#প্রণয়ের_আসক্তি
২৯.
#WriterঃMousumi_Akter
নিরবের নির্ঘুম রাতে ফোনের ওপাস থেকে কারো কাঁন্নার আওয়াজ নিরব কে অস্হির করে তুললো।ফোনের ওপাস থেকে খুব জোরে আওয়াজ না আসলেও কাঁন্নাভেজা দীর্ঘশ্বাস শোনা যাচ্ছে।যার নিঃশ্বাস নিরবের ভীষণ চেনা আর ভীষণ আপণ।নিরবের বুকে এই নিঃশ্বাস প্রতিটা রাতে আচড়ে আচড়ে পড়েছে।যে নিঃশ্বাসে অভ্যাস্ত নিরব,নিরবের আসক্তিতে পরিণত হয়েছে।সেই চিরচেনা নিঃশ্বাস চিনতে নিরবের ভুল হলো না।যে নিঃশ্বাস শোনার জন্য ডানা কাটা পাখির মতো ছটফট করেছে নিরব চাতক পাখির মতো খুজে চলেছে তার প্রাণের থেকে প্রিয় মানুষ টাকে। সেকেন্ডের মাঝে নিরবের হার্টের বল্ক খুলতে শুরু হলো।নিরবের বন্ধ হয়ে আসা দম সেকেন্ডের মাঝেই হালকা হয়ে গেলো।নিরব প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো।এতদিন ভীষণ শ্বাসকষ্টে ভুগেছে নিরব।তার অক্সিজেন নামক মানুষ টা মৃথিলা তার চোখের আড়ালে ছিলো।
নিরব প্রাণ ভরে মৃথিলার উপস্হিতি অনুভব করে করুণ কন্ঠে মৃথিলার নাম ধরে ডাক দিলো “মৃথিলা”
“ফোনের ওপাস থেকে স্বজোরে কেঁদে দিলো মৃথিলা।নিরবের ডাকে মৃথিলার কাঁন্না আরো বেড়ে গেলো।”
“সেকেন্ডের মাঝেই নিরবের চোখে পানি চলে এলো।নিরব মৃথিলাকে হারানোর চরম আর্তনাদ নিয়ে ভীষণ ভাবে পুড়েছে। ”
“আমি জানতাম জানপাখি তুমি আছো।আমার মন আমাকে কখনো দূর্বল করে নি।তুমি কোথায় আছো মৃথিলা আমাকে একটু ইশারা করো আমি এক্ষুনি আসবো।তোমাকে আমার কাছে আনতে সব কিছু উলট পালট করে হলেও আনবো।”
“মৃথিলা ক্লান্ত কন্ঠে বললো,আপনার সাথে আমার হয়তো ইহজীবনে আর দেখা হবে না।ও আমাকে আপনার কাছে যেতে দিবে না।খুব কাঁদছে মৃথিলা।”
“নিরবের শরীরের রক্ত জ্বলে উঠলো। নিরব মৃথিলাকে বললো, তোমার সাথে আমার দেখা হবে মৃথিলা।সেটা খুব শিঘ্রই হবে।”
এরই মাঝে কেটে গেলো মৃথিলার কল।নিরব কয়েকবার কল করলো কিন্তু রিসিভ হলো না কল।নিরব চোখ মুখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস টেনে ভারী বুকটা হালকা করার চেষ্টা করলো।বেলকনির দরজা খুলে আকাশ পানে তাকিয়ে বললো,”মৃথিলা তুমি মানে এক আকাশ দীর্ঘশ্বাস।”আগলে রাখতে না পারার ভুলে আজ তুমি ছাড়া প্রতিটা দিন বিষদময়।
নিরব সাথে সাথে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।নাম্বার টা কোন লোকেশনে আছে চেক করে দেখলো,কিশোরগঞ্জ সরকারী হসপিটালে আছে।নিরব সেই মধ্য রাতেই বাইক নিয়ে ছুটলো।রাস্তায় নিজের এক্সিডেন্টের কোনো হুঁশ নেই নিরবের।তার এখন যেভাবেই হোক কিশোরগঞ্জ পৌছাতে হবে।উন্মাদের মতো বাইক চালাচ্ছে নিরব।ঘামে ভিজে যাচ্ছে সমস্ত শরীর।পথ যেনো শেষ ই হচ্ছে না।মন দৌড়ালে পথ শেষ হতে চায় না।পরের দিন সকাল এগারো টায় নিরব কিশোরগঞ্জ হসপিটালে পৌছালো।হসপিটালের করিডরে রেজিস্টারে গিয়ে ফোন নাম্বার টা দেখালো।নাম্বার টা অর্থোবিভাগের সিনিয়র ডাক্তারের।ডাক্তার দোতলায় আছেন।নিরব দোতলায় ছুটে গেলো।ডাঃহাসান আহমেদ ডাক্তারের নাম।নিরব ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলো সে গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার।ডাক্তার একটু ভয় পেয়ে গেলো তারা নামে কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে কিনা।ডাক্তার দেখতে বয়সে অনেক বড় নিরবের।নিরব কে বললো বসুন প্লিজ, কোনো সমস্যা হয়েছে?
নিরব বললো আমাকে তুমি করেই বলুন প্লিজ।
‘ নিরব ডাক্তার কে মৃথিলার ছবি দেখিয়ে বললো মেয়েটিকে চিনেন ডাক্তার। আপনার ফোন থেকেই ফোন দিয়েছিলো।’
‘ডাঃহাসান মাহমুদ একটা দীর্ঘঃশ্বাস নিয়ে বললো মেয়েটি তোমার কি হয়।’
‘আমার ওয়াইফ।’
‘তুমি ই কি নিরব?’
‘জ্বী?কোথায় মৃথিলা?’
‘ওরা তো চলে গিয়েছে।’
‘ওহ মাই গড কখন ডাক্তার।’
‘সকালেই।’
‘ওহ শিট!মিথু আমি কি আবার ও হারিয়ে ফেললাম তোমাকে।’
‘তোমাদের কি ডিভোর্স হয়েছে?’
‘নো ডাক্তার,আমার প্রাণের থেকে প্রিয় আমার ওয়াইফ ওর সাথে আলাদা হওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না?’
‘আশ্চর্য তুমি না তাকে ছেড়ে দিয়েছো’
‘মেয়েটি তোমাকে হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে।নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করেছে।সারাক্ষণ নিরব নিরব করেছে। চোখ খুলতে পারে নি অথচ মুখে একটা নাম ই বলে গিয়েছে আমাকে নিরবের কাছে দিয়ে আসুন।আমি ওর কাছে গেলেই সুস্থ হয়ে যাবো।’
‘ওহ নো!একটুর জন্য পেলাম না।ও কেমন আছে ডাক্তার।’
‘মিথ্যা বলবো না।মেয়েটির অবস্থা ভাল না।যন্ত্রনায় ছটফট করছে।মেয়েটি তোমাকে পেলে হয়তো বেঁচে যেতো।তোমাকে পাওয়ার হাহাকার মেয়েটিকে আরো অসুস্থ করে তুলেছে।’
‘আপনাকে কে বলেছে আমাদের ডিভোর্স হয়েছে।’
‘ওর বোন নিয়ে এসছিলো।বললো,আমার বোন কে ওর হাজবেন্ড ডিভোর্স দিয়েছে।ভীষণ ভালবাসে ওর হজবেন্ড কে।তাই সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে।’
‘নিরবের টেনশনে কপাল ফেটে যাচ্ছে।নিজের চুলে মুঠি বদ্ধ ভাবে ধরে নিজেকে সামলে নিলো।
প্লিজ হেল্প মি ড়াক্তার!আমি রিকুয়েষ্ট করছি আমাকে হেল্প করুণ ডাক্তার।’
‘তোমাকে এমন লাগছে কেনো?এমন করছো কেনো?’
‘আই নিড মাই ওয়াইফ ডাক্তার এট এনি কস্ট।’
‘আপনি কি কোনো তথ্য দিতে পারবেন ওরা কোথায় আছে?’
‘না, তবে সাত দিন পর মৃথিলার বোন বিদেশ চলে যাবে মৃথিলাকে সঙ্গে নিয়ে।বললো মৃথিলার ট্রিটমেন্ট এর জন্য ই যাবে।’
‘ডাক্তার কোন না কোন ক্লু তো আপনি দিতে পারবেন আমাকে।’
তুমি আমাকে খুলে বলবে কি সমস্যা
নিরব সব কিছু খুলে বললো।ডাক্তার শুনে চমকে গেলেন।ডাক্তার টেবিলে একটা কিল মেরে বললেন ওহ শীট!আমার হাতের মধ্য ছিলো অথচ মেয়েটাকে বুঝতেই পারলাম না।এইজন্য মেয়েটা বার বার কিছু বলতে চাইতো আমাকে।সব সময় ওর বোন ওর সাথেই ছিলো। তবে ওর বোন নেকাপ করে থাকতো মুখ দেখি নি কখনো।
–আমাকে মৃথিলার কেবিনে নিয়ে যেতে পারবেন ডাক্তার।
ডাক্তার নিরব কে মৃথিলার কেবিনে নিয়ে গেলো।নিরব কিছু খোজার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না।মৃথিলার বেডের সাদা চাঁদর টা এক পাশে দলা করে রাখা।নিরব চাঁদর ঝাড়ি দিতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।
চাঁদরে মৃথিলা লিখে রেখে গিয়েছে” প্রিয় ভালবাসা, আমি জানি আমার ফোন পেয়ে তুমি এখানে আসবেই।যেভাবেই হোক আসবে কিন্তু তখন আর আমি থাকবো না এখানে।তুমি ছাড়া বেঁচে থেকেও মরে গিয়েছি আমি।আমাকে ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুর কথা মনে করাচ্ছে আপু।এ কদিনে অসংখ্যবার শারীরিক অত্যাচার চালিয়েছে।শুধু তোমাকে জীবনে আরেক বার চোখের দেখা দেখতে পাবো এই আশায় এত কঠিন অত্যাচার সহ্য করেও বাঁচার জন্য প্রার্থনা করছি।আমাকে যদি একবারে মেরে ফেলতো তাহলে এতটা কষ্ট ভোগ করতে হতো না।আপু চায় আমাকে তীলে তীলে মারতে।একবার মারতে একবার বাঁচাতে।আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে দেখলেই নাকি তার প্রশান্তি হচ্ছে।এইখানে আবার ও আসবে আপু আমাকে নিয়ে তুমি আমার অপেক্ষা করো প্লিজ।কবে নিয়ে আসবে জানিনা তবে আমি বলাবলি করতে শুনেছি।”
প্রিয়তমার লেখা এমন নির্মম চিঠিতে নিরবের আরো কাঁন্না পাচ্ছে।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে।মৃথিলাকে বুকের মাঝে আগলে রাখতে মন চাইছে তার।
নিরব তার সকল গোয়েন্দা ফোর্স কাজে লাগিয়ে দিলো।
————————————————————
নিরব আবার ও ফিরে গেলো ঢাকায়।মুনতাহার পরিবার আজ উপস্হিত জেল খানায়।পুলিশের সকল বড় বড় অফিসার রা উপস্হিত।নিরব কে বাহবা দিচ্ছে মঈন সিদ্দিকীর মতো ক্রিমিনাল কে ধরে দেওয়ার জন্য।সেই পাশাপাশি সবাই সাপোর্ট ও দিচ্ছে তারা নিরবের ওয়াইফ কে খুজতে সাহায্য করবে যে কোনো উপায়ে খুজে দিবে।আজ ঊনিশ টা বছর পরে মুনতাহার মা তার স্বামি কে দেখছে।চোখ ভরা অশ্রু।মুনতাহার বাবার সাথে পালিয়ে এসছিলো সে।দুজন দুজন কে ভীষণ ভালবাসতো। সেই ভালবাসার জোরেই ঘর ছেড়েছিলো।কিন্তু যার জন্য ঘর ছেড়েছিলো সে বিয়ের চার বছর পর তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।মুনতাহার মা মুনতাহার বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আজ।হাজারো প্রশ্ন তার মনে।”কি অপরাধ ছিলো আমার।কেনো করলে এমন।আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ঘর ছাড়া করলে।ছোট্ট মেয়েটাকে আমার কোলে রেখে আমার পেটে আরেক টা সন্তান রেখে উধাও হয়ে গেলে।একটা বার ও ভাবলে না ছোট মেয়েটাকে নিয়ে কিভাবে থাকবো আমি।এই নিষ্টুর, বেঈমান একটা দিন ও খোজ নিয়েছিস আমার।ছেলে মেয়ে নিয়ে বেঁচে আছি নাকি মরে গিয়েছি।ক্যানো ঠকালে আমাকে।তাকাও আমার দিকে তুমি।তুমি আরেক টা বিয়ে করেছো?বলো আমাকে তুমি।
মঈন সিদ্দিকীর চোখ ভরা পানি।ছল ছল চোখে তাকিয়ে বললো,আমি বিয়ে করিনি।আমাকে ক্ষমা ও করো না।আমি অপরাধী তোমার কাছে।
বাহ!এতটুকুই।এটা ছিলো তোর শেষ কথা।তোর মেয়ে যে কিনা তোর কলিজা ছিলো আজ তাকেই চিনিস না।
আমার মুন কে আমি চিনি।মঈন সিদ্দিকী কাঁদছে আজ রাতেই তার ফাঁসি।
মুনতাহা বাবার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,বাবা আমি আগে জানতাম আমার বাবার মতো কেউ আমাকে ভালবাসে না।আমার বাবা বেষ্ট বাবা।তোমার আদর গুলো আজ ও মিস করি।তোমার ঘাড়ে চরা,তোমার বুকে ঘুমোনো রোজ রাতে স্বপ্ন দেখি আমি।কেনো হারিয়ে গিয়েছিলে বাবা।
মা তোমার এই খারাপ বাবা কে ভুলে যাও।আমি তোমার বাবা হওয়ার যোগ্য না।তোমার জন্য আমি যে সম্পত্তি রেখেছি তোমার ফিউচারে টাকার অভাব হবেনা।
মুনতাহার মা মুনতাহার বাবার গালে থু থু ছিটিয়ে বললো,তোর পাপের টাকা তুই কবরে নিয়ে যা।তোর নাম মঈন সিদ্দিকী কিভাবে হলো।তোর নাম তো মঈন না।তুই কবে থেকে মঈন সিদ্দিকী হলি।কয়টা নাম তোর একবার মঈন একবার রহিম আর কতগুলো নাম আছে তোর।নিজের একটা মেয়ে থাকতে মেয়ে পাচার করতে লজ্জা করে না তোর।অফিসার ওকে ফাঁসি দিন।তার থেকেও জঘন্য কোনো মৃত্যু থাকলে ওকে দিন অফিসার।
মঈন সিদ্দিকী চোখ ভরা পানি নিয়ে বললো,এই অপরাধী মানুষ টার ভালবাসা নিষ্পাপ ই ছিলো।
সেদিন রাতেই ফাঁশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয় মঈন সিদ্দিকী কে।পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিন্ত যে পাচারকারী রা এবার হয়তো ভয় পাবে।পাচার হয়তো বন্ধ হবে।
দেশের মানুষ গুলো ও শান্তি পেয়েছে এমন অপরাধীর মৃত্যুর খবর শুনে।
চলবে,,