#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_পনেরো
জাভিয়ানের রুম থেকে বের হয়েই সোহা নিজের রুমে চলে এসেছে,,আর রাগে হাস ফাঁস করছে। আজকে মতো এমন অপমান সে তার এ জীবনে আর দু’বার হয়নি। রাগে নিজের মাথার চুল নিজেই খামচে ধরে। তার এই সকল কর্মকান্ডের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় মিসেস তালুকদার অর্থাৎ জাভিয়ানের মা। ভাগ্নীকে এমন করে বসে থাকতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে তার পাশে এসে বসে। ন্যাকামি করে বলে–
–কি হয়েছে মামুনি? এমন নিজের চুল খামচে ধরে বসে আছো কেন?
সোহাকে তার বাবার পর সবচেয়ে বেশি আস্কারা দেয় যে ব্যক্তিটি সে হলো এই শায়লা তালুকদার। এই দু’জনের কারণেই মেয়েটা এই বয়সেই এস বিগড়ে গেছে। সোহা তার খালামনিকে দেখে এবার কেঁদেই দেয়। শায়লা তালুকদার তাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে–
–কি হয়েছে মা? বল আমাকে! কেউ কি কিছু বলেছে তোকে?
সোহা কান্না করতে করতে বলে–
–শুধু কিছু বলেই নি প্রচন্ড অপমানও করেছে।
শায়লা তালুকদার তো একথা শুনে ভীষণ রেগে যান। সে বলেন —
–কার এত সাহস? আমার বাড়িতে আমার সোহাকে অপমান করেছে। আজ এর একটা হেস্তনেস্ত না করে আমি খাবার খাবো না। তুই বল মা কে তোকে অপমান করেছে? তারপর দেখ তাকে কি করি আমি।
–হানিয়া ভাবী করেছে অপমান খালামনি।
–কিহহহহহহহ? ওর এত সাহস? কি বলেছে তোকে?
–আসলে খালামনি বিকালে তুমিই তো এসে আমাকে বললে জাভিয়ানের নাকি মাথা ব্যথা করছে আমি যেন তার রুমে গিয়ে তার মাথা টিপে দেই। তো আমি গেলাম তার রুমে,,জাভিয়ান শুরুতে আমাকে মানা করে দেয়। তারপর অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর সে রাজি হয়। কিন্তু জাভিয়ান আমাকে বলে দেয় যে,,সে ঘুমানোর পর যাতে আমি নিজের রুমে চলে আসি। আমি জাভিয়ানের মাথা টিপে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সে ঘুমিয়ে পরে আমার কোলেই কিন্তু আমি আসি না নিজের রুমে।এই ভেবে যদি তার মাথা আমার কোল থেকে সরাতে গেলে যদি তার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যায়। তাই আমি তার রুমেই বসে ছিলাম।তখন হঠাৎ করে হানিয়া ভাবী এসে পরে। এসে আমাকে যা নয় তা অপমান করতে শুরু করে,,আমি নাকি জাভিয়ান ভাইয়াকে ফুসলানোর চেষ্টা করছি।
এমনই আরো অনেক সত্য-মিথ্যা কথা বলে শায়লা তালুকদারের কাছে হানিয়ার নামে বিচার দেয় সোহা। শায়লা বেগম তো এমনিতেই হানিয়াকে দেখতে পারেন না,,তার উপর প্রিয় ভাগ্নীর অপমানে শুনে তার মন আরো বিষে ভরে উঠে। সে সব শুনে রেগে যায়। সে বলে–
–কি? ওই ছোট লোকটার এত সাহস তোকে এমন ভাবে অপমান করছে,,দাঁড়া আজ ওর একদিন কি আমার একদিন। আজই তোর আঙ্কেলের কাছে আমি ওর নামে নালিশ করব,,সে যতক্ষণ না এর যথাপোযুক্ত বিচার করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে আমার কোন কথা নেই।
সোহা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে–
–তাহলে খালামনি তুমি সঠিক বিচারের আশা ছেড়ে দাও। তুমি জানো না,,আঙ্কেল আমাকে কতটা অপছন্দ করেন আর হানিয়া ভাবীকে কতটা পছন্দ করেন? আমি তো জানি আঙ্কেল আমাকে কতটা অপছন্দ করেন যার কারণে আমার আর জাভিয়ান ভাইয়ার বিয়েটাও হতে দিলেন না।
শায়লা বেগম ভেবে দেখলেন সোহা মিথ্যা বলছে না। শায়লা বেগমকে এক মনে ভাবতে দেখে সোহা বুঝতে পারে তাট ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল কাজে দিচ্ছে। সে আরেকটু মিথ্যামিথ্যি চোখের পানি ফেলে বলে–
–থাক বাদ দাও খালামনি। আমি কাল বাসায় চলে যাব,,এখানে থাকলে আমাকে হয়ত আরো অপমানিত হতে হবে। আমি না হয় তোমার মুখ দেখে সব অপমান সহ্য করে থেকে যাব কিন্তু বাবা? বাবা যদি একবার এসব কথা জানে তাহলে ভীষণ কষ্ট পাবে,,হয়ত সে আর কখনোই আমাকে এ বাড়িতে আসতে দিবে না। আমি তো আর জেনে বুঝে বাবাকে কষ্ট দিতে পারি না। তাই আমি কালই চলে যাব।
শায়লা বেগম তৎক্ষনাৎ সোহাকপ নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে–
–কোথাও যাবি না তুই। এটা আমার বাড়ি,,আমার বাড়িতে আমারই ভাগ্নী নাকি অপমানিত হয়ে চলে যাবে আর এটা আমি এতো সহজে মেনে নিবো? কখনোই না। তোর আঙ্কেলের কথা বাদ দিলাম,,আমি জাভিয়ানকেই বলব তার বউয়ের এমন দুঃসাহসের কথা। জাভিয়ান আর যাই হোক আমার কথা ফেলবে না। আজকে তুই যতটা না চোখের পানি ফেললি কাল এর দ্বিগুণ পানি হানিয়ার চোখ থেকে ঝড়বে। এটা আমার প্রমিস তোর কাছে সোনা।
সোহাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেই কথাগুলো বলেন শায়লা বেগম। সোহা তার কথার কোন প্রতিউত্তর করে না। শায়লা বেগমের বুকে মাথা রেখেই একটা শয়তানি হাসি দেয়।
_______________________
কিছুটা অস্বস্তি বোধের কারণে জাভিয়ানের ঘুমটা ভেঙে যায়। সে শুইয়ে থেকেই হাতড়িয়ে নিজের ফোনটা খুজে বের করে সময় দেখে নেয়। রাত তখন দুইটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। রুমের মধ্যে কেউ চলাফেরা করছে বুঝতে পেরে জাভিয়ান শোয়া থেকে উঠে বসে। দেখে হানিয়া নামাজের হিজাব খুলছে। তার মনে প্রশ্ন জাগে এত রাতে হানিয়া না ঘুমিয়ে কি করছে। নিজের কৌতুহলকে না দমিয়ে রেখে সে হানিয়াকে জিজ্ঞেসই করে ফেলে–
–হানি,,এত রাতে না ঘুমিয়ে কি করছো?
হঠাৎই জাভিয়ানের গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে হানিয়া কিছুটা চমকে যায়। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে,,তারপর পা চালিয়ে জাভিয়ানের কাছে এসে পরে।
–কি হয়েছে আপনার? ঘুম থেকে উঠলেন কেন হঠাৎ? খারাপ লাগছে কোথাও? ক্ষুধা লেগেছে? খাবার আনি?
নিজের প্রশ্নের বদলে পাল্টা প্রশ্ন শুনলে কেমন যে মেজাজ গরম হয় রে ভাই,,ঠিক এখন যেমনটা হচ্ছে জাভিয়ানের। সে করলো একটা প্রশ্ন তার তো জবাব দিলোই না উল্টো তাকে ফিরতি কতগুলো প্রশ্ন করে মাথা খেয়ে ফেলছে। সে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে বলে–
–মেয়ে তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি তার জবাব না দিয়ে তুমি কতগুলো প্রশ্ন করলে? স্টুপিড কোথাকার। যা জিজ্ঞেস করেছি তার জবাব দাও।
হানিয়া নিজের ভুলটা বুঝে জাভিয়ানের আড়ালেই জিভ কাটে। তারপর বলে–
–নামাজ পড়ছিলাম।
জাভিয়ান বলে–
–ওহ্হ,, তা শেষ হয়েছে তোমার নামাজ?
–জ্বি। আপনার কিছু লাগবে? রাতে তো ডিনার করেন নি,,আনি এখন কিছু?
খাবারের কথা শুনে ইতিমধ্যে জাভিয়ানের পেট জানান দিচ্ছে,, বেশ কিছুক্ষণ ধরে তার পেটে কিছু পরেনি,, এখন না খেলেই নয়। কিন্তু মাথাটাও চিনচিনিয়ে ব্যথা করছে। নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। তাই সে বলে–
–মাথার ব্যথাটা এখনো আছে। ক্ষুধা থাকলেও খেতে ইচ্ছে করছে না।
— তা বললে তো হবে না। কিছু খেয়ে মেডিসিন নিয়ে তারপর আবার ঘুমিয়েন। আপনি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন,,আমি খাবার গরম করে আনছি।
কথাটা বলেই হানিয়া তাড়াতাড়ি করে চলে যায়। লোকটা সেই কখন থেকে না খেয়ে আছে,,হানিয়ার ভেতরটা অস্থির হয়ে আছে। জাভিয়ানকে না খাওয়ানো পর্যন্ত এই অস্থিরতা যাবে না।অন্যদিকে জাভিয়ান তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।
জাভিয়ান ফ্রেশ হয়ে আসার মিনিট দুয়েক পরই হানিয়া খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকে। তারপর সোফায় বসে থাকা জাভিয়ানের সামনে গিয়ে তার দিকে প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বলে–
–একদম অল্প করে এনেছি,,শুরু করুন।
জাভিয়াম একবার অসহায় চোখে প্লেটের দিকে তাকায় তো একবার হানিয়ার দিকে। তারপর করুণ কন্ঠে বলে–
–তুমি খাইয়ে দাও না হানি।
এত ইনোসেন্ট করে কথাটা বলে জাভিয়ান যে হানিয়া চাইলেও তাকে মানা করতে পারবে না। সে হাত নিচের থেকেই ধুয়ে এসেছিল,,ভাতের সাথে তরকারি মাখাতে মাখাতে হানিয়া মনে মনে ভাবে–
–একটু কিছু হলেই বাবু হয়ে যায়,,খাইয়ে,, সেবাশুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলা লাগে। সুস্থ হওয়ার পর আবার আমার উপরই ছু//ড়ি ঘুড়ায়। আরেকবার আমায় মা//রতে আসিস বেটা শয়তান,,এমন এক বারি মা/রব। তারপর তুই বিছানায় শুয়ে থাকবি আমি তোর উপর ছু//ড়ি ঘুড়াবো।
হানিয়া আস্তে ধীরে জাভিয়ানকে খাইয়ে দেয়,,তারপর একটা মাথা ব্যথার ঔষধ খাইয়ে দিয়ে শুতে বলে নিচে চলে যায় এঁটো প্লেট রাখতে। জাভিয়ান শোয় না,,থম মেরো বসে থাকে। মনটা চলছে কেউ যদি মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতো। আরে,, কাউকে লাগবে কেন? তার একজন গুণবতী বউ আছে না,,সেই তো যথেষ্ট। কথাটা মনে হতেই জাভিয়ানের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি দেখা দেয়। হানিয়ার পদশব্দ শুনে বুঝতে পারে সে আসছে। তাই জাভিয়ান তাড়াতাড়ি করে নিজের হাসি আড়াল করে আগের মতো গম্ভীর মুখ করে বসে থাকে।
হানিয়া জাভিয়ানকে না শুতে দেখে তার কাছে এগিয়ে এসে বলে–
–কি হলো শুয়ে পরছেন না কেন? কোন কিছু লাগবে?
জাভিয়ান গম্ভীর মুখে বলে–
–হুম।
–কি লাগবে বলেন? আমি এনে দিচ্ছি।
–তোমাকে লাগবে।
জাভিয়ানের এই ছোট্ট কথায় যেন হানিয়ার শ্বাস আটকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে বড় বড় চোখ করে বলে–
–আমাকে লাগবে মানে?
–মানে তুমি আমার পাশে বসে আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও। আমার একবার ঘুম ভেঙে গেলে সহজে ঘুম আসে না তাই আর কি।
–ওহ্হ,,আমি তো কি না কি ভেবেছিলাম।
লাস্টের কথাটা হানিয়া একটু আস্তেই বলে। তাও জাভিয়ান শুনে ফেলে,,কিন্তু কিছু বলে না।হানিয়া ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে এসে জাভিয়ানের মাথার কাছে এসে বসে,, তারপর আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। জাভিয়ানের ভীষণ ভালো লাগে,,ঘুম আসবে আসবে এমন সময় তার অবচেতন মন বলে উঠে–
–তুই তো ভীষণ স্বার্থপর জাভিয়ান। শুধু নিজের টাই ভাবলি। মেয়েটার কথা একবারও ভাবলি না। এতো রাতে তোকে খাবার গরম করে খাইয়ে দিলো,, কই মেয়েটাকে এখন একটু ঘুমাতে দিবি তা না নিজের স্বস্তির জন্য এখনো বসিয়ে রেখেছিস। আরেকটু পরই তো সকাল হয়ে যাবে,,তারপর তো আবার গাধারখাটুনি খাটতে হবে তাকে। একটু রহম কি করতে মন চায় না তার উপর তোর? আগে তো এমন ছিলি না তুই?
কথা গুলো মনে পরতেই জাভিয়ান ফট করে চোখ খুলে তাকায়। হানিয়া একমনে জাভিয়ানের দিকেই তাকিয়ে ছিলো,,তাই তার এমন করে চোখ খোলা সে সহজেই দেখতে পায়। সে জিজ্ঞেস করে—
–কি হয়েছে আবার? চোখ খুললেন কেন?
–কিছু না। তুমি যাও ঘুমাও। একটু পরই তো সকাল হয়ে যাবে,,তুমি তো ঘুমাতেই পারলে না আমার জন্য।
হানিয়া হালকা হেসে বলে–
–বাহ্,,আজকাল দেখি আমায় নিয়েও ভাবেন। এত ভাবতে হবে না,,আপনি ঘুমান। এমনিতেও একটু পর ফজরের আজান দিয়ে দেবে,,এখন ঘুমালে নামাজটা মিস হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। তাই এখন আমি এমনিতেও ঘুমাবো না।
–শুনো মেয়ে আমি তোমাকে নিয়ে একবিন্দুও ভাবছি না। ভাবছি তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে আমার টর্চারগুলো কার উপর করবো এটা নিয়ে।
জাভিয়ানের কথাটা হানিয়ার বুকে ভীষণ ভাবে আঘা//ত করে। চোখে হালকা পানিও এসে পরেছে,,কিন্তু পর্যাপ্ত আলো না থাকায় জাভিয়ান তা দেখতে পায় না। হানিয়া নিজেকে সামলে বলে–
–তাই বুঝি?
–হুম। তাছাড়া আর কি।
–আচ্ছা যখন আমি থাকব না তখন কাকে করবেন এই টর্চার গুলো?
–কই যাবে তুমি? আর যদি কোনদিন চলেও যাও তাহলে তোমার পরে যে আমার বউ হবে তাকে আমি অনেক ভালোবাসবো,, তাকে জীবনে কখনো দুঃখ-কষ্ট কি তা বুঝতে দিব না। তার জীবনটা সুখে ভরে তুলবো আমি ইনশা আল্লাহ।
কোন মেয়ে কি এটা মেনে নিতে পারবে তার স্বামী তারই উপস্থিতিতে অন্য একজনকে নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন দেখছে,,তাও আবার তার চোখেমুখে লেপ্টে আছে প্রচন্ড মুগ্ধতা। আমার মতে,,উত্তর হবে না। জাভিয়ানের কথা আর তার চোখেমুখের মুগ্ধতা হানিয়াকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে।বুক ফেটে কান্না আসছে,,কিন্তু তার কপাল এতোটাই খারাপ সে কাঁদতে পারছে না।
–আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি। আপনি ঘুমান।
কথাটা বলে হানিয়া দ্রুত পা চালিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। জাভিয়ান আর কিছু না ভেবেই ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিছু সময় পর ঘুমিয়েও পরে। অথচ সে জানতেই পারল না,,তার কথার বাণের ক্ষতবিক্ষত হয়ে আরেকজন মানুষ না ঘুমিয়ে নিজের অশ্রু বিসর্জন দিয়েই বাকি রাতটা পার করে ফেলছে।
শব্দসংখ্যা~১৫৮০
~চলবে?
#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_ষোলো
সকালে উঠে যথারীতি হানিয়া তার সকল কাজ গুলো করতে থাকে। তাকে হাতে হাতে সাহায্য করে রোজি বেগম আর কুলসুম। কুলসুম হলো তাদের বাসায় কাজ করা ১৬ বছর বয়সী মেয়ে,, তাকে জাভিয়ানের বাবা তার গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটা এতিম কিনা তাই তাদের সাথেই থাকে।
হানিয়া ব্রেকফাস্ট তৈরি করে তা সুন্দর ভাবে টেবিলে সাজাতে সাজাতে সকলে এসে টেবিলে উপস্থিত হয়। সোহা এসেই জাভিয়ানের পাশের চেয়ারটায় বসে পরে। হানিয়া একবার আঁড়চোখে তা দেখে চোখ সরিয়ে নেয়। জায়গাটা আপাত দৃষ্টিতে তার হলেও সেটার উপর তার অধিকার নেই। হ্যাঁ,,সে চাইলেই পারতো সোহাকে এখান থেকে সরিয়ে নিজে বসতে,,কিন্তু কার পাশে বসবে সে? তার স্বামীর পাশে?? যে কিনা হানিয়াকে স্ত্রী হিসেবেই মানে না,,তার পাশে বসতে আরেকজনের সাথে ঝগড়া করবে? ব্যাপারটা হাস্যকর,,ভীষণই হাস্যকর।
খাবার টেবিলে তেমন কোন কথা হয় না। যে যার মতো খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায়। জাভিয়ান রুমে যাওয়ার আগে হানিয়াকে বলে গেছে রুমে এসে তার অফিসে যাওয়ার জন্য সবকিছু রেডি করে দিতে। হানিয়া কুলসুমকে টেবিল পরিষ্কার করতে বলে নিজে চলে যায় স্বামীর আদেশ পালন করতে।
রুমে এসে হানিয়া জাভিয়ানকে রেডি হতে সাহায্য করে। জাভিয়ানের গায়ে ব্লেজার গায়ে পরিয়ে দিতে দিতে বলে–
–একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
–হুম করো।
–কালকের এই চোট কীভাবে পেলেন?
হানিয়ার প্রশ্ন শুনে জাভিয়ান থমকে যায়। আয়না তাকিয়ে একবার দেখে নেয় কপালের পাশে লাগানো ছোট্ট ব্যান্ডেজটাকে। চোখের সামনে ভেসে উঠে কিছু তিক্ত দৃশ্য। জাভিয়ান চোখ বন্ধ করে নেয়। হানিয়া তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে–
–বললেন না তো?
জাভিয়ান তার কথায় চোখ খুলে হানিয়ার দিকে তাকায়। হানিয়া তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো তাই তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়। হানিয়া দেখতে পায় জাভিয়ানের চোখটা হালকা লাল। কি হলো লোকটার? রেগে গেলো নাকি আবার মাথা ব্যথা করছে? প্রশ্নটা সে করবে তার আগেই দরজায় নক করে।
–জাভিয়ান আসবো?
শায়লা বেগম এসেছেন। সাথে সোহাকেও দেখা গেলো। তার মুখটা একটু দুঃখী দুঃখী হয়ে আছে।হানিয়া জাভিয়ানের অনেকটা কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল,, তাদের দেখে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। জাভিয়ান নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করতে করতে বলে–
–আসো মম।
শায়লা বেগম আর সোহা রুমে ঢুকে। সকাল বেলা সকালে সোহাকে দেখে জাভিয়ান একটু বিরক্তই হল। মেয়েটার বেহায়া স্বভাব তার ভালো লাগে না। জাভিয়ান ভ্রু কুচকে তাদের দিকে তাকায়। বুঝার চেষ্টা করে এই সাতসকালে তার কাছে এদের কি কাজ? জাভিয়ান তার মাকে জিজ্ঞেস করে–
–কিছু বলবে মম? তাহলে তাড়াতাড়ি বলে দাও,,অফিসের জন্য লেট হচ্ছে।
–হুম। তোমার বউয়ের কিছু ক্রীর্তিকলাপের কথা বলতে এসেছি। জানি না এর সুষ্ঠ বিচার পাব নাকি,,আজকাল তুমি তো আবার বউ ছাড়া কিছু বুঝ না।
মায়ের এমন খোঁচা মারা কথায় মুহূর্তেই জাভিয়ানের মেজাজ গরম হয়ে যায়। সেদিনের ওই কথাগুলো এখনো তার মা ধরে বসে আছে। অন্যদিকে হানিয়া ভাবছে সে আবার কি করল যে এমন ঘটা করে নালিশ দিতে এসেছে তার শ্বাশুড়ি?
–যা বলার স্পষ্ট করে বল আর একটু তাড়াতাড়ি।
–তুমি কি জানো তোমার বউয়ের সাহস আজকাল একটু বেশিই বেড়েছে। সে কাল সোহাকে যা নয় তা বলে অপমান করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আবার বলেছে তাকে মারবেও। এত সাহস তোমার বউ কই থেকে পাচ্ছে? নিশ্চয়ই তুমি দিচ্ছো।
হানিয়া এবার বুঝতে পারে কি নিয়ে কথা হচ্ছে। সে কোন কথা বলে না,,চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে জাভিয়ানের মন্তব্য শুনার জন্য। জাভিয়ান বলে–
–অপমান করেছে? কি বলেছে সোহাকে ও? (সোহার দিকে ফিরে বলে) ও তোমাকে কি বলেছে?
সোহা চোখ টিপে টিপে ইচ্ছে করে কান্নার ভান করে বলে–
–কাল তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম যখন তখন হুট করেই ভাবী এসে পরে,,তোমার মাথাটা আমার কোল থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে বের হয়ে যেতে। তার সাথে এতদিন পর দেখা হওয়ায় আমি তাকে একটু ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলে সে বলে আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নয় আর এ-ও বলে তার অনুপস্থিতিতে আমি যেমন তোমার কাছে না আসি। আমি নাকি তোমাকে ফুসলাতে চাচ্ছি,, এক পর্যায়ে বলে ভবিষ্যতে তোমার আশেপাশে দেখলে সে আমাকে মারবে। এই বলে আমাকে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
কথাগুলো বলতে বলতে সোহা তার ফেইক চোখের পানি ছেড়ে দেয়। তার এমন নাটক আর কথা শুনে হানিয়া তো সাত আসমান থেকে একেবারে মুখ থুবড়ে নিচে পরেছে। সে মনে করার চেষ্টা করছে সে এইসব কথা বা কাজ কখন করল। হ্যাঁ সে সোহাকে বলেছে চাপড় দিবে তাই বলে এমন কান্না করার মতো করে তো বলেনি মারবে।
জাভিয়ান সোহার কথা শুনে একটু অবাকই হয়। কিন্তু সে তা প্রকাশ করে না।সে হানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে–
–এগুলো সব সত্য হানি?
জাভিয়ানের প্রশ্ন শুনে হানিয়া তার হতভম্ব থেকে বের হয়। সে জাভিয়ানের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলে–
–অবশ্যই না। আমি এমন কিছুই করি নি বা বলি নি। সোহা যা বলছে মিথ্যা বলছে। হ্যাঁ এটা সত্য আমি আপনার মাথা তার কোল থেকে সরিয়ে বালিশে রেখেছি এর পরের একটা কথাও সত্য নয়।
জাভিয়ান এবার তার মাকে বলে–
–শুনলে তো,,একজনের কথা শুনেই আরেকজনের নামের নালিশ নিয়ে আসলে আমার কাছে। যার নামের নালিশ আনলে তাকেও একবার জিজ্ঞেস করতে,,কথা গুলোর সত্যতা যাচাই করতে। যদি সে ভুল করত এবং তার জন্য সে রিগ্রেট না হতো তাহলে আমার কাছে আসতে আমি বিচার করতাম।
শায়লা বেগম বুঝতে পারেন এভাবে হবে না। জাভিয়ান হানিয়ার কথাই বিশ্বাস করেছে। ছেলে তার হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে। তাকেই কিছু একটা করতে হবে।সেও কুমিরের কান্না করতে থাকে আর বলে–
–চল মা,,বুঝতে পেরেছি আমার ছেলে আর আমার নেই। সে এখন বউয়ের আঁচলে বাঁধা পরেছে। বউ যা বলবে তাই চির সত্য তার জন্য। চল! কাল বলেছিলি না তুই তোর বাসায় চলে যাবি আমিও যাব তোর সাথে। যে বাড়িতে আমার ভাগ্নী এত অপমান হয় আর আমি তার ন্যায্যা বিচার পাই না সেখানে আমিও থাকব না। আজই চলে যাব আমি এই বাড়ি ছেড়ে।
কথাটা বলে শায়লা বেগম কাঁদতে কাঁদতে সোহাকে নিয়ে চলো যেতে থাকে। জাভিয়ান তার হাত ধরে আটকায়। তারপর তাকে ধরে এনে বেডে বসিয়ে দিয়ে বলে–
–কই যাবে তুমি? কোথাও যাবে না। আর কি সব বউয়ের আঁচলে বাঁধা পরেছি বলছ,,তোমার মনে হয় জাভিয়ান তালুকদারের এত খারাপ দিন আসল যে কিনা বউয়ের আঁচলে বাঁধা পরবে? তুমি বিষয়টা একটু বুঝ,,শুধু শুধু একজনকে হেনস্তা করার মানে নেই তো।
শায়লা বেগম বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে–
–আমার যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে বাবা। বয়স হয়েছে এখন কি আর আমার কথার দাম থাকবে? বুঝে নিয়েছি আমি,,তুই ছাড় আমাকে। আমি আজই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তোর বাবাও আমার কথার দুই টাকারও দাম দেয় না এখন তুইও এমন করছিস।
মায়ের এমন জেদে জাভিয়ানের রাগ হয়। মানে আছে এমন বাচ্চাদের মতো করার? সে না পারতে বলে —
–আচ্ছা বলো,,আমি এখন কি করলে তুমি বাড়ি ছাড়বে না? হানিয়াকে মারবো? নাকি বাড়ি থেকে বের করে দিবো? তাহলে খুশি হবে?
জাভিয়ানের এমন কথায় উপস্থিত তিনজন নারীই চমকে যায়। সোহা আর শায়লা বেগম চমকে যায় এই কারণে যে জাভিয়ান এত সহজে তাদের টোপ গিলে নিয়েছে আর হানিয়া চমকে যায় জাভিয়ানের এমন অবিবেচকের মতো কথা শুনে। সামান্য একটা কারণে তাকে মারতে বা বাড়ি থেকে বের করে দিতে জাভিয়ান দু’বার ভাবছে না। এত ঠুনকো তার অবস্থান জাভিয়ানের জীবনে আর এই বাড়িতে? হানিয়া তো বলল সে এমন কিছুই করে নি,,, তারপরেও নিজের মায়ের কাছে নিজের সো-কলড পুরুষত্ব দেখাতে এত বড় কথা বলতে পারল জাভিয়ান? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হানিয়ার চোখ ভরে উঠে। অশ্রুরা ঠেলে বের হয়ে আসতে চায় চোখ থেকে কিন্তু হানিয়া তাদের অনুমতি দেয় না বের হতে।
শায়লা তালুকদার বলেন —
–মারাও লাগবে মা বাড়ি থেকে বেরও করা লাগবে না।তোর বউকে বল তার করা ব্যবহারের জন্য সে সোহার কাছে ক্ষমা চায়। আর ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ আর না করে এটাও বলে দে।
শায়লা বেগমের কথা শুনে সোহার মুখে হাসি ফোটে। জাভিয়ান শায়লা বেগমকে পুনরায় বেডে বসিয়ে হানিয়ার কাছে এসে বলে–
–যাও,,সোহার কাছে ক্ষমা চাও। আর ভবিষ্যতে সোহার সাথে এমন ব্যবহার করবে না কখনোই। ওর যখন মন চাইবে এ রুমে আসবে। তুমি ওকে কিছু বলবে না।
জাভিয়ানের কথা শুনে হানিয়ার মনে হয় এর চেয়ে ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে ভালো হয়,,জাভিয়ান তাকে হাত দিয়ে না মারলেও কথার মাধ্যমে তাকে খুব বাজে ভাবে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।
সে জাভিয়ানের চোখে চোখ রেখে দৃঢ় কন্ঠে বলে–
–আমি এমন কোন কথা বা কাজ করি নি যার কারণে আমি ক্ষমা চাইব। আর রুমের কথা যে বললেন,,রুমটা আমারও। আমিও এ রুমে থাকি। ও এরুমে আসবে ভালো কথা আমি মানা করছি না,,কিন্তু যখন তখন এসে পরবে কিছু বলাও যাবে না এটা আমি মানতে পারলাম না।
হানিয়ার এমন চোখে চোখ রেখে কথা বলা আর জাভিয়ানের কথা অমান্য করা বিষয়টা একদমই ভালো লাগে না জাভিয়ানের। সে হানিয়ার চোয়াল চেপে ধরে বলে–
–আমি বলেছি মানে ক্ষমা চাইবে আর তোমার মানা না মানায় আমার কিচ্ছু যায় আসে না। এই রুম শুধু আমার,, তোমার কোন অধিকার নেই এটাকে তোমার রুম বলার। এখন যাও সোহার কাছে ক্ষমা চাও।
জাভিয়ানের কথা শুনে আরো একবার হানিয়ার মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। স্বামীর ঘরে নাকি স্ত্রীর অধিকার নেই। হানিয়া এবার জেদ চেপে বসে,, সে যা করেনি তার জন্য সে কেন ক্ষমা চাইবে? বুঝলাম সে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে দিনের পর দিন জাভিয়ান আর শায়লা বেগমের সকল অপমান অত্যাচার সহ্য করে পরে আছে এই বাড়িতেই,,তাই বলে কোন মিথ্যার জন্য সে মাথা নত করতে পারবে না।
–চাইব না আমি ক্ষমা।
কথাটা বলতে দেরি কিন্তু জাভিয়ানের থাপ্পড় পরতে দেরি হয় না হানিয়ার গালে। শায়লা বেগম আর সোহা দারুণ চমকে যায় কিন্তু তার চেয়েও বেশি খুশি হয়। জাভিয়ান হানিয়াকে এতটা জোরে থাপ্পড়টা মে//রেছে যে হানিয়া তা সামতালে না পেরে ফ্লোরে পরে যায়।
মুখে হালকা নোনতা অনুভব হওয়ায় হানিয়া হাত বাড়িয়ে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে সেই হাত সামনে এনে দেখে ঠোঁট কেটে গিয়েছে। র//ক্ত বের হচ্ছে কাটা জায়গা থেকে। হানিয়া সেই রক্তের দিকে তাকিয়ে নিজের প্রতিই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। কয়েক সেকেন্ড পর অনুভব করে জাভিয়ান তার চুল মুঠ করে চেপে ধরেছে।
জাভিয়ান হানিয়ার চুল টেনে ধরে তাকে বসা থেকে উঠায়। হানিয়া এক হাত দিয়ে জাভিয়ানের তার চুল ধরে রাখা হাত টায় রাখে আরেক হাত দিয়ে জাভিয়ান থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু সে ব্যর্থ হয় বলে মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে জাভিয়ান থেকে ছাড়া পেতে। জাভিয়ান তার চুলগুলো টেনে ধরে তাকে টানতে টানতে সোহার সামনে এনে দাড় করায়।তারপর বলে–
–এক্ষুনি ওর কাছে ক্ষমা চাইবি। এক্ষুনি মানে এক্ষুনিই।
হানিয়াও নিজের জেদ বজায় রেখে বলে–
–না আমি চাইব না।
জাভিয়ানের রাগ এখন কমায় কে? তারও জেদ চেপে বসেছে হানিয়াকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়াবেই সে। শায়লা বেগম হানিয়ার এমন জেদ দেখে অবাক হন। এই কয়েকদিনে সে কত অপমান করেছে,,মাঝে মধ্যে গায়েও হাত তুলেছেন কিন্তু হানিয়া কখনোই এর প্রতিবাদ তো দূরের কথা একটা টু শব্দও করে নি।আজ মার খাওয়ার পরও সে সামান্য একটা ক্ষমা চাইতে নারাজ।
জাভিয়ান সোহা আর শায়লা বেগমের উদ্দেশ্য বলে–
–তোমরা বাহিরে যাও,,একে দিয়ে কেমনে ক্ষমা চাওয়াতে হয় তা আমার ভালো করে জানা আছে। আর হ্যাঁ মম,, ড্যাডকে কোন একটা বাহানায় বাহিরে পাঠাও। সে থাকলে তো একে উচিত শিক্ষা দিতে পারব না।
সোহা একটু ন্যাকামি করে বলে–
–ছেড়ে দাও না জাভিয়ান ভাইয়া। থাক ভাবীকে সরি বলা লাগবে না। আমি আর আসবো না তোমার রুমে।
জাভিয়ান উচ্চস্বরে বলে–
–তোমাকে যা করতে বলেছি তাই করো। যাও।
জাভিয়ানকে এত রেগে যেতে দেখে শায়লা বেগম আর সোহা সুরসুর করে বের হয়ে যায় রুম থেকে।শায়লা তারা বের হয়ে যেতেই জাভিয়ান হানিয়ার চুল ছেড়ে দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা আটকে দেয়,,তারপর মিউজিক বক্সে উচ্চস্বরে গান ছেড়ে দিয়ে হানিয়ার কাছে আসে। গায়ের ব্লেজার খুলে ছুড়ে ফেলে দূরে,,প্যান্টের বেল্ট খুলে নিজের সব রাগ ক্ষোভ মিটাতে থাকে।
শব্দসংখ্যা~১৭২১
~চলবে?
#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_সতেরো
[নিচের কথাগুলো অবশ্যই,, অবশ্যই পড়বেন😄]
জাভিয়ান নিজের সব রাগ-জেদ মিটিয়ে দরজা খুলে হনহনিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। যাওয়াটা আগে ধাম করে দরজা লাগিয়ে নিজের রাগের পরিমাণটা বুঝাতে ভুলে যায় না। পেছনে রেখে যায় তার দেওয়া আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এক রমণী।
নিচে বসে থাকা রোজি বেগম জাভিয়ানকে হনহনিয়ে বের হয়ে যেতে দেখে একটু অবাকই হন। কি হলো এর আবার? ভালোই তো ছিলো,,হঠাৎ করে এত রেগে গেলো যে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রোজি বেগম এসে উপস্থিত হন জাভিয়ানের রুমের সামনে। দরজা আটকানো দেখে একটু অবাকই হন। সে আর কিছু না ভেবে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেন।
রুমে প্রবেশ করে সে এতটাই হতভম্ব হয়ে যায় যে নড়াচড়া করতেও ভুলে যায়। তার পা তার দাঁড়িয়ে থাকা জায়গায় আঁটকে যায় যেন। এতটা অমানুষ হয়ে গেছে তার হাতে পিঠে গড়ে তোলা জাভিয়ান?? সে তাদের সম্পর্কের অবনতির কথা আগে থেকেই জানত কিন্তু জাভিয়ান যে তাকে এমন জানো**য়ারের মতো করে মা//রে তা সম্পর্কে সে ঘুনাক্ষরেও টের পায় নি।
হানিয়ার ব্যথায় পুরো শরীর অবশ হয়ে আছে। নড়ার শক্তিও পাচ্ছে না। উপুড় হয়ে মেঝেতে শুয়ে আছে।হালকা একটু নড়তেই ব্যথায় পুরো শরীর জ্বলে উঠে তার। মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়–
–মা গোো।
হানিয়ার এমন আর্তনাদে রোজি বেগমের যেন হুশ ফিরে। সে নিজেও আর্তনাদ করে বলে–
–হানিয়াাাাাাাাা।
সে দৌড়ে হানিয়ার মাথার কাছে বসে পরে। হানিয়ার মাথাটা নিজের কোলের উপর তুলে নেয়। হানিয়ার গালে হাত রাখতে গিয়েও তার ভয় করছে। গাল দুটো লাল হয়ে আছে,,ঠোঁট দিয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে,, কপালের এক সাইডেও সামান্য কেটে গিয়েছে। পুরো শরীরের কথা না হয় বাদই দিলাম। রোজি বেগম কোথায় রেখে কোথায় হাত দিবেন বুঝতে পারছেন না। সে হানিয়াকে ছেড়ে দরজার কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে কুলসুমকে ডাক দেয়। বাড়িতে আপাতত সে আর কুলসুম ব্যতিত আর কেউ নেই। শায়লা বেগম আর সোহা হানিয়াকে উচিত শিক্ষা দিতে পারার খুশিতে শপিংয়ে গেছে।
কুলসুম রোজি বেগমের ডাক শুনে রুমে আসলে হানিয়ার এই অবস্থা দেখে সেও আঁতকে উঠে। রোজি বেগম তাকে বলে হানিয়াকে ধরে বেডে শোয়াতে। তারা দু’জন ধরাধরি করে হানিয়াকে বেডে শোয়াতে গেলে হানিয়া নিভু নিভু গলায় বলে–
–মনি আমা.…কে তো..মার রুমে নি..হয়ে যাও। প্লিজ আর কি..ছু জিজ্ঞেস ক..রো না।
রোজি বেগম তাই করেন। সে আর কুলসুম মিলে হানিয়াকে ধরে আস্তে ধীরে তার রুমে নিয়ে যায়। বেডে শুইয়ে তাকে পানি খেতে দিলে সে বলে–
–মনি আ…মি রোজা। পানি খেতে পা..রব না।
তার কথা শুনে এবার রোজি বেগমেরও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। প্রথমবারের মতো সে কর্কশ গলায় বলে–
–এই বেহায়া মেয়ে এই,,কার জন্য?? কীসের জন্য রোজা রাখছিস? এমন এক জানো**য়ারের জন্য যে তোকে মেরে আধমরা করে রেখে গেছে। আর একটা কথা বলবি তাহলে এখন আমার হাতেও মার খাবি। চুপচাপ পানিটা খা,,কুলসুম খাবার আনলে ওটা খাবি। আর একটাও কথা জানি আমাকে না বলতে হয়।নিজের জীবন যায় যায় সে এখনো রোজার কথা বলছে।
হানিয়াও তার কথার দ্বিরুক্তি করে না,,আসলে করার শক্তি পায় না। রোজি বেগম তাকে পানি খাইয়ে দেয়,,কুলসুমকে বলে খাবার নিয়ে আসতে। আর সে হানিয়াকে শুইয়ে দিয়ে নিচে এসে কুসুম গরম পানি আর পাতলা সুতির কাপড় নিয়ে যায়। হানিয়ার শরীরের রক্ত গুলো মুছে দিয়ে তাকে ড্রেস পাল্টাতে সাহায্য করে,,তারপর তাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে ব্যথার ঔষধ আর জ্বরের ঔষধ খাইয়ে দেয়। যে মার খেয়েছে আজ জ্বর যে আসবে তার ১০০% সিউর।
অতিরিক্ত মার খাওয়ায় হানিয়ার শরীর অত্যধিক পরিমাণে দূর্বল তাই তাকে শুইয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরে। এছাড়া কাল রাতেও সে ঘুমাতে পারে নি। হানিয়া ঘুমিয়ে গেলে রোজি বেগম তার পাশেই কিছুক্ষণ বসে থাকে। কুলসুমকে বলে দুপুরের লাঞ্চের জন্য সব রেডি করতে,,সে গিয়ে শুধু রান্নাটা করবে। কুলসুম তার কথা মতো নিচে চলে যায়।
____________________________
আজ সারাটা দিন জাভিয়ানের ভীষণ খারাপ কেটেছে। সকালবেলা সকালে ওমন একটা ঘটনায় তার মন-মেজাজের ভীষণ বিক্ষিপ্ত। অফিসে আজ সকলকে অকারণে ঝেড়েছে। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে বাসায় আসে রাত নয়টায়। আসত না,,তার বাবা ফোন দিয়ে আনিয়েছে। প্রতিদিন সে অফিস থেকে ফিরলে হানিয়া দৌড়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলেও আজ আসে না। আসবে কিভাবে? তার যে গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে। জাভিয়ান তাকে এমনই অমানুষের মতো মেরেছে যে রোজি বেগম আগে ভাগে ব্যথার ঔষধ খাইয়ে দিয়েও কোন লাভ হয়নি। হানিয়া জ্বরে অচেতন হয়ে পরে ছিল সারাটা দিন।
সোহা আর শায়লা বেগম আজ বাসায় আসেনি। শায়লা বেগম সোহাকে নিয়ে তাদের বাড়ি গেছে। কয়েকটা দিন থাকবে নাকি ওখানে। শায়লা বেগমও বাড়িতে থাকবে না,, জাভিয়ানও নাকি আসবে না এটা মি.তালুকদার কিছুতেই মানতে পারছে না। তাই ফোন দিয়ে জাভিয়ানকে বাড়িতে এনেছেন।
বাসায় এসে জাভিয়ান ড্রয়িংরুমে কাউকে দেখতে পায় না। পা চালিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে,,রুমটা অন্ধকার। কেন? হানিয়া কি আজ সন্ধ্যাবাতি দেয় নি? জাভিয়ান কয়েক মুহূর্তের জন্য আজ সকালের কথা ভুলে যায়। পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে তারপর রুমের লাইট অন করে। রুমটা সকালে যেমন অগোছালো দেখে গিয়েছিলো তেমনই আছে। অগোছালো রুমটা দেখে তার সকল কথা মনে পরে। মুহূর্তের মধ্যেই এক অজানা অস্থিরতা ঘিরে ধরে। এই মুহূর্তে হানিয়াকে দেখতে তার দুচোখ বিদ্রোহ ঘোষণা করছে। কিন্তু তা কি আদোও সম্ভব??
জাভিয়ান ফ্রেশ হয়ে বের হলে কুলসুম এসে জানায় মি.তালুকদার তাকে ডিনারের জন্য নিচে ডাকছেন। জাভিয়ান তাই করে। নিচে এসেও সে হানিয়াকে পায় না। আড়চোখে আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে অপ্রিয় সেই মুখ টার খোঁজ করে। নাহ,,কোথাও নেই। প্রতিদিন হানিয়াই সকলকে ডিনার সার্ভ করলেও আজ রোজি বেগম করছেন। মি.তালুকদার রোজি বেগমকে জিজ্ঞেস করে–
–রোজ হানিয়া কই? দুপুর থেকে ওকে দেখছি না,,কোথায় ও? ও কি অসুস্থ??
রোজি বেগম আমতা আমতা করে বলে–
–ভাইয়া ওর মাথাটা সকাল থেকেই ব্যথা,,তাই আমার কাছে গিয়ে মাথায় তেল দিয়ে শুইয়ে ছিলো। আমার রুমেই ঘুমিয়ে পরেছে,,আমি তাকে দুপুরের খাবার খাইয়ে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি তাই ঘুমাচ্ছে। তোমরা খাওয়া শুরু করো,,আমি ওকে রাতের খাবারটা খাইয়ে দিবো। চিন্তা করো না।
–ওর কি মাথাটা বেশি ব্যথা? ডাক্তার ডাকবো?
জাভিয়ান কন্ঠে কিছুটা অস্থিরতা নিয়েই কথাগুলো বলে। রোজি বেগম একটু না বেশ অবাক হয়,,সকালে ওমন কুকুরের মতো মে//রে এখন নাকি সামান্য মাথা ব্যথায় অস্থিরতা দেখাচ্ছে। বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না। রোজি বেগম গম্ভীর গলায় বলে–
–বললাম তো তেমন কিছু না। ডাক্তার ডাকার হলে আমি তো বলতাম,,তাই নয় কি?
রোজি বেগমের কথার জবাবে জাভিয়ান আর কোন সঠিক কথা খুঁজে পায় না। চুপচাপ খেতে থাকে,,কিন্তু আজ কেন জানি খাবার টায়ও কোন স্বাদ পাচ্ছে না। হানিয়ার রান্না না এটা। কোন মতো খাবারটা শেষ করে নিজের রুমে চলে আসে। ভাল্লাগছে না তার কিছুই। অস্থির-অসহ্য লাগছে সবকিছু তার। একটা কম পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুইয়ে পরে জাভিয়ান। শুইয়ে থেকে তাকিয়ে থাকে সোফা টার দিকে,,যেখানে শোয় হানিয়া। আজ জায়গাটা খালি,,রুমটাও খালি খালি লাগছে। কোথাও যেন একটা শূন্যতা তার বুকের মধ্যে চেপে বসেছে।
_______________________
মাঝরাতে পিপাসায় জাভিয়ানের ঘুমটা ভেঙে যায়। শোয়া থেকে উঠে বসে বেড সাইড টেবিলে পানির গ্লাসটা হাতে নেয়। গ্লাসটা খালি। জাভিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। দরজা খুলে বের হয়ে আসে রুম থেকে। সিঁড়ির থেকে একটু দূরে তখন সে দেখতে পায় কুলসুম হন্তদন্ত হয়ে রোজি বেগমের রুমে ঢুকছে। এত রাতে তাকে রোজি বেগমের রুমে ঢুকতে দেখে সে একটু অবাকই হয়। নিচে পানি খেতে না গিয়ে সেও রোজি বেগমের রুমের দিকে হাটা ধরে। রোজি বেগমের দরজাটা হালকা ভিড়িয়ে রাখা,,সে আলতো হাতে দরজাটা আরেকটু ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে উঁকি মারে। প্রথমেই চোখ পরে বিছানায় অচেতন হয়ে পরে থাকা হানিয়ার দিকে। তার পাশে বসে মাথায় পানি ঢালছে রোজি বেগম,,আর কুলসুম তার পায়ে হাতে তেল মালিশ করছে।
জাভিয়ান কান পাতলে শুনতে পায়,,রোজি বেগম কুলসুমকে বলছে–
–ও কুলসুম,, হানিয়ার হাত-পায়ে ঘাম দিয়েছে রে? মাথা তো ঠান্ডা হচ্ছে না? তেলটা গরম করে এনেছিলি তো?
কুলসুম বলে–
— হ খালাম্মা।
–সন্ধ্যায় তো জ্বরটা কমই ছিলো এতো রাতে আবার এমন বাড়লো। এখন এই মেয়েকে নিয়ে আমি কই যাবো রে??? ওর কিছু একটা হয়ে গেলে ওর মাকে আমি কি জবাব দিবো?? আল্লাহ তুমি সহায় হও। বিয়ের সময় উনি জাভিয়ানের মাকে মেয়ের দায়িত্ব না দিয়ে আমাকে দিয়েছিলো,,আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলাম। আমি আমার জাভিয়ানকে মানুষ করতেও ব্যর্থ হলাম এখন এক মাকে দেওয়া কথা রাখতেও ব্যর্থ হলাম। আমি সারাটা জীবনই আজ ব্যর্থ লাগছে।
কথাটা বলতে বলতে সে ঝরঝর করে কেঁদে দেয়। কুলসুমও হানিয়ার হাত-পা ঢলতে ঢলতে কাঁদতে থাকে। রোজি বেগম হানিয়ার মাথায় পানি ঢালছে আর দোয়া দুরুত পড়ে হানিয়াকে গায়ে ফু দিচ্ছে। জাভিয়ান সবই দেখছে বাহির থেকে,,কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করছে না। করবে কীভাবে আজ প্রথমবারের মতো তার মনে হচ্ছে সে ভুল করেছে। আগেও কয়েক বার সে হানিয়াকে মেরে,,এমনকি তাদের বাসর রাতেই তো সে প্রথম অত্যাচার করেছিলো হানিয়াকে,,,কিন্তু সেদিনও এতো বাজেভাবে মারে নি আজ যতটা বাজে ভাবে মেরেছে।
সে আর ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না,,অজানা এক অপরাধবোধের কারণে পা চালিয়ে চলে আসে নিজের রুমে। রুমে এসেও শান্তি পাচ্ছে না। হাস ফাঁস করছে সে। একটু শান্তির,, একটু স্বস্তির আশা খুঁজে বেড়াচ্ছে। হুট করেই তার একটা কথা মনে পরে। ছোটবেলায় রোজি বেগম তাকে বলত–
–সোনা বাবা,,যদি কখনো তুমি শান্তির অভাববোধ করো বা বুঝে উঠতে পারো না কোন কাজটা করলে তুমি শান্তি,,স্বস্তি পাবে তাহলে তৎক্ষনাৎ অজু করে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে। নিজের সকল আর্জি,,কষ্ট,,অশান্তি ওই আকাশে বসে থাকা একজন আছে না উনাকে বলে দিবে। দেখবে উনিই তোমার শান্তির জন্য একটা না একটা পথ বের করে দিয়েছেন।
রোজি বেগমের ওই কথাটা আজ জাভিয়ানের মানতে খুব ইচ্ছে করছে,,একটু শান্তির আশায় সে ছুটে ওয়াশরুমে চলে যায়। অজু করে এসে নামাজে দাঁড়ায়। বিদেশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে নিয়মিত নামাজ পড়ত,,হুট করে নতুন এক জায়গায় গিয়ে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে নিজের ধর্ম থেকে যে সে কখন এতোটা দূরে চলে গেলো সে বুঝতেই পারল না। এমনিতে প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়লেও বাকি সময় নামাজ গুলো পড়া হয়ে থাকে না। আজ জাভিয়ান অনেকক্ষণ লাগিয়ে নামাজ পড়ল,,নিজের জন্য শান্তির চাইলো। সরল সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য সাহায্য চাইলো। নামাজ শেষ হওয়ার পরও সে জায়নামাজে বসে থাকে ফজর পর্যন্ত। ফজরের আযান দিলে জায়নামাজ গুছিয়ে হাঁটা দেয় মসজিদের উদ্দেশ্য।
মসজিদে যাওয়ার আগে কি মনে করে আরেকবার রোজি বেগমের রুমে যায়। দরজাটা তখনকার মতোই হালকা ভিড়ানো। জাভিয়ান উঁকি দিয়ে দেখে রোজি বেগম নামাজ পড়ছেন,,তার পাশ দিয়েই হানিয়া বসে বসে নামাজ পড়ছে। দেখে মনে হলো জ্বর নেই। কুলসুমকে দেখতে পায় না রুমের কোথাও। জাভিয়ান চলে যায় মসজিদে।
_______________________________
আজ এক সপ্তাহ জাভিয়ান-হানিয়ার কথা নেই,,দেখা সাক্ষাৎ ওই দু’বেলা ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। হানিয়া রোজি বেগমের সাথেই থাকছে,,মূলত রোজি বেগমই তাকে নিজের কাছে রাখছেন। সে ভরসা পাচ্ছে না জাভিয়ানের রুমে হানিয়াকে রাখতে। হানিয়াও রোজি বেগমের কাছে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই থাকছে।
একদিম বিকেলে হানিয়া নিজের অবসর সময় কাটাতে ছাঁদে যায় কুলসুমকে নিয়ে। বাসায় আপাতত সে,, রোজি বেগম আর কুলসুম আছে। মি. এন্ড মিসেস তালুকদার দেশের বাহিরে গেছে অফিসের একটা কাজে। হুট করে আকাশটা কালো হয়ে যায়,,মিনিট দশেক পরেই ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এই শীতকালের বৃষ্টির পানি কি যে ঠান্ডা!! কুলসুম হানিয়াকে টেনে নিচে নিয়ে আসে,,হানিয়া ভিজতে চেয়েছিলো তাই। এমনিতেই কয়েকদিন হলো হানিয়া সুস্থ হয়েছে,,তাও পুরোপুরি ভাবে হয়নি বলা চলে। এখনো মাঝে সাঝে ব্যথায় কেঁদে উঠে। কুলসুম এই ঠান্ডায় একটা ঘুম দিতে চলে যায় নিজের রুমে। হানিয়া আর কি করবে,,সেও চলে যায় রোজি বেগমের কাছে।
হানিয়া রুমে এসে দেখে,,রোজি বেগম জানালার পাশে চেয়ার রেখে কিছি একটা দেখছেন আর চোখ মুছছেন। হানিয়া অবাক হয়ে যায় তার চোখে পানি দেখে। সে হন্তদন্ত হয়ে রোজি বেগমের কাছে এসে বলে–
–কি হয়েছে মনি মা?? তুমি কাঁদছো কেনো?
হুট করে হানিয়া চলে আসায় রোজি বেগম একটু অবাক হয়ে যায়। সে তার হাতে রাখা এলবামটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। তার এমন কাজে হানিয়া আরো অবাক হয়ে যায়। সে রোজি বেগমের হাত ধরে তাকে আটকিয়ে দেয়,,বলে–
–একদম লুকানোর চেষ্টা করবে না। কার ছবি দেখে কাঁদছিলে? যদি না বলো আমি কিন্তু তোমার সাথে কথা বলবো না মনি।
রোজি বেগম ভাবেন আর কতদিনই বা হানিয়ার থেকে আড়াল করবেন,, সেও তো এই বাড়ির বউ তারও অধিকার আছে এই বাড়ির সব অজানা কথা জানার। সে হানিয়াকে বলে–
–দেখবি কার জন্য কাঁদছিলাম??
হানিয়া মাথা উপর নিচ করে,, বুঝায় সে জানতে চায়। সে হানিয়াকে নিয়ে বেডে যেয়ে বসে। হাতে রাখা এলবাম টা খুলে একজন রমনীকে দেখায়। বলে–
–এই স্বার্থপরের জন্য তোর মনির চোখে পানি।
হানিয়া ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখে এক অতীব সুন্দর এক রমনী আর জাভিয়ান দাঁড়িয়ে আছে,,এবং মনি সেই রমনীটিকেই উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেছে।
–কে উনি? আর উনার(জাভিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে) সাথেই বা এমন ক্লোজ করে দাঁড়িয়ে আছে কেন? আপুটি কি উনার কাছের কেউ?
–হুম। ভীষণ কাছের,,রক্তের সম্পর্ক তাঁদের।
–কে উনি?
–স্পর্শীয়া তালুকদার আভা,, জাভিয়ানের বোন।
–কিহহহহহহহহহহ???
হানিয়া অবাক হয়ে যায় এটা জেনে যে জাভিয়ানের আরেকটা বোনও আছে। সে রোজি বেগমকে জিজ্ঞেস করে–
–জাভিয়ানের বোনও আছে? তাহলে উনি কই এখন আর উনাকে তো আমাদের বিয়ের সময়ও দেখলাম না। উনি কোথায় মনি?
–ও থাকলে তো দেখবি। ও আর নেই।
–নেই মানে?
–ও মারা গেছে।
কথাটা বলার সাথে সাথে রোজি বেগমের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রুও গড়িয়ে পরে।
শব্দসংখ্যা~১৯৩০
~চলবে??