#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_ঊনপঞ্চাশ
আবরার বসা থেকে উঠে হেঁটে স্পর্শ সামনে এসে দাঁড়ায়। আবরারের চোখে জমে থাকা অশ্রুকণা স্পর্শের বুক পিঞ্জিরায় আঘাত আনছে। আবরার সকলের সামনেই স্পর্শকে বলে–
–তোমার আমার ভালোবাসাটা আমার বোনের জীবনের অভিশাপ মায়াবিনী। আজ প্রথম বারের মতো আফসোস হচ্ছে এজন্য।
আবরারের কথা শুনে স্পর্শ বুক ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। জাভিয়ানের বুকেও মোচর দিয়ে উঠে। আসলেই কি সে হানিয়ার জীবনের অভিশাপ? তারা সকলে হানিয়ার জীবনের অভিশাপ? তার বিবেক তো তাই বলছে। না জেনেই তো সে হানিয়াকে কত কষ্ট দিয়েছে। এমন কোন কষ্ট নেই যা সে হানিয়াকে দেয় নি। সব জানার পরও তো তার মা কত জঘন্য একটা কাজ করলো। এসব কিছুর জন্য কি আদৌও তারা কোনদিন ক্ষমা পাবে? হানিয়া কি কোনদিন করবে তাদের ক্ষমা?
________________
কেটে যায় দুটো দিন। আবরার অনেক কষ্টে বসকে বলে-কয়ে আরো দু’টো দিন ছুটি মঞ্জুর করিয়েছে। আজ তাঁকে রাজশাহীর জন্য রওনা দিতেই হবে নাহলে কাল তার অফিস মিস দিতে হবে। আবরার ঠিক করেছে হানিয়াকে তার সাথে নিয়ে যাবে। হানিয়াকে বিষয়টা জানালে সেও দ্বিমত করে না। নিজেকে তার এখন বোঝা মনো হচ্ছে। না আছে তার বাবার বাড়ি,, না আছে তার শ্বশুর বাড়ি। ভাগ্য যখন যেখানে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে সে সেখানেই যাচ্ছে।
এই দুই দিন তালুকদার বাড়ি আর মির্জা বাড়ির সকলে হানিয়ার সাথে কয়েকবার দেখা করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আবরার তাঁদের কাউকে দেখা করতে দেয় নি হানিয়ার সাথে। শুধু ইনায়া,,সোনিয়া আর ডা.এহসান দেখা করতে পেরেছে তার সাথে। আবরার এদুটো দিন সারাটা সময় হানিয়ার কাছেই থেকেছে। কোন প্রয়োজনে বাহিরে যেতে হলে দু’জন নার্সকে রেখে গেছে হানিয়ার কাছে আর তাদের বলেছে তারা যাতে তার পারমিশন ব্যতীত অন্য কাউকে হানিয়ার সাথে দেখা করতে না দেয়। যদি দেয় তাহলে তাদের চাকরি খেয়ে দিবে সে।
আজ জাভিয়ান দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এসেছে যেভাবেই হোক হানিয়ার সাথে দেখা করবে। প্রয়োজনে আবরারের পায়ে পর্যন্ত পরবে। কথা যখন ভালোবাসার মানুষটির সাথে দেখা করার তখন মানুষ নিজের আত্মসম্মান ত্যাগ করতেও দু’বার ভাবে না। জাভিয়ান,, স্পর্শ,,রোজি বেগম আর মি. তালুকদার এসেছেন হানিয়ার সাথে দেখা করতে। তারা সকলে হানিয়ার কেবিনে এসে দেখে কেবিন খালি। না আছে হানিয়া আর না আছে আবরার। এমনকি হানিয়ার ব্যবহৃত কোন জিনিসই নেই কেবিনে। তারা অবাক হয়ে যায়। জাভিয়ান তাড়াতাড়ি করে কেবিন থেকে বের হয়ে হানিয়ার ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তারের কাছে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়–
–পেসেন্টকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়েছে এবং তার ভাই তাঁকে নিয়ে গেছে।
জাভিয়ান অবাক হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করে–
–কখন নিয়ে গেছে? ওকে না দুপুরের দিকে ডিসচার্জ করার কথা ছিলো?
–দশটার দিকে নিয়ে গেছে। আর পেসেন্ট নিজেই তাড়া দিচ্ছিল বাড়ি যাওয়ার। যেহেতু তার কোন কমপ্লিকেশন ছিলো না তাই আমরাও তাঁকে আর জোর করে আটকে রাখি নি।
ডাক্তারের কথা শেষ হলে সে চলে যায়। জাভিয়ান ভগ্ন হৃদয় নিয়ে এসে কথাটি বাকিদের জানায়। তারা আশাহত না হয়ে রওনা দেয় মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্য। হানিয়াদের এপার্টমেন্টের সামনে গাড়িটা এসে থামলে সকলে এক এক করে নেমে পরে। লিফটের সাহায্য ছয় তলায় আসে। লিফট খুলে বের হয়ে হানিয়াদের ফ্ল্যাটের কাছে আসলে দেখতে পায় হানিয়ার বাবা-মা,, আর সোনিয়া রেডি হয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে। মি. এন্ড মিসেস মির্জা তাঁদের সকলকে দেখে বেশ অবাক হয়। জাভিয়ান তাদের কাছে এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে–
— আপনারা সকলে কি কোথাও যাচ্ছিলেন?
মি. মির্জা সালামের জবাব নিয়ে বলে–
–হ্যাঁ,,হানিয়াকে তো আজ ডিসচার্জ করে দিবে তাই ওকেই নিতে যাচ্ছিলাম।
এবার যেন জাভিয়ান ও তার পরিবারের হুশ উড়ে যায়। হানিয়াকে না ডিসচার্জ করে আবরার বাসায় নিয়ে এসেছে, তাহলে তারা কার জন্য হসপিটালে যাচ্ছে? স্পর্শ পেছন থেকে এগিয়ে এসে মি.মির্জাকে উদ্দেশ্য করে বলে–
–আঙ্কেল, আমরা তো হসপিটাল থেকেই ফিরছি। সেখানে গিয়ে জানতে পারি হানিয়াকে আবরার ডিসচার্জ করে নিয়ে এসেছে। তাই আমরা ওর সাথে দেখা করতে আপনাদের বাসায় এসে পরেছি। কিন্তু আপনারা এখন বলছেন ওকে ডিসচার্জ করাতে যাচ্ছেন। যদি হানিয়া বাসাতেই না আসে তাহলে সে কোথায় গেলো? আর আবরারই বা কোথায়?
স্পর্শের কথা শুনে এবার মির্জা পরিবারও অবাক হয়ে যায়। স্পর্শ আরো জানায় হানিয়াকে দশটার দিকে ডিসচার্জ করেছে ডাক্তার। এখন বাজে দুপুর সাড়ে বারোটা। হানিয়াকে হসপিটাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আড়াই ঘন্টা হয়ে গেছে। তাহলে ও কই? মি. এন্ড মিসেস মির্জা তাদের সকলকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। তাদের বসতে বলে মিসেস মির্জা আর সোনিয়া ছুটে যায় কিচেনের উদ্দেশ্য। বিয়ের পর প্রথমবার মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোক এসেছে তাদের তো খালি মুখে বসিয়ে রাখা যায় না।
অন্যদিকে মি.মির্জা আবরারকে কল লাগান। কিন্তু আবরারের ফোন বন্ধ বলছে। হানিয়াকে ফোন দিলে তার ফোনের রিংটোন রুমের ভেতর থেকে আসে। বুঝতে পারে হানিয়ার ফোন বাসায় রাখা। তারা সকলে টেনশনে পাগলপ্রায়। মি.মির্জা সেদিন সবটা জানার পর ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছেন। অন্য একজনের কথা শুনে কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিজের সন্তানকে জঘন্য কথা বলেছেন। মরে যাওয়ার পন্থা বাতলে দিয়েছেন। মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি থেকে কষ্ট পেয়ে তাদের কাছে এসে ছিলো আর সে বরাবরের মতো আরো কষ্ট দিয়ে তাঁকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। সেদিন সময় মতো হানিয়াকে হসপিটালে না নেওয়া হলে আজ হয়ত মেয়েটার তার মাটির ঘরে চিরকালের মতো ঘুমিয়ে থাকত। কথাটা মনে হতেই বুকটা কেঁপে উঠে তার।
তারা সকলে যখন চিন্তা করতে ব্যস্ত তখন হুট করে স্পর্শ বলে–
–ইনায়াকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি হানিয়ার কথা? সে যদি কোন খবর দিতে পারে?
সকলে তার কথায় সম্মতি জানায়। স্পর্শ ইনায়াকে ফোন করে। টুকটাক কথা শেষে সে ইনায়াকে জানায়–
— ইনায়া,,হানিয়াকে নাকি ডাক্তাররা সকাল দশটায় ডিসচার্জ করে দিয়েছে কিন্তু ওর বাসায় আমরা এসে জানতে পারি ও বাসায় আসেনি। ওকে ওর ভাই কোথায় নিয়ে গেছে তুমি কি জানো?
–হুম জানি।
স্পর্শের ফোনটা লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিলো বিধায় সকলে তার আর ইনায়ার কথোপকথন শুনতে পায়।এতক্ষণে সকলে আশার আলো খুঁজে পায়। জাভিয়ান স্পর্শর কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করে–
–কোথায় আছে ও? ভালো আছে তো?
জাভিয়ানের গলা শুনে ইনায়ার ভালো মেজাজটা মুহূর্তেই গরম হয়ে যায়। সে কঠোর গলায় বলে–
–জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। আপনার থেকে দূরে আছে তাহলে ভালো তো থাকবেই।
ইনায়ার এমন কথা শুনে জাভিয়ানের ভীষণ খারাপ লাগে। কিন্তু মেয়েটা তো মিথ্যাে কিছু বলে নি। সেদিন তে আবারার বললোই তারা নাকি হানিয়ার জীবনের অভিশাপ। জাভিয়ানের বুক ফেটে কান্না আসতে চায়,কিন্তু সে কাঁদতে পারে না। সে ধরা গলায় বলে–
–কোথায় আছে হানি? তোমার কাছে? একটু কথা বলা যাবে ওর সাথে?
–নাহ ও আমার কাছে নেই। আর থাকলেও আমি দিতাম না আপনাকে ওর সাথে কথা বলতে।
–তাহলে কোথায় ও? আবরার ভাইয়া ওকে নিয়ে কোথায় গেলো?
–আমি জানি কোথায় ও। কিন্তু আপনাদের বলা বারন। যদি বলি তাহলে আবরার ভাইয়া বলেছে উনি আমাকেও হানিয়ার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। আমি আমার বোনের মতো বেস্টফ্রন্ডকে হারাতে পারবো না আপনাদের মতো মানুষদের ভালো করতে গিয়ে। তাই দুঃখিত আমি আপনাদের বলতে পারলাম না হানিয়া কোথায় আছে।
জাভিয়ান আগের থেকেও অস্থির হয়ে বলে–
–প্লিজ ইনায়া এমন….
ইনায়া জাভিয়ানকে কথা শেষ করতে না দিয়ে নিজেই বলে–
–দুঃখিত ভাইয়া। আমি কিছু করতে পারলাম না। রাখছি, আল্লাহ হাফেজ।
–ইনায়া, না শুন….
ইনায়া জাভিয়ানের কোন কথা না শুনেই কলটা কেটে দেয়। জাভিয়ান আরো দু-একবার তাঁকে ফোন করে কিন্তু ইনায়া রিসিভ করে না কলটা। জাভিয়ান হতাশ হয়ে ফোনটা স্পর্শকে ফেরত দেয়। এবার আর জাভিয়ান নিজেকে আঁটকে রাখতে পারে না। সকলকে সেখানে রেখেই সে বাসায় থেকে বের হয়ে আসে। গাড়ি চালিয়ে চলে যায় কোথাও একটা। সকলকে তাঁকে পেছন থেকে ডাকলেও সে কারো ডাকে সারা দেয় না। একদিকে হানিয়ার টেনশন অন্যদিকে জাভিয়ানের এমন হুট করে চলে যাওয়া। দুই পরিবার যেন মাঝ সমুদ্রে পরে গিয়েছে,, এখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। মিসেস মির্জা আর সোনিয়া তাদের জন্য হালকা নাস্তা আনলে তারা নাকচ করে চলে আসতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে কি মুখে খাবার উঠে? মি. এন্ড মিসেস মির্জা অনেক জোরাজোরি করার পর তারা অল্প কিছু মুখে দিয়ে চলে আসেন সেই বাসা থেকে।
___________________
গাড়ি থামলে আবরার আস্তে ধীরে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ডাক দেয়।
–হানিয়া,, উঠ। আমরা এসে পরেছি।
ধীরে সুস্থে কোন তাড়াহুড়ো ছাড়া ডাকতে থাকে। কারোর ডাকাডাকিতে হানিয়ার ঘুম পাতলা হয়ে আসে। চোখ খুলে সে দেখতে পায় তার ভাই তাঁকে ডাকছে। হানিয়া শোয়া থেকে উঠে বসে। আবরার গাড়ি থেকে বের হয়ে হানিয়ার পাশের দরজা খুলে তাঁকে বের হয়ে আসতে বলে। হানিয়া গাড়ি থেকে বের হলে দেখতে পায় একটা বহুতল ভবনের সামনে তাদের গাড়ি থামানো হয়েছে। হানিয়া প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। আবরার তাঁকে ধরে ভবন টির ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলে–
–এটা তোর ভাইয়ের বাসস্থান। এখন থেকে তোরও। আজ থেকে তুই আমার সাথে থাকবি।
কথা বলতে বলতে লিফট এসে পরে। আবরার লিফটে উঠে নাইন বাটান প্রেস করে। লিফট নয় তলায় এসে থামলে আবরার তাঁকে নিয়ে লিফট থেকে বের হয়ে আসে। ফ্ল্যাটে প্রবেশের পূর্ব একজন প্রতিবেশীর সাথে আবরারের দেখা হলে,, প্রতিবেশি মহিলাটি আবরারকে জিজ্ঞেস করে–
–উনি কে আবরার ভাই?
আবরার তাঁকে হাসি মুখে বলে–
–আমার বোন ভাবী। হানিয়া মির্জা।
প্রতিবেশী মহিলা ও তার সাথে জাভিয়ানের বয়সী একটা ছেলে তাদের কাছে এগিয়ে আসে। মহিলাটি তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে–
–অসুস্থ মনে হচ্ছে? (হানিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে) এ মা,, দুই হাত এভাবে কাটলো কিভাবে?
আবরার একটু অস্বস্তিতে পরে যায়। সে একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলে–
–সে অনেক লম্বা কাহিনী। সময় করে একদিন বাসায় এসেন বলবো নে। এখন যাই ভাবী,,ওপর শরীরটা একটু দুর্বল। সেই সকালে রওনা দিয়েছি এখন মাত্র এসে পৌছালাম। বুঝতেই তো পারছেন।
আসলে মহিলাটি একটু বাঁচাল টাইপের। একবার কথা বলা শুরু করলে চৌদ্দগুষ্টির কাহিনী নিজে শুনবে তারপর বলবেও। তাই আবরার তাড়াতাড়ি করে কেটে পরতে চাইছে এখান থেকে। মহিলাটি আবরারের কথা শুনে হাসি মুখে বলে–
–আচ্ছা। তা ভাই রান্না করা আছে তো? না মানে আপনার মিসেসকে তো অনেকদিন ধরে দেখছি না। আজও তো দেখলাম না। রাতের খাবেন কি?
আবরার এবার আরো অপ্রস্তুত হয়ে পরে। এশা আর তার ডিভোর্স হয়েছে আজ একমাস হতে চললো। কাউকে এখনো বলা হয়নি। ভেবেছি এ-ই ছুটিতে গিয়ে বলবে কিন্তু হানিয়ার সুইসাইডের কারণে আর বলা হয়ে উঠে নি। হানিয়াও অবাক হয়ে তাকায় ভাইয়ের দিকে। আসলেই তো। এই পনেরো দিনে আবরার বেশ কয়েকবার ঢাকায় গেছে,,কিন্তু ভাবীকে দেখেনি সে একবারও। বিষয়টা তখন সে এতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবে নি।কিন্তু আজ এই মহিলার কথায় ভাবাচ্ছে তাঁকে। সেও প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। আবরার বোনের এমন চাহনি দেখে তাড়াতাড়ি করে বলে–
–এশা একটু বাপের বাড়ি গেছে। আর রান্না আমি ম্যানেজ করে নিবো। আসি ভাবী।
মহিলাটি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলে–
–সেই কতদূর থেকে জার্নি করে এসেছেন। এখন আর আপনার কষ্ট করে খুন্তি নাড়ানো লাগবে না। আমি পাঠিয়ে দিবো।
আবরার তার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলে–
–না না ভাবী। আপনি শুধু শুধু…
–কোন কথা শুনবো না আমি ভাই। আপনি এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নেন।
মহিলাটি আবরারকে নিজের ভাইয়ের মতেই মনে করে। শুধু তাকে না এই বিল্ডিংয়ের সকলকেই সে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে থাকে। বাঁচাল হলে কি হবে মনটা তার ভীষণ ভালো। আবরার তার কথা ফেলতে পারে না। সে মহিলা টির থেকে বিদায় নিয়ে হানিয়াকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে। হানিয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। মহিলাটির সাথে থাকা ছেলেটি তার দিকে কেমন কেমন করে তাকাচ্ছিলো। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল তার।
এশা যেই রুমে থাকত সেই রুমে হানিয়াকে থাকতে দেয়। হানিয়াকে মুখহাত ধুতে সাহায্য করে আবরার। আবরার নিজে ফ্রেশ না হয়েই আবার বের হয়ে যায় বাসা থেকে। হানিয়ার পরার জন্য কোন ড্রেস আনা হয় নি তাই আবরার ছুট লাগিয়েছে মার্কেটে। কাল অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকবে,, কালকে যেতে পারবে না মার্কেটে। আজ তাই গিয়েছে।
হানিয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। নয় তলায় বেলকনি হওয়ায় চোরের ভয় নেই তাই বেলকনিতে রেলিং গুলোতে কোন গ্রিল দেওয়া নেই। হানিয়া মনে মনে ভাবে–
–নাহ আমায় এতো ভেঙে পরলে চলবে না। তাহলে মি.তালুকদার ভাববে তাকে আমি এখনো ভালোবাসি। এটা তাঁকে ভাবতে দেওয়া যাবে না। আমায় শক্ত হতে হবে। এতোটাই শক্ত যাতে মি.তালুকদারকে অন্য কারো হতে দেখেও আমার মন না কাঁদে। আমায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নিজের ড্রিম পূরণ করতে হবে।
হানিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার যেই স্বপ্নটা ছিলো সেটা সে পূরণ করার জন্য নিজের কাছে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়।এমনি আজগুবি চিন্তা ভাবনা করছিলো তখনই একটা আওয়াজে তার হুশ ফিরে। সে ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে ফিরলে দেখতে পায় কিছুক্ষণ আগের সেই ছেলেটি। মানে আবরারের প্রতিবেশী ভাবীর সাথে থাকা ছেলেটি। ছেলেটি হয়ত তার দিকেই তাকিয়েছিলো কারণ হানিয়া হুট করে পাশ ফিরে তাকানোয় ছেলেটি চোরের মতো করছে। হানিয়া ভ্রু কুচকে কেমন একটা দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকায়। ছেলেটি আরো অস্বস্তিতে পরে যায়। ছেলেটি নিজের সাফাইয়ে কিছু বলবে তার আগেই হানিয়া রুমে চলে এসে বেলকনির দরজাটা ধাম করে লাগিয়ে দেয়। ছেলেটির মনে হয় দরজাটা তার মুখের উপর লাগিয়েছে হানিয়া।
হানিয়ার মেজাজ একদম খারাপ হয়ে আছে। জাভিয়ানের পর সে কোন ছেলেকেই দেখতে পারে না,,তার ভাই ছাড়া। কোন ছেলে তার দিকে তাকালেও তার মন চায় ওই ছেলের চোখ দুটো উপড়ে ফেলতে। নিজের এমন ইচ্ছায় হানিয়া নিজেই বিরক্ত। সে নিজেই অনুধাবন করতে পারছে তার মেন্টাল হেল্থ ধীরে ধীরে খারাপের পথে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে উদ্ভট সব ইচ্ছে হয়। হানিয়া নিজের ভাবনা বাদ দিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে টিভি ছেড়ে বসে। কার্টুনের চ্যানেল দিয়ে মনোযোগ দেয় সেটায়।
হানিয়া যখন মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছিলো তখনই কলিংবেল বেজে উঠে। হানিয়া মনে করে তার ভাই এসে পরেছে। তাই সে খুশি মনে কে এসেছে তা না জিজ্ঞেস করেই দরজা খুলে দিয়ে বলতে থাকে–
–ভাই তোমার এতো দেরি….
হানিয়া কথাটা শেষ করতে পারে না। সামনে ব্যক্তিটিকে দেখে তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। সে চমকে গেছে তাকে দেখে। এ এখানে কি করছে?
শব্দসংখ্যা~২০০৫
~~চলবে?
#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_পঞ্চাশ
দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থালা ব্যক্তিটিকে দেখে হানিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত রাগেরা দৌড়াদৌড়ি করছে। পাশের ফ্ল্যাটের ওই ছেলেটা এসেছে। হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে যতগুলো দাঁত ভেটকি দিয়ে দেখানো যায় ততগুলো দেখাচ্ছে। ছেলেটার এমন ভেটকি দেখেই হানিয়ার রাগ আরো বাড়লো। সদা মিষ্টি ভাষী হানিয়া নিজের স্বভাবের বিপরীতে গিয়ে কর্কশ গলায় ছেলেটাকে বলে–
–আপনি? কি চাই?
ছেলেটা হানিয়ার এমন কর্কশ গলা শুনে দমে যেতে নিয়েও দমে না। বরং নিজের হাসিটাকে আরেকটু চওড়া করে, তারপর বলে–
–আপু আপনাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছে।
নিজের হাতের দিকে ইশারা করে কথাটা বলে ছেলেটা। হানিয়া একবার ছেলেটার মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার তার হাতের দিকে। বড়সড় ট্রে টায় তিনটা বড়বড় বাটি ঢাকনা দিয়ে রাখা। ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে সে কিছুতেই এই ছেলেকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করাবে না। সুন্দর মুখশ্রীর পেছনে মানুষের জঘন্য চেহারাটা হানিয়া বহুবার দেখেছে। কথাটা ভেবেই সে নিজের অসুস্থ হাত দুটো এগিয়ে দিয়ে বলে–
–আমার কাছে দিন।
ছেলেটার হাসি মুখ টায় এবার চিন্তার ছাপ দেখা দেয়। সে চিন্তিত হয়ে বলে–
–আপনার হাতে তো ব্যথা। আর ট্রে টাও যথেষ্ট ভারী,,আপনি পারবেন না নিতে। আমিই ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি,, আপনি একটু আমায় সাইড দেন।
মামু বাড়ির আবদার নাকি? হানিয়া সাইড দিয়ে এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে একটা ছেলেকে ঢুকিয়ে খাল কেটে নিজের কোলে করে কুমির ঢুকাক না? হানিয়া দরজাটা আরেকটু চাপিয়ে নিজে ছেলেটার সামনে এসে কাঠকাঠ গলায় বলে–
–আমি ব্যথা পাবো না। আপনি আমায় দিন,,না হয় পরে আসুন।
–আপনি আমায় যাই বলেন না কেন,, আমি বুঝতে পারছি এটি ট্রে’টা নিলে হাতে ব্যথা পাবেন। পরে তো আসতে পারব না। এখনি না হয় রেখে গেলাম।
–আপনি আমায় দিবে…..
হুট করে পেছন থেকে এক নারী কণ্ঠ শুনতে পায়। সেই প্রতিবেশী মহিলাটি। সাথে গল্টুমল্টু একটা কিউট ছেলে বাবু। মহিলাটি বলে–
–রাতুল তো ঠিকই বলেছে। ট্রে’টা যথেষ্ট ভারী হানিয়া,, তুমি হাতে ব্যথা পাবে। রাতুল ভেতরে নিয়ে রাখুক।
মহিলা টিকে দেখে হানিয়া একটু হাফ ছেড়ে বাঁচে। সে কিছুতেই ছেলেটাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিতো না। এবার হানিয়া আর মানা করে না। দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে তাদের ভেতরে প্রবেশের জন্য জায়গা করে দেয়। প্রথমে রাতুল এবং তার পেছন পেছন মহিলা ও বাচ্চাটি প্রবেশ করে। হানিয়া ভদ্রতা অবলম্বন করে তাঁদের বসতে বলে। মহিলা টির সাথে সাথে ছেলেটিও বসে পরে। হানিয়া আর মহিলাটি একটা ডাবল সোফায় বসে আর ছেলেটি মানে রাতুল বাচ্চাটিকে নিয়ে একটা সিঙ্গেল সোফা বসে।
আগেই বলা হয়েছে প্রতিবেশী মহিলাটি বাঁচাল টাইপের। সে তার স্বভাব অনুয়ায়ী কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। হানিয়া মহিলা টির থেকে জানতে পারে আবরার আর তার স্বামী একি অফিসে কাজ করে। তার স্বামী আবরার থেকে সিনিয়র। এই বিল্ডিংটি তাদের অফিসেরই। যারা ঢাকা থেকে পোস্টিং হয়ে রাজশাহীতে আসে তাদের এখানে থাকার জন্য ফ্ল্যাট দেয় অফিস থেকে। তারপর জানায় সামনে বসা ছেলেটি তার ভাই শেখ রাতুল রহমান। পেশায় ছোট্টখাট্ট মেডেল। তেমন জনপ্রিয়তা নেই কিন্তু আস্তে ধীরে নাম হচ্ছে নাকি তার। ঢাকায় থাকে রাতুল,,এখানে বড় বোনের কাছে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে আর এছাড়াও তার একটা সুট আছে রাজশাহীতে। এই কথা শুনে হানিয়া মনে মনে ভাবে–
–ঢাকার মডেল নামই শুনলাম আজ প্রথম।
কথাটা ভেবেই তার হাসি পায়। ঠোঁট টিপে একটু হেসেও নেয়। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখ তুলে যেই না রাতুলের দিকে তাকিয়েছে দেখতে পায় ছেলেটা তার ফোন কেমন একটা করে ধরে রেখেছে।অনেকটা মুখের সামনে নিয়ে রেখেছে। আর তার চেয়েও অবাক করা বিষয় হলো,,হানিয়া যখন তাকিয়েছে ছেলেটা তখন থতমত খেয়ে যায়। চোরের মতো এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। মনে হয় লুকিয়ে কিছু করতে গিয়ে ধরা পরে গেলে যেমনটা করে না মানুষ তেমন করছে। হানিয়া তার মাথার ওরনাটা আরেকটু টেনে নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকায়। তাঁর দিকে তাকানোর সময় হানিয়ার নজরে পরে রাতুলের কোলে বসে থাকা বাচ্চা ছেলেটার দিকে। বয়স তিন কি সাড়ে তিন হবে বাচ্চাটার। এতো কিউট করে হানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হানিয়া হাত দিয়ে ইশারা করে বাবু টাকে নিজের কাছে ডাকে। বাবু টাও টুকটুক করে হেঁটে তার সামনে আসে। হানিয়া হাত বাড়িয়ে বাবু টাকে নিজের কোলে তুলে নেয়। বাবুটা মাশাল্লাহ গলুমলু ভালোই। কাটা হাতজোড়া নিয়ে বাবু টাকে কোলে তুলতে হানিয়ার একটু কষ্ট হলেও সেটাকে পাত্তা দেয় না হানিয়া।
নিজের কোলে তুলে নিয়ে শুরুতেই ঠাশঠাশ করে কতগুলো চুমু খায় হানিয়া বাবু টাকে। বাবু টার নাম জিজ্ঞেস করলে সে জানায় —
–আমার নাম আহনাফ।
ছোট বাবু কার না পছন্দ। হানিয়া তো বাবুদের পেলে তাদের সাথে নিজেও বাবু হয়ে যায়। নিজের বর্তমান পরিস্থিতি ভুলে গিয়ে সে বাবু টার সাথে খেলা করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। মিশুক টাইপের আহনাফ হানিয়ার সাথে দুধভাতের মতো মিশে গেছে। আহনাফ আদো আদো গলায় বিভিন্ন কথা বলছে হানিয়াকে,, হানিয়া তার দু-একটার উত্তর দিচ্ছে তো আহনাফের কথা শুনে হাসতে হাসতে শুয়ে পরছে। এর মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠলে রাতুল গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আবরার এসেছে। ঘরে প্রবেশ করে বোনের প্রাণখোলা হাসি শুনে আবরারেরও মনটা খুশিতে ভরে উঠে।
হাতের বাজার সদাই কিচেনে রেখে এসে ড্রয়িংরুমে যায় সে। দেখতে পায় বোন তার বাচ্চা আহনাফের সাথে মিশে নিজেও বাচ্চা হয়ে গেছে। খিলখিলিয়ে হাসছে,,দুষ্টুমি করছে। তার মনে হয় হানিয়াকে তার সাথে নিয়ে আসাটা স্বার্থক হয়েছে। সে হানিয়াকে ডাক দিলে,, হানিয়া তার দিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে–
–ভাই তুমি এসেছো? কখন এলে?
–এই তো পাঁচ মিনিট হবে। কি করছিলি তুই? ভয় পাস নি তো একা একা বাসায়?
হানিয়া চোখ ছোট ছোট করে ভাইকে বলে–
— আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছো যে একা থাকতে ভয় পাবো? আর একা ছিলাম না তো। তুমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আপারা এসেছে। তাদের সাথেই কথা বলছিলাম।
আবরার বোনের প্রথম কথাটার জবাব দিয়ে বলে–
–তুই বাচ্চা হবি কেন? তুই তে বুড়ি। জানিস না কুড়িতে বুড়ি। তোর তো কুড়ি পার হলো বলে।
হানিয়ার রাগ হয়। বলা চলে ভাই বোনের মিছেমিছি রাগ আর কি। নিজের প্রতিবেশীদের সামনে ভাই তাকে বুড়ি বলেছে। বিষয়টা তার হালকার উপর ঝাপসা সম্মানে লেগেছে। সে রাগ দেখিয়ে আহনাফকে কোলে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে–
–আমায় বুড়ি বলার আগে নিজের দিকে তাকাও। আমার থেকে এগারো বছরের বড়। তার মানে বুঝতে পেরেছো? একত্রিশ বছরের বুড়া তুমি। এহহহ, আমায় বুড়ি বলতে আসছে।
কথাটা বলে একটা মুখ ভেঙচি দেয়। তারপর আহনাফের আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে–
–আপা আপনি আমার সাথে আসুন তো। আমরা রুমে গিয়ে কথা বলি। এসব বুড়া মানুষের মাঝে থাকতে হবে না আমাদের।
কথাটা বলে হানিয়া আহনাফকে কোলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দেয়। তার এমন ঝগড়া দেখে আবরার হেঁসে দেয়।তার সাথে রাতুল আর আহনাফের মা-ও হেসে দেয়।
আহনাফরা রাত নয়টা পর্যন্ত ছিলো। রাতুল অবশ্য অনেক আগেই চলে গেছে। আবরার কিনে আনা জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখে নিজের অফিসের কাজ করে। আহনাফের আম্মুর নাম সায়মা। হানিয়া তাকে আপা বলেই ডেকেছে। মহিলা নিজেই তাকে এটা বলেছে। আহনাফরা চলে যাওয়ার পর হানিয়া-আবরার খাবার খেয়ে নেয়। আবরার হানিয়াকে তার ঔষধ দিয়ে কিছুক্ষণ তার পাশেই বসে থাকে। রাত বাড়ছে দেখে নিজের রুমে চলে আসে। আসার সময় হানিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে–
— যা হয়েছে তা হয়ত ভুলতে পারবি না। কিন্তু চেষ্টা তো করতে পারবি,, তাই না?
হানিয়া হ্যাঁ না কিছুই বলে না। আবরার একটা হতাশ মিশ্রিত শ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে আসে। এতো সহজ ভোলা? হানিয়ার ঔষধ গুলোর মধ্যে ঘুমের ঔষধ থাকায় সে শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরে।
___________________
কথায় আছে,, তুমি নিজে যতটুকু কষ্ট সইতে পারবে ঠিক ততটুকু কষ্টই অন্যকে দিবে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। জাভিয়ান প্রতিশোধের নেশায় এতো বেশি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলো যে,,নিজের বিবেক বিসর্জন দিয়ে হানিয়াকে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু কষ্ট ভোগ করার সময় যখন জাভিয়ানের এলো তখন সে সেটা সইতে পারছে না।
পুরো একটা দিন হয়ে গেলো কিন্তু তারা কেউ হানিয়ার খবর জানে না। শুধু এতটুকু জানে সে আবরারের সাথে আছে। কোথায় আছে,,কি করছে,,তার শরীরের অবস্থা কেমন এখন কিছুই জানে না। রাত বাজে এখন সাড়ে বারোটা। মাত্রই জাভিয়ান বাসায় আসল। কলিংবেল দিতেই দরজাটা কেউ একজন খুলে দিলো। মনে হচ্ছিল তার জন্যই অপেক্ষা করছিলো ব্যক্তিটি। কিন্তু কে এত রাত জেগে তার জন্য অপেক্ষা করছে? আগে তো হানিয়া করতো। সে তো জাভিয়ানকে ত্যাগ করে চলে গেছে কোন এক অজানায়,,তাহলে আর কে? তার মনি?
জাভিয়ান চোখ তুলে দরজা খুলে দেওয়া ব্যক্তিটিকে দেখে। নিমিষেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সোহা খুলেছে দরজাটা। জাভিয়ান কোন কথা না বলেই সোহাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন সোহা তাকে পেছন থেকে ডাক দেয়–
–জাভিয়ান?
সোহার এমন কাজে যেন জাভিয়ানের উত্তপ্ত মেজাজে কেউ ঘি ঢেলে দেয়। মেয়েটা তার থেকে কম করে হলেও দশ বছরের ছোট। সেই মেয়েটি নাকি তাকে তার নাম ধরে ডাকছে। কার না মেজাজ খারাপ হয় এমন বেয়াদবিতে? তার বউ পর্যন্ত তাকে নাম ধরে ডাকে না। একদিন ডেকেছিলো কিন্তু তারপর আর শুনা যায় নি সেই প্রিয় নারীর মুখে নিজের নামটি। জাভিয়ান ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকায়। সোহা জাভিয়ানের এমন দৃষ্টি দেখে ভরকে যায়।আমতাআমতা করে বলে–
–ডিনার রেডি করছি। ফ্রেশ হয়ে আসো।
জাভিয়ান হাত মুঠ করে নিজের রাগটা সংবরণ করে। যার তার উপর রাগ দেখাতে ইচ্ছুক নয় সে। সে দাতে দাঁত চেপে কিড়মিড়িয়ে বলে–
–আমার ডিনার নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমার হাত আছে,, নিজেরটা নিয়ে খেতে পারবো আমি। নিজের চরকায় তেল ঢাল। আরেকটা কথা,,আর কোনদিন যদি তোর মুখে যদি ভাইয়া ছাড়া আমার নাম শুনি,, তাহলে এটা সিউর থাক ওইদিন তোর একটা হলেও দাঁত পরবে চাপা থেকে। মনে রাখিস কথাটা।
কথাটা বলে জাভিয়ান এমন একটা লুক দেয় যে, সোহার ভেতর পর্যন্ত কেঁপে উঠে। জাভিয়ান গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে গিয়ে রুমের দরজাটা ঠাশ করে লাগায়। এর ফলে হওয়া শব্দ সোহা নিচ থেকে পর্যন্ত পায়। সোহা একটা শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে নিজের রুমের দিলে পা বাড়ায়। মনে মনে নিজের খালামনিকে বকতে ভুলে না। সে রাগে গজগজ করতে করতে বলে–
–বুড়িটা জ্বালিয়ে মারলো। এহহ কি ঢং!! তার ছেলেকে বেড়ে নাকি খাওয়াতে হয়। আমাকে কি হানিয়া পেয়েছে নাকি? বিয়েটা একবার হোক,,এই জাভিয়ান আর শায়লা তালুকদারকে আমার চাকর না বানিয়েছি তাহলে আমার নাম সোহা না।
কথাটা বলতে বলতে রেগেমেগে বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পরে।
___________
রুমে আসার পর এক ভয়ংকর নিস্তব্ধতা জাভিয়ানকে আঁকড়ে ধরে। রুমের লাইটটা পর্যন্ত জ্বালানো নেই। জাভিয়ান লাইট জ্বালিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরটাকে আলোকিত করে। ঘর কি শুধু লাইট জ্বালিয়েই আলোকিত করা যায়? ঘরের আলো যে সে ঘরের কন্যা-বধুরা। তাদের ঘরে কন্যা থাকলেও বধু যে নেই। কেনো নেই সেটা জিজ্ঞেস করলে লজ্জিত হতে হবে তাঁদেরকেই।
ক্লান্ত শরীরটাকে কোনমতে টেনে নিয়ে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে সোফার উপর ধপ করে বসে পরে। মাথায় হাত রেখে ভাবতে থাকে হানিয়াকে নিয়ে আবরার কোথায় যেতে পারে। হুট করে মনে পরে, সে একবার শুনেছিলো আবরার কাজের সূত্রে রাজশাহী থাকে। হ্যাঁ, তার মানে আবরার হানিয়াকে তার সাথে করে রাজশাহী নিয়ে গেছে। কথাটা মনে পরতেই সে অস্থির হয়ে যায়। মন চাইছে এখনি রাজশাহী গিয়ে একসময়ের অপ্রিয় সেই রমনীকে দেখতে। তাকে দীর্ঘ সময় বুকের সাথে চেপে ধরে উত্তপ্ত বুকটা শান্ত করতে। কিন্তু আবার মনে পড়ে, রাজশাহী তো কোন ছোট বিভাগ না। কতগুলো শহর,,পাড়া-মহল্লা আছে। কোথায় খুঁজবে সে তার রমনীকে? আবারো হতাশ তাকে চেপে ধরে। ফোনটা হাতে নিয়ে চলে যায় বেলকনিতে। নির্ঘুম আরো একটু রাত কাটাতে।
_____________________
–“পাখি এখনো খাঁচায় বন্দি। কিন্তু শিকারীর ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি চলে এসো। মনে রেখো, আমি লক্ষ্যভেদে কখনো ভুল করি না। আর একটা কথা—অসুস্থ পাখিকে সুস্থ করার লোকের অভাব নেই।”
ঘরের ভেতর গভীর অন্ধকার। জানালার ফাঁক দিয়ে আসা চাঁদের মলিন আলো যুবকের মুখটাকে রহস্যময় করে তুলেছে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সে, ঠোঁটের কোণে এক বাঁকা হাসি। ধীরে ধীরে পকেট থেকে ফোন বের করল, যেন প্রতিটি মুহূর্তই তার নিয়ন্ত্রণে। নম্বর ডায়াল করার পর সেকেন্ডের মধ্যেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হয়।
কিছুক্ষণ নীরব থেকে যুবকটি ঠাণ্ডা অথচ ধারালো কণ্ঠে কথোপকথন শেষ করে। অনেকটা নিরব হুমকি দেয় অপর পাশের ব্যক্তিটিকে। ফোন কেটে যুবকটি চেয়ারে আরেকটু গা এলিয়ে দিল। তার ঠোঁটের কোণের সেই বাঁকা হাসি আরও গভীর হলো, যেন অন্ধকারই তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী।
____________________
কেটে যায় পাঁচটা দিন। সময় যেন দৌড়াচ্ছে। হানিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ। আবরার আজ তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলেছে হাতের ক্ষতগুলোর অবস্থা জানতে। হানিয়া এখন নিজেই নিজের উপর বিরক্ত। কোন শয়তানে যে তাকে এমন বাকওয়াস কাজটা করতে বলেছিলো পাইলে চটকনা দিয়ে সোজা করে দিতো। ভীষণ সমস্যা হচ্ছে নিজের কাজগুলো করতে।
রাজশাহী আসার পর আজ প্রথমবারের মতো হানিয়া বাসার বাহিরে যাবে। এই তিনদিন সে ঘরবন্দীই ছিলো। আবরারের অফিস সাতটায় ছুটি হয়। সে সাড়ে সাতটায় বাসার নিচে গাড়ি নিয়ে আসে। হানিয়াকে ফোন দিয়ে তাঁকে নিচে নামতে বললে হানিয়া রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়। দরজা লক করে লিফটে উঠবে তখনই নজরে পরে সায়মা আপা ,,আহনাফ আর রাতুলকে। অনেক গ্রোসারি কিনে মাত্রই ফিরেছে। আহনাফ হানিয়াকে দেখে লাফ দিয়ে মায়ের কোল থেকে তার কোলে এসে পরে। হানিয়াও খুশি মনে তাঁকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে আদর করে। এই তিনদিনে সায়মা আর আহনাফের সাথে তার ভীষণ ভাব হয়ে গেছে। হানিয়াও তাঁদের সঙ্গ বেশ পছন্দ করছে। আহনাফটা সারাদিন হানিয়ার পেছন পেছন ঘুরঘুর করবে। নানা ধরনের কথা বলে,,কাজ করে হানিয়াকে হাসিয়ে মারবে।
হানিয়া সায়মা আপাকে এতো কেনাকাটার কারণ জিজ্ঞেস না করলেও সে নিজে থেকেই বলতে শুরু করে–
–আরে হানিয়া জানিস না,,কাল আমার মামাতো ভাই আসছে। অনেক বছর পর তার সাথে দেখা হবে। লাস্ট ওর সাথে দেখা হয়েছিলো যখন ও হাফপ্যান্ট পরতো তখন। তারপর আমিও আমার পড়াশোনা,, বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলাম ও নিজের পড়াশোনা,, ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পাড়ি জমালো দূর দেশে। দেশে ফিরছে বছর তিনেক আগেই কিন্তু তারপর বাবার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। এখানেও নাকি কি একটা জরুরি কাজে আসবে। তাই আমিই বললাম আমার বাসায় উঠতে। এই উছিলায় ভাইটাকে একটু খাতির যত্নও করা হবে।
হানিয়া কোন বিরক্তি ছাড়াই সায়মার কথাগুলো শুনে। সায়মা নিজের কথায় ব্যস্ত হয়ে পরে। হানিয়াও টুকটাক কয়েকটা কথা বলছে। হানিয়ার এমন রেডি হয়ে বের হওয়া দেখে রাতুলের একটু খটকা লাগে। সে আন্দাজেই ঢিল ছুড়ে বলে–
–আপনি কোথাও যাচ্ছেন ভাবী?
হানিয়া আর সায়মা ভ্রু কুঁচকে রাতুলের দিকে তাকায় তাট ভাবী ডাক শুনে। রাতুল হুট করে কি বলতে কি বলে ফেলেছে ভেবেই জিভ কাটে। হানিয়া সন্দীহান দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকালে সে তাড়াহুড়ো করে বলে–
–দুঃখিত আপু। আসলে একটা ফ্রেন্ডের বউকে ভাবী বলে রাগাচ্ছিলাম বিকেলে তো সেটাই ভুলে আপনাকে বলে ফেলেছি। দুঃখিত।
হানিয়ার তার কথাটা বিশ্বাস না হলেও সে এই বিষয় নিয়ে বেশি একটা মাথা ঘামায় না। রাতুলকে তার এমনিতেও পছন্দ না। ছেলেটার সাথে যখনই দেখা হয় কেমন অদ্ভুত করে হাসে,,তাকিয়ে থাকে। রাতুল তাঁকে আবার প্রশ্নটা করলে হানিয়া শান্তভাবে জানায় সে তার কাটা হাত দেখাতে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। হানিয়া কথাটা বলতে না বলতেই আবরার আবার ফোন দেয়। সায়মা তাঁকে আর আঁটকে না রেখে চলে আসে রাতুল-আহনাফকে নিয়ে। হানিয়া লিফটে উঠে গ্রাউন্ড ফ্লোরের বাটান প্রেস করে। লিফটের দরজা বন্ধ হবে এমন সময় সে লিফটের বাহিরে তাকালে দেখতে পায় রাতুলের অদ্ভুত সেই চাহনি আর হাসি।
_____________________
সকালে আবরার অফিসের জন্য বের হবে এমন সময় আগমন ঘটে সায়মার। সে হানিয়াকে নিজের সাথে তাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে এসেছে এবং দুপুরের খাবার টাও তাদের সাথেই করার প্রস্তাব দেয়। আবরার সম্পূর্ণ বিষয়টা হানিয়ার উপর ছেড়ে দেয়। হানিয়ার ভালো লাগলে যাবে। সায়মা অনেক জোর করায় হানিয়া মানা করতে পারে না। আবরার অফিসের জন্য বের হয়ে গেলে সেও সায়মার সাথে তাদের ফ্ল্যাটে এসে পরে। আহনাফের সাথে দুষ্টুমি,,সাময়াকে টুকটাক সাহায্য করতে করতে দুপুর একটা বেজে যায়।
মোটামুটি সব রান্নাই শেষ শুধুমাত্র পায়েশ বাদে। পায়েশটা সে বেশি একটা ভালো বানায় না,,এটা নিয়ে একটু চিন্তিত। তাঁকে কোন একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে দেখে হানিয়া তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করে। সায়মা তাকে বিষয়টা জানালে হানিয়া নিজেই বলে সে পায়েশটা বানাতে চায়। অসুস্থ হানিয়াকে বুঝি সায়মা কাজ করতে দিবে? সায়মা এক বাক্যে নাকচ করে দেয়। হানিয়াও নাছোড়বান্দার মতো তাকে রাজি করিয়ে তবেই দম নেয়। কিন্তু সায়মা তাকে শর্ত দেয় হাতে বেশি প্রেশার দেওয়া যাবে না। আর হাত ব্যথা করলেই কাজটা তাকে হ্যান্ডওভার করতে হবে। হানিয়াও মেনে নেয় তার শর্ত।
প্রায়ই একঘন্টা লাগিয়ে ধীরে সুস্থে ঘর ম-ম করা সুবাস নিয়ে হানিয়া তার রান্না শেষ করে। আজ একমাস পর সে হাতা-খুন্তি ধরলো। বেশ তৃপ্তি নিয়ে কাজটা করেছে সে। গরমে ঘেমে যাওয়ায় সায়মা তাঁকে নিজের রুমে পাঠিয়ে দেয় ফ্রেশ হতে। মুখ হাত ধুয়ে আহনাফকে নিয়ে ঘরে বসেই দুষ্টুমি করতে থাকে তখনই কলিংবেলের আওয়াজ শোনা যায়। হানিয়া বুঝতে পারে সায়মাদের গেস্ট হয়ত এসে পরেছে। তার গেস্টের মুখোমুখি হতে কেমন একটা অস্বস্তি অনুভব হয়। আহনাফ কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই দৌড় দিয়েছে। হানিয়া মিনিট দুয়েক বাদে রুম থেকে বের হয়।
রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই তার নাকে এসে বারি খায় তার নিষ্ঠুর পুরুষটির গায়ের সুবাস। বুকের মধ্যে কিছু একটা কামড়ে উঠে। ড্রয়িংরুমের সোফায় দিকে তাকালে দেখতে পায় তার দিকে পিঠ দিয়ে একজন অচেনা যুবক বসে আছে। আহনাফের অবস্থান যুবকটির কোলেই। সায়মা-রাতুল যুবকটির বিপরীত দিকের সোফায় বসে আছে।
ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে সায়মার নজর পরে তার ঘরের দরজায় দাঁড়ানো হানিয়ার দিকে। সে একটা হাসি দিয়ে হানিয়াকে ডাক দিয়ে বলে–
–হানিয়া এদিকে আয়। পরিচিত হ ওর সাথে। আয় এদিকে আয়।
সায়মার হুট করে ডেকে ওঠায় হানিয়া থতমত খেয়ে যায়। চোখ দিয়ে ইশারায় বুঝায় সে যেতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু দুষ্টু রাতুলের জন্য তার এই ইচ্ছেটাও পূরণ হয় না। সে একটা চমৎকার হাসি দিয়ে বেশ জোরে জোরে বলে–
–হানিয়া আপুনি,, তুমিকি ভাইয়ার সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছো? আরে লজ্জার কি আছে। আসো,, কথা বলো।
হানিয়ার এবার সিরিয়াস রাগ হয় রাতুলের উপর। সে কঠিন চোখে তার দিকে তাকায়। তারপর গুটিগুটি পায়ে সোফার কাছে যেতে থাকে। যতই ওই দিকে আগাচ্ছে তার বুকের ভেতর হৃদপিণ্ড নামক বস্তুটার কীর্তিকলাপ দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলছে। মাথায় দেওয়া ওরনাটা আরেকটু টেনে কপাল পর্যন্ত আনে। তারপর সেখানে গিয়ে চোখ নিচের দিকে রেখে অজ্ঞাত সেই ব্যক্তির উদ্দেশ্য সালাম দেয়।
কে না কে তার সাথে দৃষ্টি বিনিময় করার ইচ্ছা হানিয়ার একদমই নেই। তার উপর ব্যক্তিটি ছেলে। সালামের জবাব না পেয়ে হানিয়ার একটু অদ্ভুত লাগে। তার অদ্ভুত লাগাকে বিস্ময়ে পরিণত করে শোনা যায় অতি পরিচিত সেই পুরুষালি কন্ঠ।
–ওয়া আলাইকুমুস সালাম মিসেস তালুকদার।
হানিয়ার পিলে চমকে উঠে এমন কথা আর ব্যক্তিটির কন্ঠ শুনে। চোখ তুলে ব্যক্তিটিকে দেখে হানিয়া হতভম্ব হয়ে যায়। আবরার তার অবস্থান কাউকেই জানায় নি তাহলে এ এখানে আসলো কিভাবে? হানিয়া বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে —
–এই লোক আমায় কবরে না নিয়ে শান্ত হবেন না।
শব্দ সংখ্যা~২৭২৫
~~চলবে?