন আপনি? সামান্য একটা কথা বলতে এত অসুবিধা কেন? আমি তো দুদিনের মাথায়’ই রাফাতকে বলে দিয়েছিলাম।’
‘এই তুই মিথ্যে বলছিস কেন? তুই আমাকে এক মাস ঘুরিয়েছিস। কী সুন্দর মিথ্যা বলে দিচ্ছে, উনি নাকি দুদিনের মাথায় বলে দিয়েছে। তুইও কম করিসনি। যত কষ্ট করেছি খালি আমরা ছেলেরা করেছি, তোদের মতো ফকিন্নিদের পেছেনে রাতদিন এক করে ঘুরেছি। তাতেও তোদের মন গলতো না। তুই মোহনার চেয়ে কম পাষাণ ছিলি না।’
রাফাতের কথা শুনে এশার মেজাজ বিগড়ে যায়। সে রাফাতের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,
‘একদম বাজে কথা বলবি না। আর কাকে তুই ফকিন্নি বলেছিস? আমরা ফকিন্নি? আমরা ফকিন্নি হলে তোরা তো ফকির, বিশ্ববিখ্যাত ফকির। তোদের মতো ফকিরকে যে আমরা আমাদের মূল্যবান ভালোবাসা ভিক্ষা দিয়েছি সেটাই তো অনেক, আমার আসছে আমাদের ফকিন্নি বলতে। আমরা চোখ তুলে না তাকালে জীবনেও তোদের কেউ পাত্তা দিত না। সুন্দরী মেয়ে পেয়ে গেছিস বলে এখন এত বড়ো বড়ো কথা। খালি এক মাস না, তোকে তো উচিত ছিল এক বছর ঘুরানো; তাও তো আমি তাড়াতাড়িই একসেপ্ট করেছিলাম। কিন্তু মোহনা, তুই ভুলেও এত তাড়াতাড়ি কিছু বলবি না। বলে দিলেই এগুলো মাথায় উঠে যাবে। যতদিন পারবি ঘুরাবি। সহজে সব কিছু পেয়ে যায় তো, তাই এত বড়ো বড়ো কথা।’
এশা মুখ বাঁকিয়ে ভেংচি কাটে। লরিন বিরক্ত হয়ে বলে,
‘এই না এক্ষণ আমার হয়ে কথা বলছিলি? আর দুই মিনিটেই সাইড বদল?’
রাফাত তখন লরিনের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
‘আরে ওদের বাদ দাও, ভাই। মেয়ে মানুষ এমনই, রূপ পাল্টাতে দু মিনিট ও লাগে না।’
এশা দাঁত খিঁচে বলে,
‘তুই থামবি, রাফাত? এবার কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে।’
‘তো রাগ না, তোকে আটকালো কে?’
‘মোহনা, তুই কিছু বলছিস না কেন?’
মোহনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘তোদের এই ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি এখন বিরক্ত হয়ে উঠেছি। তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া কর, আমি নিচে গেলাম। লরিন, আপনিও চলুন।’
মোহনা চলে গেল। তার পেছন পেছন লরিনও নামতে লাগল। আর ছাদে দাঁড়িয়ে এশা আর রাফাত বোকার মতো একজন অন্যজনের দিকে চেয়ে রইল। এশা গাল ফুলিয়ে বলল,
‘দেখছিস রাফাত, ওরা কেমন। আমরা এখানে ওদের হয়ে ঝগড়া করছি আর ওরা আমাদেরই পাত্তা না দিয়ে নেমে গেল। হাউ সেলফিশ দে আর।’
‘ঠিকই হয়েছে, আরো করো ঝগড়া। আমিও নিচে গেলাম।’
‘আরে, আমিও তো যাব; দাঁড়া।’
.
.
সবাই একে একে বেরিয়ে গেল। মোহনা তার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। নিচে লরিন গাড়ি নিয়ে এসেছে। দাদা দাদিকে গাড়িতে উঠিয়ে সে একটু সাইডে এসে দাঁড়ায় মোহনাকে দেখার জন্য। লরিনকে নিচে দেখতে পেয়ে মোহনা মুচকি হেসে তাকে কল করে। লরিন তার ফোনে মোহনার নাম্বার দেখে অবাক হয়ে উপরে তাকায়। মোহনা ইশারা দিয়ে তাকে কলটা রিসিভ করতে বলে। লরিন তাই করে। কল রিসিভ করার পর মোহনা উল্টো দিকে ঘুরে যায়। তারপর সে মৃদু সরে বলে,
“হয়তো তোমারই জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই
যদি কখনো একান্তে
চেয়েছি তোমায় জানতে
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে
ছুটে ছুটে গেছি তাই।”
মোহনা থেমে যাওয়ার পর লরিন বিষন্ন সুরে বলল,
‘আমি বাংলা গানের অর্থ বুঝিনা।’
মোহনা তখন হেসে বলল,
‘গুগল মামাকে বলবেন, বুঝিয়ে দিবে। রাখছি, আল্লাহ হাফেজ।’
মোহনা ফোন রেখে দিয়েই তার রুমে চলে গেল। লরিন কিছুক্ষণ অসহায় ভাবে তাকিয়ে থেকে তার গাড়িতে গিয়ে বসল। অর্থ বুঝক বা নাই বুঝক অন্তত সে এইটুকু বুঝে যে, বাঙালিরা যখন প্রেমের কথা সরাসরি ব্যক্ত করতে না পারে, তখন তারা গান গায়।
চলবে…
#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৮.
একটা লাল বেনারসির সখ মোহনার অনেক আগ থেকেই ছিল। তবে সেই সখ গায়ে জড়িয়েই যে তার বিয়ে হবে সেটা আগে কখনো ভাবেনি সে। একটা লাল টকটকে শাড়ি, ঠোঁটে রক্তিম রঞ্জক পদার্থ, চোখের নিচে হালকা কাজলের ছোঁয়া আর ললাটের ক্ষুদ্র বিন্দু; ব্যস এইটুকুই। এইটুকুই কি একটা মেয়ের বিয়ের সাজ?
শাড়ি গায়ে মোহনা আয়নায় চেয়ে বলে,
‘আমাকে সুন্দর লাগছে।’
তার কথা শুনে মাহিয়া আর এশা হাসে। এশা বলে,
‘নিজের প্রশংসা নিজেকে করতে হয় না, আমরা আছি না তার জন্য।’
মোহনা আলতো হেসে বলল,
‘কে বলেছে, নিজের প্রশংসা নিজে করতে হয় না? আমার নিজের কাছে আমি নিজে সবসময়ই প্রশংসনীয়। আর এটাকে অহংকার বলে না, এটাকে বলে আত্মানুরাগ, নিজেকে নিজে ভালোবাসা।’
‘আচ্ছা বাবা, বুঝেছি। এখন একটু তোর মেকআপ টা দেখ, আরেকটু করলে কী হয়? বেশি নরমাল হয়ে গিয়েছে না?’
‘উঁহু, এইটুকুতেই ঠিক আছে।’
‘আচ্ছা, তাহলে তুই বস। এবার আমরা একটু সাজি।’
মোহনা বিছানায় গিয়ে বসে বলল,
‘এশা শোন, তুই কিন্তু আবার বেশি সাজিস না। পরে তোকে দেখে রাফাত এত পাগল হবে যে, আমার বিয়ের কাজীকে বলে নিজের বিয়েটাও পড়িয়ে ফেলবে। আবার তোর পরিবারও আজ থাকবে, রাফাতের জন্য কিন্তু আজ খুব সুযোগ। সো, বি কেয়ারফুল।’
এশা নাক ফুলিয়ে বলে,
‘বেশি বুঝিস তুই।’
মোহনা ঠোঁট চেপে হাসে। এশা আর মাহিয়া তৈরি হয়। তাদের তৈরি হওয়ার মাঝেই নিচ থেকে গাড়ির শব্দ পাওয়া যায়। সেই শব্দে মোহনার মনে মোচড় দিয়ে উঠে। হঠাৎ তার মাথায় আসে, তার আজ বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সে আজ থেকে অন্য এক বাড়ির বউ হতে যাচ্ছে। কেমন যেন অন্যরকম এক অনুভূতি। না ভয়, না অস্বস্তি। এই অনুভূতির ঠিক ধরা বাঁধা কোনো নাম নেই। তবে মোহনার বুক ভার হচ্ছে, ভালো লাগছে যেমন খারাপও লাগছে খুব। সে বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে এশাকে বলে,
‘দোস্ত, আমার কেমন যেন লাগছে।’
এশা তার সাজায় ব্যস্ত ছিল। মোহনার কথা শুনে সে পেছন ফিরে তার দিকে চেয়ে বলল,
‘ভয় পাচ্ছিস?’
‘না, ঠিক ভয় না। একটু অন্য কিছু, বুঝতে পারছি না।’
এশা গিয়ে তার পাশে বসল। মোহনার গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
‘বিয়ের সময় হয়তো সব মেয়েরই এমন হয়। আমার আম্মুও বলেছিল, আম্মুর বিয়ের দিনের অনুভূতির কথা। সেদিন নাকি বুকের ভেতরে কেমন করে, স্পন্দন বেড়ে যায়। ভয় হয়, অস্বস্তি লাগে। তোরও এখন এমন হচ্ছে তাই না?’
মোহনা অসহায় ভাবে মাথা নাড়াল। এশা দ্বিতীয় কোনো কথা বলার আগেই সেখানে লায়লা বেগম এসে বললেন,
‘কিরে, তোদের এখনো শেষ হয়নি। দরজার সামনে বর দাঁড়িয়ে আছে, বরণ করবি চল।’
এশা বলল,
‘জি আন্টি, আসছি।’
পরে আর মোহনার সাথে কথা না বলেই এশা মাহিয়াকে নিয়ে দরজার কাছে গেল গেইট ধরতে। এশা আর মোহনা পাত্রী পক্ষ। আর রাফাত ছিল পাত্র পক্ষ। গেইটে কত টাকা দিবে সেই নিয়ে দুই পক্ষের তুমুল তর্ক শুরু হয়েছে। এশা আর মাহিয়ার দাবি, তারা দশ হাজারের কমে ছাড়বে না। ঐদিকে রাফাত পাঁচও দিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
বেশ অনেকক্ষণ তর্ক বিতর্কের পর অবশেষে ছয় হাজারে গিয়ে তাদের মনস্থির হলো।
লরিনকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে দিয়ে মাহিয়া তার বোনের কাছে ছুটে গেল। গিয়ে বলল,
‘আপু জানো, লরিন ভাইয়াকে যা লাগছে না।’
‘তুই আমার জামাইয়ের দিকে নজর দিচ্ছিস?’
মোহনা ভ্রু কুঁচকে বলল। মাহিয়া ভেংচি কেটে বলল,
‘এএ, আমার বয়েই গেছে তোমার বিদেশির দিকে নজর দিতে। আমি তো শুধু বলছিলাম, দেখতে কেমন লাগছে। আসলে ভাইয়াকে দেখতে একটুও ভালো লাগছে না। আমি তো মিথ্যে বলছিলাম, তোমাকে খুশি করার জন্য।’
‘আচ্ছা হয়েছে, আমি জানি কোনটা তোমার সত্য আর কোনটা তোমার মিথ্যা।’
মাহিয়া মুখ কালো করে বলল,
‘যাও, তোমাকে আর কিছু বলবোই না।’
সে আবার ড্রয়িং রুমে গেল। লরিনের কাছে গিয়ে বসে বলল,
‘জানেন ভাইয়া, আপুকে যা লাগছে না। আপনি তো আজ পাগলই হয়ে যাবেন।’
লরিন সরু চোখে মাহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ভীষণ দুষ্টু হয়েছ তুমি।’
‘এখন হয়নি তো, আগে থেকেই ছিলাম।’
মাহিয়ার কথা শুনে লরিন খুব কষ্টে হাসি আটকায়। তারপর সে তার ফোনটা মোহনার কাছে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘তোমার আপুর ছবি তুলে নিয়ে আসো, তোমার কথা শুনে এখন দেখতে মন চাচ্ছে।’
মাহিয়া লরিনের ফোন নিয়ে মোহনার কাছে গেল। গিয়ে তাকে বলল সব। মোহনা ছবি তুলতে না দিয়ে ফোনের নোট প্যাডে গিয়ে কিছু একটা লিখল। তারপর সে মাহিয়াকে বলল এটা লরিনকে পড়তে দেওয়ার জন্য। মাহিয়া আস্তে আস্তে আবার লরিনের কাছে গিয়ে বসল। সেখানে বড়োরা সবাই আছে বলে, মাহিয়া কোনো হৈ চৈ করতে পারছে না। সে লরিনকে ফোন দিয়ে বলল,
‘আপু এটা পড়তে বলেছে।’
লরিন দেখল তার ফোনের নোট প্যাডে লেখা,
‘একটুও ধৈর্য নেই আপনার? এত তাড়া কিসের, হু?’
লেখাটা পড়ে লরিন মোহনাকে টেক্সট করল। যেখানে সে লিখল,
‘না নেই। এতদিন ধৈর্য ধরতে ধরতে এখন ধৈর্যের বক্স খালি হয়ে গিয়েছে। এখন যা হবে ছটফট হবে, কোনো ধৈর্য ধরাধরি হবে না। আই মিন, সবকিছু ফাস্ট ফাস্ট। লাইক এখন বিয়ে, আর রাতে বাসর।’
মেসেজ দেখে মোহনার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। মানে ছেলেটা এতকিছু ভেবে ফেলেছে? মোহনা তাকে রাগের ইমুজি পাঠিয়ে লিখল,
‘এখনই এত লাফালে বিয়ে কিন্তু ক্যান্সেল করে দিব।’
লরিন তাকে হাসির ইমুজি পাঠিয়ে লিখল,
‘সাহসী ছেলেরা কারোর হুমকিতে ভয় পায়না।’
মোহনা মেসেজ দেখে ফোনটা রেখে দিল। ছেলেটা পাজি হয়েছে খুব। এই ছেলে যে তাকে সারাজীবন জ্বালিয়ে মারবে সেটা আর বোঝার বাকি রইল না তার।
.
.
কাজী সাহেব বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বড়োরা সবাই ড্রয়িং রুমে। মাহিয়া মোহনার পাশে বসে আছে। এশা আর রাফাত এই মুহুর্তে উধাও। হয়তো ছাদে আছে। কেন আছে, সেটা মোহনারও অজানা।
লরিনের বাড়ির লোকেরা সবাই কথা বলে বললেন, কাবিনের সাথে কবুলও বলিয়ে নিবেন। তাতে একবারে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। মোহনার মা বাবাও এই সিদ্ধান্তে কোনো আপত্তি রাখলেন না।
মাহবুব সাহেব লায়লা বেগমকে বললেন, মোহনার রুমে গিয়ে প্রস্তুতি নিতে তিনি কাজী সাহেবকে নিয়ে আসছেন। লায়লা বেগম মোহনার রুমে যান। অপরদিকে মাহবুব সাহেব উঠে দাঁড়াতেই উনার ফোনে কল আসে। ফোন হাতে নিয়ে দেখেন যে উনার বন্ধু আব্দুল্লাহ সাহেব কল করছেন। তিনি এই মুহুর্তে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন, কলটা রিসিভ করবেন কিনা। কারণ, মোহনার বিয়ের ব্যাপারে ঐ পরিবারের কাউকেই তিনি কিছু জানাননি। যদি এখন তিনি কল রিসিভ করার পর উনার বন্ধু বলে উঠেন, তার ছেলেও এখন বিয়েতে রাজী, তখন?
চলবে…