#প্রণয়ের_আসক্তি
২৫(বোনাস পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter
অজ্ঞাত কেউ হঠাত করেই মৃথিলার চোখ সহ মুখ বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছে মৃথিলা বুঝতে পারছে না।ভয়ে বুক এর মাঝে দুরুম দুরুম সাউন্ড হচ্ছে তার।চিৎকার দিবে সেই ক্ষমতা ও নেই মৃথিলার।কিছুক্ষণের মাঝেই মৃথিলার হাত বেধে ফেলে সে।এই মুহুর্তে সে নিরব কে ডাকার চেষ্টা করছে কিন্তু পেরে উঠছে না।নিজের হাত খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পেরে উঠছে না।গোঙরাচ্ছে।এরই মাঝে গাড়ি স্টার্ট এর শব্দ হলো, মৃথিলা আরো চমকে উঠলো।নিজেকে বাঁচানোর মতো আর কোনো উপায় ই জানা নেই মৃথিলার।চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে যাচ্ছে।প্রায় আধাঘন্টা পরে গাড়ি তাত গৌন্তব্য পৌছে গেলো।মৃথিলাকে পাজা কোলে তুলে কোথাও একটা রাখা হলো।কিছুক্ষণের মাঝেই মৃথিলার গায়ের কাপড় খোলার চেষ্টা করা হয় সাথে সাথে মৃথিলা ছটফট আরো বেশী জোরে শুরু করে।ঠিক তখন ই কেউ একজন মৃথিলার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে একদম নড়াচড়া নয়।শান্ত মেয়ের মতো চুপটি করে দাঁড়াও লক্ষিসোনা।তোমার বস্ত্রহরণ করে আমি বেঁচে দিবো না বা তোমার বস্ত্র আমি পরিধণ ও করবো না ট্রাস্ট মি!মৃথিলা না পারছে চোখে দেখতে না পারছে মুখে বলতে তাই ছটফট করা ছাড়া উপায় নেই।এবার তবে বুঝতে পারছে মৃথিলার কাপড় চেঞ্জ করে অন্য কাপড় পরানো হচ্ছে।তখন মৃথিলা খানিক টা নিশ্চিন্ত যে তাকে বস্ত্রহীন করে খারাপ কিছু করা হচ্ছে না।তার কিছুক্ষণ পরেই মৃথিলার চোখ খুলে দেওয়া হয়।এতক্ষণ চোখ বেঁধে রাখার জন্য এমনিতেই সব ঝাপ্সা আর অন্ধকার লাগছে।চোখ কয়েকবার ডলে নিলো মৃথিলা। এবার সে চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে হঠাত রুমের লাইট জ্বলে উঠতেই দেখলো উপর থেকে অসংখ্য গোলাপের পাপড়ি ঝরে পড়ছে।ফুলের বৃষ্টি ঝরে পড়ছে মৃথিলার দুধে আলতা শরীরে।মৃথিলার সমস্ত ভয় দূর হয়ে গেলো।রুমের মধ্য থাকা খাটটা অসংখ্য তাজা ফুলে মুড়িয়ে সাজানো।উপরে ফুল দিয়ে লেখা হ্যাপি ফুল সজ্জা নিরব মৃথিলা।মৃথিলা নিজের বুকে ফু দিয়ে নিয়ে ঘরের চারদিকে তাকিয়ে একটা আয়না পেলো।আয়নায় নিজেকে দেখে মুগ্ধ মৃথিলা।বিয়ের বেনারসি পরানো হয়েছে তাকে গা ভর্তি গহনা।রুমের কোনায় কোনায় রং বেরঙের ক্যান্ডেল জ্বলছে।রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো ঘরটা।ঘর থেকে বেরোচ্ছে সুন্দর এক সুঘ্রাণ।এত কিছু যে তার সেই সারপ্রাইজড স্বামি করেছে বুঝতে বিন্দুমাত্র বাকি নেই মৃথিলার।মুনতাহা,সুপ্তি আর রিক রুমে প্রবেশ করে।মৃথিলা তাদের দেখেই বিস্মিত হয়ে যায়।সুপ্তি বলে কি ব্যাপার মৃথিলা সারারাস্তা যেভাবে জ্বালিয়েছো নিজেদের মুখ বন্ধ করে তোমাকে আনতে খুব কষ্ট হয়েছে আমাদের।মৃথিলা বললো আপনারা এনেছেন আমাকে।আর এসব আপনারাই করেছেন।সুপ্তি বললো ইয়েস,এগুলো আমরাই করেছি।আর তোমাকে সারপ্রাইজ দিতেই করেছি।আর ওই গিফট গুলো।ওগুলো নিরব ই পাঠিয়েছিলো তোমার জন্য।আর আমি যদি ভয় পেয়ে মরে যেতাম তাহলে?তুমি মারা গেলে নিরব আমাদের মুন্ডু কেটে এই সমুদ্রে ফেলে দিয়ে যেতো বুঝলে।তেমন সিরিয়াস কিছু হওয়ার আগেই চোখ খুলে দিলাম তো।কি তুমি রেগে আছো এখনো। খুশি হও নি।কাকে খুজছো তোমার মিষ্টার উনাকে।এত লজ্জা পাচ্ছো কেনো মৃথিলা।হ্যাপি ফুলসজ্জা তোমার বর টিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।এইযে এই খাটের উপর ঘোমটা দিয়ে বসে থাকবে।
লাল সেরওয়ানি পরে নিরব বাসর ঘরে প্রবেশ করলো।ঘরের দরজা লক করার শব্দে কেঁপে উঠলো মৃথিলা।এতক্ষণ যার জন্য অপেক্ষা করছিলো সেই মানুষ টা এসেছে।আর পাঁচটা বিয়ের মতো বেনারসি,ফুলসজ্জার খাট কিছুই হয় নি নিরব -মৃথিলার।আজ প্রথম বার মৃথিলা একটা নতুন বউয়ের স্বাদ পেয়েছে।এই দিন টার অপেক্ষা প্রতিটি মেয়েই করে থাকে।মেয়েদের জীবনের কাঙ্ক্ষিত অনেক স্বপ্ন থাকে এই দিন টা ঘিরে।নিরব খাটের কোনায় বসে মৃথিলার ঘোমটা তুলে বললো,এভাবে মাথা নিচু করে বসে আছো কেনো জানপাখি টা।আজ তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে।ভুবন ভোলানো রূপ তোমার।চোখ সরানোর ক্ষমতা নেই আমার।ইচ্ছা করছে আজন্ম কাল চেয়ে থাকি। আজন্মকাল তোমাকে দেখলেও তৃষ্ণা মিটবে না আমার।মৃথিলা আরো লজ্জায় মাথা নুইয়ে দিলো।নিরব মৃথিলার কপালে চুমু দিয়ে বললো ভালবাসি মৃথিলা,ভীষণ ভালবাসি তোমাকে,তুমি ছাড়া নিঃশ্বাস নিতেও ভীষণ কষ্ট হবে আমার।কারণ আমার অক্সিজেন ই হলে তুমি জানপাখিটা।
–মৃথিলা খাট থেকে নেমে নিরবের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বললো আপনার মতো স্বামি পাওয়া সত্যি ভাগ্যর ব্যাপার।
–নিরব মৃথিলাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো কখনো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হবে না তোমার।তুমি আমার বুকের মাঝেই থাকবে আজীবন।
–আজ আমাকে এইভাবে৷ ভয় দিলেন কেনো আমি খুব পেয়েছি জানেন।
–একটু ভয় না পেলে সারপ্রাইজ টা কি আর সারপ্রাইজ হতো।
–এইভাবে ভয় দিলেন কবে দেখবেন সত্যি কেউ এইভাবে নিয়ে গিয়েছে আর আমি হারিয়ে গিয়েছি।
-নিরব মৃথিলার হাতে একটা রিং পরিয়ে দিয়ে বললো,নিরব থাকতে তার বউকে কেউ কিভাবে কিডন্যাপ করবে।এত সাহস কারো হবে না বুঝলে জানপাখি।
-এমন সময়ে নিরবের ফোনে একটা ভিডিও পাঠায় রিফাত।নিরব ভিডিও টা দেখে বললো,,
–মৃথিলা প্লিজ রাগ করো না আমি ফিরে আসবো এক্ষুণি ইমারজেন্সি একটা কাজ পড়ে গিয়েছে।বলেই ব্যাস্ততার সাথে বেরিয়ে গেলো নিরব।
__________________________________
চেয়ারে হাত পা বাঁধা রহিম চাচার।রিফাত রহিম চাচাকে দুই একটা চড় থাপ্পড় মারছে আর প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।নিরব এর নিষেধ থাকায় রিফাত খুব একটা মারে নি।
এরই মাঝে নিরব প্রবেশ করলো।হাতে ধারালো ছুরি নিয়ে গলায় ধরে বললো,,
কি চাচা খেল খতম আপনার?এতদিন কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়া কুজো বুড়ো রহিম চাচা একদিনেই কিভাবে ইয়াং হয়ে গেলো খুব অবাক লেগেছিলো আমার কাছে।কি ভেবেছিলেন মৃথিলা বাচ্চা মেয়ে কিছুই বুঝবে না বলে আমিও কিছুই বুঝবো না চাচা বলেই নিরব ছদ্মবেশধারী সেই দাঁড়ি গোফ লাগিয়ে দিলো রহিম চাচাকে। আর উনার সামনে আয়না ধরে বললো,দেখুন তো চাচা চিনেন কিনা?রহিম চাচা আয়নায় একবার নিজেকে দেখে মুখ নিচে নামিয়ে নিলো।
‘তো আপনাকে এখন কি নামে ডাকবো রহিম চাচা নাকি কুখ্যাত খুনি আর পাচারকারী মঈন সিদ্দিকী।তো যদি ধরেই নেই আপনি মিষ্টার মঈন সিদ্দিকী তাহলে এমন একজন ভয়ংকর মানুষ একটা সাধারণ পরিবারে কাজের লোক হয়ে আছেন কেনো?আর যদি এটা ধরে নেই যে আপনি সাদাসিদা রহিম চাচা তাহলে বলুন আমাকে চিঠি দিয়ে সাহায্য করার মানে কি?আপনার কোন রূপ টা রিয়েল রহিম চাচা অরুফে মঈন সিদ্দিকী।’
‘আমাকে মেরে ফেলার হলে এক্ষুনি মেরে ফেলো তুমি।আমি জানি আমার মৃত্যু তোমার হাতেই হবে।আমি প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন ই বুঝেছিলাম আমার সর্বনাশ তোমার হাতেই আছে।আমার সব ই তো তুমি জেনেই গিয়েছো কোনো প্রশ্ন না করে মেরে ফেলো।’
‘উহু এভাবে আপনাকে মারবো না আমি।আপনাকে এমন ভাবে রেখেছি চাইলে সুইসাইড ও করতে পারবেন না।’
‘রিফাত বললো,নিরব এত কিছু না করে কয়েক ঘা মেরে সোজা চালান করে দে।শালা পাচারকারী দলের প্রধান মাথা।ওই ভাবিকে কিডন্যাপ করেছিলো।দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে আছে। বেচারা ভাবির বাবা দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষে রেখেছে।ভাবির বাবা জানলে শকড হবে সিওর।নিজের সব পরিচয় গোপন রেখে ভাবির বাবাকে বোকা বানিয়ে কাজের লোক সেজে ছিলো।’
নিরব কপালে হাত চালাতে চালাতে বললো,তো মিষ্টার মঈন সিদ্দিকী এত বছর পরে ধরা পড়েই গেলেন।কিভাবে ধরা পড়লেন জানতেই ইচ্ছা করছে না।
চলবে,,