#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#Season_2
#পর্ব_০২
গতরাত তিনটায় নানা পাগলামি করে ঘুমালেও সকাল আটটা না বাজতেই ঘুম ভেঙে যায় জাভিয়ানের। স্বাভাবিকভাবে শোয়া থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার আগে করা কাজগুলো করতে থাকে। হোয়াইট শার্টের উপর ব্ল্যাক কোর্ট পরে গায়ে শেষ বারের মতো পারফিউম স্পে করে ল্যাপটপ ব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসে রুম থেকে।
নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে মা’কে বসে থাকতে দেখে পা ঘুরিয়ে সদর দরজার দিকে যেতে থাকে। বিষয়টা কুলসুমের চোখে পরে। সে গলার স্বর বাড়িয়ে জাভিয়ানকে ডেকে বলে–
–ভাইজান,,কই যাইতাছেন? ব্রেকফাস্ট করবেন না?
ষোলো বছরের চটপটে,, চঞ্চল কিশোরী কুলসুম এখন একুশ বছরের শিক্ষিত যুবতীতে পরিণত হয়েছে। হানিয়া থাকতে সে পড়ালেখা করতো না,,হানিয়া কতো বার পড়ালেখার জন্য তাকে বকেছে কিন্তু সে এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিতো। সেই পড়া চোর কুলসুম আজ এসএসসি এক্সামে ভীষণ ভালো রেজাল্ট করে এখন এইচএসসি শিক্ষার্থী। বয়সটা একটু বেশি হলেও জ্ঞান আহরণের জন্য তো কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই,,তাই না?
কুলসুমের কথায় সকলে ঘাড় ঘুড়িয়ে জাভিয়ানের দিকে তাকায়। জাভিয়ান পেছন না ফিরেই জবাব দেয়–
–নাচতে যাচ্ছি,, যাবি?
জাভিয়ানের এমন ত্যাড়া কথায় সকলে থতমত খেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। তারা অভস্ত হয়ে যাচ্ছে জাভিয়ানের এমন উদ্ভট কথা ও কাজে। যেখানে ছেলেটা নিজেই এক উদ্ভট মানবে পরিণত হয়ে গেছে সেখানে তার থেকে ভালো কথা বা ব্যবহার আশা করা বোকামি। কুলসুমও তার কথার ত্যাড়া জবাব দিয়ে বলে–
–খাইয়া যান নাচতে,,ড্যান্সফ্লোর কাঁপায় দিয়ে ট্রফি নিয়া আসবেন কিন্তু।
তার কথায় শুনে মি.তালুকদার শব্দ করে হেঁসে দেয় মিসেস তালুকদার তার সাধ্য অনুযায়ী হাসে। অন্যদিকে জাভিয়ান তো রেগে বোম। সে চোখ গরম করে কুলসুমের দিকে তাকালে কুলসুমের হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়। একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে–
–ভালাই কা জামানাহি নেহি হে। ভালো কথা কইলেও চোখ গরম দেখা লাগে,,কপাল।
জাভিয়ান তাকে ধমকে বলে–
–এই বেয়াদব,, অশিক্ষিতদের মতো কথা বলছিস কেন? শিক্ষিত হয়েছিস,, শুদ্ধ-সুন্দর ভাষায় কথা বলতে পারিস না?
–না পারি না। বাসায় আমি আমার ভাষায় কথা কমু। কুনহানে লেহা আছে শিক্ষিত হইলে নিজের মাতৃভাষা বা গায়ের ভাষায় কথা কওয়া যাইবো না?
জাভিয়ান কুলসুমের চেটাং চেটাং কথা শুনে আরো রেগে যেতে থাকে। সকাল সকাল নিজের মেজাজ আর খারাপ করতে চায় না বলে জাভিয়ান হনহনিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে। গাড়ির সামনে এসে দেখে রাশেদ আগে থেকেই এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁকে দেখে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে ‘গুড মর্নিং” জানালে জাভিয়ান এতেও তেতে উঠে। ধমকে বলে–
–মেয়েদের মতো এতো হাসিস কেন? আর সকালবেলা সকালে আমার বাসায় কি?
রাশেদের জ্বলজ্বল করা হাসিটা জাভিয়ানের ধমক খেয়েও নিভে যায় না। সে জাভিয়ানের জন্য দরজা খুলে দিতে দিতে বলে–
–বউ আপনার বাসায় রেখে নিজের বাসায় কি আর মন টিকে? মন তো চাচ্ছিলো কাল রাতেই এসে পরি,,তারপর ভাবলাম রাতে আসলেই একটা থাপ্পড় সিউর আমার গালে পরবে। তাই সকালে আসলাম।
জাভিয়ান ড্রাইভিং সিটের পাশে বসতে বসতে বলে–
–তোর বউটাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যা তো। বড্ড জ্বালায় আমাকে।
রাশেদ মুখ ফসকে বলে দেয়–
–দেখতে হবে না একসময় তার শিক্ষক কে ছিলো। হানিয়া ভাবির থেকেই…
কথা বলতে বলতে হঠাৎই হুশ ফিরে রাশেদের। কি বলতে কি বলে ফেলেছে বিষয়টা বুঝতো পেরে আঁড়চোখে একবার জাভিয়ানের দিকে তাকায়৷ দেখতে পায় জাভিয়ান কেমন থম মেরে বসে আছে। রাশেদ আর কোন কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
রাশেদ আর জাভিয়ান এতক্ষণ কুলসুমের কথা বলছিলো। হানিয়া চলে যাওয়ার পর জাভিয়ান যখন উন্মাদ হয়ে বাসায় ছিলো তখন রাশেদ প্রায়ই প্রায়ই বাসায় এসে মি.তালুকদারকে অফিসের বিভিন্ন কাজের ডিটেইলস দিয়ে যেতো। তখনই কুলসুমকে দেখে তার পছন্দ হয়। আস্তে আস্তে কুলসুম নিজেকে হানিয়ার কথা মতো শিক্ষিত করে তুলে,,যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো যোগ্যতা গ্রহন শুরু করে,, তখনই রাশেদ অনুধাবন করে কুলসুমকে তার প্রয়োজন। জীবনে বাকি পথটা সে কুলসুমের সাথেই চলতে চায়।
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান রাশেদ। পিতা মারা গিয়েছে সে যখন ছোট তখন। মা শিক্ষিকা ছিলেন। রাশেদ কুলসুমের কথা তার মা’কে জানালে ভদ্রমহিলা কোন আপত্তি করে না। কুলসুমের জন্য প্রস্তাব নিয়ে তালুকদার বাড়ি গেলে তালুকদার বাড়িও তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ছেলে হিসেবে রাশেদ হাজারে একটা। কুলসুমের কোন ব্যক্তিগত পছন্দ না থাকায় গত ছয়মাস আগেই ঘরোয়া ভাবে তাদের দু’জনের আকদ করিয়ে রাখা হয়। কুলসুমের এইচএসসি এক্সাম শেষ হলে মি.তালুকদার সসম্মানে কুলসুমকে উঠিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন।
গাড় চলতে চলতে জ্যামে আটকে যায়। জাভিয়ান নিরবতা ভঙ্গ করে রাশেদকে বলে–
–তোর কি মনে হয় রে রাশেদ? হানিয়াকে কি আর কখনোই ফিরে পাবো না আমি?
জাভিয়ানের কণ্ঠে প্রচন্ড মায়া,,যা তার ভেঙ্গে পরাকে বোঝাচ্ছে। রাশেদের ভীষণ খারাপ লাগে জাভিয়ানের এমন করুণ অবস্থা দেখে। সেই সাথে হানিয়ার উপরও হালকা পাতলা রাগ হয়। কষ্ট দেওয়া লাগবে কাছে থেকেই তো কতভাবে দেওয়া যায়। সে জন্য হারিয়ে যাওয়া লাগবে? পরক্ষণেই তার বসের করা কর্মকান্ড গুলোর কথা মনে পরে নিমিষেই সেই রাগটা পরে যায়। হানিয়া তো আর জানে না জাভিয়ান তাকে এতোটা ভালোবাসে বা সেদিনের ঐ ডিভোর্সের পেপারস গুলো ফেইক ছিলো। রাশেদ বলে উঠে–
–ভাই আমার মন বলছে আপনি খুব শীঘ্রই ভাবীকে খুঁজে পাবেন। আপনার শাস্তিগুলো খুব তাড়াতাড়িই শেষ হতে চলেছে।
রাশেদের কথা শুনে জাভিয়ানের সান্তনা বৈ কিছুই লাগে না। সে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে জানালে দিয়ে বাহিরে তাকায়। একটু মাথা বের করে দেখে নেয় জ্যাম কতদূর পর্যন্ত লেগেছে। এখনি হয়ত ছেড়ে দিবে। মাথাটা ভেতরে ঢোকানোর পর তার নজর যায় বিপরীত পাশের লেনের দিকে। সেটি পাশেও হালকা জ্যাম লেগে আছে। একটা গাড়িতে মলিন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে হানিয়া। জাভিয়ান যেন রিয়েক্ট করতেই ভুলে গেছে। সে-ও হা করে হানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হানিয়ার গাড়ি চলতে শুরু করলে জাভিয়ানের ধ্যাণ ভাঙে। সে হুড়মুড়িয়ে নিজের গাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের লেনের দিকে ছুট লাগায়।
কিন্তু ততক্ষণে হানিয়ার গাড়ি চলে গেছে। জাভিয়ান চিৎকার করে বলতে থাকে–
–হানিয়া যেয়ো না।প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না। আমি মরে যাচ্ছি,, হানিয়াআআআআআআ!!!
তখনই একটা গাড়ি এসে জাভিয়ানকে হিট করে। জাভিয়ান ছিটকে কিছুটা দূরে গিয়ে পরে,,মাথায় আঘাত লাগার কারণে সেকেন্ডের ব্যবধানে অজ্ঞান হয়ে যায়। বিষয়গুলো এতোটাই তাড়াতাড়ি ঘটে যায় যে,,রাশেদ গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই সব ঘটে যায়।
___________________
–আমার সাথে মুখ ফুলিয়ে অভিমান করে লাভ নেই। আমি তোর বউ বা গার্লফ্রেন্ড লাগি না,,সো এসব করে আমার কাছে পাত্তা পাবি না।
জাভিয়ানের কথা কানে না নিয়েই রাশেদ গম্ভীর মুখে ডাক্তারের সাজেস্ট করা ঔষধগুলো প্রেসক্রিপশনের সাথে মেলাতে থাকে যেগুলো সে একটু আগেই কিনে এনেছে। আজ রাশেদ প্রচন্ড বিরক্ত জাভিয়ানের উপর। ট্রাফিক ছেড়ে দেওয়ার সময় কেউ ওমন করে দৌড়ায়? আজ একটুর জন্য বাসের নিচে পরেনি জাভিয়ান। মি.তালুকদার বাসার বাহিরে জাভিয়ানের সন দায়িত্ব তাকে দিয়েছে,,আর এই বেটা তাকে তার শ্বশুরের সামনে ছোট করছে।
মেয়েদের মতো মুখ ফুলানো দেখে জাভিয়ান রাশেদের অগোচরে হেঁসে দেয়। মাথাটা ঝিমঝিম করায় বালিশে ভালো করে শুয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করতেই তার তখনকার দৃশ্যটা আবারও মনে পরে। তড়াক করে চোখ খুলে উত্তেজিত হয়ে রাশেদকে বলে–
–জানিস তখন আমি তোর ভাবীকে দেখেছি।
রাশেদ কোন বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এমনটা সে এই কয়েক বছরে কয়েকশ বার হলেও শুনেছে এবং জাভিয়ানের এমন পাগলামিও দেখেছে। রাস্তায় ঘাটে প্রায়শই জাভিয়ান এমন হানিয়াকে দেখতে পায়। মূলত হ্যালুসিনেশন এটা তার। জাভিয়ানের মেন্টাল হেল্থ ঠিক না থাকায় এমনটা দেখে সে। রাশেদ ঔষধগুলোর থেকে চোখ তুলে জাভিয়ানকে বলে–
–আপনি চুপ করে শুয়ে থাকুন। আমি বাসায় খবর দিয়ে আসছি। এতক্ষণ আপনার টেনশনে মনে ছিলো না খবর দেওয়ার কথা। দুপুরের দিকে আপনাকে রিলিজ করে দেওয়া হবে।
জাভিয়ানের ততটা চোট লাগে নি। গাড়িটা ধাক্কা দিলেও সেটার স্পিড বেশি ছিলো না। গাড়ির ধাক্কায় জাভিয়ান মাটিতে পরে মাথাটা ফুটপাতের লেনগুলোর সাথে বারি লাগার কারণে অজ্ঞান হয়েছিলো। এছাড়া তেমন কোন চোট লাগেনি। রাশেদ জাভিয়ানের কথায় পাত্তা দিচ্ছে না দেখে জাভিয়ানের রাগ হয়। সে রাগত স্বরেই বলে–
–আমি তোকে কিছু বলছি রাশেদ।
–হুম শুনেছি। আর আপনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি কি উত্তর দিতে পারি সেটাও আপনি জানেন। সেসব ছাড়েন,,আপনি সকালের ঔষধগুলো নিয়েছিলেন?
জাভিয়ান রাশেদের কথা শুনে বুঝতে পারে রাশেদ তার কথা বিশ্বাস করছে না। কেনই বা করবে? এর আগেও যে বহুবার এমন কান্ড ঘটিয়েছে যার কারণেই রাশেদের এই বিশ্বাস না করা। আজ জাভিয়ানের নিজেরও সন্দেহ হচ্ছে সে কি আসলেই হানিয়াকে দেখেছে নাকি সেটা তার হ্যালুসিনেশন ছিলো??
রাশেদ তাকে প্রশ্নটা আবার করলে জাভিয়ান মাথা নাড়িয়ে না-সূচক জবাব দেয়। রাশেদ বুঝতে পারে সকালে ব্রেকফাস্টও করে নি জাভিয়ান। রাশেদ তার ঔষধ আর খাওয়ার কিছু আনার জন্য কেবিনের বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ালে জাভিয়ানের একটা কথা তাকে থামিয়ে দেয়। জাভিয়ান বলে–
–বাসায় কাউকে জানানোর দরকার নেই।
রাশেদ জাভিয়ানের দিকে ঘুরে বলে–
–মানে?
–মানে বা বসার কাউকে আমার এক্সিডেন্টের কথা জানানোর প্রয়োজন নেই। এমনিতেই কাল রাতে হাইপার হয়ে গিয়েছিলাম।
–এখন না হয় না জানালাম। কিন্তু বাসায় তো যাওয়া লাগবে,,তখন দেখবে না?তখন আমি কি জবাব দিবো?
–যাবো না বাসায়।
রাশেদ এবার বিরক্ত বোধ করে জাভিয়ানের এমন উল্টাপাল্টা কথায়। বেটার মাথায় আসলেই বড়সড় সমস্যা হয়েছে।বাসায় যাবি না তাহলে কই যাবি? শ্বশুর বাড়ি? সেখানেও তো পায়ের ধুলো দেস না আজ কতগুলো বছর। রাশেদ বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বলে–
–কই যাবেন তাহলে? শ্বশুর বাড়ি?
–শ্বশুর বাড়ি বউ ছাড়া গেলে কদর থাকে না। হোটেল বুক কর। কিছুদিন বাসার বাহিরে একা থাকতে চাইছি।
রাশেদ তেমন একটা অবাক হয় না জাভিয়ানের কথায়। কারণ জাভিয়ান প্রায়শই এই কাজটা করে। রাশেদ তার কথায় সম্মতি জানিয়ে চলে যায় জাভিয়ানের জন্য খাবার আর ঔষধ আনতে।
______________________
সময় এখন রাত দশটা। হানিয়া সারাদিনে এখন একটু ফ্রি হতে পেরেছে মন খারাপ করার জন্য। রুমানা একটু আগেই ঘুমিয়েছে বলেই সে এখন সময়টা নিজের মতো কাটাতে পারবে। রুমানা মেয়েটা তাঁকে বেশ আগলে রাখে,,একদম ইনায়ার মতো। ইনায়ার কথা মনে পরতেই মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়। কতদিন দেখা হয় না,,কথা হয় না বোনের মতো বেস্টফ্রেন্ড টার সাথে। হানিয়া চাইলেই তার সাথে দেখা করতে পারে,,কিন্তু সে চায় না অতীতের কারো সাথে পুনরায় যোগাযোগ করতে। খারাপ তো নেই সে। অপ্রাপ্তি,, একাকিত্ব আর বিষন্নতা নিয়ে ভালোই তো কেটে যাচ্ছে তার দিন।
এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই হঠাৎই তার ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে কল করা ব্যক্তিটির নামটা দেখে হানিয়া ভীষণ,, ভীষণ এবং ভীষণই বিরক্তবোধ করে। একমনে ভাবে ফোনটা রিসিভ করবে না,,আরেক মনে বলে–
–তার করা সাহায্যগুলোর কথা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি হানিয়া? স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছিস দেখা যাচ্ছে।
হানিয়া নিজেকে স্বার্থপর প্রমাণ করতে চাইছে না আপাতত তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা রিসিভ করে। টুকটাক কুশল বিনিময়ের পর লোকটা বলে–
–কি করছো হানি?
“হানি” নামটা জাভিয়ান ব্যতীত অন্যকারো মুখ থেকে শুনতে নারাজ হানিয়া। হোক লোকটার সাথে তার এখন কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু তাও সে এই নামে ডাকার অধিকার জাভিয়ান ব্যতীত আর কাউকে দেয় নি। হানিয়া থমথমে গলায় বলে–
–হানি” নামটায় ডাকতে আমি আগেও বারণ করেছি এখনও করছি। আশা করি আমার অনুরোধটা রাখবেন।
লোকটি হানিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারে হানিয়া রেগে গিয়েছে,,লোকটা বুঝে পায় না এত কিছুর পরও কিভাবে হানিয়া জাভিয়ানকে ভালোবাসতে পারে। সে-তো এতগুলো বছর ধরে তার কাজের মাধ্যমে হানিয়ার তার ভালোবাসা বুঝাতে চাচ্ছে কিন্তু হানিয়া বুঝছে না। তার ভালোবাসায় কোথায় খুঁত আছে সেটা সে জানে না। লোকটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে–
–সরি। আর ডাকবো না। ডিনার করেছো?
–হুম। আপনি?
–হ্যাঁ করেছি। ওয়েট আম্মু তোমার সাথে কথা বলতে চাইছেন,নাও কথা বলো।
–আন্টি এখনো জেগে আছেন?
–হুম। তুমি তো দিনে ফ্রি থাকো না। তাই আজ এখনো জেগে আছে তোমার সাথে কথা বলার জন্য।
–আচ্ছা দিন তাঁকে ফোনটা।
–ভিডিও কলে আসো।
–হুম।
হানিয়া দেখে হঠাৎই রুমের মধ্যে ফোনের নেটওয়ার্ক কেমন আপ ডাউন করছে। তাই সে ভাবে হোটেলের গার্ডেন এরিয়াতে যাবে কথা বলার জন্য। যেই ভাবা কাজ। দরজা লক করে হানিয়া এসে পরে হোটেলের গার্ডেনে। তারপর ভিডিও কলে কথা বলতে থাকে তার দুঃসময়ে ঢাল হয়ে আসা মানুষ গুলোর সাথে। এই মানুষ গুলো তাঁকে সাহায্য না করলে হানিয়ার স্বপ্ন পূরণের পথচলাটা এতোটা সহজ হতো না। দীর্ঘক্ষণ তাদের সকলের সাথে কথা বলে রুমে যাওয়ার জন্য হাঁটা দেয়। কিন্তু পেছন ফিরে তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে তার পরাণ পাখি উড়ে যাওয়ার জোগাড়। লোকটা কি তাঁকে খুঁজে বের ফেললো?
লোকটি হেলতে দুলতে হানিয়ার সামনে এসে উপস্থিত হয়। নিজের একটা হাত উঠিয়ে আলতো করে হানিয়ার গালে রেখে,, কেমন ধরা গলায় বলে–
–তবে কি পাখিটি শেষমেশ আমার খাঁচার বন্দিত্ব মেনে নিতে এল?
শব্দসংখ্যা~১৮১৮
~~চলবে?