#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_বাইশ
জাভিয়ান এই মুহূর্তে হানিয়াকে বা কাউকেই কল্পনা করেনি। সে বেশ ঘাবড়িয়ে গেছে। হানিয়া আবার জাভিয়ানকে জিজ্ঞেস করে–
–কোথায় গিয়েছিলেন এত রাতে?
জাভিয়ান কি বলবে ভেবে পায় না। সে কয়েক মিনিট সময় নেয়,,তারপর আমতা আমতা করে বলে–
–আমার ঘুম আসছিলো না তাই বাসার আশেপাশে একটু হাটতে বের হয়েছিলাম।
হানিয়া জাভিয়ানের কথা যে বিশ্বাস করেনি তা জাভিয়ান ভালোই বুঝতে পেরেছে। বাহির থেকে আসা হালকা আলোতে ড্রয়িংরুমটা অল্পস্বল্প আলোকিত হয়ে আছে সেই আলোতেই জাভিয়ান হানিয়ার মুখাবয়ব দেখতে পারছে। হানিয়া ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর জাভিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে–
–সত্য কথা বলবেন না সোজাসাপ্টা বলে দিলেই হয়,,মিথ্যা কথা যে বলতে পারেন না তা আপনার মুখ আর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরই বলে দিচ্ছে। যাই হোক ঘুমিয়ে পরুন। শুভ রাত্রি।
কথাটা বলেই হানিয়া জাভিয়ানের পাশ কাটিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। কয়েক সিড়ি উঠার পর হানিয়ার হাতে টান পরে। পেছন ঘুরে দেখে জাভিয়ান কেমন করুন মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। হানিয়া নিজের হাত জাভিয়ানের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে জিজ্ঞেস করে–
–কি হয়েছে? হাত ধরে রেখেছেন কেন? যেতে দিন আমায়।
জাভিয়ান হানিয়ার হাত তো ছাড়েই না বরং আরো শক্ত করে ধরে কয়েক কদম এগিয়ে যায় হানিয়ার দিকে। হানিয়া তাকে এগিয়ে আসতে দেখে বেশ অবাকই হয় কিন্তু প্রকাশ করে না,,শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জাভিয়ান কণ্ঠে কিছুটা অসহায়ত্ব নিয়ে হানিয়াকে বলে–
–রুমে চলো না। আর কতদিন মাম্মার রুমে থাকবে?
হানিয়া শক্ত কণ্ঠে জবাব দেয়–
–যতদিন না ওইরুমে আমারও অধিকার হচ্ছে ততদিন। আর বারবার রুমে চলো রুমে চলো দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি? এমনটা তো না যে রুমে গেলেই আপনি আমায় আদর করবেন,,সেই তো সোফা আর বেড-ই হবে আমাদের অবস্থান। তাহলে আর পাঁচটা বিবাহিত পুরুষদের মতো করছেন কেন??
জাভিয়ান হানিয়া কথায় ভেবে দেখে সত্যিই তো। সে অন্য সব সাধারণ পুরুষদের মতো করছে কেন? অন্যরা তো নিজেদের বউকে রুমে ডাকে ভালোবাসতে,,আদর করতে। সে তো হানিয়াকে এগুলোর কিছুই করবে না তাহলে কেন এমন করছে?? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে কিন্তু কোন উত্তর মিলে না।
জাভিয়ানকে অন্যমনষ্ক হয়ে চুপ থাকতে দেখে হানিয়া নিজের হাতটা আস্তে করে জাভিয়ানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর শান্ত কণ্ঠে বলে–
–যেদিন অধিকার দিতে পারবেন সেদিন বলবেন আমি বিনা বাক্যে চলে যাবো কিন্তু হ্যাঁ,,যাদের সামনে অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন তাদের সামনেই অধিকার দিতে হবে।
কথাটা বলে রোজি বেগমের রুমে চলে যায়। জাভিয়ান তার কথা শুনে বুঝতে পারে হানিয়া কাদেরকে বুঝিয়েছে।
__________________________
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো এক সপ্তাহ। আর তিনদিন পর থেকে হানিয়ার ক্লাস শুরু হবে। আরসাল তালুকদার বলেছেন হানিয়াকে যাতায়াতের জন্য নিজেদের কার ব্যবহার করতে। হানিয়া মানা করতে চাইলেও শ্বশুর যখন কড়া গলায় বলেছে তাকে এটাই করতে হবে তখন আর সে তার কথা অমান্য করতে পারে না।
আজ অনেকদিন পর হানিয়াকে তার এক ভার্সিটির ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছে। সে বাগানে হেঁটে হেঁটে তার সাথে কথা বলছে আর হাসছে। জাভিয়ান আজ দুপুরেই চলে এসেছে। হাতের প্রজেক্ট কমপ্লিট হয়ে যাওয়ায় আপাতত তেমন প্রেশার নেই অফিসে তাই তাড়াতাড়ি চলে আসা। জাভিয়ান তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হানিয়াকে দেখছে কিন্তু হানিয়া নিজের মতো ব্যস্ত।
হানিয়া কথা বলতে বলতে একসময় হেঁটে বাড়ির পেছনের দিকে যেতে থাকে। জাভিয়ান তাকে ওইদিকে যেতে দেখে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে দৌড় লাগায় ওইদিকে। হানিয়া কথা বলায় এতটা মশগুল ছিলো যে তার খেয়ালই ছিলো না সে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে যাচ্ছে। তাই যখন কথা শেষ করে ফোন কাটে তখন আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে না সে কোথায় এসে পরেছে। জাভিয়ানদের বাড়ির পেছনের অংশে কিছুটা জঙ্গলের মতো,, মানে ঝোপঝাড় বেশি। হানিয়া আগে কখনোই এদিকটায় আসেনি বলে তার বেশ আগ্রহ হয় জায়গাটা ঘুড়ে দেখার। সে হাঁটতে হাঁটতে আরেকটু ভেতরের দিকে গেলে একটা ছোট্ট ঘর দেখতে পায়। ঘরটা দেখে সে অনেকটা অবাক হয়। এতদিন এই বাড়িতে আছে কেউ তো তাকে এই ঘর সম্পর্কে বলেনি। হানিয়া ঘরটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই জাভিয়ান পেছন থেকে তাকে ডেকে উঠে।
হানিয়া পেছন ফিরে দেখে জাভিয়ান হাঁটুতে দু’হাত রেখে ঝুঁকে আছে আর হাঁপাচ্ছে। মনে হচ্ছে দৌড়ে এসেছে। জাভিয়ান হানিয়ার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে–
–এখানে কি করছো? চলো বাড়ি চলো।
–আসলে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছিলাম আর এসে এই রুমটাকে দেখতে পেলাম।এটা কিসের ঘর? আমাকে তো মনি কখনো এই রুমের কথা বলেনি।
–এটা আমার পারসোনাল রুম। হয়েছে? এখন চলো।
কথাটা বলে হানিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। হানিয়া তার পেছন পেছন হাঁটতে হাঁটতে বলে–
–এই রুমে আপনি কি করেন?
–সেটা তোমার না জানলেও চলবে।চুপচাপ চলো।
বেশ কর্কশ গলায় কথাটা বলে জাভিয়ান। হানিয়ার ভীষণ খারাপ লাগে। সে ঝট করে নিজের হাতটা জাভিয়ানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে–
–আমি কোন গরু না যে এমনে টেনে টেনে নিয়ে যাবেন। আমি নিজেই যেতে পারব।
কথাটা বলে সেই আগে হাটা দেয়। জাভিয়ান হাবলার মতো করে দাড়িয়ে থাকে।
_________________________
রাতে হুট করেই সোহা আর তার মা আসে তালুকদার বাড়িতে। সোহার বাবা একটা কাজে ঢাকার বাহিরে গেছেন তাই তারা মা-মেয়ে চলো এসেছে এই বাড়িতে। এসেই হানিয়াকে একের পর এক আদেশ-ফরমাশ করেই চলেছেন। হানিয়াও মুখ বুঁজে সব সহ্য করছে। তার মা সবসময় একটা কথাই বলতেন-“যেই সয়,, সেই কিন্তু রয়” এই কথাটা হানিয়া আগে মানতে চাইত না কিন্তু এখন তাকে এটাই করতে হচ্ছে।
রাতে ডিনারে কম করে হলেও ৬/৭ পদ রান্না করেছে হানিয়া তাও শায়লা বেগম মুখ কালো করে রেখেছেন। হানিয়া আজ ভীষণ আশা করেছিলো তার শ্বাশুড়ি হয়ত আজ একটু হলেও তার উপর প্রসন্ন হবেন কিন্তু তা হয়ত তার কপালে নেই। খেতে বসে সোহা শুরু করে আরেক ঢং। সে এত অয়েলি খাবার নাকি খাবে না,,সে ডায়েটিং-এ আছে। তাকে হালকা কিছু বানিয়ে দিতে হবে। কথাটা শুনে শায়লা বেগম হানিয়াকে আদেশের সুরে বলে–
–যাও সোহার জন্য হালকা পাতলা কিছু বানিয়ে দাও।
কথাটা শুনে হানিয়ার কান্না চলে আসে। সেই সন্ধ্যার পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত রান্না করে এতগুলো আইটেম করেছে এখন নাকি আবার রান্না করা লাগবে। ক্লান্তিতে হাত-পা ভেঙে আসছে। হানিয়া কোন কিছু না বলেই চুপ করে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছিল তখন জাভিয়ানের কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায়।
–দাঁড়াও হানি।
হানিয়া জাভিয়ানের কথা শুনে দাড়িয়ে পরে। তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে এ আবার কি আদেশ দেয় এখন? কিন্তু তার ভাবনাকে মিথ্যা করে দিয়ে জাভিয়ান বলে–
–মম ও(হানিয়া) সন্ধ্যা থেকে এতগুলো আইটেম রান্না করছে,,তোমরা নিচেই বসে গল্প করছিলে তখন সোহা কেন বলল না সে ডায়েটিংয়ে আছে? তাহলে তখনই না হয় ওর জন্য কিছু রান্না করত হানি। আর সোহা! (সোহার দিকে ফিরে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে) আজ না হয় একটু কষ্ট করে এই অয়েলি খাবারটা খাও তাতে আমার মনে হয় না তোমার ডায়েটিংয়ে এতটা প্রভাব ফেলবে বনু। কাল না হয় নিজের বাসায় গিয়ে আবার হালকা পাতলা খাবার খেলে। তোমার ভাবী কত কষ্ট করে তোমাদের জন্য এতকিছু রান্না করল এখন যদি তুমিই না খাও তাহলে তার কষ্টটাই বৃথা।
বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে কথাগুলো বলে জাভিয়ান সোহাকে। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে যায় জাভিয়ানের কথা শুনে শুধুমাত্র আরসাল তালুকদার ছাড়া। তিনি ভাবেন ছেলে তার বউকে ভালোবাসে বলে তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু তিনি তো আর জানেন না তার ছেলে কত বড় একটা পশু!
শায়লা বেগম,, সোহা আর তার মা এটা দেখে অবাক হয়ে যায় যে জাভিয়ান হানিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বলছে,,তার উপর হানিয়াকে সোহার ভাবী মানে ইনডাইরেক্টলি নিজের বউ বলে স্বীকার করছে। তাদের তিনজনের মতো আরো তিনজন অবাক হয়ে যায় জাভিয়ানের কথা শুনে। তারা হলো রোজি বেগম,,হানিয়া আর কুলসুম। তারা কেন অবাক হয়েছে এটা নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন।
সোহার মা শায়লা বেগমকে বলেন–
–বাহ আপা! ছেলে তো তোমার ভালোই বেশ হয়ে গেছে। বউয়ের কষ্ট একদম সহ্যই হয় না তার।
হাসতে হাসতে কথাটা বলে মহিলা। তার কথায় বাম হাত দিয়ে আরসাল তালুকদার বলেন–
–দেখতে হবে না ছেলেটা কার। আমার ছেলে তো আমার মতোই হবে,,তাই না বলো শালিকা?
আরসাল তালুকদার যে কি মিন করে কথাটা বলেছে তা উপস্থিত সকলেই বুঝতে পারে। সোহা আর তার মার মুখটা কালো হয়ে যায় আর শায়লা বেগম তার স্বামীকে চোখ গরম করে তাকায়। হানিয়া,, কুলসুম,,রোজি বেগম আর জাভিয়ান তার কথা শুনে হালকা হেঁসে দেয়। জাভিয়ান সচারাচর হাসে না,,হাসলেও জোরাতালির হাসি বা হালকা মুচকি হাসে তাতেই তাকে ভীষণ সুন্দর লাগে। এই যেমন এখন লাগছে। হানিয়া একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
টুকটাক কথাবার্তার মাঝেই তারা সকলে খাওয়া শেষ করে। খাওয়া শেষে আরসাল তালুকদার,, জাভিয়ান আর রোজি বেগম নিজেদের রুমে চলে যায়। নিচে থেকে যায় সোহা,,তার মা আর শায়লা বেগম। হানিয়া আর কুলসুম ডাইনিং টেবিলে পরিষ্কার করছে। তারা তিন ডাইনী কি জানি কথা বলছে আর উচ্চস্বরে হাসছে। হঠাৎই তাদের কথার টপিক চেঞ্জ হয়ে হানিয়ার টপিক শুরু হয়।
সোহা বলে–
–জানো আম্মু আগের বার যে আসলাম না তখন কিন্তু একটা মজার ঘটনা ঘটেছে?
–কি হয়েছিলো?
তারা সকলেই আগেরবারের কথা জানে তাও হানিয়াকে অপমান করার জন্য কথাগুলো আবার তুলেছে। সোহা বলে–
–একটা পাখি খুব বেশি উড়ছিলো তারপর এমন ভাবে মুখ থুবড়ে পরল যে এখন আর উড়ার কি ডানাও ঝাপ্টাচ্ছে না।
কথাটা বলে তিনজন হাহা করে হেসে দেয়। সোহার মা বলে–
–পাখিটা কে রে? আমাকেও একটু দেখার সুযোগ করে দে।
–দেখবে। তাহলে ওই যে ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকাও তাহলেই দেখতে পাবে। দু’টো ফকিন্নি দাড়িয়ে আছে না তার মধ্যে থেকে বড়টা।
হানিয়া আর কুলসুমকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে সোহা। কুলসুমকে সোহা আর তার মা বাদে এই বাড়ির সকলেই ভালো ব্যবহার করে। নিজেদের পরিবারের লোক মনে করে। কিন্তু হানিয়া বিয়ে করে এবাড়িতে আসার পর কুলসুম সবসময় তার সাথে থাকা বা তার কথা,,কাজে সাপোর্ট করায় এখন শায়লা বেগমও তাকে হেয় করে। আজ যেমন সোহা কুলসুমকে ফকিন্নি বলল,, আগে হলে হয়ত শায়লা বেগম তাকে এমনটা বলতে নিষেধ করত কিন্তু আজ করছেন না।বরং সেও তাদের সাথে মজা নিচ্ছে।
অন্যদিকে তাদের সব কথাই হানিয়া আর কুলসুম শুনছে দাঁতে দাঁত চেপে। কিন্তু এখন আর কুলসুম সহ্য করতে পারে না। সে তার কাজ থামিয়ে সোহাদের কাছে এসে বলে–
–আমারে যা কইছে আমি মাইন্না নিমু কিন্তু ভাবীরে কিছু কইবেন না।
সোহা তাকে ব্যঙ্গ করে বলে–
–এক ফকিন্নির জন্য আরেক ফকিন্নির কি মায়া দেখেছ আম্মু-আন্টি??
“মানুষের জন্য মানুষের মায়া না হয়ে তাহলে কি তোর মতো গবেটের জন্য হবে? তুই কি এটাই চাচ্ছিস?”
হঠাৎই জাভিয়ানের কথায় সকলে ভড়কে যায়। কথার উৎসস্থল কোথায় দেখতে সকলে ঘাড় ঘুড়ালে দেখতে পায় জাভিয়ান সিঁড়ির মাঝামাঝিতে ট্রাউজারের পকেটে দু’হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবসময়ের চেয়ে এখন মুখটা একটু বেশিই গম্ভীর,, চোখে খানিকটা রাগের আভাস। তাকে দেখে সোহার পিলে চমকে উঠে। সে তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার কাছে যেতে চাইলে জাভিয়ান তাকে বলে–
–ওখানেই দাঁড়া।
সোহা দাঁড়িয়ে যায়। জাভিয়ান নিজেই নিচে নেমে আসে। তারপর সোহাদের সামনে এসে দাঁড়ায়,,তাদের উদ্দেশ্য করে বলে–
–পাখির ডানা যেমন ছাটাতে পারি তেমন তাকে আবার উড়তে শিখাতেও পারি আমি। তোদের সামনে যদি মারতে পারি তাহলে তোরা যখন থাকিস না তখন আবার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়েও দিতে যে পারি এটা কেন মনে থাকে না তোদের? পাখিটা আমার!! তাই তাকে আমি আমার ইচ্ছে মতো উড়াবো,, ঘুড়াবো,, মারবো আবার আমিই বুকে আগলে নিবো। মনে রাখবি এই সব কিন্তু আমিই করব,,আমি ব্যতীত আমার পাখিকে অন্যকেউ কষ্ট দেওয়া চেষ্টা করলে তাঁর ডানা কাটতেও বেশি সময় নিবো না। কথাটা আজই প্রথম আর আজই শেষবারের মতো বলছি,,আর যেন বলা না লাগে। আর মিসেস জাভিয়ান তালুকদারকে ফকিন্নি বলছিস?? তোর মনে হচ্ছে না তুই সাহসটা একটু বেশিই দেখিয়ে ফেলেছিস?? ভবিষ্যতে যদি এমন সাহস দ্বিতীয় বার দেখেছি তাহলে এর পরিনতি বেশি একটা ভালো হবে না,, এটা তোকে সহ এখানে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্য বলছি।
জাভিয়ানের কথায় কিছু একটা ছিলো যা সোহার মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। জাভিয়ান তাদের থেকে চোখ সরিয়ে হানিয়ার দিকে তাকায়। মেয়েটা ডাইনিং টেবিলের কাছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে কোন বাক্য ব্যয় না করে হানিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে তার দিকে,, তারপর বলে–
–রুমে চলো,, কাজ আছে।
হানিয়া নিজের সামনে জাভিয়ানের উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা তুলে। জাভিয়ান তার দিকে তাকিয়ে থাকায় তাদের চোখে চোখ পরে যায়। জাভিয়ান হানিয়ার চোখে গভীরভাবে তাকিয়ে দেখে চোখটা পানিতে টইটম্বুর,, যেকোন মুহূর্তে গড়িয়ে পরতে পারে।কিন্তু হানিয়া তা মুক্ত করে না,,চোখেই ধরে রাখে। সে জাভিয়ানকে জিজ্ঞেস করে–
–কিছু লাগবে আপনার?
–হুম।
–কি লাগবে বলে,,আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
–তোমাকে লাগবে আমার,,এখনি। চলো।
কথাটা বলে নিজেই আগে হাটা দেয়। তার কথা শুনে সোহা,, তার মা আর শায়লা বেগমের চোখ বড়বড় হয়ে যায়। জাভিয়ান কয়েক কদম হেটে এগিয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারে হানিয়া তার সাথে আসছে না,,তাই পেছন ফিরলে দেখতে হানিয়া তার জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জাভিয়ান ভীষণ বিরক্ত বোধ করে তার কাজে,,সে পুনরায় হানিয়ার কাছে এসে কোন দিক না তাকিয়েই ঝট করে কোলে তুলে নেয়। এবার যেন সোহাদের চোখ বেড়িয়ে আসবে কোটর থেকে,,হানিয়াও অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে তাকায়। কিন্তু জাভিয়ান নির্লিপ্ত ভাবে হাঁটছে যেন কিছুই হয়নি।
জাভিয়ান হানিয়াকে নিয়ে কয়েকটা সিঁড়ি অতিক্রম করে আবার কি ভেবে নিচে নেমে আসে। তারপর সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে–
–তুই যথেষ্ট বড় হয়েছিস তাই একটা কথা বলছি আশা করি মাথায় রাখবি। আমরা নিউলি ম্যারিড কাপল যখন-তখন,,সময় অসময়ে আমাদের রুমে আসবি না,, বুঝিসই তো!
শেষেট কথাটা জাভিয়ান সোহাকে চোখ টিপে দিয়ে বলে। হানিয়া লজ্জায় কথা বলা ভুলে যায়। সে ভেবে পাচ্ছে না জাভিয়ান এমন করছে কেন আজ? জাভিয়ান তার কথা শেষ করে আবার হাটা দিলে কুলসুম বলে উঠে–
–ভাইজান ভাবী তো রাইত্তের খাওন খায় নাই।
জাভিয়াম কুলসুমকে বলে–
–ওর খাবারটা রুমে নিয়ে আয়। আর বাকি কাজগুলো তুই একটু কষ্ট করে শেষ কর। তোর ভাবীকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
কুলসুম হাসি মুখে বলে–
–আচ্ছা আমও ভাবীর খাওন নিয়া আইতাছি। আর আপনি চিন্তা কইরেন না ভাইজান,,আমি বাকি কামগুলা একলাই করবার পারুম। ভাবী আইজকে নিজেই সব করছে করছে একলা একলা,,আমারেও করতে দেয় নাই।
কুলসুম তার কথা শেষ করলে জাভিয়ানও তার পা চালাতে শুরু করে। হানিয়াকে নিয়ে তার রুমে চলে আসে। রুমে ঢোকার সময় জাভিয়ান হানিয়াকে বলে,–
–যা বলেছিলে তাই করলাম,,অধিকার আর স্বীকৃতি দু’টোই দিলাম এর পর থেকে আমি যেন না দেখি তুমি এই রুম ছাড়া একদিনও রাত কাটিয়েছ। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
হানিয়া মুখ ফসকে বলেই দেয়–
–আপনার চেয়ে খারাপ কেউ আছে নাকি? আমার তো লাগে না।
কথাটা বলেই হানিয়া নিজের মুখ চেপে ধরে। এমন টাটকা সত্য কথা কেমনে বলে দিলো সে। হানিয়া ভাবে এখন তার উপর আবার মারের বর্ষণ শুরু হবে। কিন্তু তার ভাবনাকে ভুল করে দিয়ে জাভিয়ান বলে–
–কেউ জন্মগতভাবে খারাপ হয় না। তাকে কেউ না কেউ খারাপ হতে বাধ্য করে,,আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এখন আমি চাইলেও তোমার জন্য ভালো হতে পারছি না,,তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি এক আলাদা শান্তি পাই যে শান্তি আমি চিরকাল পেতে চাই।
কথাটা বলে জাভিয়ান হানিয়াকে বেডে বসিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। আর হানিয়া বসে বসে ভাবতে থাকে–
–আমি কি সারাজীবন শুধু অন্যকেই সুখ-শান্তি দিয়ে যাবো?? নিজে কি কখনো সুখের মুখ কি আদৌও দেখবো??
শব্দসংখ্যা~২২১২
~চলবে?