প্রতিশোধের অঙ্গীকার পর্ব-১২+১৩+১৪

0
479

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_বারো

[ পর্বটা একটু রোমান্টিক,, যাদের ভালো লাগবে না প্লিজ ইগনোর করবেন]

ব্রেকফাস্ট সেড়ে জাভিয়ান তাড়াহুড়ো করে তৈরি হতে থাকে। রেডি হয়ে বের হয়ে যাবে এই সময় হানিয়া তার সামনে এসে বলে–

–আপনার সব ড্রেস আমি গুছিয়ে রেখে এসেছি,,এলোমেলো করে পরে যদি আমাকে দোষ দেন যে আমি কিছু ঠিক করে আসি নি তাহলে কিন্তু খবর আছে।

জাভিয়ান তাড়াতাড়ি করে বলে–

–আচ্ছা দিব না দোষ। এখন যেতে দাও।

কথাটা বলে জাভিয়ান চলে যেতে নেয় তখনই শুনতে পায়,, হানিয়া আফসোস করে বলছে–

–হায় রে কপাল মন্দ,,চোখ থাকিতেও অন্ধ হয়ে এমন আনরোমান্টিক বর পছন্দ করলাম। মানুষরা বাহিরে যাওয়ার সময় বউদের কত ভালোবাসা-আদর দিয়ে যায়,, আমার কপালে তো সেটা নেই আমি তা ভালো করেই জানি,,কিন্তু একটু সুন্দর করে বিদায়ও নিতে পারে না আমার বরটা। এর চেয়ে ভালো আমার কলেজের মফিজ। ভালো হতো ছেলেটার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে নিতাম,,দেখে তো মনে হয় ভালোই রোমান্টিক ছিল ছেলেটা। হায়রে কপাল!!!!!

জাভিয়ান তার হাটা থামিয়ে হানিয়ার পুরোটা কথাই শুনে। আজ সকাল থেকেই মেয়েটা তার মাথা গরম করে দিচ্ছে। এখন আবার বলে কিনা কোন মফিজের প্রপোজাল এক্সেপ্ট করলে নাকি ভালো হতো,,তার উপর কি বললো,,জাভিয়ান আনরোমান্টিক।। এত বড় অপবাদ। নাহ,,এটা তো কিছুতেই বরদাস্ত করা যায় না।

সে সে আলতো হাতে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে হানিয়ার কাছে আসে। হানিয়া তাকে তখনও দেখেনি,,সে তার কথাগুলো বলে আপন মনে বিছানা গুছাচ্ছে। ঝট করে জাভিয়ান হানিয়ার বাম হাতের বাহু ধরে সোজা করে দাঁড় করায়,,তারপর কোন কথাবার্তা ছাড়াই দু’জনের ওষ্ঠজোড়া এক করে দেয়। নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আদর দিতে থাকে হানিয়ার ওষ্ঠে। হানিয়া অবাক হয়ে কোন রেসপন্স করাই ভুলে যায়। জাভিয়ান তার রেসপন্স না পেয়ে আলতো করে কামড় দিতে থাকে হাতিয়ার ঠোঁটে। ঠোঁটে হালকা ব্যথা পাওয়ায় হানিয়ার ধ্যান ফিরে। সে জাভিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে জাভিয়ান তাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলছে রেসপন্স করতে। একসময় হানিয়া নিজের চোখ বন্ধ করে নিজের একহাত দিয়ে জাভিয়ানের কাঁধ চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে ঘাড়ের পেছনের চুল খামচে ধরে নিজেও তাল মিলাতে শুরু করে জাভিয়ানের সাথে।

বেশ কিছুক্ষণ নিজেদের ওষ্ঠে ভালোবাসার আদান-প্রদান করে জাভিয়ান-হানিয়া। তারা যখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই এশা যাচ্ছিল হানিয়ার রুমের পাশ দিয়ে। কুটনি বুড়িটা কি মনে করে হানিয়ার রুমে উঁকি দিলে তাদের এমন অবস্থায় দেখে ফেলে। কলিজা পর্যন্ত জ্বলে উঠে তার। সে একটু নাটক করে তাদের দরজায় নক করে বলে–

–হানিয়া আসবো?

এশা এমন একটা ভান করে জানি সে কিচ্ছুটি জানে না,,দেখেনি। এশার আওয়াজ পেয়ে হানিয়া-জাভিয়ান নিজেদের ওষ্ঠ ভালোবাসার সমাপ্তি দেয়। জাভিয়ান হানিয়ার ঠোঁট ছেড়ে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে দরজার কাছে চলে যায়। নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে দরজা খুলে,, এশাকে দেখতে পেয়ে বলে–

–ভাবীর ভীষণই রংটাইমে চলে আসার অভ্যাস দেখি। যাইহোক,,বউটাকে রেখে যাচ্ছি একটু দেখে রেখেন। এই কয়েকদিনে এমন পাগল হয়েছে আমার জন্য যে কিছুতেই যেতে দিচ্ছে না। ভালো থাকবেন ভাবী। আল্লাহ হাফেজ।

কথাটা বলে একটা বাকা হাসি দিয়ে জাভিয়ান চলে যায়। পেছনে রেখে যায় তার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যাওয়া দুই রমনীকে।।

___________________

হানিয়ার পুরোটা দিন কেটে যায় জাভিয়ানের কাজ আর কথা ভেবেই। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার চুমু খেলো তাকে। আর লাস্টে ভাবীকে ওটা কি বলে গেলো? কথাটা ভাবতেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে।

সন্ধ্যায় হানিয়া রুমে বসেই টুকটাক কাজ করছিলো,,তখনই এশা আসে তার রুমে। হানিয়া একটু অবাকই হয় এশা আসায়। কারণ বিয়ের পর থেকে বলতে গেলে এশা খুব কমই তার বা সোনিয়ার রুমে গিয়েছে। তার হাতে আবার চায়ের মগ। হানিয়া এশার কাছে এগিয়ে এসে বলে–

–আরে ভাবী তুমি?

এশা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে–

–হ্যাঁ,,আমি। আর দু’দিন পর তো চলেই যাব তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু গল্প করি। নতুন সংসার জীবন কেমন কাটাচ্ছ ননদিনী??

হাতের চায়ের মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে কথাগুলো এশা। হানিয়া সরল মনেই তার থেকে চা টা নিয়ে কথা বলতে থাকে।

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবী। আসো বস।

তারা দু’জন গিয়ে বেডে বসে পরে। বেশ কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে তারা। কথা বলার এক পর্যায়ে এশা বলে–

–কি ব্যাপার হানিয়া তোমাকে একটু অন্যমনষ্ক লাগছে। কি হয়েছে তোমার? কিছু হলে খুলে বলতে পার আমাকে?

হানিয়া চমকে গিয়ে বলে–

–কই ভাবী না তো।আমি ঠিক আছি।

–উঁহু,, একদম মিথ্যা কথা নয়। আমি তোমার চোখ মুখ দেখেই বলে দিতে পারছি কিছু একটা কারণে তোমার মনটা খারাপ। কি হয়েছে বলো আমাকে??

–না না ভাবী। সত্যি কিছু হয় নি।

–ওয়েট আমিই বলে দিচ্ছি। জাভিয়ানের সাথে কথা হয়নি তোমার তাই না? এজন্য মন খারাপ।

এশা আন্দাজেই ঢিলটা মারে আর তা সঠিক জায়গায় লেগেও যায়। হানিয়ার যদিও জাভিয়ানের সাথে কথা বলার জন্য মনটা আকুপাকু করছিলো। এশার কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে হানিয়ার মনটা আসলেই খারাপ করে দেয়। হানিয়া বলে–

–তেমন কিছু না ভাবী। উনি ফ্রি হলে কল দিবে এখন হয়তো বিজি।

–বউয়ের কাছে কীসের বিজি? আগে বউ,,তারপর বাকি কাজ। তুমি এখনি তাকে ফোন দাও,,আমি তাকে জিজ্ঞেস করব সে কেন আমার মিষ্টি ননদের মনটা খারাপ করিয়ে রেখেছে। দাও এখনি দাও।

এশা ভীষণ জোর করতে থাকে হানিয়াকে জাভিয়ানকে ফোন দেওয়ার জন্য। একসময় না পারতে হানিয়া বলে–

–আসলে ভাবী তার নাম্বারটা আমার কাছে নেই।

এশা বেশ অবাকই হয়। বিয়ের এতোগুলো দিন হয়ে গেলো তাও হানিয়ার কাছে জাভিয়ানের নাম্বার নেই। অবাক হওয়ার সাথে একটু খটকাও লাগে। সে জিজ্ঞেস করে—

–এর আগে কথা হয়নি তোমাদের যখন জাভিয়ান বাহিরে ছিলো তখন??

এশার প্রশ্নের জবাবে হানিয়া কি বলবে ভেবে পায় না।
আসলেই তাদের আগে এমন করে ফোনে কথা হয়নি। কিন্তু সে তো আর এই কথাটা তার ভাবীকে জানাতে পারে না,,তাহলে তার মাধ্যমে তার ভাই জেনে যাবে। তখন যদি তারা কিছু সন্দেহ করে? না,,এটা করা যাবে না। হানিয়া এশাকে বলে–

–হয়েছে ভাবী।আসলে আমার ফোনে কিছু সমস্যা হওয়ার কারণে ফ্ল্যাশ মা//রা লাগে যার কারণে ফোন থেকে অনেক কিছু ডিলেট হয়ে গেছে। অনেকে নাম্বারও ডিলেট হয়ে গেছে। আর আমার উনার নাম্বারটা মুখস্থ নেই,, তাই আর কি।

–ওহ্হ,, তাহলে তোমার ও বাড়ির কারো থেকে নাও। নিয়ে কথা বলো। তোমার এই মলিন মুখ দেখতে ভালো লাগছে না আমার।

আসলে এশার আসল উদ্দেশ্য হল যেকোন ভাবে জাভিয়ানের নাম্বারটা তার বান্ধবী লিজার জন্য কালেক্ট করা,,তাই এত ভালো মানুষী দেখাচ্ছে।

এশার জোরাজুরিতে না পেরে হানিয়া মনির কাছে ফোন দিয়ে জাভিয়ানের নাম্বারটা নেয়। হানিয়া যখন মনির থেকে শুনে শুনে জাভিয়ানের নাম্বারটা ফোনে তুলছিলো তখন এশাও লুকিয়ে তার ফোনে জাভিয়ানের নাম্বারটা টুকে নেয়। হানিয়া মনির থেকে জাভিয়ানের নাম্বার নিয়ে জাভিয়ানের ফোনে কল লাগায় তখন এশা বলে–

–আমি যাই বুঝছ। তোমার ভাই আমাকে বলেছিলো তার শার্ট গুলো ইস্ত্রি করে রাখতে,,আমি একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি যেয়ে করে ফেলি। নাহলে পরে রাগ করবে।

–কথা বলবে নাকি উনার সাথে? বলে যাও।

–পরে এক সময় বলব নে। তুমিই বলে মুডটা ভালো করো।

কথাটা বলে হেসে চলে যায় এশা। এদিকে হানিয়া দুরুদুরু বুকে কল লাগায় জাভিয়ানকে।

_____________________

একটা অন্ধকার রুমে জাভিয়ান আর অগত্যা এক ব্যক্তি কথা বলছে। জাভিয়ান ব্যক্তিটিকে বলে–

–ইনজেকশনটা এসে পরেছে??

–হুম। আজই এলো।

অগত্যা ব্যক্তিটি হাতের ইনজেকশনটি জাভিয়ানকে দেখিয়ে কথাটা বলে। জাভিয়ান বলে–

–অনেকদিন ধরেই তো ইনজেকশনটা দেওয়া হচ্ছে তাকে। কোন ইমপ্রুভমেন্ট তো দেখতে পাচ্ছি না। তুমি সিউর,,এটা তার জন্য ভালো হচ্ছে?

অগত্যা ব্যক্তিটি বলে–

–তুমি আমার উপর সন্দেহ করছো জাভিয়ান? তুমি জানো না আমি তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আমি কি চাইব না আমার ভালোবাসার মানুষটি ভালো হয়ে যাক?

–না না সন্দেহ করছি না। জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম। তুমি কিছু মনে করো না।

তাদের কথাবার্তার মাঝেই জাভিয়ানের ফোনটা বেজে উঠে। জাভিয়ান পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে একটা আননোন নাম্বার,,তাই সে কলটা কেটে দেয়। কেটে দেওয়ার কয়েক সেকেন্ড পরে আবার ফোন আসে। অগত্যা ব্যক্তিটি বলে–

–ধরেই দেখো কে ফোন দিয়েছে। হয়ত জরুরি তাই বারবার কল দিচ্ছে। আমি ততক্ষণে কাজটা করে আসছি।

জাভিয়ান ফোনটা রিসিভ করতে করতে বলে–

–হুম তুমি যাও। কাজটা করে আস। আমি আসছি।

কথাটা বলে জাভিয়ান ফোনটা কানে লাগিয়ে বাহিরে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অগত্যা সেই ব্যক্তিটি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে–

–তুমি বললেও আমি আমার কাজটা করব আর না বললেও করব। কারণ আমাকে যে বাঁচতে হবে,,আর তার জন্য তাকে অসুস্থ হয়ে থাকতে হবে এমনি ভাবে সারাটা জীবন। আমি জানি তুমি যদি আমার আসল রূপ সম্পর্কে জেনে যাও তাহলে ওইদিনই হবে আমার শেষ দিন,,তাই তো আমার এতো কুমিরের কান্না,,ভালোমানুষী দেখানো।

কথাটা বলে অগত্যা ব্যক্তিটি রুম কাপিয়ে হাসতে থাকে। তার সেই হাসিই বলে দিচ্ছে সে কতটা নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ কর্মকান্ড করে চলছে।

~চলবে??

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_তেরো

জাভিয়ান ফোনটা রিসিভ করে বলে–

–হ্যালো,,,জাভিয়ান তালুকদার স্পিকিং। হু আর ইউ??

–আসসালামু আলাইকুম। আমি হানিয়া মির্জা। আপনার অপ্রিয় বউ বলছি।

জাভিয়ান বেশ অবাক হয় হানিয়ার ফোন পেয়ে। সে বলে–

–তুমি? তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথা থেকে??

–হুম আমি। আর নাম্বার? চেষ্টা করলেই উপায় হয়,,একটু চেষ্টা করলাম আর আপনার নাম্বার পেয়ে গেলাম। যাই হোক,,কি করছেন?

জাভিয়ান দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে–

–গরুর জন্য ঘাস কাটছি। খাবে?

–ওটা তো আপনার খাবার আমি খাই কিভাবে বলে?

জাভিয়ান তার ত্যাড়া কথার ত্যাড়া জবাব শুনে রাগে আহাম্মক বনে যায়। মেয়েটার কি সাহস বেড়েছে বাপের বাড়ি গিয়ে। সে বলে–

–তোমার মনে হচ্ছে না তুমি একটু বেশিই সাহস দেখাচ্ছ বাপের বাড়ি গিয়ে? দিন শেষে কিন্তু তোমাকে আমার বাড়িই ফিরতে হবে,,তখন কি হবে তুমি বুঝতে পারছ?

–কি আর হবে,,মারবেন? এর চেয়ে বেশি আর কি করবেন? আর সাহসের কি দেখালাম?আপনি জিজ্ঞেস করলেন আমি জবাব দিলাম।

হানিয়ার এমব টপাটপ উত্তর গুলো জাভিয়ানের পছন্দ হলো না তাই সে মনস্থির করল ফোনটা কেটে দিবে। সে এক প্রকার ধমকেই বলে–

–রাখো তোমার ফোন আর তোমার আজেবাজে কথা। আমার তোমার মত এত ফালতু টাইম নেই।

কথাটা বলে জাভিয়ান কলটা কাটতে যাবে তখনই হানিয়া তাড়াহুড়ো করে বলে–

–অ্যাঁই,,অ্যাঁই খবরদার কল কাটবেন না। তাহলে আমি এক্ষুনি বাবাকে ফোন দিয়ে বলবো আপনি আমাকে বকা দিয়েছেন আর বলেছেন আমাকে আর বাবার বাড়ি থেকে ও বাড়িতে নিবেন না।

জাভিয়ান হানিয়ার এমন টাটকা মিথ্যা কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। ধরলাম সে একটু রুড ভাবে কথা বলেছে সেটাকে বকা হিসেবে ধরা যায়,, কিন্তু পরের কথাগুলো সে কখন বললো। সে অবাক হয়েই বলে–

–এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত সবগুলো ফেলে দেবো মিথ্যাবাদী মেয়ে। এগুলো আমি কখন বললাম??

–বলেন নি কিন্তু আমি বাবাকে বলবো।

জাভিয়ান রেগে বলে–

–তোমার জন্য বাবার কাছে একটা বকা খাই,,কালই তোমার বাড়ি গিয়ে হাড়গোড় এক করে আসব।

হানিয়া হেসে দেয় তার এমন কথা শুনে। তার সাথে কি হম্বিতম্বি,, আর বাবার কাছে মিনি বিড়াল। কথাটা ভেবে হানিয়ার হাসি আরো বেড়ে যায়। অন্যদিকে হানিয়ার হাসির আওয়াজ শুনে জাভিয়ানের উত্তপ্ত মস্তিষ্কের হুট করে শান্ত হয়ে যায়,,সেখানে দেখা দেয় মুগ্ধতা।

হানিয়া হেসে হেসেই বলে–

–বাবাকে বিচার দেবো দেখে ভয় পেলেন বুঝি?

হানিয়ার কথায় জাভিয়ান তার মুগ্ধতার দুনিয়া থেকে বের হয়। সে গলায় গম্ভীর্য এনে বলে–

–ভয় পাওয়ার কি আছে। শুধু শুধু মিথ্যা বললে কার না মেজাজ খারাপ হবে?

–আচ্ছা যান মিথ্যা বলবো না আর আপনার সাথে বেশি কথাও বাড়াবো না। কিন্তু এর বদলে আপনাকে একটা কথা দিতে হবে।

–পারব না কোন কথাটথা দিতে। রাখো তুমি।

–হুম রাখেন,,আমিও বাবাকে ফোনটা দিচ্ছি।

জাভিয়ানের মেজাজ এখন ভীষণ খারাপ হয়। সে না পারতে বলে–

–আচ্ছা বলো কি ফালতু কথা দিতে হবে?নিশ্চয়ই দামী কিছু চাইবে যার কারণে আগে থেকেই কথা দিয়ে নিচ্ছ?

–জ্বি না জনাব। বেশি কিছু চাইব না,, শুধু আমি যতদিন এবাড়িতে আছি ততদিন আমি তিন বেলা করে ফোন দিব। আপনি শুধু নিজের মূল্যবান সময় থেকে পাঁচ মিনিট আমাকে দিবেন।

জাভিয়ান হানিয়ার এহেন আবদারে ভীষণ অবাক হয়। সে আসলেই ভেবেছিলো হানিয়া হয়ত দামী কিছু চাইবে,,,কিন্তু তার ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে সে খুবই নগন্য একটা আবদার করল। জাভিয়ান কোন কথা বলছে না দেখে হানিয়া একটু আবেগী গলায় বলে–

–কথা দিন,,প্রতিদিন আমার জন্য এই পনের মিনিট বরাদ্দ রাখবেন?

–ওকে।

কথাটা বলেই জাভিয়ান কলটা কেটে দেয়। এদিকে হানিয়া তো খুশিতে পাগল প্রায়ই।

______________________________

কেটে যায় পাঁচদিন। এই পাঁচদিন বেশ ভালোই কেটেছে হানিয়ার। ওহ্হ,,আবরার আর এশা রাজশাহী ফিরে গেছে। আবরারের ছুটি শেষ,, তাই তাদের চলে যেতে হয়েছে।

জাভিয়ান মাত্রই তাদের একটা সাইট ভিজিট করে কেবিনে এসে বসে। বাবাকে সে নিজ থেকেই সকল প্রকার কাজ থেকে বিরতি দিয়েছে। সেও নতুন,,তাই সবটা বুঝে নিয়ে কাজ করতে তার উপর একটু চাপ পরছে। এইতো,, গতকালই নতুন একটা কোম্পানির সাথে একটা বড় ডিল সাইন করেছে সেটারও আলাদা এক প্যারা।

চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছিল তখনই ফোনটা স্বশব্দে বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার পরিচিত একজন। সে একটু অবাকই হয় এই সময় তার ফোন পেয়ে। জাভিয়ান ভাবে–

–এই সময় তো কখনো ফোন করে না সে। তাহলে কি তার কিছু হয়েছে??

কথাটা ভেবেই জাভিয়ানের বুকটা ধক করে উঠে। সে তাড়াতাড়ি করে ফোনটা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে কয়েকটা কথা শুনে,, যা তাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে বলে–

–আমি কি এখন আসব??

–………….

–আচ্ছা,, কাল তাহলে একবার যাব আমি। খেয়াল রাখবেন তার।

-………….

–রাখছি।

কথাটা বলে কলটা কেটে পুনরায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পরে। চোখ দুটো বন্ধ করে ভাবতে থাকে তাট জীবনের কিছু সুখকর দিনের কথা। চোখের পাতায় ভেসে উঠে এক পবিত্র মুখোশ্রী,,তার হাসি। মানুষটির কথা ভাবতে ভাবতেই জাভিয়ানের বন্ধ চোখ জোড়া বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। তার এই ভাবনা চিন্তার মাঝেই আবার ফোনটা বেজে উঠে। এবার চোখ না খুলেই ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগায়।

–হ্যালো,,জাভিয়ান শিকদার স্পিকিং। কে বলছিলেন?

অপাশ থেকে শুনা যায় এক নারী কন্ঠের হাসি। নারীটি বলে–

–এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে জানননননননন? এই ৩/৪ দিনেও আমার নাম্বারটা সেভ করতে পারলে না?

বেশ ঢং করেই কথাগুলো বলে নারীটি। নারীটির কথাগুলো শুনে জাভিয়ানের মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠে। কয়েকদিন ধরে একজন বেহায়া রমণী তাকে ফোন দিয়ে এমন উতক্ত করছে। কড়া ভাষায়ও কয়েকবার শাসিয়েছে আবার নাম্বারও ব্লক করেছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আজ আবার ফোন দিয়েছে,,তাও আবার জাভিয়ানের এমন বিক্ষিপ্ত মন মেজাজের সময়।

জাভিয়ানের যেন আজ ধৈর্যের সকল বাঁধ ভেঙে যায়। সে ভীষণ ঠান্ডা গলায় বলে–

–আই সোয়্যার,,আর একদিন যদি তুই ফোন দিয়েছিস তোকে যেখান থেকে পারব খুজে বের করে জিন্দা পুঁতে ফেলব। যদি বাঁচতে চাস,,তাহলে আর ফোন দিবি না।

কথাটা বলেই জাভিয়ান ফোনটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা একটু দূরে ছুঁড়ে মারে টেবিলের। আসলে ওই নারীটি ছিলো বেহায়া এশার বেহায়া বান্ধবী লিজা। এশাই তাকে জাভিয়ানের নাম্বারটা দিয়েছিল,,এবং এতদিন সেই জাভিয়ানকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছিলো। আজ জাভিয়ানের এমন ঠান্ডা গলায় বলা কথাগুলো লিজাকে ভীষণ ভয় পাইয়ে দেয়। সেও ভাবে —

–না বাবা থাক,,তার বিরক্ত করব না। পরে যদি সত্যি সত্যি কাজটা করে দেয়। তাছাড়া তার সেই ক্ষমতা আছে,,চাইলেই করতে পারবে।

লিজা মনে মনে তওবা কেটে শপথ করে আর কখনো জাভিয়ানকে ডিস্টার্ব করবে না।

আধা ঘন্টা না যেতেই আবার কল আসে জাভিয়ানের নাম্বারে। এবার জাভিয়ানের রাগ আকাশ ছুঁইয়ে ফেলে। সে নাম্বারটা না দেখেই ফোনটা রিসিভ করে বলতে থাকে—

–এই এই,,এত নির্লজ্জ মেয়ে কেন তুই? তোর মা তোকে কি খাইয়ে জন্ম দিয়েছে? এতবার মানা করা স্বত্বেও ফোন দিচ্ছিস। এক বাপের জন্ম হলে আর জীবনেও আমাকে ফোন দিবি না। ফোন রাখ স্ল*ট কোথাকার।

কথাটা বলে এবার জাভিয়ান ফোনটাকে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে নিজের সব শক্তি দিয়ে। ফলস্বরূপ ফোনটা কয়েক টুকরো হয়ে এখানে সেখানে পরে থাকে। অথচ সে জানতেই পারল না কার রাগ কোথায়,, কাকে দেখাল। তার এমন খারাপ ব্যবহার যে একজনের নিষ্পাপ হৃদয়কে কতটা ক্ষতবিক্ষত করল তা জাভিয়ানের অজানাই থেকে গেলো।

______________

আজ সারাদিনে হানিয়ার ফোন না পেয়ে জাভিয়ান একটু অবাকই হয়েছে। সকালে অবশ্য একবার কথা হয়েছিলো,,কিন্তু তারপর সারাটা দিন আর কোন কথা হয়নি। এসকল কিছুই শুয়ে শুয়ে ভাবছে আর হানিয়ার একটা পিক দেখছে। না চাইতেও মেয়েটার উপর আসক্ত হয়ে পরছে। এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই ক্লান্ত জাভিয়ান একসময় ঘুমিয়ে পরে।

ঘুমায় না হানিয়া। সে তে তার রুমের বড় জানালার কাছে বসে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত। ভাবছে দুপুরের জাভিয়ানের বলা সেই কথাগুলো।

__________

দুপুরে____

আজ হুট করেই হানিয়ার এক্সামের রেজাল্ট দেয়। সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। এমনকি ডিপার্টমেন্ট টপ করেছে। রেজাল্ট দেখেই সবার প্রথমে ফোন লাগায় জাভিয়ানকে। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই জাভিয়ান তার বিষাক্ত কথার বান দিয়ে তাকে খুব বাজে ভাবে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। কীভাবে? আসলে লিজার পর যে ফোনটা এসেছিলো জাভিয়ানের নাম্বারে ওটা হানিয়াই করেছিল। আর জাভিয়ানের ওই বাজে কথাগুলো শিকার হয় হানিয়া। তারপর থেকেই নিজের রুমের দোর দিয়ে অশ্রুপাত করছে হানিয়া।

____

বর্তমান_____

হানিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে–

— হে রহমানুর রাহিম! আমি কি কোনদিন আমার স্বামীর ভালোবাসা পাব না? কখনো সুখের মুখ দেখব না?

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আবারও তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে।

~চলবে?

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_চৌদ্দ

সকালে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করার জন্য উপস্থিত হয় মি.মির্জা,,হানিয়া-সোনিয়া এবং তাদের মা। নাস্তা করার এক পর্যায়ে হানিয়ার বাবা মি.মির্জা বলেন–

–হানিয়া! অনেকদিনই হলো এবাড়িতে তোমার আসার,,এখন বোধহয় তোমার ও বাড়িতে ফিরে যাওয়া উচিত।

মি.মির্জা এমন কথায় উপস্থিত বাকি তিনজনের খাওয়া থেমে যায়। সোনিয়া আর মিসেস মির্জা আঁড়চোখে একবার হানিয়ার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার মি.মির্জার দিকে তাকাচ্ছে। মি.মির্জাও হানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর শুনার আশায়। সকলে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও সে একদমই শান্ত হয়ে নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে। হানিয়ার থেকে তেমন কোন উত্তর না পেয়ে মি.মির্জা পুনরায় বলেন–

–কিছু বলেছি,,আশা করি শুনতে পেয়েছ।

মিসেস মির্জা বুঝতে পারেন তার হাসবেন্ড রেগে যাচ্ছেন,, অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ার আগে সে বলে উঠে–

–খাবারের সময় ছাড়ুন না। খাওয়া শেষ হোক,,তারপর…

মিসেস মির্জা তার পুরো কথা শেষ করার আগেই হানিয়া কিছু কথা শুনা যায়। সে বলে–

–আপনি না বললেও আজই চলে যেতাম। সব গুছিয়ে রেখেছি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর জানাতে চেয়েছিলাম,,তার আগেই….

মেয়ের এহেন কথায় মিসেস মির্জার চোখ ভরে যায়। হানিয়ার মুখে আর খাবার উঠে না। চুপ করে বসে থাকে। মি.মির্জা বলেন–

–বাবা-মা কখনো সন্তানের ভালো ছাড়া খারাপ চায় না। এখন হয়ত আমার কাজগুলো তোমার ভালো লাগছে না,,কিন্তু দেখো একদিন তুমি আমায় কৃতজ্ঞতা জানাবে আমার এসকল কাজের জন্য।

কথাগুলো বলে মি মির্জা উঠে যান টেবিল ছেড়ে। হানিয়াও সে উঠে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই খাবারের টেবিল ছাড়ে। থেকে যায় শুধু সোনিয়া আর মিসেস.মির্জা।

_________________

হানিয়ার তালুকদার বাড়িতে আসতে আসতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যায়। দুপুরের খাবার না খাইয়ে তার মা কিছুতেই মেয়েকে ছাড়বেন না। এর জন্য রওনা হতে হতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল,,তার উপর ঢাকার শহরের জ্যাম তো আছেই।তাই তো এত দেরি হলো। এবাড়ির কেউ জানে না হানিয়া আসবে যে। কলিংবেল দেওয়ার মিনিট দুয়েক পর মনি এসে দরজা খুলে। হানিয়া দরজায় দাঁড়িয়েই তাকে জড়িয়ে ধরে। মনি ভীষণ অবাক হয় সেই সাথে খুশিও হয়।

হানিয়া মনিকে জড়িয়ে ধরেই বলে–

–কেমন চমকে দিলাম মনি?

মনি হেসে দিয়ে বলে–

–ভীষণ চমকে দিয়েছিস পাঁজি মেয়ে। তুই যে আজ আসবি তা একবার বলবি না?

–বললে কি তোমাকে এভাবে চমকে দিতে পারতাম।

মনি হানিয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তার কান আলতো করে টেনে দিয়ে বলে —

–সত্যি করে বলত আমাকে চমকে দেওয়ার জন্য না জানিয়ে এসেছিস নাকি তোর “উনি”কে?

হানিয়া নিজের কানে হাত দিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলে–

–শুধু শুধু কি তোমার চুলে পাক ধরছে,,তুমি বুঝবেন না তাহলে কে বুঝবে আমার মনের কথা।

–ওরে দুষ্টু মেয়ে।দাড়া তোর আজ হচ্ছে।

মনি তাকে চাপড় মারতে গেলে হানিয়া আবার তাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর দু’জনই হেঁসে দেয়। তাদের কথা আর হাসাহাসির আওয়াজে রুম থেকে বের হয়ে আসেন আরসাল তালুকদার আর শায়লা তালুকদার। আরসাল তালুকদার মনিকে জিজ্ঞেস করে–

–কে এসেছে রোজ?

মনি হানিয়াকে ভেতরে নিয়ে এসে বলে–

–তুমিই দেখো ভাই কে এসেছে?

কথাটা বলে হানিয়াকে তাদের কাছে নিয়ে যায়। আরসাল তালুকদার হানিয়াকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। অন্যদিকে শায়লা তালুকদারের মুখটা বিরক্তিতে ছেয়ে যায়। হানিয়া তাদের উদ্দেশ্য বলে–

–আসসালামু আলাইকুম বাবা-আম্মা। আপনারা কেমন আছেন?

আরসাল তালুকদার হাসিমুখে তার সালামের জবাব নিয়ে বলে–

–আলহামদুলিল্লাহ মা। আমরা ভালো ছিলাম আর এখন তো তোকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি। তোকে ভীষণ মিস করছিলাম। এখন এসে গিয়েছিস বাড়িটাও খুশিতে ভরে উঠেছে।

আরসাল তালুকদার হানিয়ার মাথায় স্নেহের হাত রেখে কথাগুলো বলেন। হানিয়া শায়লা তালুকদারের সামনে গিয়ে বলে–

–আম্মা কেমন আছেন?

শায়লা তালুকদার মুখ বেঁকিয়ে বলে–

–দেখতেই তো পারছ সুস্থ-সবলভাবে দাঁড়িয়ে আছি তাহলে বারবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? বাপের বাড়ি গিয়ে চোখের মাথা খেয়ে এসেছ নাকি?

শায়লা তালুকদারের এমন কটু কথায় মুহূর্তেই হানিয়ার হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়। আরসাল তালুকদার আর রোজি বেগমের কথাগুলো শুনে মনটা ভারী হয়ে যায়। আরসাল তালুকদার হানিয়াকে বলে —

–ওর কথায় কিছু মনে করো না তো মা,,তুমি তোমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। জাভিয়ান আজ দেখলাম তাড়াতাড়িই এসে পরেছে। যাও রুমে যাও।

শ্বশুরের কথা শুনে মুহূর্তেই হানিয়ার মনটা ভালো হয়ে যায়। ভাগ্য দেখি আজ তার প্রতি একটু বেশিই সদয়।

____________________

বেশ খুশি মনে হানিয়া রুমে প্রবেশ করে। সে জাভিয়ানকে একটু চমকিয়ে দিবে ভেবে না জানিয়েই চলে এসেছে। কিন্তু এখানে এসে সে নিজেই চমকে যায়। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দরজায়। মন থেকে একটা কথা আসছে–

–সুখ তুমি কেন এত অলীক বস্তু? এই হানিয়া কি কখনোই তোমার ছোয়া পাবে না?

সব নারীই তার স্বামীর পাশে অন্য নারীর ছায়াটা পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না,,সেখানে হানিয়াকে দেখতে হচ্ছে তার অনুপস্থিতিতে তার স্বামী অন্য এক বেগানা নারীর কোলে মাথা দিয়ে শুইয়ে আছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু আছে?

হানিয়া কাঁপা কাঁপা পায়ে রুমে প্রবেশ করে। সোহা আবার এসেছে। নিচে তো কেউ তাকে কিছু বলল না। একটু ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে জাভিয়ান সোহার কোলের উপরে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আর কপালের ডান পাশে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ লাগানো। কি হয়েছে লোকটার?? ব্যথা পেলো কীভাবে? মুহূর্তেই হানিয়ার চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠে। লাগেজটা ছেড়ে তাড়াতাড়ি এসে জাভিয়ানের পাশে বসে। বেডে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সোহা চোখ খুলে তাকায়,, যে কিনা এতক্ষণ বেডের হার্ডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলো তাই হানিয়া যে রুমে প্রবেশ করেছে তা সে দেখে নি।

হানিয়া জাভিয়ানের পাশে বসে আলতো হাতে জাভিয়ানের ব্যান্ডেজের জায়গাটা ছুঁয়ে দেয়। চোখ দু’টো তার অশ্রু কনায় পরিপূর্ণ। কি একটা ভেবে জাভিয়ানের মাথার পাশের বালিশটা ঠিক করে রাখে,,তারপর আলতো হাতে জাভিয়ানের মাথাটা উঁচু করে সেখানে শুইয়ে দেয়। সোহা তার কাজে বাঁধা দিতে গেলে হানিয়া তার দিকে এমন ভাবে তাকায় যে সোহার ভেতর বাহির দুটোই কেঁপে উঠে।

জাভিয়ানকে বালিশে শুইয়ে দেওয়ার পর হানিয়া সোহার দিকে তাকিয়ে বলে–

–তোমাকে ধন্যবাদ ননদিনী আমার অনুপস্থিতিতে তোমার ভাইয়ের খেয়াল রাখার জন্য। এখন তুমি যেতে পারো,, আমি আছি উনার পাশে।

প্রথমত,,জাভিয়ানকে তার কোলের উপর থেকে সরিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত,,জাভিয়ানকে তার ভাই বানিয়ে দিয়েছে হানিয়া। এই দু’টো কাজই সোহার মাথায় আগু//ন ধরাতে যথেষ্ট। তার উপর আবার বলছে ঘরে থেকে বের হয়ে যেতে। এটা যেন আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলো। সোহা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় প্রচন্ড রাগ নিয়ে। হানিয়ার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে হানিয়াকে বলে–

–আসছ পর থেকে তোমার একের পর এক কাজ দেখে আমার বিষ্ময়কে আকাশ ছুঁয়ে দিচ্ছে। তোমার সাহস হয় কি করে জাভিয়ানের মাথা আমার কোল থেকে সরানোর? তার উপর তাকে আমার ভাই বলছ। সাহস হয় কি করে তোমার? তুমি জানো,,ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।

হানিয়া তার এমন কথায় সম্মান পরিমাণেও রাগ করে না। বরং একটা চমৎকার হাসি দিয়ে বলে–

–বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো হয় তো নি। হয়েছে আমার সাথে,, যার সাথে হওয়ার কথা সেই তার সাথেই হয়েছে। আর জাভিয়ান কি? বয়সে তোমার থেকে গুনে গুনে এগারো বছরের বড়। এরপর থেকে যদি উনার নাম ধরে ডাকতে শুনেছি এমন এক চাপড় দিবো না নিজের নামও ভুলে যাবে। আমার অসহায় রূপ দেখেছ,,আমার রুদ্রাণী রূপ দেখাতে বাধ্য করো না। কেঁদে কুল পাবে না।

সোহা হানিয়ার কথা শুনে হা হয়ে যায়। কি তেজ কথাগুলোর। শান্তস্বরে বলা কথাগুলো গায়ে কাটা দিয়ে দিচ্ছে। অজানা এক ভয়ে আপনাআপনিই সোহার উচু করে রাখা আঙ্গুলটা নিচে নেমে যায়। হানিয়া এবার গলায় কিছুটা গম্ভীর্য নিয়ে বলে–

–আমি এক থেকে তিন গোনার আগে যেনো তোমাকে রুমের বাহিরে দেখি। নাহলে আমি যদি বের করি তাহলে তোমার জন্য কিন্তু ভালো হবে না।

–এক…

সোহা রাগে হিসহিসিয়ে বলে–

–বেশি বাড় বেড়েছ তুমি। আমায় এই রুম থেকে আজ বের করে দিলে না,,খুব শীঘ্রই আমি হব এই ঘরের মালকিন আর তুমি থাকবে আমার জায়গায়।

— তা তো সময়ই বলে দিবে। এবার বের হও।

–ইউ…

সোহা তেড়ে হানিয়ার দিকে আসতে চাইলে হানিয়া হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়।

–দুই…

সোহা বুঝতে পারে না যেয়ে উপায় নেই। তাই ধুপধাপ পা ফেলে বের হয়ে যায় রুম থেকে। তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হানিয়া একটা বাঁকা হাসি দেয়। সে ঠিক করেছে এবার থেকে আর মুখ বুঁজে সব সহ্য করবে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে,,নিজ যোগ্যতা বলে আদায় করে নিবে জাভিয়ান আর তার শ্বাশুড়ি ভালোবাসা। তারপর গুছিয়ে সংসার করবে ওই নিষ্ঠুর লোকটার সাথে।

জাভিয়ানের কথা মনে পরতেই ঘাড় ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকায়। মুখটা কেমন শুকনো লাগছে তার। ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে জাভিয়ানের শিয়রে বসে পরে। হাতটা এগিয়ে নিয়ে রাখে জাভিয়ানের চুলের ভাঁজে। কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়। তারপর মুখ নামিয়ে এনে আলতো ভাবে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় জাভিয়ানের গম্ভীর মুখটায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে–

–তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান বরসাহেব।

কথাটা বলে উঠে দাঁড়ায় সে। মন বলে উঠে তার ফ্রেশ হওয়া উচিত। লাগেজ থেকে এক সেট পোশাক নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। হানিয়া ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করার পরপরই ঘুমন্ত সেই পুরুষটির ঠোঁটে এক চিলতে হাসি দেখা দেয়। আসলেই কি সে ঘুমিয়ে নাকি ঘুমের ভান ধরে আছে? বুঝা যায় না তা।

~চলবে?